তুমি আমার পর্ব-১৭

0
955

#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_17

ঘড়ির কাটায় রাত দশটা বাজতে চললো নিশি সেই যে দুপুর বেলা ঘরে ডুকেছে এখনও ঘর থেকে বের হওয়ার নাম নেই। নিশিকে অনেক বার রাহি আর‌ রেহেলা বেগম ডেকেছে কিন্তু নিশি একটা কথা বলেছে ওর‌ কিছু ভালো লাগছে না ও একা থাকতে চায়। রাহি নিশির এই ব্যবহারের জন্য অনেক বার রেহানকেও ফোন দিয়েছে কি হয়েছে নিশির হঠাৎ করে কিন্তু রেহানের ফোন বন্ধ। তাই রাহি আর‌ রেহেলা বেগম বাধ্য হয়ে আর কিছুই বলে নি নিশিকে।

নিশি ঘরের এক কোনে বসে আছে সারাঘর অন্ধকার করে। আলোটা নিশির চোখে বড্ড জ্বালা করছে তাই বন্ধ করে রেখেছে ঘরের সব লাইট তবে চাঁদের আলো জানলা দিয়ে এসে ঘর আলোকিত করে রেখেছে। নিশি চোখ বন্ধ করে মাথাটা দেয়ালে হেলান দিয়ে রেখেছে। চোখের কোনো নোনা জলে জমে আছে। আজকে নিশি নিজের মনকে শক্ত করে রেখেছে। রেহানের কাছ থেকে ওর সব অতিত যে করেই হোক জেনেই ছাড়বে। এভাবে তো আর সারাজীবন থাকা যায় না। নিশি চাইলেই আজকে রেহেলা বেগম বা রাহির কাছ থেকে রেহানের অতিত সম্পর্কে জানতে চাইতো কিন্তু ও‌ চায় রেহানের মুখ থেকে শুনতে রেহানের অতিতের কথা।

রাত এগারটায় রেহান বাড়িতে আসে। গলার টাইটা লুস করতে করতে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে রাহিকে ডাকে এক গ্লাস পানি দেওয়ার জন্য। রাহিও বাধ্য মেয়ের মতো এক গ্লাস পানি ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দেয়। রেহান পানি খাওয়ার পরেই রাহি বলে উঠে

–তোমার ফোন কোথায় ভাইয়া?

–কেন?

–কত গুলা ফোন দিয়েছি তোমাকে জানো কিন্তু তোমার ফোন বার বার বন্ধ এসেছে।

–মিটিং এর আগে ফোন বন্ধ করেছিলাম পরে আর খোলা হয় নি। কেন ফোন করেছিলি?

–নিশু আপুর‌ সাথে কি তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে?

রেহান আবাক চোখে রাহির দিকে তাকিয়ে বলে

–মানে।

–মানে নিশু আপু কোচিং থেকে আসার পর এই যে ঘরে ডুকেছে আর বের হওয়ার নামে নেই। দুপুর পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো নিশু আপু খাওয়া দাওয়া কিছুই করলো না।

রেহান আর‌ কিছু না বলেই দৌঁড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। রাহিও রেহানের সাথে যেতে চাইলো কিন্তু কিছু একটা ভেবে আর গেলো না। দরজাটা হালকা খোলা ছিলো‌ রেহান ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে সম্পুর্ন দরজাটা খুলে গেলো। কিন্তু সারা ঘর অন্ধকার দেখে রেহান কিছু ভড়কে যায়। লাইট ওন করতেই চোখ যায় নিশির দিকে‌ ফ্লোরে বসে মাথাটা নিচু করে বসে আছে। লাইট ওন হওয়ার সাথে সাথে নিশি মুখ তুলে রেহানের দিকে তাকায়। নিশিকে দেখে রেহান হতোভম্ব হয়ে যায়। চোখ ফুলে গেছে, নাকটা লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝে যাচ্ছে কান্না করেছে। রেহান সাথে সাথে নিশির কাছে এসে নিশির দু বাহু ধরে জোর করে উঠালো

–কি হয়েছে নিশি?

নিশির নাকের পাটা ফুলে আসছে, চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে রেহানের দিকে, দাতে দাত চেপে রেহানকে ধাক্কা মেরে দুরে সরিয়ে বলে

–আমার কিচ্ছু হয় নি হয়েছে আপনার আর সেই সব কিছুর উত্তর আমার আজকে চাই।

নিশির খুব ক্লান্ত লাগছে কথা গুলা বলতে কিন্তু তারপরও নিজেকে শক্ত রাখছে। আজকে রেহানকে সব কিছু উত্তর দিতে হবেই নিশির কাছে। রেহান আবাক চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে

–আমি কি বলবো?

নিশি এবার রেহানের কলার ধরে বলে

–আপনিই বলবেন আপনার অতিত সম্পর্কে। আপনি যেকোনো একটা জীবন বেছে নিন হয় অতিত না হয় বর্তমান দু নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না মিস্টার রেহান রহমান।

–নিশি শান্ত হও তুমি।

–না আমি শান্ত হতে পারছি না। এভাবে কারো জীবন চলতে পারে না। কোন আপনি বুঝতে চাইছেন না কেন কেন?

নিশি ক্লান্ত হয়ে রেহানের বুকে ডলে পরে বলা শুরু করে

–আমি জানতে চাই আপনার অতিত সম্পর্কে যার জন্য আপনি আমাকে মেনে নিতে পারছেন কে রিয়া কি তার পরিচয় আমি জানতে চাই। আপনার সাথে কি তার এখনও সম্পর্ক আছে নাকি…

নিশি আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই রেহান বলে উঠে

–রিয়া আমার অতিত নিশি তুমিই আমার বর্তমান এখন।

–মিথ্যা কথা বলছেন আপনি। আপনি এখন ওই রিয়াকে ভালো বাসেন। যদি রিয়াকে ভালো না বাসতেন তাহলে আমাকে মেনে নিতে কিন্তু আপনি।

–তুমি আমার অতিত সম্পর্কে জানতে চাও তাই তো।

–হুম [দুর্বল গলায় বলে]

–ঠিক আছে তাহলে শুনো।

______

রেহান নিশিকে এক গ্লাস পানি খাইয়ে দিয়ে নিশিকে নিয়ে বিছানায় বসে নিশির হাত দুটো নিজের দু হাত নিয়ে বলা শুরু করে

–রিয়া আমার প্রথম ভালোবাসা আর প্রথম স্ত্রী ছিলো।

নিশি ভ্রু কুচকে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলে

–কিহ আপনার সাথে রিয়ার বিয়ে হয়েছিলো।

–হুমম রিয়া ছিলো আমার ভার্সিটির জুনিয়ার ওকে দেখে ভালো লেগে গিয়েছিলো আমার। তারপর প্রেম শুরু আমাদের তারপর আমরা রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করি কাউকে না জানিয়ে। আমার কয়েকজন বন্ধু জানতো আমাদের দু জনের বিয়ের কথা। আমি চেয়েছিলাম আমরা একটা পবিএ বন্ধনে অবাদ্ধ হয়ে থাকি যেখানে কোনো গুনাহ থাকবে না থাকবে শুধু পবিএতা। আমরা প্রায় আড়াই বছর স্বামী স্ত্রীর পবিএ বন্ধনে অবাদ্ধ ছিলাম। দিন গুলা খুব সুন্দর ভাবে কাটছিলো আমাদের দু জনের হাসি, খুশি, ভালোবাসাতে ভরপুর ছিলো আমাদের জীবন। কিন্তু হঠাৎ একদিন রিয়া এসে আমাকে জানায় ওর বাবা মা ওর বিয়ে ঠিক করেছে অনেক বড়লোকের এক ছেলের সাথে আর ঐ ছেলেকে বিয়ে করতে চায় আমাকে ডির্ভোস দিয়ে। বিশ্বাস করো ওই দিন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিলো। যে মেয়েটা বলেছিলো আমাকে কোনো দিন ছেড়ে যাবে সে মেয়ে এসে আমার কাছে ডির্ভোস চাইছে। কিন্তু আমি ডির্ভোস দিতে রাজি হয় নি। এতে রিয়া যেন হিংস্র হয়ে পড়ে আমি যদি ওকে ডির্বোস না দেই তাহলে ও নিজের জীবন শেষ করে দিবে আর আমাকে ফাসিয়ে দিয়ে যাবে। আমাকে ফাসিয়ে দিবে তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই কিন্তু ভালোবাসাে মানুষটির মরন আমি নিজের চোখে দেখতে পারবো না তাই আমি ওকে ডির্বোস দিয়ে দেই। ও আমার কাছ থেকে ডির্বোস পাওয়ার পর কি যে খুশি হয়েছিলো তা বলার বাহিরে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষটি ও ছিলো আমার কাছে মনে হলো। আর আমাদের গোপন বিয়েটা গোপনেই রয়ে গেলো সমাজে কাছে।

কথা গুলা বলার সাথে সাথে রেহানের দু চোখ বেয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। নিশি রেহানকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে

–প্লিজ আপনি কান্না করবেন না এভাবে।

রেহান নিশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে আবার বলে উঠে

–কেন এমন করলো রিয়া আমার সাথে ওকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ছিলাম নিশি। কিন্তু ও আমাকে ঠকিয়ে চলে গেলো। তার জন্য আমি আমার জীবনে কাউকে আনতে চাই নি সে যদি আমি আবার আমাকে ভালোবাসে ঠকিয়ে চলে যায় তাহলে সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।

–আপনি শান্ত হোন দেখুন যা হয় তা ভালোর জন্যই হয়।

–হুমম ভালোর জন্যই হয়।

রেহান নিশিকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুজে দিয়ে নিশির দু গাল আলতো হাতে ধরে তাতে যেন নিশির পেট মোচর দিয়ে উঠে ক্ষিধে পেয়েছে তার জন্য নাকি রেহানের ছোয়াতে তা ঠিক নিশি বুঝতে পারছে না।

–তার জন্যই তো তোমাকে পেলাম তাই না।

রেহান নিশির চোখে জমে থাকা পানি মুজে দিয়ে বলে

–এতো কান্না করেছো কেন?

–আপনিও তো কান্না করেছেন। [আভিমানের সুরে বলে]

–আমার উপরে আভিমান করে কান্না করেছো তাই তো।

–আপনার উপর কেন আভিমান করবো আপনি কে হোন আমার যে আপনার উপর আমি আভিমান করবো।

রেহান নিশির কথা শুনে মুচকি হেসে বলে

–আমিই তোমার সব বর্তমান ভবিষৎ সব কিছু। #তুমি_আমার প্রথম ভালোবাসা না হলে কি হয়েছে #তুমি_আমার শেষ ভালোবাসা তো হলে। আর #তুমি_আমার সব বুঝছে আর তোমাকে নিয়েই আমি আমার বাকি জীবনটা না হয় কাটিয়ে দিবো কাটাবে তো আমার সাথে বাকি জীবনটা নিশি।

নিশি ঠোট কামড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে। রেহান নিশির মুখটা ধরে রেহানের মুখোমুখি করে দেখে নিশি চোখ বন্ধ করে আছে। রেহান দুষ্টু হেসে নিশির মুখের উপর ফু দেয় সাথে সাথে নিশি নিজের চোখ মেলে রেহানের দিকে তাকায়। রেহান হুট করেই নিশির কপালে নিজের ওষ্টদ্বয়ের পরশ একে দেয়। আবেশেই নিশি চোখ বন্ধ করে নেয় বুকের ভেতর কেউ যেন ঢোল বাজাছে নিশির, সারা গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠছে রেহানের ছোয়া পেয়ে। রেহান নিশির রক্তিম হয়ে যাওয়া দু গালের ভালোবাসার পরশ একে দেয়। এর মাঝে নিশির পেট শব্দ করে উঠে রেহান নিশির দিকে হেসে ফেলে। বেচারি নিশি ভাীষন লজ্জায় পড়ে যায়। রেহান গলা পরিস্কার করে বলে

–ক্ষিধে পেয়েছে আমার বউটার।

রেহানের মুখে প্রথম বউ ডাকটা শুনে নিশি চমকে যায় সাথে ভীষন লজ্জাও লাগছে। তাই মাথা নাড়িয়েই বুঝায় ওর ক্ষিধে পেয়েছে।

–ঠিক আছে তুমি বসো আমি পাচ মিনিটে ফ্রেস হয়ে নিচ থেকে খাবার নিয়ে আসছি তোমার জন্য।

এবারও নিশি মাথায় নাড়িয়ে সায় দেয়। রেহান মুচকি হেসে আরামদায়ক কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে