তুমি ছিলে বলেই পর্ব-২৪

0
537

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২৪
#দিশা_মনি

রুদ্র নিপুণের ঘরে তার জন্য খাবার নিয়ে এলো। নিপুণ মনমরা বসে ছিল। রুদ্র খাবার নিয়ে এসেই নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমি আপনার জন্য খাবার এনেছি। নিন, খেয়ে নিন।”

“আমি খাবো না। আপনি নিয়ে যান।”

“শোনো নিপুণ আমার কিন্তু অবাধ্যতা পছন্দ নয়। বেশি কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নাও। বাটিতে যেন একটুও খাবার পরে না থাকে।”

“আমি যদি না খাই তাতে আপনার কি? আপনি থাকুন না নিজের মতো। শুধু শুধু আমায় বিরক্ত করছেন কেন? আপনার জন্য তো আমার জীবনটা নরক হয়েই গেছে। আপনি আমার মাকে বন্দি করে রেখেছেন, আমার ভালোবাসার মানুষের থেকে আমাকে আলাদা করেছেন,আমার জীবনের সন স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছেন আর কি চান আপনি? শুধু আমার জীবন টাই তো দয়া ভিক্ষা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। যেটার আমার কোন দরকার নেই। আপনার জন্য আমাকে নিজের আদর্শের সাথেও সেক্রিফাইজ করতে হয়েছে। আমি আর পারছি না এভাবে বাঁচতে এবার আমায় মুক্তি দিন।”

“আমি তো বলেছি সঠিক সময় এলেই তোমাকে মুক্তি দেব। তুমি চাইলেও আর তোমাকে আটকে রাখবো না তাহলে আমার কথা শুনছ না কেন তুমি?”

“কারণ আমার আপনাকে একটুও বিশ্বাস হয়না। আপনি একজন খু**নি, একজন অপরাধী।”

রুদ্র ভীষণ আঘাত পায় নিপুণের কথায়। আর কোন কথা না বাড়িয়ে সে নিজের মতো চলে যেতে নেয়। যাওয়ার আগে খুবই আকুতির সুরে বলে,
“খাবারটা খেয়ে নিয়েন। আমার উপর রাগ থেকে এভাবে না খেয়ে থাকবেন না।”

রুদ্র ঘর থেকে বেরোতে যাবে এমন সময় ইশা চলে আসে। ইশা রুদ্রকে দেখামাত্রই তাকে জড়িয়ে ধরে। অতঃপর চিৎকার করে বলে ওঠে,
“হ্যাপি বার্থ ডে আমার প্রিয় বন্ধু।”

হঠাৎ ইশার এমন আগমনে রুদ্র অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। নিপুণও ইশার পানে তাকায়। ইশা এভাবে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরেছে দেখে তার মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়। কেমন জানি রাগ অনুভূত হচ্ছিল তার। নিজেকে সামলে সে নিজেই নিজেকে বুঝ দেয়,
“ওনাকে কোন মেয়ে জড়িয়ে ধরল তাতে আমার কি! উনি একজন অপরাধী।”

রুদ্র ইশার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। অবাক চাহনিতে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুই কখন এলি ইশু?”

ইশা সামান্য হেসে বলে,
“এই তো একটু আগেই ঢাকা থেকে ফিরলাম। তারপর সোজা এখানে চলে এলাম। তুই তো আমাকে ভুলেই গেছিস রুদ্রা। আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিলি। তাই ভাবলাম জন্মদিনের দাওয়াতও বুঝি পাবো না। সেই জন্যই তো আমি নিজেই চলে এলাম বিনা দাওয়াতে।”

রুদ্র বলে ওঠে,
“সেরকম কিছু নয়। আসলে বিয়েটা এভাবে হঠাৎ করে হয়ে গেল যে বলার সুযোগই পাই নি। তাছাড়া আজ যে আমার জন্মদিন এটা আমার নিজেরই মনে ছিল না৷ তুই উইশ করার পর মনে পড়ল।”

“সে কি কথা! বিয়ের পর বউয়ের খেয়াল রাখতে রাখতে নিজের জন্মদিনের কথাই ভুলে গেলি তুই রুদ্রা! তা তোর বউ কোথায়?”

রুদ্র নিপুণের দিকে তাকায়। রুদ্রর সাথে সাথে ইশাও তাকায় সেদিকে। অতঃপর সে নিপুণের সামনে গিয়ে বলে,
“হ্যালো, আমি ইশা চৌধুরী। তোমার স্বামী রুদ্র চৌধুরীর একমাত্র বন্ধু+বেস্ট ফ্রেন্ড। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক কিন্তু অনেক গভীর। কিছু মনে করো না তোমাকে তুমি করেই বললাম। তোমার নামটা যেন কি?”

“নিপুণ।”

“ওহ আচ্ছা৷ তো যাইহোক, তুমি কেমন বউ হ্যাঁ? আমার বন্ধুর নাহয় নিজের জন্মদিনের কথা মনে নেই। তুমি তো ওকে মনে করিয়ে দিতে পারতে। নাকি নিজের স্বামীর জন্মদিনের কথা নিজেই ভুলে গেছিলে?”

নিপুণ কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই রুদ্র বলে ওঠে,
“ওর কোন দোষ নেই ইশু। আসলে ও অনেক অসুস্থ ছিল৷ তাই আমিও ওকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।”

“অসুস্থ! আচ্ছা কোন ব্যাপার না। তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি যখন এসে গেছি তখন তোর জন্মদিন অনেক বড় করে সেলিব্রেশন করব। তোর জন্মদিনের সব আয়োজনের দায়িত্ব আমার।”

“তোকে এত কিছু করতে হবে না। তুই এত দূর থেকে এলি এখন রেস্ট নে।”

“তা বললে কি করে হয়? আমার বন্ধুর জন্মদিন আর আমি রেস্ট নেব। সেটা তো হতে পারে না। শহরের এমপি রুদ্র চৌধুরীর বিয়ে বলে কথা। দেখবি আমি কত গ্রান্ড আয়োজন করি। এমন আয়োজন করব যে আজকের দিনটা তুই আজীবন মনে রাখবি।”

এটুকু বলেই রহস্যজনক হাসি দেয় ইশা।

★★★
রুদ্রর জন্মদিনের সব আয়োজন ইশা একা হাতে করেছে। রাজীব চৌধুরীর সাথে মিলে অনেক গেস্টদের ইনভাইটও করেছে। পুরো চৌধুরী বাড়ি আজ আলোকসজ্জায় সেজে উঠেছে। চারিদিকে উৎসবের আমেজ।

ঘরের এককোণে দাঁড়িয়ে আছে রাহাত। রাজীব চৌধুরী রাহাতের কাছে গিয়ে বলে,
“এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছ কেন? তোমার ভাইয়ের জন্মদিন তোমাকে এভাবে চুপচাপ থাকলে মানায়?”

“ঐ রক্ষিতার ছেলের জন্মদিনে আমি অংশ নেব না।”

“রাহাত! ভেবে চিন্তে কথা বলো। দেওয়ালেরও কিন্তু কান আছে।”

“তুমি ঐ রুদ্র চৌধুরীকে ভয় পেয়েই মরো। আমি তেমন নই। এখন যাও তো সামন থেকে।”

রাজীব চৌধুরী চলে আসেন।রাহাত বলতে থাকে ,
“আজ তোমার জন্মদিনের সেরা গিফট অপেক্ষা করছে রুদ্র চৌধুরী। আমার গায়ে হাত তুলেছিলে না? এবার এর ফল ভোগ করবে।”

ইশা নিপুণ ও রুদ্রকে নিয়ে আসে। তারপর রুদ্রর সামনে কেক আনা হয়৷ ইশা রুদ্রর হাতে কেক কা’টার নাইফ দিয়ে বলে,
“নে এবার মোমবাতিতে ফু দিয়ে কেকটা কা’ট।”

রুদ্র তাই করে। কেকের প্রথম অংশটা সে নিপুণকে খাওয়াতে যাবে তার আগেই ইশা সেটা নিয়ে খেয়ে নেয়। নিপুণের এটা মোটেই ভালো লাগে না। রুদ্রও ব্যাপারটা ভালো চোখে নেয় না। তবুও সবার সামনে নিজের বান্ধবীকে সে কিছুই বলে না। সবাই আনন্দের মুডে রয়েছে। একে একে সবাই এসে রুদ্রকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।

ইশা রুদ্র আর নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আজ রুদ্রর জন্মদিন উপলক্ষে একটা ডান্স পারফারম্যান্স হয়ে যাক রুদ্রা এবং তার স্ত্রী নিপুণের।”

নিপুণ সরাসরি বলে দেয়,
“আমি ডান্স করব না।”

রুদ্র বলে,
“ও তো অসুস্থ।”

ইশা তখন বলে,
“কোন ব্যাপার না। আমি আছি তো। তুই আয় আমার সাথে ডান্স কর। ডিজে মিউজিক চালাও।”

Tere vaaste falak se main chaand laaunga
Solah satrah sitaare sang baandh laaunga
Tere vaaste falak se main chaand laaunga
Solah satrah sitaare sang baandh laaunga

Chaand taaron se kaho
Abhi thehrein zara
Chaand taaron se kaho
Ki abhi thehrein zara

Pehle ishq lada lun uske baad laaunga
Pehle ishq lada lun uske baad laaunga
Tere vaaste falak se main chaand laaunga
Solah satrah sitaare sang baandh laaunga

রুদ্র ইশাকে এভাবে নাচতে দেখে রেগে যায় নিপুণ। তার জেলাস ফিল হতে থাকে। সে আর সহ্য করতে না পেরে নিজের রুমে চলে যায়। নিপুণকে যেতে দেখে রুদ্রও তার পিছন পিছন যেতে থাকে।

এসব দেখে ইশা বাকা হেসে বলে,
“আগুন লাগানো কমপ্লিট। এবার জাস্ট ঘি ঢালা বাকি।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে