#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_9
রেহান বেডের উপর অফিসের সকল ফাইল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে তার মাঝে বসে কাজ করছে। একটা প্রজেক্ট নিয়ে চিন্তায় আছে দু দিনের মাঝেই ডিলটা ফাইনাল করতে হবে।
এর কিছুক্ষন পরেই নিশি রুমে আসে এসেই আলমারি থেকে কিছু একটা নিয়ে আবার বের হয়ে যায়। রেহান নিশিকে তেমন গুরুত্ব দিলো না কাজের মাঝেই বিভোর থাকলো। প্রায় আধ ঘন্টা পর নিশি আবার রুমে আসলো এবারও রেহান তেমন পাত্তা দিলো না নিশিকে লেপটপের দিকে তাকিয়ে কাজ করছে। কিন্তু নিশি সারা ঘর জুড়ে হাটা হাটি করছে একবার বেড সাইডে এসে কিছু খুজছে আবার ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে দেখছে। তাই রেহান বিরক্ত নিয়ে সামনে চোখ তুলে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে কিন্তু কিছু না বলার বদলে শকড খায় নিশিকে দেখো। মেরুন কালারের শাড়ি, লম্বা চুল গুলা ছাড়া, চোখে কাজল, মুখে তেমন সাজ নেই বললেই চলে তারপরও নিশিকে অপরুপ লাগছে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে থেকে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে নিশি সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি না,,,, সাথে রেহানও নিশিকে আজকে একটু বেশি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। হঠাৎ রেহানের ভ্রুদ্বয় কুচকে আসে এটা ভেবে নিশি এতো সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছে এসময়। নিশি চুলটা খোপা করে তাতে ক্লিপ দিয়ে ঘুরে তাকাতেই চোখ যায় রেহানের দিকে রেহানের এমন অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে
–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? মনে হচ্ছে যেন আমি মঙ্গল গ্রহের কোনো প্রানী।
রেহান নিজের ভাবনা থেকে ফিরে এসে বলে
–এত সাজুগুজু করে কোথায় যাচ্ছো তুমি?
— কই এত সাজলাম জাস্ট শাড়িটা পরলাম আর মুখে হালকা একটু পাউডার দিলাম, চোখে কাজল দিলাম আর তো কিছুই দেই নি মুখে।
–তাতেই তোমাকে অর্পূব লাগছে [বিরবির করে]
–কিছু বললেন আপনি?
–না কিছু বলে নি। তুমি কোথায় যাচ্ছো আগে সেটা বলো?
–ও মা আপনি জানেন না সকালেই তো মামনি বলল বাইরে যাওয়া কথা।
–মানে তুমিও মায়ের সাথে যাচ্ছো।
–হে। উফফ আমার কত দিনের ইচ্ছে ছিলো ঢাকা শহর ঘুরার আজকে সেই ইচ্ছেটা পুরন হবে জানেন আমি কতটা এক্সসাইটেড।
–এক্সসাইটেড না। [মাথা দুলিয়ে]
–হুম কিন্তু আপনি গেলে ভালো লাগত কিন্তু আপনার তো কাজ। কিন্তু কি আর করার আপনি তো যেতে পারবেন না। আচ্ছা আমি আসি তাহলে মামনিরা নিচে অপেক্ষা করছে।
নিশি বেরুতে যাবে ঠিক সেই সময় রেহান কিছু একটা ভেবে চিৎকার করে বলে উঠে
–নিশি দাড়াও আমিও যাবো।
–আপনি যাবেন।
–হুমমম।
–কিন্তু আপনার কাজ?
–কাজ শেষ আমার তুমি নিচে গিয়ে মাকে বলো আমার জন্য অপেক্ষা করতে আমি পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
–আচ্ছা।
নিশি যেতে রেহান বলে উঠে
—তুমি যে রুপ নিয়ে যাচ্ছ বাহিরে তাতে যদি কিছু একটা হয় তোমার না বাবা এত টেনশন নিয়ে আমি কাজ করতে পারবো না। তার চেয়ে ভালো তোমার সাথে যাই পরে কাজ করা যাবে। আগে বউ তারপর কাজ।
রেহান নিজের কথায় নিজেই চমকায় দু হাত দিয়ে চুল গুলা পিছনে ঠেলে বলে
–রেহান তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস দিন দিন। বলতে গেলে বউ পাগল হয়ে যাচ্ছিস আর এখন বউকে তর নিজের করে চাই ব্যাস।
_____
রেহান তৈরি হয়ে নিচে নামতেই রেহেলা বেগম বলে উঠে
–তুই তো না করে দিলি যাবি না আমাদের সাথে তাহলে হঠাৎ করে কি এমন হলো যে যেতে চাইছিস।
–উফফ মা এত কথা না বলে চলো তো।
রেহান ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে। রেহান নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করবে। রেহানের আশা ছিলো ওর পাশে নিশি বসবে কিন্তু ওর আশায় সব জল টেলে দিয়ে নিশি পিছনে বসেছে রাহির সাথে আর রেহানের পাশে ওর মা। এতে রেহানের একটু রাগ হলো নিশির উপর। মেয়েটা কি বুঝে না রেহান কি চায়।
রেহান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর লুকিং গ্লাস দিয়ে নিশিকে দেখছে রাহির সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। রেহেলা বেগম রেহানের চাওনি বুঝতে পেরে মুখ টিপে হাসছে ছেলের কান্ডকারখানা দেখে যত টুকু বুঝতে পারছে ওনার কাজে ওনি সফল হয়েছে। রেহেলা বেগম হালকা কেশে বলে উঠে
–রেহান বাবা গাড়িটা ঠিক করে চালা না হলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। বাড়িতে গিয়ে প্রান ভরে দেখে নিস মেয়েটাকে।
রেহান মায়ের কথা শুনে থতমত খেয়ে যায় কিন্তু কিছু বললো না। অন্য দিকে নিশি আর রাহি মায়ের এই কথাটার কোনো মানেই বুঝতে পারলো না।
______
গাড়ি থামে শপিং মলের সামনে রেহান নামার পরে এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নামে। নিশি নেমে হাটা শুরু করতেই রেহান খপ করে নিশির হাত ধরে ফেলে। নিশি আবাক হয়ে রেহানের দিকে জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাকায়। রেহান শান্ত গলায় বলে
–বাহিরে এসেছো একদম উল্টাপাল্টা কাজ করবে না চুপচাপ থাকবে আর শাড়ি সামলে রাখবে বুঝতে পেরেছো।
নিশি কিছু বলতে যাবে রেহানকে তখনেই রাহি ডেকে ওঠে ওকে। রেহানও হাত ছেড়ে দেয় হাত ছাড়ার সাথে সাথে নিশি কাছে গিয়ে রাহির সাথে সাথে হাটতে শুরু করে। রেহানও দু পকেটে হাত খুজে ওদের পিছন পিছন যেতে থাকে।
সবাই মিলে একটা শাড়ির দোকানে এলো রেহেলা বেগমের জন্য শাড়ি কিনতে। রেহান দোকটা বাইরে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। নিশির পাশে একটা ছেলে এসে দাড়িয়েছে বার বার নিশির বাহু স্পর্শ করছে ছেলেটার বাহু দিয়ে। রেহানের এটা দেখে আগুন জ্বলে উঠে মাথায়,,, নিজে এখন স্পর্শ করে নি নিশিকে আর অন্য এক জন কি না নিশিকে এভাবে। রেহান নিজের রাগটা সংযত করে ও চায় না কোনো ধরনের সিনত্রুিয়েট করতে তাও আবার মার্কেটে। রেহান নিশির দিক তাকিয়ে বুঝতে পারে নিশিও খুব অস্বস্তি ফিল করছে। রেহান নিশির কাছে গিয়ে আচমকায় নিশিকে টেনে নিজের পাশে এনে দাড় করায়। নিশি প্রথমে ভয় পেয়ে যায় আচমকায় হাতে টান পরাতে। নিশি রেহানের দিকে মাথা তুলে তাকাতেই রেহান বলে উঠে
–এখানে দাড়াও চুপচাপ।
নিশি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সব কিছু কেনাকাটা করে রেস্টুরেনটে ডুকতে যাবে ঠিক সেই সময় রাহি রেহেলা বেগমের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে
–মা আমরা বরং চলে যাই ভাইয়া আর নিশু আপু একা সময় কাটাক।
–কিন্তু ওরা যদি আমাদের সাথে চলে যেতে যায়।
–যাবে না আমি আর তুমি ওয়াসরুমে যাওয়ার নাম করে কেটে পরবো।
–আচ্ছা তুই গিয়ে রেহানকে বল।
রেহান নিশিকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ডুকতে যাবে তখন রাহি এসে রেহানকে বলে
–ভাইয়া মাকে নিয়ে ওয়াসরুমে যাচ্ছি একটু তুমি আর নিশু আপু গিয়ে বসো আমরা আসছি।
–আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসবি।
রেহান আর নিশি কর্নারের টেবিলে বসে আছে। নিশি আবাক চোখে তাকিয়ে সব কিছু দেখছে। এই প্রথম ও ঢাকা শহরে এসেছে তাই একটু ভালো করে সবকিছু চোখ বুলিয়ে নিছে। রেহানও চুপচাপ বসে নিশির কার্যকলাপ গুলা দেখছে। দিন দিন রেহান এই মেয়েটার মায়া পড়ে গেছে সেটা রেহান খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। রেহানের দিকে নিশির চোখ পড়তেই নিশি লজ্জায় পড়ে যায়। রেহানের চাওনি ইদানিং অন্য রকম লাগে নিশির কাছে কেমন যেন মাদকাসক্ত মাদকাসক্ত এই চাওনিতে।
রেহানের ফোন বাজতেই রেহান নিশির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ফোন নিয়ে দেখে রাহি কল করেছে রেহান ফোন ধরতেই রাহি বলে উঠে
–ভাইয়া আমরা বাসায় চলে যাচ্ছি বাসায় একটু সমস্যা হয়েছে তাই চলে যেতে হয়েছে।
–কি হয়েছে বাড়িতে?
–তেমন কিছু না।
–ঠিক আছে তরা দাড়া আমরা আসছি।
–না না তোমাকে আসতে হবে না। তোমরা একটু ঘুরে ফিরে আসো নিশু আপু তো কোনো দিন ঢাকা শহর দেখে নি তুমি একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসো আপুকে। আর আমরা রিকশা করে চলে যাবো কোনো সমস্যা হবে না।
রেহান নিশির দিকে তাকায় কপাল কুচকে নিশি রেহানের দিক তাকিয়ে আছে। রেহান আনমনেই বলে উঠে
–ঠিক আছে।
বলেই কেটে দেয়। রেহান ফোন কাটতেই নিশি চিন্তিত সুরে বলে উঠে
–কি হয়েছে বাড়িতে?
–কিছু হয় নি।
–মামনি আর রাহি কোথায়?
রেহান উঠে দাঁড়িয়ে নিশির হাতটা ধরে বলে।
–চলো।
–কোথায় যাবো?
–গেলেই বুঝতে পারবে।
#চলবে