#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২৩
#দিশা_মনি
নিপুণ এখন মোটামুটি সুস্থ। তার শরীর এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছে। সে এখন অনেকটাই আরাম বোধ করছে। সুস্থ হওয়ার পর সে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসেছে। অপেক্ষা করছে রুদ্রর আসার। অবশেষে নিপুণের আশা পূরণ করতে রুদ্র ফিরে আসে। নিপুণকে বসে থাকতে দেখে সে বলে,
“তুমি কি এখন সুস্থ বোধ করছ?”
রুদ্রর প্রশ্নে নিপুণ হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়। রুদ্র অনেকটা নিশ্চিত হয় নিপুণের সুস্থতার কথা শুনে। গত রাতে সে ভালো করে ঘুমাতেই পারে নি৷ নিপুণের অসুস্থতা তাকে একদম নাড়িয়ে রেখে দিয়েছিল। নিপুণ আচমকা রুদ্রের উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠে,
“আপনি আসলে কি চান?”
রুদ্র অবাক হয়ে বলে,
“আমি কি চাই মানে?”
“আপনাকে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না মিস্টার রুদ্র চৌধুরী। আপনি মানুষটা ভীষণ অন্যরকম। আমার চোখে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্টতম একজন মানুষ। যে এক অসহায় মেয়েকে খু***ন করেছে, আমার মাকে অপহরণ করেছে, প্রতি মুহুর্তে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করেছে। এতটাই জঘন্য সে। সেইজন্য আপনি আমার ঘৃণার পাত্র। কিন্তু…”
রুদ্র অদ্ভুত ভাবে হাসে। অতঃপর নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“রুদ্র চৌধুরীকে তুমি কখনোই চিনতে পারবে না নিপুণ। তাই চেনার চেষ্টাও করো না।”
নিপুণ রুদ্র চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনি আমায় বাঁচিয়ে রেখেছেন কেন বলুন তো? প্রজ্ঞার মতো আপনি তো আমাকেও মে*রে ফেলতে পারতেন।”
“এই ব্যাপারে তো আমি আগেই তোমাকে বলেছি।”
“আপনি যা বলেছেন তা ঠিক নয়। আপনি যদি সত্যিই আমায় কষ্ট দিতে চাইতেন এখানে এনে আমার উপর টর্চার করতেন। কিন্তু আপনি তো সেটা করেন নি। উল্টো আমাকে গু**ন্ডাদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন, আমার জন্য নিজের ভাইকে আঘাত করেছেন, আমার জ্বর হওয়ায় সারারাত জেগে আমার সেবা করেছেন। এসব কিছু তো আপনার চরিত্রের সাথে যাচ্ছে না।”
“তাহলে আমার কি করা উচিৎ? তোমার উপর টর্চার করা উচিৎ?”
“আপনার চরিত্রের সাথে সেটাই পারফেক্ট। কিন্তু আপনি তো একদম ভিন্ন কিছু করছেন। আসলে আপনি চাইছেন টা কি বলুন তো?”
“যদি বলি তোমাকে আগলে রাখতে চাইছি তাহলে বিশ্বাস করবে তো আমার কথা।”
“না।”
রুদ্র আবারো অবোধ্য হাসি দেয়। বিনাবাক্য ব্যয়ে সে স্থান ত্যাগ করে। রুদ্র চলে যাবার পর নিপুণ দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে। তার কাছে এখনো সবকিছু অবোধ্যই রয়ে গেল।
★★★
কয়েক দিন পর,
স্নেহা তার বাবাকে নিয়ে গ্রামে ফিরে এসেছে। ইতিমধ্যে কুদ্দুস মিয়ার থেকে নেয়া টাকাও সে শোধ করে দিয়েছে৷ তাই তার উপর থেকে এখন সব ধরনের চাপ কমে আছে। স্নেহার বাবা আব্বাস খানও এখন অনেকটাই সুস্থ। বাড়িতে ফিরে তিনি এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন।
স্নেহা তার বাবার জন্য তার ঘরেই খাবার নিয়ে আসে৷ স্নেহাকে খাবার নিয়ে আসতে দেখে তার বাবা তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তোর উপর দিয়ে নিশ্চয়ই এই কয়দিন খুব ঝড় গেছে। তাই না মা?”
স্নেহা মলিন হেসে বলে,
“হ্যাঁ, তা তো গেছেই। তোমার অসুস্থতার প্রতিটা মুহুর্ত , প্রতিটা ক্ষণ আমাকে যে মানসিক পীড়া দিয়েছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমার বারবার মনে হচ্ছিল এই বুঝি তোমায় হারিয়ে ফেলব!”
“বুঝতে পারছি তুই আমার জন্য অনেক চিন্তায় ছিলি।”
“তা আর বলতে। কিন্তু এখন যে তুমি একদম সুস্থ হয়ে উঠেছ আমি তাতেই খু্শি। এবার দেখবে সব কিছু একদম ঠিক হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা আমার অসুস্থতার খবর তোর চাচারা পায় নি? তারা কি একবার আমাকে দেখতেও আসেনি?”
স্নেহা এবার কোন ভনিতা ছাড়াই বলে দেয়,
“এসেছিল তো। তোমার ভাই এসেছিল তোমায় দেখতে।”
“কিন্তু দেখা করল না যে।”
“আব্বু, তুমি এই সত্যটা এবার মেনে নাও যে তোমার ভাই বদলে গেছে। শহরের হাওয়া লেগেছে তার গায়ে।”
আব্বাস খান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি অনেক দিন থেকেই বুঝতে পেরেছেন তাই ভাই তার থেকে দূরত্ব রেখে চলছে। হয়তো স্ট্যাটাস মিলছে না জন্য। তবে এখন তার একমাত্র চিন্তা নিজের মেয়েটাকে নিয়ে। স্নেহা তার নিজের মেয়ে হলেও বড় আদর করেছেন। কখনো স্নেহাকে তার আসল সত্যটা জানতে দেন নি যে স্নেহা তার নিজের মেয়ে নন। তিনি ভেবেও রেখেছেন স্নেহাকে কখনো সত্যটা জানতেও দেবেন না। তবে এখন তার চিন্তা স্নেহার ভবিষ্যত নিয়ে। নিজের অসুস্থতায় তিনি বড্ড বাজে ভাবে অনুভব করেছেন তাকে ছাড়া স্নেহা কতোটা অসহায়। তার শরীরের অবস্থা এখনো খুব বেশি ভালো না। যেকোন সময় যেকোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আব্বাস খান চান তিনি জীবিত থাকা অবস্থাতেই স্নেহার হাত অন্য কারো হাতে তুলে দিতে। এজন্যই তিনি স্নেহার বিয়ের ব্যাপারে ভাবছেন। এই চিন্তা থেকেই তিনি স্নেহাকে বললেন,
“আচ্ছা স্নেহা, তোর তো বিয়ের বয়স প্রায় হয়েই গেছে। আমি যদি এখন তোকে বিয়ে দিতে চাই তোর কোন আপত্তি আছে?”
“না, আব্বু। আমার কোন আপত্তি নেই। আমি জানি তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটা আমার ভালোর জন্যই নেবে।”
“আমি যোগ্য পাত্র দেখে তার হাতে তোকে তুলে দেব।”
“কিন্তু আমি চলে গেলে যে তুমি একা হয়ে যাবে আব্বু।”
“তুই আমার চিন্তা করিস না স্নেহা। এবার তুই নিজের ভালো টা বুঝতে শেখ।”
★★★
রাজীব চৌধুরী রাহাতকে নিয়ে বাড়িতে ফিরল। রাহাতকে ফিরতে দেখে রুদ্র ভীষণ রেগে যায়। সে রেগে গিয়ে বলে,
“এই কুলাঙ্গারটাকে কেন ফিরিয়ে আনলে?”
রাজীব চৌধুরী কিছু বলতে যাবেন তার আগেই রাহাত বলে উঠল,
“আমার বাড়িতে আমি ফিরবো তাতে তোমার কি অসুবিধা ব্রো? ভুলে যেওনা এই বাড়িতে তোমার যতটা না অধিকার তার থেকে বেশি অধিকার আমার। কারণ আমি রাজীব চৌধুরীর বিয়ে করা বউয়ের সন্তান কোন রক্ষিতার নয়।”
রুদ্রের রাগ এবার মাত্রা ছাড়িয়ে গেল। এমনিতেই সে রাহাতের উপর রেগে ছিল। এই ঘটনা তার রাগ আরো বাড়িয়ে দিল। সে রাহাতের দিকে ছুটে গিয়ে তার নাক ব**রাবর ঘু**ষি মা**রল এরপর আরো প্রহার করতে যাবে তার আগেই রাজীব চৌধুরী তাকে থামিয়ে দিলো। রুদ্র হুংকার দিয়ে বলল,
“তুমি নিজের ছোট ছেলেকে সামলাও। দ্বিতীয় বার যেন ও আমার মায়ের ব্যাপারে এমন জঘন্য কথা না বলে। এমন বললে কিন্তু আমি ওকে একদম শে**ষ করে দেব। কারণ আসল সত্যটা তুমি আর আমি খুব ভালো করেই জানি। আমার মা কোন রক্ষি**তা ছিল না। তিনি ছিলেন..”
“আমি রাহাতকে সব বুঝিয়ে বলব রুদ্র। তুমি শান্ত হও। রাহাত আমার সাথে ঘরে চলো।”
এই বলে তিনি জোরপূর্বক রাহাতকে ঘরে নিয়ে যায়। এদিকে রুদ্র রাগে ফুসতে থাকে।
ঘরে এসেও রাগে ফুসতে থাকে রাহাত। রাজীব চৌধুরী রাহাতকে বলেন,
“তোমায় না বলেছিলাম বাড়িতে এসে কোন ঝামেলা না করতে। তুমি আমার কথা শুনলে না কেন?”
“তুমি চুপ করো ড্যাড। তুমি শুধু আমার উপরই রাগ দেখাতে পারো। আর নিজের বড় ছেলের সামনে একদম ভেজা বেড়াল। ও যে আমাকে কুলাঙ্গার বলেছে সেটা শুনতে পাওনি তুমি? এতকিছুর পরেও আমি চুপ থাকব? তুমি নিজের বড় ছেলেকে ভয় পেতে পারো কিন্তু আমি পাইনা। ও যেভাবে আমায় মে**রেছে আমার তো ইচ্ছা করছে ওকে মে**রে দিতে।”
“আহ, রাহাত। কাম ডাউন। এত রাগলে চলে? রুদ্রর সাথে সরাসরি লড়া যাবে না। ওকে কৌশলে ঘায়েল করতে হবে।”
“সেই কৌশলটাই তো আমি জানতে চাইছি।”
রাজীব চৌধুরী বাকা হেসে বলেন,
“কৌশল প্রস্তুত করে নিয়েছি।”
“কে সেই কৌশল?”
এমন সময়ই একটি মেয়ে ঘরে প্রবেশ করে বলে,
“আমি।”
রাহাত হতবাক হয়ে বলে ,
“ইশা তুমি! ড্যাড ও তো…”
রাজীব চৌধুরী বলেন,
“রুদ্রর বেস্ট ফ্রেন্ড ইশা। এবার ও আমাদের তুরুপের তাস হয়ে সাহায্য করবে।”
“কিন্তু ও তো ভাইয়ার ফ্রেন্ড ও আমাদের কেন সাহায্য করবে?”
ইশা বলে,
“এমনি এমনি করবো না। এইজন্য আমাকে আঙ্কেল আমার অনেক উইশ পূরণ করার প্রমিস করেছেন। যার অন্যতম হলো আজিজ চৌধুরীর ব্যবসার ধ্বংস।”
ইশা দীপ্রর দেওয়া থা**প্পরের কথা মনে করে। এবার সেই থা***প্পরের চরম মূল্য তাদের দিতে হবে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨