তুমি নামক নেশা পর্ব-০৫

0
1817

#গল্প_তুমি_নামক_নেশা
#লেখিকা_Sabirina_Khanam

Part: 05

মিহি পৌছিয়ে গেলো তার গন্তব্যতে। একটা অনাথ আশ্রম। সেখানের শিশুরা তার মতোই অনাথ। মিহি তার টিউশনির মাধ্যমে যত টাকা ইনকাম করে তার থেকে ১-২ হাজার টাকা সে এই অনাথ আশ্রমে ব্যয় করে। মিহি আশ্রমের বাচ্চাদের জন্য কিছু চকলেট নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে আজ বাচ্চাদের হাতে অনেক অনেক খেলনা। তারা খুশিতে লাফাচ্ছে। একে অপরের সাথে মজা করে খেলছে। মিহি অবাক হলো। হুট করে কে আবার ওদের এসব দিয়ে গেলো? সে বাচ্চাদের ডেকে তার কাছে আনে। তারপর তাদের হাতে চকলেটগুলো দিয়ে আর তাদের সাথে একটু গল্প করে অনাথ আশ্রমের অফিস রুমে চলে আসে। সেখানে গিয়ে মিহি পুরোই থ। আয়াশ বসে বসে অনাথ আশ্রমের ম্যানেজার এর সাথে কথা বলছে। মিহি আয়াশকে দেখে চুপটি করে সেখানে থেকে চলে আসতে নিলো। তখন ম্যানেজার তাকে দেখে ফেলে। আর বলে,,,

আরে মিহি মা ওখানে দাঁড়িয়ে আছো যে? ভিতরে আসো।

মিহির আর কি করার? সে রুমের ভিতরে আসলো। এসে একপাশে দাড়িয়ে রইল।

ম্যানেজার আবার বললেন,,, মিহি তুমি দাড়িয়ে আছো কেন? বসো এখানে।

ম্যানেজার মিহিকে আয়াশের পাশের সিটে বসতে বলল। মিহি ইতস্তত করে সেখানে বসল। আয়াশ তো মিহিকে দেখে মহাখুশি। কিন্তু সেটা সে প্রকাশ না করে অন্তরেই চেপে রাখলো। আয়াশ চুপ করে ভাব ধরে ফোন চালাতে লাগল। ম্যানেজার বলল,,,

মিস্টার আয়াশ, এই হলো মিহি। আরিয়া ইশরাত মিহি।

আয়াশ মিহির দিকে একটু তাকিয়ে হ্যান্ডশেক করার উদ্দেশ্যে ডান হাত বাড়িয়ে বলল,,, নাইস টু মিট ইউ।

মিহি তো পড়েছে মহা ঝামেলায়। সে মনে মনে বলতে লাগলো,,, আজকেই এই কুফার এখানে আসতে হল। আগে জানলে আমি নিজে আজ এখানে আসতাম না।

আয়াশ হাত বাড়িয়েই রেখেছে। সে আবার হাত আরেকটু এগিয়ে বলল,,,নাইস টু মিট ইউ।

ম্যানেজার মিহির আর আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে। মিহি বাধ্য হয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,, সেম টু ইউ।

তারপর মিহি হাত আলগা করে দিলো। কিন্তু আয়াশ এখনো মিহির হাত এখনো ধরে আছে। মিহি বলল,,, মিস্টার আয়াশ আমার হাত ছাড়ুন।

আয়াশের হুশ এলো। সে আসলে এতোক্ষণ মিহির স্পর্শ অনুভব করছিলো। মিহির কথায় জলদি জলদি আয়াশ মিহির হাত ছেড়ে দিলো। তারপর ম্যানেজারকে বলল,,, আজ তাহলে আসি।

মিহি খুশি হয় এটা শুনে। সে মনে মনে বলতে থাকে আলহামদুলিল্লাহ। যা তুই চলে যা।

ম্যানেজার মিহির খুশিতে গরম পানি ঢেলে দিয়ে বলল,,,

স্যার এতোজলদি কেন আজ চলে যাবেন? কিছুক্ষণই তো হলো এলেন। আরেকটু থাকেন প্লিজ। বাচ্চাদের সাথে সময় কাটান। বাচ্চারাও আপনাকে খুব পছন্দ করে।

মিহির ইচ্ছে হতে লাগলো ম্যানেজার এর গায়ে আগুন ধরায় দিতে। লোকটা যেতে চাইছে যাক না? বাচ্চাদের জন্য তো সেই আছে নাকি?

আর আয়াশ তো ম্যানেজার আন্টির কথা শুনে খুশিতে পুরো গদগদ হয়ে গেছে। সে বলল,,,

এতো করে যখন বলছেন তখন ঠিক আছে। আর কিছুক্ষন আছি এখানে।

মিহি আয়াশের কথা শুনে ভেংচি কাটলো।

ম্যানেজার আয়াশকে বলল,,, আপনি আমাদের বাচ্চাদের জন্য একটা গান গাইতে হবে কিন্তু আপনাকে আজ।

আয়াশ বলল,,, আচ্ছা ঠিক আছে।

এক দিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবো
নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশীতে হারাবো ।।হৈ
এক দিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবো
নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশীতে হারাবো ।
এক দিন ছুটি হবে
যেখানে থাকবে না কোন বাঁধন
থাকবে না নিয়মের কোন শাসন ।।
যেখানে থাকবে না কোন বাঁধন
থাকবে না নিয়মের কোন শাসন ।।
পাখি হয় উড়বো
ফুল হয়ে ফুটবো ।।
পাখি হয় উড়বো
ফুল হয়ে ফুটবো ।।
পাতায় পাতায় শিশির হয়ে … হৈ
এক দিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবো
নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশীতে হারাবো ।
এক দিন ছুটি হবে
অজানা পথে অচীন দেশে
ঝরনা হয়ে যাবো ভেসে ।
অজানা পথে অচীন দেশে
ঝরনা হয়ে যাবো ভেসে ।
তারা হয়ে উঠবো
মেঘ হয়ে ভাসবো ।
তারা হয়ে উঠবো
মেঘ হয়ে ভাসবো ।
লুকুচুরি খেলার ছলে লুকিয়ে রবো ।
এক দিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবো
নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশীতে হারাবো ।।হৈ
এক দিন ছুটি হবে অনেক দূরে যাবো
নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশীতে হারাবো ।
এক দিন ছুটি হবে।

এতোক্ষণ সবাই মন দিয়ে আয়াশের গান শুনছিলো। মিহিও এর ব্যতিক্রম না। তবে সে আয়াশকে খুটে খুটে পর্যবেক্ষণ করছিল বেশি। গান শেষে সবাই হাততালি দিলো। মিহি একমনে আয়াশের দিকে চেয়ে ছিলো। তাই সবার হাততালির আওয়াজে ধ্যান ভাঙল তার। সে নিজেই একটু লজ্জা পেয়ে গেলো।

ম্যানেজার বলল,,, মিস্টার আয়াশ জানেন বাচ্চারা আপনাকে আর মিহিকে খুব বেশি ভালোবাসে। মিহি এক সপ্তাহ না আসলে ওরা অনেক মন খারাপ করে। যেমনটা আপনি না আসলে ওরা মন খারাপ করে। আপনি আর মিহি আমাদের এই অনাথ আশ্রমের প্রান। আপনাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

মিহি বলল,,, এভাবে বলবেন না আন্টি, আমি যেমন অনাথ তেমন ওরাও। তাই আমি ওদের কষ্ট বুঝি। তবে এতদিন মনে করতাম যারা অনাথ তারাই অনাথদের কষ্ট বুঝে। এখন দেখি অনেক মানুষেরই মনুষ্যত্ব বুঝে।

আয়াশ আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল,,, তুমি অনাথ?

মিহি বলল,, হুম।

কথাটা বলার সময় মিহির চোখ থেকে এক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে।

আয়াশ বলল,,, সরি মিহি।

মিহি বলল,,, ইটস ওকে। আন্টি আমাকে এখন টিউশনি পড়াতে যেতে হবে। আমি এখন আসি। বাচ্চারা ভালো থেকো। আমি আবার আসবো ইনশাআল্লাহ।

ম্যানেজার বলল,,, ভালো থাকিস।

আয়াশ বলল,,, কিছু মনে না করলে মিহি আমি তোমাকে ড্রোপ করে দেই?

মিহি বলল,,, না মিস্টার তার প্রয়োজন নেই।

আয়াশ বলল,,, ওকে।

মিহি চলে গেল। পরে আয়াশও সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

মিহি ঠিকানা অনুযায়ী একটা বড় বাড়ির সামনে এসে থামল। সে এতো বড় বাড়ি দেখে কিছুটা অবাক হলো। পরে সে বাড়িতে ঢুকল। বাড়িতে প্রবেশের সময় মিহিকে বাধা দিলো একজন গার্ড। সে বলল,,, কাকে চান?

মিহি বলল,,, আমি আজান চৌধুরির ছেলেকে পড়ানোর জন্যে এসেছি।

এটা শুনে গার্ড কাউকে কল দিল। পরে মিহিকে যাওয়ার অনুমতি দিলো। মিহি বাড়ির ভিতরে ঢুকে নিল। একজন সার্ভেন্ট এসে মিহিকে বসার ঘরে বসতে বলল এবং বলল সে তাদের ম্যামকে ডেকে আনছে। মিহি বসার ঘরে বসে চারদিকে তাকাতে লাগলো। খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে সম্পুর্ণ বাড়িটি।

তখন একজন মহিলা আসলো। আসলে তাকে একজন যুবতী মেয়ের চেয়ে কম লাগেনা। সে এসে মিহির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। তারপর সে বলল,,,

তুমি একটু বসো, আমি আসছি।

আসলে সেই মানুষটি ছিল মায়া। হ্যা পাঠক সমাজ আপনারাই ঠিক। মিহি আজান চৌধুরির ছেলে মায়ানকেই পড়াতে এসেছে। মায়া মিহিকে দেখেই চিনে ফেলে যে এই মেয়েই তার দেবরের ভালোবাসা। মায়া তার শাশুড়ির কাছে যায়। আর তাকে বলে,,,

মা শুনুন।

মিসেস আসমা বললেন,,,, হ্যা বল বউমা।

,,, মা মিহি এসেছে।

,,,মানে?

,,,মা মায়ানের জন্যে যে হোম টিউটর এর ব্যবস্থা করেছিলাম সেই মেয়েই হল মিহি।

,,আলহামদুলিল্লাহ। বউমা ওকে রিজেক্ট করোনা।

,,, আচ্ছা মা।

মায়া চলে গেলো। মিহির কাছে এসে বলল,,,

তুমি সিলেক্টেড। তুমি কাল থেকে মায়ানকে পড়াতে এসো কেমন।

,,, কিন্তু ম্যাম আপনি তো আমায় কিছু জিজ্ঞেসও করলেন না।

,,, তোমাকে আমার কিছু প্রশ্ন করার দরকার নাই। আর হ্যাঁ এই ম্যাম বলা চলবেনা। আপু ডেকো।

মিহি তার ব্যবহারে খুশি হল। সে বলল,,,

ঠিক আছে আপু। তাহলে আমি আজ আসি।

মায়া বলল,,,, আচ্ছা ভালো থেকো।

,,,, আল্লাহ হাফিয।

,,, আল্লাহ হাফিয।

মিহি বেড়িয়ে পরলো। সে যখন সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন কেউ একজন তার ওড়না টেনে ধরল। মিহি ভয় পেয়ে গেলো। সে পিছনে ঘুরে দেখল…..

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে