তুমি নামক নেশা পর্ব-০৪

0
1884

#গল্প_তুমি_নামক_নেশা
#লেখিকা_Sabirina_Khanam

Part: 04

আর ওইদিকে রিয়ান মিহির ছবি বের করে জড়িয়ে ধরল নিজের বুকে। আর বলতে থাকল,,, কবে বুঝবি মিহি যে আমি তোকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি তোকে। খুব ভালোবাসি।

আয়াশ সকালে নাস্তা করতে বসল। তার মা, বড় ভাবি মায়া, ভাইয়ের একমাত্র ছেলে মায়ান আর ছোট বোন তার সাথে এক টেবিলে নাস্তা করছে। আয়াশের ছোট বোনের নাম আরশি। আরশি অনার্স সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ে। আয়াশ আরশিকে জিজ্ঞেস করলো,,,

কিরে ভাইয়া কই?

,,, ভাইয়া অনেক আগেই চলে গেল অফিসে। আজ নাকি একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে।

,,, ওহ আচ্ছা।

আয়াশের মা আয়াশকে জিজ্ঞেস করলো,,,,

আমি সেদিন বলেছিলাম যে আমি মিহির সাথে দেখা করতে যাবো। কিন্তু কাল রাতে মাথায় এলো একটা কথা। তুই মিহির ঠিকানা জানিস তো।

আরশি বলে উঠলো,,, মা মিহি সেই মেয়ে না যাকে ভাইয়া তার লাস্ট কন্সার্টে প্রোপজ করেছে?

আয়াশ বলল,, সেই মেয়ে কিন্তু তোর ভাবি হয় আরশি।

আরশি বলল,,, আমি জানি আর আমার ভাবিকে খুবই পছন্দ হয়েছে।

আয়াশ বলল,, দেখতে হবেনা কে পছন্দ করেছিলো প্রথমে ।

মায়া বলল,,, সত্যিই মেয়েটা অনেক সুন্দর আর মিষ্টি। কি বলেন মা?

মিসেস আসমা বললেন,,, হুম বউমা ঠিক বলেছ। আয়াশ এখন যে প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দে। ঠিকানা জানিস মেয়েটার?

আয়াশ বলল,,, জানি।

আরশি বলল,,, আমাকে নিয়ে যাওনা তাহলে ছোট ভাবির বাড়িতে।

আয়াশ বলল,,, নিয়ে যাবো, চিন্তা করিস না।

মায়ান বলল,,, কাকাই আমিও যাবো।

আয়াশ বলল,,, হ্যাঁ তোকেও নিয়ে যাবো।

আরশি বলল,,, তুই না গেলেও আমরা যাবো।

আয়াশ বলল,,, কেমনে?

আরশি বলল,,, তোর বিয়েতে তুই কি তোর শ্বশুর বাড়ি ড্যাং ড্যাং করে ঘুরতে পারবি নাকি? কিন্তু আমি আমার ছোট ভাবির বাড়ি ঠিকই ঘুরতে যেতে পারবো।

আয়াশ বলল,,, কালকেই তোর বিয়ে দিয়ে দিব। দেখি তুই কিভাবে ড্যাং ড্যাং করিস?

আরশি বলল,,, মা ভাইয়াকে বাজে কথা বলতে না করো।

মিসেস আসমা বললেন,,, এই তোরা চুপ থাকবি?

আয়াশ বলল,,, হুম।

আরশি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল,,, হুম।

মিহি সবে মাত্র শাওয়ার নিয়ে এসেছে। তার ভেজা তোয়াল সে বেল্কনিতে মেলে দিয়ে এসে বসলো। আজ কেন যেন তার খুব খুশি লাগছে। সে নিজেই তার কারন আন্দাজ করতে পারছেনা। সে তার ফোনে তার ভেজা চুল নিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে। অতঃপর সে ছবিগুলো সে মাহিকে পাঠায়। তারপর ফোন রেখে দেয়। কিন্তু সে খেয়াল করেনি সে মাহিকে ছবি পাঠাতে গিয়ে অন্য কাউকে নিজের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছে। সে আজ খুব খুশি তাই মাহির ফোন কলের জন্যে অপেক্ষা করছে। অনেক অপেক্ষার পরও যখন মাহি ফোন করলোনা তখন সে রেগে গেলো আর বলতে থাকলো,,, মাহি তুই আজ আয় আমার সামনে, কথাই বলব না তোর সাথে।

মিহি ভার্সিটি গিয়ে বসে রইল। সে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন মাহি আসবে আর সে কখন মাহিকে ইচ্ছেমতো বকবে। কিন্তু আজ মাহি ভার্সিটি আসলোনা।মিহির দুশ্চিন্তা হতে লাগলো। কারন মাহি তো সহজে ভার্সিটি মিস করেনা। মিহি ভাবলো একবার মাহিকে কল দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ। মিহি মাহিকে কল দিলো কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না। মিহির দুশ্চিন্তা যেন আরও বাড়তে লাগলো। মাহি মিহির আপন বোনের মতো। ২ জন যেন একে অপরের কলিজা। আর আজ এই মাহিই লাপাত্তা।

আয়াশ বসে আছে ওর অফিসের নিজের কেবিনে। বসে বসে নতুন গান লিখার চেস্টা করছে। কিন্তু আজ কিছুতেই কিছু মাথায় আসছেনা। আয়াশের কিছুই ভাল লাগছেনা তাই সে তার বেস্ট ফ্রেন্ড আবিরকে ফোন করল। আবির বলল,,,

কিরে দোস্ত? আজ আবার আমার কথা মনে কেন পড়ল তোর?

,,, কেন তোকে আমি কবে ভুলে গেছিলাম?

,,, জানিনা তুই ভুলে গেছিলি নাকি? তবে এইটা জানি তুই যেভাবে সারাদিন ভাবিকে নিয়ে চিন্তা করিস, কয়দিন পর নিজের ভাইকে বলবি, কে আপনি? আমি তো আপনাকে চিনতে পারছিনা।

,,, হু তোরে বলছে?

,,,, এই আবিরকে কিছু বলতে হয়না, আবির এমনিতেই বুঝতে পারে।

,,, কেন তুই কি কোনো জ্যোতিষী নাকি? নাকি নতুন জ্যোতিষগিরী শুরু করছিস?

,,, এটাকে বলে সেন্স অব হিউমার। নট জ্যোতিষগিরী, ওকে?

,,, তোর মাথা

,,, তোর ঠ্যাং

,,, উফফ

,,, তা ভাবি কেমন আছে?

,,, কি করে জানবো? তোর ভাবি কি আমায় পাত্তা দেয় নাকি?

,,,তোর মতো ক্যাবলাকান্তের যে আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা ফ্রেন্ড জুটছে, এটা তোর ভাগ্যের ব্যাপার নয়কি?

,,,, এহহ, এই আয়াশের জন্যে কতো মেয়েরা পাগল জানিস?

,,, পাগলকে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ পছন্দ করতে পারেনা। অই মেয়েগুলোও তাই তোর জন্যে পাগল। এজন্যই ভাবি তোকে পাত্তা দেয়না।

,,, দেখ একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবিনা। এমনিতেই আমার মাথা গরম

,,, ইনো খা।

,,,কেন?

,,,পেট গরম থাকলে ইনো খায়। আর পেট গরম থাকলেই মাথা গরম হয়। তাই বললাম ইনো খা।

,,,ওই ফোন রাখ তুই।

,,,হ্যাঁ জানি তো, এখন তুই তোর বেস্ট দোস্ত কে ভুলে গেছিস।

,,,ওইতো শুরু করলি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল।

,,,আমার ইমোশন কে তুই ব্ল্যাকমেইল বলিস? এটা তুই করতে পারলি আয়াশ?

,,, হইছে ভাই অফ যা।

,,, হু গেলাম। বাই।

,,, বাই।

আবির ফোন কেটে দিলো। আয়াশ ফোন নিয়ে নিজের ফোনের গ্যালারিতে ঢুকলো। মিহির ছবি বের করে দেখতে লাগলো। আর বলতে লাগলো,,,

কবে তুমি আমার হবে হে প্রেয়সী?
তোমাকে দেখে দেখে মুগ্ধ হতে চাই বারবার।
তোমায় বুকে আগলে নিয়ে হে প্রেয়সী
তারার মেলায় হারিয়ে যাবো হাজারবার।

……………………………

রিয়ান ফোনে মিহির মেসেজ দেখে খুব অবাক আর খুশি হলো। যেহেতু মিহি তাকে সচরাচর মেসেজ দেয়না তাই রিয়ানের অবাক হওয়াটা স্বাভাবিক। আবার তার ভালোবাসার মানুষ তাকে মেসেজ দিয়েছে। সে কি আর খুশি না হয়ে পারে? মেসেজ ওপেন করে দেখলো মিহির কতগুলো ভেজা চুলের ছবি দেওয়া। মিহির স্নিগ্ধ ছবিগুলো দেখে রিয়ান মুগ্ধ হতে থাকল। সে পিকগুলো সেভ করে নিলো। তারপর সে মিহিকে কল দিলো। মিহি ফেসবুক চালাচ্ছিলো। রিয়ানের কল দেখে সে কিছুটা অবাক হলো। সে ফোন রিসিভ করলো। ফোনের ওপাশ থেকে রিয়ান বলল,,,

আজ মিহি মনে হয় খুব খুশি তাইনা?

মিহি অবাক হল। আর বলল,, না তেমন কিছুনা ভাইয়া।

,,,তোর ভেজা চুলের ছবি দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।

মিহি অবাক। তার ভেজা চুলের ছবি মানে? মিহি বলল,,,,

বুঝতে পারলাম না ভাইয়া।

,,, তোর পিকগুলোতে তোকে খুব সুন্দর লাগছিলো। না জানি বাস্তবে কত সুন্দর লাগছে?

,,, আমার পিক?

,,, হুম তোর পিক।

,,, কোথায়?

,,, তুই তো আজ সকালে দিলি।

মিহি হকচকিয়ে গেল। সে তো মাহিকে ছবি পাঠিয়েছে। সে বলল,,,

একটু পরে কথা বলি তোমার সাথে ভাইয়া। মিহি ফোন রেখে দিলো। তারপর সে সব চেক করলো। দেখলো সে পিক মাহিকে না দিয়ে রিয়ান ভাইয়াকে দিয়ে ফেলেছে। সে ফটাফট রিয়ানকে কল দিয়ে বলল,,,

ভাইয়া সরি আসলে আমি মাহিকে পিক দিতে গিয়ে তোমাকে দিয়ে দিয়েছি।

রিয়ান মিহির এই কথাতে হতাশ হল। সে বলল,,,

আচ্ছা ঠিক আছে।

রিয়ান এই বলে ফোন রেখে দিলো। মিহি অবাক হলো। সে বেরিয়ে পড়ল তার গন্তব্যে। মিহি তো আর জানেনা তার গন্তব্যে তার জন্য কত বড় একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। আপনারা কি জানেন মিহির জন্য কি সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে?

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে