#তুমি আমার (পর্ব ০৯)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
মেঘা রাতে পড়ছিলো হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠলো মেঘা ফোনটা হাতে নিয়ে রেহানের নাম্বার দেখে মুচকি হেসে রিসিভ করলো।
– আসসালামুয়ালাইকুম…ভাইয়া কেমন আছেন?
রেহান কিছুটা অবাক হলো মনে মনে ভাবছে….. কি ব্যাপার! এটা যে আমার নাম্বার মেঘা কি সেটাও জেনে গিয়েছে?
রেহানকে চুপ থাকতে দেখে মেঘা বললো
– কি হলো কিছু বলছেন না যে?
– ওয়ালাইকুমআসসালাম…আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
– হুম আমিও ভালো আছি। তো ভাইয়া কিছু কি বলবেন?
– আমি তো তোমার অপরিচিত তাহলে আজ কোনো প্রবলেম হচ্ছে না তোমার?
– কে বলেছে আপনি আমার অপরিচিত,কাল রাতেই তো চুরি করতে এসেছিলেন আপনি আমার রুমে তাইনা।
রেহান মাথা চুলকে একটু হেসে বললো
– যাহ এখানেও ধরা খেয়ে গেলাম।
মেঘা একটু হাসলো কিছু বললো না। রেহান বললো
– আচ্ছা চিনে যেহেতু ফেলেছো তাহলে এখন বলো কি ভাবলে আমার ব্যাপারে?
– কই আমি তো কিছু ভাবি নি।
– কিছু যদি না ভাবো তাহলে,আমি কাল রাতে তোমার রুমে গেলাম কিছু বললে না কেনো? আমি যে তোমাকে ভালোবাসি এবং ফোনটাও আমি করেছি তারপরও কেনো কিছু বলছো না বলো?
…………
– এই মেঘা চুপ করে আছো কেনো বলো কিছু? তাহলে কি আমি ভেবে নিবো তোমার উত্তরটা পজিটিভ হবে।
– হুম ভাবতে পারেন।
কথাটি বলে মেঘা ফোন কেটে দিয়ে বুকে হাত দিয়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো,,একটু হেসে বলতে লাগলো
– ভালোবাসি রেহান আমিও যে ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে। সেদিন আপনার গান শুনেই আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম,তারপর থেকেই আপনাকে আমি লুকিয়ে দেখতাম। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম এটা শুধু আমার সপ্ন হয়ে থাকবে সত্যি হবে না কখনো। কারন আপনার মতো এমন একটা ছেলের সাথে আমাকে মানায় না।
তবে যখন আমি জানলাম আপনিও আমাকে ভালোবাসেন তখনি মনের সকল দুশ্চিন্তা গুলো দূর হয়ে তা আনন্দে পরিনত হয়েছে।
.
🌿
.
পরের দিন মেঘা কলেজে এসে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলো। ক্লাস রুম তিন তলায় মেঘা একতলা সিড়ি দিয়ে উঠতেই কেউ পেছন থেকে হাত ধরে টেনে পাশের ফাকা একটা ক্লাসরুমে নিয়ে এলো। সব কিছু তাড়াতাড়ি হওয়ায় মেঘার কিছুটা সময় লাগলো কি ঘটেছে ভাবতে। মেঘা বিষ্ময় চোখে তাকালো সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখার জন্য। তাকাতেই মেঘা শকড চোখ বড় বড় করে বললো
– ভাইয়া আপনি!
রেহান ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো
– হুম আমি।
– আপনি আমাকে এখানে কেনো এনেছেন ভাইয়া?
রেহান মেঘার হাতটা একটু জোরে চেপে ধরে বললো
– এই মেয়ে কি ভাইয়া ভাইয়া করছো? আর কখনো যেনো ভাইয়া ডাক না শুনি।
মেঘা হাতে ব্যাথা পেয়ে রেহানকে বললো
– হাতে ব্যাথা পাচ্ছি তো ছাড়ুন।
রেহান মেঘার হাতটা ছেড়ে দিলো,,মেঘা মাথা নিচু করে বললো
– বললেন না কেনো এনেছেন এখানে?
– কেনো আবার তোমাকে দেখার জন্য।
মেঘা রেহানের দিকে তাকালো রেহানের মুখে লেগে আছে হাসি যে হাসিটা মেঘাকে আরো আকৃষ্ট করে তুলছে। মেঘা একটু তাকিয়ে থেকে চোখটা নামিয়ে নিলো। রেহান মেঘার গালে হাত রেখে মেঘার মুখটা ওপরে তুললো
– মেঘা তাকাও আমার চোখের দিকে।
মেঘা তাকালো রেহানের চোখে রেহান অপলক দৃষ্টিতে মেঘার দিকে চেয়ে আছে। রেহান নিচু স্বরে বললো
– মেঘা আমি জানি না কিভাবে তোমাকে এত ভালোবেসে ফেললাম,আর জানতে চাইও না।শুধু এটাই জানি তোমাকে ছাড়া আমার একমুহুর্ত ও চলবে না। প্লিজ মেঘা আমাকে ছেড়ে দূরে যেও না কখনো।
মেঘার চোখে পানি ছলছল করে উঠলো মেঘা মুচকি হেসে রেহানের চোখে চোখ রেখে বললো
– আমি কি এত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?
– কেনো নয় হুম,আর শুরুতে কেউ কারো যোগ্য হয় না,নিজের চেষ্টায় যোগ্য হয়ে উঠতে হয়। তবে আমি মনে করি তুমিই আমার জন্য পারর্ফেক্ট। এই মেঘা আমার পাশে থাকবে তো সব সময়?
– হুম থাকবো আপনি যতোদিন আমাকে আগলে রাখবেন ততোদিন আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আর যদি আপনি আমায় আগলে…..
মেঘার মুখ চেপে ধরে রেহান বললো
– আমি সারাজীবন আগলে রাখবো তোমায়। আর শোনো আমাকে তুমি করে বলবে আর ভাইয়া ডাকটা ভুলেও ডাকবে না।
– দেখবো।
– দেখবো না যা বলেছি সেটা করবে। আচ্ছা মেঘা তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি,আমার আগেও একটা রিলেশন ছিলো তবে সেটা….
– অতীত আমি জানতে চাইনা আগে যা ছিলো সেটা আমাকে না বললেও চলবে।
– কিন্তু আমি তো বলবো তোমায় তোমার জানাটা প্রয়োজন।
– আচ্ছা অন্য একদিন শুনবো আমার ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে যেতে হবে।
– ওকে যাও আর শোনো ছুটির পর গেটের বাইরে অপেক্ষা করবো আমি।
মেঘা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে যেতে নিলে রেহান ওর হাত ধরলো মেঘা ফিরে তাকাতেই রেহান এগিয়ে এসে আলতো করে মেঘার কপালে ঠোঁট ছোয়ালো। তারপর মুচকি হেসে বললো
– এখন যেতে পারো।
মেঘা লজ্জামাখা মুখ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
.
🌿
.
ছুটির পর রেহান গেটের বাইরে বাইকের ওপর বসে আছে পাশে তানভির ও আছে। মেঘা তানিশা অনু একসাথেই বের হলো,তানিশা অনুর বাড়িটা একদিকে হওয়ায় ওরা চলে গেলো। মেঘা রেহানের দিকে তাকিয়ে রাস্তার একপাশে দাড়ালো।
তানভির রেহানকে বললো
– কিরে এখনো বসে আছিস কেনো যা মেঘার কাছে।
– যাবো আমি?
– নাহ তুই কেনো যাবি যাবো তো আমি তাইনা। মাথায় কি নিয়ে ঘুরিস কে জানে! যা জলদি।
রেহান মেঘার দিকে আসছে দেখে মেঘা একটু হাসলো হঠাৎই রাফিন এসে দাড়ালো মেঘার সামনে। রেহান রাফিনকে দেখে আর এগোলো না দাড়িয়ে পড়লো।
মেঘা রাফিনকে দেখে আড়চোখে রেহানের দিকে তাকালো। রেহানের মুখে গম্ভীর ভাবটা স্পষ্ট।
মেঘা বিরক্তি মাখা কন্ঠে রাফিনকে বললো
– কি চাই এভাবে হুটহাট সামনে আসেন কেনো আপনি?
– তোমার বাসার এড্রেসটা চাই দেবে আমায়?
মেঘা চরম অবাক হলো সাথে
– আপনাকে আমার বাসার এড্রেস দিতে যাবো কেনো?
– আমি চেয়েছি তাই।
মেঘার খুব রাগ হচ্ছে এখন আড়চোখে রেহানের দকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে….আশ্চর্য তো! একটা ছেলে আমার সাথে কথা বলছে আর উনি দাড়িয়ে দেখছে!
ওদিকে রেহানকে দাড়াতে দেখে তানভির এগিয়ে এলো
– কিরে দাড়িয়ে পড়লি কেনো?
– রাফিন আজও মেঘার সাথে কথা বলতে এসেছে।
– তাতে কি হয়েছে তুই মেঘাকে ভালোবাসিস আর ও তোকে তাহলে বাধা কিসের? তুই যা মেঘাকে ওর সামনে থেকে হাত ধরে নিয়ে আসবি।
রেহান ভাবলো…তানভির তো ঠিকি বলেছে আমাদের মাঝে তো আর কোনো বাধা নেই। তবে এই রাফিনকে আমার ফলো করতে হবে বড়মার কাছে পৌছানোর জন্য আর তাই রাফিনের সাথে একটু মিশতে হবে আমায়।
রেহান মেঘাদের সামনে এসে মেঘাকে উদ্দেশ্য করে বললো
– মেঘা এখানে দাড়িয়ে আছো যে বাড়িতে যাবে না?
মেঘা রেগে বললো
– না যাবো না, যান আপনি আপনার কাজে যান।
রেহান মেঘার রাগের কারনটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে রাফিনের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো
– হাই আমি রেহান।
রাফিন রেহানের সাথে হাত মিলিয়ে বললো
– আমি রাফিন। আপনাকে তো চিনতে পারলাম না নীলপরীর কে হন আপনি?
– নীলপরী??
– ওহ সরি আসলে মেঘার কথা বলেছি ওকে নীলপরী বলে ডাকি আমি।
রেহানের খুব রাগ হচ্ছে তবে এখন রাগলে তো চলবে না তাই হাসি মুখেই বললো
– ওও আচ্ছা! আমি মেঘার খুব কাছেন একজন।
মেঘা খুবই বিরক্ত হচ্ছিলো এতক্ষণ আর এখন রেহানের বলা কথাটি শুনে চরম রাগ হলো ওর কিছু না বলে চলে গেলো সেখান থেকে।
রেহান রাফিন কেউ খেয়াল করে নি মেঘা চলে গিয়েছে দুজন তো কথা বলতে ব্যস্ত। দুজনে আপনি থেকে তুইতে চলে এসেছে। রেহান রাফিনকে বললো
– রাফিন তোর বাড়িতে কে কে আছে?
– আমার মা বড় ভাই আর ছোট বোন আছে।
রাফিনকে যতটা খারাপ ভেবেছিলো রেহান রাফিন ততোটাও খারাপ নয়।
রেহান মনে মনে ভাবলো….রাফিনকে বোঝাতে হবে মেঘাকে আমি ভালোবাসি আর মেঘাও আমাকে ভালোবাসে,তবে তার আগে বড়মার খোজ বের করতে হবে। আমি যদি ভুল না করি তাহলে বড়মাই রাফিনের মা আর রাফিন ওর মায়ের সব কথা শোনে।
·
·
·
চলবে………………