তুমি আসবে বলে পর্ব-০২

0
1709

#গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২
হঠাৎ দরজায় কেউ টোকা দিলো আমি একবার খালামণির দিকে তাকিয়ে ওড়নাটা শরীরে জড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।তারপর দরজার খিল খুলে বাহিরে উঁকি মেরে দেখলাম ফায়াজ ভাই দাড়িয়ে আছে আমি দরজা খুলে তাকে দেখে বললাম,
~ফায়াজ ভাই, আপনি?খালামণি ঘুমিয়ে গেছে
ফায়াজ ভাই বললেন,
~মার জন্য আসে নি।তোর জন্য এসেছি
আমি ভ্রুকুচকে বললাম,
~আমার জন্য কেন?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~এই যে এখন নাক টানছিস এইটার জন্য।
আমি হাতের টিস্যু দিয়ে নাক মুছে বললাম,
~একটু ঠান্ডা লেগে গেছে।
ফায়াজ ভাই পিছন থেকে তার হাত সামনে আনলো তার হাতে গরন দুধ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
~খেয়ে নে
আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,
~খাবো না ভাই।
ফায়াজ ভাই বললেন,
~তাহলে আমি খালামণিকে গিয়ে বলি যে তোর ঠান্ডা লেগেছে তারপর খবর আছে।
আমি ভাইয়ের কথা শুনে শুকনো ঢোক গিলে ভাবলাম যদি মা জেনে যায় তাহলে আমাকে বাসা থেকে বের হতেই দেবে না এর চেয়ে ভালো চুপচাপ দুধ নিয়ে নেই।
আমি হাত বারিয়ে দুধের গ্লাসটা নিয়ে বললাম,
~আমি খেয়ে নিবো তুমি চিন্তা করো না।
ফায়াজ ভাই বললেন,
~Good girl.
বলেই সে চলে গেলো আমি দরজা লাগিয়ে নাক চেপে ধরে পুরো দুধ ফিনিস করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম।খালামণি আমার পাশে শুয়ে আরামসে নাক ডাকছেন আমিও চোখ বন্ধ করলাম ঘুমানোর উদ্দেশ্যে
অনেক ঘুম আসছে হয়তো ঠান্ডার জন্য এমন লাগছে।

সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের চেচামেচির কারণে আমি কাঁথা সরিয়ে দেখি মা আমার সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে একহাতে ঝাড়ু নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি মাকে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে বসি মা আমাকে বললো,
~কয়টা বাজে?
আমি নাক টানতে টানতে বললাম,
~বলতে পারলাম না মা।ঘড়ি কোথায়?
মা আমার কথায় রেগে গিয়ে বললো,
~তুই আবার ঠান্ডা বাঁধিয়েছিস খুব ভালো আমি তো তোদের চাকর সারাদিন শুধু তোদের নিয়ে পরে থাকবো
বজ্জাত গুলি।
বলেই আমার কপালে হাত রেখে বললো,
~দেখি জ্বর এসেছে নাকি?
মা চেক করে বললো,
~নাহ জ্বর নেই।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আয়।আর শোন তোর ভাইকে বলে দিচ্ছি ঔষধ আনতে
এসব বলে মা চলে গেলো আমি বিছানা ছেড়ে উঠে চুল গুলো খোঁপা করে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম এটা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসলাম আয়নায় নিজেকে ঠিক করে রুমের বাহিরে বের হতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগলো আমি নিজেকে সামলিয়ে রাগী চোখে উপরে তাকাতেই দেখি ফায়াজ ভাই আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে সে আমকে ধমক দিয়ে বললেন,
~চোখ কী হাতে নিয়ে হাঁটিস? আমি ঘামে ভিজে আছি সেই শরীরের সাথে ধাক্কা খেলি?
আমি তার দিকে ভালো মতো তাকিয়ে দেখি আসলেই সে ঘামে ভিজে আছেন হয়তো জগিং থেকে ফিরেছেন।
আমি বললাম,
~নাহ ভাই চোখ তো আমার জায়গা মতোই আছে।
আমার কথা শুনে সে আরো রেগে গিয়ে বললেন,
~Stupid girl.
বলেই সে হনহন করতে করতে চলে গেলেন।আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে রান্নাঘরে চলে গেলাম সেখানে গিয়ে দেখি মা আর খালা গল্পগুজব করছে আমাকে দেখে খালামণি বললো,
~ফিহা আবীর কে বলেছি তোর জন্য ঔষধ আনতে। ঠিক হয়ে যাবি।
খালামণির কথা শুনে মা বললো,
~দেখো না আপা আমার কোনো কথা এই মেয়ে কানে নেয় না।কী যে করি?
খালামণি বললেন,
~আমাদের ফিহা যথেষ্ট লক্ষ্মী।
খালামণির কথা শুনে মা মুচকি হেসে কাজে মনোযোগ দিলেন হয়তো সে খুশি হয়েছে

নাস্তা রেডি হতে টেবিলে সাজিয়ে আমি চেয়ার টেনে বসে পরলাম হঠাৎ পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
~ফিহা তুই কেমন ম্যান্যারলেস হয়ে গিয়েছিস বড় ভাইয়েরা থাকতে তুই আগে আগে খেতে বসে গেলি?
আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ফায়েজ ভাই আর আবীর ভাই দাড়িয়ে আছেন কথাটা ফায়েজ ভাই বলেছে।তারা সামনে এসে চেয়ার টেনে বসে পরলেন আবীর ভাই বললেন,
~তোর ঔষধ একটু পর গিয়ে এনে দিবো।
আমি বললাম,
~আচ্ছা।আর ফায়েজ ভাই তোমরা যদি মটকা মেরে ঘুমিয়ে থাকো এতে আমি কী করবো?তাই তোমাদের রেখেই খেতে বসে গেছি
ফায়েজ ভাই বললো,
~আরে বোনু রাতে একটু দেরিতে ঘুমিয়েছি তাই উঠতে দেরি হয়েছে।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে ফায়াজ ভাই আমার পাশে ধপ করে বসে বললেন,
~সারারাত ফোনে বেবি বেবি করলে তো ঘুমাতে দেরি হবেই।
ফায়াজ ভাইয়ের কথা শুনে আমি আর আবীর ভাই হেসে উঠলাম ফায়েজ ভাইয়ের মুখ বেলুনের মতো চুপসে গেলো।ফায়াজ ভাই আমার হাসি দেখে বললেন,
~ইশশি ফিহা তোর দাঁত এতো হলুদ কেন?ব্রাশ করিস না?
আমার হাসি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেলো ফায়েজ ভাই হো হো করে হেসে উঠলেন আবীর ভাই হেসে হেসে বললেন,
~ফায়াজ হয়েছে এখন চুপ থাকো।
আমি মুখ ফুলিয়ে নাস্তা করতে শুরু করলাম।নাস্তা শেষ করে আমি রুমে গিয়ে সব গুছাতে শুরু করলাম তখনই আমার মোবাইল বেজে উঠলো আমি মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম আরিফা ফোন করেছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কিছুক্ষন ওর সাথে কথা বলে যেই না ফোন রাখতে যাবো তখনই ফায়াজ ভাই রুমে এসে বললেন
~কার সাথে কথা বলছিলি?
আমি বললাম,
~আরিফার সাথে।কেন?
ফায়াজ ভাই বললেন,
~তোর বান্ধবীটা কী সুন্দরী?
আমি বললাম,
~কেন প্রেম করবেন
ফায়াজ ভাই বললো,
~হ্যাঁ
আমি হেসে বললাম,
~আচ্ছা কইরেন নে।ওর জামাই আপনাকে দিবো নে
ফায়াজ ভাই বললেন,
~ওর বিয়ে হয়ে গেছে?
আমি বললাম,
~জ্বী ২মাস আগে।
ফায়াজ ভাই বললেন,
~আচ্ছা তাহলে একটা মেয়ে খুজে দিস প্রেম করবো
আমি বললাম,
~আপনাকে কোনো মেয়ে সহ্য করতে পারবে না যে পরিমাণে ঘ্যানঘ্যান করেন
আমার কথা শুনে ফায়াজ ভাই বললেন,
~তুই সহ্য করতে পারবি তো?
আমি বললাম,
~কী বললেন?
ফায়াজ ভাই মুচকি হেসে বললেন,
~কিছু না।
বলেই সে বাহিরে চলে গেলেন।আমি তার যাওয়ার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলাম

দুপুরের দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষেই খালামণি আমার রুমে এসে বললেন,
~ফিহা ব্যাগ গুছিয়ে ফেল আমরা এখনি বের হবো।ফায়াজের চাচারা এসে পরেছে রংপুর থেকে
আমি বললাম,
~সব রেডি আছে
ফায়াজ ভাইয়ের ২চাচা রংপুর থাকে চাকরির জন্য আর ৩ চাচা এখানেই থাকে একই বাড়িতে।ফায়াজ ভাইদের ৫চাচা বিয়ের জন্য সবাই খালামণির বাসায় এসে পরেছে।
আমরা রেডি হয়ে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলাম রাস্তায় জ্যামের কারণে আমাদের একটু দেরি হলো।বাসায় পৌছে দেখি মেহমান দিয়ে পুরে বাড়ি গিজগিজ করছে খালামণি ব্যস্ত হয়ে পরলো।ফায়াজ ভাই আমাকে বললেন,
~উপরে রুমে চলে যা।
আমি গুটিগুটি পায়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে খালামণির রুমে ডুকতে যাবো তখনই পিছন থেকে কেউ বললো,
~আরে ফিহা কেমন আছো?
আমি পিছন ফিরে দেখি রুপা আপু আমি তাকে দেখে হেসে বললাম,
~ভালো।
রুপা আপু বললো,
~তোমার ফায়াজ ভাই কোথায়?
আমি কিছু বলতে যাবে তার আগে ফায়াজ ভাই এসে বলে উঠলেন,
~আমার খোজ রেখে লাভ নেই তোর চরকিতে তেল দে।

চলবে।।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে