তুমি আমার পর্ব- ০২

0
1532

#তুমি আমার (পর্ব ০২)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
মেঘা ওর ফ্রেন্ড তানিশা আর অনুর সাথে ক্যান্টিনে বসে ছিলো। হঠাৎ কানে ভেসে আসলো গিটারের টুংটাং আওয়াজ। মেঘা এদিক ওদিকে তাকালো ওদের থেকে কিছুটা দুরত্বে বড় বট গাছটার নিচে কয়েকটা ছেলেমেয়ের ভীর জমে আছে,আওয়াজটা সেখান থেকেই আসছে। মেঘা তানিশাকে বললো
– এই তানিশা গিটারের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিস তুই?
– হ্যা পাচ্ছি তো। কি সুন্দর সুর তুলছে! শব্দটা মনে হচ্ছে ওইদিক থেকে আসছে।
মেঘা উৎসাহ নিয়ে বললো
– চল না দেখে আসি কে বাজাচ্ছে।
অনু বলে উঠলো
– হয়তো রেহান ভাইয়া হবে উনি দারুন গিটার বাজায় আর গানের গলাটা তো আরো সুন্দর।
মেঘা তানিশা দুজনেই তাকালো অনুর দিকে মেঘা বললো
– রেহানটা আবার কে?
অনু কঁপালে ভাজ ফেলে হেসে বললো
– ওমা এটাও জানিস না! রেহান ভাইয়াকে তো সবাই চিনে। উনি এ কলেজেরি ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট।
তানিশা বললো
– এত চিনে কাজ নেই মেঘা চল তো দেখে আসি।

রেহান চোখ বন্ধ করে গিটারের তালে সুর মিলিয়ে গান গাচ্ছে। রেহানের ফ্রেন্ডরা সহ আরো কিছু ছেলেমেয়ে ওকে ঘিরে কেউ দাড়িয়ে আছে আবার কেউ বসেও আছে।
মেঘা তানিশা অনু ওরা এসে কিছুটা দুরত্ব রেখে দাড়ালো। মেঘা মুগ্ধ হয়ে রেহানের গান শুনছিলো,যখন রেহানকে দেখলো তখন একটু চমকালো মনে মনে ভাবলো
– এ তো কালকের সেই ছেলেটি।
রেহান পুরো গানটি চোখ বন্ধ করেই শেষ করলো। গান শেষে উপস্থিত সবাই জোরে হাতে তালি দিলো কেউ কেউ সিটিও বাজাচ্ছে।
মেঘা এখনো তাকিয়ে আছে রেহানের দিকে ও যেনো একটা ঘোরে চলে গিয়েছে। তানিশা মেঘার বাহু ধরে ঝাকিয়ে বললো
– কিরে মেঘা কোথায় হারালি তুই!
মেঘা চমকে উঠে তাকালো তানিশার দিকে,তারপর বললো
– শুধু গিটারের তালে কেউ এত সুন্দর করে সুর তুলে গান গাইতে পারে আমার জানা ছিলো না।
অনু হেসে উঠে বললো
– ঠিকি বলেছিস মেঘা আমি তো পুরো ফিদা রেহান ভাইয়ার গান শুনে। আর উনি কি কিউট দেখেছিস যখন গান গাইছিলো মাঝে মাঝে গালে টোল পড়ছিলো কি সুন্দর যে লাগছিলো দেখতে।উনি যদি আমার থেকে এতটা সিনিওর না হতো আমি এখনি গিয়ে প্রোপোজ করতাম।
তানিশা জোরে হেসে উঠে বললো
– তো যা না গিয়ে প্রোপোজ করে দে,সিনিওর তাতে কি।
– তানিশা তুই ঠিক বলছিস!! করবো প্রোপোজ??
– চুপ কর হারামি তোর কি মনে হয় ওই ছেলে এখনো সিঙ্গেল আছে। আর তোর মতো একটা পিচ্চির প্রোপোজাল সে এক্সেপ্ট করবে!
অনু গাল ফুলিয়ে রইলো আর কিছু বললো না। মেঘা চুপচাপ শুনছিলো ওদের কথা কিন্তু কিছুই বলার প্রয়োজন মনে করেনি। মেঘা ওদেরকে বললো
– চল এখন ক্লাসে যাই।
ওরা ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
.
🌿
.
কলেজ ছুটির পর মেঘা তানিশা অনু গেটের বাইরে এসে দাড়ালো,সামনে ফুসকা দেখে অনু লাফিয়ে উঠে বললো
– মেঘা তানিশা ওই দেখ ফুসকা চলনা খাই।
মেঘা বাইরের খাবার তেমন পছন্দ করে না তবে ফুসকাটা ওর খুব প্রিয়। তাই আর না করলো না তিনজনে মিলে এগিয়ে গেলো ফুসকার ভ্যানের সামনে।
তিন প্লেট ফুসকা অর্ডার করে ওরা দাড়িয়ে কথা বলছিলো। ওদের তিনজনের মধ্য অনু বরাবরি বেশি কথা বলে আর হাসাতেও পারে ওর আজগুবি সব কথা বলে। অনু এমন এমন কথা বলছে যা শুনে মেঘা জোরে হেসে উঠলো।
রেহান আর তানভির যাচ্ছিলো সেখান নিয়ে হাসির শব্দ পেয়ে রেহান ঘুরে তাকালো।
মেঘার হাসি দেখে মুহূর্তেই তার চোখ আটকে গেলো।
এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো মেঘার দিকে। রেহান নিজেও বুঝতে পারছে না কেনো সে মেঘার দিকে তাকিয়ে আছে। কেনোই বা ওর হাসিতে এত মুগ্ধ হচ্ছে! তানভির রেহানকে ঝাকিয়ে বললো
– কিরে দাড়িয়ে পড়লি যে চল।
রেহান তানভিরের দিকে না তাকিয়েই বললো
– তানভির তুই বাড়িতে যা এখন সন্ধায় দেখা হবে। আমার এখন একটু কাজ আছে।
তানভির মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। রেহান চমকালো! মনে মনে ভাবছে
– কি হলো হঠাৎ আমার! আমার তো এখন কোনো কাজ নেই তাহলে তানভিরকে কেনো পাঠিয়ে দিলাম?
রেহান আবারো তাকালো মেঘার দিকে তারপর চোখ সরিয়ে মনে মনে বলছে
– কাল এই মেয়েটার মুখ বারবার আমার চোখে ভেসে উঠছিলো আর আজ ওর হাসি আমাকে মুগ্ধ করছে কিন্তু কেনো হচ্ছে এমন কিছুই তো বুঝতে পারছি না আমি!!
.
🌿
.
মেঘারা ফুসকা খেতে শুরু করলে ছোট একটি মেয়ে এসে মেঘার ওড়না ধরে টানছিলো। মেঘা তাকালো সেদিকে,মেয়েটির বয়স ৭ থেকে ৮বছর হবে গায়ে নোংরা জামা চুলগুলো এলোমেলো মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সকাল থেকে কিছুই খায়নি,মেঘার খুব মায়া হলো। মেঘা নরম স্বরে মেয়েটিকে বললো
– ক্ষুদা পেয়েছে তোমার?
মেয়েটি এদিক ওদিকে মাথা নাড়ালো মানে হ্যা ওর ক্ষুদা পেয়েছে।
মেঘা নিজের হাতে থাকা ফুসকার প্লেটটা এগিয়ে দিলো
– নাও এটা খাও তুমি,আমি তোমার জন্য আরো খাবার নিয়ে আসছি।
মেয়েটি হেসে মেঘার হাত থেকে প্লেটটি নিয়ে নিলো।
তানিশা অনু মেঘার এমন কাজ দেখে খুব খুশি হলো। আরো একজনও দেখছিলো মেঘা কি করে সে আর কেও নয় রেহান। রেহান অনেকটা উৎসাহ নিয়ে পাশে থাকা গাছটিতে হেলান দিয়ে দাড়ালো মেঘা কি করে দেখার জন্য।

মেঘা একটা ব্যাগ এনে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
– তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
– আম্মায় আছে আর ছোডো বইন আছে।
– বাবা নেই তোমার?
মেয়েটির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো,মেঘা আর কিছু জানতে না চেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
– এই ব্যাগে পাউরুটি কলা আর কিছু ফল আছে বাড়িতে গিয়ে তোমার মা বোনের সাথে করে খাবে কেমন।
মেয়েটি হেসে দিয়ে মেঘার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বললো
– আফা আল্লাহ আপনারে খুব ভালা রাখবো দেইখেন।
মেঘা মৃদু হাসলো। মেয়েটি খুশি হয়ে দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।
তানিশা মেঘাকে বললো
– মেঘা তোর থেকে সত্যিই আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি রে আজও নতুন কিছু শিখলাম,তোর মত বন্ধু পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।
মেঘা হেসে বললো
– তানিশা তুই একটু বেশি বলছিস।
অনু মেঘার কাছে এসে বললো
– তানিশা ভুল কিছু বলেনি মেঘা ও ঠিক বলেছে।
– হয়েছে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে চল এখন।
ফুসকার বিল মিটিয়ে ওরা চলে আসলো সেখান থেকে।
.
🌿
.
রেহান খুব মনোযোগ সহকারে মেঘাকে দেখছিলো এতক্ষণ,রেহান একমাত্র রুহিকে ছাড়া কোনো মেয়েকে এভাবে কখনো দেখেনি কিন্তু আজ দেখছে।ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো
– এটুকু একটা মেয়ে কিন্তু কতটা ভালো তার চিন্তাধারা! ওকে দেখে তো মনে হলো মধ্যবিত্ত ঘরের নম্র ভদ্র সাধারণ একটি মেয়ে। জানিনা বার বার কেনো জানতে ইচ্ছে করছে মেয়েটি সম্পর্কে।মেয়েটার মুখে একটা মায়া আছে হাসলে যেনো সে মায়া আরো বহুগুণে বেড়ে যায়।
তারপরেও ওকে দেখে মনে হয় চাপা কষ্ট জমে আছে ওর ভেতরে। খুব আগ্রহ জাগছে জানার। কালই জানতে হবে মেয়েটির সম্পর্কে।
পরক্ষণেই রেহান ভাবলো
– আচ্ছা আমি কেনো মেয়েটি সম্পর্কে জানতে চাইছি! কেনোই বা এভাবে রাস্তায় দাড়িয়ে ওকে দেখলাম! আমি তো রুহিকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবতে চাইনি কখনো। রুহির হাসি কথা বলা আমাকে মুগ্ধ করে তবে এতটা নয় কিন্তু আজ এই মেয়েটির হাসিতে কেনো মুগ্ধ হলাম আমি? নাহ আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি।এখন রুহির সাথে দেখা করা দরকার আমার হয়তো ওকে দেখলে সব ভুলে যাবো আমি।

রেহান রুহিকে কল দিলো দেখা করার জন্য। রুহিও রাজি হয়েছে দেখা করবে বলেছ। একটা রেস্টুরেন্টে রুহির সাথে দেখা করলো রেহান তারপর সেখান থেকে বেড়িয়ে সারা বিকেল রুহির সাথে কাটিয়ে সন্ধায় বাড়ি ফিরেছে রেহান। রেহান রুহির সাথে সময় কাটিয়েছে ঠিকি তবে মেঘার মুখটা ভুলতে পারছে না, না চাইতেও বারবার ওর হাসি মাখা চেহারাটা ভেসে উঠেছে।

আজ সে রুহিকে আগের মতোই পেয়েছে যেমনটা রিলেশনের শুরুতে ছিলো। কিন্তু রুহি যে সবটাই অভিনয় করে চলেছে সেটা রেহান বুঝতে পারছে না। রুহিকে আজ আগের মত পেয়ে এ কদিনে রুহি যে ওকে ইগনোর করেছে সেটা হয়তো রেহান ভুলেই গিয়েছে।
·
·
·
চলবে………………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে