#গল্প_তুমি_নামক_নেশা
#লেখিকা_Sabirina_Khanam
Part: 08
মিহির মামি মিহিকে থাপড়ে থাপড়ে বাড়ি থেকে চুলের মুটি ধরে বের করে দিচ্ছে। মিহি বারবার বলছে মামি আমাকে ছেড়ে দাও আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানিনা। কিন্তু মিহির মামি মিহির কোনো কথাই শুনলোনা। ধাক্কা দিয়ে মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল। আর বলল,,,
হারামজাদি আর যদি তোর মতো এই চরিত্রহীনার মুখ আমার সামনে যাতে না দেখি। যা চলে যা এই বাড়ি থেকে।
এই বলে মিহির মামি মিহির মুখের উপর সদর দরজা বন্ধ করে দিলো। মিহি নিজেকে প্রমান করার কোনো সুযোগই পেলো না।
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা…..
মিহির মামি বসে বসে টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ করে বাসার কলিং বেল বেজে উঠায় সে খানিকটা বিরক্ত হলেন। সে ভেবছিলেন মিহি এসেছে। একটু রাগী রাগী ভাব নিয়ে সে উঠে বাড়ির সদর দরজা খুললেন। খুলে সে তার আশানুরূপ মানুষটিকে দেখেননি। সে একজন অপরিচিতা মহিলা আর একটা মেয়েকে দেখলেন। মিহির মামি অপরিচিতা মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন,,,
কাকে চাই?
সেই মহিলা বললেন,,, আমি আয়াশের মা।
,,,কোন আয়াশ।
পাশের মেয়েটি বলে উঠলো,,,রকস্টার আয়াশ।
,,,ওহ আচ্ছা। তো আপনাদের আমার বাড়িতে কি?
,,,আমি আপনার মেয়েকে আমার ছেলের বউ অর্থাৎ আয়াশের বউ করে নিতে চাই। আমি আর মায়া এই ব্যাপার এই কথা বলতে এসেছি।
মিহির মামি বুঝতে পারলেন পাশের মেয়েটির নাম মায়া। কিন্তু আয়াশের মা তার মেয়েকে নিজের বাড়ির বউ করে নিতে চান এই কথা শুনেই সে খুশিতে আটখানা। মিহির মামি বললেন,,,
আসুন আপা, বাহিরে কেনো দাঁড়িয়ে আছেন? ভিতরে আসুন।
মিহির মামির সাথে মায়া আর মিসেস আসমা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলেন। এরপর মিহির মামি মিসেস আসমা আর মায়ার সাথে টুকটাক কিছু কথা বললেন। তাদের কিছু খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। মিহির মামি নিজের মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। হঠাৎ মিসেস আসমা বললেন,,,
আপা আমরা একবার আপনার লক্ষী মেয়েটার সাথে দেখা করে যেতে চাই।
,,,হ্যাঁ হ্যাঁ আপা অবশ্যই। রিসা মা এদিকে আয় তো?
,,,একমিনিট আপা আপনি কার নাম নিলেন?
,,,কার নাম আর কি? রিসা আমার মেয়ের নামই নিয়েছি।
,,,মিহির আরেক নাম কি রিসা?
,,,মিহি?
এরমধ্যে রিসা সেখানে উপস্থিত হলো। সে সবার কথাবার্তা দাঁড়িয়ে শুনছে।
মায়া রিসাকে দেখে বলল,,, মা এই মেয়ে তো মিহি না।
মিসেস আসমা বললেন,,, হ্যাঁ আপা আমরা তো মিহির ব্যাপারে কথা বলছিলাম। রিসা এর কথা তো বলিনি। মিহি কোথায়? ওকে ডাকুন।
মিহির মামি মিসেস আসমার কথা শুনে অনেক রেগে গেলেন। আর বললেন,,,
বের হন, বের হন এখনি আমার বাড়ি থেকে। আর এক মুহুর্তও আপনাদের আমি এই বাড়িতে দেখতে চাই না।
মিসেস আসমা বললেন,,, আরে আপা শান্ত হন। মিহি কোথায়? ও কি এখন বাড়িতে নেই?
,,, এই বাড়িতে মিহি বলতে কেউ থাকেনা। আর আপনারা বের হন এই বাড়ি থেকে।
মিহির মামি মিসেস আসমা আর মায়াকে বের করে দিলেন। মিসেস আসমা আর মায়া মিহির মামির এহেন আচরনে বেশ অবাক হয়েছেন। অন্যদিকে একটু আগে যা যা ঘটলো তা রিসার মাথার উপর দিয়ে গেলো। মিহির মামি তো রাগে সাপের মতো ফুসছেন। রিসা তার মাকে জিজ্ঞেস করল,,,
কি হয়েছে মা? ওনারা কারা ছিলেন? আর এখানে কি করতে এসেছিলেন? আর তুমি তাদের সাথে এমনই বা করলে কেনো?
মিহির মামি বললেন,,, ওরা মিহির সমন্ধ নিয়ে এসেছিল। দিয়ে দিয়েছি তাড়িয়ে। আর আজ মিহি আসুক বাসায়। আজ আর ওর রক্ষে নেই।
আর অন্যদিকে সেই সময়ে মিহি অনাথ আশ্রমে ছিলো। বাচ্চাদের সাথে খেলছিল সে। আর মন থেকে একটু অপেক্ষা করছিলো আজ যদি একটু আয়াসজ আসতো আর সে যদি আয়াশকে কিছুক্ষনের জন্যে দেখতে পেতো। আয়াশকে এক নজর দেখার জন্যে মিহির মন৷ ছিলো উতলা। কিন্তু দুর্ভাগ্য আজ তো আয়াশ আসলোই না। সেও মন খারাও করে বাসায় ফিরে গেলো। সে তো আর জানতো না যে আজ বাসায় তার জন্যে কি অপেক্ষা করছে।
মিহি যখন বাসায় ফেরে তখনই মিহির মামি মিহিকে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে। মিহি তো কারনও জানেনা যে কেন তাকে এভাবে মারা হচ্ছে। মিহির মামি মিহিকে বলে,,,
আর কয়টার সাথে থাকছিলি? আর কয়টা আসবো এই বাসায় তোর জন্যে?
মিহি বলল,,,মামি তুমি কি বলছ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। আর তুমি এমন বাজে কথা বলছো কেনো?
মিহির মামি মিহিকে মারতে মারতে বললেন,,,
ওহ আমি এখন বাজে কথা বলছি? ওরা তো মনে হয় খুব সুন্দর করে কথা বলে। কিরে তুই এসবের আগে তোর মরা মামার কথা নাহয় নাই ভাব, আমাদের কথাও নাহয় নাই ভাব, তোর মরা মা বাপের কথাও ভাবলি না?
মিহি কাদতে কাদতে বলল,,, মামি তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝছিনা।
মিহির মামি বলল,,, এখন বুঝবি কেমনে? এখন তো তুই সাধু তাইনা? ওই আয়াশের পরিবার তোকে নিয়ে যেতে এসেছিল, বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তা কি করেছিস ওদের সাথে যে ওরা তোর মতো মেয়েকে বাড়ির বউ বানাতে এসেছিল?
মিহির মামির কথা শুনে মিহির চক্ষু চড়কগাছ। আয়াশের পরিবার এসেছিল। কিন্তু তাতে ওর মামি এমন ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলছে কেনো?
মিহির মামি মিহিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিহিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আর বাকিটুকু তো আপনারা জানেনই।
বর্তমানে……
মিহি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। আর একলা একলা নিরবে চোখের অশ্রু ফেলে চলেছে। সে এখন কি করে ভেবে পাচ্ছেনা। তার সাথে কিছুই নেই। না আছে টাকা আর না আছে ফোন যা দিয়ে সে কারো সাথে যোগ করতে পারবে। একটা পড়নের কাপড়েই তাকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।
আবিরের খুব মাহির কথা মনে পরছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মাহির ফোন নাম্বারও তার কাছে নাই। সে আয়াশকে ফোন দিলো। আয়াশ রিসিভ করার পর নিজেই বলল,,,
কি বন্ধু কেমন আছো?
,,,ভালো না রে।
,,, কেন কি হইছে তোর আবার?
,,,মাহি
,,,কি মাহি?
,,,ওকে খুব মিস করছি।
,,,তো?
,,,তো মানে কি? তুই মিহি ভাবিকে মিস করিস না নাকি?
,,,করি তো। কিন্তু হয়তো আমার মিস করার দিন ফুরায় আসছে। এখন শুধু বিয়ের অপেক্ষা।
,,,মিহি ভাবির পরিবার রাজী?
,,, জানিনা কিন্তু রাজী হতে কতক্ষণ। মা তো ওখানেই আছে মায়া ভাবির সাথে। এখন ওরা ফিরলে জানতে পারব।
,,,ওহ ভালো তো।
,,,হুম, তা তুই এতো মনমরা কেন?
,,,মাহি
,,,আরে কি মাহি?
,,,আমার কাছে মাহির নাম্বারটাও নাই। ওকে খুব মিস করছি। তাই তো তোকে কল দিয়েছি।
,,, শয়তান পোলা, তুই বউকে মিস করিস দেখে বন্ধুকে কল দিয়েছিস?
,,,হ্যাঁ তো তোর সাথে শেয়ার করবনা?
,,,মীরজাফর একটা। তুই বউ পাবিনা।
,,,ওই একদম এমন উল্টো পাল্টা কথা বলবিনা। মেরে একদম নাক ফাটিয়ে দিব। আমার মাহিকে চাই।
,,, আমি কি তোর নাক রাখব ভাবছিস? তোর নাক কেটে ফেলব আমি।
মাঝ দিয়ে আবিরের মা পাশ দিয়ে বললেন,,, এই তোরা মেয়েদের মতো ঝগড়া করিস কেন?
আবির তার মাকে বলল,,, শেষ পর্যন্ত তো স্বীকার করলা যে মেয়েরা ঝগড়া করে বেশি।
আয়াশ ফোনের ওপাশে ফিক করে হেসে উঠলো। আর আবিরের মা আবিরকে তাড়া করা শুরু করলো। আবির বলল,,,
ভাই পরে কথা বলি, আগে পালাই জুতার বারি খাওয়া থেকে।
আয়াশ বলল,,, বেচে থাকলে কল দিও বাবা।
আবির বলল,,, ফোন রাখ তুই।
আয়াশ,,, হুম বাই।
আয়াশ হাসতে হাসতে ফোন রেখে দিলো। আর ওইদিকে হয়ত আবির মায়ের হাতের মার খাচ্ছে। আয়াশের পিছন থেকে আরশি বলে উঠলো,,,
আমাকে একটু আমার ফ্রেন্ড এর বাসায় দিয়ে আসতে পারবি ভাইয়া?
,,,হুম পারবো। কিন্তু ড্রাইভার এর সাথেই তো যেতে পারিস।
,,,আরে মা আর বড় ভাবি তো তাকে নিয়ে ছোট ভাবির বাসায় গিয়েছে। তুই তোর গাড়ি দিয়ে আমায় দিয়ে আয়না প্লিজ?
,,,হ্যাঁ হ্যাঁ দিয়ে আসছি। তুইও বা কি মনে রাখবি? রেডি হয়ে নে, আমি দিয়ে আসছি।
,,,ঠিক আছে ভাইয়া।
,,,হুম যা।
আরশি আর আয়াশ বেরিয়ে পড়লো গাড়ি করে।
আর অন্যদিকে মিহি অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। সে চিন্তা করছে সে এখন কি করবে? তার কাছে তো কোনো টাকাপয়সাও নেই। সে এখন চলবেই বা কি করে? এদিকে মিহি কিছু খায়নি। মাথা ঘুরোচ্ছে তার। সে ঠিকমতো হাটতেও পারছেনা। মিহি অন্যমনস্ক হয়ে হাটতে থাকে। মিহি রোড ক্রস করতে গেলো। কিন্তু সে ঠিকমতো হাটতে পারছিলো না দেখে একটা গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো মিহির। রক্ত গড়িয়ে পরছে মিহির মাথা থেকে।
চলবে….