#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_13
বিকালের দিকে নিশি রেডি হয়ে রেহানের অপেক্ষায় বসে আছে। রেহান অফিস থেকে এসে নিশিকে নিয়ে কোচিং এ ভর্তি করাতে যাবে তার জন্য।
অফিস থেকে রেহানের আসতে একটু লেইট হয়ে গেছে তাই তাড়াতাড়ি করে রুমে ডুকতেই সামনে বসা রমনীকে দেখে চোখ আটকে যায়। কালো রঙটা যেন নিশির শরীর ফুটে উঠেছে। লম্বা চুলগুলা এক সাইডে এনে খেজুর বেণি করে রেখেছে কপালের উপর ছোটছোট চুল গুলা পড়ে আছে, চোখে মোটা করে কাজল, মুখে তেমন সাজ তাতে নিশিকে অর্পূব লাগছে দেখতে। নিশি রেহানের দিক তাকাতেই চমকে যায় রেহানকে দেখে কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে ওর দিকে। নিশির বুক দুরুদুরু কাপছে, নিচের ঠোট কামড়ে অন্য দিকে ফিরে তাকায় নিশি। রেহান শুকনো একটা ঢোক গিলে দ্রুত পায়ে আলমারি থেকে সাদা একটা শার্ট নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।
কিছুক্ষন পর রেহান পরিপাটি হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়। আয়নার সামনে গিয়ে চুরুনি দিয়ে চুল ঠিক করে নিয়ে শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত গুজতে গুজতে বলে
–তাড়াতাড়ি চলো লেইট হচ্ছে।
রেহান বেরিয়ে যাওয়ার পর নিশিও গুটিগুটি পায়ে রেহানের পিছন পিছন যায়।
গাড়িতে বসে আছে কারোর মুখে কোনো কথা নেই। নিশি আড় চোখে বার বার রেহানের দিকে তাকাছে গম্ভীর চেহারা নিয়ে এক মনে ড্রাইভ করছে। হঠাৎ করেই রেহান নিশির দিকে তাকালো। মুহুর্তেই দুজনের চাওনি এক সাথে মিলে গেলো। নিশির হৃদয়টা কেপে উঠলো। ঢোক গিলে নিশি সাথে সাথে বাইরের দিকে ফিরে তাকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি। বুক চাপড়ে ধরতে ইচ্ছে করছে নিশির কিন্তু পারছে না রেহানের জন্য। নিশির পাশে রেহান থাকলেই যে নিজের সব কিছু ওল্টপাল্ট হয়ে যায় সেটা কি রেহান বুঝতে পারে না নাকি বুঝতে যায় না।
কিছু ক্ষন পরে গাড়ি পার্ক হয় কোচিং এর সামনে। গাড়ি থেকে বের হয়ে রেহান নিশিকে নিয়ে কোচিং এর ভেতরে ডুকে। প্রায় অনেকক্ষন পর নিশিকে ভর্তি করে কোচিং থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসে। কালকে থেকে নিশির কোচিং এর ক্লাস শুরু।
_____
সন্ধ্যা প্রায় হতে চললো। গাড়ি চলছে অন্য দিকে বাড়ির রাস্তা দিয়ে না গিয়ে অন্য রাস্তায় দিয়ে চলছে গাড়ি। নিশি ব্যাপারটা খেয়াল করে রেহানকে বলে
–কোথায় যাচ্ছি আমরা বাসার রাস্তা তো ওই দিকে?
–একটা গেটটুগেদারে যাচ্ছি।
–গেটটুগেদার,,, কিসের গেটটুগেদারে যাচ্ছি আমরা?
–আমার বিয়ে উপলক্ষে একটা গেটটুগেদারের আয়োজন করেছে আমার বন্ধুরা।
–আমার না গেলে হয় না আসলে আমি ওসব অনুষ্টানে যাই নি তো কোনো সময় তাই আর কি।
–আমি না করেছিলাম ওদেরকে কিন্তু ওরা রাজি হয় নি ওরা তোমার সাথে দেখা করতে চায়।
–ওও।
–বেশি সময় থাকতে হবে না জাস্ট বিশ মিনিট।
–আচ্ছা।
রেহান চায় নি নিশিকে নিয়ে গেটটুগেদারে যেতে কারন ওখাকে বেশির ভাগ ছেলেরা থাকবে সাথে রেহানের কিছু বন্ধু আছে যাদের চরিএ একে বারে ফুলের মতো পবিএ মেয়ে দেখলেই সব কিছু ভুলে যায়। এর মাঝে রেহান জানতে পেরেছে রিফাতও আসবে এই গেটটুগেদার। রিফাত এমন একটা মানুষ যার নজর সবসময় রেহানের জিনিসের উপর থাকতো আর সেটা নিজের করার জন্য উঠে পড়ে লাগত। যদি নিজের করতে না পারে তাহলে অন্য ভাবে রেহানের জীবন থেকে সেই জিনিসটাকে সরাবেই সরাবে যে করেই হোক। রিফাত আসবে গেটটুগেদারে এটা জানার পর রেহান আরও নিশিকে সাথে করে নিয়ে যেতে চাই নি কিন্তু বন্ধুদের রিকোয়েস্টে রেহান এক প্রকার বাধ্য হয়েই নিশিকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে গেটটুগেদারে।
গাড়ি থেমেছে বিশাল বড় এক রেস্তোরার সামনে রেহান গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে বের হয় সাথে নিশিও। নিশি চারিদিকে আবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে এই প্রথম নিশি এমন জায়গাতে এসেছে তাই সবকিছু একটু ঘুড়েফিরে দেখছে। চারদিকে বাহারি ফুলে ভরা, ছোট ছোট নানা রঙের মরিচ বাতি জ্বলছে চারিদিকে। বলতে মন মুগ্ধকর একটা পরিবেশ। রেহান নিশির থেকে অনেক দুর চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারে নিশি ওর থেকে অনেক দুরে রেহান দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে নিশির কাছে গিয়ে নিশির হাতটা ধরে হাটা ধরে। নিশি আবাক হয়ে এক বার রেহানের দিকে আরেক বার রেহানের ধরা হাতের দিকে তাকায়। ভালোই লাগছে নিশির রেহানের পায়ে পায়ে মিলেই চলতে সাথে মুচকি মুচকি হাসছেও। রেহান নিশির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
–এভাবে হাসছো কেন?
–এমনি।
–এমনেই কেউ হাসে। কারন তো অবশ্যই আছে।
–না না কোনো কারন নেই।
–আচ্ছা বুঝলাম।
কিছুক্ষন চুপ থেকে রেহান আবার বলে উঠে
–ভেতরে যদি কোনো ধরনের সমস্যা হয় তাহলে আমাকে বলবে কেমন।
–আচ্ছা।
______
রেহানকে হলে ডুকতে দেখেই ওর সব বন্ধুরা চিৎকার করে উঠে
–আরে দেখো দেখো আমাদের মেইন গেস্ট চলে এসেছে কিন্তু আমাদের ভাবিসাব কোথায়? ওনাকে আনিস নি শালা তুই।
ঠিক এমন সময় রেহানের পিছন থেকে নিশি বের হয়ে আসে। নিশিকে দেখে রেহানের একেবারে ক্লোজ বন্ধু রাসেল বলে উঠে
–ওই তো আমাদের ভাবিসাব। যাক তাহলে তুই সাথে করে আনলি ভাবিসাবকে। ভেবেছিলাম আমাদের রিকোয়েস্টটা রাখবি। কিন্তু না তুই প্রমান করে দিলে তুই আমাদের বন্ধু।
আরেক জন বলে উঠে
–আরে সর সর আমাদের ভাবিসাবকে বসতে দে।
নিশি নার্ভাস হয়ে রেহানের হাত শক্ত করে ধরে আছে। রেহান নিশিকে চোখের ইশারায় স্বাভাবিক থাকতে বলে। নিশির হাত ধরে রেহান একটা টেবিলে এনে বসায় নিশিকে। সবার সাথে নিশি পরিচিত হওয়ার পর নিশি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
দুর থেকে একটা ছেলে এক ধ্যানে নিশির মায়াবী চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে হাতে মদের গ্লাস নিয়ে। কিছু একটা ভেবে চেয়ার থেকে উঠে এসে নিশির সামনে হাত বাড়িয়ে বলে
–হাই আমি রিফাত।
আচমকা এভাবে মুখের সামনে হাত বাড়িয়ে দেওয়াতে নিশি কিছু হচকিয়ে যায়। আবাক চোখে নিশি একবার রেহানের দিকে আরেক বার রিফাতের দিকে তাকায়। রেহান বসা থেকে উঠে রিফাতের সাথে হাত মিলেই দাত দাত চেপে বলে
–আমার সাথে হাত মিলা আমার বউয়ের সাথে হাত মিলানোর কোনো দরকার নেই।
রিফাত বাকা হেসে বলে
–আরে ভাই হাতেই তো মিলাতে চেয়েছি অন্য কিছু তো মিলাতে চাই নি এতে এতো হাইপার হওয়ার কি আছে। আর বিয়ে হতে না হতেই বউ পাগল হয়ে গেলি। পুরানটাকে ভুলে গেলি নাকি তুই।
রিফাতের এমন লাগামহীন কথা শুনে রেহানের দাতের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। রেহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাসেল পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য বলে
–আরে রিফাত তুই সর তো এখান থেকে। সবসময় কথা মাঝে চলে আসিস।
–ঠিক আছে এখন আপতত সরলাম কিন্তু…..
রেহানের গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে
–কিন্তু কি?
–কিছু না এন্জয় কর। অল দ্যা বেস্ট
বলে রিফাত ওখান থেকে চলে যায়। রিফাত চলে যেতেই আয়ন বলে
–রেহান দোস্ত ঠান্ডা হ। তুই তো জানিস ও এমনেই আর তর উপরে ওর হিণসা কাজ করে তা তো জানিস।
–হিংসা কিসের হিংসা আমার উপরে ওর। আমি তো ওকে হিংসা করি না তাহলে ও কেন আমাকে হিংসা করে।
নিশি আবাক চোখে তাকিয়ে ওদের কথা শুনছে। বেচারি কিছুই বুঝতে পারছে না তবে এত টুকু বুঝতে পারছে রিফাতের সাথে রেহানের কোনো সমস্যা আছে। কিন্তু পুরানটা ভুলে গেলি মানে কি বলতে চাইছে রিফাত এই কথাটা নিশিকে ভাবাচ্ছে। রাসেল বলে
–রেহান তর সাথে আমার একটু কথা আছে একটু ওদিকে যাবি।
রেহান নিশির দিকে তাকায়। রাসেল রেহানের চাওনি দেখে বলে
–আরে আয়ন আছে তো নিশির সাথে।
রেহান আর কিছু না বলে ওদিকটায় যায় রাসেলের। ওদিকটায় যেতেই রাসেল বলে উঠে
–কি রে রেহান তদের মাঝে সব ঠিক আছে।
–কি ঠিক থাকার কথা বলছিস?
–তর আর নিশির কথা বলছি। দেখ ভাই অতিতে যা হওয়ার হয়ে গেছে এবার তর সব কিছু নতুন করে শুরু করা দরকার। আমি জানি তুই হয়তো এখনও নিশিকে মেনে নিতে পারিস নি। কিন্তু মেয়েটার কি দোষ বলতো ও তো তর অতিতের বিষয় না জেনেই বিয়ে করেছে তাই ওকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি। সারাজীবন তো আর এভাবে কাটবে না।
–আমি এক বার ঠকেছি ভালোবেসে বার বার ঠকতে পারবো না রাসেল।
–নিশি তর স্ত্রীর রেহান। গার্লফ্রেন্ড নয় যে ও তকে ঠকাবে। একবার মেনে নে দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
–আমি জানি নিশি ওরকম মেয়ে নয় যে আমাকে ঠকাবে কিন্তু তারপরও।
–তারপরও তারপরও কি রেহান। আমি দেখেছি রিয়া তকে ছেড়ে যাওয়ার পরে কতটা কষ্ট পেয়েছিস তুই। আমি চাই না তুই আরও কষ্ট পাস।
রেহান নিশির দিকে তাকাতেই দেখে নিশি নিজের জায়াগাতে নেই।
–নিশি! নিশি কোথায়?
নিশিকে দেখতে না পেয়ে যেন রেহান পাগলেই হয়ে যাচ্ছে মনের কোনে একটা অচেনা ভয় কাজ করছে। হঠাৎ করে মেয়েটা কোথায় গেল এতক্ষন তো এখানে বসে ছিলো তাহলে গেলো কোথায়?
#চলবে
#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_14
সারা হল খুজা হলো নিশিকে কিন্তু নিশিকে কোথাও পেলো রেহান। মেয়েটা হঠাৎ কোথায় গেল রেহান বুঝতে পারছে না। অয়নের একটা ফোন আসাতে নিশিকে রেখে খনিকের জন্য একটু অন্য সাইডে গিয়েছিলো আর এসে দেখে নিশি নেই। রেহান রেগে রিফাতের কাছে গিয়ে রিফাতের কলার চেপে ধরে বলে
–নিশি কোথায়? কি করেছিস ওর সাথে?
–আরে ভাই আমি কি করবো তর বউয়ের সাথে আর আমার কলার ছার রেহান তর সাহস হলো কি করে হলো আমার কলার ধরার।
–আমার সাহসের কি দেখেছিস তুই। কিছু তো একটা করেছিস তুই নিশির সাথে না হলে হঠাৎ করে ও কোথায় গেল?
–কি প্রমানের প্রেক্ষিতে তুই আমাকে এই কথা বলছিস?
–কারন তুই সবসময় আমার ক্ষতি চেয়ে এসেছিা আর এখনও সেটা চাস সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।
–দেখ রেহান আমি তর বউয়ের সাথে কিছু করে নি। তুই আমার কলার ছাড়।
রেহানকে বন্ধুরা এসে রিফাতের কাছ থেকে জোর করে নিয়ে আসে।
–রেহান শান্ত হ একটু ভাবি হয়তো এখানে কোথাও আছে।
–এখানে কোথায় আছে ও,,, সারা হল খুজা হলো কোথাও তো পেলাম না।
হঠাৎ করেই রেহান কানে নিশির কন্ঠ ভেসে আসে
–আরে ভাই তরা এত চিৎকার করছিস কেন? একটু আস্তে কথা বল না।
রেহান ভ্রু কুচকে আসে নিশির এমন কথা শুনে। কিন্তু নিশি কোথায় কোথা থেকে কথা বলছে মেয়েটা। রেহান চিৎকার করে বলে উঠে
–নিশি কোথায় তুমি?
–আমি এখানে।
নিশির কন্ঠ অনুসরন করে রেহান নিশির কাছে এসে পৌছায়। সোফার পিছনে খাপটি মেরে বসে আছে। রেহানের নাক ফুসছে ইচ্ছে করছে নিশিকে তুলে একটা থাপ্পর দিতে কিন্তু আপতত নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে নিশির হাত শক্ত করে ধরে তুলে বলে
–তুমি সোফার পিছনে কি করছো নিশি?
–লুকোচুরি খেলছিলাম আপনার সাথে।
নিশি ডুলতে ডুুলতে কথাটা বললো। রেহান ছোট ছোট চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে
–হোয়াট লুকোচুরি খেলছিলে? এই মেয়ে তোমার কি লুকোচুরি খেলার বয়স এখন। আর তুমি এভাবে ডুলছো কেন সোজা হয়ে দাড়াতে পারছো না।
নিশি ভ্যা করে কেদে উঠলো নিশির কান্না দেখে রেহানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এই মেয়ের হঠাৎ হলো টাকি
–এই তুমি কান্না করছো কেন?
–আপনি আমাকে বকছেন কেন? আমি তো একটু লুকোচুরিই খেলছি আপনার সাথে তা বলে আপনি আমাকে এভাবে বকবেন।
রেহান নিশির দিকে একটু ঝুকে ঘ্রাণ নিতেই একটা বিশ্রী গন্ধ রেহান নাকে আসে। নিশির দু বাহু শক্ত করে ধরে সোজা করে দাড় করিয়ে বলে
–কি খেয়েছো তুমি নিশি?
–কি খাবো কিছু খাই নি তো।
–নিশি রাগিও না আমাকে সত্য কথা বলো কি খেয়েছো তুমি?
–ওইটা খেয়েছি।
হাতের ইশারায় দেখায় নিশি। রেহান তাকিয়ে দেখে একটা গ্লাস আর পাশেই মদের বোতল। রেহান বড় বড় চোখে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে
–তুমি মদ খেয়েছো।
নিশি হাসি হাসি মুখে বলে
–জানেন ওটা না খেতে খুব মজা ছিলো!! আমার আরেকটু খেতে ইচ্ছে করছে আরেকটু খাই।
–না একদম না। আর এটা বলো কে তোমাকে এটা খেতে দিয়েছে।
–কেউ দেয় নি আমি নিজেই খেয়েছি। পানি খেতে ইচ্ছে হয়েছিলো তাই খেয়ে ফেলেছি।
ঠোট উল্টিয়ে বলে কথাটা
–তুমি কি গাদা যা সামনে পাবে তাই খেয়ে ফেলবে।
–এই আপনি সবসময় আমাকে বকেন কেন বলুন তো,, বকার বদলে তো একটু আদরও করতে পারেন নাকি।
নিশির কথা শুনার সাথে রেহানের হাতের বাধন নিশির বাহু থেকে সরিয়ে নেয়। নিশি এই সুযোগে রেহান কলার ধরে মুখের সামনে এসে বলে
–আচ্ছা আপনি এমন কেন বলুন তো ঘরে এত সুন্দরী বউ থাকার পরেও আপনি কি করে দুরে দুরে থাকুন একটু বলবেন আমাকে।
নিশির কথা শুনে রেহান কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। পাশে রেহানের বন্ধুরা মুখ টিপে হাসছে নিশির কান্ড দেখে। নিশি আবার বলা শুরু করে
–আচ্ছা আপনি কি বড় কোনো ধরনের ছ্যাকা খেয়েছেন যে ছ্যাকা খেয়ে আপনি একে বারে ব্যাকা হয়ে গেছেন।
রেহানের দাতে চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। তারপরও নিজেকে সামলিয়ে বলে
–নিশি এবার কিন্তু একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
–কি বেশি হচ্ছে কিচ্ছু বেশি হচ্ছে না। আপনার মতো একটা ছ্যাকাখোর যে আমার কপালে ছিলো আমি কোনো দিন ভাবতেই পারি নাই। স্বপ্ন ছিলো রোমান্টিক একটা বর পাবো কিন্তু পেলাম কি একটা ছ্যাকাখোর বর।
রেহান নিশির হাত ধরে বলে
–নিশি বাড়ি চলো অনেক হয়েছে তোমার নাটক।
–না আমি যাবো না।
–যাবে না…. কেন যাবে না?
–আমি উড়ে উড়ে যাবো।
–উড়ে উড়ে যাবে মানে।
–হুম এই যে দেখুন আমি উড়ছি।
নিশি নিজের দু হাত মেলে পাখর মতো ঝাপটাতে শুরু করে। রাসেল রেহানের পাশে এসে বলে
–ভাই তোর বউ তো পুরাই মাতাল হয়ে গেছে।
রেহান চোখ গরম করে রাসেলর দিকে তাকিয়ে বলে
–যা কিছু হয়েছে শুধু মাএ তদের জন্য। ওকে যদি এখানে না নিয়ে আসতাম তাহলে এর কিছুই হতো না।
–ভাই এখন এসব বলে লাভ নাই আগে তর বউকে সামলে।
রেহান নিশির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে।
–এই দিনও ছিলো আমার কপালে।
রেহান নিশির হাত ধরে বলে
–নিশি চলো।
–না আমি হেটে যাবো না।
–তাহলে।
–উড়ে উড়ে যাবো।
–নিশি তুমি তো গুড গার্ল,, গুড গার্লরা কি এমন করে না আর মানুষ কি পাখির মতো উড়তে পারে তুমিই বলো।
–কেন পারে না?
ইনোসেন্ট ফেইস নিয়ে বলে কথাটা। রেহান কি করবে এই মেয়েকে নিয়ে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। রাসেল রেহানের অসহায় মুখটার দিকে তাকিয়ে বলে
–রেহান উত্তর দে।
রেহান রাসেলর দিকে তেড়ে আসতে নিলে রাসেল রেহানকে হাত দিয়ে থামিয়ে বলে
–ভাই আগে নিজের বউকে সামলা পরে আমাকে দেখে নিবি।
রেহান নিশির দিকে তাকিয়ে বলে
–নিশি তুমি উড়ে উড়ে যাবে তাই তো।
–হুমম।
–উড়তে হলে তো তোমাকে আকাশের নিচে যেতে হবে তাই না। তাই আমরা নিচে যাই তখন তুমি উড়তে পারবে।
–সত্যি।
–হুম একদম। পাখিরা তো খোলা আকাশেই উড়ে তাই না।
–হুম তাই তো!! ঠিক আছে চলুন তাহলে আমরা আকাশের নিচে যাই।
রেহান নিশির হাত ধরে রেস্টুরেন্টের বাইরে নিয়ে আসে। রেহান বের হতে রিফাত দাতে দাত চেপে বলে
–আমার কলার ধরে কাজটা ঠিক করিস নি রেহান তুই এর শোধ আমি তুলবো রেহান।
________
রেহান নিশিকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করে। নিশি নাক ফুলিয়ে বলে উঠে
–এই আপনি আমাকে মিথ্যা বললেন কেন? আকাশের নিচে আসার পর উড়তে পারলাম না কেন?
রেহান কোনো কথা বলছে না চুপচাপ এক মনে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে এই মেয়ের সাথে রেহান যদি কথা বলে তাহলে আজকে পাগল হয়ে যাবে। নিশি নিজের মতো বিরবির করছে আর রেহান ভ্রু কুচকে রেখেছে।
গাড়ি এসে থামে রহমান ভিলাতে। রেহান গাড়ি থেকে বের হয়ে নিশিকে পাজা’কোলে তুলে নিয়ে বাড়িতে ডুকে। রাহি এসে সদর দরজা খুলে দিতেই রেহান বলে
–এক গ্লাস লেবুর পানি নিয়ে আমার রুমে আয় রাহি তাড়াতাড়ি।
–ভাইয়া নিশু আপু কি হয়েছে??
–তকে এত কথা বলতে কে বলেছে যা বলছি তাড়াতাড়ি কর।
কথাটা বলেই রেহান নিশিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এসে বিছানাতে নিশিকে বসিয়ে সরে আসতে নিবে সাথে সাথে রেহানের কলার ধরে ফেলে নিশি। রেহানের আবাক চোখে নিশির দিকে তাকায়। নিশি করুন চোখে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে
–আপনি এমন করছেন কেন আমার সাথে? কেন আমাকে ইকনোর করেন আমি জানতে চাই, কেন আমাকে মেনে নিতে পারছেন না আমি জানতে চাই। আপনার লাইফে কি কোনো মেয়ে আছে যার জন্য আপনি আমাকে মেনে নিতে পারছেন না। ওই রিফাত নামের ছেলেটা কি বলল পুরানটাকে ভুলে গেছেন,, এর মানে আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন আপনি আমাকে।
রেহান কিছু বলতে যাবে সাথে সাথে রাহি দরজায় নক করে। রেহান নিশির হাত থেকে নিজের কলারটা ছাড়িয়ে রাহির কাছ থেকে লেবুর শরবতটা নিয়ে আসে। এসে নিশিকে বলে
–শরবতটা খেয়ে নাও নিশি।
নিশি পা তুলিয়ে বলে
–খাবো না।
–খেতে হবে।
–খাবো না বললাম তো।
–খাবে না মানে খেতে হবে তোমাকে।
রেহান নিশির মুখ বা হাত দিয়ে চেপে ধরে জোরে করে শরবতটা খাইয়ে দেয়। শরবতটা খাওয়ার পরে নিশি নাক মুখ কুচকে বলে
–এ্যা!! কি বিচ্ছিরি খেতে এত টক কেন খেতে এটা। কি খাওয়ালেন আমাকে আপনি।
–একটু পর বুঝতে পারবে কি খাওলাম।
–এই আপনি।
নিশি দড়াতেই রেহানের উপরে ঢলে পড়ে ।
–নিশি কি হলো তোমার?
সাথে সাথে গড়গড় করে বমি করে দেয় রেহানের শরীরের উপর। রেহান নাক কুচকে নেয় কি বিচ্ছিরি গন্ধ। নিশি রেহানের কাছ থেকে সরে এসে বা হাতের পাতা উল্টো করে মুখটা মুজে নেয়। নিশির বমি করা দেখে রেহান মুখ চেপে ধরে নিশিকে রেখে দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।
#চলবে