তুমিময় ভালোবাসা পর্ব-৩৪+৩৫

0
1817

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ৩৪
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা

নিলাও শানকে ফোন করে সব জানায়। শান কাজ রেখে অফিস থেকে বেড়িয়ে যায়। সোহা কাঁদতে কাঁদতে একসময় শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে যায়। সিমি তাড়াতাড়ি করে সোহার ইনহেলার নিয়ে এসে সোহাকে দেয়। সোহা স্বাভাবিক হতেই শাহানাজ বেগম সোহার পাশে বসে সোহাকে বোঝানোর স্বরে বলতে থাকে
” মা আমার আর কাঁদিস না। নিলা শানকে ফোন করেছে শান এখনই চলে আসবে। দারোয়ান তো টমিকে খুঁজতে গিয়েছেই তবে দেখবি শান ততোক্ষণে টমিকে নিয়ে এসে পড়েছে।” আরো অনেক কথা বলে সোহাকে বোঝাতে থাকে সোহা সব শুনতে থাকে আর চুপচাপ চোখের পানি ফেলতে থাকে।
এদিকে শান দ্রুত স্পিডে গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ এক লোক দৌড়ে ওর গাড়ির সামনে এসে পরে। আস্মিকভাবে এমন ঘটনায় শান তার গাড়ি কোনোরকমে কন্ট্রোল করে ব্রেক কষে। সামনের লোকটা নিচে পরে গিয়েছে দেখে শান হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। গাড়ির সামনে পরে যাওয়া লোকটাকে উঠাতে উঠাতে চিন্তিত হয়ে বলতে থাকে
” সরি, সরি। আমি খেয়াল করিনি আপনাকে। এভাবে দৌড় দিয়েছিলেন কেনো ?? এখনই কিছু একটা ঘটে যেতে পারতো তো !!” পেছন থেকে এক লোক দৌড়ে এসে হাপাতে হাপাতে বলে উঠে
” আরে ওনাকে ধরে রাখুন। উনাকে ধরার জন্য পেছনে একটা গাড়ি আসছে তাউ উনি দৌড় দিয়েছে।” শান ভ্রু কুঁচকে লোকটার দিকে তাকায়। লোকটাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতেই শান অবাক হয়ে যায়। টমিকে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর বারবার ভীতু দৃষ্টিতে শানের দিকে তাকাচ্ছে। টমিকে চিনতে শানের বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি। সোহা টমির গলায় একটা লকেট দিয়ে রেখেছিলো টমির নাম লিখা সেটাতে। টমি জিহ্বা বের করে শানের দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। শান ক্ষিপ্ত স্বরে বলে উঠে
” আপনিই তাহলে সেই ?? টমিকে কেনো চুরি করেছেন আপনি ?? তাও আবার আমার বাড়ি থেকেই ওকে চুরি করে এনেছেন !! জানেন কি করেছেন আপনি??” শান এভাবে ক্ষেপে যাওয়ায় লোকটা ভয়ে ভয়ে দুই পা করে পিছিয়ে যেতে থাকে। শান এক হাত বাড়িয়ে রাগি গলায় বলে উঠে
” দিন টমিকে আমার কাছে দিন !!” শানের কথা শুনে লোকটা রেগে শানের দিকে তাকালো। চেঁচিয়ে বলে
” এই তুই আমার বাচ্চাকে কেনো নিতে চাইছিস ?? তোর সাহস তো কম না !! তুই আমার বাচ্চাকে আমার থেকে জোর করে নিতে চাইছিস ?? দেবো না তোর কাছে আমার মেয়েকে।” শান চোখ বড়বড় করে নিলো পাগলের কথা শুনে। কুকুরকে নিজের মেয়ে বাচ্চা বলে দাবি করছে !! শান আবার কিছু বলার আগেই ওপরপাশের রাস্তায় একটা সাদা গাড়ি থেকে কয়েকটা লোক দৌড়ে আসে। পাগল লোকটার হাত ধরে নিয়ে বলে
” এই চলো এখান থেকে !! তোমার জন্য বারবার আমাদের পেরেশানিতে পড়তে হয়। চলো !!”লোক গুলো টেনে টেনে পাগল লোকটাকে নিয়ে যেতে থাকে। তাদের মধ্যে একজন এসে টমিকে লোকটার থেকে ছাড়িয়ে নিতেই শান তার থেকে টমিকে নিজের এক হাতে তুলে নিতেই লোকটা বলে
” আপনি কিছু মনে করবেন না উনি পাগল। মাঝে মাঝেই পালিয়ে যায় উনি আর কোনো না কোনো ঝামেলা করে বসেন।” শান সৌজন্যের হাসি দেয়। লোকটাকে গাড়িতে উঠানোর পর শানের আশেপাশের ভির কমে আসে। শান গাড়িতে উঠে টমিকে পাশের সিটে বসিয়ে বিরক্তির স্বরে বলে
” তোর কি আক্কেল জ্ঞান কিছু নেই ?? আমার বউকে ফেলে তুই কি করে পাগলের সাথে চলে এলি ?? আমার বউ টা যে কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল আছে তোর ??” টমি কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে শানের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর কয়েকবার ঘেউ ঘেউ করে নিজে নিজেই চুপ করে যায়। শান মুখ বাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
সোহা মাথা নিচু করে একনাগাড়ে কেঁদেই যাচ্ছে। হঠাৎ ওর সামনে টমিকে ধরতেই সোহার কান্না বন্ধ হয়ে গেলো। সোহা মাথা উঁচু করে দেখে শান মুচকি হেসে টমিকে তার দিকে বাড়িয়ে রেখেছে। সোহা বড় একটা হাসি দিয়ে শানের হাত থেকে টমিকে কেড়ে নিয়ে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কয়েকটা চুমু খায়। শান চোখ বড়বড় করে তাকায় সোহার দিকে। নাক ছিটিকে বলে উঠে
” ছিঃ !! এই!! ওর গায়ে ময়লা রয়েছে না ?? তুমি এভাবে চুমু খাচ্ছো কেনো ওকে ??” শাহানাজ বেগম কড়া দৃষ্টিতে শানের দিকে তাকিয়ে বলে
” চুপ করবি ?? এতোক্ষণ কেঁদে কেঁদে হয়রান হয়ে গিয়েছিলো মেয়েটা। এখন একটু হাসতে দে।” শান মুখ কুচকালো টমি আর সোহার দিকে তাকিয়ে। নাইসা টমিকে কোলে তুলে নিতেই সোহক দুই হাতে চোখ মুছে শানের দিকে তাকিয়ে বড় একটা হাসি বলে
” অনেক অনেক থ্যাংকইউ টমিকে খুঁজে আনার জন্য।” শান মুখ কুঁচকে বলে
” হয়েছে হয়েছে আর থ্যাংকস দিতে হবে না। টমির গায়ে কতো ময়লা লেগেছিলো জানো তুমি ?? এখন নিজেকেও অপরিষ্কার করে দিলে। ছিঃ !! গোসল না করে রুমে আসবে না বলে দিলাম।” বলে শান উপরে চলে গেলো। সোহা তব্দা খেয়ে শানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সিমি আর নিলা মিটমিট করে হাসতে থাকে। সোহা মুখ ফুলিয়ে নেয় দুজনকে দেখে।

শান ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে নিজে নিজেই বলতে থাকে
” টমিকে না পেয়ে যেভাবে কাঁদছিল মনে হচ্ছিলো টমি ওর জামাই। আমি হারিয়ে গেলেও রভাবে কাঁদবে না এই মেয়ে !! আবার টমিকে পেয়ে কিভাবে যে চুমি খেলো। আল্লাহ মালুম !! টমি কি কিছু বুঝে নাকি ?? ওকে এতো চুমু দেওয়ার কি আছে ?? আমাকে যদি একটা চুমু দিতো তাহলে নিজের জীবনটাকে সার্থক ভাবতাম। কিন্তু তা আর হলো কই ?? কালকে প্রথম যাও একটা কিস করেছিলাম !! কিন্তু ম্যাডাম তো একটা কিসেই অজ্ঞান হয়ে গেলো। আমি বাবা কি করে হবো সেটাই ভাবছি। নাকি আমি বাবা হতে হতে নাইসা আর সিমি ভাবির বাচ্চাদের বিয়ে হয়ে যাবে !!” শান দরজার দিকে তাকিয়ে পেছন ফিরতে নিলেই দরজার হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ইশান আর সামিরকে দেখে শানের হাত থেকে টাওয়ালটা পরে গেলো। ইশান দরজার একপাশে আর সামির দরজার অন্যপাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুই ভাইয়ের মুখেই শয়তানি হাসি ঝুলে আছে। শান দুইভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে। সামির ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে
” তো ভাইয়া কি কি জানতে পারলে ?? মানে কেমন ধারণা হলো আমাদের ছোট ভাইয়ের সংসার সম্পর্কে ??” ইশান বাকা হেসে বলে
” আমার তো অনেক কিছুই ধারণা হয়েছে। তবে আমাদের ভাইকেও তো একটা সমাধান দেওয়া উচিত !! নাহলে আমার ভাই বাবা হতে পারবে না।” শান আড়চোখে দুইভাইয়ের দিকে তাকায়। ইশান এগিয়ে এসে শানের কাধে হাত রেখে বলে
” তা ভাই বলছিলাম যে তোর কি কি টিপস লাগবে ?? তুই বললে আমরা ফ্রিতে সব টিপস দিতে পারি আফটার অল আমরা বিবাহিত এবং বাচ্চার বাবা।” শান মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বলে
” ভাইয়া একটু হয়ে যাচ্ছে না ?? তোমরা আমার বড় ভাই হয়ে আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছো ??” সামির শানের অন্যপাশে বসে বলে
” তোরও তো একটু খেয়াল রাখা উচিত ছিলো যে এই বাড়িতে তুই একা থাকিস না। এমন সব কথা দরজা বন্ধ করে বলতে হয়। কি আর করার এখন যখন আমরা সব জানি তাহলে কয়েকটা টিপস দিয়ে যাই ??” শান মাথা চুলকিয়ে মাথা নিচু করে নেয় লজ্জায়। ইশান আর সামির শানের সাথে কিছুক্ষণ ঠাট্টাতামাসা করে চলে যায়। ওরা যেতেই শান হাফ ছেড়ে বাঁচে। বড় ভাইদের সাথে এসব নিয়ে মজা করা খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার মনে হয় শানের। নিচ থেকে টাওয়ালটা তুলে সোফার উপর ছুড়ে ফেলে দেয়।
শান ল্যাপটপ নিয়ে বসে অফিসের সব কাজ ফেলে এসেছিলো তাই এখন ল্যাপটপ দিয়েই কিছু কাজ কমপ্লিট করতে হবে।
নিলা সোহাকে ধরে রুমে নিয়ে এসে শানকে দেখে বিরক্তি স্বরে বলে
” এই যে মহাশয় !! আপনার বউ যে তিনঘণ্টা ধরে উধাও সেই খেয়াল কি আছে আপনার ?? নাকি আপনার যে একটা বউ আছে সেটাই ভুলে গিয়েছেন ??” শান ল্যাপটপ থেকে চোখ সড়িয়ে পাশে তাকায়। নিলা ততোক্ষণে সোহাকে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে দিয়েছে। নিলা সোফার উপর থেকে টাওয়ালটা নিতে নিতে শানের দিকে তাকিয়ে বলে
” বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখনও কি কান্ড জ্ঞান হয়নি ?? ভেজা টাওয়ালটা সোফার উপরে রেখেছো কেনো ??” শান মাথা চুলকে বলে
” সরি ভাবিমনি ভুলেই গিয়েছিলাম আমি এটা ভেজা ছিলো।” নিলা এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে টাওয়ালটা ছুড়ে শানের কোলে দিয়ে বলে
” নাও বউ এর যত্ন করো। তোমার কথা শুনে সোহা শাওয়ার নেওয়ার জন্য উতলা হয়ে গিয়েছিলো এবার ওর চুলটা ভালো মুছে দাও। আমি অর্ধেক রান্না বসিয়ে চলে এসেছি।” বলে নিলা দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলো। শান উঠে আগে দরজা বন্ধ করে নিলো। তারপর সোহাকে সোজা করে বসিয়ে সোহার পেছনে বসে সোহার মুছে দিতে থাকে। সোহা দুপুরে এতো কান্না করে খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো তখন বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছে। মাইগ্রেনের ব্যাথায় মাথা টনটন করছে। পেছন দিকে মাথা এলিয়ে দিয়ে শানের বুকে মাথা রেখে সোহা ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকে। তবে যেভাবে মাথা ব্যাথা করছে সোহার ইচ্ছে করছে মাথাটা কেটে রেখে দিতে। এর মাঝে শান সোহার চুলে নাক ডুবিয়ে দেয়। সোহা হালকা কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয়। শান সোহার কোমড় জড়িয়ে ধরে সোহার ঘাড়ে আরো গভীর ভাবে নাক ডুবিয়ে দেয়। সোহা শানের হাতের উপর হাত রেখে খামছে ধরে বারবার। নিজেকে স্বাভাবিক করতে চাইলেও শানের জন্য পারছে না। সোহার গলা দিয়েও কথা বের হচ্ছে না। ঢোক গিলে কোনোরকমে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠে
” ক…কি করছেন ??” শান সোহার ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ফিসফিস গলায় বলে
” বউ কে আদর করছি।” শানের ফিসফিসানো কথা গুলো সোহার কাণে বারি খেতে থাকে। গাল দুটো ধীরেধীরে লাল বর্ণ ধারণ করে। এদিকে মাথার ব্যাথাও বারছে তাই সোহার কাছে এসব কিছুটা বিরক্ত লাগতে থাকে তাই নিজের কোমড় থেকে শানের হাত সড়িয়ে দিয়ে নিচু স্বরে বলে
” আমার মাইগ্রেনের ব্যাথা করছে।” শান সাথে সাথে সোহার কাছ থেকে দূড়ে সড়ে যায়। সোহার সামনে বসে অস্থির হয়ে বলতে থাকে
” তোমার মাইগ্রেনের ব্যাথা করছে আগে বলবে তো নাকি ?? এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি ??”
সোহা শুধু নিরব চাহনি দিয়ে শানকে দেখতে থাকে। কয়েকদিনে এই টুকু বুঝতে পেরেছে লোকটার নিজের কোনো ইচ্ছে নেই অধিকাংশ সময় তাকে নিয়েই চিন্তা করে। আরো কিছু কথা ভাবতে ভাবতেই মাইগ্রেনের ব্যাথা আরো বেশি চরে বসে। সোহা মাথায় হাত দিয়ে বলে
” আমার মাইগ্রেনের ঔষধটা দিতে পারবেন প্লিজ ??” শান দ্রুত পায়ে টেবিলের কাছে চলে যায়। খুঁজে খুঁজে মাইগ্রেনের ঔষধ বের করে সোহার হাতে দেয়। সোহা খেয়েই শুয়ে পরে। শান সোহার পাশে বসে আদুরে গলায় বলে
” তুমি ঘুমাও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।” শানের কথা উত্তরে সোহা চোখ বন্ধ করেই মলিন হাসি দিলো।

সময়ের স্রোতে ভেসে আরো দুইটা মাস কেটে গেলো। সবাই তাদের ভালোবাসায় মেতে আছে। কারো ভালোবাসা কমেছে তো কারো ভালোবাসা আরো গভীর হয়ে উঠছে। হৃদয় দেড়মাস আগেই জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। জেল থেকে মুক্তি পেয়েই নতুন পথ বেছে নিয়েছে। হৃদয়ের কাজ কর্ম দেখে আগে যারা তাকে ভয় পেতো তারা এখন সবাই অবাক হয়। বাবার অফিসে জয়েন করে রিমিকে বিয়ে করে নিজের ঘরে নিয়ে আসার চেষ্টায় আছে এখন।
এদিকে ইতি আর ইমনে চড়ুইভাতির প্রেম কাহিনী অনেক গভীর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
সোহাও এখন পুরোপুরিভাবে সুস্থ। এখন প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাওয়া হয়। সোহা আর শানের সম্পর্কের মধ্যেও কিছুটা বদল এসেছে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ৩৫
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা

এদিকে ইতি আর ইমনে চড়ুইভাতির প্রেম কাহিনী অনেক গভীর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
সোহাও এখন পুরোপুরিভাবে সুস্থ। এখন প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাওয়া হয়। সোহা আর শানের সম্পর্কের মধ্যেও কিছুটা বদল এসেছে। সোহা এতোদিনে বুঝে গিয়েছে সামিরের বলা সেইদিনের দুই ভালোবাসার মাঝে পার্থক্য কোথায়। সোহা নিজেও অনুভূতির কথাও বুঝে গিয়েছে কিন্তু সেটা আজও শানের সামনে প্রকাশ করে উঠেনি। শানও তার মনের কথা সোহাকে জানতে দেয়নি।
বাড়িতে প্রচুর ব্যস্ত সবাই। হবে না কেনো আজকে নাইসা চার বছরে পা দিয়েছে তাই বাড়িতে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সোহা শাড়ি হাতে নিয়ে মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শানের সামনে। সবাই ব্যস্ত থাকায় সোহাকে শাড়ি পরানো দায়িত্ব আবারও শানের ঘাড়েই এসে পরেছে। শান অসহায় চাহনি দিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে। শান কোনো ভাবেই সোহাকে শাড়িটা পরিয়ে দিতে পারছে না। ইতিমধ্যে ঘেমে নেয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে। সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি হলো আর কতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন এভাবে ?? আধ ঘন্টা ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন না নাকি ??”
শান গলা ঝেড়ে বলে
” পারি তো ত..তবে তোমাকে শাড়ি পড়াতে পারি না।” সোহা চোখ বড়বড় করে বলে
” মানে ?? আমাকে শাড়ি পরাতে পারেন না কেনো আপনি ?? আপনি কি অন্য মেয়েদের শাড়ি পরিয়ে দিতে চান নাকি ??” শান ভ্রু কুঁচকে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” তোমাকে এবারও বলেছি আমি অন্য কাউকে শাড়ি পড়াতে চাই ??” সোহা দুই কোমড়ে হাত রেখে রাগি গলায় বলে
” তাহলে পড়াচ্ছেন না কেনো আমাকে ?? পার্টি শেষ হলে পরিয়ে দেবেন ??” শান সোহার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে চোখ নামিয়ে নেয় ঢোক গিলে অসহায় গলায় বলে
” তোমাকে শাড়ি পড়াতে গেলেই আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। ক..কখন কি করে বসি !!” শানের কথায় সোহা তার গায়ের টাওয়ালটা আরেকটু টেনে টেনে লাজুক চাহনি দিয়ে শানের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে পার্টিতে যেতে দেড়ি হয়ে যাবে ভেবে গলা ঝেড়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠে
” এমন ভাব করছেন যেনো আমি আরেকজনের বউ !! এতোদিন তো রোমেন্স করে করে আমাকে পাগল করে দিয়েছিলেন কথায় কথায় কি….” পুরো কথা শেষ করার আগেই সোহার মাঝে আবার লজ্জা এসে হানা দেয়। সোহা একবার শানের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। শান ঠোঁট কামড়ে সোহার দিকে তাকায়। শান দুই পা এগিয়ে এসে সোহার কোমড়ে হাত দিয়ে নিজের সাথে সোহাকে মিশিয়ে নিয়ে বাকা হাসি বলে
” তুমি দেখি আমার সাথে থাকতে থাকতে রোমেন্টিক হয়ে গিয়েছো !! তো আগেই বলতে পারতে তাহলে আমাকে আর এতো সময় নষ্ট করতে হতো না আর নিজেকে কন্ট্রোল করার জন্য কষ্ট করতে হতো না।” সোহা লজ্জায় পুরোপুরি নুইয়ে গেলো। মাথা নিচু করেই লাজুক কন্ঠে বলে
” আ…আমি এস..বের কথা ব..বলিনি। আ..ম তো শাড়ি পরানো জন্য ব..লছিলাম।” শান সোহাকে আরো নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। ধীর গলায় বলে
” সেটা যে জন্যই বলে থাকো না কেনো একবার যখন পারমিশন পেয়ে গিয়েছি তাহলে সময় নষ্ট করে কি লাভ ??” সোহা আর কিছু বলার আগেই শান সোহার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে নিলো। আলতো ভাবে শাড়িটার ভাজ খুলে সোহাকে পড়ানো শুরু করে। সোহা শক্ত করে হাত মুঠো করে চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে থাকে। শানের স্পর্শ গুলোও ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে। সোহা নিশ্বাসবন্ধ করে শানের স্পর্শে কাতর হতে থাকে। একসময় সোহা শানের গভীর স্পর্শ গুলোতে নিজের নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে ফেলতে থাকে তখন শানের থেকে ছিটকে দূড়ে সরে আসে। শাড়ি খামছে ধরে চোখ বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে থাকে। শান বুঝতে পেরে ঠোঁট চেপে হাসি দিয়ে বলে
” কি হলো শাড়ি পরবে না ??” সোহা চোখ খুলে শানের দিকে তাকিয়ে লজ্জামাখা চেহারাটা নিচে নামিয়ে নেয়। শান আবারও সোহার দিকে এগিয়ে আসে। সোহা ড্রেসিংটেবিলের সাথে ঘেঁষে দাঁড়াতেই শান সোহার পাশে এক হাত নিয়ে দেয়ালে ঠেকায় ঠোঁট কামড়ে সোহার কোমড়ে হাত রেখে বলে
” এবার বুঝতে পারছো তো কেনো শাড়ি পরিয়ে দেই না তোমাকে ??” সোহা লাজুক হাসি দিয়ে আবারও মাথা নামিয়ে নেয়। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে
” আ..আমি পা..রবো ববাকিটা করে নিতেহ।” শান মুচকি হাসি দিয়ে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। সোহার হাত ধরে আবার আগের জায়গায় এনে দাঁড় করিয়ে বলে
” এবার আর কোনো দুষ্টুমি করবো না। সোজা হয়ে দাঁড়াও তুমি।” সোহা মাথা নেড়ে না করতে নিলেই শান গম্ভীর চাহনি দেখে আবার সায় দেয়। শান এবার শান্তভাবে শাড়ির বাকি কাজটা করে নিলো। শাড়ি পড়ানো শেষে শান আবারও একই ভাবে সোহার কোমড় জড়িয়ে ধরে সোহাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। সোহা ঢোক গিলে শানের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকাতেই শান হালকা হাসে। শান সোহার গালে ডিপ কিস করে মুচকি হাসি দিয়ে বলে
” খুব মিষ্টি লাগছে বউ।” সোহার গায়ে কারেন্টের মতো একটা ঝটকা বয়ে যায়। সোহার রন্দ্রে রন্দ্রে বউ ডাকটার অনুভূতি ছড়িয়ে পরে। শান এই প্রথম সোহাকে বউ বলেছে সোহার সত্যি অন্যরকম লাগছে। সোহা কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে অবাক স্বরে বলে
” কি বললেন ??” শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কি বলেছি ??” সোহা তার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলে
” ওই যে কি বলে ডাকলেন আমাকে !! আমার কেমন যেনো লাগলো।” শান শব্দ করে হেসে উঠে। সোহার মন কারা সেই মিষ্টি হাসি হেসে বলে
” বউ ডেকেছি। কেনো তোমার কেমন লেগেছে ??” সোহা ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়ায় যার অর্থ সে বুঝতে পারছে না। শান এক ভ্রু উঁচু করে বলে
” আচ্ছা এটা বলো ভালো লেগেছে না খারাপ !!” সোহা লাজুক হাসি দিয়ে বলে
” ভালো।” শান আবারও সোহার মন কারা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে
” তাহলে আজকের পর থেকে তুমি যখন আমার উপর রাগ করবে তখন তোমাকে বউ বলে ডাকবো তখন নিশ্চই তোমার রাগ কমে যাবে ??” সোহা কিছু না বলে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। নিচ থেকে ইশানের গলা শুনতে পেয়ে শান সোহাকে ছেড়ে দিয়ে বলে
” এই রে ভাইয়া আমাকে সেই কখন বলেছিলো তোমাকে তৈরি করে নিচে যেতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আচ্ছা তুমি তোমার ওই প্রিয় ওই কালারের লিপস্টিকটা দিয়ে নিচে এসো তোমাকে ওইটাতে আরো মিষ্টি লাগে। আর বেশি সাজতে হবে না।” বলে শান দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

কিছুক্ষণ পর কেক কাট করার পর নাইসা নিলা আর ইশানকে খাইয়ে দিয়ে সোহাকে খাইয়ে দেয় পরে একে একে সবাইকে খাইয়ে দেয়। সিমি মন খারাপ করে বলে
” নাইসা মনে হয় আমাদের ভালোবাসে না। সব সময় সোহাকেই বেশি ভালোবাসে।” নাইসা ফিকফিক করে হেসে দেয় সিমিকে দেখে। হাতে লেগে থাকা অবশিষ্ট কেকটা সিমির গালে লাগিয়ে দিয়ে আবারও হেসে হেসে বলে
” আমি তো সবাইকে ভালোবাসি তবে মিষ্টি মনিকে বেশি ভালোবাসি। আচ্ছা মনি তুমি কি হিংসে করছো আমার মিষ্টি মনিকে??” সিমি চোখ বড়বড় করে তাকায় নাইসার কথা শুনে। অবাক হয়ে বলে
” আমি হিংসে করবো কেনো ?? সোহা কোথাকার না কোথাকার মেয়ে !! ওকে তো আমার মা বাবা রেলস্টেশন থেকে কুড়িয়ে এনেছে।” নাইসা ইয়া বড় হা করে তাকায়। হা করে গালে হাত দিয়ে সোহার কাছে এসে টেনে টেনে বলে
” এমা !!!! মিষ্টিমনি দাদাই – দিদুমনি তোমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনেছে ??” সোহা রেগে সিমির দিকে তাকায়। সোহা ধুপধাপ পা ফেলে সিমির কাছে গিয়ে দাঁড়ায় সিমির চুল টেনে বলে
” মিথ্যা কথা বলো কেনো, হ্যা ?? আমাকে রাস্তা থেকে এনেছে নাকি তোমাকে এনেছে ??” সিমি চোখ রাঙিয়ে বলে
” এই তুই আমার চুলে টান দিয়েছিস কেনো ??” সোহা রেগে বলে
” একশ বার দেবো হাজার বার দেবো তোমার কি ??” সিমি অবাক হয়ে বলে
” অদ্ভুত তো !! আমাকেই মারবি আবার আমাকেই বলবি মারলে আমার কি ?? তোকে এখন বেধে স্টোর রুমে রেখে আসবো।” সোহা ফিকফিক করে হেসে দিয়ে বলে
” নিজেই ভালো করে হাটকে পারো না আবার স্টোর বেধে রুমে রেখে আসবে তুমি ??” সিমি আমতা আমতা করে বলে
” তো কি হয়েছে ?? তোর ভাই আছে কি করতে ?? ওকে দিয়েই তোকে রেখে আসবো।” সোহা মুখ বাঁকিয়ে বলে
” এহ আসছে আমার ভাইয়া রা তোমার মতো নাকি ?? আমাকে ধরতে আসলেই আমার ভাইয়ারা তোমাকে বেধে রাখবে।” সিমি সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে
” এই তুমি আমাকে বেধে রেখে আসবেন নাকি ??” সামির মাথা নেড়ে বা বোঝাতেই সোহার অগ্নিচোখ দেখে আবার মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বলে।
সিমি সেটা দেখতে পেয়ে সোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” এই তুই ওরদিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো ?? তোর ভাই হওয়ার আগে ও আমার স্বামী তাই আগে আমার কথা শুনবে।”
সোহা রেগে ঝগড়া শুরু করে দেয় সিমির সাথে। সিমিও তালমিলিয়ে ঝগড়া করতে থাকে। সবাই দুজনকে দেখে হাসতে থাকে। নাইসা বড়দের মতো কোমড়ে হাত রেখে এগিয়ে এসে দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে
” এই তোমরা দেখ ব্যাড গার্ল হয়ে যাচ্ছো !! এভাবে ঝগড়া করলে সবাই ব্যাড গার্ল বলবে তো নাকি ?? মিষ্টিমনি তুমিও কি ব্যাড গার্ল হয়ে যাবে ??” সোহা ঝগড়া থামিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে নাইসার দিকে তাকিয়ে বলে
” না তো বাবু। আমি তো গুড গার্ল তোমার মনিই আমার সাথে ঝগড়া করেছে প্রথম।” সিমি আরো ফুসে উঠে রেগে বলে
” এই আমি তোর সাথে ঝগড়া শুরু করেছি ?? নাকি তুই আগে করেছিস ??” সোহা এবার প্রচণ্ড রেগে গেলো। রেগে সোফার সামনে থাকা মিনি টেবিলের উপর থেকে ফ্লাওয়ার বাসটা উঠিয়ে নেয়। রেগে ফ্লোরে ছুড়ে মারার আগেই শান হাসি থামিয়ে দৌড়ে এসে সোহার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলে
” এই, এই !! এটা ভাঙছ কেনো তুমি ?? নিজের রাগ আমার ফ্লাওয়ার বাস এর উপর ঝাড়ছো কেনো কেনো ?? চলো চলো উপরে চলো। এখানে তোমাকে রাখলেই ঘরের সব জিনিস ভেঙে ফেলবে।” শান টেনে টেনে সোহাকে উপরে নিয়ে যেতে থাকে। সিমি মুখ ফুলিয়ে গিয়ে সোফায় বসে পরে। নাইসা কপালে হাত রেখে বলে
” হাহ, এতো বড় বড় মেয়ে হয়ে কিভাবে ঝগড়া করে দুজন !!” নিলা হেসে বলে
” হয়েছে পাকনা বুড়ি। চলো হাত ক্লিন করবে। কেক দিয়ে হাত ভরিয়ে কি করেছো তুমি !! আবার সিমির গালেও লাগিয়ে দিয়েছো।” নাইসা নিলার সাথে যেতে যেতে বলতে থাকে
” আমি তো মনির গালে দেইনি। মনির বাবুর গালে দিয়েছি। সামির বাবাই বলেছে মনি যা খায় সেটা বাবু খেয়ে ফেলে। বাবু যা করতে চায় সব মনি করে। তাহলে তো আমি মনির গালে কেক দিলে সেটা বাবুর গালেই লেগেছ।” সবাই হাসতে থাকে নাইসার কথা শুনে। সিমি মুচকি হাসি দিয়ে আলতো ভাবে তার পেটে হাত রাখে। তিনমাসের কাছাকাছি হয়ে গিয়েছে সিমির প্রেগন্যান্সির। সময় কিভাবে চলে যায় কেউ বলতে পারে না।
শান সোহাকে রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দেয়। সোহা এখনও রেগে আছে। শান ড্রেসিংটেবিল থেকে একটা টিস্যু নিয়ে এসে সোহার সামনে বসে। সোহা ভ্রু কুঁচকে ঝাঁঝালো গলায় বলে
” টিস্যু দিয়ে কি করবেন ??” শান গম্ভীর গলায় বলে
” তোমাকে আমি তখন বলেছিলাম না তোমারে Favorite Colour এর লিপস্টিক টা দিতে ?? তুমি এটা কি কালার দিয়েছো ??” সোহা শানের হাত থেকে খপ করে টিস্যু টা কেড়ে নেয়। শান চমকে যায় এমন কাজে। সোহা টিস্যু দিয়ে জোড়ে জোড়ে ঠোঁট ঘষতে ঘষতে বলে
” খাওয়া দাওয়া করার সময় নষ্ট হয়ে যাবে তাই দেইনি পরে দেবো ভেবেছিলাম। কিন্তু আপু কি পেয়েছে টা কি ?? সব সময় আমাকে নিয়ে এমন করে !! আমি কি এতোটা খারাপ ?? আমি কত্তো ভালোবাসি তবু আমার সাথে এমনই করে।” সোহা নাক টানতে টানতে এসব আরো কথা বলতে থাকে আর জোড়ে জোড়ে ঠোঁট ঘষতে থাকে। সোহা অনেক গুলো অভিযোগ করলো সিমির নামে। শান সব শুনলো মনোযোগ সহকারে কিছুক্ষণ পর দেখলো সোহার ঠোঁট থেকে রক্ত বেয়ে পরছে। সোহা ঘষে ঘষে ঠোঁট কেটে আরো রক্ত বের করছে। শান সোহার হাত থেকে টিস্যুটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে রেগে বলে
” কি করছো কি ?? ঠোঁট দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে তো !!” শান আরেকটা টিস্যু নিয়ে যত্ন সহকারে সোহার ঠোঁটের রক্ত মুছিয়ে দিতে দিতে বলে
” ছোট ভাবিমনি তো এখন প্রেগন্যান্ট তাই এমন করে। এই সময় প্রচুর মুড সুইং থাকে তাই অনেক কিছু করে বসে। তাই সেগুলো নিয়ে এতো মন খারাপ করো না।” সোহাকে আরো অনেক কিছু বোঝাতে থাকে শান। ভালো করে ঠোঁট মুছিয়ে সোহার প্রিয় রঙের লিপস্টিক দিয়ে সোহার ঠোঁট রাঙিয়ে দেয়। এটা শানেরও অনেক প্রিয় তাই শান সব সময় এটার কথা বলে। সোহা বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান সোহাকে নিয়ে আবার নিচে আসে। আসতেই শুনতে পায় সোহার মা,বাবা সোহাকে কয়েকদিনের জন্য নিয়ে যেতে চাইছে। এসব শুনে শানের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। সোহারও একই অবস্থা তবে সোহা সেটা প্রকাশ করলো না। শান সোহাকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারবে না ভেবেই শান লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে সবার সামনে গিয়ে বলে
” সোহা কেনো যাবে ?? আমি থাকবো কি করে ওকে ছাড়া ??” শানের কথায় সবাই বিস্মিত হয়ে শানের দিকে তাকিয়ে থাকে। সোহা চোখ বড়বড় করে নেয় শানের এমন কাজে। শান সবার মুকজ দেখে বুঝতে পারলো তাড়াহুড়োয় কোথায় কি বলে ফেলেছে। শান নিজের কাজে লজ্জাবোধ করে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ইশান এগিয়ে এসে বলে
” মানে শান বলতে চাইছে আমরা কি করে থাকবো সোহাকে ছাড়া। সোহাকে ছাড়া তো বাড়ি ফাকা ফাকা লাগে তাই। সোহা আর নাইশা পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে ও চলে গেলে তো সব চুপচাপ হয়ে যাবে।” শান বোকার মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

চলবে~ইনশাল্লাহ………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে