তুমিময় ভালোবাসা পর্ব-৩০+৩১

0
1810

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ৩০
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা

শানও হৃদয়ের কাছে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে কিন্তু হৃদয়ের সামনা সামনি থাকায় শান নড়তেও পারছে না। এদিকে সোহার হাতও প্রায় আলগা হয়ে আসছে। সোহা জোড়ে জোড়ে শানের নাম নিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। প্রিন্সিপ্যাল স্যার ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর লোকদের এখানের আসার জন্য জানিয়ে দিয়েছে। হৃদয় সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” তোর জন্য অনেক হেনস্তা হতে হয়েছে আমাকে। এক মাস হসপিটালে ছিলাম তোর জন্য। আজকে তুই কোনোভাবেই ছাড়া পাবি না।” হৃদয় শয়তানি হাসি দিয়ে সোহার হাত ছেড়ে দেওয়ার আগেই হ্রদয়ের অগোচরে রিমি এসে সোহার হাত ধরে হৃদয়কে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে সোহার টান দিয়ে সেখান থেকে নিয়ে আসে। সোহা সোজা মাটিতে গিয়ে পরে। আর হাতে আর পায়ে খুব খারাপ ভাবে আঘাত পায়। ব্যাথায় আর ভয়ে সোহা কাতরাতে থাকে। শান সোহাকে দেখে প্রাণ ফিরে পায়। দৌড়ে সোহার কাছে যায় সবাই। শান সোহার মাথা উঠিয়ে দিশেহারা হয়ে চোখে মুখে চুমু খেয়ে অস্থির হয়ে বলতে
” সোহা ?? দেখো তুমি একদম ঠিকাছো। আমার দিকে তাকাও !!” চোখের সামনে শানের মুখশ্রী দেখে সোহা শানের উত্তর দিতে পারে না। ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতেই ধীরে ধীরে জ্ঞান হারায়। শান সোহাকে একনাগাড়ে ডাকতে থাকে কিন্তু সোহার রেসপন্স না দেখে শান অনেক ভয় পেয়ে যায়। ইমন শানকে এমন করতে দেখে বলে
” ভাইয়া ভাবির জ্ঞান হারিয়েছে রিসোর্টে নিয়ে যেতে হবে। আপনি একটু শান্ত হন।” শান কিছুটা শান্ত হয়।
রিমি হৃদয়ের কাছে গিয়ে হৃদয়কে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসাতেই হৃদয় রেগে রিমির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রিমি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
হৃদয় রাগে কাপঁতে কাপঁতে বলে
” তোমার জন্য আজকে আমার কাজটা অপূর্ণ রয়ে গেলো। এই প্রথম তোমার প্রতি আমার এতো রাগ উঠছে। তুমি কেনো আমার কাজে বাধা দিলে ??” হৃদয়ের চিৎকার শুনে রিমি চেঁচিয়ে বলে
” একদম চুপ !! তোমার সব কাজের পার্টনার হিসেবে আমি থাকি তাই বলে মার্ডার এর মতো এমন একটা কাজে আমি কি করে তোমাকে সাপোর্ট করবো ?? তোমার ভালোর জন্যই আমি এমন করেছি। শুধুমাত্র কিছু প্রতিহিংসার কারণে তুমি অযথা একজনের প্রাণ নিতে পারো না। একবারও ভেবে দেখেছো সোহাকে আজকে পাহাড় থেকে ফেলে দিলে তোমার কি হতো ?? সারাজীবন জেলেরঘানি টানতে হতো তোমাকে আর তোমার সাথে এখন পুরো জীবন জড়িয়ে আছে। আমি কিছুতেই তোমাকে এমন করতে দেবো না। সেটা আমার বা তোমার, যারই স্বার্থ থাকোক না কেনো।” হৃদয় মাথা নিচু করে নেয়।
ওদের কথা শুনে শানের মাথায় হৃদয়ের কথা আসে। শান সোহাকে রেখে অগ্নির মতো রক্তাক্ত চোখ নিয়ে হৃদয়ের দিকে ওগিয়ে যায়। হৃদয়কে মাটির থেকে তুলে এলোপাথাড়ি ভাবে মারতে থাকে। হৃদয় ব্যাথায় চিৎকার করছে। সেগুলো শানের মনে শান্তি দিচ্ছে। মারতে মারতে হৃদয়ের নাক, মুখ, কপাল থেকে রক্ত বের হতে থাকে। অবস্থার অবনতি দেখে ইমন আর কয়েকজন মিলে শানকে হৃদয়ের কাছ থেকে দূড়ে সড়িয়ে নিয়ে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনীরাও এসে পৌঁছোয়। তারা সব শুনে হৃদয়কে তার সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায়। ওরা নিজেদের মাধ্যমে কালকে হৃদয়কে নিয়ে ঢাকা যাবে আর সেখানে বাকি সব কিছু হবে। সেনাবাহিনীরা এসে হৃদয়কে নিয়ে যেতে চাইলে হৃদয় অসহায় ভাবে রিমির দিকে তাকায়। রিমি হৃদয়ের দিক থেকে মুখ ঘুড়িয়ে নিয়ে গম্ভীর ভাবে বলে
” আংকেলকে সব জানাবো। দেখছি কালকে আংকেল কি করতে পারে।” হৃদয় মাথা নিচু করে মাথা নাড়ায়। শান রেগে বলে
” সোহাকে পাহাড় থেকে ফেলে দিবি তাই না ?? এবার দেখ আমি তোকে কতোদিন জেলে রাখার ব্যবস্থা করি !!” সেনাবাহিনীরা হৃদয়কে নিয়ে চলে যায়।

সোহাকে ডক্টর দেখিয়ে রিসোর্টে এসে পৌঁছায় শানরা। সোহার এখনও জ্ঞান ফিরেনি। ইতি, ইমন সারাক্ষণ শানের সাথেই রয়েছে। শান ইতি আর ইমনকে বলে
” তোমরা আমাকে অনেক হেল্প করেছো তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।” ইমন হালকা হেসে বলে
” ভাই হয়ে যদি ভাইয়ের পাশেই না থাকি তাহলে ভাইয়া ডাকার কি দরকার ??” শান মলিন হাসি দেয়। ইতি ইতস্তত বোধ করে বলে
” ভাইয়া আপনাকে দেখে অনেক ক্লান্ত লাগছে আপনি ওনার বেডে গিয়ে রেস্ট করে নিন আমি এখানেই থাকি আজকের রাতটা !!” শান কিছুটা ভীতু গলায় ভাবে উঠে
” না !! আমি সোহাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। আমি একদম ঠিকাছি।” ইতি, ইমন বুঝলো এখনও শানের ভয়টা কাটেনি। ইমন বিনয়ী ভাবে বলে
” ভাইয়া রাতে কিছু দরকার হলে অবশ্যই আমাকে ফোন করবেন। আমি জেগে থাকবো আজকে।” শান ঘার হেলিয়ে সায় দেয়। ইতি ইমন চলে যেতেই। শান তার ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোহার পাশে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে। সোহার নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকাতেই শানের চোখ বেয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পরে। সোহার আঘাতপ্রাপ্ত হাতটা আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে
” আজকে সত্যি বুঝতে পারলাম তোমার প্রাণটা আমার খাঁচায় বন্দি। তোমাকে ওই অবস্থায় দেখে আমার মনে হচ্ছিলো আমি আমার মাঝের তোমাকে হারিয়ে ফেলবো আজকে। আমার এখনও নিজেকে অসহায় লাগছে। তোমাকে কিছুতেই হারাতে পারবো না আমি। তুমি সুস্থ হয়ে গেলেই আমি তোমাকে আমার মনের কথা জানিয়ে আমার করে নেবো।” সোহার হাতে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। ক্লান্ত হয়ে খাটে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পরে।।
মাধ্যরাতে মাঝে মাঝে শরীরে গরম উত্তাপ লাগতেই শানের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ঘুম চোখে পাশে তাকাতেই দেখে সোহা কেমন ছটফট করছে। শান লাফ দিয়ে উঠে বসে সোহার গায়ে হাত দিয়ে দেখে সোহার গায়ে প্রচুর জ্বর। সোহা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে আর বিরবির করে কি বলছে। শান ঝুকে সোহার মুখের সামনে কান পেতে দেয়। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো সোহার শ্বাস কষ্ট শুরু হয়েছে তাই ভেঙে কথা বলছে। শান উঠে লাগেজ থেকে ইনহেলার বের করে সোহার মুখে দেয়। পানি এনে পানি পট্টি দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সোহা শান্ত হতেই শান সোহার পাশে বসে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” সোহা !! কেমন লাগছে এখন তোমার ??” সোহা ঘুম ঘুম চোখে শানের দিকে তাকায়। সোহা হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। সোহা কেনো কাঁদছে বুঝতে পারলেও শান অবাক হওয়ার ভান করে বলে
” কি হলো কাঁদছো কেনো তুমি ??” সোহা দুর্বল শরীর নিয়ে কিছুটা উঠে বসে শানের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে।
সোহা শানের বুকে মাথা রেখে চুপচাপ কাঁদতে থাকে। শান সোহার মাথায় ঠোঁট ছুঁয়ে বলে
” কাঁদে না, চুপ করো। কিছু হয়নি তোমার। পায়ে আর হাতে লেগেছে সেটা কয়েকদিনে সেরে যাবে। ঠিকাছে ??” সোহা উত্তরে কিছু বলে না। শান সোহার হাতে আলতো ভাবে ছুঁয়ে বলে
” হাতে, পায়ে ব্যাথা আছে এখনও ??” সোহা জোড়ানো গলায় বলে
” হুম। আপনি জানেন তখন আমার কেমন লাগছিলো ?? আমার মনে হচ্ছিলো আমি আর কোনোদিন আপনাদের দেখতে পারবো না। আপনাদের আদর পাবো না। হৃদয়ের সাথে আমার কি শত্রুতা ছিলো ?? ও এমন কি করে করতে পারলো আমার সাথে ??” বলতে বলতে আবার কেঁদে দেয়। শান সোহার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলস
” হুস !! আমার বউ কাঁদে না ঠিকাছে?? তুমি এখন ঘুমাও।” সোহা শানের হাত ধরে কান্নাজরিত কন্ঠে বলে
” আপনি এখানে থাকুন নাহলে আমার ভয় করবে।” শান মুচকি হেসে সোহার পাশে বসে পরে।

আজকে সবাই ঢাকা ব্যাক করছে। সোহার সুবিধার জন্য শান নিজেদের জন্য আলাদা গাড়ি ঠিক করেছে। যদিও প্যানটা স্যারদের ছিলো। স্যারদের আগেই শান,সোহা, ইতি, ইমন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শানদের বাড়ির কাউকেই ভালো করে জানানো হয়নি সোহারা আজকে বাড়িরে ফিরছে। শান বের হবার আগে শুধু ইশান আর সামিরকে জানিয়ে দিয়েছে।

চলবে~ইনশাল্লাহ………

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ৩১
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা

আজকে সবাই ঢাকা ব্যাক করছে। সোহার সুবিধার জন্য শান নিজেদের জন্য আলাদা গাড়ি ঠিক করেছে। যদিও প্ল্যান টা স্যারদের ছিলো। স্যারদের আগেই শান,সোহা, ইতি, ইমন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শানদের বাড়ির কাউকেই ভালো করে জানানো হয়নি সোহারা আজকে বাড়িরে ফিরছে। শান বের হবার আগে শুধু ইশান আর সামিরকে জানিয়ে দিয়েছে।
বাড়ির বাগানে গাড়ি থামতেই ইশান বেড়িয়ে আসে ভেতর থেকে। সোহার কাছে আসার আগেই শান বেড়িয়ে ইশানকে বলে
” ভাইয়া তুমি লাগেজটা নিয়ে যাও আমি সোহাকে নিয়ে আসছি।”
” ওকে। তাড়াতাড়ি আয় সবাই মা অপেক্ষা করছে। আর কিছুটা রেগেও আছে তুই কালকে থেকে একটাও ফোন করিসনি আবার আজকে ব্যাক করার কথাও জানাসনি তাই।” শান মাথা হেলিয়ে ঠিকাছে বলে। ইশান লাগেজ নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই শান গাড়ি খুলে ঘুমন্ত সোহাকে অতি সাবধানে কোলে তুলে নেয়। ইতি আর ইমন বাড়িতে আসার পথেই নিজেদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য নেমে গিয়েছিলো।
বাড়ি ঢুকে ড্রইংবুমে কাউকে দেখতে পায় না শান। কিচেন থেকে সবার শব্দ শোনা যাচ্ছে। শান সোহাকে সোফায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়। গায়ে জ্বর থাকায় সোহা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। এখন
নিজেদের উপর কোন ঝড় বয়ে যাবে সেটাই ভাবতে থাকে শান। সিমি নাইসাকে নিয়ে সিরি দিয়ে নামতে নামতে গল্প করছিলো আর আইসক্রিম খাচ্ছিলো। নাইসার সাথে কথা বলতে বলতে সোফার দিকে একবার তাকয়েও চোখ ফিরিয়ে নেয় আবার কথা বলতে নিলেই খেয়াল আসে সিমির। চমকিত ভাবে সোহার দিকে তাকায়। খুশি হয়ে কিছু বলার আগেই সোহার হাতের ব্যান্ডেজ দেখে সিমি ভয়ে চিথকার দিয়ে উঠে
” আআআয়া !!!” সিমির এমন চিৎকার শুনে শান, নাইসাও চমকে যায়। সিমির চিৎকার শুনে সোহা ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে। সোহা আগে বাড়িতে চোখ বুলিয়ে নিলো। সিমির কিছু হয়েছে ভেবে কিচেন আর রুম থেকে সবাই দৌড়ে বেরিয়ে আসে। সোহাকে কেউ খেয়াল করে না সবাই সিমির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকে কি হয়েছে। চিৎকার কেনো দিয়েছে শান বুঝতে পেরে তার জায়গায়ই দাড়িয়ে থাকে। সিমি সবাইকে অস্থির হতে দেখেও কিছু বলে না সবাইকে পাশ কাটিয়ে সোহার কাছে এসে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে
” তোর হাতে ব্যান্ডেজ কেনো ?? কি হয়েছে তোর ??” সোহা সিমির কথা শুনে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে ব্যান্ডেজ করা হাতটার উপর থেকে চাদর অনেকটা সড়ে গিয়েছে। সোহা চাদর টেনে হাতটা ঢেকে মাথা নিচু করে কিছুটা গুটিয়ে বসে থাকে। সিমি ভ্রু কুঁচকে বলে
” তুই হাত লুকাচ্ছিস কেনো ?? দেখি!!” সিমি সোহার হাতের উপর থেকে আবার চাদর টা সড়িয়ে দেয়।বাড়ির সবাই দৌড়ে সোহার কাছে আসে। সোহাকে দেখে সবাই আঁতকে উঠে। নিলা সোহার সামনে বসে হাত ধরে হালকা চেঁচিয়ে অবাক স্বরে বলে
” এসব কি ?? সোহা তুমি ব্যাথা পেয়েছো কি করে ??” সামির, ইশানের চোখ, নাক ইতিমধ্যে লাল হয়ে গিয়েছে। দুজনই সোহাকে দেখে কাঁপছে। শাহানাজ বেগমের মাথা ঘুরতে থাকে। সালমা দেখে শাহানাজ বেগমকে ধরে বলে
” খালাম্মা !! আপনি বসেন আপনার মাথা ঘুরতাছে।” শান দৌড়ে গিয়ে শাহানাজ বেগমকে ধরে বলে
” কি হয়েছে তোমার মা ??” সালমা দৌড়ে পানি এমে শাহানাজ বেগমকে খাইয়ে দেয়।
ইশান তার ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” শান !! এসব কি ?? সোহার কি হয়েছে ??” সামির সোহার অবস্থা দেখে শানের উপর প্রচুর রেগে গেলো। শানের দিকে ঘুরে রেগে চেঁচিয়ে বলে
” কয়েকদিনে তো তুই সোহার প্রতি এতো কেয়ার দেখালি, ভালোবাসা দেখালি। আর চোখে আড়াল হতেই সোহার এই অবস্থা করেছিস ?? এই তোর কেয়ার আর স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ?? ভালো না বাসলেও অন্তত সম্মান তো করতে পারতি !! তোর থেকে আমি এসব আশা করিনি।”
শান আঁতকে বলে উঠে
” ভাইয়া !! এসব কি বলছো তুমি?? আমি কেনো করবো এসব ??” সামির রেগে বলে
” তাহলে আর কে করেছে এসব ??” শান শান্ত দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” এসব ওই হৃদয়ের বাচ্চা করেছে। সোহাকে কালকে পা…” শান থেমে যায় পুরো কথা শেষ না করেই। সবাই অবাক হয়ে যায় হৃদয়ের নাম শুনে। সামির চমকে বলে
” হৃদয় মানে ?? পুরো কথাটা শেষ কর !!” শাহানাজ বেগম ঠিক হয়ে গিয়ে সোহার পাশে বসে। সোহাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে
” তোর এই অবস্থা কেনো মা !! আর কোথায় কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস ??” নিলা সোহার পায়ের দিকে তাকাতেই পায়ের ব্যান্ডেজটা দেখতে পেয়ে আঁতকে বলে উঠে
” মা !! পায়েও ব্যান্ডেজ রয়েছে।” ইশান এগিয়ে এসে সোহার পা ধরতে নিলেই সোহা পা সড়িয়ে দিয়ে বলে
” ভাইয়া !! আপনি পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো ??” ইশান গম্ভীর গলায় বলে
” চুপ !! নিজেকে বেশি বড় দেখানোর চেষ্টা করবে না।” ইশান সোহার হাত, পা ধরে দেখতে থাকে।
সামির শানকে উদ্দেশ্য করে বলে
” তুই বলছিস না কেনো কিভাবে হয়েছে এসব ??”
শান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে হৃদয়ের করে থাকা সব কাজের কথা বললো। সব শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো। শাহানাজ বেগম আচঁল দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকে। সবার চোখ, মুখ ছলছল হয়ে গিয়েছে এক প্রকার। সামির রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে
” শু***র এমন অবস্থা করবো আমি !! ওকে জেল না খাটিয়ে আমি ছাড়বো না।” সামির বেড়িয়ে যেতে নিলেই শান বলে
” কোথায় যাচ্ছ ??” সামির শানের দিকে ঘুরে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” হৃদয়ের ব্যবস্থা করতে। আজ ওর এমন অবস্থা করবো আমি !!” শান গম্ভীর গলায় বলে
” আমি ওর শাস্তির জন্য আরো অন্যায় কাজের কিছু প্রুভ রেখেছি। সেগুলো নিলে আশা করি আর কিছু লাগবে না। তোমার যাওয়ার দরকার নেই এখন।” সামির কিছুটা শান্তু হয়ে সোহার কাছে এসে দাঁড়ায়। ইশান ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে। পারছে না শুধু কেঁদে দিতে। সিমিও শাহানাজ বেগমের মতো কাঁদছে। নাইসা সোহাকে দেখে অনেকটা ভয় পেয়েছে তাই পাশে চুপটি করে বসে আছে। নিলা সোহার গায়ে জ্বর দেখে হালকা পাতলা খাবার আনতে গিয়েছে মেডিসিন খাওয়ানোর জন্য। সবাইকে এভাবে কাঁদতে দেখে সোহার মন খারাপ হয়ে যায়। শান্তনা দেওয়ার জন্য সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে
” আরে তোমরা সবাই কাঁদছো কেনো এভাবে ?? আমার তো কিছুই হয়নি। আমি একদম ঠিকাছি। তোমাদের এতো ভালোবাসা রেখে আমি কোথায় যাবো বলো তো !! মা,বাবা, মামনি, বাবাই আমাকে কত্তো ভালোবাসে, আদর করে। আমার ভাইয়ারা আমাকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্না করে দিচ্ছে। ভাবিমনি আমার কতো খেয়াল রাখে মেয়ের মতো। নাইসা, টমি আমার বন্ধুদের রেখে আমি কি করে চলে যাবো ?? আমাকে কেউ মেরে ফেলতে চাইলেই কি পারবে নাকি ?? আমি তো তোমাদের আর তোমাদের এতো ভালোবাসা রেখে কোনোদিন কোথাও যেতে পারবো না। আর আমার সাথে তো এখন একজন আছেই। আমার স্বামী শান চৌধুরি। সে আমার কত্তো কেয়ার করে এখন। কালকেও তো শান ভা..” সোহা নিজের কথার মাঝেই থেমে মুখ কুঁচকে নেয়। সবাই সোহার কথা শুনে হাসলেও সোহাকে কথা থামাতে দেখে ভ্রু কুচকে নেয়। সোহা ভাবতে ভাবতে শানের দিকে তাকিয়ে অবুঝ গলায় বলে
” আচ্ছা !! আমি কালকে পাহাড়ে আপনাকে কি বলে ডেকেছিলাম ?? শান ভাইয়া নাকি অন্যকিছু ??আমার মনে আসছে না কেনো ??” শান মাথা নেড়ে না বুঝিয়ে বাকা হাসি দিয়ে বলে
” শান বলে ডেকেছিলে।” সোহা হতবাক হয়ে চোখ বড়বড় করে তাকায়। সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে। সোহা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। শানকে কি বলে ডেকেছিলো সেটা তার মাথাতেই ছিলো না। নাম ধরে ডাকায় নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। সিমি মিটমিট করে হেসে বলে
” সেইদিন তো আমরা এতো বলার পরও নাম ধরে ডাকলি না আর কালকে নিজ থেকেই ডেকেছিস !! আবার আজকে ভুলেও গিয়েছিস ??” সোহা ১টা লুক দিয়ে বলে
” আরেকটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছি। তোমাদের ভালোবাসা ছাড়া থাকতে পারবো না আর আরেকজনের সাথে ঝগড়া না করে থাকতে পারবো না আমি।” সবাই জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে। সিমি থমথমে চেহারায় সোহার দিকে তাকায়। সোহা ভেংচি কেটে মুকজ ফিরিয়ে নেয়। নিলা কিচেন থেকে খাবার নিয়ে বেড়িয়ে বলে
” এই যে সোহা !! এখন এতো কথা বললে চলবে না। চলো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুমাবে।” সোহা আড়চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” হ্যা ভাবিমনি চলো। আরেকজনের চিৎকার শুনে তো আমার ঘুমের বারোটা বেজে গিয়েছে এখন মাথা ব্যাথা করছে।” শান চোখ পাকিয়ে বলে
” তো বলছো কেনো তুমি ?? বলতে পারছো না মাথা ব্যাথা করছে ?? আসার পর থেকে বকবক করেই যাচ্ছে। একটু চুপ করে থাকতে পারে না।” সোহা মুখ ফুলিয়ে তাকায়। সোফা ধরে উঠে দাঁড়াতেই সবাই চেঁচিয়ে উঠে। শান দ্রুত এগিয়ে এসে ধরে ধমক স্বরে বলে
” একটা থাপ্পড় দেবো !! তুমি হাটতে পারো নাকি?? তাহলে দাঁড়িয়ে কেনো ??” সোহা শানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে
” তাড়াতাড়ি কোলে নিন। আমি খেয়ে ঘুমাবো।” শান চোখ বড়বড় করে তাকায় সোহার দিকে। সোহা দুষ্টু হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। শান সবার দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে সবাই হাসছে। শান সোহাকে কোলে তুলে দ্রুর পায়ে উপরে যাওয়ার চেষ্টা করে। শান চলে যেতেই সবাই হা হা করে হেসে দেয়।

পরদিন….
সোহার জ্বর কমে গেলেও হাতে, পায়ের ব্যাথা সারতে অনেক সময় লাগবে। আজকে সোহাকে নিয়ে ইশানের হসপিটালে চেকাপ এর যাচ্ছে। ইশান আগেই বেড়িয়ে গিয়েছে সব রেডি করার জন্য। শান সোহাকে নিয়ে যাবে এখন। শান তৈরি হয়ে এসে দেখে সোহা তৈরি হয়ে গেলেও আয়নার সামনে বসে আনমনে কিছু ভেবে যাচ্ছে। সোহার সামনে গিয়ে তুড়ি বাজাতেই সোহা চমকে শানের দিকে তাকায়। শান ভ্রু নাচিয়ে বলে
” কি ম্যাডাম !! কি এতো ভাবছেন ??” সোহা ড্রেসিংটেবিলে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। শান ধরতে নিলে সোহা বলে
” আমি পারবো। আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো ??” শান মাথা নেড়ে হ্যা বলে। সোহা একটা ঢোক গিলে বলে
” আচ্ছা আমি যদি সেইদিন পাহাড় থেকে পরে যেতাম তাহলে আপনি কি করতেন ??” শান সোহার দিকে কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মজার স্বরে বলে
” কি আর করতাম আরেকটা বিয়ে করে নিতাম।” সোহা চোখ মুখ কিছুটা শক্ত করে বলে
” আপনি আমার সাথে ফাজলামো করছেন ?? আমি কি মজা করছি নাকি আপনার সাথে ??” শান ভ্রু কুঁচকে নেয় সোহার কথা বলার ধরণ দেখে। শান জিজ্ঞেসু স্বরে বলে
” কি হয়েছে তোমার এভাবে কথা বলছো কেনো ??” সোহা গম্ভীর গলায় বলে
” জানিনা। আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।”
শান কিছুটা অবাক হলো সোহার এমন ব্যবহার দেখে। সোহা এমন করছে কেনো বুঝতে পারছে না। কিন্তু কথা কাটানোর জন্য বলে
” সেসব পরে জানা যাবে চলো এখন। নাহলে দেড়ি হয়ে যাবে আমাদের।” শান কথা এড়িয়ে যাচ্ছে সোহা সেটা বুঝতে পারে তবে কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে যায়।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে