তুমি ছিলে বলেই পর্ব-২২

0
512

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২২
#দিশা_মনি

নিপুণ নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে রুদ্রর পানে৷ এই লোকটা সত্যিই তাকে ভীষণ ভাবে অবাক করে দিচ্ছে৷ আজ তার সম্পূর্ণ নতুন এক চেহারা উন্মোচিত হয়েছে নিপুণের সামনে। আজ নিপুণ অসুস্থ জন্য রুদ্র নিজে তার সেবা করছে। এ যেন নিপুণের কাছে এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য।

কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার এলো। ডাক্তার এসে নিপুণের জ্বর মেপে বলল,
“ওনার গায়ে তো খুব জ্বর। যেই মেডিসিন গুলো লিখে দিচ্ছি এনে খাওয়ান ঠিক হয়ে যাবে।”

“এগুলো খেলেই কি ও ঠিক হয়ে যাবে?”

“হওয়ারই তো কথা। যাইহোক, আপনি কি ওনার মাথায় জলপট্টি দিয়েছেন?”

“জ্বি।”

“তাহলে ঠিক আছে৷ আশা করি এই ওষুধে কাজ হবে। ”

ডাক্তার প্রস্থান করল। রুদ্র নিপুণের কপাল আলতো করে হাত বুলিয়ে দেখে কপাল এখনো যথেষ্ট গরম। নিপুণের জন্য তার ভীতি চিন্তা হচ্ছিল। সে উঠে ওষুধ আনতে যাবে এমন সময় নিপুণ রুদ্রর হাত আটকে ধরল। আলতো স্বরে বলল,
“দয়া করে আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আমার ভীষণ ভয় করছে।”

“তুমি ভয় পেয়ো না। আমি এখানেই আছি।”

★★★
নিজেদের বন্ধুদের সাথে হ্যাংগ আউট করে বাড়িতে ফিরল ইশা। ইশাকে বাড়িতে ফিরতে দেখে তার সৎমা মালিনী বেগম বলে উঠলেন,
“কোথায় গিয়েছিলে তুমি? আজ তোমাকে দেখতে আসছে ছেলের বাড়ি থেকে আজকের মতো একটা জরুরি দিনে তুমি কাউকে কিছু না বলে এভাবে বাইরে চলে গেলে কেন? তোমার কি কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই।”

ইশা ফুসে উঠে বলে,
“এই একদম চুপ। আমার উপর একদম দাদাগিরি করতে আসবে না। তোমাকে আমার বাবা কিন্তু আমার মা করে আনে নি এনেছে এই বাড়ির কাজের লোক করে। সেই কথা কিন্তু ভুলবে না।”

মালিনী বেগম চুপ করে যান। ইশার এইরকম ব্যবহারের জন্যই তার সাথে কথা বলতে যান না তিনি। ইশা মালিনী বেগমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার নাকে বিশ্রী একটা গন্ধ ভেসে আসে। মালিনী বেগম নাক চেপে ধরে বলেন,
“তুমি আজ আবার ড্রিংক করেছ?”

ইশা রেগে গিয়ে বলল,
“হ্যাঁ করেছি৷ তাতে তোর কি?”

“ইশা। ভদ্রভাবে কথা বলো। আমি তোমার গুরুজন হই।”

ইশা এগিয়ে এসে মালিনী বেগমের গলা টিপে ধরল। মালিনী বেগমের শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন। ইশা যেন এই ঘটনায় পৈশাচিক আনন্দ পায়। আরো জোরে গলা টি*পে বলতে থাকে,
“নিজের ভালো চাইলে আমার ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করা থেকে বিরত থাকবি। নাহলে কিন্তু একদম জানে মে*রে দেব।”

কথাটা বলেই মালিনী বেগমের গলা ছেড়ে দেয় ইশা৷ অতঃপর এগিয়ে যেতে থাকে সামনের দিকে। মালিনী বেগম জোরে শ্বাস নিতে থাকেন। তিনি গোঙাতে গোঙাতে বলেন,
“এই মেয়েটা একদম নিজের বাবার মতো ভয়নাক হয়েছে। আমার তো ভীষণ ভয় হচ্ছে সেই বাড়ির জন্য যেখানে ও বউ হয়ে যেতে চলেছে!”

★★
দীপ্ররা সপরিবারে পৌঁছে গেছে ইশাদের বাড়িতে। ইশার বাবা ইমাম চৌধুরী তাদের সবাইকে আপ্যায়ন করছেন। মালিনী বেগমও উপস্থিত আছেন সেখানে৷

ইমাম চৌধুরী আজিজ খানের সামনে নিজের ধন-সম্পত্তি নিয়ে বেশ বড়াই করে চলেছেন। আজিজ খান সব চুপচাপ শুনছেন। তবে দিলারা খাতুন তো আর চুপ থাকার মানুষ নন। তিনিও ইমাম চৌধুরীর সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে বড়াই করে চলেছেন। তিনি বলছেন,
“আমাদের তো বাড়ি-গাড়ির কোন অভাব নেই। শহরে আমাদের দশটা বড় বাড়ি আছে, বিএমডব্লিউ আছে আটটা। সামনের বছর তো আমাদের ল্যাম্বরগিনি কেনারও কথা আছে।”

নিজের স্ত্রীর কথা শুনে কাশতে শুরু করলেন আজিজ খান। ইমাম চৌধুরী মিটিমিটি হাসতে লাগলেন। দীপ্র বলে উঠল,
“আহ, আম্মু। তুমি চুপ করো না।”

দিলারা খাতুন ফিসফিস করে বললেন,
“আমি কি ভুল কিছু বলে ফেললাম?”

দিশা তার প্রশ্নের জবাবে বলল,
“ভুল নয়তো কি? আমরা ল্যাম্বরগিনি কিভাবে কিনব মম? তোমার মাথা ঠিক আছে তো?”

দিলারা খাতুন নিজের এই বোকামিতে মনে মনে ভীষণ লজ্জা পেলেন। তবে নিজের দোষ স্বীকার করার মানুষ তিনি নন। তাই তো নিজের সাফাই গেয়ে বললেন,
“সে তো আমি এমনি কথার কথা বলেছি। কিন্তু আমাদের তো কম কিছু নেই। তাই না?”

ইমাম চৌধুরী মালিনী বেগমকে উদ্দ্যেশ্যে করে বললেন,
“যাও দেখো তো ইশা তৈরি হলো কিনা। ওনারা তো অনেকক্ষণ হলো এসেছেন৷”

মালিনী বেগম মাথা দুলিয়ে যেতে উদ্যত হলেন এমন সময় ইশা সেখানে এসে উপস্থিত হলো৷ তার পরনে কালো রঙের একটা সিল্কের শাড়ি। ভীষণ স্টাইলের সাথে সে এগিয়ে এসে নিজের বাবার পাশে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসল।

ইশার এই এটিটিউড দীপ্রর একদম ভালো লাগল না। এভাবে কেউ গুরুজনদের সামনে পায়ে পা তুলে বসে? দীপ্র বিরক্ত হলো খুব।

ইশাকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন দিলারা খাতুন। বিশেষ করে ইশার গা ভর্তি হিরার গহনা তাকে মুগ্ধ করে দিলো। তিনি ইশার প্রশংসা করে বললেন,
“বাহ, তোমাকে দেখতে তো ছবির থেকেও সুন্দর লাগছে।”

ইশা মৃদু হেসে বললো,
“ধন্যবাদ।”

ইমাম চৌধুরী নিজের মেয়ের প্রশংসা করে বলতে লাগলেন,
“আমার মেয়ে দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি অনেক ট্যালেন্টেডও। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে। সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে৷ তবুও ও কিন্তু একদম সাধারণ বাঙালি মেয়ের মতোই। ও চায় সংসার করতে।”

“ভালোই তো। আমি আমার ছেলের জন্য এমন মেয়েই তো খুঁজছিলাম।”

ইশা হঠাৎ করে দিলারা খাতুনকে প্রশ্ন করে বলল,
“তা আপনার ছেলের এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন কি? মানে কোথায় পড়াশোনা করেছেন উনি?”

“ও তো ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে।”

“রিয়্যালি? কেন বিদেশে পড়ার যোগ্যতা ছিল না বুঝি।”

দীপ্র এবার ভীষণ অপমানিত বোধ করে। সে আর সহ্য করতে না পেরে বলে,
“আমার যোগ্যতা কি সেটা আপনাকে জানতে হবে না। আম্মু তুমি চলো এখান থেকে আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকতে চাই না।”

দিলারা খাতুন দীপ্রর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আরে তুই রেগে যাচ্ছিস কেন? ইশা নিশ্চয়ই মজা করছে। তাই না?”

ইশা সাফ বলে দেয়,
“ইশা চৌধুরী কখনো মজা করে না। আমি ভীষণ পরিমাণে স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড।”

দিশাও এবার দিলারা খাতুনের কানে কানে বলল,
“এই মেয়েকে তো আমার সুবিধার লাগছে না৷ কিভাবে ভাইয়াকে ইনসাল্ট করল। এখানে সম্মন্ধ না হলেই ভালো হবে।”

“তুই চুপ কর। এই মেয়ে আমাদের জন্য সোনার ডিম পাড়া হাস। একে হাতছাড়া করা যাবে না। একবার শুধু বিয়েটা হয়ে যেতে দে। তারপর দেখিস এই মেয়েকে আমি কিভাবে টাইট দেই। এখন নাহয় ওর এইসব একটু সহ্য করে নিলাম।”

ইশা দিলারা খাতুনকে এভাবে ফিসফিস করে কথা বলতে দেখে বলল,
“আপনার কি ফিসফিসানি রোগ আছে নাকি?”

দিলারা খাতুন ভীষণ অপমানিত বোধ করলেন। তবে সেটা প্রকাশ না করে বললেন,
“তেমন কিছু না।”

এরপর তিনি ইমাম চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“তাহলে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলা যাক।”

দীপ্র, আজিজ খান, দিশা সবাই দিলারা খাতুনের এই বাড়াবাড়িতে প্রচণ্ড রকমের বিরক্ত হয়ে যায়। কিন্তু দিলারা খাতুন সেসব কিছু পরোয়া করেন না। এরমধ্যে ইশা বলে ওঠে,
“আমি আপনার ছেলেকে বিয়ে করবো কিন্তু একটা শর্তে।”

“কি শর্ত?”

“ওকে এই বাড়িতে ঘরজামাই হয়ে থাকতে হবে।”

দীপ্র বলে ওঠে,
“ব্যস, এবার সব সীমা পেরিয়ে গেছেন আপনি। আম্মু তুমি এখনই উঠবে নাকি আমরা তোমাকে এখানে ফেলেই উঠে যাব?”

দিলারা খাতুন কাচুমাচু মুখ করে উঠে দাঁড়ান। তারা বেরিয়ে যেতে ধরলে ইশা এগিয়ে এসে দিলারা খাতুনকে বললেন,
“যাওয়ার আগে যেই চা-নাস্তা খেলেন সেই বাটিগুলো পরিস্কার করে দিয়ে যান।”

দীপ্র বলল,
“আপনি কিন্তু আমাদের অপমান করছেন।”

“তোরা তো এটারই যোগ্য। কি ভেবেছিস কি তোরা? তোদের ব্যাপারে আমি কোন খোঁজ নেই নি? ছিলি তো ফকিরের ঘরের ফকিন্নি৷ তারপর ভাগ্যক্রমে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিস। তোদের তো আমাদের মতো এমন খানদানি ব্যাপার স্যাপার নেই। ছোটলোক সবসময় ছোটলোকই থেকে যায়।”

দিলারা খাতুন ভীষণ অপমানিত হলেন। তার চোখে জল চলে এলো। আজিজ খান বলে উঠলেন,
“ভদ্রভাবে কথা বলো।”

“এই বুড়ো চুপ থাক। তোকে কে কথা বলতে বলেছে?”

ইশার এই ব্যবহারে ইমাম চৌধুরীও বিব্রত হন। মালিনী বেগম অবাক হন না। কারণ ইশার থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায়না। দিলারা খাতুন হঠাৎ করে পা তাল সামলাতে না পেরে পাশের একটি ফুলদানির সাথে ধাক্কা খান। তার হাত লেগে ফুলদানি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। ইশা এটা দেখে চিৎকার করে বলে ওঠে,
“শা**লীর ঘরের শা**লী এটা কি করলি তুই? আমার প্রিয় ফুলদানি ভেঙে দিলি। জানিস আমি লন্ডন থেকে এনেছিলাম এটা। এটার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়ে যা।”

দীপ্র ইশার গালে ঠাস করে চ’ড় বসিয়ে দেয়। ইশা গর্জে বলে ওঠে,
“তোর এত বড় সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুললি? ইশা চৌধুরীর গায়ে। এবার দেখ এর পরিণাম কত ভয়ানক হয়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে