#তুমি_গহীন_অনুভব
#পর্ব_৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
নির্দিষ্ট একজনকে ভালোবাসা সত্যিই চমৎকার একটি বিষয়। যাকে ভালোবাসা যায় তাকে যদি নিয়ম করে মুখে না বলে কাজের মাধ্যমে রোজ ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় এটা অসম্ভব সুন্দর একটা ব্যাপার।
আইজান আর ইরজা রেডি হচ্ছে আজ আইজান ইরজার কেনা পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা পড়েছে। আর ইরজা আইজানের দেওয়া গ্ৰাউন আর হিজাব। আইজান ইরজাকে মেকআপ করে দিতে চাইলেও ও ওর মত পাল্টিয়ে একটা ক্রীম কালারের নিকাব এনেছে। সেটাই এখন বেঁধে দিচ্ছে তার ওপর দিয়ে ইরজা হিজাব বাঁধবে। ঠিক তখনি ফায়জা ঢুকলো। আইজানের বাঁধা হয়ে গেছে তাই ও একটু সরে গেল। তা দেখে ফায়জা বলল,,
“তোমাদের আবার ডিস্টার্ভ করলাম না তো?”
তখন আইজান বলল,,
“ফায়জা তুই সবসময় বেশি বুঝিস।
তখন ফায়জা ওদের দুজনকে দেখে বলল,,
“মাশাআল্লাহ ভাইয়া ভাবি তোমাদের তো দারুন লাগছে কিন্তু এটা কখন কিনলে।”
“কিনেছি এক সময়!”
তখন ইরজা এসে বলল,,
“তোমাকেও মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।”
“শুকরিয়া ভাবি! এখন তোমরা নিচে চলো মা যেতে বলেছে।”
তখন আইজান বলল,,
“তুই যা আমি আর ইরজা একটু পর আসছি।’
ফায়জা চলে গেল। তখন ইরজা বলল,,
“তো যাওয়া যাক এখন!”
“আরে দারাও তোমার জামাইকে কতো হ্যান্ডসাম লাগছে সুন্দর লাগছে তার নজর কাটাও যদি কারো নজর লেগে যায়।”
“তাই বুঝি।”
“হুম! তাই এখন মাশাআল্লাহ বলো!”
ইরজা মুচকি হেসে বলল,,
“মাশাআল্লাহ ইয়া হায়াতি!”
“হায়াতি টা আবার কে?”
“আপনি খুঁজে বের করুন তবে এটা বলছি আপনার মাঝেই আপনি এর উত্তর খুঁজে পাবেন। যাই হোক এদিকে আসুন। আর নিচু হোন!
আইজান ইরজার সামনে দাঁড়ালো। আর একটু নিচু হলো। ইরজা সূরা নাস আর সূরা ফালাক পরে ফু দিয়ে দিল। আর বলল,,
“হয়ে গেছে ইনশাআল্লাহ্ এখন কেউ আর আপনার ওপর নজর লাগাতে পারবে না। এখন নিচে চলুন।”
“আরে কোথায় যাচ্ছো এখন ও তো আমার বউয়ের প্রশংসা করা হলো না।
বলেই আইজান ইরজা কে টেনে ওর সামনে এনে কপালে চুমু দিল আর বলল,,
“মাশাআল্লাহ আজকে আমার শুভ্রপরীকে অনেক সুন্দর লাগছে। একদম সত্যি শুভ্রপরী লাগছে। জীবনে কি পেয়েছি আমি জানি না হয়তো কিছু না পাওয়া আছে। তবুও আমি এখন খুশি এবং সুখী কারন আমার জীবনের সেরাটা তোমাকে পেয়ে গেছি। জীবনে এখন একটাই চাওয়া আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে ভালোবেসে মরতে চাই।”
এ কথা গুলো ইরজা খুব মনোযোগ সহকারে আইজানের চোখের দিকে তাকিয়ে শুনছিল সব শুনে ওর চোখ ছলছল করে উঠলো। ইরজা মুচকি হেসে বলল,,,
“ঠিক এই জন্যই আপনি আমার হায়াতি!” এখন চলুন নিচে যাই মা অনেকক্ষন যাবৎ অপেক্ষা করছে।”
“আমার হায়াতি মানে আমি! আলহামদুলিল্লাহ তুমি ক্লু দিয়ে দিলে আমি আজকেই বের করবো কি এটা।”
ইরজা কিছু বললো না মুচকি হাসলো। ও হাঁটা ধরলো আইজান ও তা দেখে ওর পেছনে গেল। ইরজা সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়েছে কিছু মানুষের নজর গেল সেদিকে ও হাঁটতে লাগলো ঠিক তখনি আইজান এসে ইরজার হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে নামলো ওদের দু’জনের মুখেই লেগে আছে মিস্টি হাসি ।তবে ইরজার টা কেউ দেখছে না। কারন আজ শুধু ইরজা চোখ দুটো বের হয়ে আছে।ওরা নেমেই ইরজা আয়েশা চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলল,,
“মা আমাকে ডাকছিলেন?”
“হ্যা মা!” বলতে বলতে ওনার চোখ গেল ওদের দিকে।উনি কারো সাথে কথা বলছিলেন। ওদের দেখে ওনার চোখ দুটো জুরিয়ে গেল। উনি ইরজা আর আইজানের গালে হাত রেখে বলল,,
“মাশাআল্লাহ আমার ছেলে মেয়ে দুটোকে অনেক সুন্দর লাগছে। দোয়া করি ঠিক এভাবেই সারাজীবন থাকো তোমরা।”
তখন আইজান বলল,,
“আমিন! আর শুকরিয়া মেরে আম্মাজান। এখন বলো ডাকছিলে কেন?”
“সবাই এসে পড়েছে তাই ডাকছিলাম আমার বউমার সাথে তো পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।”
“ওহ আচ্ছা তাহলে তোমরা থাকো আমি গেলাম। দেখি তুহিন ভাইয়া কোথায় কোন সাহায্য লাগবে কি না।”
বলেই আইজান ওখান থেকে চলে গেল। আয়েশা চৌধুরী ইরজাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। তখন গুটি গুটি পায়ে তৌকির আসে ইরজার কাছে তৌকির কে কোলে তুলে নেয়। এমনিতেই ও তেমন কাউকে চেনে না। ঠিক কিছু মূহুর্ত পর বরযাত্রী আসে । সবাই সেদিকে যায়। তখন ইরজা তিশার কাছে ছিল। ইরজা তিশার রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এলো হুট করে একটা হাতের দিকে নজর পরতেই ও থমকে যায় ও ঘামতে থাকে হাত পা অবশ হয়ে আসছে। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছে না ঠিক সেই সময় আইজান ওর কাছে আছে ওর চোখ দেখে বুঝতে পারল ওর কিছু হয়েছে তখন ইরজা আইজানের হাত ধরে থেমে থেমে বলল,,,,
“আমার খুব অসহায় লাগছে আইজান আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন। আমার শরীর আসাঢ় হয়ে যাচ্ছে আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
“কি হয়েছে শুভ্রপরী তোমার এমন মনে হচ্ছে কেন?”
“রুমে গিয়ে বলছি আপনি প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন।’
ইরজা ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছে না দেখে আইজান একহাত দিয়ে ইরজাকে ধরলো। ঠিক তখনই আয়েশা চৌধুরী ওদের কাছে এসে বললেন,,
“কি হয়েছে ?”
“জানিনা মা ও অসুস্থ বোধ করছে ওর হাত পা কাঁপছে ঠিক মতো দারাতেও পারছে না।”
“কি বলছিস ওকে তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে যা আমি আসছি।”
“না মা তোমার আসতে হবে হবে না। তুমি এখানে থাকো। আমার মনে হচ্ছে ইরজার বিপি লো হয়ে গেছে।” আমি ঘরে গিয়ে ওষুধ দিচ্ছি। ”
আইজান ইরজাকে নিয়ে রুমে চলে যায়। আইজান ইরজার হিজাব নিকাব খুলে দেয় কারন ইরজা অনেক ঘামছে। এক গ্লাস পানি খায়িয়ে দেয় আর ইরজার কথা মতো একটা ট্যাবলেট ও খায়িয়ে দেয়। এখন একটু বেটার লাগছে। ও চোখ বন্ধ করে আছে তখনি ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরল। আইজান ইরজার গালে হাত রেখে বলল,,
“কি হয়েছে কি দেখেছো তুমি?”
“বাবার খুনী এখানেই আছে এই অনুষ্ঠানে?”
এ কথা শুনে আইজান অবাক হয়ে বলল,,
“এই অনুষ্ঠানে আছে কি বলছো তুমি?”
“আমি ঠিকই বলছি। সেদিন বাবার বুকে যে গুলি করেছিল আর বাবাকে আঘাত করেছিল ওনার হাতে একটা ব্রেসলেট আর আংটি ছিল সেটা আমি দেখেছি একজনের হাতে।”
“আরে একই ব্রেসলেট আর আংটি তো অনেকেরই থাকতে পারে তাই!”
“আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন তো?”
“নিজের থেকেও বেশি!”
“তাহলে আমি বলছি ওটাই সেই লোকটা সেদিন তার মুখে মাস্ক ছিল তবে তার বডি হাইট সব আমি দেখেছি পেছন থেকে আজও আমি পেছন থেকেই দেখেছিলাম একদম সেইম টু সেইম। আর বাকি রইল ব্রেসলেট একই রকম ব্রেসলেট তো সবার থাকতে পারে তাহলে আমি বলবো একই রকম ব্রেসলেট অনেকের থাকতে পারে কিন্তু একইরকম ব্রেসলেট আর একই রকম আংটি কি অনেকের থাকতে পারে কিন্তু দুটোই কাকতালীয় ভাবে ওনার সাথে মিলে গেছে। আপনি ওনার ব্যাপারে খোঁজ লাগান বাকিটা আমি দেখে নিব।”
“কিন্তু আমি তো চিনি না।”
“আমার এখন ভালো লাগছে আপনি যান আমি আসছি এমনিতেও এভাবে আমাদের দুজনকে ঘরে দেখলে সবাই বিষয় টা অন্যভাবে নিবে। আমি একটু ওনাকে দেখে হায়পার হয়ে যাচ্ছিলাম।”
আইজান নিচে চলে গেল আর আংটি আর ব্রেসলেট ওয়ালাকে একা একাই খুঁজতে লাগলো। কারন আজকাল ওগুলো পরতে বেশি কাউকে দেখা যায় না। যদি লোকটা চলে যায় তাই একা একাই খুঁজতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর ইরজা ফ্রেশ হয়ে মাথায় হিজাব আর নিকাব পড়ে আসলো। আর আইজান কে খুঁজতে খুঁজতে লাগলো খুঁজতে খুঁজতে একসময় পেয়ে গেল। আইজান ও ওকে দেখে এগিয়ে এলো দুজনে একসাথে খুঁজতে লাগলো কিছুক্ষণ পর ওরা পেয়ে গেল ওর কাকাইএর সাথে কথা বলতে তখন ইরজা দেখালো আইজান ইরজার হাত ধরে ওখানে গেল শিওর হওয়ার জন্য যে এই লোকটাই সেই লোকটা কি না। কারন ইরজা সেদিন লোকটার কথা শুনেছিল। আইজান কাকাই এর কাছে গিয়ে বলল,,
“কাকাই তুমি দেখো তো কাকিমনি বোধহয় তোমাকে ডাকছে।”
তখন আইজান এর কাকাই বলল,,
“ওহ আচ্ছা আইজান ও হচ্ছে আমার বন্ধু শরীফুল আলম।ও ওর জেলার এম পি এখন । আর শরীফ ও হচ্ছে আমার ভাতিজা আইজান আর ওর পাশে ওর বউ।” তোরা কথা বল আমি আসছি!
বলেই ইসহাক চৌধুরী চলে গেলেন।তখন আইজান বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম আংকেল। কেমন আছেন আপনি?”
তখন শরীফুল আলম বললেন,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তোমরা কেমন আছো?”
ওনার কন্ঠস্বর শুনতেই ইরজা জোরে আইজানের হাত ধরলো মানে বোঝালো এটাই সেই লোকটা। আইজান বুঝতে পারল ইরজার মনে কি চলছে। ও বলল,
“জি আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি। আচ্ছা আংকেল আপনি কোন জেলার এম পি?
“***** এই জেলার! কেন কখনো গিয়েছো ওখানে?”
“হুম গিয়েছিলাম একবার কাজের সুবাদে আমি একজন সি আইডি অফিসার।”
একথা শুনে লোকটা হকচকিয়ে উঠলো। আর নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমার একটা জরুরি কল করার আছে।”
বলেই লোকটা চলে গেল। তখন আইজান ইরজার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“মন কে শান্ত করো। তাদের শেষ সময় নিকটে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তার মানে এর জন্যই তোমার বাবা আমাদের মাঝে নেই। এর তথ্যই ছিল ঐ প্রেনডাইভ এ যদিও সেখানে মুখ দেখা যায় নি কিন্তু নামটা তো ছিল শরীফুল আলম। তোমাদের জেলার এম পি ছিল এটা জানতাম না। খুব তাড়াতাড়ি এর মুখোশ উন্মোচন হবে। শুধু এর জন্য আরো কিছু প্রমান লাগবে।”
তখন ইরজা বলল,,
“তার মানে এর সকল অবৈধ কর্মকান্ডের জিনিস বাবা জেনে গিয়েছিল যার জন্য বাবাকে জীবন দিতে হলো। কিন্তু বাবা তো প্রমান জোগাড় করেছিল কিন্তু কোথায় রেখেছে সেটা বলে নি। নিশ্চয়ই আমাদের বাড়িতে রয়েছে নাহলে বাবা কোথায় রেখেছে। বুঝতে পারছি না কিছু সবকিছু তো আমি জানি তবুও বুঝতে পারছি না! ভাইয়া তো বলল সব জায়গায় খুঁজেছে কিন্তু পায় নি। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। আচ্ছা প্রমান গুলো না দিয়ে বাবা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে না তো ।
বাবা কাকে বাঁচাতে চাইছে হয়তো সেও ঐ অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত আমাদের কাছের মানুষ হয়তো সে? তাই হয়তো বাবা আমাদের কিছু বলে নি।”
“আসলে স্যার চাইছিলেন টা কি?”
“বুঝতে পারছি না আমার তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।”
ওরা ওখান থেকে চলে গেল। কেউ যে ওদের পেছনে দাঁড়িয়ে সব শুনলো এটা ওরা ধরতেই পারলো না।
____________________
তিশার বিয়ে পড়ানো হয়ে গেছে । এখন বিদায়ের পালা তিশা সবাইকে জরিয়ে ধরে কান্না করলো। ইরজার আজ একটু মন খারাপ বেশি। তিশা চলে গেল স্বামীর হাত ধরে এক নতুন অধ্যায় এ। সবার মনটা আজ খুব খারাপ। সবাই নিজেদের রুমে চলে গেল ইরজা ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো আইজান এখনো রুমে আসেনি ও আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,,
“বাবা তুমি কি ভালো আছো? হয়তো আছো কিন্তু দেখো না তোমার সেই ছোট্ট পরীটা ভালো নেই তোমাকে ছাড়া। আজ না তোমাকে খুব মনে পরছে। তিশা তখন ওর বাবাকে ধরে কাঁদছিল তখন আমার মনে হয়েছিল আমার বিয়ে হলেও তো আমি তোমায় জরিয়ে ধরে কাঁদতে পারিনি। কারন তুমি তো আমার কাছে ছিলেই না। তুমি তো তখন ছিলে আল্লাহ তায়ালার কাছে। তুমি কেন আমাদের সব জানালেনা আমাদের জানলে এরকম কিছুই হতো না। আচ্ছা বাবা তোমার মৃত্যুর পেছনে কি শুধু শরীফুল আলম দায়ী নাকি আরো কেউ আছে। তুমি কেন প্রমানগুলো আমাদের দিলে না।”
তখন আইজান এসে ইরজার ঘাড়ে হাত রাখলো ইরজা আইজানের স্পর্শ চিনতে পেরে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলো আর বলল,,
“আইজান আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমার সেই রাতের কথা মনে পরছে আমার মাথায় খুব যন্ত্রনা হচ্ছে আমার দম আটকে আসছে মনে হচ্ছে আমি মারা যাবো আইজান। আমার সহ্য হচ্ছে না।”
আইজান ইরজাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“শুভ্রপরী শান্ত হও এভরিথিং ইজ ফাইন তোমার কিছুই হচ্ছে না। আমি আছি তোমার কাছে তোমার পাশে।”
______________________
২ দিন পর,
খুব সকালে আইজানের একটা কল এলো ওকে ইমার্জেন্সি অফিসে যেতে হবে তাই অগত্যা আইজান তাড়াতাড়ি অফিসে চলে গেল। কিন্তু ও যাওয়ার পর সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেল আইজানের কোন খবর নেই। এদিকে ইরজার টেনশন হচ্ছে ও কিছু বুঝতে পারছে না। অন্য দিকের খবরও কিছু আসছে না। টেনশনে টেনশনে ওর ভেতর টা শেষ হয়েছে একটু টেনশন একটা মানুষ কে শেষ করার ক্ষমতা রাখে। সেটা ও ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। এদিকে তিশারাও এখন এই বাড়িতে অনেক আত্মীয় এখনো রয়ে গেছে। ইরজা আর না পেরে ইশতিয়াক চৌধুরী এর কাছে গিয়ে গেল উনি ড্রয়িংরুমে বসে ছিলেন তখন ও ওনার কাছে গিয়ে বলল,,
“বাবা উনি কি তোমাকে ফোন দিয়েছিল?”
“কই নাতো আইজান তো আমাকে ফোন দেয় নি। কেন কি হয়েছে আর ওতো এরকমই এর আগেও এরকম অনেক হয়েছে।”
“বাবা আমার ভিশন টেনশন হচ্ছে তুমি প্লিজ ওনার অফিসে একটা ফোন করো?”
“আরে টেনশন করছো কেন? আইজান ঠিক সময় এসে পরবে?” এর আগেও ও এরকম সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে আর কাউকে কিছু জানায় নি রাতে ঠিকসময় বাড়ি এসেছে।”
“তবুও বাবা আমি ওনাকে অনেকবার ফোন দিয়েছি উনি ধরছে না। এমনটা কখনো হয় না তুমি প্লিজ আমার জন্য একটা ফোন করো?”
এ কথা শুনে ইশতিয়াক আহমেদ চিন্তায় পড়ে গেলেন । তখনি ইরজার নজর পরলো দরজার দিকে আইজান আসছে । আইজানের হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে কপাল থেকেও রক্ত পরছে। ইরজা দৌড়ে আইজানের কাছে গেল ওর দৌড় দেখে সবাই ওর দিকে তাকালো আর আইজানকে দেখতেই আতকে উঠলো। আয়েশা চৌধুরী ওখানেই ছিল উনি তাড়াতাড়ি গিয়ে ব্যস্ত হয়ে ছেলের হাত ধরলো ইরজা গিয়ে ওর অবস্থা দেখে আইজানকে সোফায় বসিয়ে দিল আর ওর সামনে বসে বলল,,
“কি হয়েছে আপনার এসব হলো কিভাবে কাকিমনি আপনি প্লিজ গরম পানি আনুন ফায়জা ফ্রাস্টটেড বক্স নিয়ে আসো প্লিজ।”
আইজান কিছু বলছে না। বাকিরা ইরজার কথা মতো গরম পানি আর ওষুধপত্র নিয়ে এলো। আইজান কথা বলছে না দেখে ইরজা একটু চিৎকার করেই বলল,,
“কি হয়েছে আপনার কথা বলছেন না কেন? এ অবস্থা কি করে হলো।”
তখন আইজান আস্তে আস্তে বলল,,
“আসলে আসার সময় গাড়িতে ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
“এটাকে আপনার ছোট মনে হচ্ছে। হাত দিয়ে আর মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে !”
ততক্ষনে আইজানের কাকি আর ফায়জা সব এনেছে ইরজার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সকলে ওর কাজ দেখছে। ও আইজানের হাতের রক্ত পরিষ্কার করতে করতে বলল ,
“ফায়জা একটা কাগজ নিয়ে এসো!
ফায়জা দৌড়ে কাগজ নিয়ে এলো ইরজা ওগুলো পরিস্কার করলো তারপর হাতে আর মাথায় ব্যান্ডেজ করলো। তারপর কাগজে কিছু লিখে বলল,,
“বাবা এই জিনিস গুলো আনার ব্যবস্থা করো একটু তাড়াতাড়ি আনার ব্যবস্থা করো প্লিজ।”
ইশতিয়াক চৌধুরী কাউকে পাঠালো বাকি সবাই অবাক হয়ে ইরজাকে দেখছে।। আইজান তো মুগ্ধ চোখে ওর শুভ্রপরীর কার্যকলাপ দেখছে। ইরজা কাঁদছিল তারপর খুব যত্ন করে ওর রক্ত পরিস্কার করছিল মনে হচ্ছিল ব্যথা যেন ইরজাই পাচ্ছিল। আইজান বলল,,
“বেশি কিছু হয় নি আমি ঠিক আছি। আমি রুমে যাবো! ইরজা আমাকে রুমে নিয়ে যাও আর মা প্লিজ কান্না থামাও আমার কিছু হয় নি। দুদিন রেস্ট নিলেই ফিট এন্ড ফাইন হয়ে যাবো। আর বাবা ইরজা যা লিখে দিয়েছে সেটা আসলে একদম আমার রুমে পাঠিয়ে দিও। আর মা তুমি প্লিজ কিছু খাবার আনো আমার ক্ষুদা পেয়েছে।”
বলেই আইজান উঠলো তা দেখে ইরজা ওকে ধরলো আর ওকে নিয়ে রুমে যেতে লাগলো । কিন্তু সবার কাছে প্রশ্ন রয়ে গেল ইরজা কি আনতে বলল। আর একটা গ্ৰামের মেয়ে হয়ে এত ভালো করে ব্যান্ডেজ কিভাবে করতে পারল। ইরজা আইজানকে বিছানায় বসিয়ে দিল আর বলল,,
“সত্যি এক্সিডেন্ট হয়েছে নাকি অন্যকিছু?”
আইজান ইরজার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“সত্যি এক্সিডেন্ট-ই হয়েছে।”
তখনি আইজানের ফোনে একটা কল এলো আইজান ফোন তুলতেই যাবে তখন ফোনটা ইরজা ধরলো আর স্পিকার এ দিল তখনি ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,,
আজকের এক্সিডেন্ট টা ট্রেইলার ছিল। পুরো পিকচার এখনো বাকি। তৈরি থেকো আমার লেজ এ পারা মারলে ছোবল যে তোমায় খেতেই হবে। আর তোমার বউকেও সাবধানে থাকতে বলো কখন কি হয়ে যায় বলা তো যায় না। নিজেদের খুব চালাক ভাবো তাই না। কিন্তু তোমরা যদি চলো ডালে ডালে তাহলে আমি চলি পাতায় পাতায়।
তখন ইরজা মুচকি হেসে বলল,,
“আরে আপনি যদি চলেন পাতায় পাতায় তাহলে আমরা চলি শিরায় শিরায় অথচ আমি নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবেন। সাথে আমাদের দূর্বল ও ভাবেন কিন্তু জানেন তো প্রতিপক্ষকে কখনো দূর্বল ভাবতে নেই। প্রতিপক্ষ কে দূর্বল ভাবা হারের প্রথম লক্ষন।
~চলবে,,