#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ০৬
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
শানের কথা সোহা পাত্তা দিলো বলে মনে হলো না। আগের মতোই ঢুলতে ঢুলতে এসে খাটে বসে পরে। কিছুক্ষণ পর বলে
” কেউ বলেছিলো আমি আমার মতো সে তার মতো।” সোহা যে শানকে উদ্যেশ্য করে কথাটা বলেছে সেটা শান বুঝতে পারলো তাই আর কোনো কথা বললো না তৈরি হয়ে চলে গেলো।
সোহা শানের টেবিল থেকে একটা খাতা, পেন্সিল নিয়ে বিছানায় বসে ছবি আঁকতে থাকে। কিছুক্ষণ পর দরজায় নক হতেই সোহা খাটে বসে উঁকি দিয়ে তাকায়। নিলাকে দেখে বলে
” ভেতরে আসো ভাবি।” নিলা মুচকি হাসি দিয়ে ভেতরে ঢোকে পেছন পেছন সিমিকে ও ভেতরে ঢুকতে দেখে সোহা এক ভ্রু উঁচু করে গম্ভীরভাবে তাকায়। সিমি সোহার সামনে এসে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে
” সরি সোহু রানী আর কখনো বকবো না। আমাকে শেষবারের মতো ক্ষমা করে দে !!” সোহা রেগে ফুস করে উঠে। নিলার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকে
” ভাবি তোমার মেঝো দেবরের বউটা সব সময় আমাকে ধমক দেয় আর প্রতিবার আমি ক্ষমা করে দেই। আমি আগে ছোত ছিলাম তাই ক্ষমা করে দিতাম এখন কি আমি আগের মতো বাচ্চা নাকি যে কিছু বুঝি না !! আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে আমি সব বুঝি। তোমার দেবরের বউকে বলো এক্ষনই এখান থেকে চলে যেতে। আমাকে সবার সামনে বকেছে আমি কি কিছু বলেছি নাকি ?? চলে যেতে বলো নাহলে আমি চলে যাবো।” নিলা মুখ টিপে হাসে বলে
” আমার মেঝো দেবরের বউ হলে তো তোমার বড় বোন আর মেঝো ভাশুরের বউ।” সোহা সিমির দিকি তাকিয়ে বলে
” নাহ এই মেয়েটা আমার কিছু হয় না। আমার বড় বোন তার শশুড় বাড়িতে আছে। তাই তার অবর্তমানে তুমি আমার বড় বোন। তুমি ছাড়া এই রুমে যাতে আর কোনো তৃতীয় ব্যক্তি না থাকে।”
সিমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হতাশ হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। নিলা তার হাতের খাবার নিয়ে সোহার পাশে বসে বলে
” নাও তখন তো কিছুই খেলে না !!এই খাবার টুকু খেয়ে নাও।” সোহা ট্রের দিকে তাকিয়ে দেখে এক গ্লাস দুধ, আপেল, আম, কমলা ফলের টুকরো, একটা স্যান্ডউইচ, ডিম। সোহা চোখ বড় বড় করে বলে
” এতো খাবার ?? আমি তো একবার খেয়েছি। এখনই যদি আবার এতো খাবার খাই তাহলে আমি ফেটেই যাবো।” নিলা হালকা হেসে বলে
” ধুর কি যে বলো !! এই টুকু খাবার খেতে পারবে না তুমি ?? নিচে তো একটা মাত্র স্যান্ডউইচ খেলে। নাইসাও প্রতিদিন এতো খাবার খায়। আচ্ছা কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।”
সোহা মুখ কুঁচকে বলে
” উঁহু !! ভাবি আমি এতো খাবার কোনোদিনই খাই না। তুমি নিয়ে যাও এগুলো।” নিলা হাসির স্বরে বলে
” হ্যা দেখেছি তো দুইদিন তুমি কতোটুকু খাও। তাই তো তোমার জন্য আবার খাবার নিয়ে এসেছি। তুমি নিজের দিকে এবারও তাকিয়ে দেখো ?? এতো শুখনো কেনো তুমি ?? মনে হয় বাতাস এসে তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। আচ্ছা বেশি না পারলে একটু কিছু খেয়ে নাও।” সোহা দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে বলে
” এই যে এটাই খাচ্ছি শুধু আর কিছু খাবো না আমি। তুমি নিয়ে যাও এগুলো।” বলে সোহা এক টানে দুধ টুকু খেয়ে গ্লাসটা রেখে দেয়।
নিলা বিরক্ত স্বরে বলে
” তুমি দেখি সত্যি বাচ্চাদের মতো !! খাবার নিয়েও বাচ্চাদের মতো ব্যাবহার করছো।তোমাকে প্রতিদিন নাইসার মতো ধরে ধরে খাওয়াতে হবে নাহলে কয়েকদিন পর রোগী হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকবে তুমি।” সোহা দাঁত কেলিয়ে আবার খাতায় মনোযোগ দেয়। নিলা হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
রাতে শান বাড়ি ফিরে রুমে এসে দেখে রুম অন্ধকার হয়ে আছে আর অন্ধকার রুম থেকে কেমন একটা আওয়াজ হচ্ছে। শান চারপাশ দেখতে দেখতে এগিয়ে আসতে থাকে। বিছানার কাছে আসতেই শান ভ্রু কুচকে ফেললো। ব্ল্যাংকেটের নিচে কেউ বসে আছে পুরো বিছানা জুড়ে ভেতর থেকেই কেমন ভুতুড়ে টাইপ আওয়াজ আসছে শান কোনো কথা না বলে লাইট অন করে ব্ল্যাংকেট টা একটান দিয়ে সড়িয়ে ফেললো। সড়িয়ে দেখতে পেলো এখানে কেউ না অনেকেই বসে আছে। সোহার পাশে নাইসা আর ওদের মাঝে টমি বসে আছে আর সামনে ল্যাপটপে হরর মুভি চলছে। ব্ল্যাংকেট সরানোতে তিনজন একসাথে শানের দিকে তাকায়। সোহা ভ্রু কুচকে বলে
” কি হলো এটা ?? আপনি এটা সরালেন কেনো ??” শান কোমড়ে দুই হায় রেখে বলে
” আর আপনারা আমার ল্যাপটপে হাত দিয়েছেন কেনো ?? আমার ল্যাপটপে কতো ইম্পরট্যান্ট ডিটেইলস থাকে জানো তুমি ??”
সোহা বিছানা থেকে নেমে শানের সামনে এসে বলে
” আপনি আমাকে ভাবেনটা কি আগে সেটা বলুন !! আমি কি বাচ্চা নাকি যে জানবো না কোথায় কি থাকে ?? আমি সবই জানি ঠিকাছে ?? আপনি আমার সাথে এইসব ব্যাপার নিয়ে একদম কথা বলবেন না, হুহ।” ভেংচি কেটে সোহা শানের সামনে থেকে চলে আসে। নাইসা বিছানাতে দাঁড়িয়েই শানের মুখোমুখি হয়ে খানিকটা রাগি গলায় বলে
” শান তুমি আমার মিষ্টিমনিকে বকো কেনো সবসময় !! তুমি তো আগে কাউকে বকতে না। তুমি পচা হয়ে যাচ্ছো। তোমার সাথে কথা নেই আমার।” বলে সোহার কাছে এসে আদুরে গলায় বলে
” মিষ্টিমনি তুমি কেঁদো না। আমি শানকে বকে দিয়েছি। শান আমার বকা দিলে আমাকে বলবে ঠিকাছে ?? আচ্ছা আমি আবার একটু পরে আসবো এখম আমাকে পড়তে বসতে হবে।” বলে সোহার গালে একটা চুমু দেয় সোহাও নাইসার গালে চুমু দিতেই নাইসা দৌড়ে চলে যায়। শান তার ল্যাপটপ নিয়ে আগের জায়গায় রেখে দেয়। সোহা মুখ বাকিয়ে টমিকে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। শান সোহাকে পাত্তা না দিয়ে ওয়াসরুমে চিলে গেলো।
সোহা ব্যালকনির ডিভানে ঢেলান দিয়ে বসে পরে। পাশের ফুল গাছ থেকে একটা ছোট ফুলের কলি ছিড়ে নিলো, কলিটা অর্ধেক ফুটেছে। সোহা মুচকি হেসে টমির কানে গুঁজে দিলো সেটা। টমিকে দেখতে খুবই কিউট লাগছে দেখে সোহা আর ফোন দিয়ে ফটাফট কয়েকটা ছবি উঠিয়ে নিলো। সোহা টমিকে কোলের মাঝে রাখতেই দরজায় কড়া নড়ে উঠে। সোহা তাড়াতাড়ি ব্যালকনি থেকে বেড়িয়ে আসে। আধখোলা দরজায় উঁকি দিয়ে এক হাতে রাখা ডক্টরের পোশাক নিয়ে ক্লান্ত ইশানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায়। সোহা দরজা খুলে বলে
” ভাইয়া !! তাড়াতাড়ি ভেতরে আসুন আর বসুন।” ইশান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে হেসে বলে
” কেনো এতো তাড়া কিসের ??” সোহা টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা এনে ইশানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে
” কেনো আবার ?? আপনি ক্লান্ত শরীর নিয়ে কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন ?? নিন পানি খেয়ে জিড়িয়ে নিন।” ইশান মুচকি হেসে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক ঢোকে পানি খেয়ে নেয়। গ্লাসটা পাশে রেখে নিশ্বাস ফেলে বলে
” তোমার জন্য আজকে ভার্সিটির একটা ফ্রম এনেছি। তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলে তুমি এটা পূরণ করে ডিপোজিট করে দেবে তাহলেই হবে।”
সোহা ফ্রমের কাগজটা নিয়ে বলে
” এটা তো পরে দিলেও হতো। আপনি মাত্র এসেছেন রেস্ট নিয়ে পরে দিলেও প্রবলেম হতো না।” ইশান হেসে বলে
” আসলে রুমে গেলেই তো কাজে ব্যস্ত হয়ে পরবো আর তোমার রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই দিয়ে গেলাম। বোনের জন্য এই ছোট একটা কাজে তো আমি ক্লান্ত হবো না। আচ্ছা আমি রুমে যাচ্ছি তুমি ফ্রমটা সাবধানে রেখো।” সোহা মাথা নেড়ে হ্যা বলে। ইশান উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
শান ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে এসে সোহার হাতে কাগজ দেখে বলে
” কিসের কাগজ এটা ??” সোহা কাগজটা নিয়ে টেবিলের কাছে যায়। ফ্রমটা গুছিয়ে রেখে বলে
” এটা আমার নিউ ভার্সিটির ফ্রম। আচ্ছা জানেন আজকে আমি কি করেছি ??” শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” অদ্ভুত তো !! তুমি বাড়িতে বসে কি করেছো সেটা অফিসে বসে বসে আমি কিভাবে জানতে পারবো ?? আর তুমি কোনো ভালো কাজ করবে বলে তো আমার মনে হয় না।” সোহা মুখ ফুলিয়ে দুপুরের সেই খাতাটা বের করে সেখান থেকে একটা পাতা ছিড়ে নেয়। কাগজের পাতার সাদা সাইডটা শানের মুখের সামনে ধরে বলে
” আজকে আমি আপনার জন্য একটা গিফট তৈরি করেছি। যেটা বলে দেবে আপনি ভবিষ্যতে কেমন হবেন।” শান অবুঝ গলায় বলে
” মানে ?? এসব কি বাস্তবে থাকে নাকি ??” সোহা মিটমিট করে হেসে বলে
” হ্যা থাকে তো। আপনি এখন দেখতে পাবেন। তবে আপনি দেখার আগে এটা বাড়ির সবার দেখা উচিত বলে আমার মনে হয়। আচ্ছা আমি এটা দেখিয়ে আসছি।” বলে সোহা নাচতে নাচতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সোহার কথার ধরণ দেখে শানের ধৈর্যশক্তি কমে গেলো। কাগজটা দেখার প্রবল ইচ্ছে জেগে উঠলো শানের মধ্যে তাই দেড়ি না করে শান চটজলদি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিচে আসতেই অবাক হয়ে গেলো শান। সোহা কাগজটা একেকজনের মুখের সামনে ধরছে আর কানে কানে কিছু বলছে যেটা শুনে একেকজন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শান সবার সামনে দাঁড়াতেই সবাঈ শানের দিকে তাকিয়ে দ্বিগুণ হাসতে শুরু করলো। একসময় সোহা তার হাতের কাগজটা শানের মুখের সামনে ধরে বলে
” দেখুন তো কেমন হয়েছে ??” শান কাগজটা হাতে নিয়ে পেন্সিলে আঁকা ছবিটা দেখে ফিকফিক করে হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বলে
” কে এটা ?? অনেক সুন্দর করে এঁকেছ তো !! তবে চেহারাটা আমার চেনা চেনা লাগছে।” সোহা ফিকফিক করে হেসে দিয়ে বলে
” এটা তো আপনিই !! তাই তো চেনা চেনা লাগছে। ভবিষ্যতে আপনি দেখতে কেমন হবেন সেটাই এঁকেছি আমি।” বলে আবার হেসে দিলো। সোহার কথা শুনে শানের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। শান আবার ছবিটার দিকে তাকায়।চেহারাটা পুরোই শানের মতো হয়েছে তবে শানের সিল্কি সিল্কি চুল, সিক্স পেক বডির জায়গায় ভুরি ওয়ালা টাক মাথা আর দাঁতের মাঝের দাঁতটা ফাকা দিয়ে রেখেছে সোহা। শানের মাথা এবার আগুনের ফুলকির মতো ফুটতে থাকে। শান চোখ বন্ধ করে গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠে
” সোহা !!!!!!!!” সবাই হাসি বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে কান চেপে ধরে। শান অগ্নিচোখে সোহার দিকে তাকায়। সোহা দৌড়ে শাহানাজ বেগম আর নিলার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। নাইসা এগিয়ে এসে মুখে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে বলে
” শান !! বুড়ো হলে তোমাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগবে। তবে এখন বেশি সুন্দর লাগে তোমাকে।” নাইসার কথা শুনে শান ফুসফুসতে সোহার দিকে তাকিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে উপরে নিজের রুমে চলে যায়। শান যেতেই আবার সবার উচ্চস্বরে হেসে উঠে। রাতে ডিনার শেষে রুমে যাওয়ার পর শানকে শুয়ে থাকতে দেখে সোহা চুপিচুপি উঁকি দিয়ে দেখে শান ঘুমিয়ে আছে কিনা। সোহা উঁকি দিতেই শান ধপ করে চোখ খুলে সোহার দিকে তাকায়। সোহা ভয় পেয়ে কয়েকপা পিছিয়ে যায়। শান গম্ভীর গলায় বলে
” আজকের কাজের জন্য তোমার শাস্তি টা তোলা রইলো।” বলে শান আবার আগের মতো শুয়ে রইলো। সোহা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সোফায় শুয়ে পরে।
আজকে সকালে সোহার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। সোহা সবগুলো সাবজেক্টেই হাইস্ট নাম্বার পেয়েছে। বাড়ির সবাই খুশি সোহার রেজাল্টে তবে সোহা সবার সাথে কথা বললেও গত পরশু থেকে আজকে পর্যন্ত সিমির সাথে কথা বলেনি। সিমিও বিভিন্নভানে সোহার রাগ ভাঙার চেষ্টা করছে তবে কোনো কাজ হচ্ছে না। সোহা প্রতিবার সিমির সাথে রাগ করলে প্রায় চার থেকে পাঁচদিনের মতো কথা বলে না কিন্তু পরে নিজেই সিমির কাছে ফিরে আসে। সোহার রেজাল্টে শান কিছুটা খুশি হলেও সেটা কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না। শুধু চুপচাপ বসে বসে সবার কাজ দেখছে। ইতিমধ্যে শাহানাজ বেগম তাকে একটা কাজও দিয়ে দিয়েছে। সোহার ফ্রম পূরণ করে কালকে সোহাকে নিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার দায়িত্ব শানের কাধেই পড়েছে। শান মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রল করলেও মাঝে মাঝে আড়চোখে সোহার দিকে তাকাচ্ছে। সোহা খুব খুশি আজকে তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
চলবে~ইনশাল্লাহ……..
#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ০৭
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
ইতিমধ্যে শাহানাজ বেগম তাকে একটা কাজও দিয়ে দিয়েছে। সোহার ফ্রম পূরণ করে কালকে সোহাকে নিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার দায়িত্ব শানের কাধেই পড়েছে। শান মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রল করলেও মাঝে মাঝে আড়চোখে সোহার দিকে তাকাচ্ছে। সোহা খুব খুশি আজকে তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সোহার মা বাবাও ফোন দিয়ে সোহাকে কংগ্রেস করলো। মুসফিক চৌধুরি খুশিতে মিষ্টি নিয়ে আসলো প্রায় ৫ কেজি। মুসফিক চৌধুরির সুগার প্রবলেম থাকায় তাদের বাড়িতে মিষ্টি আনা হয় না কিন্তু আজকে কেউ নিষেধ করলো না। সবাইকে মিষ্টি সার্ভ করার পর নিলা শানের হাতে মিষ্টির প্লেট দিতেই শান নিলার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে
” ভাবি একটা রেজাল্ট এর জন্য এতো খুশি হওয়ার কি আছে ? সবাই এমন ভাব করছে আমার মনে হচ্ছে সোহা মেডিকেল পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে।” নিলা সবার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে
” এই বাড়ির প্রত্যেকের মানুষের মন নরম তাই সহজেই সবাইকে আপন করে নেয়। সবাইকে অনেক ভালোবাসে। তাই তাদের আপনজনের ছোট ছোট সাফল্যতে তাদের খুশি। আর সোহা তো বাড়ির ছোট বউ ওর আদর একটু বেশিই। শান হালকা হেসে বলে
” হুম ঠিক বলেছো ভাবি। আচ্ছা তোমার হিংসে হয় না সোহার উপর ??” নিলা সোহার দিকে একবার তাকিয়ে আবার শানের দিকে চোখ ঘুড়িয়ে অবাক স্বরে বলে
” এই ছোট মেয়েটাকে আমি হিংসে করবো কেনো ?? আমি কি কম ভালোবাসা পেয়েছি নাকি আমার শশুড়, শাশুরি থেকে ?? আমিও প্রথম যখন এসেছি তখন এমন আদর পেয়েছি। সিমি এসেছে সিমিও সেই ভালোবাসা পেয়েছে এখন সোহা এসেছে সোহা পাবে সেটা। মা সবাইকে সমান ভালোবাসে। আর আমার তো ছোট বোন নেই সোহাকেই ছোট বোনের চোখে দেখি তোমার ভাইয়াও আগে আমাকে প্রতিদিন বলতো আমার একটা ছোট বোন থাকলে খুবই খুশি হতাম আমি। সোহা আসার পর তোমার ভাই আর সেই কথা বলে না শুধু বলে সোহা বোনটা কতো বাচ্চামো করে। আমি কখনোই আমার দুই বোনকে হিংসা করতে পারি না। আচ্ছা তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও নাহলে মা আবার বকবে তোমাকে।” শান মুখ বাকিয়ে বলে
” সেটা তো সোহা আসার পর থেকে প্রতিদিন খেয়ে যাচ্ছি।” নিলা হেসে তার কাজে চলে যায়।
আজকে সারাদিন সবাই সোহার রেজাল্টের খুশিতেই কাটালো।
রাতে রুমে আসার পর সোহা শানের পেছন পেছন ঘুরছে। শান যেখানে যাচ্ছে সোহা সেখানেই যাচ্ছে। শান দেখেও পাত্তা দিচ্ছে না সোহাকে। সোহা শানের পেছন পেছন ঘুরতে ঘুরতে একসময় শানের পিঠে মাথায় বারি খেলো। শান পেছন ঘুরে সোহার দিকে বিরক্তকর ভাবে তাকিয়ে বলে
” কি হয়েছে ?? কি লাগবে তোমার ?? এভাবে পেছনে ঘুরছো কেনো বারবার ?? একটা ধাক্কা খেলেই তো আর তোমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” আপনি আমাকে প্রতিদিন কিছু না কিছু দিয়ে খোঁটা দেন কিন্তু কেনো ?? আমি কি এতো চিকন নাকি যে একটা ধাক্কায় আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না !!” শান ভেটকিয়ে বলে
” নাহ তুমি অনেক মোটা একজন মানুষ এবার দয়া করে বলো তো পেছন পেছন ঘুরছো কেনো ??” সোহা তার হাতে থাকা ফ্রমটা শানের সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে
” এটা পূরণ করতে হেল্প করুন আমাকে। আমি অর্ধেক করেছি।” শান কিছু না বলে শান্তভাবে ফ্রম টা হাতে নেয়। টেবিলে বসে ফ্রম দেখতে দেখতে বলে
” তোমার psc, jsc, ssc exam এর রেজাল্ট কি ??” সোহা নিচ থেকে টমিকে কোলে তুলে বলে
” psc – 4.80, Jsc – GPA 5, SSC – GPA 5.”
শান ভ্রু কুচকে বলে
” এতো ভালো রেজাল্ট তুমি তো সাইন্স নিয়েই স্টাডি করতে পারতে।” সোহা হালকা হেসে বলে
” মাধ্যমিকে সাইন্স নিয়েই পরেছিলাম তবে আমার মাইগ্রেন এর ব্যাথা আছে তাই পরীক্ষার সময় অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম। পরে মা-বাবা এতো ভালো রেজাল্ট দেখেও আর সাইন্স নিয়ে পরতে দেয়নি। আমার ইচ্ছে ছিলো মেডিকেল নিয়ে পড়বো কিন্তু মাইগ্রেনের ব্যাথার জন্য ইচ্ছেটা পূরণ হলো না।” বলে মলিন হাসলো সোহা। শান আর কিছু বললো না চুপচাপ ফ্রম ফিলাপ করতে থাকে। কারো ছোট ছোট দুর্বলতা তাকে কতো পিছিয়ে দিতে পারে বা ইচ্ছে পূরণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে সেটা সোহাকে দেখে বুঝতে পারলো।
সকালের ব্রেকফাস্ট করেই শান সোহাকে নিয়ে বেরিয়ে পরেছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। সোহা তার কোলে করে টমিকে নিয়ে এসেছে বলে শান খুবই বিরক্ত হয়ে আছে সোহার উপর। তবেসেদিকে সোহার কোনো খেয়ালই নেই সে তার মতো গাড়ির জানলায় হাত দিয়ে হাতের উপর থুতনি রেখে বাইরে তাকিয়ে আছে আর টমি সোহার কোলে আরামে ঘুমিয়ে আছে। ইশানের হসপিটাল দেখেই সোহা বলে
” আচ্ছা ভাইয়া কিসের ডক্টর ??” শান ভ্রু মুচকে বলে
” ডক্টর আবার কিসের হয় ?? ডক্টর মানে ডক্টর।”
সোহা মাথা নেড়ে বলে উঠে
” আরে না সেটা না। ওই আছে না হার্ট সার্জন তারপর আরো ইত্যাদি ইত্যাদি ডক্টর। ” শান মুখ বাঁকিয়ে বলে
” কোনো কিছুর নাম তো বলতে পারছো না তবে মুখও বন্ধ রাখতে পারো না। ভাইয়া স্পেশাল হার্ট সার্জন+ নরমাল ডক্টর।”
সোহা উৎসাহিত হয়ে বলে
” আচ্ছা ভাইয়া কি কি করে ??” শান চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে
” আর একটা কথা বললে এখন তোমাকে ধরে মারবো। ভাইয়া কি করে আমি জানবো কি করে ?? ভাইয়া কি করে সেটা দেখার জন্য আমি কি ভাইয়ার এসিস্টেন্ট হয়েছি নাকি ??” সোহা ভেংচি কেটে আবার আগের মতো বসে থাকে।
ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামাতেই সোহা টমিকে নিয়ে নামতে যায় কিন্তু শান ধমক দিয়ে বলে
” এই মেয়ে !! কুকুরকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি ?? গাড়িতে রেখে যাও।” সোহা রেগে বলে
” আপনি আবার আমার টমিকে কুকুর বলছেন?? আপনার চুল গুলো কেটে আপনাকে টাক বানিয়ে ফেলবো আমি।” সোহাকে রাগে ফুঁসতে দেখে শান শান্ত গলায় বলে
” আচ্ছা ঠিকাছে টমিকে গাড়িতে লক করে রেখে যাও।” সোহা কিছু না বলে টমিকে রেখে বাইরে বেরিয়ে জোড়ে গাড়ি লাগিয়ে দিলো। শান ছোট ছোট চোখে সোহার দিকে তাকাতেই সোহা ভেংচি কেটে ভেতরে ঢুকতে থাকে। শান গাড়ি লক করে সোহার সাথে আসতে থাকে। সোহা ঘুরে ঘুরে চারপাশ দেখতে থাকে বরাবরের মতো শানের দৃষ্টি সোহার দিকে থাকলেও তার মনে অন্য কথা চলে। সোহাকে অন্য রাস্তার দিকে চলে যেতে দেখে শান দৌড়ে সোহার হাত চেপে ধরে। সোহা শানের দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলে
” কি হয়েছে আপনার আপনি আমার হাত ধরলেন কেনো ?? আমি ঘুরছি দেখে ভালো লাগছে না আপনার ??” শান আশেপাশে তাকিয়ে দেখে এখানে অনেক মানুষ আসা যাওয়া করছে তাই শান সোহাকে টেনে দাঁতেদাঁত চেপে ফিসফিস করে বলে
” থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দেবো। এখানে বেশি লাফাবে না একদম। এখানে আমরাও পড়াশোনা করেছি। তোমার লাফালাফির জন্য আমি আমার এতো বছরের ধরে রাখা মান-সম্মান হারাতে পারবো না। চুপচাপ আমার সাথে চলো।” বলে শান সোহার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। সোহা দ্রুত পায়ে শানের কাছে এসে হাটতে থাকে। ভার্সিটির এক ভবন থেকে অন্য ভবন যেতে যেতে সোহা অনেক কিছুই দেখলো। এটাও দেখলো যে সব মেয়েরা শানের দিকে কিভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলো আবার কয়েকটা মেয়ে মুচকি মুচকি হাসছিলোও। সোহা শানের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলে
” সবাই আপনার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলো কেনো ?? আপনি কি ফুচকা নাকি ??” শান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হাটা বন্ধ করে সোহার দিকে তাকালো। অবাক স্বরে বলে
” ফুচকা ??” সোহা হালকা জোড়ে বলে
” হ্যা !! সবাই তো ফুচকা দেখলে কেমন রাক্ষসের মতো তাকিয়ে থাকে। খাওয়ার জন্য ওদের মুখ বেয়ে লোল পরে। আপনার দিকেও সেইভাবে তাকিয়ে ছিলো।” শান কপালে হাত দিয়ে দুঃখি স্বরে বলে
” হায় আল্লাহ এই মেয়ে কি বলে এসব ?? শোনো আমি এই ভার্সিটির ক্রাশ ছিলাম তাই সবাই এভাবে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু কথা হলো তুমি যে সবাইকে রাক্ষস বললে তুমি কি ফুচকা খাওনা!!” সোহা থতমত খেয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
” আমি তো আর ওদের মতো লোভি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি না।” শান নিশ্বাস ফেলে বলে
” হ্যা বুঝেছি এবার দয়া করে চলো।” শান সোহাকে নিয়ে অফিস রুমে যায়।
প্রিন্সিপ্যালের রুমে আসতেই প্রিন্সিপ্যাল স্যার শানকে দেখে খুশি গেলো। শানকে বসিয়ে গল্প জুড়ে দিলো পাশে সোহা বসে বসে বিরক্ত হতে থাকে। সোহার বাইরে বেরিয়ে পুরো ভার্সিটি চক্কর দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু শানের জন্য আটকে আছে। কথা বলতে বলতে একসময় প্রিন্সিপ্যাল স্যারের খেয়াল সোহার দিকে পরে। সোহাকে একবার দেখে শানকে উদ্দেশ্য করে বলে
” শান কে ও ?? তোমার কোনো আত্মীয় নাকি??” শান কানের লতি চুলকে হালকা গলায় বলে
” আসলে স্যার ও হচ্ছে সোহা। সোহা আমার ওয়াইফ। দুইদিন আগে ভাইয়া ভার্সিটি থেকে ওর জন্য একটা ফ্রম তুলেছিলো তো আজকে সেই সুত্রেই আসা আরকি।” প্রিন্সিপ্যাল স্যার অবাক হয়ে বলে
” তুমি বিয়ে করেছো ?? কোথায় আমি তো শুনতেই পারলাম না। তোমার বিয়ের ইনভাইটেশন কার্ড ও পেলাম না।” বলে হেসে দেয়। সৌজন্যে শান হালকা হাসে সোহা আগ বারিয়ে হেসে বলে উঠে।
” সমস্যা নেই স্যার বিয়েতে পাননি তো কি হয়েছে ?? আমাদের যখন বাচ্চা হবে তখন আমি নিজ দায়িত্বে নিশ্চই আপনাকে ইনভাইট করবো।” শান চমকে চোখ বড় বড় করে তাকায় সোহার দিকে। প্রিন্সিপ্যাল স্যার হা হা করে হেসে দেয়। সোহা লজ্জা মাখা চেহারায় মাথা নিচু করে রাখে। সোহা কি করে এতোবড় একটা কথা স্যারের সামনে বললো ভাবতেই শানের লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। প্রিন্সিপ্যাল স্যার সোহার সঙ্গে আরো কিছু কথা বলে ফ্রম জমা দেওয়া আর সোহার এডমিশন এর ব্যাপারে সব কাজ সম্পূর্ণ করে নেয়। শান আর সোহা উঠে চলে যেতে নিলেই প্রিন্সিপ্যাল স্যার বলে
” শান কালকে থেকে সোহাদের ক্লাস শুরু হবে।”
শান অবাক হয়ে বলে
” এতো তাড়াতাড়ি স্যার ??” প্রিন্সিপ্যাল স্যার হালকা হেসে বলে
” হ্যা আজকেই ফ্রম জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট ছিলো। কালকে থেকে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
শান ঠিকাছে বলে সোহাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে।
বাইরে এসেই শান সোহাকে থামিয়ে বলে
” ভেতরে কি বলেছো তুমি এটা ?? আমাদের বাচ্চা হলে মানে ?? তোমার কি মনে হয় আমাদের মধ্যে সেইরকম কোনো সম্পর্ক তৈরি হবে ??” সোহা বিরক্তস্বরে বলে
” উফফ আপনি বড্ড জ্বালাতন করেন। চলুন তো জায়গাটা পুরোটা ঘুরে দেখবো।” সোহা শানকে টেনে নিয়ে গেলো ভার্সিটি ঘুরে দেখার জন্য।
চলবে~ইনশাল্লাহ……..