#তুমি_আমার_প্রেয়সী
পর্ব ৫
#মৌমিতা_শবনাম
সোফায় বসে ফোন টিপছিল হিমি। তখন হাফিজ আলম এসে পিছন থেকে মেয়ের কাঁধে হাত রাখে। হাফিজ আলমকে অভিকই নিয়ে এসেছে। হাফিজ আলম কে হিমি জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরে নি। সে ধরবে নাহ তাকে জড়িয়ে না কথা বলবো। ও ভুল করেছে মানছে তারপর অনেকবার ক্ষমাও চেয়েছে। এখানে আসার পর কতবার তাকে ফোন দিয়েছে কিন্তু হাফিজ আলম ফোন তুলে নি। হাফিজ আলম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে– ” কেমন আছিস মা?”
হিমি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলল,–” আমি কারো মা বা মেয়ে নই যদি হতাম তাহলে এতোদিন কথা না বলে থাকতে পারতো নাহ হয় কেউ।”
হাফিজ আলম হাসে। মেয়ের অনেক অভিমান হয়েছে বুঝতে পারে। অভিক পিছনে দাড়িয়ে মেয়ে আর বাবার মান অভিমান দেখছে। হাফিজ আলম বললেন,–” আচ্ছা। আন্টি ভালো আছেন?”
হিমি মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে হেসে দিল। হাফিজ আলম ও হাসলেন। হিমি উঠে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো হাফিজ আলম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। অনেক হয়েছে আর কষ্ট দিবে নাহ। এতোদিন ইচ্ছে করেই ফোন তুলে নি হাফিজ আলম। নিজের মেয়ের প্রতি তীব্র অভিমানে। অনেক হয়েছে শাস্তি আর দিবে নাহ।
———————-
আসাদুল্লাহ গম্ভীর মুখ করে বসে আছেন। তার জিদ যেভাবেই হোক হিমিকে তার ঘরের বউ বানাতে হবে। রাজ তার বাবার দিকে এক নজর তাকিয়ে কিছু একটা ভাবে। রাজ আচমকা বলে ওঠে,–” বাবা আমার একটা প্ল্যান আছে। ”
আসাদুল্লাহ আগ্রহী হয়ে বললেন, –” কি প্ল্যান?”
রাজ বলল,–” হিমির কাছে প্রথম গিয়ে ক্ষমা চাইবো। ও আমার প্রতি অনেক দুর্বল ক্ষমা করে দিবে। ”
রাজের কথার মাঝেই আসাদুল্লাহ বলেন, –” আর যদি না করে?”
রাজ বাবার দিকে তাকিয়ে বলে– ” আমাকে পুরোটা বলতে দাও।”
আসাদুল্লাহ নিজেকে থামিয়ে বললেন, –” রাগছিস কেন? আচ্ছা বল।”
রাজ একবার বাবার দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগলো,–” যদি ক্ষমা নাহ করে তাহলে কিডন্যাপ করবো কয়েকদিন লুকিয়ে রাখবো তারপর সব শান্ত হয়ে গেলে ওকে বিয়ে করে তোমার বাড়ির বউ করে আনবো।”
আসাদুল্লাহ এর যেন প্ল্যানটা পছন্দ হলো। তিনি রাজি হয়ে গেলেন এমন কি কোথায় লুকিয়ে রাখতে হবে তাও বলে দিলেন।
———————
হিমির অভিকের প্রতি দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। অভিকের আচরণ, তার প্রতি যত্নশীল হিমিকে অভিকের প্রতি দুর্বল করে দিচ্ছে। অভিক ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে রুমে ঢুকে। রুমে এসে দেখে হিমি ঘুমিয়ে আছে। অভিক যায় হিমির কাছে ঘুমন্ত হিমিকে যেন অসাধারণ লাগছে তার কাছে। হিমির কপালে ও ঠোঁটে চুমু খায় অভিক হিমি কেপে ওঠে। পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে অভিক। হিমি সাথে সাথে ওঠে বসে জিজ্ঞেস করে, –” কখন আসলেন।”
অভিক ক্লান্ত শরীর হিমির ওপর হেলিয়ে দিয়ে বলে– ” এই তো কিছুক্ষণ হলো।”
হিমি অভিককে টেলে বলল,–” উঠুন খাবার নিয়ে আসি আপনার জন্য। আপনি ফ্রেশ হন গিয়ে। ”
অভিক উঠলো নাহ। হিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে– ” একটু থাকি।”
হিমি আর কিছু বলে না। অভিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। সে যে ধীরে ধীরে অভিককে ভালোবাসতে শুরু করেছে তা বেশ বুঝতে পারছে সে। হিমির চিন্তা ভাবনার আচমকা অভিক বলে ওঠলো,–” ভালোবাসো আমায়? আমাকে কি তোমার করে নিবে।”
হিমি এই প্রশ্নের জবাব দেয় না। বরং কথা ঘুরিয়ে বলে, –” কাল ঘুরতে নিয়ে যাবেন? ”
অভিক কিছু বলল না ওঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল। তার মন খারাপ হয়ে গেল। সে ভেবেছিল হিমি বলবে যে সে তাকে ভালোবাসে এই কয়দিনে তার প্রতি এক অন্যরকম অনুভূতি জন্ম হয়েছে। হয়তো হিমি তাকে ভালোবাসে নাহ জোর করে কখনো ভালোবাসা হয় নাহ। হিমিকে তার মুক্ত করে দেওয়া উচিত।
অভিক চলে যেতেই হিমি ঠোঁট মেলিয়ে হাসলো। বেচারা ভাবছে হয়তো হিমি তাকে ভালোবাসে নাহ।
—————
সকাল ৭ টা থেকে পার্কে বসে আছে রাজ। সে গোপনে জানতে পেরেছে আজ অভিক আর হিমি এই পার্কে আসবে। রাক বিরক্তি গলায় বলে, –” ধ্যাাত এখনও আসছে না কেন?”
রাজের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয় হিমি আর অভিক। হিমি অভিককে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না। তখন হুট করে অভিকের ফোন বেজে ওঠে সে অন্যদিকে চলে যায়। এটারই সুযোগে ছিল রাজ
রাজ এসে হিমির সামনে দাঁড়ায়। হিমি রাজকে দেখে চমকে যায়। মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আশেপাশে তাকিয়ে রাজ বলল,–“হিমি আমায় ক্ষমা করে দেও।”
হিমি হেসে বলল, –” আপনি ক্ষমা কেন চাইছেন? ”
রাজ বলল,–” তোমার কোন রাগ নেই আমার প্রতি।”
হিমি অবাক হওয়ার ভান করে বলে, –” আপনার উপর আমার কেন রাগ থাকবে? কে আপনি? আর সরুন এখান থেকে আমার স্বামী চলে আসবে এখন।”
রাজ মাথা নীচু করে চলে আসে সেখান থেকে আজ তার ভুলের জন্যই হিমি তাকে ভালোবাসে নাহ। অভিক কথা বলা শেষ করে এসে দেখে হিমি নেই সেখানে। অভিক চারদিকে পাগলের মতো খুঁজে কিন্তু হিমিকে কোথাও পায় নাহ। কোথায় গেল হিমি কোথায় পাবে তাকে।
————-
বাতাসের মতো দ্রুত ছড়িয়ে গেছে যে শহরের মেয়রের স্ত্রী কিডন্যাপ হয়ে গেছে। বিভিন্ন চ্যানেলে বিভিন্ন কথা বলছে। কোনো কোনো চ্যানেলে বলছে, –” তবে কি মেয়রের স্ত্রী তার পুরনো প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে। ”
এটা শুনে অভিক চমকায় আন্দাজ করতে পারে কে হিমিকে কিডন্যাপ করেছে। অভিক এতক্ষণ সোফায় বসে ভাবছিল হিমিকে কোথায় নিয়ে গেছে কারা কিডন্যাপ করেছে। তার পাশে শিলা বসে শান্তনার বাণী শোনাচ্ছিল আর টিভির খবর দেখাচ্ছিল অভিককে। অভিক বিরক্ত হলেও কিছু বলে নি।
আচমকা অভিক ওঠে দাড়ায়। শিলা চমকে অভিকের দিকে তাকায়। অভিক পিছনের গেইট দিয়ে বেরিয়ে যায় অভিকে শিলা অনেকবার ডাকে । সামনের গেইটে সকল মিডিয়ার লোক থাকায় তাকে পিছনের গেইট দিয়ে যেতে হলো।
—————–
রাজ আর আসাদুল্লাহ বসে ওয়াইন খাচ্ছিলো তখন তাদের কলিং বেল বেজে ওঠে। রাজ গিয়ে দরজা খুলে দেখে অভিক। অভিককে দেখে চমকে ওঠে রাজ। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,–” আরেহ স্যার আপনি ভিতরে আসুন। ”
আসাদুল্লাহ ওয়াইনের বোতল লুকিয়ে বলপন,–” কে এসেছে রে?”
রাজ একটু জোরে বলল,–” বাবা হাফিজ আলম আঙ্কেলের মেয়ের জামাই এই শহরের মেয়র।”
রাজ দরজা থেকে সড়ে দাড়ায়। অভিক পুরা স্টাইলের সাথে ভিতরে ঢুকে সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে। রাজ ভ্রু কুচকে তাকায় অভিকের দিকে। অভিকের মনে কি চলছে সেটা বুঝার চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ।
চলবে?