তুমিময় ভালোবাসা পর্ব-২৬+২৭

0
1766

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ২৬
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা

সোহা, শান, ইতি, ইমন সবাই ভেতরে এসে পরিবেশটা দেখে নিলো। মনোমুগ্ধকর পরিবেশের মধ্যে এই স্থানটি আদর্শ স্থানগুলোর মধ্যে একটি।
বৌদ্ধবিহার ঘুরাঘুরি শেষ করে সবাই আবার নীলগিরি যাওয়ার উদ্দেশ্যে সবাই বের হয়। তবে তাদের মধ্যে কয়েকজন খুবই ক্লান্ত তাই রিসোর্টে চলে যাওয়ার প্ল্যান করছে। সোহা ওদের কথা শুনে খুবই বিরক্তবোধ করলো। এতো সুন্দর প্রকৃতির দৃশ্য দেখেও কেউ ক্লান্ত কি করে হতে পারে সেটা সোহার মাথায় ঢুকলো না। সোহা মনে আনন্দে শানের সাথে হাটছে।
ইমন ইতিকে ক্ষণে ক্ষণে বিরক্ত করে যাচ্ছে আর ইতি রেগে বোম হয়ে ঘুরছে। ইমন ইতির হাতের আঙুল গুলো হালকা ভাবে ধরে হাটতে হাটতে বলে
” এই হাত আর হাতের মালিক কখনো তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে না।” ইতি ইমনের কথা শুনতে পেয়ে ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়। রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠে
” আপনি খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছেন কিন্তু !! আপনাকে আমার হাত ধরার অধিকার কে দিয়েছে ??” ইমন ইতির রাগকে পাত্তা না দিয়ে শান্ত চোখে ইতির দিকে তাকিয়ে বলে
” অধিকার নেই তবে তুমি বললে সেই অধিকার এই সম্পর্ক তৈরি করতে আমার বেশি সময় লাগবে না।” ইতি অবাক হয়ে ইমনের দিকে তাকায়। ইতি ভ্রু কুচকে বলে
” কি বলতে চাইছেন আপনি ??” ইমন হালকা হেসে বলে
” কি বলতে চাইছি সেটা তুমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছো। তুমি অন্তত সোহা ভাবির মতো সেজো না। তোমার মুখে বেমানান লাগে।” ইতি একটা শুকনো ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নেয় ইমনের দিক থেকে। ইমন তা দেখে মৃদু হাসি দেয়।
কিছুটা সামনে থেকে সোহার চিৎকার ভেসে আসতেই ইতি একবার সেদিকে তাকিয়ে আবার আড়চোখে ইমনকে দেখে ইমনের পাশ কাটিয়ে সোহার কাছে যায়। ইমনও ইতির পেছন পেছন তাদের কাছে এগিয়ে আসে।
সোহা বেখেয়ালি ভাবে হাটতে গিয়ে হোচট খেয়ে কিছুটা ব্যাথা পেয়েছে তাই চিৎকার দিয়ে বসে পড়েছে। শান সোহাকে বসিয়ে দিয়ে পা চেক করছে।
ইতি সোহার কাছে এসে বলে
” কি হয়েছে চিৎকার করলি যে হঠাৎ ??” সোহা কাঁদোকাঁদো হয়ে নাক টানতে থাকে। শান সোহার পা চেক করতে করতে বিরক্তস্বরে বলে
” তোমাকে কি করে ভালো করতে পারবো আমাকে বলবে একটু ?? এইভাবে বেখেয়ালি ভাবে চলে পায়ের বারোটা তো বাজিয়ে দিয়েছো এখন কি হবে ??” সোহা আড়ষ্ট হয়ে মাথা নিচু করে বলে উঠে
” আমি চারপাশ দেখছিলাম তাই খেয়াল করিনি।” ইমন চিন্তিত হয়ে বলে
” সোহা ভাবির তো পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তাহলে কি নীলগিরি যাওয়া ক্যান্সেল করে দেবো ??”
” আমাদের জন্য তোমরা কেনো যাওয়া ক্যান্সেল করবে ?? তুমি আর ইতি চলে যাও আমি স্যারের সঙ্গে কথা বলে আমাদের যাওয়া ক্যান্সেল করছি।” ইমন মাথা নেড়ে না বুঝিয়ে বলে
” না। আপনারা না গেলে আমি যাচ্ছি না। এখানে আসার পর থেকে আপনাদের সাথেই ছিলাম এখন স্বার্থপরের মতো আপনাদের ছেড়ে চলে যাবো নাকি ?? আর ইতিও সোহা ভাবিকে ছাড়া একা যাবে না। তার চেয়ে না যাওয়ায় ভালো আমি স্যারকে বলে আসছি আপনি ভাবিকে নিয়ে গাড়িতে আসুন।” শান একটা নিশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে ঠিকাছে বোঝায়। ইমন জোড় করে ইতিকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। শান আবার নিচু হয়ে সোহার পায়ে হাত দিয়ে দেখতে থাকে। সোহার পায়ের পাতার অনেকটুকু কেটে গিয়েছে ব্লিডিংও বাড়ছে। শান অস্থির গলায় বলে
” কি হলো এটা !! এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। ব্লিডিং কমাবো কি করে ??” সোহা ঠোঁট কামড়ে ধরে শানের কথায়। পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হলেও সোহা শানকে বলছে না। শানকে বললে হয়তো আরো অস্থির হয়ে পরবে তাই। শান মাথা উঁচু করে সোহার দিকে তাকিয়ে কাতর গলায় বলে
” ব্যাথা করছে পায়ে তোমার ??” সোহা মাথা নেড়ে না দেখিয়ে বলে
” বলছি আমি গাড়ি পর্যন্ত হাটতে পারবো। আপনি শুধু আমাকে একটু ধরলেই হবে।” শান এবার রেগে একটা রামধমক দিয়ে বসে সোহাকে। সোহা লাফিয়ে উঠে শানের ধমক শুনে। শান দাড়িয়ে সোহার হাত ধরে রাগি গলায় বলে
” খুব বেশি সাহস দেখাচ্ছো তাই না ?? তোমাকে বলেছি আমি হাটতে ??” সোহা মাথা নিচু করে না করে।
” তাহলে এতো কথা বলছো কেনো ?? তুমি একদম চুপ করে থাকো আর আমি যা করবো তা দেখে চুপচাপ থাকবে একটা কথা বললেই ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেবো।” সোহা মুখে হাত চেপে ধরে মাথা নাড়ায়। শান দুই পা এগিয়ে এসে হঠাৎ করে সোহাকে কোলে তুলে নেয়। সোহা ভয়ে চিৎকার করে উঠতেই শান চোখ রাঙিয়ে তাকায়। সোহা শক্ত করে শানের গলায় জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয় শানের তাকানো দেখে। শান কথা না বলে সোহাকে কোলে নিয়ে হাটতে থাকে।
চাঁন্দের গাড়ির কাছে এসে সেগুলোর মধ্যে একটা গাড়িতে সোহাকে বসিয়ে দেয়। স্যারদের কাছ থেকে একটা ফার্স্টএইড বক্স কালেক্ট করে আপাতত সোহার পায়ের ব্লিডিং বন্ধ করে দেয়।
শান সোহার পায়ের দিকে তাকিয়ে আবার সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” তোমার খুব ব্যাথা করছে তাই না ??” সোহা মাথা নেড়ে বলে
” নাতো ব্যাথা করবে কেনো একটুই তো ব্যাথা পেয়েছি। আমার থেকে আপনার তো আরো বেশি কষ্ট হয়েছে। এতোদূড় থেকে কোলে করে নিয়ে আসতে হয়েছে।” শান মৃদু হাসি বলে
” তোমাকে কোলে করে নিয়ে আসায় আমার কোনো কষ্ট হয়নি। কারণ তুমি তো একটা বাশের মতো চিকন।” বলে শব্দ করে হেসে দেয় শান। সোহা কিড়মিড় করে তাকায় শানের দিকে। শান হাসতে হাসতে দেখতে পেলো ইমন, ইতি হাসি মুখে তাদের দিকে আসছে। শান ভ্রু কুচকে তাকায় সেদিকে। ইমন আর ইতি কাছে আসতেই শান বলে উঠে
” হাসছো কেনো দুজন ??” ইমন বড় একটা হাস দিয়ে বলে
” স্যাররা আজকে আর কোথাও যাবে না। কয়েকজন স্যারও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে তাই বলছে আমরা তো আরো কয়েকদিন আছি তাই ধীরেধীরে সব দেখা যাবে। আজকে রিসোর্টে রিটার্ন করছি সবাই।” সোহা বড় করে একটা মিষ্টি হাসি দেয়। ইতি সোহাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলে
” আমাদের সোহা মনি যেতে পারছে না তো তাই আজকে সবার যাওয়া ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে।” শান চোখ মুখ শক্ত করে বলে
” হুহ !! কালকেও যাওয়া হবে না এই ম্যাডামের। পায়ের কি অবস্থা করেছে !!” সোহা বায়না স্বরে বলে
” এহ !! আমি কালকে আসবোই।” শান গম্ভীর চেহারা বানিয়ে বলে
” দেখা যাবে।”
কিছুক্ষণ পর একে একে সবাই এসে গাড়িতে উঠে পরে। গাড়ি আবার রিসোর্ট এর দিকে ঘুরানো হয়।

সোহা খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে আর শান সোহার পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। সেখানে সোহা ব্যাথার কথা না বললেও রিসোর্টে আসলে ব্যাথা বাড়তেই সোহা ব্যাথায় কান্নাকাটি শুরু করেছে। শান সোহাকে কিছুক্ষণ বকাঝকা করেছে ব্যাথার কথা না বলায়। এখন পাগলের মতো অস্থির হয়ে গিয়েছে। শান পারছে না শুধু সোহার ব্যাথা কমিয়ে দিতে।
সোহা একমনে শানের দিকে তাকিয়ে আছে শানকে নিজের প্রতি অস্থির হতে দেখে সোহার হঠাৎ কেনো জানি একটা ভালোলাগা কাজ করছে। শান ব্যান্ডেজ শেষ করে সোহার পা উঁচু করে ধরে ব্যান্ডেজের উপর চুমু বসিয়ে দেয়। সোহার শরীর কেঁপে উঠতেই সোহা বিছানার চাদর খামছে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাতেই সামনে শানের মুখশ্রী ভেসে উঠে। শান সোহার মুখের সামনে চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলে
” এখন ব্যাথা কমেছে ??” শানের এখনের প্রত্যেকটা ছোঁয়ার সোহা অন্যকিছু খুঁজে পেলো যেটা এতোদিন পেতো না। সোহা আবার কাপঁতে কাপঁতে কোনোরকমে মাথা নেড়ে হ্যা বলে। শান সরু দৃষ্টিতে তাকায় সোহার দিকে। আলতোভাবে দুই ঠোঁট চেপে নিশ্বাস ফেলে বলে
” আমি কাছে আসলেই তোমার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায় কেনো ??” সোহা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
” জ-জানি না তো আমি। ক-কিন্তু আমার কেমন জেনো লাগছে।” শান ঠোঁট চেপে মৃদু হাসে।
আজকের সকালটাও এক অনন্যময় রূপে শুরু হয়েছে। শান চোখ খুলে তাকাতেই সোহার মুখটা দেখতে পায়। ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখটা দেখে শানের চোখ জুড়িয়ে গেলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ চোখ যায় নিজের হাতের দিকে। সোহার কোমড় জড়িয়ে খুব কাছাকাছি ঘুমিয়ে আছে। শান অবাক হয়ে সোহার দিকে তাকালো। ভাবতে থাকে প্রতিদিন কি তাহলে এভাবে ঘুমায় নাকি ?? সোহার আগে ঘুম থেকে উঠে না শান তাই নিজের অবস্থানও জানতে পারে না। ভাবতে ভাবতে শান উঠে গেলো।
আজকে নীলগিরি যাওয়ার উদ্দেশ্যে সবাই তৈরি হতে থাকে কিন্তু শান তার কথায় অনড় সোহাকে এই পা নিয়ে কোনোভাবেই সেখানে যেতে দেবে না। সবাই এই পা নিয়ে সোহাকে যেতে নিষেধ করছে কিন্তু সোহার বায়নায় সবাই বিরক্ত হয়ে যায়। সোহা ঘুরতে যাবেই যাবে আর শান যেতে দেবে না। অনেক ঝামেলার পর সোহাকে নিয়ে শান যেতে রাজি হয়। সবাই তৈরি হয়ে চান্দের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় নীলগিরির উদ্দেশ্যে।

নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র বাংলাদেশের বান্দরবান জেলায় তেংপ্লং চুট পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চে অবস্থানের কারণে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র সর্বদা মেঘমণ্ডিত আর এটাই এই পর্যটন কেন্দ্রের বিশেষ আকর্ষণ। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে নীলগিরি ধীরে ধীরে দেশব্যাপী মানুষের কাছে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। এই পুরো পর্যটন কেন্দ্রটিই আদিবাসীদের ভূমি দখল করে প্রতিষ্ঠা করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং তারাই এর পরিচালনা করে থাকেন। এই পর্যটন কেন্দ্রটি বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে কাফ্রুপাড়াসংলগ্ন পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত। বান্দরবানের আলীকদম থেকে থানচীগামী রাস্তা ধরে পাহাড়ী পথে নীলগিরি পৌঁছানো যায়।
নীলগিরি যায়গাটা দেখেও সোহার মনে জায়গা করে নিলো।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ২৭
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা

নীলগিরি যায়গাটা দেখেও সোহার মনে জায়গা করে নিলো। এদিকে শান একনাগাড়ে সোহাকে এডভাইস দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সোহার কোনোদিকে খেয়াল নেই। সোহা চারদিক দেখতে ব্যস্ত। শান সোহার হাত টান দেয়।সোহা ঘাড় ঘুরিয়ে শানের দিকে তাকায়। শান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে
” বুঝেছো কি বলেছি আমি ??” সোহা শানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে
” কি বলেছেন ??” শান অবাক হয়ে যায় সোহার কথায়। এতোক্ষণ ধরে কতো কি বললো আর সোহা এখন জিজ্ঞেস করছে কি বলেছে !! শান দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” আমি এতোক্ষণ ধরে এত কথা বললাম আর তুমি একটা কথাও শোনোনি ??” সোহার মুখ চুপসে যায় শানের কথা শুনে। পাশ থেকে ইতি সোহার প্রতি বিরক্ত প্রকাশ করে বলে উঠে
” শুনবে কি করে ?? সোহা তো এসেছেই ঘুরতে। ওর আপনার কথা শোনার সময় কি তার কাছে আছে নাকি ??” শান গম্ভীর ভাবে সোহার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস গলায় বলে
” এখান থেকে বের হয়েই তোমাকে নিয়ে আমি রিসোর্টে যাবো। আলুটিলা কিভাবে যেতে পারো সেটা আমি দেখবো। এতোই ঘুরাঘুরিতে ব্যস্ত যে আমাকেই পাত্তা দিচ্ছো না। এমনি তো পায়ের এই অবস্থা নিয়েও ঘুরতে এসেছো আবার আমাকে পাত্তা দিচ্ছো না !!” সোহা ইনোসেন্ট ফেস করে বলে
” আপনি আমার উপর অত্যাচার করছেন ?? আমি বাড়িতে গিয়ে মামনি আর ভাইয়ার কাছে বিচার দেবো। চলেই তো যাবো, প্রথম বার সাজেকে ঘুরতে এসেছি সব জায়গা যদি ঘুরতেই না পারি তাহলে এসে লাভ কি আপনিই বলুন !!” শান শীতল চাহনি দিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে থাকে। সোহা মিষ্টি হাসি দিয়ে আবার তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে।
সোহার পায়ের অবস্থা বেশি ভালো না তবুও সোহা ঘুরতে এসেছে। একা তো কোনোভাবেই হাটতে পারছে না শানের সাহায্যে ধীরেসুস্থে হাটছে। অনেক্ষণ ঘুরাঘুরির পর সবাই সেখান থেকে বের হতে থাকে।
হাটতে হাটতে একসময় সোহা বেসামাল ভাবে হাত ছেড়ে দেয় শানের আর সামনে থাকা ব্যাক্তির সাথে ধাক্কা খায়। সোহা পরে যাওয়ার আগেই শান সোহার হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সোহা শানকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়। শান বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস ফেলে ভীতু গলায় বলে
” ঠিকাছো তুমি ??” সোহা সেভাবে থেকেই মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়। সোহার কথায় শান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
” what the hell is this ??” চিৎকার শুনেই শানরা সবাই সামনে তাকায়। হৃদয়কে দেখে শান, সোহা ইতি বুঝতে পারলো সোহা হৃদয়ের সাথেই ধাক্কা খেয়েছে। শান ইতিকে উদ্দেশ্য করে বলে
” ওকে ধরো !!” ইতি এসে সোহাকে ধরতেই শান হৃদয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হৃদয়কে উদ্দেশ্য করে নিচু স্বরে বলে
” sorry. হাত ছেড়ে দেওয়ায় এভাবে ধাক্কা খেয়েছে।” হৃদয় রেগে কিছু বলার আগেই পাশ থেকে রিমি চেঁচিয়ে বলে উঠে
” সরি বললেই কি সব ঠিক করা যায় নাকি ?? আজকে যদি হৃদয় এই পাহাড়ের রাস্তা থেকে পড়ে যেতো তাহলে হৃদয়কে ফিরিয়ে দিতে পারতেন ??” রিমির এমন কথায় শানের মাথা গরম হয়ে যায়। তবু শান নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলে
” পড়লে তো হৃদয় একা পড়তো না সোহাও পরে যেতো। দুজন যখন এখন ঠিকাছে তাহলে এসব কথা বলার মানে বুঝতে পারছি না আমি !!” হৃদয় রেগে বলে
” এতোদিন তো আমাদের কম জ্ঞান দেননি। এখন তো দেখি নিজের বউকেই সামলাতে পারছেন না !! প্রতিবন্ধী মেয়ে নাকি ?? ঠিক করে চলাফেরা করতে পারে না ?? এভাবে ধাক্কা খেয়ে অন্যদের প্রাণ না নিয়ে ঘরে বসে থাকলেই হয় !!” হৃদয়ের কথা শুনে শান এবার নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না হৃদয়ের কলার চেপে ধরে রেগে চেঁচিয়ে বলে
” হৃদয় !! একদম মুখ সামলে কথা বল !! তোর সাহস কি করে হয় সোহাকে নিয়ে এসব কথা বলার ??” বলে হৃদয়ের মুখ বরাবর একটা ঘুষি দিয়ে বসে। হৃদয় ব্যাথা পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে দুই পা পিছিয়ে যায় ঘুষি খেয়ে। নাক থেকে হাত সড়িয়ে সামনে এনে দেখে হাতে রক্ত লেগে আছে। রিমি আঁতকে হৃদয়ের সামনে এসে উঠে
” একি হৃদয়!! তোমার নাক থেকে রক্ত পড়ছে তো !! তাড়াতাড়ি চলো হসপিটালে যেতে হবে।”
হৃদয়ের পেছনে কয়েকজন স্টুডেন্ট ছিলো তারা ঝামেলা দেখে সামনে ছুটে গেলো। হৃদয় রেগে অগ্নিরূপ ধারণ করে শানের দিকে এগিয়ে যেতেই। মাঝে ইমন এসে দাঁড়ায়। হৃদয়ের বুকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে
” এখান থেকে যাও প্লিজ !! শুধু শুধু ঝামেলা করছো কেনো ?? তোমাকে তো সরি বলে ছিলোই !! তুমি খারাপ কথা বলে ঝামেলা বারিয়ে দিচ্ছো।” হৃদয় ইমনকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে বলে
” একদম আমার ব্যাপার কথা বলবে না। জুনিয়ার জুনিয়ারের মতো থাকো। বেয়াদব ছেলে!!” হৃদয় তার কথা শেষ করতেই তার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় পরে। হৃদয় দাঁতেদাঁত চেপে চেঁচিয়ে বলে
” কার এতোবড় সাহস ?? আমাকে থাপ্পড়…” আর কিছু বলার আগেই পেছনে তাকিয়ে ব্যাক্তিটাকে দেখে হৃদয়ের মুখ চুপসে যায়। হৃদয় একটা ঢোক গিলে মাথা নামিয়ে নেয়। প্রিন্সিপ্যাল স্যার রেগে আগুন হয়ে আছে। প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে দেখে শান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সোহার কাছে এগিয়ে যায়। সোহার কাছে গিয়ে দেখে সোহা ইতিকে জড়িয়ে ধরে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।শান সোহাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে অবাক হয়ে বলে
” তুমি কাঁদছো কেনো ??” সোহা কিছু না বলে কাঁদতে থাকে। ইতি চিন্তিত হয়ে বলে
” ভাইয়া অনেক্ষণ ধরে কাঁদছে। কি বলছেও না।” শান সোহাকে কিছু বলার আগেই প্রিন্সিপ্যাল স্যার শান আর সোহার সামনে এসে নিচু স্বরে বলে
” শান !! আমি খুবই দুঃখিত এসবের জন্য। হৃদয় এতো কিছু করবে আমি জানতাম না।” শান শান্ত গলায় বলে
” না স্যার আপনাকে এসবের জন্য সরি বলার দরকার নেই। আজকের ঘটনাটায় আমাদেরও দোষ রয়েছে আমি তারজন্য নতজানু কিন্তু হৃদয় বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে তাই একটু ঝামেলা হয়েছে। আমার একটাই রিকোয়েস্ট আপনি শুধু হৃদয়কে আমাদের থেকে দূড়ে থাকতে বলবেন।” প্রিন্সিপ্যাল স্যার নিশ্বাস ফেলে হৃদয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রেগে বলতে থাকে
” তোমার জন্য আমাদের ভার্সিটির মান-সম্মান টিকে থাকার মতো অবস্থাও নেই। তোমার উপর আজও কোনো স্টেপ নেইনি আমি শুধুমাত্র তোমার বাবার কথা ভেবে। তুমি কি এখনও শুধরাবে না ?? আজকের ঝামেলাটা তোমার জন্যই হয়েছে। সোহার পায়ে ইনজুরি হয়েছে তাই তোমার সঙ্গে অসাবধানতায় ধাক্কা খেয়েছে। তুমি তাকে প্রতিবন্ধী বলো কোন সাহসে ??” স্যারের চিৎকার শুনে হৃদয় মাথা নিচু করেই দাঁত কিড়মিড় করতে থাকে। স্যার হুমকি স্বরে বলে উঠে
” এরপর যদি এমন কিছু করে থাকো তাহলে আমি ভার্সিটি কর্তিপক্ষের সাথে কথা বলে তোমার প্রতি স্টেপ নিত্ব বাধ্য হবো !! Get out from here !!” হৃদয় কথা না বাড়িয়ে একবার সোহার আর শানের দিকে তাকিয়ে হনহন পায়ে রিমিকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। প্রিন্সিপ্যাল স্যার আবারও শান আর ইমনের কাছে ক্ষমা চেয়ে চলে যায়।
স্যার চলে যেতেই শান সোহার উপর মনোযোগ দেয়। সোহা এখনও কেঁদে যাচ্ছে কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। শান বারবার সোহার চোখ মুছিয়ে দিচ্ছে কিন্তু পানি পড়া থামছে না। ইতি অসহায়ভাবে ইমনের দিকে তাকায়। ইমন পলক ফেলে আশ্বস্ত করে। সোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” ভাবি, সব ঠিক হয়ে গিয়েছে তো !! এখন আর কান্না করবেন না প্লিজ !!”
” হ্যা দেখো সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। তুমি কাঁদছো কেনো ?? বলোতো !! আমরা তো এখন গুহায় ঘুরতে যাবো। কান্না বন্ধ না করলে কি করে যাবো বলো !!” সোহা হিচকি তুলে কাদঁতে কাঁদতে বলে
” ক-কোথাও যাবোহ না আমি। আ-আমি রিসোর্টে যাবো।” শান অবাক হয়ে বলে
” কেনো ?? কি হয়েছে বলবে তো আমাকে ??” সোহা কাঁদতে কাঁদতে বলে
” কিছু না আমি রিসোর্টে যাবো !! আপনি না নিয়ে গেলে আমি একাই চলে যাবো।” শান তপ্ত নিশ্বাস ফেলে ইতি আর ইমনের দিকে তাকায়। ইতি ইমন একসঙ্গে বলে উঠে
” আমরাও যাবো না !!” দুজন একে অপরের দিকে তাকায়। শান সোহাকে কিছুটা শান্ত করে রিসোর্টের জন্য গাড়িতে উঠে বসে।

বারান্দায় পা ঝুলিয়ে সোহা শানের কাধে মাথা রেখে বসে আছে। আসার পর থেকে সোহা চুপচাপ হয়ে আছে কোনো কথা বলছে না। শান সোহাকে এখানে জোর করে নিয়ে এসেছে। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শীতল কন্ঠে বলে
” সোহা !! কি হয়েছে ?? তোমার হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো যে ??” সোহা কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে রাতের সাজেক দেখতে থাকে। রাতের সাজেকটা একদমই অন্যরকম। সকালের পর রোদের আভাস দেখা দিলেই সন্ধ্যার পর একদম ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া পরে যায়। সোহাকে চুপ দেখে শান এবার সোহার মাথা উঠিয়ে সোহাকে সামনা সামনা বসিয়ে গম্ভীর গলায় বলে
” কি হলো কথা বলছো না কেনো ??” সোহা বাইরের দিকে দৃষ্টি সড়িয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে
” আমাকে প্রতিবন্ধী বলেছিলো।” শান কিছুটা অবাক হয় সোহার কথায়।পরে চোয়াল শক্ত করে বলে
” তুমি হৃদয়ের কথায় কান দাও কেনো ?? তুমি কোন দিক দিয়ে প্রতিবন্ধী হ্যা ?? হৃদয়ের কথায় তুমি কি নিজেকে প্রতিবন্ধী বলে মনে করছো নাকি ??” সোহা চমকে শানের দিকে তাকায়। শান রেগে রয়েছে সম্ভবত সোহার কথা শুনেই রেগে গিয়েছে। সোহা নিজেকে নিভিয়ে নিলো। শান্ত গলায় বলে
” আমি প্রতিবন্ধী না। বাড়ির ছোট মেয়ে বলে সবাই আমাকে একটু বেশি ভালোবাসা দিয়েছে তাই পৃথিবীর বাস্তবতা নিয়ে আমি কল্পনাই করিনি। বাড়ির সবাই আমাকে বাচ্চা বলে কিন্তু আমি তো সত্যি বাচ্চা না। বয়স, শারীরিক, মানসিক সব দিক থেকেই আমি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত। আমি নিজেকে বাচ্চাদের মধ্যে একজন ভাবতাম। কিন্তু আমি বাচ্চা না আমি একজন ১৯ বছরের যুবতী আমার সঙ্গে এসব বাচ্চামো যায় না। হৃদয়ের কথায় কিছুটা সত্য তো আছেই। কতো বছর আর এভাবে বাচ্চামো থাকবে আমার মধ্যে ?? বেখেয়ালি ভাবে চলে নিজের হাত-পা ভেঙে অন্যের উপর নির্ভর করে কেনো চলবো আমি ?? আমার তো নিজের খেয়াল নিজেরই রাখা উচিত। আর দুইমাস হয়েছে আমার বিয়ে হয়েছে এখন নিজের সাথে সাথে স্বামীর এবং পরিবারের সব খেয়াল আমার রাখা উচিত সেখানে আপনারা আমার খেয়াল রাখেন। আমি পুরোটাই অন্যের উপর নির্ভরশীল। সেইদিক দিয়ে মনে হচ্ছে আমি সত্যি প্রতিবন্ধী। আমার নিজেকে বদলানো উচিত।”
সোহা কথা শেষ করতেই শান সোহার মুখ চেপে ধরে। সোহা ব্যাথায় আহ করে হতবাক হয়ে শানের দিকে তাকায়। শানের চোখ জোড়া দেখে সোহা আঁতকে উঠে। শানের চোখ দেখে মনে হচ্ছে চোখ থেকে লাভা বের হচ্ছে। শান সোহার চুল আকড়ে ধরে শক্ত হাতে মুখ চেপে ধরে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” তোর সাহস কি করে হয় নিজেকে প্রতিবন্ধী বলার ?? তুই ওই হৃদয়ের কথায় নিজেকে কেনো বদলাবি ?? কেনো বদলাবি?? বল !!” শানের চিৎকার শুনে সোহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি বের হতে থাকে। সোহার চোখের পানি দেখে শান সোহাকে ছেড়ে দেয়। ছেড়ে দিতেই সোহা গালের হাত দিয়ে চোখ মুছে নেয়। শান সোহার হাত টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সোহা ভীতু ভাবে তাকাতেই শান সোহার দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলে
” আর কোনোদিন নিজেকে নিয়ে এসব বললে তোমাকে মেরে মাটিতে পুতে রাখবো। আমার বউকে নিয়ে সমালোচনা করার সাহস কোথা থেকে আসে তোমার ?? আমার বউকে নিয়ে আমি কথা বলবো আর কেউ বলবে না বুঝেছো ??” সোহা ভয়ে কাপঁতে কাপঁতে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। শান হঠাৎ সোহাকে জিড়িয়ে ধরে সোহা এবার বিস্মিত হয়ে যায়। শান সোহার দুই গালে এলোপাথাড়ি চুমু দিতে থাকে। সোহা বিস্ময়ের দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে পরে। শান একনাগাড়ে অনেক গুলো চুমু দিয়ে সোহার গলায় মুখ গুঁজে দেয়। জড়ানো গলায় বলে
” তুমি যে রকম সেরকম ভাবেই আমি তোমাকে চাই। তোমাকে এভাবেই সারাজীবন আমি আগলে রাখতে চাই। তুমি আমার উপর নির্ভরশীল না আমি তোমার উপর নির্ভরশীল। তুমি না থাকলে
আমার এই আমিটাই থাকবে না। হৃদয়ের কথায় বা অন্যের কথায় তুমি নিজেকে বদলে ফেললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বুঝেছো ??” শানের শীতল কন্ঠে বলা শেষের কথা শুনে সোহার গায়ে কাঁপুনি উঠে গেলো। সোহা ঢোক গিলে মাথা নাড়ায়। শান বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে সোহার কপালে চুমু একে দিয়ে সোহাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে মনে মনে
” তোমার যেরকম সেই রূপকেই আমি ভালোবাসি। কারোর জন্য তুমি বদলাবে না। তুমি আমার মনের মতো গড়ে উঠা সেই #তুমিময়_ভালোবাসা। যার জন্য সবাই যুগের পর যুগ অপেক্ষা করে থাকে। তোমাকে আমি কোনোভাবেই হারাতে পারবো না।”
ইমন ইতির কটেজের রুমে পকেটে হাত গুঁজে আরামে ঘুরে ঘুরে সব দেখছে। আর ইতি তার বেডের এক কোণায় গুটি শুটি মেরে বসে আছে। ইতি বারবার ইমনের দিকে তাকাচ্ছে ইমনের মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছে না সে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে