#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৭
#দিশা_মনি
নিপুণ রুদ্রদের বাড়ির চার দেয়ালে বন্দি সময় পার করছে। তবে সে এখনো কিন্তু হাল ছাড়েনি। নিপুণের এখন একটাই উদ্দ্যেশ্য। তার মাকে উদ্ধার করে একটা সেফজোনে রেখে আসা৷ তাহলে রুদ্র চৌধুরী আর তাকে কোনভাবেই ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে না। এই সুযোগে সে রুদ্র চৌধুরীর আসল রূপ এবং তার সব অপকর্ম সবার সামনে তুলে ধরতে পারবে।
নিপুণ শুধু একটা সুযোগ খুঁজছিল রুদ্রর বাইরে যাওয়ার। কারণ রুদ্র যে তাকে নজরবন্দী করে রাখতে চাইছে সেটা সে বেশ ভালোই অনুধাবন করতে পারছে।
অবশেষে আজ দুপুরে নিপুণ সুযোগ পেয়েও গেল। রুদ্র চৌধুরী তৈরি হচ্ছিল। বারবার তার কাছ ফোন আসছে। নিপুণ বেশ বুঝতে পারছে রুদ্র এখন হয়তো বাইরে যাবে। রুদ্র চৌধুরী একটা মুজিব কোর্ট পড়ে বের হচ্ছিল যাওয়ার পূর্বে সে নিপুণকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে যায়,
“আমি কিছু প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছি। আমার অবর্তমানে একদম কোন চালাকি করার চেষ্টা কিন্তু করতে যেও না। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।”
নিপুণ মনে মনে ভাবে,
“আপনি আমায় অনেক ভয় দেখিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করেছেন মিস্টার রুদ্র চৌধুরী, এবার আর নয়। এবার আমি পুরো খেলাটাই একদম ঘুরিয়ে দেব।”
রুদ্র চৌধুরী নিপুণকে বারবার করে সতর্ক করে দেয় যেন সে কোন চালাকি না করে। নিপুণও তাকে বলে,
“আপনি চিন্তা করবেন না। আমি কোন বাড়াবাড়ি করব না।”
রুদ্র কতটা নিশ্চিত হয়েছে জানা নেই। কিন্তু সে আর কিছু না বলেই বিদায় নেয়। রুদ্র চলে যাবার পর নিপুণ সুযোগ পেয়ে যায় এই বাড়ি থেকে বাইরে যাবার। তবে সে তাড়াহুড়ো করতে চাইছিল না। ধীরে সুস্থে সবটা করতে চাইছিল। এমনটা না হলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রুদ্রর বেরিয়ে যাবার ঘন্টা খানেক পরেই বেশ সচেতনতার সাথে রুদ্রদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা চালায় নিপুণ। সে বাড়ি থেকে বেরোতে যাবে এমন সময় হঠাৎ রাহাত চৌধুরী তাকে দেখে ফেলে। সেও এই মুহুর্তে বাড়ির বাইরে যাচ্ছিল। নিপুণকে দেখেই সে তার পথ আটকে বলে,
“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
নিপুণ চিন্তায় পড়ে যায়। এখন এই ছেলেটাকে কিভাবে ম্যানেজ করবে সে? কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে নিপুণ বলে,
“আমি শপিং করতে যাচ্ছি।”
“ভাইয়া অনুমতি দিয়েছে?”
“দেবে না কেন? আমি তোমার ভাইয়ার বউ, তার আদেশ না নিয়ে আমি বাইরে যাব বলে কি তোমার মনে হয়? তাছাড়া তোমার ভাইয়া আমায় শপিং করার জন্য টাকাও দিয়েছে। এই দেখ।”
বলেই নিজের ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে রাহাতকে দেখায় সে। রাহাত আর ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। সে নিজের মতো চলে যেতে থাকে। এরপর নিপুণও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অতঃপর বাড়ির বাইরে পা রেখে নিজের গন্তব্যের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়।
এদিকে রাহাত বাড়ি থেকে বের হয়েই কাউকে একটা ফোন করে। বিপরীত দিক থেকে ফোনটা রিসিভ করতেই সে বলে,
“শিকার বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। তোরা তোদের কাজ শুরু কর।”
বলেই সে ফোনটা কে’টে দেয়। অতঃপর বাঁকা হেসে বলে,
“আমাকে জেলে পাঠানোর খুব ইচ্ছা ছিল না তোমার এডভোকেট নিপুণ খান? এবার তুমি বুঝবে কত ধানে কত চাল। কি ভেবেছিলে আমার ভাইকে ফাঁ/সিয়ে বিয়ে করেই সব ঠিক করে নেবে? এবার দেখো তোমার সাথে কি হয়। এবার তোমার এমন অবস্থা করব যে ভবিষ্যতে কেউ রাহাত চৌধুরীর সাথে লড়তে আসার আগেও দশবার ভাববে।”
★★★
নিপুণ দ্রুত নিজের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। একটি সিএনজিতে করে সে রওনা দিয়েছে বাড়ির পথে। চাইলেই সে রুদ্র চৌধুরীর বাড়ির গাড়ি ব্যবহার করতে পারত কিন্তু এতে করে যদি কোন ভাবে খবরটা রুদ্র চৌধুরীর কাছে চলে যেত তাহলে তার বিপদ হতে পারত এজন্যই সে সিএনজি বেছে নিয়েছে।
কিছু সময়ের ব্যবধানে সে নিজের বাড়িতে পৌঁছে যায়। সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। দ্রুত বাড়ির কাছাকাছি এসে সে চমকে যায়। নিপুণ দেখে তাদের বাড়ির গেটে তালা ঝোলানো। এটা দেখে নিপুণ হতবিহ্বল হয়ে যায়। সে বলতে থাকে,
“গেটে তালা ঝুলানো কেন? মা কোথায়?”
নিপুণ গেটে নক করে তার মাকে ডাকতে থাকে কিন্তু ভিতর থেকে কোন সাড়া আসে না।
নিপুণ এবার ভীষণ ভেঙে পড়ে। নিজের মায়ের জন্য তার খুব চিন্তা হতে থাকে। তার বারবার মনে হয় রুদ্র চৌধুরী কি তাহলে তার মায়ের কোন ক্ষতি করে দিল? নিপুণ বাড়ির দরজার সামনে বসে পড়ে। বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
“আমি তোমার কিছু হতে দেব না মা। তুমি ছাড়া যে আমার কেউ নেই। প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা।”
হঠাৎ করে নিপুণ লক্ষ্য করে তার মাথায় কেউ ব*ন্দুক তাক করেছে। মাথা তুলে তাকাতেই সে দেখতে পায় কয়েকজন মাস্ক পড়া লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে। নিপুণ বুঝতে পারে না এরা কারা। সে প্রশ্ন করে,
“কারা আপনারা? আপনারা কি আমার মা’কে কিডন্যাপ করেছেন? বলুন কোথায় রেখেছেন আমার মাকে।”
মাস্ক পড়া লোকগুলো একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। নিপুণের মাথায় যেই লোকটা বন্দুক তাক করে ছিল তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন,
“চল তোকে তোর মার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।”
বলেই বন্দুকের ট্রিগারে হাত দেয়।
★★★
স্নেহা হাসপাতালে ৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে দিয়েছে। তার বাবার অপারেশন শুরু হয়ে গেছে। এখন সে অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছে।
এত কিছুর পরেও স্নেহার মনে একটা বিষয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হলো তার আসল পরিচয়ের ব্যাপারটা। স্নেহার এখনো এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে যে জন্মের পর থেকে সে যাদেরকে নিজের মা-বাবা ভেবে এসেছে তারা তার আসল মা-বাবা নয়৷ এরমধ্যে স্নেহার ভীষণ খিদাও পেয়ে যায়। তাই সে পাশের রেস্টুরেন্টে খেতে চলে যায়। তার কাছে বেশি টাকা ছিল না তাই সে খুব সাধারণ, সস্তার খাবার অর্ডার করে।
স্নেহা খাওয়া শুরু করে। খাওয়া শেষ করে অতঃপর সে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোনোর পর হঠাৎ করে স্নেহার নজরে আসে কেউ তার দিকে ছুটে আসে। অভিক ছুটে এসে স্নেহার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“কেমন আছেন ম্যাম? আমায় চিনতে পারছেন তো?”
স্নেহা বলে,
“হ্যাঁ, তুমি তো অভিক প্রজ্ঞার স্টুডেন্ট। তোমাকে পরীক্ষার আগে আমি একবার পড়িয়েছিলাম।”
“ও। মনে রেখেছেন তাহলে। আচ্ছা প্রজ্ঞা ম্যামের কি হয়েছে? উনি আমায় এখন আর পড়াতে আসেন না কেন?”
স্নেহা বুঝতে পারে না কি বলবে। কিছুটা ভেবে সে বলে,
“আসলে প্রজ্ঞা একটু অসুস্থ তো তাই। যাইহোক তুমি একা এখানে কি করছ?”
“আমি একা আসিনি। আমি তো আমার খালা আর হবু খালুর সাথে এখানে এসেছি।”
“ও কোথায় তারা?”
এমন সময় অভিকের খালা রিমি সেখানে চলে আসে। এসে অভিককে বকুনি দিয়ে বলে,
“হঠাৎ এভাবে ছুটে এলে কেন তুমি? তোমাকে না বলেছি রাস্তায় এভাবে ছুটবে না।”
“সরি খালা। আসলে আমি ওনার সাথে দেখা করতে এসেছি। উনি আমার পরিচিত। একদিন আমাকে প্রাইভেট পড়িয়েছিলেন।”
“ওহ।”
রিমি স্নেহার সাথে আলাপ বিনিময় করে। স্নেহার হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় রিমির হবু স্বামীর কথা। তার গলার স্বরটা একদম অনুপমের মতোই ছিল। স্নেহা তো সেদিন তেমনি শুনেছিল। তাই সে রিমিকে প্রশ্ন করে,
“আচ্ছা আপনার হবু স্বামী কোথায়?”
“ও…”
একটু আশেপাশে তাকিয়ে তারপর হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে,
“ঐ তো ও এদিকেই আসছে।”
স্নেহা রিমির ইশারা মতো রিমির হবু স্বামীর দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨