তুমিময় ভালোবাসা পর্ব-৩২+৩৩

0
1907

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ৩২
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা

শান কিছুটা অবাক হলো সোহার এমন ব্যবহার দেখে। সোহা এমন করছে কেনো বুঝতে পারছে না। কিন্তু কথা কাটানোর জন্য বলে
” সেসব পরে জানা যাবে চলো এখন। নাহলে দেড়ি হয়ে যাবে আমাদের।” শান কথা এড়িয়ে যাচ্ছে সোহা সেটা বুঝতে পারে তবে কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে যায়। শান সোহাকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
ইশান সোহার সব টেস্ট করিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে ফেরার পথে শানের অফিস থেকে ফোন আসে। জরুরি কাজে যেতে হবে তাকে। শান সামিরকে ফোন করে জানিয়ে দিলো, সামির যেনো সোহাকে এসে নিয়ে যায়।
কিছুক্ষণের মাঝে সামির চলে আসে। সোহাকে নিয়ে গাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে সোহার কপালে উষ্ম ছোঁয়া দিয়ে স্মিত হেসে বলে
” সাবধানে যাবে। আর একা একা একদম হাটবে না ভাবিমনি বা কাউকে ডাকবে। আমি তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবো।” সোহা মুচকি হেসে মাথায় নাড়ায়। শান সোহাকে সামিরের গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে তার গাড়ি ঘুড়িয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
সামির গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” তো শালিকা !! সাজেকে কি কি হয়েছে ??” সোহা এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলে
” অনেক কিছুই তো হয়েছে কিন্তু কেনো ??” সামির ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলে
” আমি সেই হওয়ার কথা বলিনি। আমি বলেছি তোমার আর শানের মাঝে কি কিছু হয়েছে ??” সামিরের কথায় সামির ভাবনায় পরে গেলো, তাদের মধ্যে কি হয়েছে ??” সোহার ভাব ভঙি দেখে সামির তার উত্তর পেয়ে গেলো। সামির হালকা হেসে নিশ্বাস ফেলে বলে
” আর ভাবতে হবে না। যা বোঝার আমি বুঝে গিয়েছি।” সোহা ভাবতে ভাবতে বলে
” কি বুঝেছো ভাইয়া ??” সামির দুই দিকে মাথা নেড়ে বোঝায়, কিছুই না। সামির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
” আচ্ছা সোহা আমি তো তোমার বন্ধুর মতো তাই না ??” সোহা উপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বোঝায়। সামির হালকা হেসে বলে
” তাহলে বন্ধু হিসেবে কিছু প্রশ্ন করতে পারি ??” সোহা আবারও একই ভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি প্রদান করলো। সামির কিঞ্চিৎ হেসে বলে
” আচ্ছা তুমি শানকে ভালোবাসা ?? তার আগে বলো ভালোবাসা মানে জানো তো ??” সোহা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে
” ভাইয়া কি প্রশ্ন করছো বলো তো ?? ভালোবাসা মানে আবার কে না জানে ?? ছোট নাইসাও জানে। শুধু শান..ম-মানে শান ভাইয়া কেনো ?? আমি সবাইকেই ভালোবাসি।” সামির দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে বলে
” সোহা !! এই ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। দুইটা ভালোবাসা কি এক !! দুইটা ভালবাসা যদি এক হতো তাহলে আমাদের আশেপাশে এতো মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে পেতাম না। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভালোবাসার জন্য আত্মহত্যা করতো না।” সোহা কপাল কুচকে নেয় সামিরের কথা গুলো শুনে। সামিরের কোনো কথা বুঝতে পারছে না। সোহা অবুঝ গলায় বলে
” তাহলে এই ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসার মধ্যে কিসের ডিফারেন্স ??” সামির হালকা হাসলো। সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে সোহা নিষ্পলক চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে তার প্রশ্নের উত্তর শোনার জন্য। সামির সামনের দিকে চোখ ঘুড়িয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলে
” তুমি শানকে ভরসা করো কতোটুকু ??” সোহা মুচকি হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে
” অন্নেক !! যেই পরিমাণকে মাপা যায় না ঠিক ততোটুকু। কিন্তু এই প্রশ্নর সাথে সেই প্রশ্নের কি সম্পর্ক ??”
” আছে, আছে অনেক সম্পর্ক আছে। আচ্ছা কেউ যদি এসে তোমাকে বলে, শান একজন ধর্ষক বা শান কাউকে মেরে ফেলেছে তাহলে তুমি কতোটুকু বিশ্বাস করবে ??” সোহা আতংকিত গলায় বলে
” ভাইয়া এসব কি বলছো তুমি ??” সামির মলিন হেসে বলে
” আল্লাহ করুক এমন পরিস্থিতি তে যেনো আমাদের কাউকে পড়তে না হয়। কিন্তু তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। তুমি কি বিশ্বাস করবে কথাগুলো ??” সোহা জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে বলে
” না, কোনোদিনও না। শান ভাইয়া কোনোদিনও এমন কাজ করতে পারে না। আমি মরে গেলেও এসব কোনোদিন বিশ্বাস করবো না। যে এমন কথা বলবে তাকে আমি নিজেই মেরে ফেলবো।”
সোহার রাগে ফুসফুসতে বলে কথা গুলো। সামির হেসে গাড়ি থেকে পানি নিয়ে সোহার দিয়ে এগিয়ে দিয়ে বলে
” আরে পাগলি শান্ত হও !! ইনশাআল্লাহ, এসব কোনোদিন হবে না। আচ্ছা আরেকটা প্রশ্ন করবো ??” সোহা পানি খেয়ে কিছুটা শান্ত হয়ে বলে
” হুম বলো।” সামির মনে মনে বলে
” ভাই হয়ে এসব কথা বলতেও লজ্জা লাগছে।কিন্তু সোহার অনুভূতি সম্পর্কে তো জানা উচিত !! মেয়েটাকে বোঝাতে তো হবে !! দেখি কিছু বোঝাতে পারি কিনা।” ভেবে সামির গলা ঝেড়ে বলে
” শান তোমার আশেপাশে আসলে তোমার কেমন লাগে ?? ম-মানে আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছো তো ??” সোহা অসহায় গলায় বলে
” জানো ভাইয়া উনি আমার কাছে আসলেই না আমার কেমন যেনো লাগে !! শরীরের জ্বরে মতো কাঁপুনি উঠে যায় তারপর গলা আটকে আসে কথাই বের হয় না গলা দিয়ে। আ-আরো কেমন কেমন লাগে আমি বুঝতেই পারি না এমন কেনো হয়।” বলতে বলতে অজান্তেই সোহার গালের লাল আভা ছড়িয়ে পরে। সোহার চোখের আড়ালে সামির একটা ঢোক গিললো। বড় ভাই হয়ে ভাইয়ের পার্সোনাল ব্যাপারে কথা বলছে ভাবতেই লজ্জা করছে তার। সামির বড় একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠিক করে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” ধরো শান তোমাকে রেখে কোনোদিন অনেক দূড়ে চলে গেলো তখন তোমার কেমন লাগবে ??”
সামিরের কথা গুলো সোহার কর্ণপাত হতেই সোহার বুক ধ্বক করে উঠে। সোহার বুকের ভেতরটা খালি খালি লাগতে শুরু করে। সোহা গলায় কান্না গুলো আটকে আসে। অজান্তেই চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পরে। সোহা কান্না জড়ানো গলায় বলে উঠে
” কো-থায় যা-যাবে আমাকে রে-খে ??” বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয় সোহা। সামির হতবাক হয়ে যায় সোহাকে কাঁদতে দেখে। সামির তাড়াতাড়ি সাইডে গাড়ি থামিয়ে সোহার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে
” আরে, আরে !! আমি তো এমনি বলছিলাম তুমি কাঁদছো কেনো বোকা মেয়ে ?? শান তোমাকে রেখে কোথায় যাবে তুমিই বলো ?? শান তোমাকে রেখে কোথাও যাবে না। বোন আমার কান্না থামাও।” এমনি বলেছে শুনে সোহা প্রাণ ফিরে পায়। নাক টেনে জড়ানো গলায় বলে
” তুমি এসব বলছিলে কেনো ??” সামির জোরপূর্বক হেসে বলে
” আমি তো এ-এমনি বলছিলাম। আর কাঁদে প্লিজ !!” সোহা সামনে থেকে টিস্যু নিয়ে চোখ মুখ ভালো করে মুছে নেয়। সামির মনে মনে হেসে বলে
” পাগলি তুই আমার ভাইকে ভালোবাসিস। এটা জানার জন্যই তো এতো প্রশ্ন !! কিন্তু তোকে বললে তুই এখন এই ভালোবাসার মানে বুঝতে পারবি না। তবুও একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি।” বাড়ির কাছাকাছি গাড়ি আসতেই সামির আবার বলে
” সোহা !! তুমি কি জানো ?? তুমি শানকে ভালোবাসো !!” সোহা ফ্যালফ্যাল করে তাকালো সামিরের দিকে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে
” ভালোবাসি তো কিন্তু এটা কোন ভালোবাসা ??”
সামির তার ঠোঁট চেপে ধরে। এখন সোহাকে কি করে বোঝাবে যে এটা কোন ভালোবাসা!! সেটাই বুঝতে পারছে না সামির। শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে বলে
” স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেই ভালোবাসা থাকে এটা সেই ভালোবাসা। বিরল বিশ্বাস – ভরসা আর বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাধ্যমে এই সম্পর্ক তৈরি হয়। যুগল বন্দি এই ভালোবাসা। কাছের মানুষটাকে হারানোর প্রবল ভয় থাকে। আ-আর কিছু বোঝেতে পারবো না আমি। আমি গুছিয়ে বলতে পারছি না। তবে তুমি কয়েকদিন পর ঠিক বুঝে যাবে।” সামির ঢোক গিলে ড্রাইভে মনোযোগ দেয়। সোহা চুপচাপ ভাবতে থাকে সামিরের কথা গুলো।

রাত সাড়ে আট টা বাজতে চলেছে সেই মুহূর্তে শান বাড়ি ফিরে আসে। এসেই ক্লান্ত শরীরটা সোফায় এলিয়ে দিয়ে বসে গলা ছেড়ে বলে উঠে
” সালমা আপা !! একটা গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়ে যাও !!”
কিছুক্ষণ পর গ্লাস হাতে নিয়ে সিমি কিচেন থেকে বেড়িয়ে আসে। শানের কাছে এসে মৃদু স্বরে ডেকে উঠে তাকে।
” শান !! নাও তোমার পানি।” সিমির গলা শুনে শান দ্রুত চোখ খুলে তাকায়। সিমিকে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শান দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন গলায় বলে
” আরে ভাবি তুমি পানি আনতে গিয়েছো কেনো ?? এই অবস্থায় কিচেনে কেনো গিয়েছিলে ?? সালমা কোথায় ?? বসো বসো তুমি !!” শান সিমিকে ধরে বসিয়ে দিলো সোফায়।
সিমি হালকা হেসে বলে
” আরে !! আমি ঠিকাছি তুমি তোমার পানি নাও। সারাদিন কি বসে থাকতে ভালো লাগে নাকি ?? সালমা আপা একটু রুমে রেস্ট নিচ্ছে তাই আমিই এসেছিলাম একটু আচার নিতে। তুমি এসেছো তাই তোমার জন্য একটু পানি এনেছি। এতে আমি অসুস্থ হয়ে যাই নি। ধরো তোমার পানি !!” শান মুচকি হেসে পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি খেয়ে টেবিলের উপর রেখে দেয়। চারপাশে তাকিয়ে বলে
” সবাই কোথায় ?? সোহা থাকা সত্ত্বেও এতো চুপচাপ কেনো বাড়ি ??” সিমি নিশ্বাস ফেলে বলে
” সোহা তো এখন নিচেই নামে না। ঘরে বসেই নাইসা আর টমিকে নিয়ে খেলছিলো ভাবিমনি সোহাকে দেখতেই রুমে গিয়েছে আর মা আজকে দুপুরে ঘুমায়নি তাই এখন প্রচুর ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে ঘুমিয়ে গিয়েছে।” শান হালকা হেসে বলে
” ভাইয়া কোথায় ??” সিমি বিরক্তবোধ করে বলে
” আর তোমার ভাইয়া !! তোমার ভাই নাকি তার পুরোনো রুমকে মিস করছে তাই উপরে দেখা করতে গিয়েছে তার এক্সকে।” শান শব্দ করে হেসে দেয় সিমির কথায়। সিমির প্রেগন্যান্সির জন্য সিমি আর সামিরের রুম নিচে শিফট করেছে কয়েকদিন আগে তাই সামির তার রুমকে মিস করে। শানের সাথে কথা বলে সিমি তার রুমে চলে যায়। শানও উপরে চলে আসে। রুমে ঢুকতেই শানের চোখ পরে সোহার দিকে। সোহা বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে আর ফুঁপিয়ে কাঁদছে। পাশে নিলা সোহার হাতের রক্তে জাবুথাবু হয়ে থাকা ব্যান্ডেজ খুলে দিচ্ছে। শান দ্রুত পায়ে সোহার দিকে এগিয়ে যায়। সোহার পাশে বসে অস্থির গলায় বলে
” কি হয়েছে ভাবিমনি ও এমন করছে কেনো ?? আর তুমি ব্যান্ডেজ খুলছো কেনো ??”” নিলা ছলছল চোখে শানের দিকে তাকিয়ে বলে
” একটু আগে আমি এসে দেখি সোহা ফ্লোরে পরে গিয়েছে। আর হাতের ব্যান্ডেজ রক্তে লাল হয়ে আছে। পাশে রুম থেকে সামিরকে ডেকে সোহাকে বিছানায় শুয়ে দিয়েছি। তোমার ভাইয়াকে ফোন করেছিলো সামির। তোমার ভাইয়া বলেছে ব্যান্ডেজ টা চেঞ্জ করে দিতে আর তোমার ভাইয়া আসছে একটু পরে। ব্যান্ডেজ ও শেষ এই সময় তাই সামির ব্যান্ডেজ আনতে গিয়েছে।” সোহা অন্য হাত দিয়ে শানের হাত খামছে ধরে কাদঁতে কাঁদতে বলে
” আমার অনেক ব্যাথা করছে শান..প্লিজ কমিয়ে দিন এটা !!” শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে অসহায় ভাবে বলে
” এখনই কমিয়ে দিচ্ছি সোহা পাখি। তুমি কেঁদো না প্লিজ !!” শান নিলাকে সড়িয়ে নিজেই সোহার ব্যান্ডেজ খুলতে থাকে। ব্যান্ডেজ খুলে রাখতেই সামির আর ইশান দুজন এসে ঢোকে রুমে। ইশান শানকে সড়িয়ে সোহার হাতের ট্রিটমেন্ট করতে থাকে। ইশানকে দেখে শান কিছুটা অবাক হয়। একদম অগোছালো দেখা যাচ্ছে ইশানকে। সোহার কথা শুনে হয়তো অগোছালো ভাবে ছুটে এসেছে ইশান। ভাবতেই কিছু মুহূর্তের জন্য সোহা, শান, নিলার মুখে খুশির আভার দেখা দেয়। সোহার চোখ থেকে খুশির পানি পড়তে থাকে। কিন্তু হাত জ্বলে উঠতেই আবার সেই চোখের পানি ব্যাথার পানি হয়ে গেলো।
কাজ শেষ হতেই সবাই প্রাণ ফিরে পায়। সোহার কান্নাও থেমে যায়। ইশান পেইন কিলার দেওয়ায় ব্যাথাও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
কিছুক্ষণ পরে একে একে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ৩৩
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা

কাজ শেষ হতেই সবাই প্রাণ ফিরে পায়। সোহার কান্নাও থেমে যায়। ইশান পেইন কিলার দেওয়ায় ব্যাথাও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
কিছুক্ষণ পরে একে একে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইশান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
” এতো ছটফট করলে চলবে না তো। সুস্থ হয়ে তারপর যা করার করবে। এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো ঠিকাছে ??” সোহা মাথা নেড়ে ঠিকাছে বোঝায়। ইশান মুচকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। নিলা এবার নাইসা আর টমিকে টেনে কাছে নিয়ে আসে। নিলা দুজনের দিকে চোখ বুলিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” সোহা খাট থেকে পড়েছে কিভাবে নাইসা ??” নাইসা ভীতু দৃষ্টিতে পিটপিট চোখে সোহার দিকে তাকায়। সোহা ইশারায় তাকে চুপ করে থাকতে বলে। শান সোহার ইশারা বুঝতে পেরে নাইসাকে টেনে কোলে তুলে নেয়। নাইসাকে কয়েক চুমু দিয়ে পকেট থেকে কয়েকটা চকলেট বের করে নাইসার হাতে দিয়ে বলে
” নাইসুমনি !! তুমি তো গুড গার্ল বেবি তাই না ??” শানের কথায় নাইসা মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি প্রশন করে। শান হালকা হেসে বলে
” তাহলে গুড গার্ল দের মতো বলো তো তোমার মিষ্টি বেড থেকে কিভাবে পড়েছে ??” নাইসা পটপট করে বলে উঠে
” আমরা খেলছিলাম তখন মিষ্টি বললো একা একা হাটার চেষ্টা করতে চায়। তাই আমার হাত ধরে খাট থেকে নেমেছিলো আর তারপরই ঠুস করে পরে গিয়েছে আর ব্যাথা পেয়েছে।” সোহা কপাল চাপড়াতে থাকে। শান নাইসাকে আর টমিকে রুমের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে সোহার দিকে রাগী চোখে তাকায়। সোহা ব্ল্যাংকেট টেনে নিজেকে ঢাকতে চাইলেও এক হাত দিয়ে এতো বড় ব্ল্যাংকেট টেনে নিতে পারে না তাই ওড়না দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয়। নিলা রাগি গলায় বলে।
” মুখ ঢাকছো কেনো সোহা ?? নিজে নিজে হাটতে গিয়ে কতোবড় বিপদ ঘটিয়েছো সেটার খেয়াল আছে তোমার ?? আমাকে ডাকলে কি হতো ??” সোহা ওড়না সড়িয়ে নিলার দিকে ইনোসেন্ট ফেস করে তাকিয়ে বলে
” সরি ভাবিমনি আর করবো না এমন। তুমি আপুর সাথে ছিলে তাই আর ডাকিনি আমি। অনেক অনেক সরি।” নিলা নিশ্বাস ফেলে বলে
” যেভাবে তাকিয়ে আছো তোমাকে বকতেও পারবো না আর। চুপচাপ শুয়ে থাকো নাহলে এবার তোমার দুই ভাই আর শান মিলে তোমাকে বেডের সাথে ছিকল দিয়ে বেধে রাখবে।” সোহা দাঁত কেলিয়ে তাকাতেই নিলা হেসে দেয়। নিলা রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই। শান দরজা লাগিয়ে সোহার দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। সোহা একটা ঢোক গিলে এক হাতে ভর দিয়ে উঠে বসে মিনমিম স্বরে বলে
” এভাবে এগিয়ে আসছেন কেনো ??” শান কথা না বলে তার শক্তপোক্ত চেহারা নিয়ে আরো কয়েক পা এগিয়ে আসে। সোহা ভয় পেয়ে পেছনে যেতে থাকে। খাটের সাথে মিশে একবার নিজের পেছনের দিকে তাকিয়ে আবার শানের দিকে তাকাতেই চমকে মাথা পিছিয়ে নেয়। শান আর তার মধ্যে এখন কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব রয়েছে। শানের উথাল পাতাল নিশ্বাস সোহার মুখ বারি খাচ্ছে। সোহা বিস্মিত হয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” আ আপনি এ….এখানে কেনো ??” শান ফিসফিসিয়ে বলে উঠে
” তোমাকে শাস্তি দিতে এসেছি।” সোহা ঢোক গিলে বলে
” ককি শাস্তি ?? এএকটু দূড়ে সরুন।!! আমার অস্বস্তি হচ্ছে।” শান কোনো কথা বললো না। নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে সোহার ঠোঁটের দিকে মাতাল ভাবে তাকিয়ে থাকে। এতে সোহা আরো অস্বস্তিতে পরে যায়। সোহা নিজের ঠোঁটের উপর হাতটা রেখে বলে
” এ…ভাবে ত…তাকিয়ে আছেন কেনো ??” শান বাকা হাসি দিয়ে সোহার আরো কাছে এগিয়ে যায়। আলতো ভাবে সোহার হাতটা নিচের দিকে সড়িয়ে দিয়ে সোহার ঘার টেনে নিজের কাছে টেনে নিয়ে সোহার ওষ্ঠদয়ে সাথে নিজের অগ্রাসী ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে নেয়। সোহা পুরোই স্তব্ধ হয়ে যায় শানের কাজে। সোহার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। হাত-পা ও সমান তালে কেঁপে যাচ্ছে। সোহা অসম্ভব ভাবে কাপঁতে থাকে। শান তার কাতর স্পর্শ থেকে এবার সোহাকে মুক্তি দেয়। সোহার কোমড় জড়িয়ে ধরে সোহার কপালে কপাল ঠেকিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে থাকে। সোহাও ঘনঘন নিশ্বাস নিতে থাকে। শানের অস্থিরতা সোহার ক্ষুদ্র হৃদয়কে গ্রাস করে নিতে থাকে। শান স্বাভাবিক হয়ে সোহার দিকে তাকায়। সোহা নিভুনিভু চাহনি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শান সোহার নাকে তার ঠোঁট স্পর্শ করে ঠোঁটে বাকা হাসি রেখে ধীর কন্ঠে বলে
” আমার ইউনিক স্টাইলের শাস্তি পেতে চাইলে বারবার এমন করতে পারো তুমি। আমার তাহলে আর কষ্ট করে তোমাকে শাসন করতে হবে না। প্রতিদিন এমন হাজারটা কাজ করবে আর আমি শাস্তি দিয়েই সব পুশিয়ে দেবো। কি বলো !!” শানের কথা শুনতে শুনতে সোহা ষষ্ঠইন্দ্রিয় বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। সোহা ধীরে ধীরে তার চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়।
” সোহা !! সোহা কি হয়েছে তোমার ?? সোহা !!”
পুরোপুরিভাবে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেওয়ার আগে সোহা তার সামনে থাকা মানবটির অস্থির মুখশ্রী দেখতে পায়। তার সেই অস্থির কণ্ঠের ডাক ও সোহার কানে এসে পৌঁছায়। খুব মিষ্টি লাগছিলো সেই ডাক গুলো।

দিনের শুরুতেই আবির্ভাব হয় এক নতুন সকাল সেই সাথে শুরু হয় সোহার মনে থাকা অনুভূতিকে বোঝার এক ক্ষুদ্র চেষ্টা। সকালে ঘুম ভাঙতেই সোহা তার সামনে শানের ঘুমন্ত মুখ দেখতে পায়। শানকে দেখেই সোহার মাথায় কালকে রাতের কথা মাথায় আসতে থাকে। সোহার গোলাকৃতি মুখশ্রী ধীরে ধীরে লজ্জায় নুয়ে যেতে থাকে। সোহা ঘুমন্ত শানের বুকে নিজের মুখ গুঁজে দেয়। হাতের আঘাতের কারণে তার আর শানের মাঝে কিছুটা দূরত্ব থাকলেও সেটা খুব বেশি নয়। সোহা মুখে লাজুক হাসি নিয়ে মুখ তুলে শানের দিকে তাকায়। কপালে পড়ন্ত চুলের গুচ্ছ দেখে সোহার মনে ইচ্ছে জেগে বসে সেটা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতে।
সময় নষ্ট না করে হাত বাড়িয়ে শানের মাথায় হাত ছুঁয়ে দেয়। শানের গুলোতে হাত বুলিয়ে দিতেই সোহার কাছে কাজটা খুব পছন্দ হলো। এর আগে কখনো কারো চুল ছুঁয়ে দেখেনি। শানের সুন্দর চুল গুলো অনেক আগেই সোহার চোখ কেড়ে নিয়েছিলো কিন্তু সোহা সেটা কোনোদিন প্রকাশ করেনি। কিছুক্ষণ চুলে হাত বুলিয়ে হাত সড়িয়ে নেয় সোহা। শানকে ঘুমন্ত দেখে আবারও শানের মনে আরেকটা ইচ্ছে পোষণ করে তবে এবারে ইচ্ছেটা ছিলো সোহার জন্য কিছুটা ভয়ংকর এক ইচ্ছা। শানের গালে চুমু দেওয়ার বাসনা জাগে সোহার মনে। সোহা কিছুক্ষণ ভাবতে থাকে দেবে কি দেবে না। শেষে সময়ে সৎ ব্যাবহার করা কথাটা মাথায় রেখে সোহা তার কাজ করে ফেলে। মুখ এগিয়ে শানের গালে ঠোঁট ছুঁয়ে বসে। লজ্জায় লাল নীল হয়ে তাড়াতাড়ি করে উঠে বসতে নিলেই শান সোহাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকায় উঠার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হাতে
ব্যাথা অনুভব করে আর মুখ দিয়ে আহ শব্দ বের হয়ে যায়। সোহা হাত ধরে চোখ কুঁচকে নেয়। সোহা মৃদু চিৎকারে শানের ঘুম হালকা হয়ে আসে। শান ঘুমঘুম চোখে পাশে তাকাতেই সোহাকে এভাবে দেখে উঠে বসে। হন্তদন্ত হয়ে বলে
” কি হলো কোথাও ব্যাথা পেয়েছো নাকি ??” সোহা স্বাভাবিক হয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে নতজানু দৃষ্টিতে দুইদিকে মাথা নেড়ে না বোঝায়। সোহা ধীরেসুস্থে উঠে বেডে হেলান দিয়ে বসে। শান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে
” উফফ আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আর রাতে জানো আমি কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ?? আমি ভেবেছিলাম তোমার বোধয় আবার কিছু হয়েছে তাই তুমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছো। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম এটা আমার শাস্তি দেওয়ার টেকনিকের কারণে হয়েছে। আমার বুঝতে একটু দেড়ি হলেই আমাকে অনেক বড় লজ্জায় পড়তে হতো কালকে। ভাগ্যিস কালকে সময় মতো বুঝতে পেরেছিলাম নাহলে আমি ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আসতাম। বাট একটা কথা বুঝতে পারলাম না জাস্ট একটা কিসেই অজ্ঞান হয়ে গেলে !! আর ভবিষ্যতে তো হাজার হাজারটা এরকম শাস্তি পাবে তখন কি হবে সেটা ভেবেই আমার মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।” শানের এমন একরেখা ঠোঁট কাটা কথাবার্তা শুনে সোহার কান গরম হয়ে যেতে থাকে। সোহা লজ্জায় নিজেকে নুইয়ে নেয়। শান সোহাকে এতো লজ্জা পেতে দেখে আড়ালে হাসতে থাকে। সোহাকে স্বাভাবিক করে তোমার জন্য বলে
” আচ্ছা আর লজ্জায় টমেটো হতে হবে না। চলো ফ্রেশ হবে। আমার আজকে পুলিশ স্টেশন যেতে হবে।” পুলিশ স্টেশনের কথা শুনে নিমিষেই সোহার লজ্জা বিলিন হয়ে যায়। সোহা শুকনো মুখে বলে
” সেখানে কি করবেন আপনি ??” শান সোহার পাশে গা ঘেঁষে বসে বলে
” হৃদয়ের ব্যাপারে কথা বলতে যাবো অফিসারের সাথে।” সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে
” হৃদয়ের ব্যাপারে কি কথা !!” শান সোহাদ নাক টেনে বলে।
” সেটা তোমাকে জানতে হবে না পিচ্চি। এবার ফ্রেশ হয়ে নিচে চলো নাহলে আমার ইউনিক শাস্তির এলোপাথাড়ি প্রভাব পড়বে এখন।” সোহা নিজের ঠোঁটের উপর হাত রেখে চোখ বড় বড় করে তাকায় শানের দিকে। শান ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
শান পুলিশ স্টেশনে এসে অফিসারের সাথে অনেক্ষণ কথা বলে। কথা বলে জানতে পারে হৃদয় এখনও জেলেই রয়েছে। হৃদয়ের বাবা হৃদয়কে ছাড়ানোর জন্য উকিল নিয়ে আসলেও প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছ থেকে সব কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় আর নিজেই উকিলকে বিদায় করে দেয়। হৃদয়কে কয়েকদিনের জন্য জেলে রাখার সুপারিশ দেয় অফিসারকে। হৃদয় যাতে তার ভুল বুঝতে পেরে তার পথ থেকে সড়ে আসে তার জন্যই এই ব্যবস্থা করে হৃদয়ের বাবা। হৃদয়ের মা দুইদিনে প্রতিদিন রিমিকে দিয়ে হৃদয়ের জন্য খাবার পাঠয়েছিলো। রিমিও হৃদয়ের উপর অনেকটা রেগে আছে। এসব নিয়ে হৃদয় কিছুটা ডিপ্রেশনেই রয়েছে। সব শুনে শান আর হৃদয়ের শাস্তি বাড়ানো নিয়ে কোনো পদক্ষেপ বাড়ালো না। সেখান থেকে অফিসে চলে গেলো।
এদিকে সোহার কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খারাপ। ঘন্টা কয়েক আগে একটা অপরিচিত লোক এসেছিলো। অবশ্য সে একজন পাগল ছিলো তার পোশাক দেখে মনে হচ্ছিলো কোনো পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছে। তবু শাহানাজ বেগম তাকে যত্ন সহকারে তাকে খাইয়ে দাইয়ে দিয়েছে কিন্তু সে চলে যাওয়ার পর থেকেই টমিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো বাড়ি খুঁজেও কেউ টমিকে খুঁজে পায়নি। নাইসাও যেকোনো সময় কেঁদে দেবে এমন অবস্থা। এতোদিন ধরে টমিকে নিজের বন্ধু বানিয়ে খেলছিলো সে কিনা এখন হাড়িয়ে গিয়েছে। সোহা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ব্যাপারটা। সিমি আর নিলা বুঝতে পারে সেই পাগল লোকটাই টমিকে নিয়ে গিয়েছে। সবাই অসহায় ভাবে বসে আছে কে কি করবে বুঝতেই পারছে না। মুসফিক চৌধুরি বাগান থেকে ফিরে এসে সোহাকে এভাবে কাঁদতে দেখে বলে
” সোহা এভাবে কাদিস না মা। আবার অসুস্থ হয়ে পরবি তো !! আমি দেখছি কি করা যায়।” সোহা হিচকি তুকে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আমার টমিকে এনে দাও নাহলে আমি ও চলে যাবো।” শাহানাজ বেগম অসহায় ভাবে মুসফিক চৌধুরির দিকে তাকায়। মুসফিক চৌধুরি তাকে ইশারায় শান্ত থাকতে বলে। মুসফিক চৌধুরি তার বাড়ির দুই দারোয়ানকে কিছুক্ষণ বকাঝকা করে নেয় তারা টমিকে দেখেনি তাই তারপর দুই দারোয়ানকে পাঠিয়ে দেয় টমিকে খুঁজে বের করার জন্য। আর তার লোকজন দিয়ে খোঁজ নিতে থাকে কোনো পাগলা গারদ থেকে কেউ নিখোঁজ হয়েছে কিনা। নিলাও শানকে ফোন করে সব জানায়। শান কাজ রেখে অফিস থেকে বেড়িয়ে যায়।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে