#তুমি_আমার_প্রেয়সী
পর্ব ৪
#মৌমিতা_শবনাম
শিলা একটু পর পর পানি খাচ্ছে কিন্তু ঝাল যেন তার কমছেই নাহ। হিমি তাকে দেখে হাসছে। ঝালে মুখ লাল হয়ে গেছে শিলার। কি হয়েছে বুঝতে পারছেন নাহ তো তাহলে চলুন দেখি কি হয়েছিল। কিছুক্ষণ আগে,
হিমি সোফায় বসে ফোন টিপছিল কোনো কাজ না থাকায়। তখন সেখানে শিলা এসে একটু দূরে বসে। হিমি একবার শিলার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে মনযোগ দেয়। শিলা আয়েশ করে বসে বলে,–” হিমি আমার জন্য চা করে নিয়ে আসো এক কাপ।”
হিমি এক ভ্রু উঁচু করে শিলার দিকে তাকায়। শিলা হিজের মতে বসে নখে নেইলপালিশ দিচ্ছে। হিমি বলল,–” কি বললে?”
শিলা নেইলপালিশ দেওয়া থামিয়ে বলে,–” বলেছি এক কাপ চা করে আনতে আমার জন্য।”
হিমি মাথা নাড়িয়ে বলল,–” উহু এর আগে কি বললে?”
শিলা স্বাভাবিক ভাবে বলল, –” কেন হিমি।”
হিমি বলল,–” আমি বয়সে এবং সম্পর্কে তোমার বড়।”
শিলা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,–” হো কেয়ার’স।”
হিমি জ্বালাময়ী হাসি দিয়ে চলে গেল। শিলা হালকা হেসে ফোন ঘাটতে শুরু করে। আহা সে হিমি জব্দ করছে ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। ”
হিমি ২০ মিনিট পর চা নিয়ে ফিরে আসে। রন্নার যত মশলা আছে সব দিয়ে দিছে চায়ে কালারের জন্য মরিচের গুঁড়ো অনেক বেশি দিয়েছে। শিলা চা নিয়ে কালার দেখে বলে,–” এমন কালার কেন?”
হিমি বলল,–” আরেহ এটা আমার স্পেশাল চা খেয়ে দেখো সেই মজা তোমার অভিক ভাইয়া তো এই চায়ের জন্য পাগল।”
শিলা বলল,–” কি অভিক এটা পছন্দ করে?”
হিমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। শিলা খুশি হয়ে খেতে শুরু করে। এক চমুক মুখে দিতেই ঝালে তার মুখ পুড়ে যাচ্ছিল তাও সে পুরোটা খেলো অভিকের পছন্দ বলে কথা। কিন্তু খাওয়া শেষে শিলার অবস্থা খারাপ সাথে পেটও খারাপ হয়ে গেছে একটু পর পর ওয়াশরুমে যাচ্ছে।
—————
অভিক নিজের অফিসে বসে ছিল। তখন সেখানে রাজ আসে। অভিক ভ্রু কুচকে রাজের দিকে তাকায়। রাজ সোজা এসে অভিকের সামনে বসে পড়ে। অভিক ভ্রু কুচকে বলল, –” তুমি এখানে?”
রাজ বলল,–” স্যার আসলে কি হয়েছে আমা বাবা মানে হিমির বাবার বন্ধু তা আমি জানতাম নাহ। ”
অভিক আবারও ভ্রু কুচকে বলল, –” তো এতে আমার কি করার আছে? ”
রাজ এবার আয়েশ করে বসে বলে,–” আসলে স্যার হয়েছে কি এখন আমার বাবা মানে আসাদুল্লাহ উনি আমার যখন ছোট ছিলাম তখন থেকে হিমিকে আমার জন্য পছন্দ করে রেখেছিলেন তাই এখন আমার হিমিকে চাই।”
অভিক রেগে গেলো। চেয়ার ছেড়ে উঠে রাজের নাক বরাবর একটা ঘুষি মারলো। রাজের নাক থেকে রক্ত বের হতে থাকে। রাজ উঠে রক্তটা মুছে নিয়ে বলল,–” আমি যেকোনো মূল্যে হিমিকে আমার করবো।”
অভিক বাকা হেসে ঘাড় খাত করে বলে,–” তুই হিমি কে পাবি তো দূরের কথা আমার হিমির কাছেও যেতে পারবি নাহ।”
রাজ বলল,–” দেখা যাক। ”
রাজ চলে গেল। রাজ হাফিজ আলমের বন্ধু আসাদুল্লাহ এর ছেলে। আসাদুল্লাহ হিমিকে নিজের ছেলের বউ বানাবে ভেবে রেখেছিল কিন্তু হিমি আর রাজ জানতো নাহ তাদের বাবা যে একে অপরের বন্ধু।।
—————–
হিমির মনে অভিকের জন্য কিছুটা জায়গা হয়েছে তবে সেটা ভালোবাসার নয় সম্মানের। অন্যকেউ থাকলে হয়তো তার উপর জোর দিতো সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য কিন্তু অভিক তাকে সময় দিচ্ছে আজ তাদের বিয়ের প্রায় ১ মাস পূর্ণ হয়েছে। রাজকে এখন আর আগের মতো মিস করে নাহ হিমি। নিজেকে সংসার আর অভিকে আবদ্ধ করার চেষ্টায় আছে।
রাত ১২ টা বাজে বেলকনিতে বসে এগুলো ভাবছিল অভিকের রুমের বেলকনি অনেক বড়। তার মাঝে একটা টেবিল আর দুই পাশে দুইটা চেয়ার। হঠাৎ হিমির কানে কে যেন ফু দিল। হিমি ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে ওঠে দেখে অভিক। অভিক হিমিকে ভয় পেতে দেখে হেসে বলে,–” ভীতুরাম।”
হিমি মুখ বাকিয়ে বলে,–” তাতে আপনার কি?”
অভিক বিরবির করে বলে, –” আমারই তো সব।”
হিমি শুনতে পাই নাহ অভিক কি বলেছে। হিমি কান এগিয়ে দিয়ে বলে– ” কি বললেন? ”
অভিক হিমির মাথার চুল এলোমেলো করে বলে, –” কিছু নাহ পাগলি খাবার দাও খিদে পেয়েছে বড্ড।”
হিমি মাথা নাড়িয়ে লক্ষ্মী মেয়ের মতো চলে যায় খাবার আনতে। হিমি চলে যেতেই অভিক ঘরটা সাজাতে থাকে। হিমি খাবার নিয়ে রুমে আসতেই দেখে পুরো রুম অন্ধকার। হিমি অবাক হলো অভিককে ডাক দিল,–” মেয়র সাহেব আপনি কি আছেন? ”
কোনো উত্তর পেল নাহ হিমি। তার ভয় হতে লাগলো সে আবারও বলল, –” মেয়র সাহেব প্লিজ সাড়া দিন আমার ভয় লাগছে। ”
সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠলো রুমটা অসম্ভব সুন্দর করে সাজিয়েছে অভিক। হিমি হা করে তাকিয়ে আছে। অবাক দৃষ্টিতে দেখছে চারদিকে
–” এগুলো কখন করলেন? ”
অভিক হেসে বলল,–” সারপ্রাইজ কেমন লাগলো?”
হিমি হালকা হেসে বলল,–” ভালো তা কি উপলক্ষে এই সারপ্রাইজ। ”
অভিক হিমির কাছে এসে হিমির গালে দু হাত রেখে বলে,–” আজ আমাদের বিয়ের এক মাস হয়েছে। ”
হিমির হাসির মাঝেই হঠাৎ মন খরাপ করে নিলো। হিমির মন খারাপ দেখে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে অভিক বলল,–” কি হয়েছে হিমশীতল মন খারাপ কেন?”
হিমি মন খারাপ করে বলল,–” আজ এক মাস হয়ে গেছে বাবা একটা ফোন ও দেয় নি।”
অভিক হেসে বলল,–” এই ব্যাপার। ”
হিমি মন খারাপ করে গাল ফুলিয়ে অভিকের বুকে মাথা দিয়ে রেখেছে। আর অভিক সযত্নে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এসুখ যেন এক অন্যরকম সুখ।
চলবে?