তুমি রবে ২
.
.
কয়েক মুহূর্তের জন্য গৌর বর্ণের আশফির হালকা লোমশ বুকের দিকে নজর আটকে গেল মাহির। পেটের কিছুটা ওপরে আর বুকের কিছুটা নিচে ঠিক বাঁ পাশে বেশ গাঢ়ো একটা লাল তিল আর মেদবিহীন পেটের নাভির নিচে ছোট্ট একটি কাটা দাগ। আর তার সারা শরীরের বিন্দু বিন্দু ঘামের জন্য যেন তার শরীর আরও বেশি চোখে লাগছে। আশফি খেয়াল করল মাহি তার শরীরের প্রতিটা অংশ কেমন খুঁটে খুঁটে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। তারপর হঠাৎ করেই তার শরীর থেকে দৃষ্টি এমনভাবে অন্য দিকে প্রস্থান করল যেন কোনো মেয়ের উন্মুক্ত শরীর সে দেখে ভীষণ লজ্জা পেল।
বিরক্তি ভরা চোখে আশফি ওদের তিনজনকেই একবার করে দেখল। কিন্তু চোখ আটকাল মাহির দিকেই। সেদিনের ট্রায়ালরুমের ঘটনা মুহূর্তেই মনে পড়ে গেল তার। কিন্তু মাহির চেহারা দেখে মনে হলো না সে আশফিকে ঠিক চিনতে পেরেছে। সে অর্ধেক জ্বলন্ত সিগারেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। আশফি ভ্রু কুচকে মাহির দিকে তাকালে মাহি বলল,
– “নিশ্চয় বিরক্ত হচ্ছেন আপনি?”
আশফি এবার সরু দৃষ্টিতে তাকাল। মাহি বলল,
– “ঘরে বউ বাচ্চা নেই?”
আশফির শর্টকাট জবাব,
– “না।”
– “এর জন্যই এমন অরুচিকর কাজ করতে পারেন।”
আশফি খেয়াল করল মাহি তার দিকে সরাসরি তাকিয়ে কথা বলছে না। হয় ডানে ঘুরে কথা বলছে কিংবা বামে ঘুরে। আশফি শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
– “আপনারা কি কোনো অভিযোগ নিয়ে এসেছেন?”
দিয়া মৃদু হেসে নরম কণ্ঠে বলে উঠল,
– “না তো, চা খেতে এসেছি। প্রতিবেশী কিনা!”
আশফিও কিছুটা হেসে ফেলল।
– “স্যরি?”
দিয়া আবার বলল,
– “শুনতে পাননি? সঙ্গে সিগারেটও খাব।”
আশফি এবার হেসে পুরো দরজাটা খুলে ওদের ভেতরে আসার আহ্বান করল। মাহি আর দিয়ার রাগ যেন আরও বেড়ে গেল। দিহান হাঁটতে হাঁটতে সত্যি ঢুকে গেল আশফির ড্রয়িংরুমে। দিয়া পেছন থেকে ওকে চেঁচিয়ে ডাকল।
– “এই দিহান, বাইরে আয়। তোকে ভেতরে যেতে বলেছি?”
– “এই তো এই ভাইয়াটাই তো বলল মাত্র।”
– “বাইরে আয়।”
আশফি তখন বলল,
– “আপনাদের চা সিগারেট না খাইয়ে যেতে দিই কীভাবে? এত কষ্ট করে এসেছেন!”
দিহান বলল,
– “ভাইয়া আমি মিষ্টি খাই। সিগারেট আর চা খায় আব্বু, আম্মু আর আপু।”
আশফি দিহানের গাল টেনে বলল,
– “অবশ্যই। তোমাকে কী করে এগুলো খাওয়াই!”
মাহি বাইরে দাঁড়িয়েই বলল,
– “আপনি কী কারণে আমার হাতে সিগারেট ফেলেছেন?”
আশফি দেখল মাহি সেই আগের মতোই অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছে। আশফি হেঁটে গিয়ে মাহির বেশ কাছে দাঁড়াল। মাহি তখন দ্রুত পিছু হাঁটল। আশফি বলল,
– “আপনি অন্ধ হলে কী করে দেখলেন আমি আপনার হাতে সিগারেট ফেলেছি?”
দিয়া তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলো,
– “কে অন্ধ?”
আর মাহি রাগান্বিত চোখ করে অন্যদিকেই তাকিয়ে রইল। তারপর দিয়াকে বলল,
– “দিয়া ওনাকে বল নির্লজ্জতার একটা সীমা আছে।”
– “বুঝতে পারছি না। এবার নির্লজ্জতার মতো কী করলাম? মাথায় সমস্যা নাকি আপনার?”
মাহি এবার আশফির দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলে চেঁচিয়ে বলল,
– “আপনার কত বড় সাহস! আপনি একবার আমাকে অন্ধ বলছেন আবার মাথা খারাপ বলছেন!”
মাহির অশান্ত দৃষ্টি দেখে আশফি খুব মজা পেল। কথা বলার সময় মাহির দৃষ্টি বারবার আশফির শরীরে ঘুরছিল। তারপর হঠাৎ করেই আবার মুখ বাঁ দিকে ঘুরিয়ে নিলো সে। আশফি বলল,
– “প্লিজ চেঁচাবেন না। ভেতরে আসুন, ভেতরে এসে কথা বলুন।”
– “হ্যাঁ, যাতে আরও বেশি বদমাইশি করার সুযোগ মেলে।”
আশফি এবার দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
– “আপনি কিন্তু অকারণে রুঢ়লি আচরণ করছেন। কী হয়েছে বলুন? আমাকে নির্লজ্জ বলার কারণ কী আগে সেটা বলুন। সিগারেটটা আমার হাত থেকে হঠাৎ করে নিচে পড়ে যায়। আর হয়তো তখন আপনার হাতে এসে পড়ে। তো এখানে নির্লজ্জের মতো কী হলো?”
– “প্রথমত, আপনি ইচ্ছা করে কাজটা করেছেন। দেখেছেন একটা মেয়ের হাত তাই ইচ্ছা করেই ফেলেছেন।”
– “আমি তো সিগারেট নিচে ফেলেছিলাম। সেটা তো কোনোক্রমেই বেলকনি বা রুমে চলে যাওয়ার কথা না!”
দিয়া তখন বলল,
– “ও বৃষ্টির পানি ছোঁয়ার জন্য হাত বাড়িয়েছিল। আর তখন আপনি ওর হাত দেখতে পেয়ে ওর হাতে সিগারেট ফেলেছেন।”
আশফির চরম হাসি পেল দিয়ার বলা কথাগুলো শুনে। সে হাসি চেপে রেখে বলল,
– “আচ্ছা তো উনি বৃষ্টিবিলাস করছিলেন! কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা সিগারেটবিলাস হয়ে গেছে। তাই তো?”
আশফির চাপা হাসি আর তার মজার ছলে কথাগুলো শুনে মাহি আরও জোরে চেঁচিয়ে বলল,
– “অসভ্য নাকি আপনি? যদি ভুল করে থাকেন তবে স্যরি বলার কথা। তার বদলে আপনি আরও মজা নিচ্ছেন। তার মানে আপনি ইচ্ছা করেই কাজটা করেছেন।”
– “আপনি প্লিজ আস্তে কথা বলবেন? আশেপাশের মানুষগুলো অন্য কিছু ভাববে আর তারা ডিস্ট্রাবডও হবে। আর আমি আবারও বলছি, আমি দেখেশুনে সিগারেটটা আপনার হাতে ফেলিনি।”
– “আশেপাশের মানুষ আসার ভয় পাচ্ছেন কেন? ভদ্র মানুষ সেজে বসে আছেন। তারাও জানবে আপনার নেচার। নির্লজ্জ, বেহায়া পুরুষ!”
আশফি রেগে গিয়ে বলল,
– “আশ্চর্য আপনি বারবার আমাকে নির্লজ্জ বলছেন কেন? বেহায়া পুরুষ এসব কী ধরনের কথা? আর আপনাকে বলছি আপনি একটু আস্তে কথা বলুন।”
– “বলব না আস্তে কথা। কী করবেন আপনি? আমি চেঁচিয়েই কথা বলব। সবাই আসুক এখানে, সবাই দেখুক এসে…”
মাহি অতিরীক্ত জোরে চেঁচিয়ে কথা বলার জন্য আশফি বাধ্য হয়ে মাহির কথার মাঝেই তার হাত ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে এলো। কারণ আশেপাশের মানুষ একবার জড়ো হয়ে গেলে ব্যাপারটা খুব ঘোলাটে করে ফেলবে সবাই। সে একা পুরুষ থাকে এখানে। দোষটা ইজিলি তার ঘাড়েই আসবে। আশফি মাহিকে টেনে ভেতরে আনার পর দিয়াও দ্রুত ভেতরে ঢুকে পড়ল। চেঁচিয়ে সে বলল,
– “এই আপনার কত বড় সাহস আপনি ওকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসেন?”
– “দেখুন আপনারা প্লিজ আস্তে কথা বলুন, আমি বারবার বলছি। আমি কোনো নেগেটিভ মাইন্ডে ওনাকে ভেতরে আনিনি। এভাবে আপনারা চেঁচামেচি করলে সমস্যা আমার হবে। আর আমি সত্যি বলছি, আমি ইচ্ছাপূর্বক সিগারেটটা ফেলিনি।”
মাহি চোখ রাঙিয়ে বলল,
– “অসভ্য, নির্লজ্জ লোক একটা! ফাজলামি করে এখন ইনোসেন্ট সাজা হচ্ছে। আপনি আমার হাত ধরলেন কেন?”
– “তো কী হয়েছে? হাত রেপড হয়েছে নাকি? আর আপনি আমাকে বারবার নির্লজ্জ বললে ভালো হবে না কিন্তু।”
– “ছিঃ কী নোংরা ভাষা! ডার্টি মাইন্ডেড মানুষ একটা। এভাবে খালি গায়ে মেয়েদের সামনে দাঁড়িয়ে চ্যাটাং চ্যাটাং কথাও বলছেন আবার।”
– “নোংরা ভাষা, ডার্টি মাইন্ডেড, খালি গা। মানে কী এসবের? আমি আমার রুমে খালি গায়ে থাকব তাতে আপনার কী?”
– “আপনি রুমে থাকুন আর যেখানেই থাকুন। আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে শোঅফ করছেন নিজেকে তা কি বুঝতে পারছি না? অচেনা লোক এলে তাদের সামনে যে খোলা দেহে থাকাকে এক প্রকার অসভ্যতা আর অভদ্রতা বলে সেটা জানা নেই?”
– “স্টুপিড গার্ল! আমি আমার বডি শোঅফ করছি আপনাদের সামনে? যদি তাই মনে হয় তো তাই। আপনার দরকার হলে আপনিও করুন আমার সামনে। বাট ফারদার আমাকে নির্লজ্জ বললে প্রবলেম হবে। আর সভ্যতা, ভদ্রতা আপনাদের মতো পাগলদের কাছ থেকে শিখতে হবে নাকি? আর একটা কথাও বলা যাবে না আপনাদের সাথে। উন্মাদের কারখানা একটা। আপনারা এখন আসতে পারেন।”
দিয়া বলল,
– “এত বড় অপমান! ঠিক আছে দেখে নেব।”
আশফি ঠোঁটের বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
– “সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছি, দেখুন।”
নিজের প্রশস্ত বুক ফোকাস করে বলল আশফি। মাহি রাগে হাতের সিগারেটটা আশফির গায়ে মেরে বেরিয়ে গেল।
.
.
আত্মীয়ার বাসা থেকে ফিরল দিয়ার বাবা মোশারফ হোসেন আর মা দিলরুবা আক্তার। বেশ হাসি খুশি দুজনে। ড্রয়িংরুমে ঢুকে দেখল তাদের মেয়ে দিয়া সোফাতে শুয়ে ফোন চাপতে ব্যস্ত, মাহি টিভি দেখতে ব্যস্ত আর ছোট ছেলে গেম খেলতে ব্যস্ত। রুমে চলে আসার পর দিলরুবা তার স্বামীকে বলল,
– “আমার কিন্তু ছেলেটাকে খুব পছন্দ হয়েছে। কী সুন্দর দেখতে আর ম্যানারও খুব ভালো। অনেক বিত্তশীল মনে হলো।”
– “হ্যাঁ, এখানে প্রায় সাত বছর যাবৎ আছে। একাই থাকে নাকি। আর অনেক বড় বিজনেস আছে।”
– “এমন ছেলেই তো দিয়ার জন্য খুঁজছি আমি। এই ছেলে আমাদের জামাই হলে খুব সম্মান করবে আমাদের। তুমি দেখেছিলে বিকালে যখন আমার সঙ্গে ধাক্কা খেল তখন মুখটা কেমন অপরাধীর মতো করে আমার হাতের সমস্ত জিনিস নিজে ক্যারি হরে গাড়িতে তুলে দিলো। তারপর যে কতবার জিজ্ঞেস করল, ‘আপনার লাগেনি তো আন্টি?’ আমার ভারী পছন্দ হয়েছে ওকে।”
– “হ্যাঁ আমারও। তাই তো বাসার মালিকের থেকে খোঁজ খবর নিলাম।”
– “আমি ভাবছি কিছু খাবার নিয়ে এখন একবার ওর অ্যাপার্টমেন্টে যাব। গিয়ে ওর সঙ্গে পরিচয়ও করে নেব ভালো করে।”
– “এভাবে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? বেহায়া ভাব লাগে আমার।”
– “আরে ধুরঃ কিসের বেহায়া ভাব! তুমিই তো বললে ও নাকি একা থাকে। আন্টি যখন ডেকেছে তাই আন্টির মতো করেই পরিচিত হতে যাব। আর সঙ্গে দিয়াকেও নেব।”
– “এটা একটু বেশি বেশিই হবে।”
– “কোনো বেশি বেশি হবে না। তুমি চুপ থাকো।”
– “দিয়াকে বললে দিয়া কিন্তু জীবনেও যাবে না।”
– “ওকে বলছে কে?”
দিলরুবা কিছুক্ষণ রেস্ট নেওয়ার পর ডাইনিং এ গেল। তারপর ফ্রিজ থেকে কিছু মিষ্টি নিয়ে মেয়ের কাছে এসে বলল,
– “দিয়া ওঠ তো।”
– “কেন? উঠে কী করব?”
– “ফোনটা রাখ, উঠতে বলছি ওঠ। একটু ওপরে যাব।”
– “উফঃ মা তুমি যাও। আমার তোমাদের আন্টিদের গল্প শোনার ইচ্ছা নাই।”
– “আরে ইচ্ছা নেই মানে? নতুন এক জায়গায় এসেছি। সবার সাথে আলাপ হতে হবে না?”
– “তুমি দিহানকে নিয়ে যাও। আমি যাব না।”
– “তুই যাবি নাকি আমি তোর বাবাকে ডাকব?”
মাহি তখন বলল,
– “এই দিয়া ওঠ, যেতে বলছে যা। কী সমস্যা?”
– “দেখেছিস মাহি, দিন দিন কী পরিমাণ ত্যারা হচ্ছে!”
দিয়া রেগে গিয়ে মায়ের দিকে তাকাল। তারপর উঠে বলল,
– “চলো, তবে পাঁচ মিনিটের বেশি আমি বসতে পারব না।”
দিয়া দিলরুবার সঙ্গে বেরিয়ে গিয়ে আবার রুমে ব্যাক করল। তারপর মাহির হাত টেনে ধরে ওকে ওঠাতে ওঠাতে বলল,
– “চল চল তুইও যাবি।”
– “উহ্ঃ ছাড় তো দিয়া। আমি যাব কেন?”
– “আমি ওখানে গিয়ে একা বোরিং হতে পারব না। তুইও হবি।”
দিয়ার টানাটানিতে মাহি উঠে গেল। দিলরুবা তখন মেয়ের ওপর রাগান্বিত চেহারায় তাকিয়ে বলল,
– “আবার ওকে নিয়ে এলি কেন? ও তো বসে টিভি দেখছিল।”
– “দেখুন না আন্টি, কী যে বেয়াদব হয়েছে।”
– “এই বেশি পকপক করবি না, চল।”
অগত্যা দিলরুবা মাহিকেও সঙ্গে নিলো। ঠিক নয়তলার আশফির রুমের সামনে এসে বেল বাজাল দিলরুবা। মাহি আর দিয়া বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইল একে অপরের দিকে। দিলরুবাকে কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই আশফি দরজা খুলল। তখন মাহি আর দিয়া কিছুটা আড়ালে গিয়ে দাঁড়াল। আশফি শুধু দিলরুবাকে দেখে কুশলতার হাসি হেসে তাকে ভেতরে আসতে বলল। দিলরুবা পিছু ফিরে ওদের দুজনকে ইশারায় ভেতরে আসতে বলল।
৭.
সামনের কাউচে জড়োসড়ো হয়ে দৃষ্টি নিচে রেখে বসে আছে মাহি আর দিয়া। আশফি ওষ্ঠকোণে হাসি জড়িয়ে রেখে দিলরুবার সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত। আলাপের এক পর্যায়ে আশফি কফি অফার করলে দিলরুবা না করে। কিন্তু আশফির খুব রিকোয়েস্টে দিলরুবা তাকে বলল,
– “কফি খেতে পারি। কিন্তু তুমি বানাবে না, আমার মেয়ে দিয়া বানাবে।”
দিয়ার মনে হলো সে তার বাসার বিশতলার ছাদ থেকে নিচে পড়ল। দিলরুবা দিয়াকে বলল,
– “যাও মা, সবার জন্য কফি করে নিয়ে এসো।”
তারপর আশফির দিকে তাকিয়ে বলল,
– “ও খুব ভালো কফি করতে পারে।”
– “ও আচ্ছা। তবে আমার বাসায় ও কেন কফি করে খাওয়াবে? আমিই করে দিচ্ছি। ওকে করতে হবে না কষ্ট করে।”
– “আরে না না। তুমি বসো, ও করে নিয়ে আসছে।”
দিয়া তখন বলল,
– “আমার কফি খেলে তুমি তো ওয়াক ওয়াক আওয়াজ করো। এখন খেতে চাচ্ছ কেন হঠাৎ? মাহি খুব ভালো কফি করতে পারে মা। তুমি ওকে না বলে আমাকে কেন বললে?”
মাহিকে হালকা খোঁচা দিয়ে দিয়া বলল,
– “এই মাহি যা। তুই কফি কর। তোর কফির তো জবাব নেই।”
দিলরুবা লজ্জায় আর রাগে তাকাতে পারল না মেয়ের দিকে। মাহিকে একরকম ঠেঁলেই ওঠাল দিয়া। আর আশফি শুধু মজা নিতে থাকল ওদের থেকে। মাহিকে উঠতে দেখে মনে মনে প্রচন্ড খুশিই হলো সে। বেশ জব্দ করার উপায় পাওয়া গেল। মাহি বাধ্য হয়ে কিচেনে ঢুকল। কিছুক্ষণ পার হতেই আশফি দিলরুবাকে বলল,
– “ও বোধহয় সবকিছু খুঁজে পাচ্ছে না। আমি গিয়ে হেল্প করি।”
আশফি উঠে কিচেনে এলো। মাহির পিছে দাঁড়িয়ে গলাতে কাশির শব্দ করল। মাহি হঠাৎ চমকে পিছু তাকিয়ে আশফিকে দেখে পিছিয়ে এলো। আশফি সেই বাঁকা হাসি হেসে বলল,
– “আবার দেখতে এসেছেন নাকি? কিন্তু এবার তো আমি খালি গায়ে নেই। আপনি চাইলে টিশার্ট খুলতে পারি।”
– “আপনি এত বেশরম কেন?”
– “আপনার অনেক শরম তাই।”
আশফি চকিতে জবাব প্রদান করল। মাহি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল শুধু। আশফি কফি তৈরি করতে করতে বলল,
– “পুরুষ মানুষের খোলা শরীর দেখে কেউ এত লজ্জা পায় তা আপনাকে আজ না দেখলে জানতাম না।”
– “জানবেন কী করে? নির্লজ্জ মানুষেরা কি আর লজ্জা বোঝে?”
– “দেখুন, আমাকে বারবার এভাবে নির্লজ্জ বললে ফলাফল খারাপ হবে। আমি মোটেও নির্লজ্জ নই। যথেষ্ট জেন্টেলম্যান।”
মাহি চুপ থাকল। কিছু বলল না তাকে। আশফি কফি তৈরির ফাঁকে আড়চোখে বারবার মাহিকে দেখতে থাকল। সেটা মাহির নজরে এড়াল না। সরু চোখে তাকিয়ে মাহি বলল,
– “এবার কী করছেন?”
– “কী করছি? কফিই তো করছি।”
– “এই যে এখন অসভ্যের মতো বারবার আড়চোখে দেখছেন আমাকে!”
কফির মগটা ঠাস করে রেখে মাহির দিকে তেড়ে এলো আশফি। আচমকা তার এমন আচরণে মাহি খুব ঘাবড়ে গেল। দুজনের মাঝে কোনো ফাঁক নেই বললেই চলে। আশফি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে মাহির চোখের দিকে তাকাল। তারপর আচমকা এক চোখ উইঙ্ক করে ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বলল,
– “বাসায় একাই থাকি। চলুন না আজ এক সাথে ঘুমাব! খুশি করে দেবো একদম।”
আশফির এমন কথায় মাহির শরীর থেকে প্রবল বেগে ঘাম ছুটতে শুরু করল। ছুটে পালানোর উপায় অবধি নেই। কারণ আশফির দু হাতের মাঝে বাঁধা পড়ে গেছে সে। এবার আশফি হুট করেই গায়ের টি শার্টটাও খুলে ফেলল। মাহির সামনে নিজের শরীর ফোকাস করে এবার সে বলল,
– “অনেক হট না! জানি তো খুব পছন্দ হয়েছে আপনার। তখন তো দেখলাম নজরই ফেরাতে পারছিলেন না। আজ রাতে আসুন, পুরোটাই দেখাব।”
মাহি এবার দৌঁড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করল। আর তা করার চেষ্টার পূর্বেই আশফি লম্বা খুঁটির মতো ওর পথ আগলে দাঁড়িয়ে স্মিত হেসে বলল,
– “নির্লজ্জতা, অসভ্যতা কাকে বলে তার সঠিক ধারণা আপনার এখনো হয়নি। এই যে এখন আমি যেভাবে আপনাকে আমার সঙ্গে ঘুমানোর প্রপোজাল দিলাম এটাকে বলে অসভ্যতা। বা সুযোগ বুঝে যদি এখন আপনাকে জড়িয়ে ধরি কিংবা আপনার কোটিদেশ চেপে ধরে আপনাকে চুমু খাই তো এটাও এক প্রকার অসভ্যতা। আর নির্লজ্জাতা? এই যে যেভাবে আমার খোলা দেহকে আপনাকে নোটিশ করতে বললাম আর আমার রুমে আসলে আপনাকে পুরোটাই দেখানোর প্রতিশ্রুতিও প্রদান করলাম, তবে একে বলে নির্লজ্জতা। অথবা আপনার কিছু খোলা থাকলে তা যদি দেখার চেষ্টা করি তাকেও বলে নির্লজ্জতা। আশা করি আমার প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস আর আমার সংজ্ঞাগুলো আপনি ক্লিয়ারলি বুঝেছেন এবার। এরপর থেকে ফিউচারে কাউকে অযথা নির্লজ্জ, অসভ্য, অভদ্র বলার পূর্বে আজকের এই প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস মনে করবেন নিশ্চয়।”
লজ্জায় মাহি আশফির দিকে আর তাকাতেও পারল না। মাহির লাল গালদুটো দেখে আশফির ঠোঁটে যেন বিজয়ের হাসি ফুটে উঠল। মেয়েটাকে সে এবার আচ্ছা জব্দ করতে পেরেছে। মাহি আর সেকেন্ড সময়ও অতিবাহিত না করে কিচেন থেকে বেরিয়ে দিলরুবাকে বলল,
– “আন্টি আমার খুব মাথা যন্ত্রণা করছে হঠাৎ করে। আমি আসছি, আপনারা না হয় পরে আসুন।”
……………………………..
(চলবে)
– Israt Jahan Sobrin
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.