#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২১
রাত বাজে প্রায় ১১ টা। ড্রয়িংরুমে বসে ইয়ানা, প্রীতি,ইমা, ইতি বেগম ও ইসহাক আহমেদ গল্প করছে।
ইতি বেগম সবার কাছে এতো দিনের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইলো। যেহেতু ইতি বেগম নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে তাই সবাই ক্ষমা করে দিলো কারণ তার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি অনুশোচনায় ভুগছে। কেউ তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা ভোগ করলে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। তাই সবাই ইতি বেগমকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার নতুন করে হাসিখুশি একটা জীবন শুরি করতে চাইলো।
সবাই গল্প করছিলো তখব কলিংবেল বেজে উঠলো।
ইয়ানা উঠে বললো আমি খুলে দিচ্ছি এ বলে দরজার কাছে এসে দরজা খুলতে পারফির ক্লান্ত মুখশ্রী ভেসে উঠলো। এই টাইমে পারফিকে দেখে অবাক হলো বেশ কারণ অনেক রাত হয়ে গেছে তাই ভেবেছিলো পারফি আসবে না।
দরজা খুলে ইয়ানাকে এভাবে শটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পারফি বললো সারারাত কি এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি ভিতরে নিবে?
ইয়ানা তারাতাড়ি দরজার সামনে থেকে সরে যেয়ে বললো না না আসুন ভিতরে।
পারফি ক্লান্ত পায়ে ভিতরে প্রবেশ করতে সবার সাথে ড্রয়িংরুমে দেখা হলো। পারফি সালাম দিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে ইসহাক আহমেদের পাশে যেয়ে বসলো।
সবাই টুকটাক কথা বলছে তখন ইতি বেগম পারফির কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিলো সেদিনের ব্যবহারের জন্য। ইতি বেগম যেহেতু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে শুনে খুশি হলো।
গল্পের মাঝে কেটে গেলো আরো কিছুক্ষণ সময় তখন ইতি বেগম ইয়ানার উদ্দেশ্যে বললো ইয়ানা মা পারফিকে নিয়ে রুমে যা আমি খাবার গরম করে রুমে পাঠাচ্ছি, পারফিকে দেখে বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছে এখন একটু রেস্টের প্রয়োজন।
ইসহাক আহমেদ পারফির দিকে তাকিয়ে বললো কিছু মনে করো না বাবা আমরা ভেবেছিলাম তুমি আসবে না তাই তোমাকে রেখেই সবাই খেয়ে ফেললাম।
ইসহাক আহমেদের কথায় পারফি মুচকি হেসে বললো সমস্যা নেই বাবা, ভালো হয়েছে সবাই খেয়ে নিয়েছেন।
ইসহাক আহমেদ বাবা ডাকটা শুনে পিল চমকালেন। আশা করে নি পারফি বাবা বলবে কারণ কাল ও আঙ্কেল বলে সম্মোধন করেছিলো। আজ পারফির মুখে বাবা ডাক শুনে খুশি হলেন বেশ। খুশি হয়েই বললো যাও বাবা তাহলে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নেও।
পারফি সম্মতি দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। পিছু পিছু ইয়ানা ও গেলো।
কিছুক্ষণ পর ইমা এসে খাবার দিয়ে গেলো। পারফি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইয়ানা খাবার সাজাচ্ছে তা দেখে তোলায়া দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এটে নিলো।
পারফিকে ফ্রেশ হয়ে বের হতে দেখে ইয়ানা পারফি উদ্দেশ্যে বললো খেয়ে নিন।
পারফি অলস ভঙ্গিতে বেডে বসতে বসতে বললো খাইয়ে দাও।
পারফির কথায় ইয়ানার কাশি উঠে গেলো। তারাতাড়ি করে গ্লাসের পানি পুরোটা খেয়ে নিয়ে তাকালো পারফির দিকে। ও কানে ভুল শুনেছে কিনা তা বুঝে উঠতে পারছে না।
ইয়ানার অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো পারফি। ইয়ানাকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো ভুল শোনো নি ঠিকি শুনেছো খাইয়ে দিতে বলেছি।
ইয়ানা কি বলবে খুঁজে পেলো না, এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো আপার হাতে কি হয়েছে?
বউ থাকতে হাত দিয়ে কেনো খাবো? জলদি খাইয়ে দেও খিদে পেয়েছে খুব।
পারফির কথায় ফের ইয়ানার কাশি ওঠার মতো অবস্থা হয়ে গেছে। এই লোক যে কি লেভেল এর ঠোঁট কাটা স্বভাবের এখন তা ভালো করেই বুঝতে পারছে। কি করবে না করবে ভেবে চিন্তে কাঁপা কাঁপা হাতে খাবার মেখে পারফির মুখের সামনে ধরলো।
পারফি মুচকি হেসে খাবার টা মুখে নিলো। খাবার মুখে দেওয়ার সময় ইয়ানার আঙুল ঠোঁটে হালকা করে লাগতে ইয়ানা কেঁপে উঠলো। ব্যপারটা খুবি মজা লাগলো পারফির, সাথে ইয়ানাকে আরেকটু জ্বালানোর জন্য খাবার মাঝে আস্তে করে আঙুলে কামড় মেরে দিলো।
ইয়ানা দ্রুত হাত সরিয়ে বললো হাতে কামড় দিলেন কেনো?
পারফি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো আমি কখন কামড় দিলাম?
এই মাত্রই তো দিলেন।
তোমার যেই তুলতুলে হাত আমিতো ভাত ভেবে কামড় দিয়েছি এখন যদি সেই কামড় হাতে পড়ে তাতে আমার কি দোষ?
ইয়ানা দাঁত কটমট করে তাকালো পারফির দিকে, বিরবির করে বললো ফাজিল লোক একটা। তারপর পারফিকে পুরোটা খাইয়ে দিয়ে সব কিছু রেখে দিয়ে আসলো। রুমে এসে এখন বিপাকে পড়ে গেলো ঘুমাবে কোথায়? ওর রুমে তো সোফা নেই। এদিকে পারফি টান হয়ে শুয়ে আছে ইয়ানা এখন কি করবে ভাবতে ভাবতে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো।
ইয়ানার অবস্থা দেখে পারফি মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে বললো বেড টা যথেষ্ট বড় আছে আশা করি এক রাতের জন্য ম্যানেজ করে নিতে পারবে এতে।
ইয়ানা একরাশ দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে ধীর পায়ে কোলবালিশের অপজিট পাশে শুয়ে পড়লো। অস্বস্তিতে গা কাটা দিয়ে উঠলো। সাথে ভয় ও লাগছে যদি ঘুমের ঘোরে বালিশের অপজিট পাশে চলে যায় তখন কি হবে?
ইয়ানার অস্বস্তিটা বুঝতে পেরে পারফি বললো রিলাক্স আমি কিছু করবো না। বিয়েটা হঠাৎ করে হয়ে গেছে তাই আমি জানি তোমার সময় প্রয়োজন। তুমি তোমার মতো করে সময় নিতে পারো আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আজকের রাতটার জন্য এক বেডে কষ্ট করে ম্যানেজ করে নেও কারণ এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
ইয়ানা মনে মনে বললো সমস্যা তো আপনাকে নিয়ে না, সমস্যা তো আমার নিজেকে নিয়েই। আমি জানি আপনি আমাকে টাচ ও করবেন না কিন্তু আমার ঘুম যে ওতোটা ভালো না। নিজেকে নিয়েই নিজের টেনশন হচ্ছে তা কি করে বোঝাই আপনাকে?
ইয়ানা নিজেকে সামলে আস্তে করে বললো সমস্যা নেই আপনি ঘুমান এ বলে অন্যপাশ ফিরে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো ইয়ানা।
পারফি ও আর কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়লো।
——-
সকাল সকাল সবার থেকে বিদায় নিয়ে ইয়ানা ও প্রীতিকে নিয়ে পারফি বেড়িয়ে গেলো। ওদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে অফিসে যাবে তাই এতো তাড়া। ইতি বেগম আর ইসহাক আহমেদ অনেক করে বললো থেকে যেতে কিন্তু এখন থাকার সময় নেই।
এতোদিন পর ইতি বেগমকে আপন করে কছে পেয়ে ইয়ানার ইচ্ছে হয়েছিলো আরো কিছুদিন থাকার কিন্তু কাল নাকি বাসায় কিসের একটা অনুষ্ঠান আছে তাই থাকা হলো না, সবার সাথে যাওয়া লাগলো। যেতে কিছুটা কষ্ট লাগলেও পড়ে প্রীতির বকবকানিতে মন ভালো হয়ে গেলো।
বাসায় এসে পিয়াসা বেগমের সাথে গল্প জুড়ে দিলো প্রীতি আর ইয়ানা। আর পারফি চলে গেলো শাফিনদের বাসায়। ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতে শাহানা বেগমকে দেখলো সোফায় বসে আছে।পারফি শাহানা বেগমের পাশে বসতে বসতে বললো কি অবস্থা কেমন আছো আন্টি?
শাহানা বেগম মুচকি হেসে বললো আলহামদুলিল্লাহ বাবা। তোমার কি অবস্থা? ইয়ানাদের বাসা থেকে কখন আসলে?
এইতো মাত্রই আসলাম বলতে বলতে পারফির চোখ পড়লো শাহানা বেগমের হাতে ছবির অ্যালবামের দিকে। যেখানে ফুটফুটে একটা বাচ্চার ছবি ফুটে আছে। ছবিটা তার মেয়ে শ্রুতির,যেদিন শ্রুতি পৃথিবীতে এসেছিলো সেদিনের তোলা ছবি এটা।
ছবিটা দেখে পারফি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো ছবিটা না দেখলে হয় না? কেনো এই ছবি দেখে নিজের কষ্ট বাড়াও?
শাহানা বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে পারফির দিকে তাকিয়ে বললো কালকে আমার সোনা মেয়েটার জন্মদিন। খুব করে ওকে মনে পড়ছে। আজ যদি আমার মেয়েটা আমার কাছে থাকতো তাহলে কতোই না সুন্দর হতো।
পারফি শাহানা বেগমকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো মন খারাপ করো না। দেখবে একদিন ঠিকি আমাদের শ্রুতি পরীকে আমরা খুঁজে পাবো।
শাফিন উপর থেকে নামতে নামতে বললো দুজন মিলে কি কথা হচ্ছে শুনি?
শাহানা বেগম চোখের পানি মুছে অ্যালবামটা বন্ধ করতে করতে বললো তেমন কিছু না।
শাফিন সোফায় বসতে বাসতে শাহানা বেগমের হাতে অ্যালবামটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। যা বোঝার তা বুঝে গেলো। এখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
এই টপিক চেঞ্জ করার জন্য শাফিন বললো খিদে পেয়েছে খেতে দাও।
শাহানা বেগম উঠতে উঠতে বললো আয় খাবার দিচ্ছি আমি তারপর পারফির দিকে তাকিয়ে বললে তুমিও চলো কিছু খেয়ে নিবে।
পারফি শাহানা বেগমকে নিষেধ করলো খাবে না কিন্তু কে শোনে কার কথা। শাহানা বেগম জোর করে খেতে নিয়ে গেলো।
খাওয়া হলে শাহানা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে পারফি আর শাফিন বাসা থেকে বের হলো। বাহিরে এসে শাফিন বললো সিমের ভিতরের তথ্য কালেক্ট করা হয়েছে?
পারফি গাড়িতে উঠতে উঠতে বললো না। তবে আজকের ভিতরেই সব তথ্য পেয়ে যাবো আশা করি।
পারফি আর শাফিন টুকটাক কথা বলতে বলতে অফিসে পৌঁছে গেলো। অফিসে পৌঁছে পারফি কাউকে ফোন করে অফিসে আসতে বললো। সে আসতে তার হাতে ওই সিমটা দিয়ে বললো এই সিমের ভিতর সকল ইনফর্ম আমার আজকের ভিতরে চাই।
লোকটা সম্মতি দিয়ে সিমটা নিয়ে চলে গেলো।
———————-
সন্ধ্যায় ইয়ানা আর প্রীতি মিলে বিরিয়ানির রান্না করবে ঠিক করলো। পিয়াসা বেগম কিছুতেই রাজি হলো না ওদের রান্না করতে দিতে কিন্তু কে শোনে কার কথা। ইয়ানা আর প্রীতি মিলে জোর করে রাজি করালো।
পিয়াসা বেগম রাজি হলো কিন্তু বললো সে পাশে থেকে হেল্প করবে যদি কোনো বিপদ ঘটিয়ে ফেলে।
তখন প্রীতি পিয়াসা বেগমকে বললো উফফ আম্মু আমরা কি বাচ্চা নাকি যে বিপদ ঘটাবো। আজ তুমি রিলাক্স করো আমরা দুজন সামলে নিবো। এমনেতো সারাদিন পক পক করতে কান ঝালাপালা করে ফেলো কেনো কাজ করি না এখন যেই কাজ করতে চাচ্ছি এখন করতে দিচ্ছো না কেনো?
পিয়াসা বেগম চোখ পাকিয়ে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। মায়ের মন কি আর এরা বুঝবে?
ইয়ানা পিয়াসা বেগমকে বললো আন্ট… না মানে মা এতো টেনশন করছো কেনো? আমি টুকিটাকি রান্না পারি তাই রান্না করতে সমস্যা হবে না। আজ একটা দিন এইতো করবো আর না করো না প্লিজ।
পিয়াসা বেগম বললো আচ্ছা যা বাবা কর। যদি কোনো অঘটন ঘটাস তাহলে কিন্তু দুটোকেই ধরে পেটাবো মনে রাখিস।
ইয়ানা পিয়াসা বেগমের গাল টেনে দিয়ে বললো কিছু হবে না যাই তাহলে এ বলে প্রীতিকে নিয়ে কিচেনে চলে গেলো।
পিয়াসা বেগম হাসলো দুই মেয়ের কান্ড দেখে।
#চলবে?
#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ২২
বিরিয়ানি রান্না করতে করতে রাত দশটা বাজিয়ে দিলো প্রীতি আর ইয়ানা। এখনো পুরোপুরি রান্না করা হলো না। এই প্রথম রান্না করছে তাই দুজন সব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এই শিতের ভিতরেও দুজন ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।
প্রীতি ঠোঁট উল্টে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো তখন পাকনামি করে রান্না করতে না আসলেও হতো।রান্না করা যে এতো কষ্ট আগে জানলে জীবনেও আসতাম না।
ইয়ানা হেসে বললো শশুর বাড়ি যাও একবার চান্দু তখন সারাদিন এই রান্নাবান্না নিয়েই থাকা লাগবে।
থাক বইন আমার বিয়ে করার শখ মিটে গেছে। এ জীবনে বিয়ে করছি না আমি।
ইয়ানা ভ্রু কুঁচকে বললো তাইনাকি? তাহলে শাফিন ভাইয়ার জন্য একটা মেয়ে খুঁজতে হবে। দেখি কোনো মেয়ে খুঁজে পাই কিনা।
প্রীতি ইয়ানার দিকে কটমট করে চেয়ে বললো তুই কি আমার বন্ধু নাকি শত্রু?
ইয়ানা না বোঝার ভান করে বললো যা বাবা আমি কি করলাম?
কি করেছিস? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা এ বলে পাশে রাখা আটার পেকেট থেকে আটা বের করে ইয়ানার দু গালে লাগিয়ে দিলো।
কি হয়েছে বুঝতে ইয়ানাও প্রীতিকে আটা মেখে দিলো এ নিয়ে হয়ে গেলো দুজনের মাঝে লড়াই। আটা দিয়ে দুজন সাদা ভূত হয়ে গেছে।
রান্নাঘর থেকে দু’জনের হাসাহাসির শব্দ শুনে পিয়াসা বেগম উকি দিতে তাজ্জব বনে গেলো। পরক্ষণে দুজনের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। নিজেকে সামলে প্রীতি আর ইয়ানাকে বললো এ কি অবস্থা করেছিস দুজনে বাচ্চাদের মতো? পুরোই জোকার লাগছে দুজনকে বলতে বলতে আবার হাসতে লাগলো।
তখন কলিংবেল বেজে উঠলো পিয়াসা বেগম নিজেকে সামলে যেয়ে দরজা খুলে দিয়ে আবার কিচেনে এসে ইয়ানা আর প্রীতির দিকে তাকিয়ে বললো হয়েছে আপনাদের আর রান্না করতে হবে না এবার যেয়ে দুজন গোসল করে নেন বাকিটা আমি করে নিচ্ছি।
ইয়ানা আর প্রীতি একে অপরকে এই অবস্থার জন্য দোষারোপ করতে করতে ড্রয়িংরুমে আসছিলো তখন কারো চিৎকারে সামনে তাকাতে দুজন থতমত খেয়ে গেলো।
পাফির আর শাফিন মাত্রই এসে সোফায় সবে মাত্র বসলো তখন শাফিনের চোখ পড়লো সামনে। ভরকে যেয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো মাগো ভূত এ বলে পারফির কোলে উঠে বসে পড়লো।
শাফিনের কথায় সেদিকে পারফি তাকাতে প্রথমে চমকে গেলো। এই রাতে বেলা প্রীতি আর ইয়ানার এই লুকের মানে মাথায় ঢুকলো না। দুজন পুরো সাদা ভূত হয়ে আছে আচমকা কারো চোখ পড়লে ভরকে যাওয়ার এই কথা। পরক্ষণে দুজনের এই অবস্থা দেখে নিজের হাসি কন্ট্রোল করতে না পেরে হো হো করে হেঁসে উঠলো।
পারফিকে হাসতে দেখে শাফিন বলে উঠলো তুই হাসছিস কোন দুঃখে? মানুষ ভূত দেখলে কান্না করে আর তুই হাসছিস কেনো?
পারফি শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো শালা আগে কোল থেকে নাম তারপর ভালো করে দেখ এরা কারা।
শাফিন কোল থেকে নেমে ভালো করে প্রীতি আর ইয়ানাকে খেয়াল করতে পুরো ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠলো।
এদিকে ইয়ানার লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। এভাবে যে তাদের সামনে পড়ে যাবে কল্পনাও করে নি। ওখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে এক ছুটে উপরে উঠে গেলো।
আর প্রীতি দাঁত কটমট করে শাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো এখানে এমন বানরের মতো হাসার কি হলো? আর একটু হাসলে ঘুষি মেরে একদম সব দাঁত ফেলে দিবো।
আয় দেখি কার দাঁত কে ফেলে। রাতে বেলা এমন ভূত সেজে বসে থাকবি আর হাসলেই দোষ। একটু আগে একটুর জন্য হার্ট অ্যাটাক করে ফেলি নি। এখন সেই জন্য সরি বলবি তানা উল্টো ঘুষি মারতে চাস। সরি বল তারাতাড়ি।
পারফি তারাতাড়ি উঠে দাঁড়ালো এখন এখানে থাকলে এদের ঝগড়া শুনতে শুনতে কান পঁচে যাবে। সবেতো ঝগড়া লাগা শুরু এই ঝগড়া কখন থামবে তার কোনো তালঠিক নেই। তাই এদের বেকার ঝগড়া শুনে কান না পচিয়ে সোজা উপরে চলে গেলো।
প্রীতি রেগে বললো আসছে রে সরি শুনতে। সরি আমি না তুমি বলবা তখন দাঁত কেলিয়ে হাসার জন্য।
আমি সরি বলবো কোন দুঃখে? হাসার কাজ করেছিস তাই হেসেছি। যা ভাগ এখান দেখে ভূতনি আর নাহলে দেখা যাবে তোর এই ভূতনি লুক কেউ দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে।
প্রীতি ক্ষেপে শাহিনের কাছে যেয়ে বললো আর একবার যদি ভূত বলেছো না তাহলে এখন একদম ঘাড় মটকে দিবো বলে দিলাম।
তুই ভূত, তুই শাঁকচুন্নি, তুই শেওড়া গাছের পেত্নী সব তুই, বলেছি এবার কি করবি? ঘাড় মটকাবি? পারলে মটকাতো।
তবে রে দেখাচ্ছি মজা এ বলে প্রীতি শাফিনের দিকে ঝুকে নিজের চুল গুলো নাড়িয়ে মাথার ভিতরে থাকা সব আটাগুলো শাফিনের গায়ে ফেলে দিয়ে দিলো দৌড়ে। দৌড়ে যেতে যেতে বললো এবার আয়নায় যেয়ে দেখো কে ভূত।
প্রীতির কাজে শাফিন থতমত খেয়ে গেলো। প্রীতি যে এমন কিছু করবে কুক্ষণেও ভাবে নি। এখন নিজের মাথা নিজের টাকাতে ইচ্ছে করলো কেনো লাগতে গেলো। এখন এই শীতের ভিতরে গোসল করা লাগবে এটা কি মানা যায়?
পিয়াসা বেগম কিচেনের কাজ শেষ করে ড্রয়িংরুমে এসে শাফিনের এই অবস্থা দেখে বললো একি বাবা তোমার এই অবস্থা কেনো?
শাফিন একবার উপরে তাকিয়ে পিয়াসা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো তোমার শাঁকচুন্নি মেয়ে ছাড়া এই কাজ কে করবে?
পিয়াসা বেগম কপালে হাত রেখে বললো দেখো মেয়ে কান্ড এই মেয়েকে নিয়ে আর আমি পারি না। প্রীতি আর ইয়ানা গিয়েছিলো আজ রান্না করতে। রান্না করে দুজন মিলে এমন বাচ্চামো করলো। প্রীতিকে পড়ে দেখে নিবো তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও বাবা।
এতক্ষণ শাফিন বুঝলো প্রীতিদের এই অবস্থার মানে। দুজনের বাচ্চামোর কথা শুনে হেঁসে ফেললো তারপর পিয়াসা বেগমকে বলে ওদের বাসার চলে গেলো।
এদিকে ইয়ানা একবারে শাওয়ার নিয়ে বের হলো। এই শীতের রাতে শাওয়ার নিয়ে শীতে কাপাকাপি অবস্থা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে শীতে কাঁপতে কাঁপতে চুল ভালো করে মুছতে লাগলো। লম্বা চুল মুছতে হিমশিম খাচ্ছে।
পারফি বেলকনিতে ছিলো, রুমে ইয়ানার অস্তিত্ব টের পেতে বেলকনি থেকে রুমে আসতে আয়নার দিকে থাকাতে থমকে গেলো। সদ্য শাওয়ার নেওয়া ইয়ানাকে স্নিগ্ধ ফুলের চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে না। ভেজা চুল কোমড় ছাড়িয়ে কিছুটা নিচে পড়ে। এই লম্বা চুল যেনো সৌন্দর্য টা আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গালদুটো, নাকের ডগা লালা হয়ে আছে। স্নিগ্ধ ফুলের এই স্নিগ্ধ রুপের মাঝে পারফি নিজেকে হারিয়ে ফেলছে বারংবার। তখন পারফির চোখ পড়লো ইয়ানার গোলাপি অধরের দিকে, গোলাপি অধর জোড়া মৃদু কাঁপছে। যা দেখে পারফি শুকনো ঢোল গিললো।
ইয়না তোয়ালা দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার দিকে চোখ পড়তে হাতজোড় থেমে গেলো। আয়নার ভিতরে পারফির অবয়টা স্পষ্ট ফুটে উঠলো। নীলমনির সেই ধারালো চাওনি ওর দিকেই সীমাবদ্ধ। এই চাওনিতে বুকের ভিতর ধুকপুকনি বাঁধিয়ে দিলো সাথে পুরো শরীর মৃদু কম্পন অনুভব করলো।
ইয়ানাকে হঠাৎ এমন স্টাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘোর থেকে বের হলো পারফি তখন চোখ পড়লো ইয়ানার হাতের পাশে কিছুটা জায়গা লালচে হয়ে আছে। পারফি সেটা দেখে ইয়ানার সামনে যেয়ে কোনো কথা না বলে ইয়ানার হাত ধরে সামনে এনে ভালো করে দেখতে দেখতে বললো হাতে কি হয়েছে?
পারফির কথায় ইয়ানা চমকে হাত সরিয়ে নিতে চাইলে পারফি শক্ত করে হাত ধরে জানতে চাইলো হাতের এই আঘাত লেগেছে কিভাবে।
ইয়ানার মনে পড়লো তখন এর কথা যখন প্রীতি আর ও রান্না করছিলো তখন ঢাকনা ওঠাতে যেয়ে কড়াইয়ের পাশে হাত লেগে যায়। এখন এ খবর পিয়াসা বেগমের কানে গেলে কপালে শনি আছে তাই হাতে জ্বলন অনুভব করতেও মুখ বুজে সয়ে নিলো। প্রীতির থেকেও বিষয়টা লুকিয়ে গেছে কারণ প্রীতি দেখলে সবাইকে বলে দিতো। কিন্তু পারফির কাছে এভাবে ধরা পড়ে যাবে বুঝতে পারে নি। এখন কি বলবে তাই খুঁজতে লাগলো।
ইয়ানাকে কোনো কথা বলতে না দেখে পারফি ফের বললো কি হলো বলছো না কেনো কি হয়েছে।
ইয়ানা আমতা আমতা করে বললো আসলে রান্না করতে যেয়ে একটু লেগে গেছে। সমস্যা নেই সামন্য লেগেছে সেরে যাবে।
পারফি গম্ভীর কন্ঠে বললো যেটা পারো না সেটা কেনো করতে যাও? এখন আঘাতটা কে পেলো?
ইয়ানা মাথা নিচু করে বললো বেশি লাগে নি সামান্য লেগেছে।
সামান্য লেগেছে নাকি কি লেগেছে তা দেখতেই পারছি বলতে বলতে পারফি ড্রয়ার খুলে মলম এনে হাতে লাগিয়ে দিতে লাগলো।
মলমটা হাতে লাগতে জ্বলে উঠলো যার দরুন না চাইতেও ইয়ানার মুখ থেকে শব্দ বের হয়ে গেলো। ব্যথায় চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো।
পারফি একবার ইয়ানার ব্যথাতুর মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে হাতে ফু দিতে লাগলো।
হাতের জ্বলন কিছুটা কম অনুভব করতে ইয়ানা আস্তে আস্তে চোখ খুলতেই পারফির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো কারণ পারফি এতক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
ইয়ানা নিজেকে সামলে পারফির উদ্দেশ্যে বললো একটা কথা বলি?
পারফি গম্ভীর কন্ঠে বললো হুম।
আ..আসলে হাতের কথাটা মাকে প্লিজ বলবেন না। এটা জানতে পারলে বকা দিবে কারণ তখন জোর করে আমি আর প্রীতি রান্না করতে গিয়েছিলাম। প্লিজ কিছু বলবেন না, সত্যি আমার বেশি লাগে নি সামান্য লেগেছে।
এখন কেনো বলতে না করছো? এখন আম্মুকে বলে তোমাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিৎ পাকনামো করে রান্না করতে যাওয়ার জন্য।
ইয়ানা ইনোসেন্ট ফেস করে ঠোঁট উল্টে বললো প্লিজ….
এতক্ষণ পারফির ইয়ানার প্রতি রাগ লাগছিলো খুব পাকনামো করে এভাবে আঘাত পাওয়ার জন্য কিন্তু এখন ইয়ানার এমন ঠোঁট উল্টে আবদার করতে দেখে রাগ গলে পানি হয়ে গেলো। নিজের রাগ একপাশে ফেলে দিয়ে ইয়ানার নাক টেনে দিয়ে বললো এবারের মতো ছেড়ে দিলাম বাট নেক্সট টাইম এমন কোনো কাজ যাতে করতে না দেখি যেটায় নিজে আঘাত পাও।
পারফিকে ম্যানেজ করতে পেরে ইয়ানা খুব খুশি হলো সাথে মুগ্ধ ও হলো পারফির এই কেয়ার গুলোতে।
—————————————–
রাতে সবাই খাবার খেতে বসবে তখন পিয়াসা বেগম প্রীতিকে বললো যা শাফিনদের ডেকে নিয়ে আয়। আর শাফিনকে সরি বলবি তখন ওর ওই অবস্থা করার জন্য। ছেলেটা কাজ করে এতো রাতে বাসায় এসেছে আর তুই ছেলেটার সাথে কি করলি? এখন যেয়ে সরি বলবি আর নাহলে মার একটাও নিচে পড়বে না।
প্রীতি ঠোঁট উল্টে যেতে যেতে বিরবির করে বললো আমার দোষ নাকি খাটাশটা কেনো আমার সাথে লাগতে এসেছে?
#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰