#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ৬
#দিশা_মনি
স্নেহাকে নিজের বাসায় নিয়ে আসে নিপুণ। স্নেহা প্রথমবার নিপুণের বাসায় এসে একটু ইতস্তত বোধ করে। তবে নিপুণ স্নেহার হাত ধরে তাকে নিজের বাসার মধ্যে নিয়ে যায়। নিপুণের মা শাহিনা খাতুন স্নেহাকে দেখে ঠিক চিনতে পারেন না৷ তাই তিনি নিপুণকে শুধান,
“ও কে রে?”
“মা, ও হলো দীপের কাজিন। ওর নাম স্নেহা।”
“ওহ। এসো বসো তুমি।”
স্নেহা সৌজন্যমূলক হাসে। শাহিনা খাতুন স্নেহার সাথে টুকটাক আলাপ করে। নিপুণ স্নেহার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আজ তোমার কত বড় বিপদ হয়ে যেতে পারত। ভাগ্যিস আমি একদম সঠিক সময় পৌঁছে গিয়েছিলাম।”
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নিপুণ আপু। আপনি না থাকলে যে আমার কি হতো!”
“আচ্ছা, তুমি একটা কাজ করো আমার নাম্বারটা নিজের কাছে রাখো। যখনই কোন বিপদে পড়বে আমাকে ফোন করবে। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব তোমাকে সাহায্য করার।”
এই বলে নিপুণ নিজের ফোন নম্বর স্নেহাকে দিয়ে দেয়৷ কিছুক্ষণ থেকে স্নেহা চলে যেতে চাইলে শাহিনা খাতুন তাকে আটকে দেয়। তিনি স্নেহাকে কিছু খেয়ে যেতে বলেন। স্নেহা প্রথমে তো খেতে চাইছিল না কিন্তু শাহিনা খাতুনের জোরাজুরিতে সে না খেয়ে আসতে পারল না। শাহিনা খাতুনকে দেখে তার ভীষণ ভালো লেগেছে। তাঁকে দেখে স্নেহার নিজের মায়ের কথাও মনে পড়ে যায়। স্নেহার মাও স্নেহাকে সবসময় খাওয়া নিয়ে এমন জোর করতো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে স্নেহা আর বেশি সময় নষ্ট করলো না। সে দ্রুত হোস্টেলে ফিরতে চাইল। নিপুণ নিজের গাড়িতে করে স্নেহাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে আসল।
★★★
নিপুণ আজ সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছে। আজ কোর্ট বন্ধ। তবে ছুটির দিন বসে থাকার মেয়ে নিপুণ নয়৷ সকাল থেকেই রান্নাবান্না করছে। ছোটবেলা থেকেই টুকটাক রান্না করতে পারে সে। রান্না করতে বরাবরই তার ভালো লাগে। সামনে যেহেতু তার বিয়ে তাই এই সময় বেশি বেশি করে রান্না শিখে নিতে চায়।
নিপুণ যখন রান্নায় ব্যস্ত ছিল ঠিক সেইরকম সময় পিছন থেকে কেউ এসে তার চোখ ঢেকে ধরলো। নিপুণ বলতে লাগল,
“কে?”
কোন উত্তর আসল না। নিপুণ এবার হাত দিয়ে স্পর্শ করল সেই ব্যক্তির মুখে। অতঃপর মৃদু হেসে বললো,
“দীপ তুমি!”
দীপ্র নিপুণের চোখ ছেড়ে দিয়ে বলে,
“তুমি সবসময় কিভাবে আমাকে স্পর্শ করেই বুঝে যাও যে এটা আমি?”
নিপুণ বেশ গর্ব করে বুক ফুলিয়ে বলে,
“এটাই তো আমার সিক্রেট পাওয়ার।”
দীপ্র নিপুণের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“এই উপায় অবলম্বন করে তোমায় চমকে দিতে না পারলেও আমার হাতে অন্য উপায় কিন্তু আছে।”
“কি উপায়?”
“তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। একটু গেস করার চেষ্টা করো তো এটা কি হতে পারে?”
“আই হ্যাভ নো আইডিয়া।”
“আরে একটু ভাবো।”
“আমি কিভাবে বুঝব দীপ? আমি কি অন্তর্যামী?”
“ওয়েল, তাহলে চোখ বন্ধ করো।”
“এসব কি ছেলেমানুষী?”
“আরে চোখটা বন্ধই করো না। সারপ্রাইজ পেতে চাইলে কিন্তু এমনটা করতেই হবে।”
“ঠিক আছে। আমি চোখটা বন্ধ করলাম।”
“আমি না বলা পর্যন্ত কিন্তু চোখ খুলবে না।”
দীপ্র নিজের ব্লেজারের পকেট থেকে কিছু একটা বের করে নিপুণের হাতের উপর রাখে। অতঃপর আদেশের সুরে বলে,
“এবার চোখ খোলো।”
নিপুণ আস্তে আস্তে চোখ খুলে পিটপিট করে তাকায়। নিজের হাতের দিকে তাকাতেই সে চমকিত হয়। সাথে সাথেই খুশিতে আপ্লুত হয়ে বলে,
“বিয়ের কার্ড!”
“হ্যাঁ, ম্যাম। এটা আমাদের বিয়ের কার্ড। আগামী মাসের পাঁচ তারিখ আমাদের বিয়ে। আর এটা হলো বিয়েএ ইনভিটেশন কার্ড। জাস্ট ইমাজিন, আর মাত্র কিছু দিন। তারপরই আমাদের একটা সুখের সংসার হবে।”
নিপুণের মুখে হাসি তখনো অব্যাহত। সে বিয়ের কার্ডটা ভালো ভাবে দেখতে থাকে। দীপ্র নিপুণকে শুধায়,
“কার্ডটা পছন্দ হয়েছে তো? আমি চুজ করেছি।”
“খুব পছন্দ হয়েছে। তোমার পছন্দ কখনো খারাপ হতেই পারে না।”
“একদম ঠিক বলেছ তুমি। তোমাকে দিয়েই তো সেই প্রমাণ পেয়েছি। ইউ নো হোয়াট, আই থিংক আমরাই এই পৃথিবীর সবথেকে হ্যাপি কাপল হবো।”
নিপুণের মুখের হাসি হঠাৎ করে মিলিয়ে যায়। গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে সে। নিপুণের এমন মুখভঙ্গি দেখে দীপ্র শুধায়,
“কি হলো? তোমার মুখটা চুপসে গেল কেন হঠাৎ?”
“আমি একটা কথা ভাবছি দীপ। এত সুখ কি আমার কপালে সইবে?”
“এসব কি বলছ তুমি? সইবে না মানে? অবশ্যই সইবে। এখন চলো আমরা একসাথে লাঞ্চ করব।”
“লাঞ্চ বলতে মনে পড়লো আমি না আজ বিরিয়ানি করেছি। খাবে তুমি?”
“বিরিয়ানীতে তো অনেক তেল মশলা থাকে। তুমি তো জানো আমি এসব ওয়েলি ফুড খাইনা। চলো কোন রেস্টুরেন্টে যাই।”
নিপুণ উত্তরে কিছু বলল না। নিজের মুখটা গোমড়া করে নিলো৷ দীপ্র বুঝল নিপুণের হয়তো খারাপ লেগেছে। তাই সে নিজের মত পালটে বলল,
“তুমি যখন নিজের হাতে রান্না করেছ তখন তো আমায় খেতেই হবে। এখন থেকেই তো দেখতে হবে আমার হবু বউ কেমন রান্না করে।”
নিপুণের গম্ভীর মুখশ্রী হাস্যজ্বল হয়। তারা এভাবে খুনশুটি চালিয়ে যায়।
★★★
সূর্য অনেক আগেই অস্তমিত হয়েছে। শীতকাল হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি আঁধার নেমেছে চারিদিকে।
স্নেহা তখন পড়ছিল। বর্তমানে তার এক্সাম চলছে। তাই এখন পড়াশোনায় বেশি মনোনিবেশ করতে হচ্ছে তাকে৷ স্নেহা ঘড়ির দিকে খেয়াল করে। প্রজ্ঞা কিছু জরুরি কাজে অনেক আগেই বেরিয়েছে। প্রজ্ঞা এখনো ফিরছে না জন্য ভীষণ চিন্তা হচ্ছে স্নেহার। হঠাৎ করেই স্নেহার ফোন বেজে ওঠে। স্নেহা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে প্রজ্ঞা ফোন করেছে। স্নেহা ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে প্রজ্ঞার গলা শুনতে পায়৷ ভীষণ ভীত শোনাচ্ছে তার কন্ঠস্বর। প্রজ্ঞা হাফাতে হাফাতে বলে,
“স্নেহা কিছু ছেলে আমার পিছু নিয়েছে। আমার ভীষণ ভয় লাগছে রে!”
“হ্যালো, প্রজ্ঞা কোথায় তুই? আমাকে ঠিকানা বল।”
“আমি ** এলাকার পাশেই আছি।”
“তুই ওখানেই থাক আমি আসছি।”
স্নেহা হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যেতে নেয়। এমন সময় হঠাৎ করে অনুপমের আগমন ঘটে। অনুপমকে দেখেই স্নেহা বলতে শুরু করে,
“অনুপম প্রজ্ঞা অনেক বড় বিপদে পড়েছে। ওকে কিছু ছেলে ফলো করেছে। তুমি প্লিজ আমার সাথে চলো ওকে রেসকিউ করতে হবে।”
“আচ্ছা, চলো তাড়াতাড়ি।”
দুজনে আর কাল বিলম্ব না করে রওনা দেয়। স্নেহা চাইছিল পুলিশে ফোন করে ব্যাপারটা জানাতে কিন্তু সেই মুহুর্তে অনুপম তাকে বলে,
“এসব ব্যাপারে পুলিশকে জানাতে হবে না। শুধু শুধুই ঝামেলা হবে। আমরা দুজন মিলেই ওকে রেসকিউ করতে পারব।”
অনুপমের কথা শুনে স্নেহা আর পুলিশকে এই ব্যাপারে ইনফর্ম করে না।
★★★
প্রজ্ঞাকে কয়েকজন ছেলে তুলে নিয়ে এসেছে একটি পপরিত্যক্ত ভবনে। প্রজ্ঞা সমানে চিৎকার করে সাহায্য চাইছে, ছেলেগুলোকে অনুরোধ করে চলেছে যেন তার কোন ক্ষতি না করে কিন্তু তারা কোন কথা শুনছেই না। সবার লোলুপ দৃষ্টি প্রজ্ঞার উপর। এমন সময় হঠাৎ করে একটি ছেলে প্রজ্ঞার সামনে এসে বলে,
“অবশেষে আজ আমার স্বার্থ চরিতার্থ হতে চলেছে। তোকে আগেই বলেছিলাম ভালোয় ভালোয় আমার প্রস্তাব মেনে নে। যেই মেয়ের দিকেই আমার নজর গেছে সকলকেই তো আমি বিছানায় নিয়েছি তোকেও নাহয় নিতাম। বিনিময়ে তুইও অনেক লাভ পেতি। কিন্তু তুই তো আমার কথা শুনলি না। তাই আমাকে এই পথ অবলম্বন করতে হলো।”
প্রজ্ঞা ছেলেটির সামনে হাতজোড় করল এছাড়া আরো অনেক অনুনয় বিনয় করল কিন্তু কোন লাভ হলো না। একে একে সবগুলো জা**য়ার তাকে চিড়ে খে*তে লাগল। এত অত্যা*চার সইতে না পেরে একসময় নিস্তেজ হয়ে গেল প্রজ্ঞা। শয়তানগুলোও নিজের চাহিদা মিটিয়ে প্রজ্ঞাকে ছু’ড়ে ফেলে গেল রাস্তায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨