#তুমি_আমার_ব্যাকুলতা
#পর্ব-০২
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
চোখে রোদ চশমা, মুখে মাস্ক পড়া যুবক কে খুবই পরিচিত বলে মনে হলো মানহার কাছে। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না কোথায় দেখেছিল? যদি সম্পুর্ন মুখ খোলা থাকতো তাহলে নিমিষেই চেনা যেত। যাই হোক মানহা আর সময় নষ্ট করতে চাইছে না। তাকে এখান থেকে পালাতে হবে মনে পড়তেই দুই হাতে বোরকা একটু উঁচু করে ধরে, যেন প্রথমবারের মতো পরে না যায়।
তারপর যুবক ছেলেটিকে পাশ কাটিয়ে দৌড় দিতে নিলে পুরুষালি একটা শক্ত হাত ধরে নেয় তার হাত! মানহা ছুটতে চাইলে আরো শক্ত করে চেপে ধরে তার হাত। তারপর টানতে টানতে ঐ বাড়িটার দিকে নেওয়া শুরু করে। তখন মানহা চিৎকার করে বলে,
–” ছারুন আমাকে। আমাকে যেতে দিন? কেন এমন করছেন? আমার সাথে। কি দোষ করেছি আমি? যার জন্য বলা নাই কওয়া নাই এভাবে ধরে বেঁধে রাখছেন। আপনাদের পুলি*শে দিব আমি! ছারেন আমাকে।
.
ছেলেটি বরাবরই নিশ্চুপ, নিরবতা পালন করে চলেছে। যেন উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না।
.
.
আবারো মানহার হাত পা বেঁধে চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। মেয়ে দুটোকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন দ্বিতীয় বার একই ভুল না হয়। আজকে যদি সে সময় মতো না আসতো তাহলে সব পরিকল্পনা বৃথা যেত। মেয়ে দুটো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলে আর এমন হবে না।
দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকায় মানহা। তখনকার সেই ছেলেটি এসেছে। মানহা ক্লান্ত, তাই নিস্তেজ গলায় বলে,
–” কেন আটকে রেখেছেন আমাকে? যেতে দিন। ধীর পায়ে হেঁটে আসে ছেলেটা। এসে একটা পেপার এগিয়ে দিয়ে বলে,
–” এখানে সাইন করে দিন তাহলেই ছেড়ে দেওয়া হবে আপনাকে!
–“কিসের পেপার এটা?
মানহার জবাবে ছেলেটা বলে,
— “ডিবোর্স পেপার”!
মানহা অবিশ্বাসের গলায় বলল,
–” কার ডিবোর্স পেপার এটা?
ছেলেটি খুবই স্বাভাবিক গলায় বলল,
–” আপনার ডিবোর্স পেপার।
মানহা নিজের ক্লান্ত শরীরের কথা ভুলে গেল। রেগে মেজাজটা চড়া হয়ে উঠলো। বলল,
–” হেই হু আর ইউ? আপনার কথায় আমি আমার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দিব, ভাবলেন কিভাবে?
ছেলেটি গভীর এক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে, ধীর স্বরে বলল,
–” তাহলে এভাবেই ব*ন্দি হয়ে থাকবেন সারাজীবন।
আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে ঘটঘট পায়ে বেড়িয়ে যায় ছেলেটা। যাওয়ার সময় দরজা বন্ধ করতে ভুলে না। মানহা উদ্বিগ্ন মুখে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। ছেলেটি কি চায়? তার জীবনটাই যেন চেয়ে বসে আছে! সে যে তার প্রানের চেয়েও বেশি ভালোবাসে তার স্বামীকে। সেই স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বলছে! কেন করছে এমন নিষ্ঠুরতা? স্তব্ধ ঘরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে মানহা।
কেটে যায় আরো কিছুদিন। এর মাঝে মানহা নিজের শারীরিক কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে। কিন্তু মেয়ে দুটোকে বুঝতে দেয় না। চোখের পানি ফেলে সারাক্ষণ পরম করুণাময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কে ডাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার এর জন্য। কারণ সমস্ত অসম্ভব কে সম্ভব করার মালিক যে একমাত্র তিনিই, যিনি সৃষ্টি করেছেন এই দুনিয়া। দুনিয়ার ক্ষুদ্র হতে বৃহত্তর সমস্ত কিছু। তবে দুনিয়ার অসম্ভব কে তিনি কাদের জন্য সম্ভব করে দেন, বলতে পারেন? কোরআন বলছে_ “আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তৈরি করে দেন (বিপদ হতে) উত্তরণের পথ”। “আলহামদুলিল্লাহ ” আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কতোই না মহান।
মেয়ে দুটো মানহাকে অনেক বোঝায় ডিবোর্স পেপারে সাইন করে দেওয়ার জন্য। তাহলেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু মানহা নিজের সিদ্ধান্ত থেকে এক চুল পরিমান ও নড়ে না।
মাস পেরিয়ে যায়। সুন্দর মুখশ্রীটা শুকিয়ে আসে। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরে। কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছে জানে না সে। তবে মনে মনে এখনো বিশ্বাস করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যা করে আমাদের ভালোর জন্যই করেন।
.
.
শরীরে কিঞ্চিত ব্যাথা অনুভব করে শোয়া থেকে উঠে বসে মানহা। এতোক্ষণ বেঞ্চে শুয়ে ছিল সে, তাই শরীর ব্যথা অনুভব করে।
কিন্তু চোখ মেলে সামনে তাকাতে বিস্ফোরিত হয়ে যায়। এই জায়গাটা তার ভীষণ পরিচিত যে! না চেনার উপায় নেই একদম। সে কি স্বপ্ন দেখছে? একটু পরেই স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে সেকি আবার নিজেকে চার দেয়ালে বন্দী অবস্থায় দেখতে পাবে? নানা কথা ভাবতে ভাবতে নিজের পায়ে কিছু একটা পরায় কিঞ্চিত ব্যাথা অনুভব করে মুখ দিয়ে আহ্ শব্দ বের হয়ে আসে। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ক্রিকেট বল। বল টা হাতে নিতেই দুটো বাচ্চা ছেলে দৌড়ে এসে বলল,
–” সরি আন্টি আমরা ইচ্ছা করে ব্যাথা দেইনি আপনাকে।
মানহা যারপরনাই বিস্মিত হয়ে, চঞ্চল চোখ জোড়া এদিক ওদিক দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। খুশিতে চোখের পানি চলে আসে তার। সে স্বপ্ন দেখছে না।এটা বাস্তব! হাত থেকে বল টা ফেলে দিয়ে দৌড়ে চলে যায়। বাচ্চা দুটো আহাম্মক বনে গেল! কোথায় ভাবলো ওদের এখন ভীষণ বকে দিব। তা না এভাবে ছোটে চলল কেন? আজব মহিলা!
.
.
বিরতিহীন কলিং বেলের শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছিল, বিরক্ত হয়ে নাসিমা বেগম দরজা খোলার সাথে সাথে গা*লি দিতে উদ্যত হতে ছেলের বউ কে দেখে থেমে যায়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
–” এতোদিন পর কোথায় থেকে বের হয়ে এলে? নির্ল*জ্জ মেয়ে মানুষ কোথাকার।
আরো কিছু বলতে নিলে পেছন থেকে হাসান মাহবুব মানে মানহার স্বামী তার মা’কে থামিয়ে দিয়ে স্ত্রীর কাছে যায়। উদ্বিগ্ন মুখে বলে,
–” আমার সাথে রাগ করে কোথায় চলে গিয়েছিলে? সামান্য একটু রাগ অভিমানের জন্য এভাবে শাস্তি দিলে আমায়? কোথায় না কোথায় তোমাকে খুঁজে বেড়িয়েছি, তোমার বান্ধবী, আত্মীয়স্বজন কারো বাসায় খুজ নেওয়া বাকি রাখিনি। কেন করলে এরকম?
ছেলেকে থামিয়ে দিয়ে নাসিমা বেগম বলে,
–” এই মেয়ের ভাবভঙ্গি আগেই সুবিধার মনে হয়নি আমার। তুই এক্ষুনি ওর বাবা কে ডেকে এর একটা বিহিত করবি। না হয় আবার কখন আমাদের মুখে চুনকালি মাখাবে তার কোন ঠিক নেই!
মায়ের কথায় খানিকটা রেগে যায় হাসান। জ্বলে উঠে বলল,
–” তোমার জন্য আমি সেদিন মানহার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি মা! তাই আজকে তুমি আর কোন কথা বলো না আমাদের মাঝে। আমাদের ঝামেলা আমাদের কে মেটাতে দাও প্লিজ?
ছেলের রাগ দেখে ধমে যায় নাসিমা বেগম। আপাতত স্থান ত্যাগ করাই ভালো মনে করলেন। তারপর হাসান মানহা কে নিয়ে গিয়ে রুমের দরজা লাগায়। মানহার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, সে ছাড়া পেয়েছে ঐ দুষ্টু লোকের থেকে।
সামনে থাকা স্বামীকে ঝাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। হাসান তার প্রিয়তমার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে?
–” কাঁদছো কেন বলো আমাকে? এতোদিন আমাকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয়নি?
কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার হেঁচকি উঠে যায়। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না। হাসান বুঝতে পেরে আর কোন প্রশ্ন করে না। আলতো করে জড়িয়ে রাখে নিজের সাথে।
.
.
মানহার পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে চলে আসে। মেয়েকে দেখে আঁতকে উঠে রোজিনা ইসলাম। এই কয়েক দিনেই মেয়েটা কেমন শুকিয়ে গেছে। সবাই কৌতুহল মানহা এতোদিন কোথায় ছিল?
কি করেছে? তবে মেয়ের অবস্থা দেখে তা জানার জন্য চাপ দেয় না। মেয়েটা একটু সুস্থ হলে জানা যাবে।
মানহার বাবা জামাইকে অনুরোধ করে, তার মেয়েকে সাথে করে নিয়ে যেতে। সুস্থ হলে আবার আসবে, কয়েকটা দিন ওর মায়ের কাছে থাকলে ভালো লাগবে।
অনেক দিন পর স্ত্রী কে কাছে পেয়ে বাপের বাড়ি যেতে দিতে ইচ্ছা করে না হাসানের। কিন্তু স্ত্রীর শরীরের কথা ভেবে রাজি হয়। কিন্তু মনে মনে চায় সেও যেতে। কিন্তু তাকে কেউ একটিবার বলছে না যেতে। ভেবেছিল মানহা অন্তত বলবে কিন্তু সেও বলল না…..
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।