তুমিময় ভালোবাসা পর্ব-৩৮+৩৯

0
1716

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ৩৮
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

ইশান নিচু স্বরে বলে।
” সোহা পেটের ভেতর ওয়াস করা হয়েছে। এখন সুস্থ আছে। জ্ঞান ফিরেছে তবে এখন ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে কালকে সকালে জ্ঞান ফিরবে।” ইশান ড. রাশেদুলকে নিয়ে নিজের কেবিনে গেলো। শান মাথা চেপে ধরে বসে থাকে।
হাতের উপর কিছু অনুভব করতেই সোহা চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু চোখ গুলো মনে হলো আঠার মতো লেগে আছে কোনো ভাবেই খুলতে চাইছে না। অনেক চেষ্টা করে সোহা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। চোখ খুলতেই মাথার উপরে সাদা ছাদের দিকে নজর পরে। সোহা চোখের পলক ফেলে মাথা ঘুরিয়ে ডান পাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে থাকে সে এখন কোথায় আছে। পাশে হসপিটালের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দেখে সোহার বুঝতে বেগ পেতে হলো না সে এখন হসপিটালে আছে। কিন্তু ভেবেও খুঁজে পেলো না সে হসপিটালে শুয়ে আছে কেনো !! রন্দ্রে রন্দ্রে ঔষধের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
সোহা বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে নেয়। তখনই কান্নার শব্দ শুনতে পায় সোহা। হাতে আবার পানি জাতীয় কিছু অনুভব হতেই সোহা সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। শান শক্তভাবে সোহার হাতের উপর মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এমন দৃশ্য দেখে সোহার চেহারায় প্রচুর বিস্ময় দেখা গেলো। সোহা ভাঙা গলায় শানকে ডাকার চেষ্টা করে
” শ..শশান !!” সোহার গলায় শান নিজের নাম শুনে চমকে মাথা তুলে তাকায়। সোহার দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। শান ঠোঁটের কোণায় হালকা হাসির রেখা দেখা যায়। খুশি হয়ে শান বেপরোয়া ভাবে উঠে দাঁড়ায়। শানের বসে থাকা চেয়ারটা শানের পায়ের ধাক্কা সামলাতে না পেরে পরে গেলো। শান হঠাৎ ঝুকে সোহাকে শোয়া অবস্থায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে
” কেনো করলে সোহা !! এমন করলে কেনো তুমি ?? এমনটা করার কি খুব বেশি দরকার ছিলো ?? আমাকে, আমাদের সবাইকে কষ্ট দিতে কি তোমার খুব বেশি ভালো লাগে ?? তুমি বোঝো না কেনো ?? তোমাকে ছাড়া সবাই অসহায়। তোমার একটু খানি ব্যাথায় সবাই অস্থির হয়ে যায় আর আজকে তোমাকে এই অবস্থায় দেখে সবার কি অবস্থা হয়েছে জানো তুমি ?? আমার কি হয়েছিলো জানো তো ?? আমি কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ধারণা আছে তোমার ?? আমি তো ভাবছিলাম আমি আমার সোহাকে হাড়িয়ে ফেলিনি তো ?? কেনো এমন করলে সোহা !!” শানের কোনো কথাই সোহার মাথায় ঢুকলো না। শান এতো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যে সোহার দমবন্ধ হয়ে আসতে থাকে। সোহা শুকনো গলায় দুইবার কেশে উঠতেই শান সোহাকে ছেড়ে দিয়ে অস্থির গলায় বলতে থাকে
” কি হয়েছে সোহা ?? খারাপ লাগছে তোমার ?? কোথাও ব্যাথা পেয়েছো ?? চুপ করে আছো কেনো ?? বলো !! আমি এখনই ভাইয়াকে ডাকছি।” সোহা শানের হাতের উপর এক হাত রেখে বলে
” আপনি শান্ত হন আমি ঠিকাছি। শুধু একটু পানি খাবো।” শান উঠতে গিয়েও উঠলো না। ঝুলন্ত স্যালাইনের দিকে একবার তাকিয়ে সোহার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বলে
” ভাইয়া বলেছে স্যালাইন শেষ না হলে কিছু খেতে পারবে না তুমি। আজকে বিকেল পর্যন্ত স্যালাইন চলবে।” সোহা মুখ গোমড়া করে নেয়। চুপ থেকে শানকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। শার্টের উপরের তিনিটা বোতাম খোলা যার কারণে লোমহীন বুকটা দেখা যাচ্ছে। শার্টের এক হাতা কনুইয়ের উপর গোটানো অন্য হাত অর্ধেক গোটানো রয়েছে। শানের চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারলো শান অনেক কেঁদেছে একদম বিদ্ধস্ত অবস্থা। মুখে মলিনতা ভাব চলে এসেছে। চুলের অবস্থা আরো বেহাল।
শানের এমন রূপ দেখে সোহা অবাক হয়ে বলে
” আপনার এই অবস্থা কেনো ??” শান নিজের দিকে একবার তাকিয়ে আবার সোহার দিকে তাকিয়ে অভিযোগ স্বরে বলে
” সব তো তুমিই করেছো !! তোমার জন্য সব হয়েছে। তুকি এমন কিছু না করলে তো আমাকে এতো অস্থির হতে হতো না, কাঁদতে হতো না, তোমার হারানোর ভয় হতো না আর এই পাগল রূপেও থাকতে হতো না।” সোহা ফিকফিক করে হেসে দেয়। এক হাত হালকা একটু উঁচু করতেই শান হাত ধরে বলে
” হাত উঠিয়ো না হাতে ক্যানেলা লাগানো রয়েছে।” সোহা উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে মাথা নাড়িয়ে ইশারায় বোঝায় শানকে মাতজা নামাতে। শান ভ্রু কুঁচকে হালকা ঝুকে মাথা নামিয়ে দেয়। সোহা হাতটা আরেকটু উঁচু করে শানের চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে আরো এলোমেলো করে দিয়ে শব্দ করে হেসে দিয়ে বলে
” এভাবে আপনাকে অনেক কিউট লাগছে।” শান মুচকি হাসি দেয় সোহার মুখের হাসি দেখে। শান জড়ানো গলায় বলে।
” তোমার এই হাসিটাই তোমার মুখ থেকে বিলীন হয়ে গিয়েছিলো কালকে। কালকে কি এমন হয়েছিলো যে তুমি এতো রেগে গিয়েছিলে !! আর রেগে তুমি ছয় টা ঘঘু..মের ঔষধ খেয়েছিলে ??” শানের কথা শুনে সোহার হাসিমুখ শুকিয়ে যায়। সোহা মনে করতে থাকে কি করেছিলো কালকে।
ধীরেধীরে সোহার সব মনে পরে। সোহা এবার গম্ভীর চাহনি দিয়ে শানের দিকে তাকায়। দরজা খুলে ইশান কেবিনে ঢোকে। সোহাকে ঘুম থেকে উঠানো দেখে ইশানের মুখে হাসি ফোটে। ইশান সোহার কাছে গিয়ে বলে
” কেমন আছো সোহামনি ??” সোহা হালকা হাসি দিয়ে বলে
” বেটার বাট কিছুটা খারাপও লাগছে।” ইশান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” কালকে খুব পাওয়ারের ঔষধ খেয়েছো তো তাই বেশি দুর্বল লাগছে। ঠিক হয়ে যাবে তুমি এখন রেস্ট করো। রাতে সবাই তোমার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছিলো কিন্তু তুমি ঘুমিয়েছিলে তাই সবাই শুধু দেখা করেই চলে গিয়েছিলো। সবাই নয়টা বাজে আসবে। এখন তো মাত্র ছয়টা বাজে।” সোহা হেসে মাথা নাড়ায়। ইশান শানের দিকে একবার তাকিয়ে সোহার পাশে বসে বলে
” একটা প্রশ্ন করি ??” সোহা মাথা নেড়ে সায় দিতেই ইশান বলে
” কালকে কেনো এমন একটা স্টেপ নিয়েছিলে ?? শুধুমাত্র রাগের বসে নিজের এতো বড় ক্ষতি করে বসেছিলে !! আমাদের কথা একবারও ভাবলে না ?? তোমার এই অবস্থা দেখে সবার কি অবস্থা হয়েছিলো তুমি নিজের চোখের দেখলে বিশ্বাস করতে পারতে। শানের অবস্থাই দেখো কালকে থেকে এখনও পর্যন্ত কিছু মুখে দেয়নি। তোমার পাশেই বসে ছিলো আমি টেনেও নিয়ে যেতে পারিনি। তুমি এমন কেনো করেছিলে ??” সোহা ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে
” আমার অনেক রাগ উঠেছিলো কালকে কিছুতেই শান্ত হতে পারছিলাম না। তারপর মনে হলো ঘুমালে রাগ কমে যাবে তাই ঘুমানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আমার ঘুম আসে না তাই স্লিপিং পিল খেয়েছিলাম একটা তারপরও ঘুম আসেনি তাই পরপর ছয়টা খেয়ে নিয়েছি। পরে অনেক ঘুম পায়। কিন্তু আমি তো জানতাম না এমন কিছু হবে।” ইশান সোহার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে
” হয়েছে আর কাঁদতে হবে না। যা হবার হয়ে গিয়েছে তবে আর কোনোদিন এমন স্টেপ নেওয়ার কথা মাথায়ও আনবে না। তুমি তোমার রাগের কারণটা শানের সাথে শেয়ার করো তাহলে দেখবে রাগ একদম কমে যাবে। তুমি এখন রেস্ট করো আমি আসছি। ওকে !!” সোহা আবারও মাথা নাড়ায়। ইশান হেসে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তবে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে শানকে ইশারা করে বোঝায় সোহার সাথে কথা বলার জন্য।
ইশান চলে যেতেই সোহা নিজে নিজেই উঠে বসার চেষ্টা করে। শান দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে সোহাকে ধরতে চাইলে সোহা শানের হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। শান অবাক হয়ে যায় সোহার এমন কাজে। সোহা কষ্ট করে নিজে নিজেই উঠে বসে। শান সোহার হাত ধরে বলে
” কি হয়েছে ??” সোহা আবারও শানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” আমাকে ছুঁবেন না আপনি। আমাকে একা থাকতে দিন। চলে জান আপনি।” শান এবারও অবাক হলো। তবে দমে গেলো না সোহার পাশে বসে সোহার এক গালে হাত রেখে বলে
” কি হয়েছে তোমার ?? খারাপ লাগছে নাকি ?? নাকি রাগ করেছো কোনো কারণে ??” সোহা এবার রেগে গেলো। ক্যানেলা লাগানো হাত দিয়ে শানের হাত ঝাড়া দিয়ে ছারিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে
” বলেছি না একদম ছোঁবেন না আমাকে ?? তাহলে কেনো বার বার আমার কাছে আসছেন ?? চলে জান এখান থেকে। আপনাকে দেখলে আমার রাগ উঠছে।” বলে মুখে ফিরিয়ে নেয়। শান স্তব্ধ হয়ে যায় সোহার এমন বিহেভিয়ার দেখে। শান ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে ঢোক গিলে বলে
” সসোহা আমাকে দেখলে তোমার রাগ হয় ??” সোহা চেঁচিয়ে বলে
” হ্যা, আপনাকে দেখলেই আমার রাগ হচ্ছে। আপনিই আমার কালকের রাগের কারণ। আই হেট ইউ শান !!” শান চমকে সোহার দিকে তাকায়। সোহার কথা গুলো বারবার প্রতিদ্ধনির মতো কানে বাজতে থাকে। একটু আগেও মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো হেসে হেসে কথা বললো সেই মেয়ে এখন এমন ব্যবহার করছে শানের মানতে অনেকটা কষ্ট হচ্ছে। শানকে বসে থাকতে দেখে সোহার মাথায় আরো রাগ চেপে বসে। সোহা তার দুর্বল শরীর নিয়ে নিচে নেমে যায়। শান আটকাতে চেয়েও থেমে গেলো। সোহা রেগে বলে
” এখনও বসে আছেন কেনো ?? চলে জান এখান থেকে !! আপনার জন্য আমি বারবার কষ্ট পাচ্ছি। আপনার জন্য আমার সব আশা ভরশা ভেঙে গিয়েছে।” শান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সোহার সামনে যেতেই সোহা হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়। গম্ভীর গলায় বলে
” দাঁড়ান আমার কথা শেষ হয়নি। বিয়ের দিন থেকে আমাকে অপমান করেছেন আমি কিছু বলেনি। আপনি ক্ষমা চাইলে ক্ষমাও করে দিয়েছি। কিন্তু কাল কি করেছেন আপনি ?? আপনি কালকে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে রেস্টুরেস্টে গিয়েছিলেন। সেটাও ছিলো আমার ভার্সিটির সামনের রেস্টুরেন্ট। আপনি কি ভেবেছিলেন আমি কিছু জানি না ?? আমি সব দেখেছি।” বলতে বলতে সোহা ঢুকড়ে কাঁদতে থাকে। শান পুরো হতবাক হয়ে গেলো। সোহা এই ছোটো একটা কারণ নিয়ে এতো রেগে যেতে পারে শানের ধারণারও বাইরে ছিলো সেটা। শান আহত স্বরে বলে
” সোহা !! তুমি আমাকে একবারও জিজ্ঞেস করত্ব পারলে না এসব কথা ?? মেয়েটা আমাদের ক্লাইন্টের ছোট মেয়ে ছিলো। মিটিং শেষে কফির জন্য অফার করেছিলো ক্লাইন্টের মেয়ে হওয়ায় আমিও না করতে পারিনি। কিন্তু তুমি !! তুমি এই ছোট একটা কারণে এতোবড় একটা স্টেপ নিতে পারলে ??” সোহা কান্না থামিয়ে আগুনের ফুলকির মতো শানের দিকে তাকায়। শান আরো এগিয়ে আসতে নিতেই সোহা রেগে চারপাশে থাকা সব জিনিসপত্র ফেলে দিতে দিরে বলে
” ছোটো কারণ এটা ছোট কারণ ?? আমার শান কেনো অন্য মেয়ের কাছে যাবে কেনো ?? আপনি শুধু আমার। আপনি কেনো ওর কাছে যাবেন ?? আপনাকে আমি ভালোবাসি আপনি কেনো অন্য মেয়ের কাছে যাবেন ?? কেনো, কেনো, কেনো ?? আপনি শুধু আমার। আপনাকে আমি কারোর হতে দেখতে পারবো না। ওই মেয়েটা যদি এসে আপনাকে কেড়ে নেয় আমার কাছ থেকে। তাহলে আমি কি নিয়ে থাকবো ?? শান শুধু আমার।” সোহা কাঁদতে কাঁদতে দুর্বল শরীর নিয়ে নিচে বসে পরে। শান দ্রুত পায়ে সোহার কাছে যায়।সোহাকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে সোহার দুই গালে হাত রেখে বলে
” সোহা !! তুমি যা ভাবছো তা একদমই ঠিক না। আমরা জাস্ট এক কাপ কফিই খেয়েছি আর বেশি কিছু না। তোমার থেকে আমাকে কেউ কেড়ে নেবে না। আমি তো শুধু তোমারই।” সোহা মাথা নেড়ে বলে
” নাহ ওই মেয়েটা আপনাকে নিয়ে যাবে। নিয়ে যাবে।” শান সোহাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলে
” না সোহা কেই নেবে না আমাকে। আমি তো শুধু তোমাকে ভালোবাসি। কেউ আমাকে চাইলেও কেড়ে নিতে পারবে না। আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমি শুধু তোমার।” সোহা কাঁদতে কাঁদতে অশ্রুসিক্ত নয়নে শানের দিকে তাকিয়ে জড়ানো গলায় বলে
” আপনি আমাকে ভালোবাসেন !! সত্যি ??” শান মুচকি হেসে বলে
” হ্যা। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ভালোবেসে যাবো।” সোহা শক্ত করে শানকে জড়িয়ে ধরে। শান সোহার মুখ তুলে পুরো মুখে ছোট ছোট চুমু দিয়ে ভরিয়ে দেয়। সোহাকে শুয়ে দিয়ে বলে
” তুমি ঘুমাও। তোমার শরীর এখনও অনেক দুর্বল। আবার হাত থেকে রক্ত পরছে। ইশশ !! দাঁড়ায় আমি নার্সকে ডেকে আনছি।” শান চলে যেতে নিলে সোহা শানের হাত ধরে বলে
” নাহ এখান থেকে কোথাও যাবেন না আপনি। তাহলে আমিও চলে যাবো।” শান সোহার পাশে বসে বলে
” নাহ আমি কোথাও যাচ্ছি না। তুমি শুয়ে থাকো আমি ভাইয়াকে ফোন করে বলছি নার্সকে পাঠিয়ে দিতে।” শান ইশানকে ফোন করে নার্স পাঠাতে বলে। কিছুক্ষণ পর নার্স এসে সোহার হাতে ক্যানেলা লাগিয়ে দেয় আর সোহাকে বকতে থাকে ক্যানেলা ছুটিয়ে ফেলায়। শান নার্স এর দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই নার্স ঢোক গিলে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। সোহা হাতটা সাবধানে রেখে শানকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে শানের বুকে মাথা রেখে বসে থাকে। শান সোহাকে দেখে হালকা হেসে বলে
” সোহা !! সুন্দর করে ঘুমাও। এভাবে ঘুমালে তোমার প্রবলেম হবে তো।” সোহা মাথা নেড়ে বলে
” না আমি এভাবেই ঘুমাবো। আপনি এখানে বসুন। আপনি কোথাও যাবেন না।” শান মাথা নেড়ে ঠিকাছে বলে। বালিশে হেলান দিয়ে বসে সোহাকে নিজের বুকে নিয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর সোহা গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। শানও ক্লান্ত থাকায় ধীরব ধীরে ঘুমের রাজ্যে পা রাখে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ৩৯
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

বালিশে হেলান দিয়ে বসে সোহাকে নিজের বুকে নিয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর সোহা গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। শানও ক্লান্ত থাকায় ধীরে ধীরে ঘুমের রাজ্যে পা রাখে।
ইশান কেবিনে ঢুকেই চোখ কপালে তুলে ফেলে কেবিনের অবস্থা দেখে। কেবিনে যতো কাচি, মেডিসিনসহ যন্ত্রপাতি ছিলো সব নিচে পরে আছে। কয়েক জিনিস ভেঙেও গিয়েছে। ইশান বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আড়ামের ঘুম ঘুমাচ্ছে। ইশান মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে এসে সোহার স্যালাইনটা দেখে বেড়িয়ে যায়। বেরোতেই দুজন ওয়ার্ডবয় সামনে এসে দাঁড়ায়। ইশান গম্ভীর গলায় বলে
” কি চাই ??” দুজন মাথা নিচু করে নেয়। একজন বলে উঠে।
” নার্স বললো কেবিনের বেহাল অবস্থা হয়ে আছে সব কিছু পরিষ্কার করার জন্য।” ইশান একবার দরজার কাচ দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে আবার দুজনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” না এখন পেশেন্ট ঘুমাচ্ছে ডিস্টার্ব করবে না। দেড় ঘণ্টা পরে এসো।” দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে। ইশান ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ঝুলিয়ে অন্য পেশেন্টের কাছে চলে যায়।
সোহার নড়াচড়ার জন্য শানের ঘুম আলগা হয়ে আসে। ঘুমের মধ্যে সোহা আবারও কেশে উঠে শান এবার চোখ কচলিয়ে সোজা হয়ে বসে। সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে সোহা ঘুমের মধ্যে গলায় হাত রেখে কাশছে। শানের প্রচণ্ড মায়া হয় মেয়েটা সেই কখন পানি চেয়েছিলো এখনও পানি খেতে পারেনি। শান সোহাকে ভালো করে শুয়ে দিয়ে গ্লাসের জন্য উঠে দাঁড়াতেই সোহা শানের হাত খামঁছে ধরে। শান তাকিয়ে দেখে সোহা জেগে গিয়েছে। সোহা শানের দিকে ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে
” কোথায় যাচ্ছেন আপনি ??” শান ইশারায় গ্লাসকে দেখিয়ে বলে
” পানি আনতে যাচ্ছি তোমাকে খাইয়ে দেবো। এবার ছারবে ??” সোহা শানের হাত ছেড়ে দেয়। শান গ্লাস হাতে নিয়ে রুমে চোখ বুলিয়ে নেয়। রুম পুরো আগের মতো পরিষ্কার হয়ে আছে। যেগুলো সোহা ভেঙে ফেলেছিলো সেগুলো বাদে সবই রয়েছে। শান একটা স্পুন আর পানির গ্লাস নিয়ে সোহার কাছে আসে। সোহাকে বলে
” হা করো।” সোহা হা করতেই শান স্পুন দিয়ে সোহার মুখে দুই চামচ পরিমাণ পানি খাইয়ে দেয়। সোহা আবার হা করতেই শান পানির গ্লাস রেখে বলে
” এর থেকে একটুও বেশি না। পানি দিয়েছি জানলেই না ভাইয়া আমাকে বকা দেয় !! বিকেল থেকে সব খেতে পারবে এখন ঘুমাও।” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” এতো ঘুমিয়েছি আর ঘুম নেই আমার চোখে। আচ্ছা একটা ঘুমের ডোজ দিন ঘুমিয়ে যাচ্ছি।” শান রেগে সোহার দিকে ক্ষিপ্ত চাহনি দিয়ে ধমক স্বরে বলে
” একটা থাপ্পড় দেবো বেয়াদব মেয়ে !! একবার এমন করেছো কিছু বলিনি দেখে খুব বেশি সাহস বেড়েছে ?? আর একবার এমন কিছু বললে সত্যি সত্যি থাপ্পড় মেরে বসবো।” সোহা কাঁদোকাঁদো ভাবে তাকাতেই শান রেগে বলে
” হ্যা এটাই তো পারো !! কিছু বললেই ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকো। চুপ করে শুয়ে থাকো আমি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছি।” সোহা চেঁচিয়ে বলে
” না কোথাও যাবেন না আপনি। গেলেই আমি কেঁদে দেবো। আমার কাছ থেকে এক ফোটাও নড়বেন না।” শান আবার সোহার কাছে আসতে নিলে দেয়ালে ঝুলন্ত ঘড়ির দিকে চোখ পরে। ঘড়িতে এখন কাটায় কাটায় সাড়ে নয়টা বাজছে। শান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে
” Oh my Allah !! এতোক্ষণ ধরে ঘুমিয়েছি ?? এতোক্ষণে তো বাড়ির সবার চলে এসেছে। ধুর এতো কেয়ারলেস কি করে হলাম ??” সোহা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শানের দিকে। শান দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যেতে নেয় সোহা জড়ানো গলায় বলে উঠে
” কখন আসবেন আপনি ??”
শান তার পা চলা থামিয়ে দিলো। সোহার কাছে এসে সোহার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে হালকা হেসে বলে
” এখনই চলে আসবো। তুমি এভাবেই শুয়ে থাকো ঠিকাছে ??” সোহা মাথা হেলিয়ে সায় দেয়। শান আবারও মুচকি হাসি দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। কেবিন থেকে বেরিয়েই শান ডানে বায়ে তাকায়। বাদিকে তাকিয়ে দেখে বাড়ির সবাই লাইন দিয়ে বসে আছে। শান ঢোক গিলে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শানকে দেখে সবাই একসঙ্গে তার দিকে তাকায়। শান কিছুটা ইতস্তত বোধ করে বলে
” তোমরা কখন এসেছো ?? আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম তাই আর খেয়াল ছিলো না কিছু।” নিলা মিটমিট করে হাসে। নাইসাকে কোল থেকে নামিয়ে পাশে সিটে বসিয়ে হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে এগিয়ে আসে। সাথে সামির আর সিমিও আসে। নিলা শানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে
” থাক দেবরজি আর কিছু এক্সপ্লেন করতে হবে না। আমাদের যা দেখার সবই দেখে নিয়েছি। কেবিনে যে কোনো কারণে ঝড় বয়ে গিয়েছে সেটাও দেখা শেষ। আর তোমাদের দুজনের একটা ছোট রোমেন্স সিনও দেখেছি।” নিলার কথায় শান লজ্জা পায় কিছুটা। মাথা নিচু করে মাথা চুলকে নিচু স্বরে বলে
” ভাবি এরে আবার রোমেন্টিক এর কি আছে ??” সামির দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে
” কিছু নেই বুঝি ?? তাহলে যেই ছবিটা ক্লিক করেছি সেটা তোর ফেসবুক প্রোফাইলে দিয়ে দেই ??” শান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আঁতকে বলে উঠে
” ভাই !! বেশি হয়ে যাচ্ছে না ??” তিনজন শব্দ করে হেসে দেয়। শান আবার কেবিনে চলে যেতে নিলে নিলা আটকে দিয়ে হাতের ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বলে
” নাও আগে ফ্রেশ হয়ে নাও। কালকে থেকে একই পোশাক পরে আছো। তোমার ভাইয়ার কেবিনে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমরা সোহার কাছে আছি।” শান মাথা নেড়ে ইশানের কেবিনে ঢুকে গেলো।
নিলারা সবাই এসে সোহার কেবিনে ঢোকে। সোহা শানের ফিরে আসার অপেক্ষায় দরজার পানে তাকিয়ে ছিলো। সবাইকে ভেতরে আসতে দেখে সোহার মুখে হাসি ফোটে। নাইসা সিমির হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে সোহার কাছে চলে যায়। সোহার কাছে এসে সোহার হাত ঝাকিয়ে বলতে থাকে।
” মিষ্টিমনি কেমন আছো তুমি ?? তুমি এখানে কেনো শুয়ে আছো বাড়িতে চলো না ?? টমি কাঁদছিল তোমার জন্য।” সোহা মলিন হেসে নাইসার গালে হাত রেখে বলে
” যাবো তো বাবু কালকেই চলে যাবো। এসো, এসো তুমি আমার কাছে এসে বসো !!” নিলা নাইসাকে সোহার বেডে বসিয়ে দিয়ে সোহাকেও হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়। রিয়ানা রহমান সোহার কাছে এসে বলে
” কেমন আছিস মা ??” সোহা মুচকি হাসি দিয়ে বলে
” এখন অনেক ভালো আছি।” ইমতিয়াজ রহমান নিশ্বাস ফেলে বলে
” বারবার কেনো এমন করিস ?? আমাদের কথা ভাবিস না তুই ??” সোহা মাথা নিচু করে নক খুঁটতে থাকে। মুসফিক চৌধুরী সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
” কেমন আছে আমার মা ?? আমার মা কি করে এমন স্টেপ নিতে পারলো আমি বুঝতে পারছি না। এতোগুলো মানুষের ভালোবাসাকে এভাবে ভুলে যেতে পারলে ?? একবারও আমাদের কথা ভাবলে না ??” সিমি আড়চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলে
” ও কি কারোর কথা ভাবার মতো মানুষ নাকি ?? স্বার্থপর মেয়ে একটা। অধিকাংশ সময় নিজেকে বেশি প্রাধান্য নেয়।” সোহা ছলছল চোখে সিমির দিকে তাকায়। সিমি রেগে চোখ ফিরিয়ে নেয় সোহার দিকে থেকে। সোহা সবার দিকে তাকিয়ে দেখে শাহানাজ বেগম সবার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। সোহা মুখে হাসি ফুটিয়েছ আদুরে গলায় বলে উঠে
” মামনি !! আমার কাছে এসো না !!” শাহানাজ বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সোহার দিকে। কিছুক্ষণ পরে রাগ মিশ্রিত গলায় বলে উঠে
” আমি কারো মামনি নই। আমি শুধু আমার ছেলে মেয়েদের মা। তারা আমাকে যথেষ্টর চেয়ে বেশি ভালোবাসে আর কারো ভালোবাসার প্রয়োজন নেই আমার। অযথা মামনি বলে আমাকে দুর্বল বানানোর চেষ্টা না করাই ভালো। আমার সন্তানরা কখনো এমন ভুল করে না। আমি অন্য কাউকে মামনি বলার অধিকার দেইনি।” শাহানাজ বেগমের কথা শুনে সোহা ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। শাহানাজ বেগম চোখ মুখ শক্ত করে সোহার দিকে তাকায়। সোহা কাঁদতে কাঁদতে বলে
” মামনি তুমি আমার উপর রাগ করে আছো !!” শাহানাজ বেগম ভ্রু কুঁচকে বলে
” আমি রাগ কেনো করবো ?? রাগ করার কোনো অধিকার বা সম্পর্ক কি আমাদের মাঝে আছে নাকি ?? তুমি শুধুমাত্র আমার ছোট ছেকের বউ সেই ক্ষেত্রে তোমার উপর রাগ করা বা অন্য কিছু করার অধিকার আমার নেই।”
সোহা শব্দ করে এবার কেঁদে দেয়। সামির সোহার চোখের পানির মুছিয়ে দিয়ে বলে
” মা !! তুমি আমার বোনটাকে কেনো কাঁদাচ্ছ বলো তো ?? এখনও মেয়েটা সুস্থই হতে পারেনি।” শাহানাজ বেগম চোখের পানি মুছে বলে
” হ্যা তোমার বোনকে আমি কাঁদাচ্ছি আর তোমার বোন কি আমাদের কাউকে কাদায়নি ?? এতোই যখন মরার ইচ্ছে তাহলে আমাদের কাছে এসে এতো ভালাবাসার সম্পর্ক তৈরি করার কি দরকার ছিলো ?? নিজেকে আমাদের চোখের মনি করে তোমার কি কোনো দরকার ছিলো ??” সোহা কাঁদতে কাঁদতে অসহায় ভাবে শাহানাজ বেগমের দিকে তাকিয়ে আবার সামিরের দিকে তাকায়। সামির মাথা নেড়ে সোহাকে কাঁদতে মানা করে শাহানাজ বেগমের দিকে এগিয়ে যায়। শাহানাজ বেগকে সোহার কাছে নিয়ে এসে বলে
” মা তুমি সোহার উপর রাগ করে থেকো না তো। মেয়েটা এমনি দুর্বল হয়ে আছে কাঁদলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। একটু আদর করে দাও তোমার মেয়েকে তাহলে দেখবে আর রাগ থাকতে পারবে না।” সোহা আদর মাখা চাহনিতে তাকালে শাহানাজ বেগম আবারও অন্যদিকে ঘুরে যায়। নিলা সোহাকে জড়িয়ে ধরে আড়চোখে শাহানাজ বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে
” সোহা তুমি অজ্ঞান হয়ে যাও তাহলে দেখবে মা আবার তোমার কাছে এসে কাঁদবে আর জড়িয়ে ধরবে।” শাহানাজ বেগম ক্ষেপে বলে
” নিলা এসব কি কথা !! সোহা এমন করবে কেনো ?? আমার মেয়ে এসব কিছু করবে না।” সোহা কান্নার মাঝে হেসে শাহানাজ বেগমের হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে। নিলা হাসতে হাসতে বলে
” হ্যা এটাতো তোমারই মেয়ে। শুধু শুধু অভিমানের নাটক করে পার পাবে নাকি।” শাহানাজ বেগম মুখ ফুলিয়ে নেয়। রিয়ানা রহমান দুজনের মান অভিমান দেখে চোখ জুড়িয়ে নিচ্ছে। তার মেয়ে যে কতোটা শুখে আছে সেটা বুঝতে পারছে সে।

কিছুক্ষণ পর রুমে শান প্রবেশ করে। শানকে দেখে সোহা সবার থেকে চোখ ফিরিয়ে শানের দিকে তাকায়। শান সোহার তাকানো দেখে মুচকি হাসি দিয়ে চোখের পলক ফেলে বোঝায় ‘ আমি এখানেই আছি।’ সোহা শানকে দেখে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। এতোক্ষণ শানের চেহারায় যেই ক্লান্তি দেখা যাচ্ছি সেটা আর নেই। শানকে একদম ফ্রেশ লাগছে। কিছুক্ষণ কথা বলে সামির, মুসফিক চৌধুরি, ইমতিয়াজ রহমান অফিসের জন্য বেড়িয়ে গেলো আর বাকিরা বাড়িতে চলে গেলো। শান সোহার পাশে বসতেই সোহা শানের হাতটা নিজের নিয়ে বলে
” ভালোবাসি।” শান প্রশান্তির হাসি দিয়ে বলে
” শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ভালোবাসি।” শান সোহার কপালে ছোট একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। সোহা আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। শান উঠে যেতে নিলে সোহা শানের শার্ট খামছে ধরে আটকে দেয়। শান জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সোহা লাজুক হাসি দিয়ে বলে
” এতোদিন তো স্বামীর অধিকার নিয়ে আমাকে আদর করতেন আজকে ভালোবাসার অধিকার নিয়ে আমাকে একটু খানি আদর করে দিন।” সোহা ঠোঁটের দিকে ইশারা করতেই শান চোখ ছোট ছোট করে তাকায় সোহার দিকে। সোহার হাত ছাড়িয়ে সোজা হয়ে বসে বলে
” তুমি দেখি খুব দুষ্টু হয়ে গিয়েছো !! এই অবস্থায় এসব চিন্তা একদম করবে না। আগে সুস্থ হও তারপর সব। আচ্ছা একটা কথা দেবে আমাকে ??” সোহা ভ্রু উঁচিয়ে বলে
” বলুন বলুন কি কথা !!” সোহার হাত ধরে বলে
” তুমি আর কোনোদিন রাগের কারণে হোক বা অন্য কারণে এমন কোনো স্টেপ নেবে না। কথা দাও !! পরের বা এমন করলে হয়তো তুমি বেঁচে গেলেও আমাকে খুঁজে পাবে না।” সোহা আতকে শানের দিকে তাকাতেই শান মলিন হাসি দিয়ে বলে
” দেবে কথা !! তোমার রাগ হলে আমার কাছে আসবে আমি তোমার সব রাগ এক নিমিষেই কমিয়ে দেবো কিন্তু আর কোনোদিন এমন কিছু করবে না।” সোহা শানের শার্টের কোণা শক্ত করে ধরে। ভীতু স্বরে বলে
” না, আপনি কোথও যাবেন না প্লিজ !! আমি আর এমন কিছু করবো না কথা দিচ্ছি। আপনিও কথা দিন আর কোথাও যাবেন না !!” শান মুচকি হেসে বলে
” নাহ কোথাও যাবো না।” সোহা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে শানকে জড়িয়ে ধরে।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে