তুমি আমার স্নিগ্ধ ফুল পর্ব-৩৩+৩৪

0
640

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৩

শরিফ শিকারকে এতো খুশি হতে দেখে পারফি বলে উঠলো,

আরে আঙ্কেল ওরুফে শশুর মশাই গুড নিউজ তো আরো একটা শোনা বাকি।

পারফির কথা বলার ধরন দেখে সবাই এক সাথে হেঁসে ফেললো সাথে সবাই উৎসুক চোখে তাকালো নিউজটা শোনার জন্য।

পারফি সবার উৎসুক চাওনি দেখে শাফিনকে কিছু একটা ইশারা করতে শাফিন যেয়ে টিভি অন করলো।

সবাই একরাশ বিস্ময় নিয়ে শাফিন আর পারফির কাজ দেখতে লাগলো।

টিভি অন করতে ভেসে উঠলো এনামুল খানের মুখশ্রী যাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
পারফিদের বিজনেস পার্টনার হিসেবে সবাই মোটামুটি চেনে এনামুল খানকে। তাকে কেনো পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা কারো মাথায় আসলো না তখন টিভিতে বলতে থাকা একটা কন্ঠস্বরে ভেসে উঠতে লাগলো কিছু কথা যা শুনে সবাই চমকে উৎসুক চোখে টিভির দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো।

টিভিতে একটা মেয়ে বলে উঠলো বিজনেসম্যান এনামুল খানের কালোবাজারি কারবার সব কিছু আজ ফাঁস হয়েছে। কালোবাজারি ব্যবসা, মানুষ পাচার আরো নানা ধরনের ক্রাইম কাজের সাথে লিপ্ত ছিলো এনামুল খান। সাথে আরো জানা গেলো রফিক খানের ছোট ভাই এই হলো এনামুল খান। রফিক খানকে অনেক বছর আগে এসব কালোবাজারি ব্যবসায়ের জন্য জেলে বন্দী করা হয়েছিলো কিন্তু ক্ষমতার জোরে সেখান থেকে পালিয়ে পারি জমিয়েছিলো অন্য দেশে। এখন জানা গেলো রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলে এসব কালোবাজারি ব্যবসা সবার আগোচরে করে বেড়াচ্ছে। এনামুল খানকে ধরা গেলেও রফিক খানের কোনো খোঁজ মেলে নি। পুলিশ হন্য হয়ে খোজ চালাচ্ছে রফিক খানকে খুঁজে বের করার জন্য।
সাথে এরেস্ট করা হয়েছে এনামুল খানের একমাত্র কন্যা মিস এলিজাকে। ধারণা মতে মিস এলিজাও বাবা, চাচাদের সাথে এই কাজে লিপ্ত ছিলো।

সাথে জানা গিয়েছে আরো কিছু গোপন সংবাদ। বিখ্যাত জার্নালিস্ট শরিফ শিকদারের মেয়েকে ছোট বেলা এই রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলেই অপহরণ করেছিলো। আজ নিজের মুখে শিকারক্তি দিয়েছে এনামুল খান এই কথা। জার্নালিস্ট পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার মিলে রফিক খানের পিতার কালোবাজারি কারবার ফাঁস করে দিয়েছিলো যার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে শরিফ শিকদারের মেয়েকে জন্মের পর অপহরণ করেছিলো। সাথে চৌধুরী আর শিকদার পরিবারে প্রতিনিয়ত অ্যাটাক ও করে গিয়েছে। সাথে এ ও শিকার করেছে শরিফ শিকদারের আসল মেয়ে আর কেউ না ইসহাক আহমেদের ছোট কন্যা ইয়ানা। যে বর্তমানে টপ বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরীর ওয়াইফ।

আরো জানা গিয়েছে দুই ভাই এর এই কালোবাজারি কারবার বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরী আর শাফিন শিকদার মিলে বের করেছে যার জন্য আইনি বিভাগ এই দুই বিজনেসম্যান এর উপরে কৃতজ্ঞ দেশের এতো বড় ক্রিমিনালকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।

পুরো সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে একে অপরের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার। সাথে প্রতিটা সদস্য অবাক হয়ে তাকালো পারফি আর শাফিনের দিকে। তাদের ছেলেরা মিলে এতো বড় একটা কাজ করেছে তাদের কিছু না জানিয়ে ভাবতেই অবাক হচ্ছে।
সাথে সবাই খুশি ও হলো তাদের এতো বছরের শত্রুরা অবশেষে ধরা পড়েছে এখন শুধু রফিক খানকে ধরার পালা।

সবার হাসিখুশি মনটা আরো অনেক বেশি আনন্দের হয়ে উঠলো নিউজ গুলো শুনে।

শরিফ শিকদার নিজে ইসহাক আহমেদকে ফোন করে আগামীকাল আমন্ত্রণ জানালো তার বাসায়। এই লোকটার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে সারাজীবন। কারণ এই লোকটা না থাকলে হয়তো তার আদরের মেয়েটাকে এমন অক্ষত অবস্থায় বুকের মাঝে ফিরে পেতো না।

সবাই এক সাথে হয়ে হাসিখুশিময় সন্ধ্যা পার করলো। আজ কারো মনে নেই কোনো চাপা কষ্ট। সবাই আজ খুব খুব খুশি। রাতের ডিনারও সবাই এক সাথে করলো। শাহানা বেগম তো মেয়েকে চোখে হারায়। এক সেকেন্ড এর জন্য নিজের থেকে দূরে যেতে দেয় না। নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে সাথে সবার কাছে আবদার ও করেছে আজ মা মেয়ে এক সাথে ঘুমাবে। সবার সম্মতিতে আজ ঠিক হলো শাহানা বেগম, পিয়াসা বেগম, ইয়ানা আর প্রীতি এক সাথে ঘুমাবে। পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার এক সাথে ঘুমাবে। পারফি আর শাফিন এক সাথে ঘুমাবে।

সবার এই সিদ্ধান্ত শুনে পারফির মুখশ্রী হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। দুদিন ধরে এই ঝামেলার জন্য ওর বিড়াল ছানার বউকে একটুও কাছে পায় নি। সব রহস্য উদঘাটন করার জন্য বেরিয়ে যেতো অনেক সকালে আবার ফেরা ও হতো অনেক রাত করে যখন ইয়ানা থাকতো গভীর ঘুমে। তাই দুটো দিন ধরে বউ এর সাথে দুটো কথা বলার ও সুযোগ হয় নাই আর আজ নাকি পুরো বউ ছাড়া এই থাকা লাগবে ভাবতেই পারফির মুখ হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। কতো শত ইচ্ছে ছিলো আজ ওর একান্ত স্নিগ্ধ ফুলের এতো খুশিটা খুব কাছ থেকে দেখবে কিন্তু শাশুড়ী আম্মা সব বরবাদ করে দিলো। মনে মনে বলেমও ফেললো ও শাশুড়ি আম্মাজান আমার বউটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, আমার বউ ছাড়া আমি ঘুমাতে পারবো না। কথা গুলো মনে মনে ভাবলেও সামনা সামনি বলা হলো না, মান ইজ্জত বলে ওতো একটা কথা আছে।

এদিকে পারফির ফাটা বেলুনের মতো মুখশ্রী দেখে শাফিন টিপ্পনী কাটে বললো,

কি হলো মাম্মা মুখ এমন ফাটা বেলুনের মতো করে রেখেছো কেনো?

পারফি চোখ পাকিয়ে তাকালো শাফিনের দিকে কিন্তু কিছু বললো না।

পারফিকে কিছু বলতে না দেখে শাফিন পারফিকে ক্ষ্যাপানোর জন্য গান ধরলো, আহা কি কষ্ট আকাশে বাতাসে।

শাফিনের গান শুনে পারফি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

যদি নিজের কপালে শনি ডাকতে না চাস তাহলে তোর ওই খাডাইশের মতে মুখ বন্ধ কর।

শাফিন শুনলেতো পারফির কথা। টিপ্পনী কেটে এক একটা কথা বলে পারফিকে ক্ষেপাতে লাগলো। এক পর্যায়ে পারফি আর শাফিন মিলে দিলো মারামারি লাগিয়ে। দুই বন্ধু মিলে মারামারি করতে করতে বেডের সব বালিশ কাথা নিচে ফেলে দিলো। এক পর্যায়ে দুজন ক্লান্ত হয়ে বালিশ ছাড়া চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো।

কিছুক্ষণ ছেয়ে গেলো দুজনের মাঝে নীরবতা।

এদিকে পিয়াসা বেগম, শাহানা বেগম, প্রীতি আর ইয়ানা এক সাথে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলো। তারপর আস্তে ধীরে রাত বারতে সবাই শুয়ে পড়লো। ইয়ানা শাহানা বেগমকে ঝাপটে ধরে শুয়ে রইলো। মনের ভিতর এক ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো। এতো বছর পর মায়ের ভালোবাসা পেয়ে যেনো দুই বছরের বাচ্চা হয়ে গেলো। বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি হয়ে শাহানা বেগমকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো।
চোখজোড়া যখন লেগে আসছিলো তখন হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসলো ফোনে। মেসেজের আওয়াজে ঘুম ছুটে গেলো ইয়ানার। এই সময় মেসেজ আসায় বিরক্ত হলো বেশ। ইয়ানা বিরক্ত নিয়ে আবার চোখ বুজতে যাবে তখন আবার টুং করে আরেকটা মেসেজ আসলো।
এতো রাতে কে মেসেজ দিয়েছে ভেবে একরাশ বিরক্ত নিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন তুললো। ফোন হাতে নিতে ভেসে উঠলো নীলমনি নামে সেভ করা নাম্বারটা ভেসে উঠলো।

নীলমনি নামটা চোখে পড়তে বুকের ভিতর ধড়াস করে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ অপেন করতে বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।
প্রথম মেসেজটা ছিলো…. বিড়াল ছানা
দ্বিতীয় মেসেজটা ছিলো ঘুমিয়ে পড়েছো?

মেসেজ দুটি দেখে ইয়ানার বুকের ভিতর ধুকপুকানি বাড়তে লাগলো। সাথে চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো। আজ দুটো দিন পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা নামটা শুনলো। বলা বাহুল্য মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা ডাকটা এই দুইদিন খুব মিস করেছিলো ইয়ানা। দুটি দিন ধরে কাঙ্ক্ষিত মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে রকতে কখন ঘুমিয়ে যেতো টের ও পেতো না। আবার সকালে ঘুম ভাঙলে শুনতো অফিসে চলে গেছে। কেনো যেনো পারফির এতো ব্যস্ততা দেখে মনের ভিতর কোনো অজানা এক অভিমান ভির করেছিলো। পারফির এই মেসেজ দুটো দেখে যেনো তীর তীর করে আবার হানা দিলো মনের মাঝে অভিমান।

ইয়ানার ভাবনার মাঝে ফের আবার মেসেজ করলো পারফি। মেসেজটা ছিলো কিছু বলছো না কেনো? ঘুমিয়ে পড়েছো? নাকি জেগে আছো?

প্রিয় মানুষটার মেসেজ পেয়ে ইয়ানার চোখ ভোরে উঠলো। ছোট করে বললো, জেগে আছি।

ইয়ানার মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে পারফি রিপ্লাই করলো সবাই ঘুমিয়ে গেলে একটু ছাঁদে আসতে পারবে বিড়াল ছানা?

মেসেজটা পড়ে ইয়ানার বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কেনো যেনো মনে হলে মেসেজটার মাঝে লুকিয়ে ছিলো গভীর আকুলতা। কেনো এতো আকুলতা?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো ইয়ানা কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না, আবার মনে হলো উত্তর খুঁজে পেয়ছে ভাবতেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো এক চিতলে হাসি। দুদিনের জমে থাকা অভিমান মুহূর্তের মাঝে গলে পানি হয়ে গেলো। ফেলতে পারলো না কাঙ্ক্ষিত মানুষটার আকুলতায় ভরা ছোট একটা অনুরোধ।

ঠোঁটের কোনো সুপ্ত হাসি নিয়ে রিপ্লাই করলো ১০ মিনিট পর আসছি।

ইয়ানার শেষের এসএমএসটা দেখে পাফির ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক অমায়িক হাসি। মনে মনে ভেবেছিলো ওর স্নিগ্ধ ফুল ওর আকুলতা ফেলতে পারবে না আর হলোও তাই, তা দে বুকের ভিতর এক প্রশান্তি কাজ করলো।

অনেক সময় শুয়ে গুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম ধরা দেয় নাই চোখে। দুটো দিন স্নিগ্ধ ফুলের সাথে কথা না বলতে পেরে বুকের ভিতর এক হাহাকার লাগছিলো। আর আজ স্নিগ্ধ ফুলের সবচেয়ে খুশির একটা দিন। এই খুশিটা কাছ থেকে দেখার তিব্র ইচ্ছে জাগলো মনে। কাছ থেকে অনুভব করতে চাইলো প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীর এই সুখ টুকু।

ছাঁদে বসে প্রহর গুনতে লাগলো কখন আসবে ওর বিড়াল ছানা। কখন দেখা মিলবে ওই স্নিগ্ধ মুখশ্রী। শীতের রাত হওয়াতে বেশ ঠান্ডা লাগছে ছাঁদে তবুও সেই ঠান্ডাটা যেনো গায়ে লাগলো না। কোনো এক অজানা ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মন মস্তিষ্ক।

অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষটা গুটিগুটি পায়ে বিড়াল ছানায় ন্যায় এসে উপস্থিত হলো ছাঁদে। সেই আদুরে বিড়াল ছানা উপর চোখ পড়তে এক ভালোলাগায় টইটুম্বুর হয়ে গেলো বুকের বা পাশটায়।

ইয়ানা ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো পারফির পাশে। ইয়ানার আজ যেনো মনটা একটু বেশি ফুরফুরে। হাস্যজ্জ্বল মুখে একবার তাকালো আকাশে গোল আকৃতির হলদে চাঁদটার দিকে। আজ যেনো চাঁদ টাকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। মন ভালো থাকলে মনে হয় সব কিছুই এক অন্যরকম সুন্দর লাগায় ভোরে ওঠে। এই যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ওকে দেখতে ব্যস্ত সেওটাও যেনো এক অন্যরকম ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো মন। সাথে আস্তে আস্তে ভীর করতে লাগলো লজ্জারা। রক্তিম হতে লাগলো গুলুমুলু গাল দুটো সাথে নুয়ে গেলো মাথা।। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো কিঞ্চিৎ লজ্জা মিশ্রিত হাসি।

এদিকে ইয়ানাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো পারফি। আজ যেনো মেয়েটাকে একটু বেশি খুশি লাগছে। এর আগে এতোটা খুশি কখনো দেখেছে বলে মনে হলো না। সাথে মনের ভিতর শান্তি অনুভব করলো স্নিগ্ধ ফুলের এই হাসিখুশিময় মুখশ্রী দেখে। তখন হঠাৎ সেই হাসিখুশি মুখশ্রী আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে লাগলো লজ্জায় রাঙা লালআভ রক্তিম মুখশ্রী যা দেখে হার্টবিট মিস করে ফেললো পারফি। বুকের বা পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলে উঠলো আজ আমি শেষ।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৩

শরিফ শিকারকে এতো খুশি হতে দেখে পারফি বলে উঠলো,

আরে আঙ্কেল ওরুফে শশুর মশাই গুড নিউজ তো আরো একটা শোনা বাকি।

পারফির কথা বলার ধরন দেখে সবাই এক সাথে হেঁসে ফেললো সাথে সবাই উৎসুক চোখে তাকালো নিউজটা শোনার জন্য।

পারফি সবার উৎসুক চাওনি দেখে শাফিনকে কিছু একটা ইশারা করতে শাফিন যেয়ে টিভি অন করলো।

সবাই একরাশ বিস্ময় নিয়ে শাফিন আর পারফির কাজ দেখতে লাগলো।

টিভি অন করতে ভেসে উঠলো এনামুল খানের মুখশ্রী যাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
পারফিদের বিজনেস পার্টনার হিসেবে সবাই মোটামুটি চেনে এনামুল খানকে। তাকে কেনো পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা কারো মাথায় আসলো না তখন টিভিতে বলতে থাকা একটা কন্ঠস্বরে ভেসে উঠতে লাগলো কিছু কথা যা শুনে সবাই চমকে উৎসুক চোখে টিভির দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো।

টিভিতে একটা মেয়ে বলে উঠলো বিজনেসম্যান এনামুল খানের কালোবাজারি কারবার সব কিছু আজ ফাঁস হয়েছে। কালোবাজারি ব্যবসা, মানুষ পাচার আরো নানা ধরনের ক্রাইম কাজের সাথে লিপ্ত ছিলো এনামুল খান। সাথে আরো জানা গেলো রফিক খানের ছোট ভাই এই হলো এনামুল খান। রফিক খানকে অনেক বছর আগে এসব কালোবাজারি ব্যবসায়ের জন্য জেলে বন্দী করা হয়েছিলো কিন্তু ক্ষমতার জোরে সেখান থেকে পালিয়ে পারি জমিয়েছিলো অন্য দেশে। এখন জানা গেলো রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলে এসব কালোবাজারি ব্যবসা সবার আগোচরে করে বেড়াচ্ছে। এনামুল খানকে ধরা গেলেও রফিক খানের কোনো খোঁজ মেলে নি। পুলিশ হন্য হয়ে খোজ চালাচ্ছে রফিক খানকে খুঁজে বের করার জন্য।
সাথে এরেস্ট করা হয়েছে এনামুল খানের একমাত্র কন্যা মিস এলিজাকে। ধারণা মতে মিস এলিজাও বাবা, চাচাদের সাথে এই কাজে লিপ্ত ছিলো।

সাথে জানা গিয়েছে আরো কিছু গোপন সংবাদ। বিখ্যাত জার্নালিস্ট শরিফ শিকদারের মেয়েকে ছোট বেলা এই রফিক খান আর এনামুল খান দুই ভাই মিলেই অপহরণ করেছিলো। আজ নিজের মুখে শিকারক্তি দিয়েছে এনামুল খান এই কথা। জার্নালিস্ট পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার মিলে রফিক খানের পিতার কালোবাজারি কারবার ফাঁস করে দিয়েছিলো যার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে শরিফ শিকদারের মেয়েকে জন্মের পর অপহরণ করেছিলো। সাথে চৌধুরী আর শিকদার পরিবারে প্রতিনিয়ত অ্যাটাক ও করে গিয়েছে। সাথে এ ও শিকার করেছে শরিফ শিকদারের আসল মেয়ে আর কেউ না ইসহাক আহমেদের ছোট কন্যা ইয়ানা। যে বর্তমানে টপ বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরীর ওয়াইফ।

আরো জানা গিয়েছে দুই ভাই এর এই কালোবাজারি কারবার বিজনেসম্যান আবরার পারফি চৌধুরী আর শাফিন শিকদার মিলে বের করেছে যার জন্য আইনি বিভাগ এই দুই বিজনেসম্যান এর উপরে কৃতজ্ঞ দেশের এতো বড় ক্রিমিনালকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।

পুরো সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে একে অপরের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো পাভেল চৌধুরী আর শরিফ শিকদার। সাথে প্রতিটা সদস্য অবাক হয়ে তাকালো পারফি আর শাফিনের দিকে। তাদের ছেলেরা মিলে এতো বড় একটা কাজ করেছে তাদের কিছু না জানিয়ে ভাবতেই অবাক হচ্ছে।
সাথে সবাই খুশি ও হলো তাদের এতো বছরের শত্রুরা অবশেষে ধরা পড়েছে এখন শুধু রফিক খানকে ধরার পালা।

সবার হাসিখুশি মনটা আরো অনেক বেশি আনন্দের হয়ে উঠলো নিউজ গুলো শুনে।

শরিফ শিকদার নিজে ইসহাক আহমেদকে ফোন করে আগামীকাল আমন্ত্রণ জানালো তার বাসায়। এই লোকটার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে সারাজীবন। কারণ এই লোকটা না থাকলে হয়তো তার আদরের মেয়েটাকে এমন অক্ষত অবস্থায় বুকের মাঝে ফিরে পেতো না।

সবাই এক সাথে হয়ে হাসিখুশিময় সন্ধ্যা পার করলো। আজ কারো মনে নেই কোনো চাপা কষ্ট। সবাই আজ খুব খুব খুশি। রাতের ডিনারও সবাই এক সাথে করলো। শাহানা বেগম তো মেয়েকে চোখে হারায়। এক সেকেন্ড এর জন্য নিজের থেকে দূরে যেতে দেয় না। নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে সাথে সবার কাছে আবদার ও করেছে আজ মা মেয়ে এক সাথে ঘুমাবে। সবার সম্মতিতে আজ ঠিক হলো শাহানা বেগম, পিয়াসা বেগম, ইয়ানা আর প্রীতি এক সাথে ঘুমাবে। পাভেল চৌধুরী আর শরীফ শিকদার এক সাথে ঘুমাবে। পারফি আর শাফিন এক সাথে ঘুমাবে।

সবার এই সিদ্ধান্ত শুনে পারফির মুখশ্রী হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। দুদিন ধরে এই ঝামেলার জন্য ওর বিড়াল ছানার বউকে একটুও কাছে পায় নি। সব রহস্য উদঘাটন করার জন্য বেরিয়ে যেতো অনেক সকালে আবার ফেরা ও হতো অনেক রাত করে যখন ইয়ানা থাকতো গভীর ঘুমে। তাই দুটো দিন ধরে বউ এর সাথে দুটো কথা বলার ও সুযোগ হয় নাই আর আজ নাকি পুরো বউ ছাড়া এই থাকা লাগবে ভাবতেই পারফির মুখ হয়ে গেলো ফাটা বেলুনের মতো। কতো শত ইচ্ছে ছিলো আজ ওর একান্ত স্নিগ্ধ ফুলের এতো খুশিটা খুব কাছ থেকে দেখবে কিন্তু শাশুড়ী আম্মা সব বরবাদ করে দিলো। মনে মনে বলেমও ফেললো ও শাশুড়ি আম্মাজান আমার বউটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, আমার বউ ছাড়া আমি ঘুমাতে পারবো না। কথা গুলো মনে মনে ভাবলেও সামনা সামনি বলা হলো না, মান ইজ্জত বলে ওতো একটা কথা আছে।

এদিকে পারফির ফাটা বেলুনের মতো মুখশ্রী দেখে শাফিন টিপ্পনী কাটে বললো,

কি হলো মাম্মা মুখ এমন ফাটা বেলুনের মতো করে রেখেছো কেনো?

পারফি চোখ পাকিয়ে তাকালো শাফিনের দিকে কিন্তু কিছু বললো না।

পারফিকে কিছু বলতে না দেখে শাফিন পারফিকে ক্ষ্যাপানোর জন্য গান ধরলো, আহা কি কষ্ট আকাশে বাতাসে।

শাফিনের গান শুনে পারফি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

যদি নিজের কপালে শনি ডাকতে না চাস তাহলে তোর ওই খাডাইশের মতে মুখ বন্ধ কর।

শাফিন শুনলেতো পারফির কথা। টিপ্পনী কেটে এক একটা কথা বলে পারফিকে ক্ষেপাতে লাগলো। এক পর্যায়ে পারফি আর শাফিন মিলে দিলো মারামারি লাগিয়ে। দুই বন্ধু মিলে মারামারি করতে করতে বেডের সব বালিশ কাথা নিচে ফেলে দিলো। এক পর্যায়ে দুজন ক্লান্ত হয়ে বালিশ ছাড়া চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো।

কিছুক্ষণ ছেয়ে গেলো দুজনের মাঝে নীরবতা।

এদিকে পিয়াসা বেগম, শাহানা বেগম, প্রীতি আর ইয়ানা এক সাথে অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলো। তারপর আস্তে ধীরে রাত বারতে সবাই শুয়ে পড়লো। ইয়ানা শাহানা বেগমকে ঝাপটে ধরে শুয়ে রইলো। মনের ভিতর এক ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো। এতো বছর পর মায়ের ভালোবাসা পেয়ে যেনো দুই বছরের বাচ্চা হয়ে গেলো। বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি হয়ে শাহানা বেগমকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজলো।
চোখজোড়া যখন লেগে আসছিলো তখন হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসলো ফোনে। মেসেজের আওয়াজে ঘুম ছুটে গেলো ইয়ানার। এই সময় মেসেজ আসায় বিরক্ত হলো বেশ। ইয়ানা বিরক্ত নিয়ে আবার চোখ বুজতে যাবে তখন আবার টুং করে আরেকটা মেসেজ আসলো।
এতো রাতে কে মেসেজ দিয়েছে ভেবে একরাশ বিরক্ত নিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন তুললো। ফোন হাতে নিতে ভেসে উঠলো নীলমনি নামে সেভ করা নাম্বারটা ভেসে উঠলো।

নীলমনি নামটা চোখে পড়তে বুকের ভিতর ধড়াস করে উঠলো। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ অপেন করতে বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেলো।
প্রথম মেসেজটা ছিলো…. বিড়াল ছানা
দ্বিতীয় মেসেজটা ছিলো ঘুমিয়ে পড়েছো?

মেসেজ দুটি দেখে ইয়ানার বুকের ভিতর ধুকপুকানি বাড়তে লাগলো। সাথে চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো। আজ দুটো দিন পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা নামটা শুনলো। বলা বাহুল্য মানুষটার মুখে বিড়াল ছানা ডাকটা এই দুইদিন খুব মিস করেছিলো ইয়ানা। দুটি দিন ধরে কাঙ্ক্ষিত মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে রকতে কখন ঘুমিয়ে যেতো টের ও পেতো না। আবার সকালে ঘুম ভাঙলে শুনতো অফিসে চলে গেছে। কেনো যেনো পারফির এতো ব্যস্ততা দেখে মনের ভিতর কোনো অজানা এক অভিমান ভির করেছিলো। পারফির এই মেসেজ দুটো দেখে যেনো তীর তীর করে আবার হানা দিলো মনের মাঝে অভিমান।

ইয়ানার ভাবনার মাঝে ফের আবার মেসেজ করলো পারফি। মেসেজটা ছিলো কিছু বলছো না কেনো? ঘুমিয়ে পড়েছো? নাকি জেগে আছো?

প্রিয় মানুষটার মেসেজ পেয়ে ইয়ানার চোখ ভোরে উঠলো। ছোট করে বললো, জেগে আছি।

ইয়ানার মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে পারফি রিপ্লাই করলো সবাই ঘুমিয়ে গেলে একটু ছাঁদে আসতে পারবে বিড়াল ছানা?

মেসেজটা পড়ে ইয়ানার বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কেনো যেনো মনে হলে মেসেজটার মাঝে লুকিয়ে ছিলো গভীর আকুলতা। কেনো এতো আকুলতা?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো ইয়ানা কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না, আবার মনে হলো উত্তর খুঁজে পেয়ছে ভাবতেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো এক চিতলে হাসি। দুদিনের জমে থাকা অভিমান মুহূর্তের মাঝে গলে পানি হয়ে গেলো। ফেলতে পারলো না কাঙ্ক্ষিত মানুষটার আকুলতায় ভরা ছোট একটা অনুরোধ।

ঠোঁটের কোনো সুপ্ত হাসি নিয়ে রিপ্লাই করলো ১০ মিনিট পর আসছি।

ইয়ানার শেষের এসএমএসটা দেখে পাফির ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক অমায়িক হাসি। মনে মনে ভেবেছিলো ওর স্নিগ্ধ ফুল ওর আকুলতা ফেলতে পারবে না আর হলোও তাই, তা দে বুকের ভিতর এক প্রশান্তি কাজ করলো।

অনেক সময় শুয়ে গুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম ধরা দেয় নাই চোখে। দুটো দিন স্নিগ্ধ ফুলের সাথে কথা না বলতে পেরে বুকের ভিতর এক হাহাকার লাগছিলো। আর আজ স্নিগ্ধ ফুলের সবচেয়ে খুশির একটা দিন। এই খুশিটা কাছ থেকে দেখার তিব্র ইচ্ছে জাগলো মনে। কাছ থেকে অনুভব করতে চাইলো প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীর এই সুখ টুকু।

ছাঁদে বসে প্রহর গুনতে লাগলো কখন আসবে ওর বিড়াল ছানা। কখন দেখা মিলবে ওই স্নিগ্ধ মুখশ্রী। শীতের রাত হওয়াতে বেশ ঠান্ডা লাগছে ছাঁদে তবুও সেই ঠান্ডাটা যেনো গায়ে লাগলো না। কোনো এক অজানা ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মন মস্তিষ্ক।

অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষটা গুটিগুটি পায়ে বিড়াল ছানায় ন্যায় এসে উপস্থিত হলো ছাঁদে। সেই আদুরে বিড়াল ছানা উপর চোখ পড়তে এক ভালোলাগায় টইটুম্বুর হয়ে গেলো বুকের বা পাশটায়।

ইয়ানা ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো পারফির পাশে। ইয়ানার আজ যেনো মনটা একটু বেশি ফুরফুরে। হাস্যজ্জ্বল মুখে একবার তাকালো আকাশে গোল আকৃতির হলদে চাঁদটার দিকে। আজ যেনো চাঁদ টাকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। মন ভালো থাকলে মনে হয় সব কিছুই এক অন্যরকম সুন্দর লাগায় ভোরে ওঠে। এই যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ওকে দেখতে ব্যস্ত সেওটাও যেনো এক অন্যরকম ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো মন। সাথে আস্তে আস্তে ভীর করতে লাগলো লজ্জারা। রক্তিম হতে লাগলো গুলুমুলু গাল দুটো সাথে নুয়ে গেলো মাথা।। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো কিঞ্চিৎ লজ্জা মিশ্রিত হাসি।

এদিকে ইয়ানাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো পারফি। আজ যেনো মেয়েটাকে একটু বেশি খুশি লাগছে। এর আগে এতোটা খুশি কখনো দেখেছে বলে মনে হলো না। সাথে মনের ভিতর শান্তি অনুভব করলো স্নিগ্ধ ফুলের এই হাসিখুশিময় মুখশ্রী দেখে। তখন হঠাৎ সেই হাসিখুশি মুখশ্রী আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে লাগলো লজ্জায় রাঙা লালআভ রক্তিম মুখশ্রী যা দেখে হার্টবিট মিস করে ফেললো পারফি। বুকের বা পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলে উঠলো আজ আমি শেষ।

#চলবে?

#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৪

এদিকে ইয়ানাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো পারফি। আজ যেনো মেয়েটাকে একটু বেশি খুশি লাগছে। এর আগে এতোটা খুশি কখনো দেখেছে বলে মনে হলো না। সাথে মনের ভিতর শান্তি অনুভব করলো স্নিগ্ধ ফুলের এই হাসিখুশিময় মুখশ্রী দেখে। তখন হঠাৎ সেই হাসিখুশি মুখশ্রীতে আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে লাগলো লজ্জায় রাঙা লালআভ রক্তিম মুখশ্রী যা দেখে হার্টবিট মিস করে ফেললো পারফি। বুকের বাম পাশে হাত রেখে বিড়বিড় করে বলে উঠলো আজ আমি শেষ।

পারফি ঠোঁট কামড়ে তাকালো ইয়ানার দিকে। নিজেকে কিছু সময় নিয়ে ধাতস্থ করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল,

কি ব্যপার ম্যাডাম আজ একটু বেশি খুশি মনে হচ্ছে।

পারফির কথায় ইয়ানার হাস্যজ্জ্বল মুখে আরো হাসি ফুটে উঠলো। আজ যেনো সব কিছুতেই হাসি উপচে পড়ছে মন জুড়ে।

কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে ইয়ানা প্রশ্ন ছুড়লো,

এতো রাতে এখানে ডাকলেন যে? কোনো প্রয়োজন?

ইয়ানার কথায় পারফি ইয়ানার কিছুটা কাছে চলে আসলো। ইয়ানার স্নিগ্ধ মুখপানে গভীর ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঘোর লাগা কন্ঠে বললে উঠলো হুম প্রয়োজন, খুব প্রয়োজন।

এতো রাতে পারফির কি প্রয়োজন পড়লো যার জন্য ছাঁদে নিয়ে আসলো মাথায় আসলো না ইয়ানার। সাথে মনের ভিতর হানা দিলো দুদিনের জরো হওয়া অভিমান গুলো। তার মানে এখানে প্রয়োজনে ডেকেছে অন্য কোনো কারণে না ভাবতে মনটা খারাপ হয়ে গেলো একটু। মন খারাপ নিয়ে ছোট করে বলল কি প্রয়োজন।

ইয়ানার হঠাৎ মন খারাপটা সূক্ষ্ম ভাবে পরখ করলো পারফি। বুঝে নিলো বউয়ের অভিমানী দৃষ্টি। আজকাল যে বউ অভিমান ও করে ভাবতেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো পারফি। এক হত বাড়িয়ে আলতো করে ইয়ানার এক গালে হাত রাখলো।

হঠাৎ পারফির ঠান্ডা হাত গাল স্পর্শ করতে ইয়ানা কেঁপে উঠলো।

পারফি ইয়ানর গালে হাত রেখে ইয়ানার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে উঠলো,

তোমাকে প্রয়োজন……।

তোমাকে প্রয়োজন কথাটা শুনে এক ঝটকায় ইয়ানা মাথা তুলে তাকালো পারফির দিকে। বুকের ভিতর টিপটিপ করতে লাগলো। খুব সামান্য একটা কথা তবুও এক অসামান্য অনুভূতি ছড়িয়ে পড়লো মন জুড়ে।

পারফি হঠাৎ ইয়ানাকে আলতো করে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে ঝাপটে ধরে ফের বললো,

খুব মিস করছিলাম বউজান তোমাকে। ঘুম আছিলো না এই বুকের মাঝে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে থাকা বিড়াল ছানাটাকে ছাড়া।

পারফির কাজে ইয়ানা প্রথমের ভড়কে গেলেও পরক্ষণে নিশ্চুপে লেপ্টে রইলো সব চেয়ে ভরসাময় স্থান বুক জুড়ে। সাথে ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মনপ্রাণ। পারফির মুখে এই প্রথম বউজান নামটা শুনে বুকের ভিতর ধুকপুকনি শুরু হয়ে গেলো। কেনো যেনো পারফির মুখে এই নামটা কতোটা মুধুমিশ্রিত ছিলো বলে বোঝানো যাবে না। আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো ইয়ানা। পেরিয়ে গেলো দুজনের মাঝে কিছুক্ষণ নীরবতা।

নীরবতা ভেঙে পারফি ইয়ানাকে ছেড়ে ইয়ানার সামনে আসা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে তাকালো ইশানার স্নিগ্ধ মুখশ্রীর দিকে। তারপর ইয়ানার হাত ধরে নিয়ে দোনলার উপর বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসলো। ইয়ানাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে ইয়ানার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে ধীর গলায় বললো শীত লাগছে বেশি?

ইয়ানা ছোট করে বললো একটু লাগছে তবে সমস্যা নেই।

তাহলে থাকি এখানে আরো কিছু সময়?আকুলতায় জর্জরিত হয়ে বললো পারফি।

পারফির এই আকুলতা ভরা কন্ঠস্বরে শুনে ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।

ইয়ানার সম্মতি পেয়ে পারফি অমায়িক এক হাসি উপহার দিলো তারপর ফট করে ইয়ানার কোলে মাথা রেখে দোলনায় শুয়ে পড়লো।

পারফির হঠাৎ এমন কাজে ইয়ানার পুরো শরীর কেঁপে
উঠলো মৃদু।

পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ইয়ানার এক হাত মাথার উপর নিয়ে রেখে বললো,

বিড়াল ছানা চুল গুলো একটু টেনে দেও। দুদিন ধরে ঘুম হচ্ছে না খুব মাথা ধরেছে।

পারফির কথায় ইয়ানা তাকালো পারফির মুখ পানে। আসলেই মুখ জুড়ে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। মায়া হলো খুব ইয়ানার। তাই আলতো করে পারফি চুল গুলো টেনে দিতে লাগলো।

পারফি আবেশে চোখ বুজে নিলো। এভাবে কেটে গেলো অনেকটা সময়। পারফি সেই যে চোখ বুজেছে আর চোখ খোলে নি তা দেখে ইয়ানা মনে মনে ভাবলো লোকটা ঘুমিয়ে পড়লো নাকি। এদিকে ছাঁদের হীমশীতল হাওয়ায় এবার কিছুটা ঠান্ডা ও লাগছে। ক্ষনে ক্ষনে ঠান্ডায় কেঁপে উঠছে ঠোঁট জোড়া। সাথে মনের মাঝে উঁকি দিলো এখন ফিরে যাওয়া উচিত। মায়েদের ঘুম ভেঙে গেলে পাশে না পেলে দুশ্চিন্তা করবে সাথে লজ্জাকর পরিস্থিতি ও তৈরি হয়ে যাবে। অন্তত লজ্জাকার পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য হলেও এখান থেকে এখন যাওয়া উচিত তাই ইয়ানার আলতো করে পারফি গালে মৃদু চাপর মেরে ডাক দিলো শুনছেন…..

ইয়ানার ডাকে টিপটিপ করে চোখ খুললো পারফি। ইয়ানার নরম হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখজোড়া লেগে আসছিলো। ইয়ানার ডাকে ঘুমের রেশটা কেটে গেলো। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো ইয়ানার দিকে কেনো ডেকেছে।

পারফির প্রশ্নসূচক দৃষ্টি দেখে ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো এখন এখান থেকে যাওয়া উচিত বলতে বলতে ইয়ানার ঠোঁট জোড়া ফের মৃদু কাপতে লগলো ঠান্ডায়।

পারফির চোখজোড়া আঁটকে গেলো ইয়ানার কম্পিত ঠোঁট জোড়ায়। শুকনো ঢোক গিললো পারফি তা দেখে। নিজেকে সামলাতে চেয়েও বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। কেমন এক ঘোরের মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলো। ঘোরের মাঝে উঠে বসলো পারাফি। তাকিয়ে রইলো ইয়ানার মৃদু কম্পিত ঠোঁট জোড়ার দিকে।

এদিকে পারফির এমন ঘোলাটে দৃষ্টি দেখে ইয়ানা শিউরে উঠলো। বুকের ভিতর ধুকপুকানির সাথে ঠোঁট জোড়া আরো কেঁপে উঠলো। ধীরে ধীরে আবার হানা দিলো মনের মাঝে একরাশ লজ্জারা। এখান থেকে পালানোর জন্য যেই উঠে দৌড় দিতে নিবে অমনি হাতে টান পড়লো সাথে সাথে ধড়াস করে উঠলো বুকের ভিতর। ঠান্ডায় হাত-পা আর শীতল হয়ে যেতে লাগলো।

তখন পারফি ও ইয়ানার সাথে দাঁড়িয়ে গিয়ে চলে গেলো ইয়ানার অনেকটা কাছে তা দেখে ইয়ানা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো ক…কি কর…
বাকি কথা বলার আগে অনুভব করলো পুরুষালি উষ্ণ অধরের আলতো স্পর্শ নিজের অধরে। এই উষ্ণ স্পর্শটুকু অনুভব করতে ঝংকার দিয়ে উঠলো শরীর। অবশ হয়ে আসলো পুরো শরীর। নিজের ভারসাম্য বজায় রাখা যেনো খুব কষ্টকর হয়ে উঠলো। মৃদু কম্পিত শরীর এবার ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠলো। সাথে লজ্জায় নুইয়ে পড়ে লজ্জায় হাসফাস করতে লাগলো।

ইয়ানার অবস্থা বুঝে পারফি আস্তে করে সরে আসলো। কেটে গেলো ঘোর, ঘোরের মাঝে কি করে ফেলেছে বুঝে উঠতে ইয়ানার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে চোখে পড়লো লজ্জায় হাসফাস করতে থাকা ইয়নার রক্তিম মুখশ্রী। ইয়ানার রক্তিম মুখশ্রী দেখে যেনো পারফি বেসামাল হয়ে উঠছে। এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোল হারাবে বুঝতে পারফি ছোট করে বললো ভিতরে যাও।

এতক্ষণ যেনো ইয়ানার দম আটকে ছিলো। লজ্জায় ইচ্ছে হলো মাটির সাথে মিশে যেতে। তখন পারফির কথায় এক ছুটে নিচে যেয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। আরেকটু হলে যেনো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো। ইয়ানা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে আস্তে করে যেয়ে শাহানা বেগমের পাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লো কিন্তু ঘুমাতে পারলো না। তখন এর কথা মনে পড়তে বার বার লজ্জা মিইয়ে যাচ্ছে।

এদিকে ইয়ানার যাওয়ার কিছুক্ষণ পর পারফি ও নিচে চলে গেলো। ঠোঁটে ফুটে উঠলো তৃপ্তির হাসি। এ যেনো এক অমায়িক তৃপ্তি। রুমে এসে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে তুলে চোখ বুজলো। চোখ বুজতে চোখের সামনে ফুটে উঠলো ইয়ানার লজ্জামিশ্রিত রক্তিম মুখশ্রী। এভাবে কল্পনা ঝল্পনা করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।
————–

সেদিনের পর কেটে গেলো দুদিন। এই দুদিন ধরে ইয়ানা পারফির থেকে পালাই পালাই করে বেড়িয়েছে। সেদিনের পর থেকে লজ্জায় পারফির সাথে ঠিক ভাবে কথা বলতে পারে না৷ সব সময় পালাই পালাই করে বেড়ায়।

ইয়ানার এমন পালাই পলাই অবস্থা দেখে পারফি প্রথম দিন কিছু না বললেও আজ আর চুপ থাকতে পারলো না। সামন্য একটা চুমু এইতো খেয়েছি তাই বলে এমন পালাই পালাই করা লাগবে?

এই যে ইয়ানা ব্যাগ গোছাচ্ছে। আজ সবাই মিলে ইয়ানাকে ওর নানু বাড়ি বেড়াতে নিয়ে যাবে। তাই ব্যাগ গোছাচ্ছে, আর ইয়ানা এই ব্যাগ গোচ্ছে না যেনো কোনো রকম জামাকাপড় ব্যাগের ভিতরে রেখে এখান থেকে পালানোর ধান্দা করছে।

ইয়ানার কাজ নিশ্চুপে পারফি এতক্ষণ দেখছিলো। এবার আর এই পালাই পালাই মেনে নিতে না পেরে ইয়ানার হাত ক্ষপ করে ধরে ইয়ানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

কি সমস্যা তেমার? এমন পালাই পালাই করছো কেনো আমার থেকে?

একেতে লজ্জায় পারফির সামনে আসতে পারে না তার উপর পারফির এমন ক্ষপ করে ধরে ওই কথা জিজ্ঞেস করাতে ইয়ানার অবস্থা যেনো করুন। আমতা আমতা করে বলল,

ছাড়ুন অসভ্য লোক কোথাকার সেদিন রাতে কি করেছিলেন আমার সাথে…।

ইয়ানার কথায় পারফির মাথায় যেনে আকাশ ভেঙে পড়লো। সামন্য একটা কিস এর জন্য এই মেয়ে ওকে এভয়েড করে চলছে। এতো লজ্জা কোথা থেকে এই মেয়ে আমদানি করে আনে তাই বুঝে না পারফি। ইয়নার লজ্জামাখা মুখশ্রী দেখে পারফির গম্ভীর মুখে দুষ্ট বুদ্ধি চেপে বসলো। দুদিন খুব জ্বালিয়েছে মেয়েটা এবার এর একটা বিহিত করতেই হবে। তাই ঠোঁট কামড়ে হেসে পারফি বলল,

কি করেছি আমি সেদিন রাতে?

পারফির এবারের কথায় ইয়ানা আরো হাসফাস করতে লাগলো। কি জবাব দিবে খুঁজে পেলো তাই মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

আর তা দেখে দুষ্টু হাসি দিয়ে পারফি বলে উঠলো,

সামান্য একটা কিস এর জন্য এমন পালাই পালাই করছো। এমন হলে এ জীবনে আমার আর বাবা ডাক শোনা লাগবে না। আমার সাথে এমন যদি আর একবার পালাই পালাই করো তাহলে কিন্তু বাবা হওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলবো।

পারফির কথায় ইয়ানার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগলো যেনো। ততক্ষণাত পারফির বুকে এক হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে বললো ছাড়ুন অসভ্য ঠোঁট কাটা লোক একটা।

পারফি ইয়নার কাজে ঠোঁট কামড়ে হেসে ফের কিছু বলতে যাবে তার আগে ইয়ানা পারফির মুখের উপর এক হাত দিয়ে কথা বলা আঁটকে দিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো চুপ করুন প্লিজ।

ইয়ানার কাজে এবার শব্দ করে হেসে ফেললো পারফি। মুখের উপর থেকে ইয়ানার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,

ওঁকে চুপ করলাম বাট আমার সাথে এভাবে পালাই পালাই করতে পারবে না মনে থাকবে?

ইয়ানা চটজলদি মাথা উপর নিচ নামিয়ে সম্মতি দিলো যে মনে থাকবে।

পারফি ইয়ানার গাল টেনে দিয়ে বলল গুড। এবাট যাও ভালো করে ব্যাগ গোছাও।

ইয়ানা স্মিত হেসে ব্যাগ গুছানোতে মন দিলো।

ব্যাগ গুছানো হলে রেডি হয়ে পারফির সাথে নিচে নামলো ইয়ানা।
সবার রেডি হওয়া হয়ে গিয়েছে তাই সবাই এক সাথে বের হলো। বড়রা এক গাড়িতে উঠলো আর পারফি,শাফিন, ইয়ানা, প্রীতি এক গাড়িতে উঠে বসলো। সবাই ঠিকঠাক ভাবে গাড়িতে উঠতে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
ড্রাইভ করছে পারফি আর পাশে শাফিন বসা। পিছে ইয়ানা আর প্রীতি বসলো।
চারজন মিলে টুকটাক গল্প জুড়ে দিলো। নানু বাসায় কি কি আছে না আছে তা শুনাতে লাগলো ইয়ানাকে কারণ এর আগেও অনেক বার শাফিনদের নানু বাসায় প্রীতিরা গিয়েছিলো তাই সব কিছুই সবার মোটামুটি পরিচিত শুধু ইয়ানার বাদে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে