#গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৮
পিটপিট করে চোখ খুলে দেখি আমার ঠিক পায়ের কাছে খালামণি বসে আছে তার চোখ ফুলে আছে নিশ্চয়ই কান্নাকাটি করেছে।আমাকে চোখ খুলতে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে আসলো আমার মাথায় কারো হাতের ছোয়া পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখি মা আমার মাথার কাছে বসে আছে আর শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে যাচ্ছে।আমি যেইনা উঠতে যাবো তখনই মা ধমক দিয়ে বললো,
~একদম উঠবিনা শরীরের অবস্থা কী করেছিস তুই তোর কী আমার জন্য মায়া-দয়া হয় না।
বলছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে মায়েরা এমনই হয় নিজের সন্তানের এই অবস্থা দেখলে তারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তাদের জন্য যে সন্তানের সুস্থতা আগে মা বলতেই মমতায় ঘেরা একজন মানুষ নিজের সন্তানকে এমন ভাবে আগলিয়ে রাখে যাতে তাকে একটা পিঁপড়াও কামড়াতে না পারে।আমি মায়ের ধমক শুনে আবারো বিছানায় শুয়ে পরলাম খালামণি বললেন,
~হয়েছে তো বোন মেয়েটাকে বকিস না শরীরটা অনেক খারাপ উপর দিয়ে তুই বকছিস।
খালামণির কথা শুনে মা আমার কপালটা ঠোঁট ছুয়িয়ে দিয়ে বললেন,
~রাত থেকে কিছু খাসনি তোর জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
~সকাল হয়ে গেছে?
খালামনি বললেন,
~তুই রাত থেকে অজ্ঞান হয়ে পরে আছিস আমরা ডাক্তার ডেকেছিলাম সে বলেছে তুই ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিস।
আমি মনে মনে ভাবলাম আমি যা শুনেছি আর দেখেছি তোমাদের যদি বলি তাহলে এখানে যুদ্ধ লেগে যাবে।আমি মনে মনে এসব ভাবছিলাম তখনই মা বললো,
~তুই স্টোর রুমে কী করছিলি?জানিস যদি ফায়াজ তোকে না দেখতো তাহলে কী হতো?
ফায়াজ ভাইয়ের নাম শুনে কালরাতের সব কথা মনে পরে গেলো।এতদিন যে মানুষটাকে ভালো ভাবতাম সেই মানুষটা যে এত জঘন্য কাজ করতে পারে তা যদি জানতাম কখনো এই মানুষটাকে এতো সম্মান করতাম।
হ্যাঁ গতকাল রাতে আমি ফায়াজ ভাইয়ের কন্ঠ শুনে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যাই।এরমানে ফায়াজ ভাই এতোদিন এসব করছিল ভাবতেও খারাপ লাগছে আর কতো সুন্দর মিথ্যে সাজিয়ে সবাইকে বুঝিয়েও দিয়েছে কতোটা খারাপ হলে মানুষ এগুলো করতে পারে।আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
~মা ক্ষুধা লেগেছে খাবার দাও।
মা বললো,
~হ্যাঁ দিচ্ছি।
বলেই মা উঠে রুমের বাহিরে চলে গেলো।খালামণি মাকে যেতে দেখে আমার দিকে ফিরে বললেন,
~ফিহা কী হয়েছিল কাল?আমি কী জানতে পারি?
আমি খালামণির দিকে তাকিয়ে বললাম,
~স্টোর রুম থেকে আওয়াজ আসছিল তাই দেখতে গিয়েছিলাম তখনই ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই।তারপর কিছু মনে নেই।
খালামণি হালকা হেসে বললেন,
~মিথ্যে বলে লাভ নেই সত্যটা একদিন বাহিরে আসবে।আর তোর এ অবস্থা যার জন্য হয়েছে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
বলেই খালামণি উঠে চলে যেতে নিবে তখনই দরজার সামনে এসে দাড়ায় ফায়াজ ভাই।আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে ছন্নছাড়া ব্যক্তির মতো দাড়িয়ে আছে গায়ের শার্ট ঠিক নেই চুলগুলো উসকোখুসকো চোখ অসম্ভব লাল।একপলকে তাকে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলাম ফায়াজ ভাই রুমের ভিতর আসতে নিবে তখনই খালামণি বললেন,
~সকাল সকাল এখানে কী চাই?
ফায়াজ ভাই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,
~ফিহাকে দেখতে এসেছি।
খালামণি বললেন,
~ফিহা একদম ঠিক আছে তুমি তোমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।ফাহাদরা নাস্তার টেবিলে এসে পরবে।
ফায়াজ ভাই একবার আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই খালামণি বললেন,
~ফায়াজ,তোমার ভাবির বাড়ি মানুষজন আসবে অনেক কাজ পরে আছে নিজেকে গুছিয়ে কাজ শুরু করো।
খালামণির কথাশুনে ফায়াজ ভাই একদন্ডও দাড়ালেন না দূর্বল পায়ে হেটে সেখান থেকে চলে গেলেন।
মা নাস্তা করিয়ে যাওয়ার পর একএক করে সবাই এসে দেখা করে গেলো আমার সাথে রুপা আপুও এসেছিল তাকে একদম স্বাভাবিক লাগছে।যাক ভালো হলো আমার সাথে সে আর রাগ করে নেই প্রিয়া ভাবির বাসার মানুষজন হয়তো একটুপর চলে আসবে তাই আমি বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম হঠাৎ ফায়াজ ভাই কোথ থেকে এসে আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে আমার দিকে ফিরে তাকালেন।পুরো রুম খালি কারণ সবাই ব্যস্ত এখানে শুধু আমি আর ফায়াজ ভাই।ফায়াজ ভাইকে দেখে আমার ভয় হতে শুরু করলো তার চোখ জোড়া অসম্ভব লাল
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
~আপনি আমার রুমে কী করছেন?বের হন রুম থেকে
আমার কথা শুনে সে এক পা দু পা করে আমার দিকে আসছেন।আমি বললাম,
~আমি এখন চিল্লাবো সবাই কিন্তু চলে আসবে।
তার কোনো ভয় নেই সে একদম আমার কাছে আসলেন আমি পিছাতে পিছাতে দেওয়ালের সাথে লেগে গেলাম সে আমার দিকে ঝুঁকে দুহাত দেওয়ালে রেখে বললেন,
~এতো কষ্ট কেন দিচ্ছিস?আমি ভুল করেছি এর জন্য এতো বড় শাস্তি দিবি আমাকে কী একটুও সহ্য করা যায় না।
ফায়াজ ভাইয়ের কথায় তার দিকে তাকালাম সে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমি বললাম,
~আপনি কী করেছেন তা আপনি ভালোই জানেন আপনার জন্য এটাই ভালো হবে আমার থেকে দূরে থাকবেন।এ খবর যদি আবীর ভাই জানে তো আপনার খবর আছে।
আমার কথা শুনে ফায়াজ ভাই হাসলেন তার হাসি মাখা চেহারা দেখে আমি অবাক হলাম। ফায়াজ ভাই আমার আরো কাছে এসে আমার নাকে তার নাক ঘষে বললেন,
~বলে দিস আমিও বলবো তোকে বিয়ে দিতে আমার সাথে।
ফায়াজ ভাইয়ের কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম এই মানুষের কী মাথা খারাপ হয়েছে মনের ভিতর ভয় ঢর নেই।আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে সে মুচকি হেসে আমার সারামুখে ফু দিয়ে বললেন,
~এখন বলবি তোর ভাইকে?
আমি বললাম,
~খালামণিকে বলবো এভাবেও উনি সব বুঝে গেছেন।
আমার কথা শুনে ফায়াজ ভাইয়ের হাসিটা আরো চওড়া হয়ে গেলো সে বললো,
~এতো আরো ভালো আমি মাকে বললো এখনই ফিহা আর আমার বিয়ে দিয়ে দেও।
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
~একদম চুপ কখন থেকে বিয়ে বিয়ে করছেন?আপনার ফুপির রোগ পেয়েছে।
ফায়াজ ভাই হাসলেন সেই হাসিতে ছিলনা কোনো শব্দ তখনই আমার ঘরের দরজায় খালামণি টোকা দিয়ে বললেন,
~ফিহা তোর হয়েছে আমি শাড়িটা পাল্টাবো।
ফায়াজ ভাই আমার থেকে সরে আসলেন আমি ফিসফিস করে বললাম,
~এখন কী করবেন?
ফায়াজ ভাই বাঁকা হেসে বারান্দায় চলে গেলেন আমি দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম খালামণি আমাকে পাশ কাটিয়ে রুমের ভিতর ঢুকে তার শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।খালামণি চলে যাওয়াতে আমি হাফ ছেড়প বাচঁলাম ফায়াজ ভাই বারান্দা থেকে বের হয়ে সোজা রুমের বাহিরে চলে গেলেন।
প্রিয়া ভাবির বাসা থেকে সবাই এসে পরেছে আমিও সবার সাথে দেখা করেছি।তাসিফ আজ আমার পিছ ছাড়ছেনা এখন নিজেরই বিরক্ত লাগছে।তাসিফ আসার পর থেকে এটা ওটা বলেই যাচ্ছেন আমিও ভদ্রতার খাতিরে জবাব দিচ্ছি হঠাৎ ফায়াজ ভাইয়ের দিকে চোখ পরতে দেখি সে আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।তাই আমি তাসিফকে বলে রুপা আপুদের সাথে এসে দাড়ালাম মা প্রিয়া ভাবির মায়ের সাথে ব্যস্ত আমিও সবার সাথে আড্ডা দিতে ব্যস্ত তখনই প্রিয়া ভাবির মা আমাকে ডাকলেন নিজের কাছে।
আমিও তার পাশে গিয়ে দাড়াতেই সে খালামণিকে বলেন,
~আমার ফিহাকে অনেক পছন্দ হয়েছে তাসিফের জন্য আপনারা যদি ভেবে দেখতেন ব্যাপারটা।
প্রিয়া ভাবির মায়ের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম এই খিচুরী কবে থেকে পাকছিল এজন্যই ওই আহাম্মক আমার পিছ ছাড়ছিল না। একজনের প্যারা কী কম ছিল এখন আরেকটা এসেছে।
মা কিছু বলতে যাবে তার আগে খালামণি বলেন,
~বেয়াইন সেসব কথা পরে হলে ভালো হতো আর সবচেয়ে বড় কথা এখন ফিহা পড়াশোনা করছে তাই বিয়ের ব্যাপারটা আমরা ভাবছি না।
খালামণির কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম কিন্তু এই স্বস্তি কিছু মূর্হুতের জন্য ছিল খালামণির কথা শেষ হওয়ার পরপরই পিছন থেকে কিছু ভেঙ্গে যাওয়ার আওয়াজ আসলো আমরা সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখি
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)