#তুমি আমার (পর্ব ০৭)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
মেঘা আর তন্ময় বাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনে বাজার থেকে ফিরছিলো,হঠাৎ ওদের সামনে এসে একটা গাড়ি দাড়ালো। তন্ময় মেঘার দিকে তাকালো আর মেঘা গাড়িটির দিকে তখনি হাসি মুখে রাফিন নেমে দাড়াঁলো। মেঘার খুব বিরক্ত লাগছিলো ওকে দেখে,পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই রাফিন বলে উঠলো
– নীলপরী কোথায় যাচ্ছো?
মেঘা বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললো
– কোথায় আবার বাড়িতে যাচ্ছি।
– ওও আচ্ছা। ও কে? তন্ময়কে দেখিয়ে।
– আমার ছোট ভাই। বলেই মেঘা তন্ময়ের হাত ধরে বললো তন্ময় চল।
– আরে নীলপরী এত তাড়া কিসের তোমার যখনি দেখা হয় তাড়াহুড়া করো।
– মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আপনার সাথে গল্প করার ইচ্ছে আমার নেই,আর আপনি যখন তখন এভাবে কথা বলতে আসবেন না প্লিজ।
মেঘা আর একটুও না দাঁড়িয়ে চলে আসলো সেখান থেকে। তন্ময় জিগ্যেস করলো
– আপু কে ওই ছেলেটি?
– আর বলিস না কলেজ থেকে দেখা হয়েছে দেখলেই কথা বলতে চলে আসে আবার নীলপরী বলে ডাকে আমাকে,বিরক্তিকর একটা লোক।
মেঘারা চলে আসার পরে রাফিন মেঘার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলছে….নীলপরী তুমি আমাকে এড়িয়ে চলছো তাইনা,দুরে থাকতে চাচ্ছো কিন্তু আমি যে তোমাকে এ মন থেকে দূরে সরাতে পারবো না।
রেহানের নজর এখন সব সময় মেঘার ওপর থাকে দুর থেকে রাফিনের দিকে রাগি চোখে তাঁকিয়ে রেহান বললো…. এই রাফিন বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছে , আমাকে খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা করতে হবে মেঘাকে আমি হারাতে চাইনা। এ কদিনেই মনে হচ্ছে মেঘাকে ছাড়া আমার চলবে না গভীর ভাবে ফিল করি ওকে আমি। তোমাকে আমি অন্য কারো হতে দেবো না মেঘা,,,,তুমি আমার শুধুই আমার।
.
🌿
.
রেহান রাতে শুয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে মেঘার ছবি দেখে হাসছে ছবিটি লুকিয়ে তুলেছিলো।রাফসান তখন রুমে ঢুকে দেখে রেহান ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। রাফসান এসে ওর পিঠ চাপড়ে বললো
– কিরে রেহান কি আছে ফোনের মাঝে যা দেখে তোর এত হাসি আসছে?
রেহান একটু চমকে উঠে ফোনটা লক করে হেসে বললো
– ককই ভাইয়া কিছু দেখছি না তো।
– বললেই হলো কিছু দেখছি না। তোর চোখে মুখে যে উজ্জ্বলতা দেখছি সেটা কিসের? নিশ্চই ফোনে কিছু আছে! দেখি দে ফোনটা আমি দেখবো।
রেহান ফোনটা নিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লো
– আরে ভাইয়া কিছু নেই তো কি দেখবি তুই।
রাফসান ও ছাড়ার পাত্র নয় দুভাই রুমের মাঝেই ছুটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। এর মাঝেই মিথিলা রুমে ঢুকলো। (মিথিলা রাফসানের বউ)
দুভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে বললো
– এ কি করছো তোমরা!!বাচ্চাদের মতো ছুটাছুটি করছো কেনো?
রেহান এসে মিথিলার পেছনে দাঁড়িয়ে বললো
– ভাবি ভাইয়াকে কিছু বলো তো তখন থেকে ছুটছে আমার পেছনে।
– ওই আমি যা দেখতে চাইছি দেখালেই তো হয়।
মিথিলা কিছু বুঝতে না পেরে রাফসানকে বললো
– কি হয়েছে হুম ভাইয়ার পেছনে ছুটছো কেনো তুমি?
– ভাবি আমি বলছি,আমি ফোনে একটা ছবি দেখে হাসছিলাম আর ভা……এটুকু বলেই রেহান জ্বিভ কাটলো। মনে মনে বললো…এইরে এ কি বলে ফেললাম আমি!
রাফসান আর মিথিলা দুজন দুজনের দিকে তাকালো মিথিলা ভ্রু কুঁচকে বললো
– ফোনে কি দেখছিলে ভাইয়া?
রাফসান এবার আরো জোর পেলো মিথিলাকে বললো
– বুঝলে মিথি ভাইটা আমার হয়তো প্রেমে পড়েছে মনে হচ্ছে,আমি যখন তোমার প্রেমে পড়েছিলাম ঠিক এই ভাবেই নিজের ফোনে তোমার ছবি দেখে হাসতাম আমি।
মিথিলা চোখ গরম করে তাকালো রাফসানের দিকে রাফসান আমতা আমতা করে বললো
– না মানে বলছিলাম আর কি। এই রেহান বল এমন কিছু নয় তো?
রেহান চুপ করে আছে দেখে মিথিলা এগিয়ে এসে বললো
– ভাইয়া আসল ব্যাপারটা কি বলো তো আমিও তোমার মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখছি কিছুদিন ধরে।
রেহান যে এদের দুজনকে না বলে রেহায় পাবে না তাই বাধ্য হয়ে ফোনের থেকে মেঘার ছবিটা দেখিয়ে বললো
– ভাবি মেয়েটা কেমন?
মেঘার ছবিটা দেখে রাফসান আর মিথিলার দুজনেরি খুব পছন্দ হয়েছে। মিথিলা হেসে বললো
– বাহ!! মেয়েটি তো খুব মিষ্টি দেখতে তবে বয়সটা কম মনে হচ্ছে,আমার জা হিসেবে খারাপ হবে না। আমি তো খুব করে চাই আমার জা হয়ে যে আসবে তার বয়সটা একটু কম হতে হবে।
– বা বাহ ছবি দেখেই তুমি জা বানিয়ে নিলে?
– বা রে ভবিষ্যৎ এ তো হবেই আগে থেকে মানলে সমস্যা কোথায়! কি ভাইয়া ঠিক বলেছি না?
রেহান মাথা চুলকে হেসে মাথা নাড়ালো। রাফসান রেহানকে বললো
– তো রেহান মেয়েটির সম্পর্কে বল এখন।
রেহান মেঘার সম্পর্কে রাফসান আর মিথিলাকে সবটা বলার পর ওরা কোনো ওমত করেনি বরং রেহানকে সাপোর্ট করেছে।
.
🌿
.
পরের দিন সকালে রেহান কলেজের গেট এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘাকে দেখার জন্য। একটু পরেই মেঘা এসে নামলো রিক্সা থেকে। রেহানের ঠোঁটের কোনো হাসি ফুটে উঠলো মেঘাকে আসতে দেখে। মেঘা গেটের দিকে আসছিলো তখনি একজন মধ্য বয়সী মহিলা মেঘার সামনে এসে হাসি মুখে দাড়াঁলো। মেঘা দাঁড়িয়ে পড়লো কিছুটা অবাক হয়ে বললো
– আন্টি কিছু বলবেন আপনি?
মহিলাটি মেঘার থুতনিতে হাত দিয়ে বললো
– কি নাম তোমার?
– আমার নাম মেঘা।
– বাহ তোমার মত তোমার নামটাও সুন্দর।
রেহানের একটা ফোন আসাতে কথা বলছিলো তাই খেয়াল করেনি কথা শেষ করে মেঘার দিকে তাকাতেই ওর মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো মেঘার সামনে থাকা মহিলাটিকে দেখে।
– বড়মা! বড়মা এখানে কি করছে আর মেঘাকে কি বলছেন?
রেহান একপা এগোতেই থেমে গেলো।
রাফিন এসে মহিলাটির কাধে হাত রেখে হসে বললো
– মা দেখেছো তো নীলপরীকে?
মেঘা অবাক হয়ে তাকালো রাফিনের দিকে…রাফিনের মা এটা কিন্তু উনার মা আমাকে কেনো দেখতে এসেছে?
মেঘার হঠাৎ চোখ পড়লো রেহানের দিকে রেহান কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেঘা চোখ নামিয়ে নিয়ে মনে মনে ভাবছে…কি ব্যাপার! রেহান ভাইয়া এভাবে কেনো তাকিয়ে আছেন?
মেঘা মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বললো
– আন্টি একটু পরেই আমার ক্লাস আসছি আমি।
মেঘা কথাটা বলেই চলে এলো।
রাফিনের মা হেসে রাফিনকে বললো
– রাফিন তোর পছন্দ আছে মেয়েটাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।
ওদিকে রেহান এখনো থম মেরে দাড়িয়ে আছে ওর চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে,…বড়মা এতদিন পর কোথা থেকে আসলো!রাফিন এসে ওমন ভাবে ধরলো কেনো বড়মাকে? কে হয় রাফিন ওনার? আমার তো কিছুই মাথায় আসছে না।নাহ এর উত্তর বড়মাই দিতে পারবে কিন্তু এতদিন পর বড়মা কি আমাকে চিনতে পারবে?
এসব কথা ভাবতে ভাবতে রেহান খেয়াল ও করেনি রাফিনরা সেখান থেকে চলে গিয়েছে। রেহান সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর বড়মা আর রাফিন নেই ওখানে। রেহান আর একমুহুর্ত দেরি না করে বাইক নিয়ে বাড়িতে চলে আসলো।
·
·
·
চলবে………………….