#তুমি_আমার_প্রেয়সী
পর্ব ২
#মৌমিতা_শবনাম
সকাল ৯ টা বাজে হিমির ঘুম ভেঙে যায়। সে দেখে যে সে ফ্লোরে শুয়ে আছে শরীরে চাদর জড়ানো। হালকা হাসে সে তার বাবা তাহলে দরজা খুলে ছিল। হিমি উঠে চলে যায় ফ্রেশ হতে চলে যায়।
হিমি ফ্রেশ হয়ে এসে রান্না ঘরের দিকে যায় সেখানে গিয়ে দেখে তার বাবা নিজের খাবার নিজে বানাচ্ছে। হিমি গিয়ে বলল,–” আমাকে ডাক দিতে আমি বানিয়ে দিতাম।”
হাফিজ আলম কিছু বললেন নাহ মেয়েকে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। হিমি অসহায় চোখে বাবার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। তার যে খুব ইচ্ছে করছে বাবার সাথে কথা বলতে কিন্তু বাবা যে তার সাথে কথাই বলছে নাহ দীর্ঘশ্বাস ফেলল হিমি।
———————-
অভিক রেডি হচ্ছে তাকে একটা কাজে যেতে হবে সেখান থেকে সে হিমিদের বাসায় যাবে। তিতাস হোসেন আর নয়না হোসেন আগেই চলে যাবে। তিতাস হোসেন ছেলের রুমে আসে। রুমে এসে দেখে অভিক রেডি হচ্ছে। বাবাকে দেখে অভিক তার দিকে তাকিয়ে বলে– ” কিছু বলবে? ”
তিতাস হোসেন ভিতরে ঢুকে বিছানায় বসে বলেন,–” হুম বলার ছিল কিছু। আমি ডিসওশন নিয়েছি যেহেতু তুই হিমিকেই বিয়ে করবি তাহলে আজই তুলে নিয়ে আসবো হিমিকে।”
অভিক বলল,–” কাল বলছিলে এই মেয়েকে বউ করে আনবে নাহ আর আজ তুলে নিয়ে আসতে চাইছো যে?”
তিতাস হোসেন বললেন, –” আমার হিমিকে বউ করতে আপত্তি নেই কিন্তু বুঝিসই তো তোর মা যা রাগী তাল মিলাতে হয়।”
বাবার কথায় অভিক হাসলো। তিতাস হোসেনও হাসলেন। নয়না হোসেন আড়ালে থেকে সব শুনলেন। সব শুনে বাকা হাসলেন।
————
হাফিজ আলম রুমে বসে ছিলেন তখন কল আসে অভিকের। হাফিক আলম কল রিসিভ করেন, –” হ্যা বাবা বলো।”
অভিক বলল,–” আসলে আঙ্কেল আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আজকে আমরা হিমিকে নিয়ে আসবো। আপনি কি বলেন? ”
হাফিজ আলম কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। অভিকও উত্তরের আশায় বসে আছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাফিজ আলম বললেন, –” আচ্ছা সমস্যা নেই আমার এতে কোনো। যতদ্রুত সম্ভব আমি ঘাড় হালকা করতে চাই”
অভিক খুশি হলো। হাফিজ আলমের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দিল। এদিকে হিমি বাবার রুমের দিকে আসছিল। বাবাকে ফোনে অভিকের সাথে কথা বলতে দেখে দরজার আড়ালে দাড়িয়ে যায়। হাফিজ আলমের কথা শুনে হিমির কষ্ট লাগে। সে তার বাবার ঘাড়ে বোঝা অবশ্য তা হওয়ারই কথা সে তো অনেক বড় ভুল করেছে তারপরও যে তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছে এটাই অনেক।
হিমি সেখান থেকে চলে যায় নিজের রুমে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। চোখে দিয়ে পানি পড়ছে সেও বাধা দিচ্ছে নাহ পড়ুক পানি। তখনই সেখানে হাফিজ আলম আসে গম্ভীর গলায় বলেন, –” হিমি।”
হিমি চমকে যায়। তাড়াতাড়ি নিজের চোখের পানি মুছে মুখে হাসি এনে পিছনে তাকিয়ে বলে, –” হ্যা বলো।”
হিমির চোখ লাল দেখে বুকটা চ্যাত করে ওঠে হাফিজ আলমের সে তো তার মেয়েকে এভাবে দেখতে চায় নি। হাফিজ আলম নিজেকে সামলে গম্ভীর ভাব এনে বলেন,–” আজকে তোমাকে ওরা নিয়ে যাবে জামা কাপড় গুছিয়ে রেখো।”
হিমি মাথা নাড়ায়। হাফিজ আলম চলে যান সেখান থেকে। হাফিজ আলমের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে হিমি।
—————-
বিয়েটা পারিবারিক ভাবে সম্পন্ন হয়েছে হিমি আর অভিকের। নয়না হোসেন হিমির সাথে স্বাভাবিক আচরণই করছে তবে তিতাস হোসেন সন্দেহের চোখে বার বার তাকাচ্ছে নয়না হোসেনের দিকে। এবার হিমির যাওয়ার পালা। হাফিজ আলম অভিকের হাত ধরে বলে ন,–” বাবা ওকে দেখে রেখো বোঝার বয়স ওর হয় নি এতো আসলে মা নেই তো তাই শিখাতে পারে নি কেউ আমি তো অফিসের জন্য এতো সময় দিতে পারিনি।”
অভিক হাফিজ আলমের হাতের উপর হাত রেখে আশ্বস্ত করে বললেন, –” চিন্তা করবেন নাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
হাফিজ আলম নিশ্চিন্ত হলেন। নয়না হোসেনের এগুলো সব বিরক্ত লাগছে। সে তো হিমিকে কখনোই শান্তিতে থাকতে দিবে নাহ। তারা বেরিয়ে পড়ল অভিকদের বাসার উদ্দেশ্যে। হিমি বাসা থেকে আসার সময় একটুও কান্না করে নাই খুব অভিমান হয়েছে তার।
—————-
অভিকের রুমে বসে আছে হিমি খুব একটা সাজানো হয়নি ঘর হালকা সাজিয়েছে। হিমি চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে রুমাটা দেখতে লাগলো। রুমটা বেশ বড় জিনিসপত্রও সাজানো দেখেই মনে হচ্ছে অভিক বেশ শৌখিন কিন্তু সে তো নয়। তার তো ঘর এলোমেলো করে রাখতে ভালো লাগে। এগুলো ভাবছিল সে তখন দরজা টেলে অভিক ভিতরে ঢুকে। হিমিকে বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে থাকতে দেখে হাসে সে। এগিয়ে গিয়ে হিমির মুখোমুখি হয়ে বসে। হিমি নিচের দিকে তাকিয়ে বলে– ” আমাকে বিয়ে করলেন কেন মেয়র সাহেব যেখানে জানেন আমি অন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে ছিলাম তার সাথে পালিয়েও যাচ্ছিলাম?”
হিমির কথায় হাসে অভিক। মুখে হাসি বজায় রেখে বলে, –” তোমার মুখের এই মেয়র সাহেব ডাকটা সারাজীবন শোনার জন্য।”
হিমি হালকা কপাল কুচকায়। সে তার কাঙ্খিত উত্তর পায়নি। ও যেটা জানতে চেয়েছে সেটা অভিক তাকে বলে নি। হিমি মাথা নিচু করে বসে আছে তখনও। অভিক এক ধ্যানে তাকিয়ে তার প্রেয়সীকে দেখছে। অভিকের এভাবে তাকানোতে অস্বস্তি হচ্ছে হিমির ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অভিক চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে, –” যাও ফ্রেশ হয়ে আসো কান্না করে তো কাজল পুরোটা ল্যাপ্টে ফেলছো। ভুতের মতো দেখা যাইতাছে ।”
হিমি চোখ বড়ো বড়ো করে অভিকের দিকে তাকায়। তাকে ভুত বলল কত বড় সাহস এই লোকটার। হিমি বলল,–” কি আমি ভুত।”
অভিক ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,–” ইয়েস যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।”
হিমি কিছু বলে না গাল ফুলিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। ও চলে যেতেই অভিক হেসে বলে উঠে, –” আমার ফুলি পিঠা
—————–
নয়না হোসেন মাথা নিচু করে বসে আছে। তার রাগ হচ্ছে হিমির উপর। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। এই মেয়ের জন্য সে তার ভাগ্নীকে ছেলের বউ করে আনতে পারলো না। মনে মনে আওড়ালেন, –” এই মেয়েকে তো আমি বিদায় করেই ছাড়বো।”
তিতাস হোসেন বউকে তীক্ষ্ণ নজরে পর্যবেক্ষণ করছেন। তার মনে কি চলছে তা বুঝার চেষ্টা করছেন কিন্তু তিনি বরাবরের মতো বুঝতে ব্যার্থ। তবে এতটুকু বুঝেছেন যে কিছু একটা চলছে তবে সেটা ভালো নয়।
তিতাস হোসেনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নয়না হোসেন চোখ ছোট ছোট করে বললেন, –” এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
তিতাস হোসেন কোনো বনিতা না করে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, –” মনে মনে কি প্যাচ পাকাচ্ছ? ”
নয়না হোসেন অবাক হওয়ার ভান করে বলে, –” ওমা আমি আবার কি প্যাচ পাকাচ্ছি।”
নয়না হোসেনের অভিনয় বুঝতে পারেন তিতাস হোসেন। এতটুকুও বুঝতে পারেন যে হিমিকে তাড়ানোর প্ল্যান করছে কিন্তু কেন তা বুঝতে পারলেন নাহ। তিতাস হোসেন বললেন, –” এতোটাও অভিনয় করো নাহ আমি জানি কিছু প্ল্যান করছো তুমি। ”
নয়না হোসেন হেসে বললেন, –” প্ল্যান তো করছিই বুঝেছোই তো।”
তিতাস হোসেন চোখ পাকিয়ে বললেন, –” একদম হিমির কিছু করবে না। ”
নয়না হোসেন কান্না স্বরে বলতে লাগলেন, –” তুমি আমাকে এই চিনলে এতোটা খারাপ ভাবো হিমির সাথে আমি কেন কিছু করবো ও তো আমার মেয়ের মতো। ”
তিতাস হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি বিরক্ত হলেন নয়না হোসেনের অভিনয়ে কিন্তু কিছু বলল না ছোট করে বলে উঠলেন, –” সরি।”
—————-
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে অভিক। হিমি চুপিচুপি চুরের মতো গিয়ে অভিকের পিছনে দাড়িয়ে আছে। হিমির উপস্থিতি বুঝতে পেরে ঠোঁট মেলিয়ে হাসে। সামনের দিকে তাকিয়ে বলে– ” কিছু বলবে হিম।”
হিমি মুখ ফুলিয়ে বলে, –” আমার নাম হিম না হিমি।”
অভিক আবারো হাসলো সামনের দিকে তাকিয়েই বলে,–” আমি তোমাকে হিম বলেই ডাকবো।”
হিমি এই বিষয়ে আর কিছু বলে না আবারও মাথা নিচু করে বলে– ” থ্যাংক ইউ।”
অভিক সাথে সাথে ঘুরে পিছনে তাকায়। চোখ ছোট ছোট করে ঘাড় খাত করে হিমির দিকে তাকিয়ে বলে,–” হোয়াই?”
হিমি সেই একই অবস্থায় দাড়িয়ে হাত কচলিয়ে বলে,–” একটা খারাপ মানুষের কাছ থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য। ”
অভিক হিমির কপালে দুই আঙুল দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে– ” বুঝলে তবে।”
ধাক্কার ফলে হিমি একটু পিছিয়ে যায়। অভিক বলল,–” যাও ঘুমিয়ে পড়।”
হিমি কিছু বলল নাহ মাথা নাড়িয়ে চলে এলো ঘুমোতে। রাজের কথা মাথায় আসতেই সে ঝেড়ে ফেলে । তাকে আবারও নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে। সে এখন অন্য কারো স্ত্রী। এগুলো ভেবে শুইয়ে পড়ে ঘুমাতে।
চলবে
#তুমি_আমার_প্রেয়সী
পর্ব ৩
#মৌমিতা_শবনাম
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে হিমি। পড়নে কলাপাতা রং এর সিল্কের শাড়ি, চুল খোলা। অভিক টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছিল স্যান্ডউইচ মুখে দিতে দিতে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই সেখানেই থমকে যায়। এই কালারের শাড়িতে হিমিকে অপরূপা লাগছে। স্যান্ডউইচটা টেবিলে রেখে বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে,–” হাই দিল মে ছুট লাগ গেয়া।”
পাশে তিতাস হোসেন বসে ছিলেন। ছেলের এমন কথা শুনে কেশে উঠলেন। বাবার কাশির শব্দে বিরক্ত হলো অভিক। হিমির উপর দৃষ্টি রেখেই বলল,–” খাবার গলায় ভেজেছে পানি খাও ছেলের রোমান্টিক মুড নষ্ট করতে কর্কশ শব্দে কাশছো কেন?”
অভিকের এই কথা শুনে তিতাস হোসেন বিষম খেলেন কাশ যেন আরও বাড়লো। ছেলের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বললেন,–“লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছো আমি তোমার বাবা হই।”
অভিক স্বাভাবিক ভাবে বলল, –” ওহ আচ্ছা। ”
ততোক্ষণে হিমি এসে চেয়ারে বসে পড়ে ভাগ্যিস সে অভিকের কথা শুনে নি। শুনলে বেচারি ভীষণ লজ্জায় পড়তো। অভিক সোজা হয়ে বসে আবারও খেতে থাকে। নয়না হোসেন হিমিকে দেখে মুখ বাকায়। তিতাস হোসেন বিষয়টা লক্ষ করে কিন্তু কিছু বলে না।
—————-
খাবার শেষ করে বসে টিভি দেখছে হিমি। অভিক খাবার শেষ করে কাজে বেরিয়েছে তার জুরুরি কাজ আছে। হিমির একটু দূরে নয়না হোসেন বসে আছে। হিমির দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে । হঠাৎ নয়না হোসেন বলেন,–” এই মেয়ে শোন।”
হিমি কিছু বলে না। সে নিজের মতো টিভি দেখছে। নয়না হোসেন এতে একটু কপাল কুচকে বলেন,–” এই মেয়ে ডাকছি শুনছো নাহ!”
হিমির কোনো হেলদোল নেই সে নিজের মতো আরাম করে সোফায় বসে টিভি দেখছে। নয়না হোসেন এবার ভীষণ রাগলেন দাঁতে দাঁত চিপে চিৎকার দিয়ে বললেন, –” হিমি ডাকছি শুনতে পারছো নাহ।”
এবার হিমি শুনলো। বত্রিশ পাটি ভাসিয়ে সে নয়না হোসেনের দিকে তাকায়। নয়না হোসেন কপাল কুচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হিমি বলল,–” কিছু বলবেন সাসুমা। ”
নয়না হোসেন বললেন, –” তুমি কি কানে কম শুনো? এতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাও না?”
হিমি অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,–” কি আপনি আমায় ডাকছিলেন আমি তো শুনলাম আপনি এই মেয়েকে ডাকছিলেন আর আমার নাম এই মেয়ে নাহ তো আমার নাম হিমি।”
নয়না হোসেনের বিরক্তি আরও বেড়ে গেল মেয়েটা বেশি কথা বলে। নয়না হোসেন বিরক্ত হয়ে বলেন,–” শোন মেয়ে বেশি কথা বলো নাহ। যাও চা বানিয়ে আনো”
হিমি বলল নাহ কিছু চুপচাপ চা বানাতে চলে গেল। চা বানিয়ে এসে কাপটা নয়না হোসেনের সামনে ধরে বলে– ” মা চা।”
নয়না হোসেন একবার চায়ের দিকে তাকায় আরেকবার হিমির দিকে। ভ্রু কুচকে বললেন,– ” খেতে ভালো লাগবে তো?”
হিমি বলল,–” ইচ্ছে না থাকলে আপনার খেতে হবে না আমিই খেয়ে নিচ্ছি।”
এই বলে হিমি নিজে খেতে শুরু করলো। হিমির এমন আচরণে নয়না হোসেন বড় বড় চোখ করে তাকায়। হিমি নিজের মতো চা খেতে খেতে আবার রান্নাঘরে চলে আরেক কাপ চা এনে নয়না হোসেনকে দেয়। এবার নয়না হোসেন কোনো প্রশ্ন ছাড়া কাপ নিয়ে নেয়।এই মেয়ের বিশ্বাস নেই আবার এই কাপের চা খাওয়া শুরু করবে যদি কোন প্রশ্ন করে। হিমি হাসে একটু। নয়না হোসেন চা খেতে বললেন, –” শুনো মেয়ে আজকে আমার বোনের মেয়ে আসবে শিলা গেস্টরুম গুছিয়ে রেখো।”
হিমি আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলে, –” কি বলেন আমার ননদিনী আসবে আচ্ছা নো প্যারা।”
নয়না হোসেন মুখ বাকায়। মেয়েটা অসহ্যকর একবার শিলা আসুক তারপর সে এই মেয়েকে তাড়াবে আর শিলাকে বাড়ির বউ করবে। মনে মনে শয়তানি হাসি হাসে নয়না হোসেন
——————
নিজের রুমে বসে ফোনে ফানি ভিডিও দেখছিল আর হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। তখন অভিক বাহির থেকে বাসায় ফিরে। নিজের রুমে ঢুকতেই হিমির হাসির শব্দে ভয় পেয়ে যায়। হিমিকে হাসতে দেখে একটা বড় শ্বাস ছাড়ে। বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে বলে,–” বউ যেভাবে হাসতেছো আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। ”
অভিকের কন্ঠ শুনে সাথে সাথে নিজের ফোন রেখে সোজা হয়ে বসে। হিমিকে ভয় পেতে দেখে ঠোঁট মেলে হাসে। হিমি অভিকের দিকে তাকিয়ে বলে,–” আপনি কখন এলেন? ”
অভিক বলল,–” কিছুক্ষণ আগে। ”
এই বলে অভিক গিয়ে হিমির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। হিমি অভিকের দিকে তাকায়। অভিক নিজের মাথা তুলে হিমির কপালে চুমু খায়। হিমি এটার জন্য প্রস্তুত ছিল নাহ। সে উঠে চলে যেতে নেয় তখন অভিক ওর হাত ধরে বলে, –” আমাকে এক কাপ কফি বানিয়ে দিবে হিমশীতল। ”
এক জোড়া ক্লান্ত চোখ হিমির দিকে তাকিয়ে আছে। হিমি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে, –” আনছি তবে আমার নাম হিমশীতল নাহ।”
এই বলে হিমি চলে যায়। হিমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছে এই সম্পর্কটা মেনে নিতে। অভিককে নিজের স্বামী হিসেবে স্বীকার করতে একটা বেইমানের জন্য সারাজীবন নষ্ট করার মেয়ে সে নয়। সে সুখী হবে একদিন নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সব সুখ দিবে তার বিশ্বাস।
———————-
হাফিজ আলম একা বসে আছেন চায়ের দোকানে। মেয়েটার জন্য তার মন কেমন করছে কিন্তু সে যাবেন নাহ। সে তার মেয়েকে বোঝাবেন যখন সে শুনেছে হিমি পালিয়েছে তখন তার কতটা কষ্ট হয়েছে। এগুলো ভাবতে ভাবতে চায়ের কাপে চমুক দিলেন হাফিজ আলম। তখন তার কাঁধে কেউ হাত রাখলো পিছনে তাকিয়ে দেখে তার বাল্যকালের বন্ধু আসাদুল্লাহ। আসাদুল্লাহকে দেখে হাসলেন হাফিজ আলম। আসাদুল্লাহ পাশে বসে বললেন, –” কেমন আছিস হাফিজ?”
হাফিজ আলম আরেকটা চায়ের ওর্ডার দিয়ে আসাদুল্লাহকে বললেন, –” ভালো আছি তুই কেমন আছিস?”
আসাদুল্লাহ বন্ধুর পিঠে হাত রেখে বললেন, –“ভালো। হিমি মা কেমন আছে? ”
হাফিজ আলম বললেন, –” এই তো ভালো বিয়ে হয়েছে তার। ”
আসাদুল্লাহ অবাক হয়ে বললেন, –” কি বলিস হিমিকে বিয়ে দিয়ে দিছিস?”
হাফিজ আলম মাথা নেড়ে হ্যা বললেন। আসাদুল্লাহ এর যেন মন খারাপ হয়ে গেল তিনি আশেপাশে তাকিয়ে বললেন, –” আজ আসি রে পরে কথা হবে। ”
হাফিজ আলমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আসাদুল্লাহ উঠে চলে গেলেন। হাফিজ আলম কিছু বুঝতে না পেরে আসাদুল্লাহ এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
—————–
হিমি রন্নাঘরে সার্ভেন্টদের হেল্প করছিল রান্নার কাজে। ঘড়িতে তখন বিকেল৫ টা বাজে বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে। হিমি নিজের হাত ধুয়ে শাড়ির আচলে হাত মুচতে মুচতে গিয়ে দরজা খুলে দেখে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। পড়নে থ্রিপিস, গায়ের রং শ্যামলা, হাইটে হিমির থেকে একটু খাটো হবে। হিমি নিজের শরীরের ঘাম মুছে বলে,–” কে আপনি?”
মেয়েটা হিমির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হিমিকে উল্টা প্রশ্ন করে বলে, –” হো আর ইউ? ”
হিমি ভ্রু কুচকে উত্তর দিতে যাবে তখনই নয়না হোসেন এসে হিমিকে সড়িয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে। নয়না হোসেন মেয়েটাকে বলেন,–” কেমন আছো শিলা?”
হিমি বুঝতে পারে মেয়েটা শিলা,নয়না হোসেনের বোনের মেয়ে। তার একে অপরের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে। তারপর নয়না হোসেন শিলাকে নিয়ে হিমিকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় উপরে শিলার জন্য নাস্তা পাঠাতে। ওরা চলে যেতেই হিমি মুখ বাকিয়ে নয়না হোসেনের কথাটা ভেঙ্গালো।
চলবে?