তুমি আমার ব্যাকুলতা পর্ব-০১

0
814

#তুমি_আমার_ব্যাকুলতা
#সূচনা_পর্ব
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

অন্ধকার রুমে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মানহা! হাত পা বেঁ*ধে রাখা হয়েছে তার। চোখ দুটো খোলা থাকলেও ঘুটঘুটে অন্ধকারের জন্য নিজের অবস্থান ঠাওর করতে পারছে না সে। ঠিক কতো সময় আগে তার সাথে এই ঘটনা ঘটেছে তাও বলতে পারবে না সে। এতটুকু মনে আছে,বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে একটা পার্ক আছে ওখানে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসেছিল মানহা। তখন পড়ন্ত বিকেল ছিল, যখন সে এসেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন আলোর রেখা নিভু হয়ে যাচ্ছিল তখন পার্ক জনশূন্য হতে শুরু হলো। মানহা ঠাঁয় বসেই ছিল ভেবেছিল কেউ একজন তার রাগ ভাঙিয়ে বাসায় নিয়ে যাবে। কারণ সে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে এখানে এসে বসেছিল।
তারপর যখন পুরো পার্ক জনশূন্য হয়ে গেল তখন, আবছা আলোর রেশ শুধু ছিল তখন ভয়ে শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে তার। আর তাই বেঞ্চ থেকে উঠে সামনের দিকে পা বাড়ায়। তখনি কেউ মুখ চেপে ধরে। তারপরের আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরে তখন এই অন্ধকারে আবিষ্কার করে নিজেকে।
.
.
ভাবনার মাঝে তীব্র আলোর প্রতিফলনে চোখ ঝল*সে যাওয়ার উপক্রম হয় মানহার। ঘন্টা খানেক অন্ধকারে থাকার ফলে এরকম হয়। প্রায় দুই মিনিট পর চোখের পাতা ঝাপটে ঠিক করে তাকাতে পারে।
ওয়েস্টান ড্রেস পরিহিত দুজন মেয়ে তাকে ধরে চেয়ারে বসায়। তারপর একটা মেয়ে তার মুখের কাপড় সরিয়ে পানির গ্লাস সামনে ধরে। মানহা ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের পানি শেষ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়। যেন বহুদিন সে তৃষ্ণার্ত হয়ে ছিল।
তারপর জিজ্ঞাসা করে,
–” আমাকে এভাবে ব*ন্দি করে রাখা হয়েছে কেন? আমার পরিবার আমার জন্য দুশ্চিন্তা করছে নিশ্চয়ই। আমাকে যেতে দিন?

মানহার কথার জবাব না দিয়ে পুনরায় তার মুখ বেঁ*ধে দেওয়া হয়! ছটফট করেও ঠেকাতে পারে না। আবারো তাকে একা রুমে রেখে মেয়ে দুটো চলে যায়। মানহার চোখ দুটো পানিতে ঝাপসা হয়ে আসে। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। বুঝতে পারছে না কি অপরাধ করেছে সে? যার জন্য এমন শাস্তি পেতে হচ্ছে তাকে? মাথার মধ্যে হাজারো কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে তার।

রাতের বেলা আবারো ঐ দুজন মেয়ে খাবার নিয়ে আসে। মানহা মুখের বাঁধন মুক্ত পেয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। কিন্তু মেয়ে দুজন এর প্রতিউত্তরে হু হা কিছুই বলছে না। যেন তারা কানেই শুনতে পাচ্ছে না! দুটো আজব প্রাণী বলে মনে হলো মানহার কাছে তারা।
একটা মেয়ে যখন মুখের সামনে খাবার ধরে তখন মুখ ফিরিয়ে নেয় মানহা। অর্থাৎ সে খাবে না। বেশ কয়েক বার খেতে বলার পর ও যখন খাচ্ছে না তখন তারা খাবার নিয়ে চলে গেল।
এমনিতেই রাগ করে বাসায় না খেয়ে ছিল তারপর থেকে না খাওয়া। তাই ক্ষীদায় পেট জ্বলছে তবুও বেঁধে রাখার কারণে খাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে যেকারো ই খেতে ইচ্ছা করবে না স্বাভাবিক।
.
.
সকাল বেলা,
জানালার কাঁচ বেধ করে সূর্যের আলোয় ঘুম ভাঙ্গে মানহার। রাতে ছটফট করতে করতে ভোরের দিকে চোখটা লেগে আসছিল। চারিদিকে এক পলক তাকিয়ে দেখলো রুমটা খুব সাজানো গোছানো। রাতে খেয়াল করেনি সে। খাটের সাথে একটা চেয়ারে বেঁ*ধে রাখা হয়েছে তাকে। পিটপিট চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলো গাছপালা কিন্তু কোন বাড়িঘর দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে তাকে কোন গ্রামে আনা হয়েছে!

কিছুক্ষণ পর মেয়ে দুটো নাস্তা নিয়ে এসে সব বাঁধন খুলে দিল! রুমের সাথে এটাচ বাথরুমে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিতে বলে রুমের দরজা বাহিরে থেকে বন্ধ করে চলে গেল তারা।
বাঁধন মুক্ত হয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন মানহা। আপাতত হাঁটা চলা তো করতে পারবে। ওয়াশরুমের কথা স্মরণ হতে ঢুকে পড়লো।
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। খেতে ইচ্ছা করছে না কিন্তু পেটের মুচড় দেওয়ার কথা স্মরণ হতে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় খাবারের দিকে। কিছুক্ষণ পায়চারি করে খাওয়া শুরু করে। বাবা বলতো খাবারের উপর যে রাগ করে সে প্রথম স্তরের বোকা। এই মুহূর্তে বাবার কথা মনে করে খেয়ে নেয় মানহা। কারণ এখান থেকে বের হতে হলেও তার শক্তি প্রয়োজন যা খাবার না খেলে কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
.
.
দ্বিতীয় দিন,
তাকে দিয়ে জোর করে কিছু লেখানো হয়। শূন্য স্থানের মতো কিছু যায়গা ফাঁকা রেখে লিখতে দেওয়া হয়! মানহা প্রথমে লিখতে না চাইলে তাকে ভ*য় দেখিয়ে বাধ্য করা হয়। ফলে মানহা লিখে দেয়। কিন্তু ঠিক কি লিখছে তা বুঝতে পারে না সে!
তৃতীয় দিন তার জন্য কিছু কাপড় চোপড় নিয়ে আসে মেয়ে দুটো। বাসা থেকে নরমাল সেলোয়ার কামিজ আর উপরে বোরকা পরে বের হয়েছিল, সেই পোশাকে আজকে তিনদিন। কিন্তু সেই দিকে খেয়াল ছিল না তার। কাপড় গুলো দেখে মনে পড়লো। যাই হোক তবে জেদ ধরে কাপড় চেঞ্জ করে না সে। এই কাপড়েই আরো দুই দিন পার করে। তার কোন কিছুতে মেয়ে দুটো জোর করে না। শুধু বন্দি করে রেখেছে।

মানহা সবসময় ই মেয়ে দুটো কে জিজ্ঞেস করে কেন তাকে এভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে? কিন্তু তারা কিছু বলে না। একদিন দুপুর বেলা একটা মেয়ে খাবার নিয়ে আসলে মানহা আবারো জিজ্ঞাসা করল,
–” আমাকে আর কতোদিন এভাবে বন্দি করে রাখবেন? আমি কি সারাজীবন এভাবে বন্দি হয়ে জীবন কাটাবো? কেন এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন আমাকে? আমার পরিবার ছাড়া এভাবে কাটাতে কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।

বলতে বলতে কেঁদে দেয় মানহা।
মানহার কান্না দেখে মেয়েটার বোধহয় মায়া হলো। তাই চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
–” আমি নিরুপায় বোন! আমাকে মাফ করবেন। আপনাকে কেন আটকে রাখা হয়েছে আমি নিজেও জানি না! তবে খুব শীঘ্রই স্যার দেখা করবেন আপনার সাথে। তখন স্যারের কাছ থেকে জেনে নিবেন।

মানহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
–” স্যার কে?
–” যার ইচ্ছায় আপনি এখানে সে!
–” কে সে?

মেয়েটি আর কিছু বলল না রুমের দরজা লক করে চলে গেল।
.
.
মানহা প্রতিনিয়ত পালানোর ফন্দি আঁটে, কিন্তু কিছুতেই সুযোগ পায় না। পঞ্চম দিন দুপুর বেলা একটা বুদ্ধি মাথায় এলো। যে সময় মেয়ে দুটো খাবার নিয়ে আসে ঐ সময় দরজার কোনায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল! যেই মেয়ে দুটো দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো তখন মানহা দরজার আড়াল থেকে বের হয়ে মেয়ে দুটো কে রুমে রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিল! চারিদিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে মেইন গেইট খুঁজে বের করে, বাড়িটা থেকে বের হয়ে আসে বাহিরে!

মানহা ঠিকই ভেবেছিল এটা একটা গ্রাম। আশেপাশে ফসলের জমি দেখা যাচ্ছে। আর সময় নষ্ট না করে বাড়ি থেকে বের হয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে দৌড়ে যেতে নিলে কারো সাথে লেগে পরে যায় মানহা। কিন্তু এই মুহূর্তে ব্যাথার কথা না ভেবে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়াতেই সামনে থাকা লম্বা দেহের, সুদর্শন যুবককে দেখে দু-কদম পিছিয়ে যায় সে…

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে