#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩১
শাফিন বসে আছে পারফির কেবিনে। পারফি ওর দিকে দাঁত কটমট করে তাকাতে শাফিন এক নিঃশ্বাস বলে উঠলো,
দেখ ভাই আমার কোনো দোষ নেই। আমি সকাল সকাল অফিসে আসছিলাম কিন্তু তোর খাডাইশ (খাটাশ) বোন এর জন্য দেরি হয়ে গেছে।
আজ কতো কষ্ট করে একদম টাইম মতো ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে আসছিলাম তখন তোর খাডাইশ বোন আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছে যার জন্য দেরি হয়ে গিয়েছে। আমার কোনো দোষ নেই, আমি আজ ওই বাঁদরের সাথে ঝগড়াও লাগাই নাই। ওই বাঁদর ইচ্ছে করে আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছে যাতে অফিসে আসতে লেট করে তোর থেকে বকা খাই।
শাফিনের কথায় পারফি হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো তারপর ফের শাফিনের দিকে তাকিয়ে হাতটা শাফিনের দিকে ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখাতে দেখাতে বললো কয়টা বাজে?
এতোগুলো কথার পৃষ্ঠে পারফির এই কথা শুনে শাফিন বেকুব বনে গেলো। পারফির দেখানো হাতের দিকে তাকাতে তাকাতে বললো,
এমা তুই ঘড়ির টাইম বুঝিস না? ছিঃ ছিঃ ছিঃ এই বয়সে এগুলো দেখা লাগলো? এখনো ঘড়ির টাইম বুঝিস না আর কিনা সেই ঘড়ি হাতে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস ছিহ্ ছিহ্।
শাফিনের কথায় পারফি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
তোকে এতো পক পক করতে বলি নাই টাইম বলতে বলেছি।
পারফির কথায় শাফিন এবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো ১০,৫৬
তোকে অফিসে আসতে বলেছিলাম কয়টা বাজে?
পারফির এবারের কথায় শাফিন শুকনো ঢোক গিলে বললো ৮ টায়।
বাসা থেকে বের হয়েছিলি কয়টায়?
৯ ট.. এই না না ৭:৩০ সে। সত্যি কথা মুখ ফস্কে বলে দিতে নিয়েও তারাতাড়ি কথা ঘুড়িয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলে দিলো শাফিন।
শাফিনের কথায় পারফি এবার বললো যেহেতু ৭:৩০ সে বেড়িয়েছিস তাহলে নিশ্চিয়ই ৭:৩০ কি ৩৫ সের দিকে তোকে প্রীতি ভিজিয়ে দিয়েছে রাইট?
শাফিন ঢোক গিলে বললে হ..হ্যা।
৭:৩০ সে তোকে প্রীতি ভিজিয়ে দিয়েছে আর এখন বাজে ১০:৫৬ তাহলে ৩ ঘন্টা ২৪ মিনিট লেট। তোকে ৭:৩০ সে ভিজালে তোর ফের চেঞ্জ করতে হায়েষ্ট ৩০ মিনিট এই লাগলো? তাহলে চেঞ্জ করে ৮ টা বাজে তুই বাসা থেকে বের হলি বাকি রইলো ৩ ঘন্টা। আমার জানা মতে অফিসে পৌঁছাতে ৩০ মিনিট এই এনাফ। তাহলে বাকি ২:৩০ মিনিট কোথায় গেলো? এখন নিশ্চয়ই বলবি না হেঁটে এসেছিস তাই লেট হয়েছে। তাহলে বলবো বাসা থেকে অফিসে হেঁটে আসলেও ১ ঘন্টার ভিতরে পৌঁছে যাওয়া যায় তাহলে বাকি ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট কোথায় গেলো?
পারফির কথায় শাফিনের মাথা ঘুরে উঠলো। এমন কাঠ কাঠ টাইম সেট করে বলাতে শুকনো ঢোক গিললো। মিথ্যে কথা বলেও রক্ষা হলো না ধূর্ত শিয়ালের কাছে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েই গেলো। এতক্ষণ মাথায় এই ছিলো না কার কাছে মিথ্যে বলছে। ধূর্ত শিয়ালের সাথে আদো পাঙ্গা লড়া যায়? এখন কি বলে এখান থেকে পার পাবে ভাবতেই শুকনো ঢোক গিলতে লাগলো শাফিন।
পারফি শাফিনের দিকে তাকিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো,
যা হয়েছে সব নিজ থেকে বলবি নাকি অন্য পথ অবলম্বন করতে হবে?
শাফিন আর কোনো উপায় না পেয়ে মুখ গোমড়া করে সকাল থেকে ঘটে যাওয়া সব কিছু খুলে বললো।
সব শুনে পারফি বললো এবার নিজেই বলে দে তোকে কি শাস্তি দিবো।
পারফির কথায় শাফিন ঢোক গিলে বললো,
তুই না আমার জানের দোস্ত আমর ভাই। এবারের মতো ছেড়ে দে প্রমিজ আর জীবনেও লেট করবো না। দরকার হলে বিয়ে করে ঘরে বউ নিয়ে আসবো যাতে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠিয়ে দেও তবুও আর দেরি করবো না।
শাফিনের শেষ কথায় পারফি কি রিয়াকশন দিবে ঠিক বুঝে উঠলো না। এই বাঁচাল ছেলের কথায় হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারলো না। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার জন্য নাকি বিয়ে করে ঘরে বউ আনবে এটাও কি মানা যায়?
পারফি নিজেকে সামলে বললো শালা জীবনেও তুই সোজা হবি না।
শাফিন ৩২ টা দাঁত বের করে বোকা হেঁসে বললো আজকালকার যুগে সোজা মানুষের ভাত নেই।
শাফিনের কথায় পারফি হতাশ শ্বাস ফেললো। এতো আজগুবি কথা ও কোথায় খুঁজে পায় তাই বুঝে না।
পারফি চোখ রাঙিয়ে শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো
গাধার মতো না হেসে এবার মুখ বন্ধ কর। তোর মুখ বন্ধ করলে কাজের কথায় আসতে পারি।
শাফিন ঠোঁট উল্টে বললো
ভালো করে ওতো কথাটা বলতি পারতি। শেষে কিনা গাধা বানিয়ে দিলি? জীবনেও বউ পাবি না তুই শালা আমি অভিশাপ দিলাম।
শাফিনের কথায় পারফি এবার দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
তোর ননস্টপ বকবক বন্ধ করবি নাকি লেট করে আসার শাস্তির ব্যবস্থা করবো?
শাফিন ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো এই যে একদম চুপ, আর একটা কথাও বলবো না।
গুড এবার শোন সেই ৫ জনের লিডার ১ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে।
শাফিন এবার সিরিয়াস হয়ে বললো কি বলিস? কোথায় খুঁজে পাওয়া গেছে আর কেথায় আছে এখন?
ঢাকার বাহিরে ঘাপটি মেরে ছিলো এতদিন এখন আমাদের আস্তানায় আছে।
মুখ থেকে কথা বের করেছে নাকি যাবো মুখ খুলতে?
তার প্রয়োজন নেই অলরেডি মুখ খুলে দিয়েছে।
কি বলিস? কার কথায় এমন করছে? ওই শালার নাম শুধু একবার বল এই মুহূর্তে যেয়ে তুলে আনবো।
পারফি এবার শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো এনামুল খান।
ওহ্ আচ্ছা এখনি তুলে আনছি শালাকে এ বলে উঠে যেতে নিবে তখন চোখ কপালে উঠিয়ে বললো কি? এনামুল খান? আমাদের বিজনেস পার্টনার? ওর সাথে আমাদের কিসের শত্রুতা?
সেটাই ভাবছি ওর সাথে আমাদের কিসের শত্রুতা। এবার ওর ব্যপারে খোঁজ লাগা। আমি আজকের ভিতরে ওর ব্যপারে সব ডিটেইলস চাই।
কাজ হয়ে যাবে, ওই শালাকে তো আমি দেখে নিবো। তাহলে আমি যাই কাজে লেগে পড়ি, এ দিকটা তুই সামলা এ বলে শাফিন চলে গেলো।
————————
বদ্ধ রুমের ভিতরে হাত-পা বাঁধা অবস্থা পড়ে আছে এনামুল খান।
তখন সেখানে প্রবেশ করলো পারফি আর শাফিন। সেদিনের পর কেটে গিয়েছিলো দুদিন। এই দুই দিনে এনামুল খানের সব তথ্য কালেক্ট করা হয়ে গেলো।
সব তথ্য হাতে পেতেই এনামুল খানকে এখানে আনা।
পারফি আর শাফিন রুমে প্রবেশ করতেই এনামুখ খান ওদের দেখে চমলে গেলো। চমকে বলে উঠলো,
তোমরা? ত..তোমরা আমাকে এভাবে তুলে এনেছো? কিন্তু কেনো?
তোকে একটু স্পেশাল ভাবে আদর যত্ন করার জন্য এনেছি বাঁকা হেসে বলে উঠলো শাফিন।
শাফিনের কথায় এনামুল খান কিছুটা রেগে উঠে বললো,
মজা করছো আমার সাথে? এগুলোর মানে কি? ভুলে যেও না আমি তোমাদের বিজনেস পার্টনার হই। এসব কোন ধরনের ব্যবহার? তুইতোকারি করছো কেনে? আমাকে ছাড়ো বলছি।
পারফি এনামুল খানের সামনে একটা চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
মাত্র দু ঘন্টা এভাবে বাঁধা অবস্থায় থেকে বিরক্ত হয়ে গেলি? কয়েকমাস আগে আমিও ছিলাম এভাবে বাঁধা অবস্থায় তাও তোর মতো মাত্র দুই ঘন্টা না দুই দিন ছিলাম।
পারফির কথায় এনামুল খান চমকে উঠলো। আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
ম…মানে? আর এসব কথা আমাকেই বা বলছো কেনো?
শাফিন বলে উঠলো আরে মিস্টার এনামুল খান আর কতো নাটক করবি? তোর সব লুকোচুরি এবার ফাঁস হতে চলেছে। কি ভেবেছিস আমরা কিছুই জানবো না? এবার অন্তত সব শিকার কর।
এনামুল খান এবার কিছুটা ঘাবড়ে যেয়ে বলল,
কি সব বলছো তোমরা? কি শিকার করবো আমি?
পারফি এবার একটা অডিও ক্লিপ ছাড়লো এনামুল খানের সামনে যেখানে তার স্পষ্ট কথোপকথন ভেসে উঠছে সেদিনের যেদিন পারফি আর ইয়ানাকে কিডন্যাপ করিয়েছিলো।
অডিও ক্লিপটা শুনে এনামুল খানের কপালে চিকচিক ঘাম জড়ো হতে লাগলো। এগুলো ওদের হাতে গেলো কিভাবে ভাবতে শিউরে উঠলো।
পারফি এবার এনামুল খানের দিকে তাকিয়ে বললো,
এবার বলে ফেল আমার সাথে তোর কি শত্রুতা? কেনো সেদিন আমাকে আর ইয়ানাকে কিডন্যাপ করেছিলি? কি উদ্দেশ্য ছিলো তোর?
এনামুল খান কিছুটা সময় নিয়ে আমতা আমতা করে বললো আ..আসলে আমার মেয়ে তোমাকে পছন্দ করে, ও তোমাকে পাওয়ার জন্য পাগলামো করছিলো। তাই আমার উদ্দেশ্য ছিলো ওই মেয়েকে ভয় দেখিয়ে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে আমার মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দেওয়া। এইটুকুই উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বাস করো আর কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না।
এনামুল খানের কথায় পারফি চোখ ছোট ছোট করে বললো,
তাই নাকি? তাহলে সেদিন কে যেনো বলেছিলো পুরোনো শত্রু বলে কথা এখনো অনেক হিসেব নেওয়া বাকি কথাটা হয়তো আমি ভুল শুনেছি তাইনা?
পারফির কথায় এনামুল খান আরো ঘামতে লাগলো। এই কথার পৃষ্ঠে কি জবাব দিবে খুঁজে পেলো না। কিছু বলার জন্য আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তখন পারফি বলে উঠলো,
কি ভেবেছিলি আমরা বোকা? তুই আমাদের কিডন্যাপ করবি আর তা খুঁজে বের করতে পারবো না? তুই আমাদের কিডন্যাপ করে ভালোই করেছিস। কারণ আর নাহলে তোর এতো এতো কুকর্মের কথা জানতেই পারতম না।
এনামুল খান ঘাবড়ে যেয়ে বললো ম..মানে?
এনামুল খানের ঘাবড়ানো মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে পারফি শাফিনের কাছে কিছু একটা চাইলো। শাফিন একটা ল্যাপটপ আর একটা পেনড্রাইভ পারফির হাতে দিলো। পেনড্রাইভ টা পারফি ল্যাপটপে ঢুকিয়ে ল্যাপটপ অপেন করে এনামুল খানের দিকে ঘুরালো যেখানে এনামুল খানের এতো বছরের কুকর্মের সব প্রমান ভেসে উঠতে লাগলো। কালোবাজারি বিজনেস, মানুষ পাচার, খুন খারাবি আরো যতো নোংরা কাজ আছে তা ভেসে উঠলো।
এসব দেখে এনামুল খান চমকো গেলো। থমকে গেলো কিছু সময়। কিছুক্ষণ পর পারফিদের উদ্দেশ্যে রেগে বললো এতো কিছু তোরা জানলি কিভাবে?
শাফিন এবার এনামুল খানের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বললো,
এইতো নিজের আসল রুপে অবশেষে ফিরলি। এতক্ষণ কি অভিনয়টাই না করলি। কি ভেবেছিলি তোর কুকর্মের কথা কখনো জানতে পারবো না? আরে তোরাতো কাপুরুষ তাই লুকিয়ে লুকিয়ে এসব কাজ করে বেরাস। তোর ভাই রফিক খান কাপুরুষের মতো বিদেশে লুকিয়ে আছে কেনো? সাহস থাকলে আমাদের সামনে আসতে বল। ঠিকি বলেছিলি পুরোনো শত্রু, তোর বাবা ছিলো একটা জা* আর তোরাও হয়েছিস তাই।
এনামুল খান আরো রেগে যেয়ে বললো আমাকে তোরা চিনিস না। ধ্বংস করে দিবো তোদের পুরো ফ্যামিলি তাই ভালোই ভালোই বলছি আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওই পেনড্রাইভ আমার হাতে তুলে দে।
এনামুল খানের কাথায় ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো শাফিন আর পারফি। শাফিন ফের বললো তাই নাকি?এতো তারা? আগেতো এখান থেকে জীবন নিয়ে ফিরে দেখা তারপর নাহয় আমাদের ফ্যামিলি ধ্বংস করিস।
এনামুল খান আস্তে আস্তে ঘাবড়ে যেতে লাগলো। এতক্ষণ রেগে থাকা এনামুল খান শান্ত হয়ে যেয়ে কিছুটা সময় নিয়ে বললো,
আমার কিছু হলে কখনো নিজের বোনের খোঁজ পাবি না। সারাজীবন খুঁজেই যেতে পারবি কিন্তু খোঁজ আর পাবি না তাই বলছি নিজের বোনের পরিচয় জানতে চাইলে পেনড্রাইভ আমার হাতে দিয়ে আমাকে এখন থেকে যেতে দে।
এনামুল খানের এবারের কথা শুনে পারফি শাফিন দুজনেই থমকে গেলো। এনামুল খানের কথা বুঝে উঠতে শাফিন ছুটে যেয়ে এনামুল খানকে এলোপাতাড়ি মারতে মারতে বলে উঠলো,
তার মানে তুই আমার বোনকে আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিস? আজতো তোকে আমি জানে মে/রে ফেলবো এ বলে কোনো দিকে না তাকিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে লাতলো।
মার খেতে খেতে এনামুল খানের চোখমুখের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে রক্ত ঝড়তে লাগলো এবার পারফি শাফিনকে এনামুল খানের থেকে জোর করে ছাড়িয়ে এনে বললো,
রিলাক্স মারার জন্য অনেক টাইম পাবি আগে ওর মুখ থেকে কথা বের করতে হবে।
শাফিন থামলো কিন্তু চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে যেনো। পারলে এই চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিতো এনামুল খানকে।
পারফি এনামুল খানের কাছে যেয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,
ওর বোন কোথায়? কোথায় নিয়ে রেখেছিস? যদি জানের মায়া থাকে তাহলে ভালোয় ভালোয় সব শিকার কর।
এনামুল খান ক্লান্ত চোখে পারফির দিকে তাকিয়ে বললো,
আমাকে এখান থেকে যেতে দিয়ে সাথে সব প্রমাণ আমার হাতে তুলে দে তাহলেই আমি ওর বোনের পরিচয় দিবো। আর নাহলে যদি আমাকে মেরেও ফেলিস তবুও আমার মুখ দিয়ে কথা বের হবে না।
পারাফি এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে এনামুল খানের নাক বারবার ঘুষি মেরে দিয়ে বললো,
কিভাবে মুখ থেকে কথা বের করতে হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে এ বলে হুংকার দিয়ে একজন গার্ডকে ডাক দিলো। পারফির হুংকারে গার্ডটা ছুটে এলো হাতে কিছু একটা নিয়ে।
পারফি গার্ড হাত থেকে ফোন নিয়ে সেটা এনামুল খানের দিকে ঘুরালো যেখানে ভেসে উঠলো এলিজার মুখশ্রী। তারি মতো বাঁধা অবস্থায় একটা রুমে পড়ে আছে। মুখের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতর চিন্হ তা দেখে তর বুক কেঁপে উঠলো।
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে এনামুল খান বলে উঠলো আমার মেয়ের এই অবস্থা কেনো? কি করেছিস আমার কলিজার সাথে তোরা?
এনামুল খানের দিকে তাকিয়ে পারফি বাঁকা হেসে বললো, এখন ওতো কিছুুই করি নি বাট এবার করবো। এ বলে গার্ডেদের ইশারা করতে এলিজার মাথায় রিভলবার ধরলো। তা দেখে এনামুল খান চিৎকার করে বলে উঠলো ছেড়ে দে আমার মেয়েকে।
পারফি এবার বলে উঠলো,
আমি তিন পর্যন্ত বলবো এর ভিতরে তুই সত্যিটা শিকার করবি আর নাহলে নিজের চোখে নিজের মেয়ের মৃত্যু দেখবি। এবার কোনটা করবি সেটা তুই জানিস বলতে বলতে পারফি এক দুই গুনতে লাগলো। যেই তিন বলতে যাবে অমনি এনামুল খান ভয় পেয়ে বলে উঠলো বলছি বলছি আমি সব বলছি।
এনামুল খানের কথায় পারফি কল কেটে দিয়ে গার্ডের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে ইশারা করলো চলে যেতে। গার্ড যেতে পারফি আর শাফিন এনামুল খানের সামনে বসে বললো এবার শুরু কর বলা।
#চলবে?
#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩২
সন্ধ্যায় পারফি আর শাফিন বাসায় ফিরে আসলো। বাসায় প্রবেশ করতে দেখলো বাসায় কেউ নেই বুঝলো যে সবাই শাফিনদের বাসায় আছে তাই পারফি আর শাফিন ওদের বাসায় গেলো।
বাসায় প্রবেশ করতে দেখতে পেলো পভেল চৌধুরী আর শরিফ আহমেদ কিছু নিয়ে আলোচনা করছে আর অন্য পাশে ইয়ানা, প্রীতি, পিয়াসা ও শাহানা বেগম গল্প করছে।
পারফি আর শাফিন প্রবেশ করতে সবাই তাকালো ওদের দিকে। পিয়াসা বেগম বলে উঠলো,
সারাদিন কোথায় ছিলি দুটোয়? দুপুরে বাসায় আসলি না কেউ, আবার কোনো খোঁজ খবর ও ছিলো না।
পারফি উত্তর দিলো, ওই একটু কাজে বিজি ছিলাম তারপর পভেল চৌধুরীদের পাশে যেয়ে বসতে বসতে বললো কি নিয়ে কথা বলছো দুজন এতো মনোযোগ দিয়ে?
পাভেল চৌধুরী চিন্তিত গলায় বললো,
রফিক খান দেশে ফিরেছে খাবর পেলাম। ওকে কিভাবে ধরা যায় সেটা নিয়েই আলোচনা করছিলাম।
পারফি নির্বিকার ভাবে বললো,
ওহ্ আচ্ছা, এখন রাখো এসব কথা। তারপর শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো আন্টি যাও তো আমাদের পুরোনো অ্যালবাম টা নিয়ে আসো। আজ সবাই মিলে আমাদের ছোট বেলার ছবি দেখবো।
পারফির এমন কথায় উপস্থিত সবাই অবাক হলো বেশ। পারফির হঠাৎ পুরোনো ছবি দেখার ইচ্ছে জাগলো কেনো তা কেউ বুঝে উঠলো না।
একরাশ বিস্ময় নিয়ে শরিফ আহমেদ বলে উঠলো,
হঠাৎ পুরোনো ছবি দেখার ইচ্ছে জাগলো কি মনে করে?
শরীফ শিকদারের কথায় পারফি চোখ ছোট ছোট করে বললো,
কেনো দেখতে পারি না?
ত..তা কখন বললাম হঠাৎ দেখতে চাইলে তাই বললাম।
হঠাৎ হঠাৎ কোনো কাজ করার মজাই আলাদা আঙ্কেল। হতে ওতো পারে হঠাৎ কোনো কাজ করে তোমাদের চমকে দিলাম।
পারফির কথার আগামাথা কেউ বুঝলো না সবাই বেকুবের মতো তাকিয়ে রইলো পারফির দিকে। তা দেখে পারফি বলে উঠলো,
আজব সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি কি অন্য ভাষায় কথা বলছি যার জন্য আমার কথা তোমরা বুঝতে পারছো না?
শাফিন এবার পারফিকে বললো,
শালা যেভাবে জিলাপির পেচ পেচিয়ে কথা বলছিস তা সবার মাথার এক হাত উপর দিয়ে যাচ্ছে। তুই চুপ থাক আমি দেখছি ব্যপারটা এ বলে শাহানা বেগমের উদ্দেশ্য বললো আম্মু যাওতো আগে অ্যালবামটা নিয়ে আসো।
শাহানা বেগম বিস্ময় নিয়ে উঠে যেয়ে অ্যালবামটা নিয়ে আসলো তারপর সবাই গোল হয়ে এক সাথে বসলো।
পারফি অ্যালবামটা ইয়ানার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো নেও তুমি খোলো অ্যালবামটা, কজ আমরা সবাই এখানে সব পিক দেখেছি, কিন্তু তুমি দেখো নি তাই তুমি এক এক করে ছবি বের করবে আর সেটার বর্ণনা আমরা দিবো।
পারফির কথার আগামাথা কিছু না বুঝলেও ইয়ানা খুশি হয়ে অ্যালবামটা হাতে নিলো। পুরোনো পিকচার দেখতে বেশ লাগে ওর কাছে। অ্যালবাম খুলতে ভেসে উঠলো প্রথমে শাহানা বেগম আর শরিফ শিকদারের বিয়ের ছবি। যেখানে শাহানা বেগমের যুবতী বয়সের ছবিটা ভেসে উঠলো। কি অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলো তা এই ছবিটাতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এখন মুখে বয়সের হালকা ছাপ পড়ে গিয়েছে তবুও দেখতে মা শা আল্লাহ আর এই যুবতী বয়সের তো তুলোনা এই হয় না।৷
ইয়ানা ছবিটা দেখে বলে উঠলো,
ওয়াও আন্টি তুমিতো অল্প বয়েছে দেখতে পুরোই নাইকা ছিলে।
ইশানার কথায় মুচকি হাসলো শাহানা নেগম। তখন প্রীতি বলে উঠলো দেখতে হবে না কার আন্টি, তুইও দেখতে অনেকটা আন্টির মতো আমার গুলুমুলু বেস্টু।
প্রীতির কথায় সবাই কিছুটা চমকালো। সবার চোখ পড়লো ইয়ানার দিকে। আসলেই শাহানা বেগমের সাথে অনেকটা মিল পাচ্ছে ইয়ানার। এতদিন দেখলেও বিষয়টা ওভাবে কেউ খেয়াল করে নি।
এতগুলো মানুষের দৃষ্টি এক সাথে ইয়ানার দিকে পড়তে ইয়ানা কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। তা দেখে পারফি বললো হয়েছে নেক্সট পিক দেখা যাক।
পারফির কথায় সম্মতি দিয়ে ইয়ানা পরের পেজে যেতে দেখতে পেলে দুটো ছেলে কান ধরে একে অপরের দিকে মুখ ভেঙচিয়ে তাকিয়ে আছে।
ছবিটা দেখে সবাই এক সাথে হেঁসে উঠলো। পিয়াসা হাসতে হাসতে বললে,
জানিস এই দুটো কে? পারফি আর শাফিন। ছোটবেলা বাচ্চাদের সাথে খেলতে গিয়ে কি নিয়ে জানি বাজিয়ে দিয়ে দুটোয় মিলে বাচ্চাদের সাথে মারামারি করছিলো তখন শরিফ ভাই যেয়ে দুটোর কান ধরে টেনে এনে এভাবে পুরো এক ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো।
পিয়াসা বেগমের কথায় সবাই এক সাথে হেঁসে ফেললো আবার।
পারফি আর শাফিন মাথা চুলকালো তা দেখে। ছোট বেলার কথা এভাবে ফাঁস হয়ে যাওয়াতে কিছুটা বিব্রতবোধ করলো।
তারপর এক এক করে সব ছবি দেখতে লাগলো আর প্রতিটা ছবির বিবরণ এক এক জনে দিতে লাগলো। ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা ছবির কাছে এসে ইয়ানার হাত জোড়া থেমে গেলো। সাথে কেঁপে উঠলো পুরো শরীর। নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না। হাতে থাকা অ্যাবামটাও কাঁপতে লাগলো সমান তালে ইয়ানার হাত কাঁপার সাথে।
এতক্ষণ অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত ছবিটা সামনে আসাতে মৃদু হাসলো পারফি। সাথে তাকালো ইয়ানার কম্পনরত মুখপানে। এতক্ষণ যে এটার এই অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলো। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কাটলো। পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ইচ্ছে করে বললো,
জানো এটা কে? এটাই হলো আমাদের সেই ছোট শ্রুতি যাকে সেই জন্মের পর অপহরণ করা হয়। এর পর আর কোনো খোঁজ মিলে নি আমাদের ছোট পরীর।
পারফির কথায় ইয়ানা চমকে তাকালো পারফির দিকে। কি হচ্ছে কিছু মাথায় আসছে না। এ কিভাবে সম্ভব? আস্তে ধীরে ইয়ানার পুরো শরীর অবশ হয়ে আসতে লাগলো। কম্পিত শরীর আরো কাঁপতে লাগলো। কারণ এটা আর কারো না ওর নিজের ছবি। হ্যা এটা ওর এই ছবি কারণ ওর ছোট বেলার ছবি দিয়ে অ্যালবাম ভোরে রেখেছিলো ইসহাক আহমেদ। ইয়ানার বরাবর এই ছোট বেলার ছবি দেখতে খুব ভালো লাগতো তাই প্রায় প্রতিদিন এই নিজের ছোট বেলার ছবি গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতো। যার জন্য নিজের ছোট বেলার মুখশ্রী একবার দেখলেই চিনে ফেলতে সক্ষম। আর সেই জন্যই মাত্র একটা বাচ্চার ছবি সামনে আসতে ছবিটা চিনতে দু সেকেন্ড সময় ও লাগে নি। ছবিটা চোখের সামনে পড়তে বুকের ভিতর ধক করে উঠলো এই ভেবে যে ওর ছবি এই অ্যালবামের ভিতর আসলো কিভাবে। পরক্ষণে পারফির কথা শুনে যেনো পুরো শরীর অবশ হয়ে আসতে লাগলো।
ইয়ানাকে এভাবে কাঁপতে দেখে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য পারফি বলে উঠলো,
আর ইউ ওঁকে ইয়ানা? এভাবে কাপছো কেনো? কোনো সমস্যা?
পারফির কথায় সবাই তাকলো ইয়ানার দিকে। হাঠাৎ ইয়ানাকে এভাবে কাঁপতে দেখে সবাই চমকে গেলো। সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগলো কি হয়েছে কিন্তু কারো কথা ইয়ানার যেনো কানেই ঢুকছে না।
তখন শাফিন বলে উঠলো,
আমি বলছি ফুল পরীর এমন করার কারণ।
শাফিনের কথায় সবাই তাকলো শাফিনের দিকে। শাফিন কিছুটা সময় নিয়ে শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
আম্মু আমরা আমাদের যেই ছোট্ট শ্রুতিকে এতো বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছি ও আর কেউ না আমাদের ইয়ানা। হ্যা ইয়ানা আমাদের সেই ছোট শ্রুতি বলতে বলতে কণ্ঠ কেঁপে উঠলো শাফিনের।
আর এদিকে শাফিনের কথায় উপস্থিত চমকে গেলো। বজ্রপাতের ন্যায় শাফিনের কথাটা সবার কানে বাজতে লাগলো। শাহানা বেগমের শরীর ও কম্পিত হলো শাফিনের কথায়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে শাহানা বেগম বলে উঠলো,
ক..কি ব..বললি? আ..আমি কি স..সত্যি শুনতে প..পারছি?
পারফি এবার উঠে যেয়ে ইয়ানার পাশে বসলো। তারপর শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
তুমি ঠিক শুনতে পারছো আন্টি এটাই সত্যি। ইয়ানাই হলো আমাদের সেই ছোট্ট শ্রুতি। কথাটা বলে পারফি আলতো করে ইয়ানার হাতের উপর নিজের হাত রেখে ইয়ানার অশ্রুসিক্ত নয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,
হ্যা এরাই তোমার আসল বাবা-মা ইয়ানা। বলেছিলাম না তুমি কারো কারো অবৈধ সন্তান না। বলেছিলাম না তুমি পবিত্র এক ফুল এবার বিশ্বাস হলো সেই কথা? তোমার বাবা-মা তোমাকে ফেলে দেই নাই ইয়ানা, তোমাকে অপহরণ করে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো।
পারফির কথায় ইয়ানা ছলছল চোখে তাকালো শাহানা বেগম, শরিফ শিকদার আর শাফিনের দিকে। শরীর এখনো কাঁপছে যেনো এতো বড় সত্যি এভাবে সামনে আসবে কখনো কল্পনাও করে নি।
শাহানা বেগম ইয়ানার পাশেই বসা ছিলো। তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে ইয়ানার সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে হঠাৎ করে ইয়ানাকে ঝাপটে ধরে ডুকরে কান্না করে বলতে লাগলো,
তুই আমার শ্রুতি? আমার সোনা মেয়ে। কেনো হারিয়ে গিয়েছিলি আমাদের জীবন থেকে মা? তোকে হারিয়ে প্রতিটা মুহূর্তে বুকের ভিতর এক হাহাকার নিয়ে বেঁচে ছিলাম। কতো খুঁজেছি তোকে কোথাও খুঁজে পাই নি। আমার কলিজা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যেতো তোকে একটা বার বুকে জড়িয়ে নেওয়ার আকুলতায়। আল্লাহ কাছো লাখো কোটি শুকরিয়া আমার কলিজার টুকরোটাকে আবার আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তোকে আর কোথাও হারাতে দিবো না এই বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখবো যাতে কোনো কালো ছায়া তোকে স্পর্শ করতে না পারে।
ইয়ানাও কান্না জড়িত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডেকে উঠলো,
ম..মা।
ইয়ানার মুখে মা ডাক শুনে শাহানা বেগম যেনো পাগল প্রায় হয়ে গেলো। ইয়ানার সারা মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিয়ে আবার বুকের মাঝে আগলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো। এ কান্না যে কষ্টের না এক সুখের কান্না। ১৭ টি বছর পর মেয়েকে বুকে ফিরে পাওয়ার সুখের কান্না।
এদিকে শরিফ শিকদার যেনো জমে বরফ হয়ে গেলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইয়ানার মুখ পানে। আস্তে আস্তে চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে। ছেলেদের নাকি কান্না করা বারণ কিন্তু আজ শরিফ শিকদার পারছে না নিজেকে সামলাতে। এতো বছর পর মেয়েকে এভাবে ফিরে পাবে কখনো কল্পনাও করে নি। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ কাঁধে পেয়ে শরিফ শিকদার ঝাপসা চোখে তাকাতে দেখতে পেলো পাভেল চৌধুরী তাকিয়ে। শরীফ শিকদার তাকাতে পাভেল চৌধুরী চোখ দিয়ে ইশারা করলো মেয়ের কাছে যেতে।
শরিফ শিকদার কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেলো ইয়ানার কাছে। শরিফ শিকদারকে ইয়ানার পাশে বসিয়ে দিয়ে পারফি উঠে গেলো। শরিফ শিকদার ইয়ানার পাশে বসে কাঁপা কাঁপা হাতে ইয়ানার মাথায় হাত রাখলো।
মাথায় করো হাতের স্পর্শ পেয়ে ইয়ানা তাকালো পাশে। নিজের পাশে নিজের জন্মদাতা পিতাকে দেখে ইয়ানা ফের কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বাবা ডেকে ঝাপটে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
সাথে কেঁদে উঠলো শরীফ শিকদার ও। চোখের পানি ছেড়ে ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তখন চোখে পড়লো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা শাফিনের পানে। যে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাদের দিকেই তাকিয়ে তা দেখে শরিফ আহমেদ হাত বাড়িয়ে শাফিনকে কাছে ডাকলো।
শাফিন ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তাদের কাছে। কাছে এসে আস্তে করে ইয়ানার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। ইয়ানা তাকালো অশ্রুসিক্ত নয়নে শাফিনের দিকে। শাফিন কাঁপা কাঁপা হাতে ইয়ানার দু গালে হাত রেখে বললো,
আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমার সেই ছোট্ট পরী বোনটা আজ এতো বড় হয়ে গেছে। আমার পরী বোনটাকে কেনো আমি ছোট বেলা কাছে পেলাম না? কেনো বোনটা আমার কাছে ফিরে আসে নি বলতে বলতে শাফিনের চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো।
ইয়ানা ভাইয়া বলে শাফিনকে ঝাপটে ধরলো। শাফিন পরম স্নেহে বোনকে বুকের মাঝে আগলে নিলো। পাশ থেকে শাহানা বেগম আর শরিফ শিকদার ও জড়িয়ে ধরলো। আজ কারো সুখে যেনো বাঁধ মানছে না। পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেনো উপচে পরছে তাদের, এতো দিনের হারানো সন্তানকে বুকে ফিরে পেয়ে।
কিছুটা দূরে বসে পিয়াস বেগম, পাভেল চৌধুরী, প্রীতি, পারফি মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগলো বাবা-মা, ভাই-বোনের সুখের মুহূর্ত। ওদের সবার চোখেও আজ যেনো পানি বাধ মানছে না। এতোদিনের সবার মনের চাপা কষ্টের অবসান অবশেষে ঘটলো।
অনেক সময় পর একে একে সবাই ইয়ানাকে বুকের মাঝে আগলে নিলো পরম স্নেহের সাথে। আজ যেনো কারো সুখের কমতি নেই।
শরিফ শিকদার খুশি হয়ে বললো পাভেল দেখছিস আমার মেয়ে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমার মেয়ে ফিরে এসেছে আজ আমি পুরো এলাকায় মিষ্টি বিলাবো। সকল এতিম বাচ্চাদের পেট পুরে খাওয়াবো। সব ব্যবস্থা কর আমার খুশির আজ বাঁধ মানছে না।
শরিফ শিকদারের আজ এতো এতো খুশি সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখলো। লোকটাকে এতোটা খুশি হতে আজ পর্যন্ত কেউ দেখি নি। বারাবর এই শরিফ শিকদার ছিলো কিছুটা চাপা স্বভাবের। আজ যেনো তার খুশির কাছে তার চাপা স্বভাবটা ঢাকা পড়ে গেছে।
শরিফ আহমেদকে এতো খুশি হতে দেখে পারফি বলে উঠলো,
আরে আঙ্কেল ওরুফে শশুর মশাই গুড নিউজ তো আরো একটা শোনা বাকি।
পারফির কথা বলার ধরন দেখে সবাই এক সাথে হেঁসে উঠলো সাথে সবাই উৎসুক চোখে তাকালো নিউজটা শোনার জন্য।
#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰