তুমি নামক নেশা পর্ব-০৭

0
1840

#গল্প_তুমি_নামক_নেশা
#লেখিকা_Sabirina_Khanam

Part: 07

ভালোবাসো তো বলতে কেন এতো ভয়? যা হয় হোকনা, ভালবাসাকে করে নাও জয়।

মিহি আচমকা এই কথা শুনে পিছনে ঘুরে তাকালো। দেখল আয়াশ ওর পিছে দাঁড়িয়ে আছে। মিহি কৌতুহলী দৃষ্টিতে আয়াশের পানে তাকিয়ে রইল। আয়াশ পুনরায় বলল,,,

কি হলো? তাকিয়ে আছো কেন?

মিহি নিশ্চুপ। তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছেনা।তার মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছে। আর তা হল আয়াশ এখানে আসলো কিভাবে?

আয়াশ আবার প্রশ্ন করল,,, কি হলো মিহি? উত্তর দাও।

মিহি এখনো নিশ্চুপ। মিহি যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

আয়াশ বলল,,, ওহ বুঝেছি। তোমার মাথায় এই প্রশ্ন ঘুরছে তাইনা যে আমি কিভাবে এখানে এসেছি?

মিহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

আয়াশ বলল,,, সেটা নাহয় পরে জানাই। এখন আমি যা বলি সেটা নাহয় শুনো।

মিহি চুপটি করে আবার মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

আয়াশ বলল,,, মিহি জানো ভালোবাসার টান কি? অবশ্য না জানার কথা না। আমি জানি তুমি আমায় ভালোবাসো। তাই তো আমি তোমার ভ্রম হয়ে তোমার কল্পনায় তোমার অন্তরে জায়গা করে নিতে পেরেছি।

মিহি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,,,, মানে এটা এখন যা হচ্ছে? সব আমার কল্পনা?

আয়াশ বলল,,, তাই বলতে পারো। কিন্তু তাই বলে আমি এখন যা বলছি আর যা বলব, সব মিলিয়ে তুমি যা শুনবে সেসব কিন্তু মিথ্যে না।

মিহি বলল,,, আপনি কি করে জানলেন আমি আপনাকে ভালোবাসি?

আয়াশ বলল,,, আমি তোমার কল্পনায় এসেছি। তাই এটা আমার পক্ষে জানা কোনো অসম্ভব ব্যপার না। তবে মিহি একটা কথা বলি, তুমি নিজে যাচাই কর যে আয়াশ তোমায় ভালোবাসে নাকি? আয়াশ যদি সত্যিই তোমায় ভালবাসে, তাহলে তোমার ইচ্ছে হলে ওর ডাকে সাড়া দিয়ে দিও।

মিহি প্রশ্ন করলো,,, আমি কিভাবে বুঝব আয়াশ যে তুমি আমায় সত্যি ভালোবাসো নাকি?

আয়াশ বলল,,, এটার উপায় তুমি নিজেই বের করে নিবা।

মিহি বলল,,, কিভাবে?

আয়াশ বলল,,, পরিস্থিতি বলে দিবে।

মিহি বলল,,, আচ্ছা।

আয়াশ বলল,,, এবার চোখ বন্ধ কর।

মিহি বলল,,, কেন?

আয়াশ বলল,,, নাহলে আমি এখন যেতে পারবনা।

মিহি আদুরে গলায় বলল,,, তাহলে যেও না।

আয়াশ বলল,,, বাস্তবে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিও। তখন আমি যাবো না। থেকেই যাবো। এখন চোখ বন্ধ কর প্লিজ।

মিহি আর কথা বাড়ালো না। সে বুঝতে পেরেছে ঠিকই যে এখানে আয়াশ মিহির ভ্রম। প্রায় আয়াশকে কল্পনা করে মিহি। হয়ত ভাল বাসে দেখে। তারপর এভাবে চোখ বন্ধ করলে আয়াশ চলে যায়। আজও চলে যাবে। মিহি চোখ বন্ধ করল। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখলো আজও আয়াশ চলে যাচ্ছে।

আর ওদিকে নিরব হয়ে ৩ প্রেমিক তাদের ভালোবাসার কথা মনে করছে। আয়াশ তার গীটারে সুর তুলছে। আর মিহির কথা মনে করছে। রিয়ান মিহির ছবি বুকে আকড়ে ধরে বসে আছে। আর সেও মিহির কথা মনে করছে। আরেকজন হল আবির। সেও তার গীটার এ সুর তুলছে। আর গুনগুন করে গান গাচ্ছে। আর নিজের কল্পনায় তার ভালোবাসার মানুষকে মনের মতো সাজাচ্ছে।

মাহি পার্কে বসে আছে। অপেক্ষা করছে মিহির জন্যে। আসলে এই কয়েকদিন মিহির খুব জ্বর ছিল। তাই সে মিহির সাথে দেখাও করতে পারেনি। একদিন মিহির সাথে যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও পরবর্তী দিনগুলোতে বন্ধ থাকেনি। সে অপেক্ষা করছে মিহির আসার। মিহি বলেছে সে মায়ানকে পড়িয়ে তারপর আসবে। অবশ্য এতক্ষণে মিহির আসার কথা। কিন্তু মিহির আগমন না ঘটলেও এক অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির আগমন ঘটল সেখানে। একদমই দেখতে পারেনা মাহি তাকে। আপনাদের কি জানতে ইচ্ছে করছে সেই ব্যক্তিটি কে? বলছি বলছি। লোকটা এসে মাহির সামনে দাড়ালো। লোকটাকে দেখা মাত্রই মাহি ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালো। সাথে সাথে সে উঠে যেতে চাইলো। তখন সেই ব্যক্তি মাহির সামনে এসে পথ আটকালো। আর বলল,,,

এতো উড়াউড়ি করো কেন বোকাপাখি?

মাহি কোনো উত্তর দিল না। সে অন্য পাশ দিয়ে চলে যেতে নিলে সেই ব্যক্তি আবার পথ আটকালো। মাহি বলল,,,

আপনার সমস্যা কি?

,,, আমার মনে হয় তোমার সমস্যা আছে মাথায়। এতোবার এক কথা বলি তোমার মাথায় ঢুকে না?

,,, দেখুন আমার মাথায় এটা ঢুকবেও না। কারন আমি নিজেই ঢুকাতে চাইছি না। পথ ছারুন।

,,, একটু শুনো আমার কথা।

,,, মিস্টার আবির আমি আপনাকে অনেকবার বলে ফেলেছি। আমি আপনাকে ভালোবাসি না। বাসতেও পারবনা। বুঝতে পেরেছেন আমার কথা?

( এইযে ওদের মাঝখানে একটু আমি ঢুকলাম। আজকের part পড়ে আপনারা বিচার করবেন মাহির সাথে আবিরকে কেমন মানাবে? যদি আপনাদের ভালো না লাগে তাহলে আমি ২ জনকে আলাদা করে দিবো। আর যদি ভালোলাগে তাহলে আমি খুশি হব। নাও মাহি আবির তোমরা আবার তোমাদের ঝগড়া করা শুরু কর।)

,,, আমি কী দোষ করেছি? আমায় ভালোবাসতে তোমার সমস্যা কি?

,,, কারন আমার আপনার প্রতি কোনো ফিলিংস নাই।

এভাবেই ওরা কথা বলতে থাকলো। তখনই মিহি মাহি আর আবিরের সামনে আসলো। সে ওদের দেখে অবাক পানে চেয়ে রইল। মিহি জিজ্ঞেস করল,,,

কি হচ্ছে এখানে?

মাহি আর আবির মিহির দিকে তাকালো। আবির মাহিকে দেখে বলল,,,

আরে ভাবি আপনি এখানে?

মাহি আর মিহি আবিরের এই প্রশ্নে অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছে। মিহি আর মাহি একসাথে প্রশ্ন করে উঠলো,,,

ভাবিইই????

আবির বলল,,, আরে ভাবি আপনাকে ভাবি না বললে কি বলব? আয়াশের বউকে তো আর আমি নাম ধরে ডাকতে পারিনা।

মাহি প্রশ্ন করল,,, আপনি আয়াশকে চিনেন? আর মিহিকেও চিনেন?

আবির বলল,,, আয়াশকে চিনেনা এমন মানুষ খুব কমই আছে। আর আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আর ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর আয়াশের ভালোবাসা আমার ভাবি মিহি। তাকে আমি চিনবোনা?

মিহি বলল,,, আচ্ছা বুঝলাম আপনি আয়াশের ফ্রেন্ড। তবে মাহির সাথে আপনার কি?

আবির বলল,,, মাহি আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আমার ভালোবাসা।

মিহি যেন আজ অবাক হবে প্রতিজ্ঞা করে এসেছে। তাই খালি সে অবাক হচ্ছে আর অবাকই হচ্ছে। মিহি বলল,,,

আপনি সত্যিই মাহিকে ভালোবাসেন? নাকি আয়াশের মতো মাহিও আপনার মোহ?

আবির বলল,,, ভাবি আপনি যাইহোক আমার বন্ধুর ভালোবাসা অপমান করতে পারেন না। আর আমার ভালোবাসা তো একদমই না। আমি মাহিকে ভালোবাসি আর ওকেই ভালোবাসি।

মাহি মিহির হাত ধরে বলল,,, মিহি আর কথা বাড়াস না। চল এখানে থেকে।

মিহি কিছু বলল না। কারন সে নিজেই নিজের কথার ভুলের জন্যে লজ্জিত। মাহি মিহির হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।

আবির হতাশ হয়ে মাহির যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। তখন আপনমনেই সে নিজের গীটারের সুর তুললো। আর গান গাওয়া শুরু করলো। মাহি আর মিহি আবিরের গান শুনে থমকে দাড়ালো। আবির গান গাওয়া শুরু করলো।

Dil Bata Zara Yeah Kya Hoa Tujhay

Yeah Kaisi Rahon Main Tu Lay Chala Mujhay

Hum Rah Voh Mera, Meray Sath Na Chalay

Kyun Pass Ho Kay Bhi Hain Itnay Faslay

Tuj Say Juda Ho Kay Bhi Main Tuj Main Rahon

Dil Main Chupi Baat Hai Jo Kaisay Kahon

Sun Mahia,
Yun To Payr Hai Boht

Sun Mahia,
Yun To Payr Hai Boht

Sun Mahia,
Sun Mahia
Sun Mahia,
Sun Mahia

এইটুকু গেয়ে আবির গীটার রেখে দিল। ইতিমধ্যে সেখানে অনেক ভীড় জমে গেছে। অনেকে আবিরের কাছে অটোগ্রাফ চাইছে। আবির তাদেরকে এড়িয়ে মাহির কাছে আসলো। তারপর বলল,,,

আমার ভালোবাসা ঠুনকো নয় মাহি। বিবেচনা করে দেখ।

আবির ওর গীটার নিয়ে মিহি আর মাহির পাশে দিয়ে চলে আসতে লাগলো। মাহির পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় আবির বলে গেলো,,,,

Sun Mahia,
Yun To Payr Hai boht

,
,
,
,

রাত্রিবেলা…..

মিসেস আসমা আয়াশেক বললেন,,,,

কাল কিন্তু আমি আর মায়া মিহিকে দেখতে যাচ্ছি। বরং পাকা কথা দিয়ে আসবো। এই কয়েকদিনে আমার মিহিকে খুবই পছন্দ হয়েছে।

আয়াশ খুশি হয়ে বলল,,, সত্যিই মা??

,,,হুম

,,, I love u maa

,,, হইছে। কিসের জন্যে এতো ভালবাসা সবই বুঝি। এখন ঘুমা যা।

,,,, দাড়াও আবিরকে বলে নিই।

,,, আচ্ছা।

মিসেস আসমা চলে গেলেন। আর আয়াশ আবিরকে কল করল। কিন্তু ওয়েটিং এ আছে শোনাল। পরপর কয়েকবার একই কাহিনি ঘটল। এরপর আবির কল দিল। আয়াশ বলল,,,

কিরে কার সাথে এতো কথা বলছিলি?

,,,তুই বল তুই কার সাথে এতো কথা বলছিলি? খালি ওয়েটিং শুনায় কেন?

,,,তুইও এটাই শুনেছিস?

,,,হুম, তুইও?

,,,হুম

,,,এর মানে বুঝেছিস?

,,, হ্যা। আচ্ছা শুন, কাল মা মিহির সাথে আমার বিয়ের ব্যপারে পাকা কথা বলতে যাচ্ছে।

,,,thats great, আর শুন আমি যে এতোদিন যাকে ভালোবাসি বলতাম তোর কাছে…

,,,তাকে ভালোবাসিস না আর? ছি আমার ফ্রেন্ড হয়ে র
এমন করতে পারলি?

,,,ধ্যাত সেই মেয়ে তোর বউ এর ফ্রেন্ড, তোর শালী।

,,,কি?

,,,হ্যাঁ।

,,,congratulation

,,,same to u bro। আচ্ছা যাইহোক কাল কথা হবে রাখি।

,,,হুম।

আবির ফোন রেখে দিলো। একটা রাত পার হয়ে গেল।

পরদিন শুক্রবারে……

মিহির মামি মিহিকে থাপড়ে থাপড়ে বাড়ি থেকে চুলের মুটি ধরে বের করে দিচ্ছে। মিহি বারবার বলছে মামি আমাকে ছেড়ে দাও আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানিনা।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে