তুমি ছিলে বলেই পর্ব-১৪

0
518

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১৪
#দিশা_মনি

নিপুণকে অন্য কারো নামে কবুল বলতে শুনে দীপ্রর পুরো পৃথিবীটা যেন এক মুহুর্তে বদলে গেল। যেই মেয়েটাকে সে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে, যাকে ঘিরে হরেক স্বপ্ন সাজিয়েছে আজ সেই মেয়েটা কিনা অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলো! দীপ্রর কাছে সবটাই স্বপ্ন মনে হচ্ছে।

নিপুণ দীপ্রর দিকে অসহায় চোখে তাকালো। দীপ্র নিপুণের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কাজি অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো৷ নিপুণ দীপ্রর পিছনে যেতে নিতেই রুদ্র নিপুণের হাত ধরে ফেলল। রুদ্র বলল,
“এখান থেকে এক পাও নড়বে না।”

নিপুণ রুদ্র চৌধুরীর বাঁধা মানল না। নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দীপ্রর পেছনে যেতে লাগল৷ রুদ্র চৌধুরী বলতে লাগল,
“যদি আমার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার চেষ্টা করো তাহলে তোমার মাকে কিন্তু আর জীবিত দেখতে পারবে না।”

নিপুণ রুদ্র চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠে,
“আমি কিছু বলব না৷ আমার দীপের সাথে জরুরি কথা আছে যা আমাকে বলতেই হবে। আপনি আমায় বাঁধা দেবেন না।”

বলেই নিপুণ ছুট লাগায়৷ বাইরে এসে সে দেখতে পায় দীপ্র চলে যাচ্ছে। নিপুণ দীপ্রর নাম ধরে কয়েকবার ডাক দেয়৷ কিন্তু দীপ্র তার ডাকে সাড়া দেয় না৷ অতঃপর নিপুণ দীপ্রর সামনে এসে দাঁড়ায়। দীপ্রর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তোমাকে আমি কিছু বলার আছে দীপ।”

“কিন্তু আমার তোমার কাছ থেকে কিছুই শোনার নেই।”

“আমাকে ভুল বুঝোনা দীপ।”

“আমি একদম তোমায় ভুল বুঝছি না নিপু। তুমি নিশ্চয়ই আমাকে এই সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল৷ তাই বুঝি ডেকেছিলে আমায়?”

“দীপ..”

“চুপ। আর একটা কথাও না। যাইহোক, তোমাকে অনেক অনেক অভিনন্দন৷ বেশ ভালোই হলো বলো। একজন এমপিকে নিজের স্বামীরূপে পেলে। এটাই বোধহয় চেয়েছিলে তুমি। আম্মু ঠিকই বলতো৷ তুমি একটা গোল্ড ডিগার।”

“দীপ!! ভালোবাসলে বিশ্বাস করতে হয়।”

“বিশ্বাস করেই তো ঠকে গেলাম। দ্বিতীয় বার আর এই ভুল করব না।”

নিপুণ আর কিছুই খুঁজে পায়না বলার মতো। দীপ্র তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যেতে থাকে। ততক্ষণে রুদ্র চৌধুরী এসে নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“অনেক নাটক দেখেছি৷ এখন তুমি আমার সাথে চলো।”

নিপুণ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুদ্রর সাথে যেতে থাকে।

★★★
চৌধুরী বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে নামে রুদ্র চৌধুরী। অতঃপর সে নিপুণকে বলে,
“এসে গেছি। নেমে পড়ো জলদি। ”

নিপুণ গাড়ি থেকে নেমে চৌধুরী ভিলার দিকে তাকায়। বেশ বড়সড় আলিশান একটা বাড়ি৷ চারিদিকে বেশ রাজকীয় ভাব। কিন্তু এসব কিছু তার মনে কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না। কারণ সে জানে এই রাজপ্রাসাদে কোন রাজা থাকে না থাকে রাক্ষসের দল। যাদের কাছে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই।

নিপুণকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্র চৌধুরী বলে,
“তুমি কি এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরেও যাবে?”

নিপুণ বলে ওঠে,
“আমায় আপনার বাড়িতে কেন যেতে হবে? আপনার শর্ত ছিল আপনাকে বিয়ে করার যেটা আমি পূরণ করেছি৷ এবার তো আমায় যেতে দিন।”

“আমার লোকেরা কিন্তু এখনো…”

“এভাবে হুমকি দিয়ে কতদিন আটকে রাখবেন আমায়?”

“যতদিন আমার ইচ্ছা। আসলে রুদ্র চৌধুরী তার শত্রুকে নিজের কাছে রাখতেই খুব ভালোবাসে।”

বলেই বিশ্রী একটা গা জ্বালানো হাসি দেয়৷ নিপুণ নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। রুদ্র চৌধুরী নিপুণকে নিয়ে তার বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। রাহাত চৌধুরী তখন সবেমাত্র বাড়ি থেকে বেত হচ্ছিল। নিজের ভাইয়ের পাশে নিপুণকে দেখে চমকে যায় সে৷ চিৎকার করে বলে ওঠে,
“এই মেয়েটা এখানে কি করছে?”

রাজীব চৌধুরী ড্রয়িংরুমের সোফায় বসেছিলেন। রাহাতের চিৎকার শুনে তিনি উঠে দাঁড়ান। বাড়ির মূল ফটকের সামনে গিয়ে তিনিও চরম বিস্মিত হয়ে যান। রুদ্রকে প্রশ্ন করেন,
“এই মেয়েটাকে কেন নিজের সাথে এনেছ তুমি?”

রুদ্র চৌধুরী বেশ সাবলীল ভাবেই বলল,
“কারণ ও আমার স্ত্রী। স্বামী যেখানে থাকবে তার স্ত্রীও তো সেখানে থাকবে। তাই নয় কি?”

রাহাত ও রাজীব চৌধুরী দুজনের অবাকের মাত্রা এবার বাড়ল৷ দুজনেই একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। রাহাত বলল,
“তুমি কি সকাল সকাল আমাদের সাথে মজা করছ নাকি ব্রো?”

“তোর কি আমাকে জোকার মনে হয় যে আমি তোদের সাথে মজা করব?”

রাজীব চৌধুরী বলে ওঠেন,
“তাহলে তুই সত্যিই এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছিস?”

“জ্বি।”

রাজীব চৌধুরী হুংকার দিয়ে বলে ওঠেন,
“আমার অনুমতি না নিয়ে এরকম একটা কাজ কিভাবে করলে তুমি? নিজেকে কি খুব লায়েক মনে করেছ?”

রুদ্র শান্ত অথচ রুঢ় স্বরে বলে,
“রুদ্র চৌধুরীর কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই৷ আমি নিজের ইচ্ছাতেই চলি আর সবসময় চলব।”

“এই মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ হিসেবে মানব না।”

“আমিও ওকে নিজের ভাবি হিসেবে মানব না।”(রাহাত)

” তোমাদের কাউকে মানতে হবে না। আমি ওকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি, কবুল বলে ওকে বিয়ে করেছি এটাই যথেষ্ট।”

এটুকু বলে নিপুণকে জোরপূর্বক নিজের সাথে নিজের কক্ষে নিয়ে যেতে থাকে রুদ্র চৌধুরী৷ রাহাত, রাজীব চৌধুরী শুধু চুপচাপ দেখতে থাকে। রুদ্র নিপুণকে নিয়ে চলে গেলে রাহাত তার বাবাকে বলে,
“ব্রো ঐ মেয়েটাকে এভাবে নিজের রুমে নিয়ে গেলে আর তুমি সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলে ড্যাড! কিছু বললে না কেন?”

“রুদ্রকে তো তুমি চেনোই। ওর কোন কাজে আমি বাঁধা দিতে পারব না। তবে ঐ মেয়েটাকে আমি এই বাড়িতে টিকতে দেব না। ”

“তাহলে কি করবে তুমি ড্যাড?”

“সেটাই ভাবছি যে কি করা যায়।”

★★★
দীপ্র উন্মাদের মতো নিজের বাড়িতে ফিরল। বাড়িতে এসেই নিজের রুমে একটা ঢুকে ভাংচুর করতে শুরু করে দিলো। যার ফলে দিশা, দিলারা খাতুন, আজিজ খান সবাই ছুটে,এসে দীপ্রর ঘরের বাইরে দাঁড়ান। সবাই ডাকাডাকি করতে থাকে কিন্তু দীপ্র কারো ডাকে সাড়া দেয়না। দীর্ঘ ৩০ মিনিট নিজের রুমে ভাংচুর করে দরজা খুলে দেয় সে৷ দরজা খুলতেই দিলারা খাতুন লক্ষ্য করেন দীপ্রর হাত কে’টে গেছে। তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন,
“এ কি অবস্থা করেছিস তুই নিজের? তোর হাত থেকে তো অনেক রক্ত পড়ছে।”

“আমার অন্তরে যে এর থেকেও বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে আম্মু।”

আজিজ খান শুধান,
“কি হয়েছে টা কি তোমার সেটা আমাদের খুলে বলো।”

“নিপুণ আমাকে ঠকিয়েছে বাবা। আমাকে ঠকিয়ে ও এমপি রুদ্র চৌধুরীকে বিয়ে করে নিয়েছে।”

রুদ্রর কথা শুনে আজিজ খান, দিশা দুজনেই অবাক হয়ে যায়। দিশা বলে ওঠে,
“এটা কিভাবে হতে পারে? নিপুণ আপি তো এমন মেয়ে নয়।”

দিলারা খাতুন রাগী কন্ঠে বলেন,
“চুপ কর তুই। নিজের ভাইয়ের এই অবস্থা দেখেও তুই এই কথা বলছিস! আমি আগেই বলেছিলাম ঐ মেয়ে একটা গোল্ড ডিগার। কি মিললো তো আমার কথা? দীপ্রর বাবা তুমি কি বলবে এখন? খুব তো বলেছিলে নিপুণ খুব ভালো মেয়ে তোমার ছেলেকে নাকি ও খুব ভালো রাখবে। এই তার নমুনা?”

আজিজ খান দীপ্রকে বলেন,
“নিপুণ কি সত্যিই এই কাজ করেছে?”

“হ্যাঁ। আমি নিজের চোখে ওদের বিয়ে হতে দেখেছি।”

দিলারা খাতুন উত্তেজিত হয়ে বলেন,
“শুধুই দেখে গেলি? ঐ মেয়েটার গালে ঠাস ঠাস করে দুটো বসিয়ে দিতে পারলি না? বেয়াদব মেয়ে। আমার সহজ সরল ছেলেটার মন নিয়ে খেলে এখন আরেকটা বড়লোক এমপি দেখে ঝুলে পড়েছে। আগেই জানতাম ঐ মেয়ে গোল্ড ডিগার। শুধু বড়লোক ছেলেদের ফাঁসাতে জানে। মুখেই শুধু ন্যায়ের বুলি আওড়ায়। দীপ্র তুই ঐ মেয়েটাকে ভুলে যা। আমি ওর থেকে হাজারগুণ সুন্দরী, যোগ্য মেয়ের সাথে তোর বিয়ে দেব।”

দিশা বলে,
“এটা একটু তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে না মম?”

দীপ্র বলে ওঠে,
“আম্মু ঠিকই বলেছে। নিপুণ যদি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে আমি কেন পারবো না? আমি কি ওর শোকে দেবদাস হয়ে থাকব নাকি? আমিও বিয়ে করে ওকে এটা দেখিয়ে দেব যে আমি ওকে ছাড়াও ভালো থাকতে পারি।”

দিলারা খাতুন খুশি হয়ে বলেন,
“এই নাহলে আমার ছেলে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে