তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১৫

0
515

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৫
#দিশা_মনি

দীপ্রর জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে দিয়েছেন দিলারা খাতুন। তার মাথায় যেন জেদ চেপে বসেছে। যে করেই হোক তিনি তার ছেলের সাথে খুব সুন্দরী, উচ্চশিক্ষিত, ধনী পরিবারের একটি মেয়ের বিয়ে দিতে চান। এই উপলক্ষে আজ তিনি বাড়িতে ঘটক ডেকেছেন। ঘটক সাহেব সোফায় এসে বসে চা খাচ্ছেন। কিছু ছবি তিনি দিলারা খাতুনকে দেখিয়েছেন। কিন্তু দিলারা খাতুনের কাউকের ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না। হঠাৎ করেই তার চোখ আটকে যায় একটি ছবির উপর। ছবির মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দরী, সাজসজ্জা দেখে বেশ ভালো ঘরের মেয়েই মনে হচ্ছে। দিলারা খাতুন ঘটককে ছবিটা দেখিয়ে বলেন,
“এই মেয়েটা কে?”

“ইনি হলেন এই শহরের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ইমাম চৌধুরীর মেয়ে ইশা চৌধুরী। শুধু রাজশাহী না ঢাকাতেও ওনাদের ব্যবসা বিস্তৃত। বেশ পয়সাওয়ালা। আর মেয়েটাকে তো দেখছেনই। একদম ডানা কা’টা পরি।”

দিলারা খাতুন ছবিটা হাতে নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকেন৷ এরমধ্যে দীপ্র সেখানে চলে আসে। দীপ্রকে দেখামাত্রই তিনি বলেন,
“এই দীপ্র, দেখ তো মেয়েটাকে তোর কেমন লাগে!”

দীপ্র ছবিটার দিকে একপলক তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,
“এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না আম্মু। নিজের পছন্দের উপর আমার আর বিশ্বাস নেই। তোমার যাকে পছন্দ হয় তাকেই আমি বিয়ে করব। আমার এখন মনে হয় তুমি আমার থেকে ভালো মানুষ চিনতে পারো।”

দিলারা খাতুন বলেন,
“এটা বুঝতে তুই বড্ড দেরি করে ফেললি। আমার হলো জহুরির চোখ। সোনা চিনতে ভুল হয়না। তামা ও সোনার তফাতও আমি বুঝি। এবার দেখিস তোর জন্য একটা সোনার টুকরো মেয়ে নিয়ে আসব৷ যার সাথে তোকে অনেক ভালো মানাবে।”

দীপ্র কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। দিলারা খাতুন ঘটকের সাথে কথা বলা অব্যাহত রাখে।

★★★
নিপুণ রুদ্রর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তার মন আজ বড্ড বিক্ষিপ্ত। রাগে তার পুরো শরীর জ্ব’লে যাচ্ছে। এরমধ্যে হঠাৎ রুদ্র পিছন থেকে এসে তার নাম ধরে ডাক দেয়। নিপুণ ফিরেও তাকায় না। অতঃপর রুদ্র নিপুণের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমি তো ডাকছিলাম তোমায়। শুনছ না কেন?”

“আপনার ডাক শোনার প্রয়োজন মনে করিনা।”

“বেশি বাড়াবাড়ি করো না। এই নাও।”

“কি এসব?”

“তোমার জন্য শপিং করে এনেছি। এখানে তোমার জন্য অনেকগুলো ড্রেস আছে। যেগুলো পছন্দ বেছে নাও।”

নিপুণ ড্রেসগুলো নিয়ে ছু’ড়ে ফেলে দিয়ে বলে,
“আপনি কি করে ভাবলেন যে আপনার মতো একটা খু*নির টাকায় কেনা ড্রেস আমি ব্যবহার করব? আপনার পাপের টাকায় খেলে তো আমার জাহান্নামেও স্থান হবে না। আপনার টাকায় কেনা কিছু আমার লাগবে না।”

রুদ্র নিপুণকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। নিপুণ নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে। নিপুণ যত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে রুদ্র তাকে ততোই দ্রুত চেপে ধরে। নিপুণ বলে ওঠে,
“ছেড়ে দিন আমায়। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”

“কি করবে তুমি? আমাকে হুমকি দেওয়ার আগে ভেবে নিজের মায়ের কথা মনে রেখো।”

“আপনি আমায় আর কতদিন এভাবে ভয় দেখিয়ে আটকে রাখবেন মিস্টার রুদ্র চৌধুরী? আমি একদিন না একদিন আপনার সব কীর্তি ফাঁস করে দেব। আপনার পাপের সামাজ্রের ধ্বংসের সূত্রপাত হবে আমার মাধ্যমেই। দেখে নিয়েন।”

রুদ্র বাকা হেসে বলে,
“সেটা তো সময়ই বলবে। এখন আর বেশি কথা না বলে দ্রুত তৈরি হয়ে নাও।”

“কেন তৈরি হবো আমি?”

“বাইরে প্রেসের লোকজন এসেছে। এমপি রুদ্র চৌধুরী বিয়ে করেছেন এটা তো এখন টক অব দা টাউন। তারা আমার স্ত্রীকে দেখতে চাইছে।”

“আমি যাবো না।”

“তুমি যেতে বাধ্য।”

নিপুণ হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। রুদ্র চৌধুরীর বিরোধিতা করার উপায় তার নেই। রুদ্র চৌধুরীর হাতে তাকে জব্দ করার উপায় আছে। তাই নিপুণ বাধ্য হয়েই বলে,
“আমি প্রেসের লোকের সামনে যেতে রাজি আছি। তবে আমার একটা শর্ত আছে। আপনার দেওয়া কোন ড্রেস আমি পড়ব না। আমি আমার এই ড্রেস পড়েই যাবো।”

“এই সাধারণ ড্রেস পড়ে?”

“হ্যাঁ, কোন প্রব্লেম? একটা সাধারণ মেয়েকে যখন বিয়ে করেছেন তখন তাকে সাধারণ ভাবেই সবার সামনে নিয়ে যাওয়ার সাহস রাখুন।”

“বেশ। মেনে নিলাম তোমার শর্ত। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো, যদি তুমি প্রেসের সামনে কোন বেফাঁস কথা বলো বা কোন চালাকি করার চেষ্টা করো তাহলে কিন্তু…”

“জানি আমি৷ নিজের মায়ের জীবন রক্ষার জন্যই তো এত কিছু করতে বাধ্য হয়েছি।”

রুদ্র চৌধুরী নিপুণের হাত ধরে তাকে বাইরে প্রেসের লোকের সামনে নিয়ে যেতে থাকে।

বাইরে আসতেই প্রেস, মিডিয়ার লোকেরা তাদেরকে ঘিরে ধরে৷ তারা নানারকম প্রশ্ন করতে থাকে। নিপুণ শুধু হা হু করতে থাকে। রুদ্রই প্রেসের লোকদের সামলাচ্ছিল। হঠাই করেই একজন সাংবাদিক নিপুণকে প্রশ্ন করে বসে,
“আপনার মুখটা এমন শুকনা লাগছে কেন ম্যাম? আপনি কি এই বিয়েতে খুশি নন?”

রুদ্র ব্যাপারটা সামলাতে বলে,
“খুশি হবে না কেন? আসলে ও অনেক টায়ার্ড তাই ওকে এমন লাগছে। তাই না নিপুণ? ওনাদের সবাইকে বলো এই বিয়েতে তুমি খুশি কিনা?”

বলেই নিপুণকে চোখ দিয়ে ইশারা করে রুদ্র। নিপুণ মেকি হেসে সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমি খুশি হবো না কেন? এত ভালো একজন স্বামী পেয়েছি, এত ভালো শ্বশুর বাড়ি পেয়েছি। সব মিলিয়ে আমি ভীষণ হাসি।”

আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করে বসেন,
“কিছুদিন আগেই তো আপনি রুদ্র চৌধুরীর ভাই রাহাত চৌধুরীর বিরুদ্ধে কেস লড়ছিলেন তো সেখান থেকে আপনাদের মধ্যে মিল হলো কিভাবে? মানে আপনাদের এভাবে হুট করে বিয়েটা বেশ শকিং।”

রুদ্র আবারো ব্যাপারটা সামলাতে বলে,
“এই কেসের মাধ্যমেই নিপুণের সাথে আমার পরিচয়। আপনারা সবাই জানেন যে, আমি নিজের হাতে নিজের ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আমি চাইতাম যে অপরাধী উপযুক্ত শাস্তি পাক। তাই যখন নিপুণ এই কেস লড়ছিল তখন ওর সাথে যোগাযোগ করি। তখন থেকেই আমাদের মাঝে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। আমরা একে অপরকে পছন্দ করতে শুরু করি। তারপর হুট করেই বিয়ে করে নিলাম।”

নিপুণ অবাক চোখে রুদ্র চৌধুরীর দিকে দেখতে থাকে আর মনে মনে ভাবে,
“একটা মানুষ কিভাবে এত সুন্দর নাটক করতে পারে? এও সম্ভব?”

★★★
স্নেহা আজ অনেক দিন পর নিজের বাড়িতে ফিরলো৷ তার মনে কাজ করছে নানা সংশয়। কিভাবে নিজের বাবার মুখোমুখি হবে সে? তার বাবার তিল তিল করে জমানো সব টাকা সে এভাবে হারিয়ে ফেলল! স্নেহার ভীষণ অপরাধবোধ হচ্ছে।

আজ বাড়িতে ফিরেই স্নেহা লক্ষ্য করল তার বাবা আব্বাস খান বেশ চুপচাপ। স্নেহাকে দেখে তিনি বললেন,
“তুই এসেছিস স্নেহা। যা একটু ফ্রেশ হয়ে নে। আমি রান্না করে রেখেছি খেয়ে নিস।”

“তুমি কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত আব্বু?”

“না।”

“সত্যি বলছ তো?”

আব্বাস খান কোন উত্তর দেন না। স্নেহা বুঝতে পারেন বড় কোন সমস্যা হয়েছে। হুট করেই তাদের বাড়িতে চলে আসেন এলাকার মহাজন কুদ্দুস মিয়া। তিনি এসেই হাকডাক দিয়ে বলেন,
“কই গেলা আব্বাস? বাড়ি আছো নি? ট্যাহা নিয়া কি ভাইগা গেলা?”

আব্বাস খান স্নেহাকে তার ঘরে যেতে বললেও সে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়। কুদ্দুস মিয়া ততক্ষণে ঘরে ঢুকে বলতে থাকেন,
“এই তো আব্বাস। তা ট্যাহার ব্যবস্থা হইছে?”

“আমাকে আর একটু সময় দিন মহাজন।”

“আর কত সময় দিমু? সেই ৬ মাস থেকে তো আমায় ঘুরাইছ। আজকের মধ্যেই সুধে আসলে আমার ট্যাহা ফেরত চাই।”

আব্বাস খান বলেন,
“১০ লাখ টাকা তো আর মুখের কথা না যে এভাবে দিতে পারব। তাছাড়া আপনি তো জানেন কিছুদিন আগেই আমার খামারে আগুন লেগে সব গরুউ পুড়ে মা*রা গেছে। আমি যে অনেক অসুবিধায় আছি।”

“আমি এত কিছু শুনবের চাইনা। এতদিন অনেক দয়া দেখাইছি৷ আজ শেষবারের মতো দয়া করলাম। কাইলকেই যেন আমার ট্যাহা ফেরত পাই। নইলে কিন্তু তোমার বাড়ি কব্জা কইরা নিমু।”

স্নেহা হতবাক হয়ে যায়। তার বাবা যে এত সমস্যার মধ্যে আছে এটা সে জানতোও না। খামারে অগ্নিকান্ডের ব্যাপারেও সে আজ প্রথম জানল।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে