গল্পের_নাম_তুমি_যে_আমার
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:১
~আমার বোনের আশেপাশেও যদি আর আপনাকে দেখেছি আমি কী করে ফেলবো তা আমি নিজেও জানি না মিস্টার ইলহাম। আমার বোনের মন নরম বলে আপনি তার মন নিয়ে খেলতে পারবেন তা ভাববেন না। দূরে থাকুন হেমন্তি থেকে আমি না হলে অনেক বড় কিছু ঘ/টি/য়ে ফেলবো।
আবির এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো সামনে বসে থাকা ইলহাম নামক যুবকের দিকে।ইলহাম ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে সানগ্লাসটা খুলে রাস্তার আশেপাশে তাকিয়ে আবিরের কাছে ধীর পায়ে হেঁটে এসে তার কাঁধে হাত রেখে বললো,
~মা’ই ডিয়ার শালাবাবু, আমার বউ হবে তোমার একমাত্র বোন অনেক ভালোবাসি দূরে থাকার প্রশ্নই উঠছেনা।
ইলহামের কথায় আবিরের রা/গ/টা যেন আরো বেড়ে গেলো তার চোখ গুলো লাল বর্ণ ধারণ করলো হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে কড়া গলায় বলে উঠলো,
~আমার বোনের উপর বিশ্বাস আছে সে কোনোদিন বি/শ্বা/স/ঘা/ত/কে/র সন্তানকে ভালোবাসবে না বরং দূর দূর করে
তা/ড়ি/য়ে দিবে।
ইলহাম আবিরের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে পিছন ফিরে গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলো গাড়ির দরজার কাছে গিয়ে আবার আবিরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,
~তোমার সাথে ত/র্ক করার সময় নেই শালাবাবু আমার জান যে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আবির কিছু বলবে তার আগেই ইলহাম হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো এরপর গাড়িতে বসে পরলো বাতাসের গতিতে ইলহাম চলে গেলো।আবির ইলহামের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
~বাবা তোমাকে ছা/ড়/বে/না ইলহাম তোমার পরিবার আমাদের সাথে যেটা করেছে তা সুদে আসলে আমরা তোমাদের কাছ থেকে নিবো।হেমন্তির বিয়ে যখন অন্যকারো সাথে হবে তখন তো খেলা আরো জমে উঠবে।
এতটুকু ভেবেই আবির হালকা হাসলো এরপর নিজ গাড়িতে উঠে বসলো তার এখানে আসাটা হয়তো সফল হয়েছে।
“হেমন্তি” ফুচকার দোকানে দাড়িয়ে মনে আনন্দে ফুচকা খেতে ব্যস্ত আশেপাশে তার খেয়াল নেই এক জোড়া চোখ যে তার দিকে আবেগ নিয়ে তাকিয়ে আছে হেমন্তি যদি সেই চোখের দিকে তাকায় তাহলে হয়তো সেই চোখে সে নিজেই হারিয়ে যাবে।হেমন্তি ফুচকা খাওয়া শেষ করে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে গটগট করে খেয়ে নিলো এরপর টাকা বের করে দোকানদারকে দিতে যাবে তখনই দোকানী বললেন,
~আফা,টাকা লাগবোনা আফনে যেসব মন চায় ওই সময় আয়া খায়া যাইবেন।
হেমন্তি অবাক হলো তার জন্য এত দরদ কেন দেখাচ্ছে?এই লোকটা মনে মনে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক করতে লাগলো তখনই পুরুষালি কন্ঠ তার কানে আসলো,
~তোমার পছন্দের জিনিস আমি কীভাবে দূরে রাখতি পারি তোমার থেকে?
হেমন্তি এই কন্ঠস্বর টির সাথে খুব করে পরিচিত সে পিছন ফিরে তাকালো যে মানুষটির কথা ভেবেছে সেই এসে দাড়িয়ে আছে।হেমন্তির রা/গ হলো মানুষটিকে দেখে সে নাকফুলিয়ে দোকানির দিকে তাকিয়ে বললো,
~দেখেন ভাই আমার বাবার যথেষ্ট টাকা আছে অন্যের ছেলের টাকায় আমার ফুচকা খাওয়ার শখ নেই।
বলেই ব্যাগ থেকে ৫০টাকার নোট বের করে দোকানির হাতে দিয়ে দিলো আর ধুপধাপ পা ফেলে নিজ গাড়ির কাছে এসে পরলো।ইলহাম হেমন্তির এহেন কান্ডে হালকা হেসে হেমন্তির কাছে চলে গেলো হেমন্তি ইলহামকে কাছে আসতে দেখে গাড়ির দরজা খুলতে নিবে তখনই ইলহাম এসে হেমন্তির হাত ধরে ফেললো।হেমন্তি চোখ বড় বড় করে ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
~বে/য়া/দ/বি/র একটা সীমা থাকে মিস্টার ইলহাম।ছাড়ুন আমার হাত ছাড়ুন।
ইলহাম হেমন্তির হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বললো,
~নিজ হবু বউয়ের হাত কেন ছাড়বো আমি?
হেমন্তি তীক্ষ্ণ চোখে ইলহামের দিকে তাকালো হেমন্তি মনে পরে গেলো গত ৬মাসে ঘটে যাওয়া কতশত ঘটনা তবুও নিজেকে সামলে রেখে অন্য হাত দিয়ে চোখের কোণের পানিটুকু মুছে বললো,
~আপনার এবং আপনার পরিবারের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনার বাবা হচ্ছে একজন ব/দ লোক তার জন্য আমার বাবা জে/লে গিয়েছিলো তার জন্য আমার চরিত্রে দা/গ লেগেছে আ’ই জাস্ট হে’ট ইউ এন্ড ইউ’র ফ্যামিলি।
ইলহাম হেমন্তির সকল কথা একপ্রকার হজম করে নিলো কারণ সে জানে হেমন্তির সাথে এই ৬মাসে কতকিছু হয়েছে যদি সেদিন ইলহাম হেমন্তিকে ছেড়ে না যেতো তাহলে হয়তো সবকিছু অন্যরকম থাকতো সে আর হেমন্তি একসাথে থাকতো।ইলহাম হেমন্তির হাত ছেড়ে দিলো হেমন্তি গাড়ির দরজা খুলে বসে পরলো গাড়ির সীটে আর ড্রাইভারকে বললো,
~গাড়ি স্টার্ট দিন চাচা।
ড্রাইভার হেমন্তির কথা মতো কাজ করলো হেমন্তি চলে গেলো ইলহাম দাড়িয়ে হেমন্তির গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে ইলহাম চোখ বন্ধ করে বড় করে নিশ্বাস নিলো। চোখ খুলে মনে মনে বললো,
~আমি সব ঠিক করে দিবো হেমন্তি।
হেমন্তি গাড়িতে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে সেও যে গভীর দহনে পু/ড়/ছে।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার সকল চেষ্টা সে করছে আজও সে মন ভালো করতে ফুচকা খেতে গিয়েছিলো উল্টো মন আরো খা/রা/প হয়ে গেলো।হেমন্তির চোখে বেয়ে পানি পরলো গালে সে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললো আর মনে মনে বললো,
~আর কাঁদবো না আমি অনেক হয়েছে আর না।
থমথমে মুখে ইলহাম বাসায় পৌছে কোনোদিক না তাকিয়ে নিজ রুমের দিকে চললো তখনই ইলহামের বাবা ইশরাক সাহেব তার সামনে এসে দাড়ালেন আর বললেন,
~সকাল থেকে কোথায় ছিলে?অফিসে কেন যাওনি?কতো মিটিং পোস্টপন্ড করেছো তুমি?তোমার এসব হেয়ালি ভালো লাগছেনা আমার।
ইলহাম নিজ বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমারও তোমার এসব অ/ন্যা/য় কাজ ভালো লাগে না।
ইশরাক সাহেব ছেলের দিকে রা/গী দৃষ্টিতে তাকালেন ইলহাম সেই দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে নিজ রুমে চলে গেলো।ইলহামের মা মাহমুদা বেগম সবই দেখলেন রান্নাঘর থেকে সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলের জন্য খাবার প্লেটে সাজালেন।
হেমন্তি রুমে বসে গল্পের বই পড়ছে তখনই হেমন্তির বাবা হাসান সাহেব রুমে প্রবেশ করলেন বাবাকে দেখে হেমন্তি বই সাইডে রেখে বললো,
~কী হয়েছে বাবা?
হাসান সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
~তোকে আগামীকাল পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে আমি তোর মতামত নিতে এসেছি।
হেমন্তির বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
~বাবা,আমি বিয়ে করতে চাইনা এখন।
হাসান সাহেব বললেন,
~হেমন্তি আমি এবার কোনো ভু/ল করবোনা তুই শুধু একটিবার ছেলেটার সাথে কথা বলে দেখ প্রমিস করছি তোর মতামত ছাড়া কিছুই হবে না।
হেমন্তি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~ঠিক আছে আমি তাদের সাথে দেখা করবো।
হাসান সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন হেমন্তির রুমের বাহিরেই আবির দাড়িয়ে আছে সে হেমন্তির কথা শুনে বাঁকা হেসে বললো,
~এখন কী করবে ইলহাম?
বলেই নিশব্দে হেসে উঠলো এরপর নিজ রুমে চলে গেলো হেমন্তি বিছানায় শুয়ে পরলো চোখের কোণ বেয়ে পানি পরছে তার মনে যে বহু কথা জমে আছে কিন্তু শুনার মতো কেউ নেই।মা যদি আজ থাকতো তাহলে হয়তো তার কোলে মাথা রেখে সব অ/ভি/যো/গ হয়তো বলে দিতো।
ইলহাম হাতে আংটি নিয়ে বারান্দায় বসে আছে তার যে মনে অনেক কথা চলছে এই আংটিটার সাথে যে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।তখনই তার ফোনটা বেজে উঠলো ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো “সাইফুল” নামটা জ্বলজ্বল করছে।ইলহাম ফোনটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে সাইফুল বলে উঠলো,
~স্যার,হেমন্তি ম্যাডামকে কালকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে কী করবো এখন?
ইলহাম হালকা হেসে বললো,
~তোমাকে কিছু করতে হবে না যা করার আমিই করবো।
বলেই সে ফোন রেখে দিলো ইলহাম আংটির দিকে তাকিয়ে বললো,
~আগামীকাল যা হবে তার জন্য শুধু আবির দায়ী।
চলবে
(বিদ্র:কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)