#তুমি আমার (সমাপ্তি পর্ব ১৮)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
মেঘা রেহানের দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছে প্রতিদিন ফোনে কথা বলা দেখা করা এভাবেই কাটছে। ওদিকে রাফিন মিতুর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সেদিন রাফিন আর মিতুর ব্যাপারে সবাই রাজি হয়ে যায় মিতুর বাবাও কোনো অমত করে নি। রাফিনের মা চেয়েছিলো অনুষ্ঠান করে ছেলের বিয়ে দিতে কিন্তু রাফিন না করে দিয়ে বলেছে বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে সেরে ফেলতে। অবশেষে ওদের বিয়েটা খুবই সাধারণ ভাবে হয়ে গিয়েছে।
রাফিন এখন রেহানের বাবার অফিসে জয়েন করেছে। রাফিন এখন আগের মতই হাসিখুশিতে থাকে,তবে মাঝে মাঝে মন খারাপ হলেও তা কাউকে বুঝতে দেয় না নিজেকে সামলে রাখে।
সময় তার আপন গতিতে ছুটছে। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো দিন। রেহান ও নিজের লেখাপড়া শেষ করে বিজনেসের কাজে মন দিয়েছে। মেঘার ইন্টার পরীক্ষার আর মাত্র ১৫ দিন বাকী। মেঘা যতটা পারছে পড়াশোনা করছে মন দিয়ে। রেহান মেঘাকে তেমন ফোন দেয় না এখন। রেহান চায় না মেঘার রেজাল্ট খারাপ হোক।
কেটে গেলো আরো ১৫ টি দিন। আজ মেঘার পরীক্ষা শুরু মেঘা রেডি হচ্ছে তন্ময় দরজার কাছে দাড়িয়ে বললো
– আপু তাড়াতাড়ি রেডি হও রেহান ভাইয়া এসেছে তোমাকে পরীক্ষা সেন্টারে নিয়ে যাবে।
– ৫ মিনিটে আসছি।
তন্ময় চলে গেলো মেঘা জলদি হিজাবটা পড়ে প্রয়োজনীয় যা যা আছে সব নিয়ে বেড়িয়ে আসলো রুম থেকে। বসার রুমে সোফায় রেহান ওর বাবা আর তন্ময় বসে কথা বলছিলো। মেঘা আসতেই রেহান তারা দিয়ে বললো
– মেঘা আধ ঘন্টা আগে এক্সাম হলে ঢুকে যেতে হবে। তুমি কিছু খেয়েছো?
মেঘা কিছু বলার আগেই ওর বাবা বললো
– রেহান ওকে আজ ধরে বেধেও খাওয়াতে পারবেনা।
– সেকি কথা! মেঘা যাও খেয়ে এসো।
– তুমিও তো খাও নি চলো তুমি কিছু খেয়ে নেবে আমি খাবো না।
– আমি নিজের নয় তোমার খাওয়ার কথা বলেছি।
– আমি খাবো না প্লিজ জোর করো না পরীক্ষার মধ্য সকালে খেলে সে খাবার আমার হজম হয় না। তারচেয়ে বরং তুমি….
– আমি খাবো না। না খেলে তুমি চলো বের হতে হবে।
মেঘা মাথা নাড়িয়ে বাবার থেকে দোয়া নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
.
🌿
.
একে একে মেঘার পরীক্ষা গুলো ভালো ভাবেই শেষ হলো। মেঘা এখন সম্পুর্ণ ফ্রী, পরীক্ষা শেষ হবার ৩ দিন পরে রেহানের বড়মা রেহানের মা মেঘাদের বাড়িতে এসে ওর বাবার সাথে কথা বলে গেলো তারা চায় এখন মেঘাকে রেহানের বউ করে ঘরে তুলতে। বিয়ের দিনটা ঠিক করা হয়েছে ৭ দিনের মধ্য।
আজ মেঘা রেহানের বিয়ে সকাল থেকেই বিয়ের আনন্দে মেতে উঠেছে দুটো বাড়ি।
মেঘাকে একটু আগে পার্লার থেকে মেয়েরা এসে সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে। বউয়ের সাজে লাল বেনারসিতে অপরুপ সুন্দর লাগছে মেঘাকে। মেঘা ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে নিজেকে দেখছে,আশা মেঘার গলা জড়িয়ে মিষ্টি হেসে বললো
– আপুনি তোমাকে খুব খুব খুব কিউট দেখাচ্ছে। উফ আমারি তো মাথা ঘুড়ে যাচ্ছে না জানি রেহান ভাইয়ার কি হাল হবে!
– আশা তুই না সব সময় এক লাইন বেশি বলিস।
– আপুনি কি যে বলনা আমার তো ইচ্ছে করছে এক লাইন নয় সাথে আরে দু লাইন বাড়িয়ে বলি।
– হয়েছে আর বলতে হবে না।
মেঘাকে ঘিরে আশা আরো অন্য সব কাজিনরা বসে আছে একটু পর বাইরে থেকে কেউ বললো বড় এসেছে। মেঘাকে একা রেখেই সবাই বেড়িয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর মিথিলা মিতু রাইসা মেঘার রুমে এসে ওর সাথে দেখা করে গেলো।
অবশেষে ওদের বিয়ে পড়ানোর সময় আসলো মেঘাকে প্রথমে কবুল বলতে বলা হলো কিছুটা সময় নিয়ে মেঘা কবুল বলেছে। রেহানকে কবুল বলতে বললে ও গটগট করে কবুল বলে দিয়েছে। তানভির দুষ্টু হসে রেহানে বললো
– বউকে নেওয়ার এত তারা তোর! কবুল বলতে একটুও সময় নিলি না!
– বলতে তো হতোই তাই তাড়াতাড়ি বলে দিলাম শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ কি বল।
– হুমম বুঝি আমি।
– তোর যে বুঝ আমার জানা আছে। এই তানভির মেঘাকে দেখেছিস তুই?
– আর দেখা,মেয়েদের ভীরে তোর বউকে খুজেই পাইনি।
রেহান হেসে বললো
– ভালো হয়েছে আমার বউকে আমি দেখতে পেলাম না তুই কেনো দেখবি আগেই।
রেহানের বাবা মেঘার বাবাকে বললো
– বেয়াই এখন তো আমাদের যেতে হবে রাত হয়ে এলো প্রায়।
মেঘার বাবা কাউকে ডেকে বললো মেঘাকে নিয়ে আসতে মেঘার মামি আশা সহ কয়েকজন মিলে ওকে এনে রেহানের পাশে দাড় করালো। মেঘার বাবা রেহানের হাতে মেঘাকে তুলে দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
মেঘা ও নিজেকে সামলাতে পারলো না বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কেঁদে কেঁদে তন্ময়কে বললো বাবাকে দেখে রাখতে সময় মত ওষুধ খাওয়াতে। মেঘার খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা ভাইকে ছাড়া কখনো একা কোথাও থাকে নি কিন্তু আজ থেকে ওদেরকে ছেড়েই থাকতে হবে।
মিথিলা মেঘাকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো পাশে রেহান বসেছে সামনে ড্রাইভার। মেঘা এখনো কেঁদে চলেছে বাবা আর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে। গাড়িটা ছেড়ে দিতেই আর কাউকে দেখতে পেলো না।
.
🌿
.
মেঘা মাথায় বড় ঘোমটা টেনে বসে আছে বাসর ঘরে। পুরো রুম জুরে ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ মৌ মৌ করছে। লাল গোলাপ সাদা গোলাপ বেলিফুলে সাজানো হয়েছে রুম। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে মেঘা চমকে উঠে তাকালো রেহানকে দেখে চোখ নামিয়ে নিলো। রেহান দরজা লক করে মেঘার পাশে এসে বসে মেঘার ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো
– মেঘা আজ আমি অনেক অনেক হ্যাপি,তোমাকে আমার লাইফে সারাজীবনের জন্য পেয়েছি। এখন আমি জোর গলায় বলতে পারবো”””তুমি আমার””” ভালোবাসি বউ অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
রেহান মেঘার হাতের উল্টো পাশে চুমু খেলো
– এখনো কি ঘোমটার আড়ালে থাকবে হুম?
মেঘা কিছু না বলে একই ভাবে বসে আছে
– ঠিকআছে আমার কাজটা আমি করে নিচ্ছি।
রেহান মেঘার মুখের উপর থেকে কাপরটা সড়িয়ে নিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার মেঘপরীর দিকে। রেহান ঘোর লাগা কন্ঠে বললো
– তোমার সৌন্দর্যের উপমা যে আমি কি বলে প্রকাশ করবো বুঝতে পারছি না!! তোমাকে ন্যাচারাল ভাবে দেখেছি সব সময় এমন ভারী সাজে কখনো দেখিনি তোমায়। আজ যেনো এক অন্য মেঘাকে দেখছি আমি। তোমার ওই টানা চোখে এখন থেকে সব সময় কাজল পড়বে বুঝেছো উহু তুমি নয় আমি নিজেই রোজ পড়িয়ে দেবো। এই মেঘা চুপ করে আছো কেনো তুমি?
রেহান মেঘার দুগালে হাত দিয়ে বললো
– মেঘা তাকাও আমার দিকে
মেঘা চোখ তুলে তাকালো রেহানের চোখে চোখ রাখতেই এক অন্য রকম অনুভূতি বয়ে গেলো। রেহানের চোখে আজ শুধুই খুশির ঝিলিক দেখছে মেঘা। রেহান মেঘার কপালে পরম আবেশে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। মেঘা রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো
– আমি সত্যি খুব খুশি আজ তোমার মত জীবনসঙ্গী পেয়েছি। আজ থেকে যেমন আমি তোমার, তেমনি””তুমি আমার””শুধুই আমার। রেহান মুচকি হেসে মেঘাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো।
– মেঘা এভাবে থাকতে তোমার আনইজি লাগছে তাইনা,যাও ফ্রেস হয়ে এসো।
মেঘা ওয়াশরুমে গিয়ে ভারী গহনাগুলো খুলে শাড়িটা চেন্জ করে স্কাই ব্লু কালারের একটা সিল্কের শাড়ি পড়ে নিলো। ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই চোখ পড়লো রেহানের উপর রেহান খাটে বসে ফোন দেখছিলো। রেহান আওয়াজ পেয়ে চোখ তুলে তাকিয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো মেঘার দিকে। উঠে গিয়ে মেঘার কাধে দুহাত রেখে বললো
– এই মেঘপরী তুমি কি চাইছো আমাকে আজ মেরে ফেলতে!!
– এসব কি বলছো তোমাকে মারবো কেনো??
– একটু আগে দেখেছি এক রুপে তখন ছিলে মিষ্টি বউয়ের সাজে আর এখন একদম স্নিগ্ধ লাগছে তোমায়। শাড়ির কালারটা তোমার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার দেওয়া নামটা আজ সার্থক হলো,আমার মেঘপরী তুমি।
মেঘা কিছু বললো না মুচকি হাসলো।
রেহান মেঘা দুজনে একসাথে নফল নামাজ আদায় করে নিলো। তারপর ওরা এক নতুন অধ্যায় পা রাখলো,যে অধ্যায় শুধু ওদের ভালোবাসা দিয়ে রচনা করা হবে।
দুজনের সপ্ন গুলো পূরণ হয়েছে আজ। নতুন এক জীবনে পা রাখলো রেহান-মেঘা। ভালোবাসা সত্যি বড় অদ্ভুত! শত কষ্ট হলেও একটুখানি ভালোবাসাই পারে সে কষ্টকে দূর করে দিতে।
—(সমাপ্ত)—