#তুমি_আমার_প্রেয়সী
পর্ব ৬(শেষ পর্ব)
#মৌমিতা_শবনাম
–” স্যার হিমিকে কিডন্যাপ হয়েছে খবরটা শুনে আমার সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে। ”
রাজ মুখটা দুঃখী দুঃখী করে বলল। রাজের কথায় অবাক হওয়ার ভান করে বলল,–” কি বলো হিমি আবার কখন কিডন্যাপ হলো?”
রাজ চমকে গেল। অতি চালাকি করতে গিয়ে ধরা না খেয়ে যায়। আর অভিক এতো শান্তই বা কি করে? রাজকে ভাবাচ্ছে। রাজ আমতা আমতা করে বলল,–” খবরে দেখাচ্ছে যে?”
অভিক এবার হালকা হাসলো। সোফায় হেলান দিয়ে আরাম করে বসলো। রাজ কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। মনে মনে তার ভীষণ ভয় লাগছে। যায় হোক নাহ কেন মেয়রের বউকে কিডন্যাপ করেছে। হ্যা রাজই কিডন্যাপ করেছে। অভিক হাসি বজায় রেখে বলে,–” আরেহ নাহ তুমি ভুল খবর শুনেছো আর মিডিয়ার লোক জানই তো ছোট ঘটনাকে অনেক বড় করে সাজায়। হিমি তো বাসায় আছে।”
রাজের সন্দেহ হলো। হিমিকে কি পেয়ে গেছে অভিক। রাজ ওয়াশরুমে যাওয়ার নাম করে অভিকের সামনে থেকে চলে গেল। রাজের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মুচকি হাসলে অভিক। রাজ আড়ালে গিয়ে তার লোকদের মধ্যে একজনকে কল দিল
–” জ্বী স্যার বলেন?”
রাজ চিন্তিত গলায় বলল, –” মেয়েটা কোথায়?”
লোকটা বলল,–” এখানেই আছে অজ্ঞান। ”
রাজ শস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। চোখটা বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে– ” চারদিকে নজর রেখো আর মেয়েটার উপরও।”
রাজ ফোন কেটে দিল। এসে দেখে অভিক সেই আগের স্টাইলে বসে আছে তবে এবার বাবার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছে অভিক। রাজ ভয় পেয়ে বলল,–” স্যার কি করছেন? ”
অভিক তেজি গলায় বলল,–” হিমি কোথায়? ”
রাজ বলল,–” হিমি কোথায় আমি কি করে জানবো? আপনার স্ত্রী আপনি জানবেন ”
অভিক ঘাড় খাত করে বাকা হেসে বলে,–” একদম নাটক করবি নাহ তুই এই মাত্র ফোন দিয়ে হিমি আছে কিনা তার খবর নিয়েছিস।”
রাজও এবার জোরে জোরে হাসা শুরু করলো। অভিক আসাদুল্লাহ এর মাথায় বন্দুকটা আরো জোরে চেপে ধরলো। আসাদুল্লাহ ভয়ে বলতে লাগলেন,–” আমাকে ছেড়ে দেন আমি আপনার বাবার সমান।”
রাজ হাসি থামিয়ে অভিকের দিকে তাকিয়ে বলে,–” মিস্টার অভিক আপনি আপনার স্ত্রী এর আশা ছেড়ে দিন আমার বাবার কিছু হলে আপনার স্ত্রীও যাবে।”
এবার অভিক বন্দুকটা সড়িয়ে নিল আসাদুল্লাহ এর মাথা থেকে। আসাদুল্লাহ ছাড়া পেয়ে সাথে সাথে দূরে গিয়ে দাড়ান। রাজ বাকা হাসলো। অভিক রাজের দিকে এক ভ্রু উচু করে বলে, –” পুচকে ছানা হয়ে বাঘের সাথে খেলতে এসেছো!”
রাজ ভ্রু কুচকে বলল, –” মানে? ”
অভিক এবার আয়েশি ভঙ্গিতে বসে ঘাড় খাত করে রাজের দিকে তাকিয়ে বলে– ” হিমি এখন আমার কাছে। ”
রাজ ভ্রু কুচকায় নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে ঐ লোকটাকে কল করে। কিন্তু লোকটা কল উঠায় নাহ। রাজ আবার কল করে কিন্তু উঠায় নাহ কেউই। অভিক চোখ বন্ধ করে বলে,–” লাভ নেয় কল দিয়ে সবাই মাইর খেয়ে বেহুশ হয়ে গেছে। ”
অভিক নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে হাফিজ আলমকে কল দেয়। হাফিজ আলম সাথে সাথে কল রিসিভ করে চিন্তিত গলায় বলল, –” হ্যা বাবা বলো হিমির কোনো খোঁজ পেয়েছো?”
অভিক হেসে বলল,–” আরেহ ঐসব বাদ দিন আপনি আপনার বন্ধুর বাসায় চলে আসেন। আজকে আমাদের দাওয়াত এখানে দেরি নাহ করে জলদি চলে আসুন।”
হাফিজ আলমকে আর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দেয় অভিক। হাফিজ আলম বিরক্ত হলো এদিকে তার মেয়েকে খোজে পাওয়া যাচ্ছে নাহ আর ঐদিকে তার জামাই দাওয়াত খেতে গেছে তাও তার বন্ধুর বাসায়। হাফিজ আলম না চাইতেও আসাদুল্লাহ এর বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
————–
হিমি, অভিক আর হাফিজ আলম বসে আছে আসাদুল্লাহ এর বাড়িতে। রাজ আর আসাদুল্লাহ মাথা নীচু করে দাড়িয়ে আছে। অভিক ওদের দিকে ঝুকে বসে বলতে লাগলো, –” তোরা হয়তো ভাবছিস আমি কি করে জানলাম হিমি কোথায়? ”
রাজ কিছু বলে না ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। অভিক আবারও বলতে শুরু করলো, –” আমি যখন খবরে বলতে শুনলাম যে মেয়রের স্ত্রী কি তার প্রমিকের সাথে আবারও পালিয়েছে নাকি সত্যি কিডন্যাপ হয়েছে। তখনই নাহ আমার মনে তোর কথাটায় আসে কারণ তুই ছাড়া আর আমার ফ্যামিলি ছাড়া আর কেউ জানতো নাহ যে হিমি একবার পালানোর চেষ্টা করছিল আর তার আদৌ কোন প্রমিক ছিল কি না। আমার ফ্যামিলির কেউ জানাবে নাহ জানালে তুই জানিয়েছিস। যাক এই জায়গায় একটা বোকামি করলি আর আরেকটা বোকামি করলি আমি যখন তোকে কনফিউজড করছিলাম তখন তুই গিয়ে তোর লোকদের ফোন দিলি জানতে হিমি ঐখানে আছে কি নাহ। ব্যস তোর ঐ নাম্বারের লোকেশন বের করতে ইজি হয়ে গেল। আর পেয়ে গেলাম হিমিকে।”
রাজ আর আসাদুল্লাহ একে অপরের মুখের দিকে তাকালো তারপর দুজনই এসে তার পয়ে ধরে ক্ষমা চাইতে লাগলো। অভিক বাকা হসলে আবারে ঘাড় খাত করে বলে, –” তোদের এই অভিনয় বন্ধ কর।”
অভিক ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে ওদের। হিমি আর হাফিজ আলমকে নিয়ে চলে গেল।
———
শিলার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল অভিক। রাগে ফুঁসছে সে। নয়না হোসেন শিলাকে জড়িয়ে ধরে বলে– ” কি হলো ওকে মারলি কেন?”
অভিক টান দিয়ে শিলাকে নয়না হোসেনের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবারও থাপ্পড় মেরে বলে,–” তোর সাহস কত বড় তুই আমরা কখন বাহিরে ঘুরতে যাবো তার খবর অন্য কাউকে দিস আর আমাক ফোন দিয়ে অন্যদিকে মনযোগ নিয়ে যাস যাতে হিমিকে কিডন্যাপ করতে পারে ওরা।”
শিলা অভিকের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,–” তো আর কি করবো আমি বলো! তোমাকে ছোট থেকে ভালোবাসি আর তুমি আমাকে বোন ছাড়া আর কিছু ভাবো নাহ। তার মাঝে হঠাৎ এই মেয়ে আমাদের মাঝে চলে আসলো ওকে সহ্য হচ্ছিল। ”
অভিকের জন্য রাগটা আরো বেড়ে গেল এবার একসাথে দুইটা থাপ্পড় মারলো। তাও রাগ কমে নি তার। আরো কয়েকটা থাপ্পড় দিতে পারলে সে শান্তি পেত। নয়না হোসেন এসে অভিককে থামিয়ে বলে, –” মেয়েটা তার ভালোবাসায় তো চেয়েছে তোর কাছে ভুল তো কিছু করে নি।”
তখন সেখানে তিতাস হোসেন বললেন–” অভিক এরা দুজনকেই বের করে দে। তোর মা শিলাকে এই বুদ্ধি দিয়েছে। ”
অভিক অবাক চোখে তাকালো তার মায়ের দিকে। চোখে পানি জমা হয়ে গেছে তার। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার মা তার খুশিটাকে কেড়ে নিতে চাচ্ছিল। নয়না হোসেন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। অভিক নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,–” বেরিয়ে যাও তোমরা দুজন এই মুহূর্তে। ”
নয়না হোসেন অসহায় চোখে তাকালো ছেলের দিকে। হিমি তুম মেরে বসে আছে তার এখান থেকে এখানো মেডেসিনের প্রভাব খাটে নি। হাফিজ আলম অভিককে বাধা দিতে নিল তিতাস হোসেন উনাকে ঐখান থেকে নিয়ে যায়। নয়না হোসেন হাজার অনুরোধ করা সত্বেও অভিকের মন গলাতে পারে না। অভিক ওদের বের করেই ছাড়লো।
———
আজকে আবারও ধুমধাম করে হিমি আর অভিকের বিয়ে হয়েছে। হিমি এখন বাসর ঘরে বসে আছে। ঐ ঘটনার ১৬ দিন হয়ে গেছে ঐদিনের পর থেকে রাজ আর আসাদুল্লাহ এর খবর কেউ পায়নি কোথায় গেছে কে জানে। তবে হিমির মনে হয় অভিকই ওদের ঘোম করেছে কিন্তু সে এই ব্যাপারে অভিককে কিছু জিজ্ঞেস করে নাহ। সেদিনের পর নয়না হোসেন ফিরে আসলেও শিলা এই বাড়িতে আসার কথা বলে নি বা ওদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। এসব ভাবতে ভাবতে দরজা খুলার শব্দ কানে আসে তার। হিমি বুঝতে পারে অভিক এসেছে।
অভিক এসে তার প্রেয়সীর পাশে বসে বলে,–” অবশেষে তুমি আমার প্রেয়সী হয়ে গেলে।”
হিমি ছোট করে উত্তর দিল, –” হুম। ”
অভিক চোখ ছোট ছোট করে বলে, –” এতো বড় ঘোমটা দিয়েছো কেন?”
হিমি কিছু বলে না। অভিক ঘোমটা টা সড়িয়ে থ হয়ে যায়। তার বউকে তো অসাধারণ সুন্দর লাগছে। হিমি লজ্জা পায়। হিমির লজ্জামাখা মুখ দেখে অভিক মুচকি হেসে তার প্রেয়সীর কপালে চুমু খায়।
সমাপ্ত