তুমি রবে ১৫
.
.
চোখদুটো মেলে আধো আলো ঘরে নিজেকে পেল মাহি। ঘরটার চারপাশে চোখ বুলিয়ে যেটুকু তার চেনা লাগল তাতে সে কিছুটা নিশ্চিত এই মুহূর্তে সে এখন আশফির নতুন বাড়িটার ঘরে। একটু ঘার ঘুরিয়ে তাকাতেই ট্যারেস আর রুমের মাঝের কাচের দেয়ালটার পানে নজর গেল তার। ট্যারেসটা কী সুন্দর ঝলমলে চাঁদের কিরণে স্বচ্ছভাবে দেখা যাচ্ছে। সেখানে কাউচে বসে একটা মানুষ মাউথ অর্গানে সুর তুলছে। এই সুরটা কানে পৌঁছাতেই মাহির তন্দ্রা কেটে গেছে। সুরটাও বেশ পরিচিত। কিন্তু ঠিক মনে এলো না তার, এটা কী গানের সুর। রাত নেমে এসেছে প্রায় তা বাহিরের পরিবেশ দেখেই বোঝা গেল। কিন্তু রাত কত বাজছে এখন? মাহি হাতড়ে হাতড়ে তার ফোনটা খুঁজতে থাকল। আর সেটা তার বালিশের কাছেই পেয়ে গেল। ফোনের ঘড়িতে দেখল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। তড়িঘড়ি করে উঠে বসতে নিলে পায়ের চোটের কারণে পা দু’টো নাড়াতে সক্ষম হলো না। এদিকে ঘারেও বেশ ব্যথা অনুভব করল সে। চোখ বন্ধ করে ঘারটা দু’হাত দিয়ে ধরে এপাশ ওপাশ করার চেষ্টা করল। সে মুহূর্তে চেনা কণ্ঠস্বর কানে এলো তার।
– “ব্যাডলি ইনজুরড হয়েছেন। কপালেও কিছুটা লেগেছে।”
মাহি চোখ মুখ খিঁচে তাকাল আশফির দিকে। এই লোকটার জন্যই তো তখন মরতে মরতে বেঁচে গেছে। তখন না কী বাজে ব্যবহারটাই করল ওর সঙ্গে! রাগের চোটে হনহন করে হেঁটে যাওয়ার পথেই তো গাড়ির সামনে গিয়ে পড়তে হলো ওর। ভাগ্যিস গাড়ির অওনার তখন ব্রেক কষেছিল। না হলে অ্যাক্সিডেন্টটা তো সাংঘাতিকও হতে পারত!
মাহি বিছানা থেকে নামতে নিলে আশফি বাধ সেধে বলল,
– “শুধু শুধু ব্যথা পাবেন পায়ে, চলতে কী দাঁড়াতেও পারবেন না।”
– “তার মানে কী? আমি খোড়া হয়ে গিয়েছি?”
বেশ রাগপূর্ণ কণ্ঠেই বলল মাহি।
– “আমি তা কখন বললাম? রেগে যাচ্ছেন কেন? আপনি নিজে ট্রাই করে দেখুন।”
আশফির বলা শেষ না হতেই মাহি উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করলে উহ্ঃ বলে ধপাস করে বিছানায় বসে পড়ল। আশফি এগিয়ে এসে মাহির পা দু’টো আলতো করে ধরে বিছানায় তুলে দিলো।
– “গোড়ালিতে চোট পেয়েছেন বেশি। ডক্টর এসে ব্যথার ইনজেকশন পুশ করে গিয়েছেন। তার কিছু সময়ের মধ্যেই আপনি ঘুমিয়ে যান।”
– “আমি না তখন আপনাকে বারণ করেছিলাম? আপনি কেন নিয়ে এলেন আমাকে?”
আশফি খানিকক্ষণ মাহির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে উঠে এলো। রুমের লাইট অন করতে গেলে মাহি ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল,
– “লাইট অন করবেন না।”
– “কেন?”
– “আলোর কি কম পড়েছে? একে তো চাঁদনিরাত আবার আপনার বাগান থেকেও মৃদু আভা আসছে।”
আশফি মাহির বেডের কাছে কিছুটা এগিয়ে এসে ঠোঁটে হালকা হাসি ধরে বলল,
– “তো এতেই আপনার যথেষ্ট?”
মাহি হ্যাঁ বলে আশফির থেকে নজর ফিরিয়ে নিতে গিয়ে আবার সেই মুখটার পানেই আটকে গেল তার নজর। গম্ভীরমুখে তাকিয়ে চাঁদের আলোয় আশফির সেই মিষ্টিমুখের হাসি দেখে ক্ষনিকের মধ্যে তার রাগ উবে গেল। মাহির ভেতরের মাহিটা তখন বলে উঠল,
– “হায় মাবুদ! এত সুন্দর কেন মানুষটার হাসি?”
এবার প্রত্যক্ষে মাহি তাকে বলল,
– “এত যত্ন করে কীভাবে হাসেন?”
আশফির চাউনি তখন মাহির সদ্য তন্দ্রা কাটা ফোলা চোখদুটোর দিকে। এই চোখদুটোর সৌন্দর্য তার কাছে একেক সময একেক রকম যেন। আশফি মাহির প্রশ্ন কানে না তুলে মাহির কাছে এসে বসল। সেই চোখদুটোর পানে চেয়ে বলল,
– “এই যে আপনি এখন ঘুম থেকে জেগে ফোলা ফোলা চোখদুটো মেলে আমার দিকে চেয়ে আছেন, খবর কি রেখেছেন এতে আমার হার্টবিট ক’বার মিস করেছে?”
আশফির মুখে তার এমন কথাগুলো শোনার পর মাহির মনে হলো যেন বিকেলের দখিনা বাতাসের স্নিগ্ধতায় যেমন অপার শান্তি অনুভূত হয় দেহের ভেতরে আর বাহিরেও ঠিক তেমনই আশফির এই কথাগুলো মাহির দেহের ভেতরে বাহিরে সর্বস্থানে এক অফুরন্ত সুখ আর খুশি ছড়িয়ে পড়েছে। মাহি মৃদুস্বরে আশফিকে জবাব দিলো,
– “রাখিনি তো।”
– “রাখবেন এরপর থেকে। নইলে তো কোনো পুরুষের হার্টবিট মিস হয়ে যাবে। তখন তো আপনি মার্ডার কেসে ফেঁসে যাবেন।”
মাহি তার ওষ্ঠের চওড়া হাসিটা হেসে উঠল। সে মুহূর্তে আশফির নজর গেল মাহির গাঢ়ো গোলাপি বর্ণের পুরু ওষ্ঠদুটির পানে।
নক্ষত্ররাজের বুক চিরে উদগত হওয়া আলোতে সারা ঘরটার মাঝে এক মায়াবী মায়াবী অস্তিত্ব অনুভব করছে আশফি। সেই আলোয় পরিপূর্ণ সামনের এই রমণীর সারা মুখ আর সারা শরীর। আশফি তাকে বলল,
– “শুনেছি মেয়ে মানুষের সৌন্দর্য দেখা যায় তিনটি মুহূর্তে। তাদের হাসির মুহূর্তে, রাগের মুহূর্তে আর চাঁদের আলোতে। বিশ্বাস করিনি কখনো। আজ নিজের চোখে দেখলাম। সত্যিই স্রষ্টার সৃষ্টির জবাব নেই।”
এই বলেই আশফি বিছানা ছাড়ল। হাতের মাউথ অর্গানটা সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে বলল,
– “আপনার বাসা থেকে কল এসেছিল।”
মাহি চমকে উঠে প্রশ্ন করল,
– “আপনার ফোনে? আমাকে নিশ্চয় পায়নি বলে আপনাকে কল করেছিল?”
– “আরে আমাকে আগে বলতে দিন। আপনাকেই কল করেছিল অনেকবার। শেষে আমি রিসিভ করতে বাধ্য হই। মিলি কল করেছিল মানে আপনার বোন। আমি ওনাকে সবটাই বলেছি। উনি বললেন আপনি একটু সুস্থ হলেই যেন আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসি কিংবা তাকে যেন কল করি। আমি বলেছি আমি নিজেই পৌঁছে দিয়ে আসব আপনাকে।”
আশফির বলা শেষ হলে দুজনই কিছু সময় চুপ থাকল। আশফি মুখটা এবার কিছুটা ভার করে বলল,
– “দিশানও প্রচন্ড চিন্তিত ছিল আপনার জন্য। খুব ভাবে বোধহয় আপনাকে নিয়ে।”
– “ভাববেই তো। ও কারো মতো রগচটা নয়। খুব ভালো একজন পার্সোন ও।”
আশফি ভ্রু কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে মাথা বাঁকিয়ে ইশারায় বলল ‘তাই?’ আর মাহিও মাথা বাঁকিয়ে ইশারায় ‘হ্যাঁ’ উত্তর জানাল।
– “তো কী খাবেন বলুন?”
মাহি মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলল,
– “কিছুই না।”
আশফি সেটুকু শুনেই রুমের বাহিরে চলে গেল। তিন মিনিট পর হাতে গরম স্যুপ নিয়ে হাজির হলো। মাহির দিকে সেটা এগিয়ে ধরে বলল,
– “এটা খান। এই মুহূর্তে বিশেষ কিছু নেই ফ্রিজে। খাবার আনতে পাঠিয়েছি।”
– “জাযাকাল্লাহ খাইরান, কোনো প্রয়োজন নেই।”
আশফি প্রচন্ড বিস্ময়ের চাহনিতে তাকাল মাহির দিকে। মাহি তখন বলল,
– “অবাক হওয়ার মতো কিছু শুনেছেন?”
– “না তো।”
– “বুঝেছি। আমি আপনাকে থ্যাংকস জানিয়েছি।”
– “জি বুঝেছি আমি।”
স্যুপের বাটিটা হাতে নিয়ে মাহির সামনে বসে স্পুন ভরে স্যুপ তুলে মাহির মুখের সামনে ধরল।
– “কী করছেন?”
– “সেবা করছি। আসলে আমার জন্যই তো এই হাল আপনার।”
মাহি গলা উঁচিতে চেঁচানো সুরে বলল,
– “হাল নয় বলুন বেহাল। হ্যাঁ আপনার জন্যই তো।”
– “আমি জানি আমি জানি। আপনি চেঁচাবেন না ম্যাম। আগে খেয়ে নিন, তারপর শক্তি সঞ্চয় করুন। তারপর যত ইচ্ছা চেঁচান।”
মাহি স্যুপটা মুখে নেওয়ার সময় তার ফোনে কল এলো। স্ক্রিনের দিকে দুজনেই এক সঙ্গে তাকাল। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে সোম ভাই নাম। মাহি একটু সংকোচ চোখে তাকাতে থাকল আশফির দিকে। আশফি তখন স্যুপটা মাহির সামনে রেখে উঠে এসে বলল,
– “আমি বাহিরে যাচ্ছি। আপনি কথা বলুন।”
সে মুহূর্তে মাহির কথা বলার ইচ্ছা একদমই ছিল না। সে আশফিকে বলতেও গেল,
– “আপনি বসুন, আমি কথা বলব না।”
কিন্তু তার পূর্বেই আশফি রুম ছাড়ল। মাহির ইচ্ছে করল তখন ফোনটা ফ্লোরে ছুঁড়ে মারতে। ফোনটা কয়েকবার বেজে বেজে কেটে গেল। তারপর সেটা সাইলেন্ট করে বালিশের নিচে রাখল সে। বেখেয়ালে পা নাড়াতে স্যুপের বাটি ঢেলে পড়ল তার পায়ে। মাহির আর্তনাদের আওয়াজ পেয়ে আশফি ছুটে এসে দেখল মাহি পা চেপে ধরে আছে। দ্রুত রুমের লাইট জ্বেলে পায়ের ওই অবস্থা দেখতে পেয়ে আশফি বোল ভরে পারি নিয়ে এসে বসল ওর পায়ের কাছে। মাহির পারমিশন ছাড়াই তার পাজামা কিছুটা তুলে জায়গাটুকু পনের থেকে বিশ মিনিট ক্লিনিং করে তারপর সেখানে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলো। মাহি পাজামা নিচে নামাতে নিলে আশফি চড়া কণ্ঠেই বলল,
– “পাজামা নামাচ্ছেন কেন? অয়েন্টমেন্ট লাগিয়েছি না?”
মাহির দ্বিধাবোধ চেহারা দেখে আশফি বলল,
– “কী অদ্ভুত না? জ্বলা কমানোর চেষ্টা করবেন কী পা ঢাকতে ব্যস্ত হচ্ছেন। আমি খেয়ে নিচ্ছি আপনার পা?”
এটুকু বলে আশফি অয়েন্টমেন্টটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মিনিট খানেক যেতেই আবার ফিরে এলো। তারপর ওকে বলল,
– “ফিওন্সির সাথে কথা বলার সময় যে কেউ এত বেশি আনহিডিং হয়ে পড়ে তা কখনো দেখিনি। আপনি দেখেননি আমি বাটিটা আপনার পায়ের পাশে রেখে গিয়েছি?”
– “আমি কারো সঙ্গে কোনো কথা বলছিলাম না। আর তিনি আমার কোনো ফিওন্সি নন।”
– “ও আচ্ছা, তাহলে সেদিন যে বললেন তাকেই বিয়ে করবেন? তাহলে আজ ফিওন্সি হলো না কী করে?”
– “আমি কখন বলেছি আমি তাকেই বিয়ে করব? আমি বলেছিলাম আমার পরিবার তাকে আমায় বিয়ে করতে বললে আমার তাকেই বিয়ে করতে হবে।”
– “ওই একই হলো না কথাটা? তাকে বিয়ে করবেন আর তাকে করতে হবে এর ভেতরে কতটুকু তফাৎ?”
– “অনেক তফাৎ যা আপনার মাথায় কখনোই ঢুকবে না। আর আপনি হঠাৎ কেন এত রেগে যাচ্ছেন বুঝতে পারছি না।”
আশফি মাহির দিকে এগিয়ে এসে বলল,
– “আমার রেগে যাওয়ার কারণ অবশ্যই আছে।”
– “কী কারণ বলুন?”
আশফি কিছু বলতে যেয়েও যেন বলতে পারল না। সত্যিই তো তার রেগে যাওয়ার কারণ নেই এখানে। কিন্তু এ কথা সত্য তার অত্যাধিক পরিমাণ রাগ হচ্ছে মাহির ওপর। আর এ মুহূর্তে সে সোমকে সামনে পেলেও হয়তো তার সঙ্গে এক দফা দাঙ্গা বেঁধে যেত।
আশফি রুমের লাইটটা অফ করে ট্যারেসে গিয়ে রেলিংয়ের সঙ্গে হেলান দিয়ে নিচে বসল। মাথার মধ্যে প্রচন্ড জ্বলছে তার। যখন সোম নামটা মাহির ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠতে দেখেছিল তখনই মেজাজ খিঁচে গিয়েছিল তার। কিন্তু মেজাজের লাগাম তখন বেঁধে রাখতে পারলেও পরবর্তীতে মাহির পোড়া পা’টা দেখে সেই লাগাম ছুটে গিয়েছে। ওর মাথায় তখন একটা ব্যাপারই চলছিল। আর তা হলো মাহি সোমের সঙ্গে কথা বলতে এত বেশিই মগ্ন ছিল যে সে বেখেয়ালে স্যুপটা তার পায়ের ওপর ঢেলে নিয়েছে। আর মাহির এই মগ্নতাই আশফির যেন সহ্য হয়নি। একবার মাহির দিকে তাকাল সে। সাদা সেলোয়ার-কামিজ পরিহিত মেয়েটির এক পাশ দেখা যাচ্ছে শুধু। এই মেয়েটির পাশে সে অন্য কোনো পুরুষকে মানতে পারে না তা সে বোঝে। আর সোমকে তো নয়ই। কিন্তু কেন সে মানতে পারে না? এই যে মেয়েটি যখন তার ঘন পাপড়িযুক্ত চোখ দুটো মেলে তার সুন্দর ওষ্ঠদ্বয়ের হাসি হাসে দিশানের সামনে, রাতুলের সামনে তখন আশফির বলতে ইচ্ছে করে মাহিকে…
………………………………
(চলবে)
– Israt Jahan Sobrin
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.