#গল্প_তুমি_নামক_নেশা
#লেখিকা_Sabirina_Khanam
Part: 09
মিহির মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে আর রক্তে রাস্তার কিছু অংশ ভিজে আছে। আর অন্যদিকে আয়াশ অবাক। সে এটা কি করলো? নিজের ভালোবাসার মানুষকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিলো। আয়াস স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। গাড়ি সে তখনই থামিয়ে দিয়েছিলো। আর আরশিরও কিছু সময় লাগলো কি হল সেটা বুঝতে। এদিকে রাস্তায় লোক জড় হয়ে গেছে। আয়াশ হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলো। আসলে তখন ঘটনাটা আকস্মিকভাবে ঘটে গেছে বিধায় আয়াশ আর আরশির আসল কি ঘটেছে তা বুঝতে একটু কষ্ট হয়েছ আরকি। আয়াশ লোকজনদের সরিয়ে মিহিকে বুকে জড়িয়ে নিল। আর বলতে থাকলো,,,
মিহি, এই মিহি, চোখটা খুলো প্লিজ। মিহি চোখ খুলো। দেখ তোমার কিছু হবেনা।
আয়াশের প্রায় পাগলপ্রায় অবস্থা। সে আরশিকে ধমকে বলে উঠলো,,
এই গাড়ির দরজা খোল আরশি। ওকে গাড়ির ভিতরে নিতে হবে। এখনি ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
আরশি চটজলদি গাড়ির দরজা খুললো। আয়াশ মিহিকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো। আরশি গাড়ির পিছনের সীটে বসে পড়লো। মিহির মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে নিল। আয়াশ গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো। কিছুক্ষণের মধ্যে আয়াশ মিহিকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যায়। আয়াশ মিহিকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করে ডাক্তারকে ডাকতে থাকে। পিছনে পিছন আরশিও ঢুকে। দুইজন নার্স এসে মিহিকে নিতে সাহায্য করল। এরপর জরুরী অবস্থা দেখে ডাক্তার মিহিকে চেক করতে নিয়ে গেলো। আয়াশকে খুব অসহায় দেখাচ্ছে আজ। আরশি আয়াশের পাশের এসে বসল আর বলল,,,
ভাইয়া দেখিস ছোট ভাবির কিছু হবেনা। ভাবি জলদি সুস্থ হয়ে যাবে। এতো চিন্তা করিস না ভাইয়া।
আয়াশ রেগে বলে উঠলো,,,
আমি ওর কি অবস্থা করেছি দেখেছিস? আজ আমার মিহির এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী। ওর কিছু হলে আমি থাকতে পারবোনা।
আরশি বলল,,,
দেখ ভাবির কোনো ক্ষতি হবেনা।
এর মধ্যে আয়াশের মা আর আয়াশের বড় ভাই আজান উপস্থিত হলো সেখানে। আজান আয়াশকে জিজ্ঞেস করল,,,
কিভাবে হয়েছে এটা?
আয়াশ কেদে চলেছে। আয়াশকে সহজে কান্না করতে দেখেনি কেউ। আর বড় হওয়ার পর জ্ঞান হওয়ার পর তো একদমই না। মেন্টালি অনেক স্ট্রং একটা ছেলে হলো আয়াশ। আর আজ আয়াশের কান্না যেনো কোনো বাধা মানছেনা। নিজের ভালোবাসাকে কোনোদিন এই অবস্থায় দেখবে আর নিজের ভালোবাসার এই অবস্থার জন্যে সেই যে দায়ী থাকবে তা কখনো ভাবতে পারেনি আয়াশ। ওর হৃদয় যেন কেউ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। কারো কোনো কথাই ওর মাথায় ঢুকেছেনা। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক কিনা। আপনারা কি নিজের ভালোবাসাকে এই পরিস্থিতিতে দেখে সহ্য করতে পারবেন? নিশ্চয়ই না। আয়াশেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। আজান আবার আয়াশকে জিজ্ঞেস করল,,,
কিরে বল, মিহির এই অবস্থা কিভাবে হলো?
আরশি বলল,,, আমি বলছি ভাইয়া। আসলে আমি আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় আয়াশ ভাইয়াকে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। ভাইয়াও আমাক নিয়ে যাচ্ছিলো গাড়ি করে। হঠাৎ করে মেইন রোডে তখন মিহি ভাবি এসে পড়ে। আর ভাইয়া ব্রেক করার আগেই যা ঘটার তা ঘটে গেলো।
আজান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,,, মিহি ভাবি মানে?
মিসেস আসমা বললেন,,, উফ আজান এখন এসব প্রশ্নের সময় না। আমি তোকে এটা পরে বুঝিয়ে বলব।
আজান রেগে বলল,,, মা তা নাহয় বাদ ই দিলাম। কিন্তু একটা মানুষ এতোটা কেয়ারলেস হয় কেমনে? গাড়ি চালানোর সময় সবকিছু দেখে ঠিকমতো দেখে চালাতে হয়।
মিসেস আসমা বললেন,,, হয়েছে আজান থাম এবার। এমনিতেই আয়াশের মানসিক অবস্থা ভালো না।
আজান ওর মায়ের কথায় চুপ থাকল। কিন্তু সে সত্যি আয়াশের কেয়ারলেস থাকার কারনে একটা মানুষের এই ক্ষতিটুকু সহ্য করতে পারছেনা।
আরশি জিজ্ঞেস করল,,, ভাইয়া বড় ভাবি কোথায়?
আজান বলল,,, মায়া মায়ানের সাথে বাড়িতেই আছে। মায়ানে একা থাকবে দেখে রেখে আসছি।
আরশি বলল,,, ওহ আচ্ছা ঠিক আছে।
কিছুক্ষণ পর ডক্টর এলো। আয়াশ ডক্টরকে দেখে উঠে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল,,,
ডক্টর প্লিজ বলুন না আমার মিহি কেমন আছে? আর ও ঠিক হয়ে যাবে তো?
ডক্টর বললেন,,, ইয়াং ম্যান শান্ত হোন। আপনি এভাবে ভেংগে পড়লে চলবেনা।
আয়াশ বলল,,, আগে বলুন মিহি কি ঠিক আছে নাকি? আমি ওর সাথে কখন কথা বলতে পারব।
ডক্টর বললেন,,, সরি টু সে বাট আমরা মিহিকে ২৪ ঘন্টা অব্জার্ভ করব। মিহিকে দেখে যা বুঝলাম ও এমনিতেই মেন্টালি ডিপ্রেসড ছিলো আর অনেক শকের মধ্যে ছিলো। তার উপর দিয়ে তো এই এক্সিডেন্ট। যদি এর মধ্যে মিহির জ্ঞান না ফেরে তাহলে হয়তো ও কোমায় চলে যেতে পারে। আর জ্ঞান ফিরলেও ওর স্মৃতি হারানোর আশংকা আছে। এবার আমায় যেতে দিন।
আজান বলল,, ওকে ডক্টর। আপনি যান।
আয়াশ ডক্টর এর কথা শুনে পুরো ভেংগে পরেছে বলা যায়। আয়াশ একা একা বলছে,,, মিহির কিছু হলে আমি কি করব? আমার মিহি যদি কোমায় চলে যায় তবে কি করব আমি?আর মিহির স্মৃতি না থাকলে তো আমায় ও চিনতে পারবেনা। নাহ আমার মিহির কি ক্ষতি করলাম আমি এটা? আমার মরে যাওয়া উচিত। আমার মরে যাওয়া উচিত।
এই বলে আয়াস নিজেকে মারতে থাকে। মিসেস আসমা আতকে বলে উঠে আজান ওকে থামা। আজান আয়াশকে চেপে ধরে বলে,,,
ভাই আমি কথা দিচ্ছি মিহি সুস্থ হয়ে উঠবে। তুই শান্ত হো।
আয়াশ বলল,,, সত্যি?
আজান বলল,,, হ্যা সত্যি।
আয়াশ চুপ করে গেলো। আসলে আয়াশ নিজেই এখন মেন্টালি শক এর মধ্যে আছে। তাই ওর আচরণটা একটু অন্যরকম। আয়াশ চুপ করে বসে মিহির জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করতে লাগলো।
________________________
মাহি কয়েকবার মিহির নম্বরে ডায়াল করছে। কিন্তু মিহির নম্বরে সংযোগ যাচ্ছে না। মাহি এবার ঠিক করল মিহির বাড়িতে যাবে। সে এই ভাবে রওয়ানা দিয়ে দিল মিহির বাড়ির উদ্দেশ্যে।
__________________________
আয়াশের দুঃসময়ের সাথী সুসময়ের সাথী সবকিছুতেই আবির। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করার পর আয়াশ আবিরকে কল দিল। আবির রিসিভ করল। আবিরই কথা বলা শুরু করল,,,
হ্যাঁ আয়াশ বল।
,,, আবির আমি অনেক খারাপ একটা খারাপ কাজ করে ফেলেছি।
,,, তোর কন্ঠ এমন কেনো শুনাচ্ছে আয়াশ? কি হয়েছে?
,,,আজ আমার কারনে মিহির মাথা থেকে রক্ত ঝরেছে। আমার কারনে মিহির এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি কেন ঠিকমতো গাড়ি চালালাম না আবির?
,,, মিহি ভাবির এক্সিডেন্ট হয়েছে। কই তুই এখন?
,,, আমি হাসপাতালে। ডক্টর বলেছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে মিহি কোমায় চলে যাবে। আর জ্ঞান ফিরলেও ওর স্মৃতি হারানোর আশংকা আছে।
,,, কোন হাস্পাতালের আছিস?
,,, আমি ওকে নিয়ে………… আছি।
,,, ঠিক আছে আমি আসছি।
,,, আমি রাখি।
,,, হুম।
আবির রওয়ানা দিলো হাসপাতালের উদ্দেশ্য। পথিমধ্যে তার মাহির সাথে দেখা। মাহি মন খারাপ করে রাস্তায় হাটছে। আবির মাহির সামনে গিয়ে বলল,,,
মন খারাপ কেন মাহি?
মাহি আবিরের দিকে একবার তাকালো। তারপর আবার হাটা শুরু করল।
আবির মাহির হাত ধরে বলল,,, মাহি আমার কথাটা শুনো।
মাহি এক ঝটকা দিয়ে আবিরের হাত ছাড়িয়ে নিল।তারপর আবিরকে বলল,,, একেতো মিহির খোজ পাচ্ছিনা আর আপনি আমায় জ্বালাতে জুটেছেন এখন। আপনার কি খেয়ে দেয়ে অন্য কোনো কাজ নেই?
আবির বলল,,, তুমি মিহি ভাবির ব্যপারে জানো না?
মাহি বলল,,,, ইসস এমন ভাব যেন আপনি আমার বান্ধবীর সম্পর্কে খব জেনে বসে আছেন।
আবির বলল,,, মাহি এটা একটা সিরিয়াস ইস্যু। পাগলের মত আজিরা কথা বলোনা।
মাহি বলল,,, কি? আমায় পাগল বললেন?
আবির বলল,,, উফ মাহি মিহি ভাবির এক্সিডেন্ট হয়েছে। সে এখন হাসপাতালে।
মাহি বলল,,, কিভাবে? আমার মিহি কেমন আছে?
আবির বলল,,, মিহির আয়াশের গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়েছে। মিহি হঠাৎ মেইন রোডে এসে পরে। আর তখনই এক্সিডেন্ট হয়। ডক্টর বলেছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি মিহির জ্ঞান না ফেরে তাহলে ও কোমায় চলে যেতে পারে। আর ফিরলেও মিহির স্মৃতি হারানোর আশংকা আছে। আমি এখন ওখানেই যাচ্ছি। তুমি চাইলে আমার সাথে আসতে পারো।
মাহি এতোক্ষণ স্তব্ধ হয়ে আবিরের কথা শুনছিল। তার এই কথাগুলো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো। মাহি বলে উঠলো,,,
আমি যাবো। আমি যাবো আপনার সাথে।
আবির বলল,,, তাহলে চলো।
আবির আর মাহি হাসপাতালে যেতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পৌঁছে যায় সেখানে।
মাহি সেখানে পৌছে হুট করে সবার সামনে আয়াশকে একটা চড় মেরে বসে। তারপর আয়াশের কলার চেপে ধরে বলে……
চলবে……