#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ৩৬
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ইশান এগিয়ে এসে বলে
” মানে শান বলতে চাইছে আমরা কি করে থাকবো সোহাকে ছাড়া। সোহাকে ছাড়া তো বাড়ি ফাকা ফাকা লাগে তাই। সোহা আর নাইশা পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে ও চলে গেলে তো সব চুপচাপ হয়ে যাবে।” শান বোকার মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। রিয়ানা রহমান মন খারাপ করে বলে
” আমাদের পুরো বাড়িটাই খালি পরে আছে। আগে দুই মেয়ের ঝগড়ায় মেতে থাকতো এখন একদম মৃত বাড়ির মতো। কয়েকদিনের জন্যই নিয়ে যাবো।” শাহানাজ বেগম রিয়ানা রহমানের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলে
” না বেয়াই কেউ বাধা দেবে না সোহাকে নিয়ে জান। যতোদিন ইচ্ছে রাখতে পারেন। আর দরকার পড়লে শান মাঝে মাঝে সোহাকে দেখতে যাবে।” শান অসহায় ভরা দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো। মনে মনে বলে
” মাঝে মাঝে কেনো মা ?? আমি তো ওকে ছাড়া থাকতেই পারবো না। আমি ওর সাথেই চলে যাই !!” শানের ভাবনার মাঝে রিয়ানা রহমান বলে
” শান মাঝে মাঝে যাবে কেনো ?? আমাদের সাথেই একেবারে চলুক !!” ইমতিয়াজ রহমান সায় দিয়ে বলে
” হ্যা শানও আমাদের বাড়িতে চলো। কয়েকদিন জামাই আদর খেয়ে আসবে।” শানের চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে উঠে। শান খুশি হয়ে কিছু বলার আগেই সামির বলে
” বাবা কালকে আমাদের কোম্পানিতে বড় একটা ডিল ফাইনাল হওয়ার কথা আছে। আজকে সেটার জন্য কিছু কাজও আছে আমার শানের সাথে। বলছিলাম সোহাকে নিয়ে জান শান কালকের মিটিং শেষ করে চলে যাবে ??” ইমতিয়াজ রহমান মাথা নেড়ে বলে
” ঠিকাছে তাহলে তাই হবে। সোহা মা তৈরি হয়ে চলে আয়। একটু পরেই নাহয় বেড়িয়ে যাবো আমরা।” সবার মুখে মন মরা ভাব দেখা যায়। শানের মুখও থতথমে হয়ে যায়। সোহা মাথা নেড়ে উপরে চলে যায় নিজের লাগেজ গোছানোর জন্য। বড়রা কথা বলতে শুরু করলে শান চুপচাপ সেখান থেকে সরে আসে। উপরে রুমে গিয়ে দেখে সোহা শুকনো মুখে ধীরে ধীরে তার দরকারি জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। সোহা শানকে দেখে তার হাত চলা থামিয়ে শানের মুখের পানে তাকিয়ে থাকে। শান দরজা বন্ধ করে গটগটিয়ে রুমে ঢুকে সোহাকে জড়িয়ে ধরে মুখে অজস্র চুমু খায়। শান সোহার দুই গালে হাত রেখে নিষ্প্রাণ গলায় বলে
” তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি ?? তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে তো আমার ঘুমই হয় না। ও সোহাপাখি বলো না কিভাবে থাকবো ??” সোহা ছলছল নয়নে শানের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়। জড়ানো গলায় বলে
” কিভাবে আবার !! বিয়ের আগে যেভাবে থাকতেন সেইভাবে। আর একদিনই তো একা থাকতে হবে সেটা তো মানিয়ে নিতেই পারবেন।” শান সোহার কোমড় জড়িয়ে সোহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথা নেড়ে বলে
” না আমি এই একদিনও থাকতে পারবো না। তোমাকে না দেখে অফিসে গেলে আমার পুরো দিনটাই নষ্ট হয়ে যাবে। এক মুহূর্ত না দেখলে আমার নিশ্বাসই বন্ধ হয়ে যাবে। আমিও যাবো তোমার সাথে।” সোহা নাক টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে শানের বুক থেকে মাথা তুলে বলে
” হ্যা চলুন। একটু আগে যেভাবে বড়দের সামনে সেই কথা বলে উঠেছিলেন !! নেহাত ভাইয়া বাঁচিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু আবার শখ হলে নিজেকে গিয়ে এবার সত্যি সত্যি নির্লজ্জ প্রমাণ করে দিয়ে আসুন জান, জান, জান !!” শান ইনোসেন্ট ফেস করে বলে
” ওলে আমার সোহা রানীটা এভাবে জান বলে ডেকো না। আমার তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করবে।” সোহা ছিটকে শানের থেকে দূড়ে সরে আসে। থমথমে মুখ করে আড়চোখে শানের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বলে
” একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না ??” শান ঠোঁটে সেই সোহার মন কারা হাসিটা দিয়ে এগিয়ে আসে। সোহা মুগ্ধ হয়ে শানের হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মাঝেই শান সোহাকে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে সোহার গালে চুমু দিয়ে বলে
” কিছুই তো শুরু করিনি বেশি হবে কি করে ?? তবে কালকে সকালে তো তোমাকে পাবো না আর সকালে মর্নিং কিস দেওয়া হবে না তাই ভাবছি এখনই সেটা দিয়ে নেই।” সোহা চমকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু শান সোহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুই অধর জোড়া এক করে দিলো। কিছুক্ষণ পর সোহাকে ছেড়ে দিয়ে সোহার কপালে কপাল ঠেকিয়ে ঘনঘন শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে
” happy advance morning kiss.” সোহার গাল দুটো লাল বর্ণ ধারণ করে। শান মুচকি হেসে বলে
” তোমার এই লজ্জা মাখা হাসি দেখার জন্যই তো এটা।” নিচ থেকে সোহার নাম ভেসে আসতেই শানের মুখ মলিন হয়ে গেলো সাথে সোহারও। শান নিশ্বাস ফেলে সোহাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। সোহা তার লাগেজ লাগিয়ে নেয়। যাওয়ার আগে শানের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে হুট করে মাথায় একটা কথা মাথায় আসতেই সোহা মিটমিট করে হাসতে থাকে। সোহা শানের বাহুতে আঙুল দিয়ে গুঁতো দিতেই শান সোহার দিকে তাকায়। সোহাকে এভাবে হাসতে দেখে শানের কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে আসে। সোহা দুই পা এগিয়ে এসে শানের সামনে এসে দাঁড়ায়। আবার একটা হাসি দিয়ে হুট করে শানের গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দৌড় দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। শান বিস্মিত হয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার দেখামতে সোহা এই প্রথম নিজ ইচ্ছায় তাকে চুমু দিয়েছে। শান প্রায় কতোক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে নিজেও বলতে পারে না। নিচ থেকে আবার তার নাম ধরে ডাকতেই শানের হুশ ফিরে আসে। আয়নার সামনে ফিয়ে দাঁড়িয়ে গালে হাত দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বলে
” এটা কি ছিলো ??” শান তার বিস্মিত ভাব নিয়েই সোহার লাগেজ নিয়ে নিচে গেলো। নিচে জাওয়ার পর সোহা একবারও তার দিকে চোখ তুলে তাকায়নি দুই একবার আড়চোখে তাকিয়েছে। তবে শান সোহার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সোহারা বিদায় নিয়ে চলে যেতেই শান রুমে ফিরে আসে।
শান এসে ধপ করে শুয়ে পরলো বিছানায়। সোহা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কয়েক মিনিট হয়েছে।ইতিমধ্যে বাড়িটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। নাইসাও সোহা, টমি চলে যাওয়ায় মন খারাপ করে বসে আছে রুমে। সময় কাটতে না থাকলেও শানের অস্থিরতা ঠিকই বাড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পর সামির আসে মিটিং এর কিছু ফাইল নিয়ে।
সোহা বাড়ি ফিরেই টমিকে নিয়ে বারান্দায় এসে ডিভানে বসে আকাশ বিলাস করতে থাকে আর শানের কথা ভেবে লজ্জায় লাল হতে থাকে।
রাত বাড়তে থাকে। শান আর সামিরের কাজ রাত একটা নাগালে শেষ হয়। কাজ থেকে মন উঠতেই শানের আবার ছটফটানি শুরু হয় সোহাকে নিয়ে। ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম তার চারপাশেও ধরা দেয় না। অনেক ভেবে সোহাকে ফোন দেয় কিন্তু সোহা রিসিভ করে না।
সোহা লজ্জায় শানের ফোন রিসিভ করছে না। রিসিভ না হওয়ার কারণটা শান বুঝতে পারলেও আরো কয়েকবার ফোন করে কিন্তু রিসিভ হয় না। শেষে শান সোহাকে একটা মেসেজ সেন্ড করে।
‘ সোহামনি ফোন রিসিভ করো নাহলে এখনই তোমার বাড়ির সামনে এসে হাজির হবো।” এমন মেসেজ দেখে সোহার কপাল চোখে উঠে গেলো। আরেকবার ফোন বাজতেই সোহা ধড়ফড়িয়ে উঠে ফোন রিসিভ করে। কানে লাগাতেই শান গম্ভী গলায় বলে উঠে
” এতো ফোন দিলাম রিসিভ করা হয়নি কেনো ?? তুমি জানো না তোমার জন্য আমি ছটফট করছি। তোমাকে ছাড়া ঘুমাতেই পারছি না রুমটা ফাকা ফাকা লাগছে।” সোহা মুখ বাকিয়ে বলে
” ইশশ !! বিয়ের আগে এতোবছর কিভাবে একা থেকেছেন ?? এখন দুই মাসেই এতো বদল !!”
ফোনের ওইপাশে শান চোখ ছোট করে নেয় সোহার কথায়। স্পষ্ট বিরক্তিকর কন্ঠে বলে
” এই যে ম্যাম !! পড়া লেখাও ভুলে গিয়েছো নাকি ?? দুই মাস না চার চারটা মাস হয়ে গিয়েছে। পাচঁমাসও প্রায় শেষের পথেই। আর বিয়ের আগের কথা আর বিয়ের পরের কথা দুটোই সম্পূর্ণ আলাদা। আচ্ছা এখন বলো কি করবো আমার ভালো লাগছে না এখানে।” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” আমারও একা ভালো লাগছে না।” শান দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে
” তাই বুঝি ?? আমার সোহামনির কি স্বামীর আদর গুলো মিস করছে ?? নাকি পুরো আমিটাকেই মিস করছে হুম, হুম, হুম !!” সোহা লজ্জা পেলেও গলা ঝেড়ে বলে।
” তা কেনো হবে ?? আমি তো নাইসা, ভাইয়াদের, ভাবিমনি, আপুই , মামনি, বাবাই ওদের মিস করছি।” শান হতাশার স্বরে বলে
” কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম আমার বউটা আমাকে মিস করছে। তাহলে আমি আর কথা বলে কি করবো ?? রেখে দিচ্ছি।” সোহা হরবরিয়ে বলে
” এই না না না !! আমি তো এমনি বলছিলাম। আমি তো আপনাকেই বেশি মিস করছি।” সাথে সাথে সোহা মুখ চেপে ধরে নিজের শান ঠোঁট কামড়ে হাসে। হেসে বলে
” আচ্ছা তোমাকে দেখতে ইচ্ছে কিরছে ভিডিও কলে এসো না !!”
” উঁহু !! আমার লজ্জা লাগছে।” শান শব্দ করে হেসে বলে
” তোমার আবার কিসের জন্য লজ্জা লাগছে ??” সোহা লজ্জায় কিছু বললো না। শান ফোন কেটে what’s app এ ভিডিও কল দিলো। সোহাকে দেখে শান সাথে সাথে রেগে গেলো। রেগে চেঁচিয়ে বলে
” এই মেয়ে এটা কি ?? তুমি এখনও ড্রেসই চেঞ্জ করোনি ?? এতো ভাড়ি শাড়ি পরেই শুয়ে আছো ?? তার উপর আবার টমিকে পাশে নিয়ে ঘুমাচ্ছো !! তোমাকে মাথায় তুলে আছাড় দিতে ইচ্ছে করছে আমার।” সোহা মুখ গোমড়া করে নিলো শানের বকা খেয়ে। শান এখনও রেগে আছে। সোহাকে দেখে বলে
” এই মুখটাকে বাদরের মতো করে রেখেছো কেনো ?? যাও আমি কলেই আছি তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো নাহলে আমি এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করবো না। গাড়ি বের করেই বাড়িতে এসে পড়বো। যাও !!” শানের ধমক খেয়ে সোহা দৌড়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। আবার বেড়িয়ে এসে ড্রেস নিয়ে একবার শানের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে ঢুকে গেলো। শান ফিক করে হেসে দিলো সোহাকে দেখে।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে আসার পর দুজন অনেক্ষণ কথা বললো। রাত তিনটার দিকে শান সোহাকে ঘুমাতে বলে কল কেটে দিলো। দুজনই নির্ঘুমে কাটালো সারারাত।
সকাল হতেই শান চলে গেলো অফিসে আর সোহা ভার্সিটিতে।
ভার্সিটিতে এসেও সোহার পুরো সময়টা প্রচুর খারাপ গেলো। ক্লাস শেষে সোহা ইতিকে নিয়ে ক্যান্টিনে চলে গেলো। টেবিলের উপর মাথা রেখে মন খারাপ করে বসে থাকে। সারারাত না ঘুমানোতে আবার শানকে প্রচুর পরিমাণে মিস করছে কাজ কারণে মুডের বারোটা বেজে আছে। এর মাঝে ইমন উপস্থিত হলো। ইতি তাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। সোহা দুজনকেই লক্ষ করলো দুজনের হাবভাব দেখে সোহা কিছুটা নড়েচড়ে বসে। নির্ঘাত দুজনের ঝগড়া হয়েছে এবং এখনও হবে। ইমন ইতিকে কিছু না বলে সোহাকে বলে
” ভাবির কি মন খারাপ ?? হঠাৎ মুড অফ কেনো কাজকে ??” সোহা সোজা হয়ে বসে। এক হাত দিয়ে অন্য হাতে নক খুঁটতে খুঁটতে বলে
” আপনার ভাইকে মিস করছি।” ইমন ভাবতে ভাবতে বলে
” কেনো ভাইয়া কোথাও গিয়েছে নাকি ??”
” নাহ আমি বাবার বাড়ি এসেছি তাই। উনি আজকে আসবে মিটিং শেষ করে।” ইমন প্রতিউত্তরে বলে
” আহা কি ভালোবাসা আপনাদের। দুজন দুজনকে ছাড়া বোধয় কয়েক ঘন্টাও থাকতে পারেন না। আর আমার হয়েছে একজন যে ঝগড়া না করে কমপক্ষে এক ঘন্টা থাকতে পরে না।” শেষের কথাটা যে ইতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছে সেটা ইতি খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো আর ফুস করে রেগে বলে উঠে
” আর তুই নিজেকে কি ভালো বলে দাবি করিস ?? এতোদিন হয়ে গেলো কবে থেকে বলছি আমার বাবার কাছে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আয় কিন্তু তুই তো কার্টুন সেজেই বসে থাকিস আমার কথায় পাত্তা দিস নাকি?? কতোবার বলেছি আবার বাবা ভালো ছেলে খুঁজছে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। কোনদিন জানি একটা ছেলেকে ধরে এনে আমার গয়াক্য ঝুলিয়ে দেয়। তখন তুই থাকিস দেবদাস হয়ে। তখন মদ খেয়ে ঘুরবি রাস্তাত রাস্তায়। আমার কাছে আসলেই একটা থাপ্পড় মেরে দেবো।” ইতির শহীদ দিবসের ভাষণ শুনে সোহা আর ইমনের মাথা ঘুরতে থাকে।
চলবে~ইনশাল্লাহ……..
#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ৩৭
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
ইতির শহীদ দিবসের ভাষণ শুনে সোহা আর ইমনের মাথা ঘুরতে থাকে। ইমন মাথায় হাত দিয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। ইমন ঢোক গিলে বলে
” এসব কি বলছো তুমি ?? এভাবে কেউ পাবলিক প্লেসে সিনক্রিয়েট করে ?? আমার মান-সম্মানের ফালুদা বানিয়ে দিলে তুমি ইতি দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” শুধু ফালুদা কেনো ?? হালুয়া, সুজি রোস্ট, কাবাব সব বানাবো।” ইমন মাথা নেড়ে বলে
” আচ্ছা আচ্ছা বানিয়ো তবে এখন না পরে। আমি আজকে তোমারদের একটা নিউজ দিতে চেয়েছিলাম।” ইতি আড়চোখে একবার ইমনের দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সোহা হালকা হেসে বলে
” আপনি বলুন ভাইয়া কি নিউজ দেবেন।” ইমন ইতির গা ঘেঁষে বসে বলে
” নিউজটা হলো যে আমি একটা জব এর জন্য ট্রাই করেছিলাম আর সেটা ভাগ্যবসত আমি সিলেক্টেড হয়ে গিয়েছি। তাও ম্যানেজার পোষ্টে।” ইমনের কথা শেষ হতেই ইতি আর সোহা চোখ বড়বড় করে তার দিকে তাকায়। ইতি কিচ্ছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ খুশিতে লাফিয়ে উঠে। চিৎকার দিয়ে ইমনকে জড়িয়ে ধরে। সোহা ফিকফিক করে হেসে দিলো ইতির কাজ দেখে। ইমনের চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাঁপ দেখা যাচ্ছে। ইমন বোধয় একসেপ্ট ও করেনি ইতি এভাবে তাকে জড়িয়ে ধরবে। কিছু সময় যেতেই ইতির হুশ আসে কি করেছে। ইতি দ্রুত গতীতে ইমনের কাছ থেকে সরে এসে লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকে। সোহা কিছুক্ষণ মিটমিট করে হেসে ইমনকে উদ্দেশ্যে করে বলে
” কিন্তু ভাইয়া আপনার বাবার তো বিজনেস রয়েছে আপনি তো সেটাতেই জয়েন করতে পারেন তাহলে চাকরি কেনো ??” ইমন মুচকি হেসে চেয়ারে আরাম করে বসে বলে
” আসলে ভাবি এখন বাবার অফিসে জয়েন করার ইচ্ছা নেই আমার। ভেবেছি একদম স্টাডি শেষ করে অফিসে জয়েন করবো।আর জবের কোনো চিন্তা ছিলো না তবে কয়েকজন বন্ধুদের দেখে শখ জাগলো জব করার এখন ফ্রি ছিলাম তাই ট্রাই করে দেখলাম। কিন্তু এটা যে হয়ে যাবে আমি নিজেও আন্দাজ করতে পারিনি। প্রচুর অবাজ হয়েছি জবটা কনফার্ম হওয়ায়। তবে যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। অন্তত নিজের হাতখরচের ভরণপোষণ নিজেই করতে পারবো। আর আমি ভাবছি বেঁচে যাওয়া টাকা গুলো জমিয়ে রাখবো বিয়ে হলেই ইতিকে নিয়ে হুটহাট করে হানিমুনে নিয়ে যাবো।” শেষের কথাটা ইমন মজার সরেই বলে ইতির দিকে তাকিয়ে। ইতি কিছুটা লজ্জা পেলেও হালকা রেগে ইমনের বাহুতে থাপ্পড় মেরে উঠে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে যায়। সোহা ইমনও হাসতে হাসতে পেছন পেছন যায়। ইমন গিয়ে ইতির হাত ধরে ইতিকে নিয়ে হাটতে থাকে। ইমন ছেলেটা বরাবরই হেল্পফুল আর প্রাণচঞ্চল ছেলে। মুখের হাসিটা কখনো বিলীন হতে দেয় না। তিনজন কথা বলতে বলতে হাটতে থাকে। হাটতে হাটতে সোহা সামনের ভবনে তাকাতেই দেখতে পায় আসফিকুর স্যার তাদের টিচার্স রুমের দিকে হেটে হেটে যাচ্ছে। সোহার চোখ, মুখ বিরক্তিতে ভরে গেলো। স্যারটা খুবই খুতখুতে ভার্সিটির নতুন টিচার। এক সপ্তাহের মতো হয়েছে এখানে ট্রান্সফার হয়েছে। স্যারের চশমাটা সবসময় নাকের মাঝে পরে থাকে। স্যার তার চশমার উপরের ফাক দিয়ে সবার দিকে তাকায়। শুধু তাই নয় ক্লাসে গিয়ে পড়া শুরু করার আগে নিজের হাত, পা সহ আশেপাশে সেনিটাইজার দিয়ে নেয়। চেয়ারে বসার আগে, হোয়াইট বোর্ডের মার্কার হাতে নেওয়ার আগেও এই কাজটা করে। স্যারের পড়ার ধরণ সবার কাছে ভালো লাগলেও স্যারের খুতখুতে ভাবটাতে অনেকেই বিরক্ত প্রকাশ করে আবার অনেকেই তাকে নিয়ে ঠাট্টা মজা করা। সোহাও মাঝেমাঝে তার কাজে বিরক্ত হয়। সোহা নিশ্বাস ফেলে আবার নিজেদের গল্পে মনোযোগ দেয়। ভার্সিটি গেটের বাইরে এসে ইমন আর ইতি বিদায় নিয়ে চলে যায়। সোহা তার গাড়ির কাছে আসতে আসতে চারপাশে তাকাতে থাকে। তাকাতে তাকাতে হঠাৎ তার পা থেমে যায়। সোহা ঘুরে আবার রাস্তার অপর পাশে তাকায়। রেস্টুরেস্ট থেকে শানের সাথে একটা সুন্দরি, স্টাইলিশ মেয়ে বেড়িয়ে আসছে। দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে কথা বলছে। সোহা কিছুটা অবাক হলেও পাশে মেয়েটার দিকে খেয়াল হতেই সোহার ভ্রু কুঁচকে আসে। সোহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে থাকে দুজনের দিকে। শানকে মেয়েটার সাথে দেখে সোহার অজান্তেই মাথার রক্ত পায়ে উঠে যায়। শানদের কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাবলো শান ভার্সিটির দিকেই আসবে কিন্তু সোহাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে শান আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে সেখান থেকে চলে যায়।সোহার মাথায় হঠাৎ ভয়ংকর পরিমাণ রাগ চেপে বসে। রাগে সোহা দাঁতেদাঁত চেপে ধরে কাপঁতে কাপঁতে থাকে। রাগে চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। সোহা দৌড়ে গাড়ির কাছে গিয়ে দরজা খুলে ব্যাগটা ছুড়ে মেরে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বাড়িতে যেতে বলে।
বাড়ির সদর দরজার কলিংবেল বাজে উঠতেই রিয়ানা রহমান সোফা থেকে উঠে চটজলদি করে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই শান দুই হাত ভরতি জিনিস নিয়ে বাড়িতে ঢোকে। রিয়ানা রহমান অবাক হয়ে বলে
” আরে বাবা এতো কিছু আনার কি দরকার ছিলো ??” শান হেসে বলে
” না মা। দ্বিতীয় বার এসেছে কিছু না আনলে আমারই খারাপ লাগবে। যাই হোক সব ধরুন আমার হাত ছুটে গেলো।” রিয়ানা বেগম মলিন হেসে কাজের মেয়ে তিথিকে বলে এগুলো নিয়ে যেতে। সব জিনিস নিতেই শান হাফ ছেড়ে সোফায় বসে পরে। চারপাশে তাকিয়েও সোহাকে কোথায় দেখতে পেলো না। রিয়ানা রহমান আর ইমতিয়াজ রহমান শানের সামনের সোফায় বসে। শান দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে
” আপনাদের এমন দেখাচ্ছে কেনো ?? শরীর ঠিকাছে তো ??” রিয়ানা রহমান একবার ইমতিয়াজ রহমানের দিকে তাকিয়ে আবার শানের দিকে তাকায়। আহত গলায় বলে
” আসলে দুপুর থেকে সোহাকে কেমন লাগছে। মানে ভার্সিটি থেকে এসে হনহনিয়ে রুমে গিয়ে জোড়ে দরজা দিয়ে বসেছিলো এখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে এখনও দরজা খুলেনি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কিছুতেই দরজা খুললো না। শুধু বলেছিলো ঘুম পেয়েছে ও ঘুমাবে।” কথা গুলো শুনে শান সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়। অবাক হয়ে বলে
” মানে ?? আপনারা এখনও আমাকে জাননি কেনো ??”
ইমতিয়াজ রহমান নিশ্বাস ফেলে বলে
” তোমাদের তো আজকে অনেক বড় একটা মিটিং ছিলো তাই আর ডিস্টার্ব করিনি।” রিয়ানা রহমান ভীতু গলায় বলে
” বাবা একটু দেখো বের করতে পারো কি না মেয়েটাকে। মেয়েটা যদি রেগে থাকে তাহলে..কি না কি করে বসবে জানি না। রেগে গেলো ভয়ংকর হয়ে যায়।” শান দেড়ি না করে উপরের দিকে ছুটলো। দরজার সামনে এসে কড়া নাড়িয়ে সোহাকে ডাকতে থাকে।
” সোহা !! সোহা !! সোহা দরজা খোলো !! সোহামনি ??” অনেকবার ডাকার পরও সোহা দরজা খুললো না। শানের এবার শীতের মাঝেই চিন্তায় ঘাম ঝরতে থাকে। শান চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখে ভেতরে যাওয়ার কোনো পথ আছে কিনা। কিন্তু কোনো দ্বিতীয় রাস্তা দেখতে পেলো না শান। শান ছুটে আবার নিচে গেলো। রিয়ানা রহমান বসে বসে চিন্তা করছে আর ইমতিয়াজ রহমান পাইচারি করছে। শান দৌড়ে তাদের সামনে গিয়ে বলে
” বাবা সোহার রুমের কোনো দ্বিতীয় দরজা নেই ভেতরে ঢোকার জন্য ??” ইমতিয়াজ রহমান দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বলে
” দ্বিতীয় দরজা… না দরজা নেই তবে জানলা দিয়ে ঢুকতে পারবে। চলো আমার সাথে।”
উপরে গিয়ে মুসফিক রহমান সোহার রুমের জানলার একপাশ খুলে দিলো। সেদিক দিয়ে কোনো গ্রিল নেই। শান ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই ইমতিয়াজ রহমান বলে
” এটা সোহাই করেছিলো। সেটার কাহিনী পরে বলবো আগে ভেতরে গিয়ে সোহাকে দেখো ঠিকাছে কিনা।” শান দ্রুত ভেতরে ঢুকে যায়। রুমে ঢুকে শানের পা থেমে যায়। ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে রুম। শান এক পা বাড়াতেই পায়ে কিছু লাগে শান উপায় না পেয়ে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে। রুমের লাইট অন করতেই শানে পুরো রুমে চোখ বুলাতেই সোহাকে খাটের পাশে দেখতে পায়। শান দৌড়ে সোহার কাছে যায়। সোহার মাথাটা কোলে নেয়। সোহার চোখ মুখ দেখে শানের বুক কেঁপে উঠে। চোখ, মুখ ফুলে অবস্থা খারাপ। চোখের কোণের পানিটা এখনও রয়েছে গিয়েছে। শান সোহার গালে আলতো ভাবে থাপ্পড় দিয়ে ডাকতে থাকে
” সোহা !! সোহা চোখ খোলো কি হয়েছে তোমার ?? সোহা !!” শানের শান অস্থির হয়ে যায় সোহার এই অবস্থা দেখে। সোহাকে খাটে শুয়ে দিয়ে দরজা খুলে চিৎকার করে সোহার মা বাবাকে ডাকতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা চলে আসে। সোহার মা এসেই সোহাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। সোহার বাবা ভয় পেলেও নিজেকে কোনোরকমে ঠিক রেখে ডক্টরকে ফোন করে। শান সোহার পাশে বসে হাত, পা ঘষতে থাকে। পানি ছিটাতে থাকে কিন্তু কোনো লাভ হয় না। শানও কোনোরকমে নিজের কান্না আটকে রেখেছে। ডক্টরের আসতে দেড়ি দেখে শান আরো অস্থির হয়ে গেলো। সোহাকে কোলে তুলে বেড়িয়ে গেলো ইশানের হসপিটালের উদ্দেশ্যে। শানের অবস্থা দেখে ড্রাইভার নিজেই গাড়ি বের করে সবাইকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যায়।
সোহাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শান বাইরে পাইচারি করে যাচ্ছে আর সমানে কেবিনের দিকে তাকাচ্ছে। শানকে দেখার মতো অবস্থা নেই। শান যে কোনো সময় কেঁদে দেবে অস্থিরে বুকটা সমানে কেঁপে যাচ্ছে। শানের বাড়ির সবাইও এসে পড়েছে। শাহানাজ বেগম, রিয়ানা রহমান, সিমি তিনজন একসঙ্গে ঘেঁষে বসে আছে তখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। মুসফিক রহমান আর ইমতিয়াজ রহমান ও চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। কেউ বুঝতে পারছে না হঠাৎ কি হয়েছে সোহার। সামির দৌড়ে এসে শানের কাছে দাঁড়ায়। সামিরকে দেখেই শান সামিরের গলা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। সামির শানকে কাঁদতে দেখে পুরোই হতবাক হয়ে যায়। যেই ছেলেকে কোনোদিন কাঁদতে দেখেনি সে কিনা আজকে একটুতেই ভেঙে গিয়েছে। শান কাঁদতে কাঁদতে বলে
” ভাইয়া সোহার কি…হয়েছে ?? ওর কি…ছু হবে না তো ?? ভাইয়া বলো না !!! ওর কি হয়েছে ?? আমার কথা একবারও ভাবলো না !!” সামির শানের পিঠে হাত রেখে শান্তনা দিয়ে বলে
” সোহার কিছুই হয়নি দেখবি এখনই ভাওয়া বাইরে এসে বলবে সোহা একদম ঠিকাছে। তুই কাঁদিস না। তুই কাঁদলে সবাই ভেঙে পরবে। এমনি সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।” শান তাড়াতাড়ি নিজের চোখ মুছে সোহার কেবিনের সামনে গিয়ে দাড়ালো। বাইরে থেকে ভেতরের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শান আবারও পাইচারি করতে থাকে। সামির শানকে শান্ত করার চেষ্টা করেও পারে না। শান কিছুতেই শান্ত হয়ে বসে না।
প্রায় আধ ঘন্টা পরে হঠাৎ ওটি থেকে ইশান বেড়িয়ে আসে মুখের মাস্ক খুলে নেয়। সবাই আর শান দৌড়ে ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে জড়ানো গলায় বলে
” ভাইয়া সোহা কেমন আছে ?? ও..র কককিছু হয়নি তো !! ভভভাইইয়া কিছু বলছো না কেনো ?? স…সোহাকে কি আআমাকে ডাকছে ?? ভাইয়া !!” শানের চিৎকার শুনে ইশান শানের কাধে হাত রেখে চোখের পলক ফেলে বলে
” সোহা একদম ঠিকাছে। কি হয়ে সেটাও বলছি আগে চল আমার সাথে।” ইশানের কথায় শান তার প্রাণ ফিরে পায়। চোখের কোণের পানি মুছে মলিন হাসি দিয়ে মাথা নাড়ায়। ইশান হালকা হেসে আবার গম্ভীর চেহারা করে নেয়। সোহার মা আর বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ইশানকে দেখে দুজন উঠে দাঁড়ায়। ইশান গম্ভীর গলায় বলে
” সোহা এমন করেছে কেনো ??” রিয়ানা রহমান ভীত গলায় বলে
” কি করেছে সোহা ??” ইশান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি করেছে বুঝতে পারছেন না ?? সোহার মতো একটা মেয়ের আজকে হঠাৎ কি এমন হয়েছে যার কারণে ছয় ছয় টা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলেছে !! এতো পাওয়ারের ঔষধ তাও ছয়টা কেনো খেলো ও !!” ইশানের চিৎকারে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো। সোহা তাও এই কাজ !! কিভাবে সম্ভব সেটাই বুঝতে পারছে না কেউ। শানের মাথা ধীরেধীরে ভারী হতে থাকে। শান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়তে নিলেই সামির শানকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। ইশান এখনও রাগে ফুসছে সোহার অবস্থা দেখে কিভাবে নিজেকে ঠিক রেখেছে একমাত্র সেই জানে। রিয়ানা বেগম মুখে আচঁল দিয়ে ঢুকড়ে কেঁদে উঠে। ইমতিয়াজ রহমান চেয়ারে বসে পরে। ইশান ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে
” চুপ করে থাকবেন না প্লিজ বলুন। সোহা এমন করেছে কেনো ??”
” কারণ সোহা প্রাণবন্ত, হাসি-খুশি মেয়ে হলেও ও রেগে গেলে ভয়ংকর হয়ে যায়। যখন রাগ ওর পুরো শরীরে ছড়িয়ে পরে তখন সোহা নিজেকে শান্ত করার জন্য সোহা যেকোনো পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। এটা শুধু আজকে নয় আরো দুইবার হয়েছিলো।” অপরিচিত গলা শুনে সবাই সেই ব্যক্তির দিকে তাকায়। ইমতিয়াজ রহমান মাথা নিচু করে বলে
” উনি আমার ফ্যামিলি ডক্টর, ড. রাশেদুল ” ড.রাশেদুল এসে ইশানের সাথে হাত মেলায়। ড.রাশেদুল হালকা হেসে বলে
” সোহা ছোট থেকেই এমন। সোহার মাথায় সেই ভয়ংকর উঠে গেলে কিছু না কিছু করবেই। class 8 এ থাকতেও সোহা একবার এমন করেছিলো। স্কুলে ঘটা এক কারণে ও প্রচন্ড রেগে গয়েছিলো আর বাড়িতে এসে একটা ব্লেট দিয়ে হাত, পা খারাপ ভাবে ঘত করেছিলো। আর দ্বিতীয় বার ও যখন কলেজের নিউ স্টুডেন্ট ছিলো তখনের। অবশ্য সেই কারণটা আমার জানা নেই তবে সোহা তখন রাগের মাথায় এইভাবে নিজেকে অনেক আঘাত করেছে। আমি কারণ জিজ্ঞেস করলেই ও বলতো : আমি যখন রাগ কমাতে চাই তখন এমন করতে ইচ্ছে করে।”
ইশান চোখ বন্ধ করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে। সামির ধীর গলায় বলে
” মা, বাবা আপনাদের সোহার কথাটা আরো আগে জানানোর দরকার ছিলো তাহলে আর এমন হতো না। কিন্তু ও রেগে গিয়েছিলো কেনো আজকে ??” রিয়ানা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলে।
” জানি না কিছু। ভার্সিটি থেকে এসেই রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করেছিলো। অনেক বার ডেকেছিলাম কিন্তু আর দরজা খোলেনি শুধু একবার চিৎকার দিয়ে বলেছিলো ও ঘুমাবে এখন তাই আমরা আর কিছু করিনি।”
ইশান নিচু স্বরে বলে।
” সোহা পেটের ভেতর ওয়াস করা হয়েছে। এখন সুস্থ আছে। জ্ঞান ফিরেছে তবে এখন ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে কালকে সকালে জ্ঞান ফিরবে।” ইশান ড. রাশেদুলকে নিয়ে নিজের কেবিনে গেলো। শান মাথা চেপে ধরে বসে থাকে।
চলবে~ইনশাল্লাহ……..