তুমি আমার চেনা হয়েও অচেনা পর্ব-০১

0
622

#তুমি_আমার_চেনা_হয়েও_অচেনা
#আফরোজা_আহমেদ_কুহু
#পর্ব_০১

আজ প্রায় ৭ বছর পর সেই প্রিয় মুখটিকে দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে এক সময় কত লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছি হিসেব নেই। তাকে “ভালোবাসি” বলার সাহস আমার ছিলো না তখন। সে ইগনোর করলেও বেহায়া চোখ শুধু তার পানেই তাকিয়ে থাকতো। মনে হতো এই বুঝি সে এসে বলবে “খুব ভালোবাসি তোমায় মিহিতা” কিন্তু বরাবরই আশাহত হতাম।

তার মনে আছে কি না জানি না, তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল শীতকালে। তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। বাবার চাকরির জন্য নতুন শহরে এসেছি আমরা। তাই সবই ছিলো নতুন, নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম, বাড়ি হতে কিছুটা দূরে আমার প্রাইভেট পড়ার জন্য একটা ম্যাম ঠিক করা হলো। সেইখানেই প্রতিদিন পড়তে যেতাম। তখন জানুয়ারী মাস শীতটা বেশ ভালো পরিমাণে থাকায় সেই ম্যাম আমাদের বলেছিল সকাল সকাল চলে আসতে। সেই নিয়মেই আমি ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। গায়ে মোটা গোলাপি রঙের সোয়েটার আর মাথায় দুই ঝুঁটি। তখনই একটি ছেলেকে রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি কিছুটা থমকে যাই। এরপর দ্রুত মাথা নিচু করে তার পাশ কাটিয়ে চলে যাই। এভাবে করতে করতে প্রতিদিনই সে এই টাইমে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমি তখন অতটাও গুরুত্ব দিতাম না। আস্তে আস্তে স্কুলে আমার বেশ কয়েকটা বান্ধবীও হয়ে গেল আর আমরা সবাই একসাথেই সেই ম্যামের কাছে পড়তাম। বাসাও আমাদের সবার কাছাকাছিই ছিলো। হাসি-মজার মধ্যেই কাটতো আমার দিন গুলো। এত কিছুর মাঝেও আমি তাকে দেখতাম। রাস্তা ঠিক পাশেই চারতলা বিল্ডিং এর ৪র্থ তলায় থাকার কারণে তাকে দেখতে পেতাম সব সময়। সে যখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো। মাঠ বেশি দূরে ছিল না বিধায় আমাদের বাসা থেকে দেখা যেতো। বিকালে যখন সে ও তার বন্ধুরা ফুটবল খেলতে আসতো। আমি তখন তাকিয়ে থাকতাম। এভাবে করতে করতেই আমি এইটে পরীক্ষা দিলাম।পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এলো।তখন সেই ম্যামের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার সময় আমার হাতে মার্ক সিটটাও ছিলো,বাবা তুলে এনেছিল সাথে সাথেই। তখন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তার বন্ধুরা হঠাৎ আমাকে ডাক দিলো। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে ধীর পায়ে গেলাম তাদের সামনে। তার বন্ধুদের মধ্যে একজন আমার মার্ক সিটটা দেখতে চাইলে আমি সেটা তার হাতে দেই। সে মার্ক সিটটা হাতে নিয়ে বলেছিল,

–“বাহ্, আপু অনেক ভালো রেজাল্ট করেছো তো।”

তখন সে হেঁসে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু তার সেই বন্ধুকে বলেছিল আমাকে মার্ক সিটটা ফিরিয়ে দিতে। তার কথা মতো ভাইয়াটা আমাকে মার্ক সিটটা ফিরিয়ে দিলেও তখন বলেছিল,

–“এত ভালো রেজাল্ট করেছো আপু, মিষ্টি খাওয়াবা না।”

তখন আমার কাছে কোনো উত্তর ছিলো না। আমি মার্ক সিটটা নিয়েই দৌড় দিয়েছিলাম। একদম আমার ম্যামের বাড়ির সামনে এসে থেমেছিলাম। প্রচন্ড ভয় কাজ করছিল। কেননা বাবা যদি দেখে নেয় আমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলছি তখন।

এরপর ক্লাস নাইন এ উঠলাম। ফ্রেন্ডরা সবাই তখন আলাদা আলাদা হয়ে গেল। স্কুলে কয়েকজন পড়লেও তারা আর সেই ম্যামের কাছে পড়তো না। অন্যান্য কোচিং সেন্টারগুলোতে ভর্তি হলো। শুধু একজনের সাথেই সেই ম্যামের বাড়িতে দেখা হতো। সে মাঝে মাঝেই আমার বাসায় আসতো আমাকে নিতে। সেই ম্যামের কাছে নতুন একটা মেয়েও এসেছিল। নাম মিরা।তার সাথেও একটা ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেল আমার। একদিন প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম তার শার্টের কালারের সাথে আমার জামার কালার এক রকম। তার বন্ধুরা সেটা দেখে তাকে এটা বলে ক্ষেপাতে শুরু করেছিল। তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ই আমি সেটা শুনতে পারি। সে কিছুই বলছিল না তখন, শুধু হাসছিল। সেইদিন একটু আগে আগেই পড়তে গিয়েছিলাম আর গিয়ে দেখি আমাদের আগের ব্যাচের পড়া তখনও শেষ হয় নি। তাই আমি আর আমার বান্ধবী বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ আমার মনে পড়লো আমি গণিত খাতা আনতে ভুলে গেছি। দ্রুত ব্যাগ চেক করে দেখলাম সত্যিই আনি নি। তাই ম্যামকে বলে বাসায় খাতা আনতে চললাম আমি আর আমার সেই বান্ধবী আরিয়া। ম্যামের বাসায় যেতে সেই মাঠটা পার হতে হতো সেখানে আহির ও তার বন্ধুরা ফুটবল খেলতো। তার নাম যে আহির সেটা আমি জানতাম না। একদিন তার একজন বন্ধু আহির বলায় সে উত্তর নিয়েছিল। তখন থেকেই এই খবর জানতে পারি। তো বাড়ি আসার পথে সেই মাঠ পার হওয়ার সময় একটা বল এসে থামে আমার পায়ের কাছে। আরেকটু হলেই গায়ে লাগতো। আমি কিছু না বলে চলে যেতে নিলেই আহিরের একজন বন্ধু বলে উঠলো –

–” আরে ভাবী বলটা এদিকে একটু পাস করো।

আমি সাথে সাথে সেখানে জমে যাই। হাত-পা তখন কাঁপাকাপা শুরু করেছিল। আর আহির মহাশয়কে তার বন্ধু যখন বলেছিল তুই ওকে পছন্দ করিস? তখন সে হেসে চিৎকার করে বলেছিল আমি ওকে ভালোবাসি। এ কথাটা শুনে আমি এক মুহুর্ত দাড়ায় নি সেখানে। আমার সেই বান্ধবীর হাত ধরে দৌড়ে চলে এসেছিলাম। পিছনে ফিরে অবশ্য একবার তাকিয়েছিলাম। তখন সেও আমার দিকে হেঁসে তাকিয়ে ছিল। এরপর শুরু হয় আমার বান্ধবীর ক্ষেপানো। শুধু কিছুক্ষণ পর পরই বলছিল – আমি ওকে ভালোবাসি, আমি ওকে ভালোবাসি। ম্যামের ওখানে গিয়েও ওর সেই এক কথা। এরপর পড়া শেষ করে ওর পিঠে দিয়েছিলাম দু-এক ঘা।এরপরের দিন স্কুলে সিড়ি দিয়ে উঠার সময় দেখলাম আহির আমার আগের সিড়িতে।তার পাশে থাকা একটা ছোট ছেলে বলছে -” ভাই, আপনার ব্যাগটা দেন। আমি নেই।”

তখন আহির বলে–“আমার ব্যাগ না নিয়ে তোর ভাবীর ব্যাগটা নে।আমি গেলে তো পালাবে।”আমি তখন চোখ বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমাকে তাকাতে দেখে সে শুধু হেঁসে ওই ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলেছিল –“কি হলো যা।” আমি সেইখানেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। এরপর আহির চলে যাওয়ার পর ক্লাসে যাই। এরপর কেটে যায় অনেকদিন। এর মাঝে আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি পড়াশোনায় সামনেই বার্ষিক পরীক্ষা যেভাবেই হোক ভালো করতে হবে। এর মাঝে আহিরকে আর দেখি নি আমি। ভালোয় ভালোয়ই শেষ হয় পরীক্ষাটা।

কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার বান্ধবী মিরার কাছে জানতে পারি আহির অন্য আরেকটি মেয়ের সাথে রিলেশনে গেছে কিছুদিন আগে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে