#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ২২
#লেখিকা :মার্জিয়া রহমান হিমা
শান কোট খুলে রাখাত আগেই সোহা খুশিতে শানের হাত চেপে ধরে বলতে শুরু করে
” শান ভাইয়া !! ভার্সিটি থেকে সাজেক যাচ্ছে। তিনদিন পর ভার্সিটি ট্যুর। আপনার ইচ্ছে পূরণ হয়ে গেলো।” শান মনকারা একটা হাসি দেয়।
সোহা হাসি মুখে শানের দিকে তাকিয়ে জিভ কেটে শানের হাত ছেড়ে দিয়ে বলে
” সরি, সরি আপনি আসতে না আসতেই আমি আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পরেছি। ফ্রেশ হতেও দেইনি। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি নিচে যাচ্ছি।” সোহা চলে যেতে নিলেই শান পেছন থেকে সোহার হাত টেনে ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। সোহা অবাক চোখে তাকাতেই শান সোহার কোমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ধীর গলায় বলে
” তোমার জন্য সব অবস্থাতে থাকতে রাজি। দরকার হলে মৃত অবস্থাতেও তোমার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করবো।” সোহা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলে
” মৃত মানে ?? আম্মু বলেছে এসব কথা বলতে নেই। যাই হোক আপনি আমাকে এভাবে চেপে ধরেছেন কেনো ?? আমাকে ছাড়ুন আর নিজে ফ্রেশ হয়ে নিন আমাদের কতো প্ল্যান বাকি !!” বলে সোহা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। শান হতবাক চাহনিতে তাকিয়ে থাকে সেইদিকে। কিছুক্ষণ পর অসহায় ভাবে বলে
” এই মেয়েটা কি ?? ওর কি আমার কাছে আসলে কোনো অনুভূতি সৃষ্টি হয় না ?? কেমন রোবটের মতো সোজা হয়ে থাকে আর মুভিতে দেখতাম জামাই কাছে আসলেই ওদের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়। হাহ !!” শান দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ওয়াসরুমে ঢুকে পরে।
সাজেক যাওয়া তিনদিন পরে হলেও সোহা এখন থেকে প্ল্যানিং আর প্যাকিং শুরু করে দিয়েছে। নিলা, সিমি, শাহানাজ বেগমকে পাশে নিয়ে সোহা প্যাকিং করে যাচ্ছে আর কি কি করবে সেখানে গিয়ে সেটাও প্ল্যান করছে। প্যাকিং করতে করতে একটা শাড়ি হাতে নিয়ে ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে দেখতে বলে
” আচ্ছা শাড়ি কি নেবো ??” শাহানাজ বেগম সোহার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে কড়া গলায় বলে
” না একদম দরকার নেই এসব। একে তো শাড়ি পড়তে পারিস না তারপর সেখানে উঁচুনিচু পাহাড়ে ঘুরবে তখন শাড়ি পরে সামলাতে পারবে না আর কোন বিপদ হবে !! না, না এসবের দরকার নেই।” সিমি মিটমিট করে হেসে বলে
” আরে মা দিয়ে দিন। সোহা তো আর একা যাচ্ছে না। শান যাচ্ছেই তো ওর সাথে আর শান এখন আগের থেকে প্রচুর কেয়ারফুল হয়ে গিয়েছে সোহার প্রতি। শান ঠিক সোহার খেয়াল রাখতে পারবে। তাই না শান ??” শান ল্যাপটপে কাজ করতে করতে আড়চোখে সোহাদের দিকে তাকায়। সিমি যে তাকে লেগফুল করছে সেটা শানের বুঝতে বেশি সময় লাগে না। শান গম্ভীর গলায় বলে
” অবশ্যই !! আমার বউ এর খেয়াল তো আমাকেই রাখতে হবে।” শানের কথা শুনে সবাই জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে। সোহাও মিটমিট করে হাসতে থাকে। শান মাথাটা কিছুটা ঝুঁকিয়ে নেয়। নিলা শাড়িটা লাগেজে ঢুকিয়ে রেখে বলে
” মা চিন্তা করবেন না শান তো আছেই সোহার প্রটেকশন এর জন্য।” সোহা চিন্তিত হয়ে বলে
” কিন্তু আমি তো ভালো করে শাড়ি পড়তে পারি না।” নিলা হেসে বলে
” তো কি হয়েছে ?? শান আছে না !! শান এটাও করে দেবে।” বলে সবাই শব্দ করে হেসে দেয়। শান থতমত খেয়ে মাথা তুলে তাকায়।সবাই সুযোগ পেয়ে যে ওকে পচানি দিচ্ছে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে শান। সোহা আর নাইসা একসঙ্গে খিলখিল করে হেসে দেয়। সোহা হাসতে হাসতে বলে
” আরে ছেলে মানুষ কি শাড়ি পরাতে পারে নাকি ?? শাম ভাইয়া কিভাবে শাড়ি পড়াবে ??” শাহানাজ বেগম মুখ চেপে হাসতে হাসতে বলে
” বিয়ের পর বউ দের জন্য সবই শিখে নেয় ছেলেরা। এটাও পারবে শান।” সোহা আরো জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে। শান অসহায় গলায় বলে
” মা তুমিও !!” শানের কথা শুনে শাহানাজ বেগম গা দুলিয়ে জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে। শান মুখ ফুলিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। সবাই হাসতে হাসতে তাদের কাজ করতে থাকে।
স্টাডি রুমে বসে বসে শান তার অফিসের সব কাজ শেষ করে নেয়। কাজ শেষ করে শান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে কাটায় কাটায় রাত বারোটা চল্লিশ বাজে। শান অবাক হয়ে যায়। এতো রাত হয়ে গিয়েছে সেটা খেয়ালই করেনি শান। শান তাড়াহুড়ো করে স্টাডি রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
রুমে এসে দেখে রুমের লাইট অন করাই রয়েছে। সোহা অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে আছে। হয়তো অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গিয়েছে। শান দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে সোহার কাছে আসার জন্য পা বাড়াতেই খেয়াল হয় সোহাকে দেখে মনে হচ্ছিলো হালকা ছটফট করছে। শান চটজলদি লাইট অন করে সোহার দিকে তাকায়। সোহা সত্যি কেমন যেনো ছটফট করছে আর কপা, গলা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। শান দ্রুত সোহার পাশে গিয়ে বসে। সোহার হাত ধরে চিন্তিত গলায় ডাকতে থাকে
” সোহা !! সোহা কি হয়েছে তোমার ?? সোহা এমন করছো কেনো ??” শানের কথার মাঝে হুট করে সোহা লাফিয়ে উঠে বসে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে। শান ভয় পেয়ে সোহার কাধে হাত রাখে। সোহা একবার শানের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ শানকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। শান বিস্মিত হয়ে যায় সোহাকে কাঁদতে দেখে। শান সোহাকে সোজা করে বসাতে চাইলে সোহা আরো শক্ত করে শানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। শান সোহার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
” কি হয়েছে সোহা ?? কাঁদছো কেনো তুমি ??” সোহা কিছু না বলে একনাগাড়ে কাঁদতে থাকে। শান কিছু জিজ্ঞেস না করে সোহাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সোহা শান্ত হলে শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
” কি হয়েছে সোহা ?? কাঁদছিলে কেনো ??” সোহা হিচকি দিতে দিতে বলে
” আমি দেখেছি পাহাড়ের উপর থেকে কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে আমি অনেক চিৎকার করছিলাম কিন্তু কেউ আমাকে বাঁচাতে পারেনি।” বলে আবার কেঁদে দেয়। শান একটা ঢোক গিলে সোহাকে শান্তনা দিয়ে বলে
” আচ্ছা ঠিকাছে এবার শান্ত হও। এসব স্বপ্ন দেখেছো। স্বপ্ন তো সত্যি হয় না। তুমি ঘুমাও।” সোহা মাথা নেড়ে ভাঙা গলায় বলে
” না আমি ঘুমাবো না আমি এভাবেই থাকবো। ঘুমালে আবার ওই স্বপ্নটা দেখবো আমি। আমার ভয় করছে।”
” ঠিকাছে তুমি আমার সাথে ঘুমাও। তবে একদম কাদঁবে না ঠিকাছে ??” সোহা বাচ্চাদের মতো মাথা নেড়ে সায় দেয়। শান সোহাকে সড়িয়ে দিতেই সোহা শানের শার্টের হাতা আকড়ে ধরে কাঁদোকাঁদো ভাবে তাকায়। শান বলে
” তুমি বসো আমি লাইট অফ করে আসছি।” সোহা হাত ছেড়ে দেয় শানের। শান সোহাকে কিছুটা পানি খাইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে সোহাকে নিয়ে বসে থাকে। সোহা শানের বুকে গুটিয়ে বসে থাকে। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। অনেক্ষণ পর সোহার ঘনঘন নিশ্বাস ফেলার শব্দ পেয়ে শান বুঝতে পারে সোহা ঘুমিয়ে পরেছে। শান সোহাকে বুকে নিয়ে সোজা হয়ে ঘুমিয়ে পরে।
সোহা আর শান চলে যাচ্ছে তাই আজকে সকাল থেকে বাড়ির সবার মন খারাপ। সোহা চলে গেলে বাড়িটা পুরো চুপচাপ হয়ে যাবে। সোহার ও মন খারাপ একা যাচ্ছে তাই আবার টমিকেও নিয়ে যেতে পারছে না। লাগেজ নিয়ে দুজন নিচে নেমে আসে। ইশান এগিয়ে এসে সোহার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মন মরা গলায় বলে
” নিজের খেয়াল রেখো আর পাহাড়ে উঠলে সাবধানে চলা ফেরা করবে।” সোহা কাঁদোকাঁদো গলায় বলে
” তোমরা চলো না ভাইয়া ??” সামির এগিয়ে এসে মন খারাপ করে বলে
” কিভাবে যাবো ?? তোমার আপুকে নিয়ে এই অবস্থায় যেতে পারবো না।” সোহা নিশ্বাস ফেলে নিলা, নাইসা, সিমি, শাহানাজ বেগম আর মুসফিক চৌধুরির থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে যায় শানের সাথে।
ভার্সিটিতে এসে সবাই তাদের বরাদ্দকৃত বাসে উঠে যায়। শান এখানে এসে মুখটা গম্ভীর করে নেয় হৃদয়, রিমিদের দেখে।
বাস ছেড়ে দিতেই সবার সাজেক ভ্রমণের পথ চলা শুরু হয়।
চলবে~ইনশাল্লাহ……..
#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব : ২৩
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
ভার্সিটিতে এসে সবাই তাদের বরাদ্দকৃত বাসে উঠে যায়। শান এখানে এসে মুখটা গম্ভীর করে নেয় হৃদয়, রিমিদের দেখে।
বাস ছেড়ে দিতেই সবার সাজেক ভ্রমণের পথ চলা শুরু হয়।
সোহার মন খারাপ থাকায় সোহা চুপ করেই অপর পাশের বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সোহাকে চুপ করে থাকতে দেখে শান বারবার সোহার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু সোহা একবারও শানের দিকে তাকায়নি।সোহাকে মন খারাপ দেখে শানের খুবই খারাপ লাগছে শান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে সোহার দিকে। কিছুক্ষণ পর শান বিরক্ত হয়ে সোহার নাম ধরে ডাক দেয়। সোহা শানের দিকে মাথা ঘুরিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। শান চোখ ছোট ছোট করে বলে
” আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে টাইম পাস করবো বাসে কিন্তু তুমি তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছো না।” সোহা হালকা হেসে বলে
” আমার সাথে কিভাবে টাইম পাস করবেন ??” শান এক ভ্রু উঁচু করে বলে
” এতোদিন বকবক করে মাথা খেয়ে নিতে আর এখন আমাকে জিজ্ঞেস করছো কিভাবে টাইম পাস করবেন ?? গল্প করবো এখন তোমার সাথে।” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” আমি বকবক করি ?? তো আপনি কি করেন না নাকি ??” শান মাথা নেড়ে বলে।
” উহু, কখনোই না। আমি তো তোমার মতো এতো কথা বলি না।” সোহা রেগে শানের চুল টেনে ধরে বলে
” আপনি বেশি কথা বলেন আমি না বুঝেছেন ??” শান চুলের হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বলে।
” আরে হ্যা হ্যা আমিই বেশি কথা বলি এবার ছাড়ো আমাকে। আমার চুল গুলো ছিড়ে যাবে তো !!” সোহা শানের চুল ছেড়ে দিয়ে আবার আগের মতো বসে পরে। শান মাথা ঘষতে ঘষতে বলে
” উফ !! আমাদের দেখলে কেউই বলবে না আমরা স্বামি-স্ত্রী।” সোহা ভেংচি কেটে বলে
” বলা লাগবে না, হুহ !!” শান আর কিছু বললো না। চুল ঘষে ঘষে আগে মাথা ঠান্ডা করে নেয়। কিছুক্ষণ পর সোহার সাথে গল্প করা শুরু করে। গল্প করার সাথে প্রাকৃতির দৃশ্য উপভোগ করতে থাকে। শান কথা বলতে বলতে অনেক্ষণ পর শান খেয়াল করে সোহা কথা বলছে না। শান ঘার ঘুরিয়ে সোহার দিকে তাকায়। সোহা সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। শান নিশ্চুপে হাতটা সোহার মাথার নিচে নিয়ে সোহার মাথাটা নিজের কাধে রাখে। বাসের হুরহুর বাতাসে সোহার ঠান্ডা লাগে তাই শান জানলার পাশের সিটে বসেছে।শান সোহাকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে নিজেও সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় ঘুমানোর আশায়।
ঘুম ঘুম চোখে সোহা চোখ খুলে তাকায়। আড়মোড়া ভাঙার জন্য নড়তে নিলেই সোহা নিজেকে শানের বাধনে আবদ্ধ দেখতে পায়। সোহা কিছুটা অবাক হয় শান এভাবে ধরে রাখায়। সোহা শানের দিকে তাকিয়ে দেখে শান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। বাস ঝাঁকানোর কারণে হয়তো শান এভাবে ধরে রেখেছে ভেবে সোহা শানের হাতটা ছাড়িয়ে শানের কোলে রেখে দেয় পরে সোহা বাসে চোখ বুলিয়ে দেখে বাস ড্রাইভার ছাড়া সবাই ঘুমে কাদা কাদা হয়ে আছে। সোহা হাই তুলে শানের দিকে তাকায়। বাসের সাথে সাথে শানের মাথাটাও দুলছে যেকোনো সময় টক্কর খাবে। সোহাও শানের মতো একই কাজ করে শানের মাথাটা নিজের কাধে এনে রাখে। সোহা শানের হাতটা টেনে দেখে প্রায় তিন ঘন্টা হয়ে গিয়েছে ওদের যাত্রার। সোহা মোবাইল অন করে নাইসাকে ভিডিও কল দিয়ে সবার সাথে কথা বলতে থাকে।
শান ঘুম থেকে উঠতেই দেখতে পায় সোহা পেটে হাত দিয়ে কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে সিটে বসে আছে। শান অবাক হয়ে বলে
” কি হয়েছে এভাবে বসে আছো কেনো ??” ব্যাথা পাওনি তো আবার ??” শান অস্থির হয়ে সোহার হাতটা টেনে ধরার আগেই সোহা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে উঠে
” আমার খিধে পেয়েছে খাবার দিন প্লিজ !!” শান চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলে
” আমি তো যখন এসেছিলাম তখন এদিকে কোনো স্টল ছিলো না। সামনে গিয়ে হয়তো পাবো একটু অপেক্ষা করো প্লিজ !!! সামনেই লাঞ্চ করার জন্য হোটেলে গাড়ি থামাবে।” সোহা কাঁদোকাঁদো হয়ে বসে থাকে। সোহা নিজেকে সংযত রাখার জন্য মোবাইল বের করে টিপতে থাকে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি থেমে যায়। শান হালকা মাথা বের করে বাইরে দেখে নেয়। একটা হোটেলের সামনে বাস থামিয়েছে এখানেই সম্ভবত ফ্রেশ হয়ে দুপুরের লাঞ্চ সারা হবে। সোহা মোবাইলের মধ্যে মগ্ন হয়ে আছে। শান সোহার হাত থেকে টান দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে নেয়। সোহা চমকে শানের দিকে তাকায়। শান কপাল কুচকে বলে
” এতোক্ষণ খিদের জন্য কান্না করে দিচ্ছিলে এখন হোটেলে এসে পরেছি আর তুমি ফোনে মগ্ন হয়ে আছো ??” সোহা লাফিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। বাসে চোখ বুলিয়ে দেখে ওরা দুইজন ছাড়া কেউ নেই বাসে। সোহা জিভ কেটে বলে
” সরি দেখিনি আমি। তাড়াতাড়ি চলুন, খিধে পেয়েছে আমার।” সোহা কথা শেষ করেই দৌড়ে বাস থেকে নেমে যায়। শান বাস থেকে নেমে পানির বোতল নিয়ে হাত,মুখ ধুয়ে নেয়। সোহাও ফ্রেশ হয়ে একটা টেবিলে গিয়ে বসে। শান খাবার অর্ডার দিতে চলে যায়। হঠাৎ সোহার পাশে কেউ এসে ধুপধাপ করে বসে পরে। সোহা ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা ইতি। ইতিকে দেখে সোহা রেগে লাল হয়ে যায়। রেগে বলে
” শয়তান তুই কোথা থেকে এসেছিস?? অসভ্য, বাদর !!” ইতি ইনোসেন্ট ফেস করে সোহার গাল টিপে বলে
” কি হয়েছে বাবু ?? এভাবে রেগে আছো কেনো ?? ” সোহা ঝাড়া দিয়ে ইতির হাত সড়িয়ে দিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে
” ইতির বাচ্চা !! আমি বাবু ?? তুই কি তাহলে !! আমাকে একা বাসে রেখে তুই কোন বাসে উঠেছিলি, হ্যা !! আমি পুরো বাসে খুঁজেও তোকে পাইনি কেনো ??” ইতি মিটমিট করে হাসতে হাসতে বলে
” আমি অন্য বাসে না গেলে কি তুই আর ভাইয়া একা একা সময় কাটাতে পারতি ?? আমি থাকলে তো তুই শুধু আমার সাথেই গল্প করতি ভাইয়াকে পাত্তাও দিতি না। আমি না থাকায় তুই ভাওয়ার সাথেই সময় কাটিয়েছিস।” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” শান ভাইয়ার সাথে তো বাসায় প্রতিদিনই সময় কাটাই ওনার সাথে আর আলাদা ভাবে টাইম পাস করার কি আছে ?? তুই থাকলে তিনজন একসাথে মজা করতাম। কিন্তু তুই গেলি তো গেলি আমাকে একবারও বলে গেলি না ?? আমি তো ভেবেছিলাম তুই আসিসনি।” ইতি বিরক্তি স্বরে বলে
” সেসব বাদ দিয়ে আগে বল তুই কি তোর অভ্যাস পাল্টাবি না ?? তুই ভাইয়াকে শান ভাইয়া ডাকিস কেনো ?? শান বলে ডাকতে পারিস না ?? তোর শান ভাইয়া ডাক শুনে এখানের অনেকেই মনে করবে শান ভাইয়া তোর ভাই !!” তখন শান আসে। ইতির কথা শুনতে পেয়ে চেয়ার টেনে বসতে বসতে হতাশ গলায় বলে
” ঠিক বলেছো শালিকা !! তোমার বান্ধবীকে একটু ভালো করে বোঝাও না !!” ইতি সোহার মাথায় গাট্টা মেরে বলে
” একে আর কি বোঝাবো ?? বাচ্চা মেয়ে একটা। স্বামীকে ভাইয়ের সমতুল্য মনে করে এখনও।”
সোহা রেগে মাথায় ঘষতে ঘষতে বলে
” ইতি !! তুই মারছিস কেনো আমাকে ?? আর, স্বামী আর ভাই তো একই কথা। দুজনই ছেলে এদের মধ্যে এতো পার্থক্য করার কি আছে ??”
ইতি আর শান একে অপরের দিকে তাকায়। ইতি দাঁতেদাঁত চেপে সোহার দিকে ঝুকে বিরবির করে বলে
” গাধী বিয়ের পরও স্বামী আর ভাইকে এক বলছিস ?? কেউ শুনলে তোকে পাগল মনে করে গণপিটুনি দিয়ে দেবে।” শান ঢোক গিলে বলে।
” থাক ইতি আর এই নিয়ে কথা না বাড়ানোই ভালো। তোমার বান্ধবীকে বোঝাতে গেলে আমরা শহিদ হয়ে যাবো। এর চেয়ে ভালো নিজেই একসময় বুঝে নেবে।” সোহা জোড়ে বলে উঠে
” না কথা যখন বলেছে তাহলে পুরোটা বলতে হবে। একদম কথা বন্ধ করবে না।” সোহার কথায় কয়েকজন সোহার দিকে তাকায়। শান দেখে সোহাকে হালকা ধমক স্বরে বলে
” এই মেয়ে চুপ !! দেখো সবাই কিভাবে তাকাচ্ছে!!” সোহা চারপাশে একবার তাকিয়ে নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে। খাবার আসতেই সোহা আর কথা না বারিয়ে চুপচাপ খেতে থাকে।
” আসসালামু ওয়ালাইকুন।” হঠাৎ সালাম শুনে সবাই মাথা তুলে উপরের দিকে তাকায়। অপরিচিত একটা ছেলেকে দেখে শান আর সোহা সালামের উত্তর দিয়ে ভ্রু কুচকে নেয়। ইতি বিরক্তিকর চেহারা করে নেয়। শান গম্ভীর চাহনি দিয়ে বলে
” কে আপনি ??” ছেলেটা একটা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে
” আমি ইমন এহসান। থার্ডইয়ার এর স্টুডেন্ট। আমি ভাগ্যবসত মিস ইতির পাশের সিটে বসেছি।
এখানের কারোর সাথেই সেইরকম ভাবে পূর্বপরিচিত নই। এই কয়েক ঘণ্টায় মিস ইতির সাথে পরিচিত হয়েছি তাই ভাবলাম ওনার সাথেই থাকি।” শান মুচকি হাসি দিয়ে বলে
” ভালো কাজ করেছেন। বসুন দাঁড়িয়ে আছেন কেনো ??” ইমন হাসি দিয়ে চেয়ার টেনে বসে পরে। শান কাউকে না বলে উঠে গিয়ে ইমনের জন্যও খাবার ওর্ডার দিয়ে আসে। এসে ইতিকে উদ্দেশ্য করে বলে
” ইতি !! ইমনের কথা আমাকে বললে না কেনো ?? This is nit fair !!” ইতি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলে
” আসলে আমার নিজেরই মনে ছিলো না আমি কারো সাথে পরিচিত হয়েছি।” বলে কটমট করে ইমনের দিকে তাকায়। ইমন ঠোঁট বাকিয়ে হেসে চোখ মেরে বসে। শান কিছু না দেখেও চুপচাপ দুজনের কাজ দেখলো। এটাও বুঝলো ইতি ইমনের প্রতি বিরক্ত আর ইমন ইতির পেছনে লেগেছে। শান গলা ঝেড়ে ঠিক হয়ে বসে ইমনের সাথে পরিচয় পর্ব সেড়ে নেয়। ইমন শানের সাথে কথা বলতে বলতে খেয়াল করে সোহা চুপ করে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে আর খাচ্ছেও। ইমন সোহার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলে
” আপনি চুপ করে আছেন কেনো মিস ?” সোহা ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নেয়। শান হালকা হেসে বলে
” মিস না মিসেস !! আমার ওয়াইফ সোহা। সোহা নতুন কারো সাথে কথা বলে না তেমন তাই চুপ করে আছে।” ইমন মাথা চুলকে বলে
” আপনারা হাসবেন্ড-ওয়াইফ হলে তো হানিমুনে যাচ্ছেন তাই না ?? তাহলে আমি আপনাদের ভার্সিটির ট্যুরে বাস থেকে নামতে দেখলাম কেনো ??” হানিমনের নাম শুনে শানের বিষম উঠে যায়। সোহা তাড়াতাড়ি পানি এগিয়ে দেয় শানকে। শান পানি খেয়ে শান্ত হয় সোহা বিরক্ত হয়ে বলে
” হুটহাট বিষম খান কেনো ??” শান সোহার কথার উওর দিলো না। ইমনকে বলে
” সোহা ফার্স্ট ইয়ার স্টুডেন্ট। বাড়ি থেকে কেউ একা যেতে দেবে না তাই আমি ওর গার্ডিয়ান হিসেবে যাচ্ছি। ওইসব হানিমুন-টানিমুন আমার ভাগ্যে নেই।” শেষের কথাটা শান বিরবির করেই বলে। ওয়েটার ইমনের সামনে খাবার রাখতেই ইমন ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি এসব ওর্ডার করিনি।” শান ওয়েটারকে ইশারা করে চলে যাওয়ার জন্য। ওয়েটার চলে যেতেই শান বলে
” আমি করেছি আপনার জন্য।” ইমন অবাক হয়ে বলে
” কিন্তু কেনো ?? আমি তো একবার খেয়েছি।” শান হালকা হেসে বলে
” খেয়েছেন তো কি হয়েছে এবারও খেয়ে নিন।” ইমন চোখ বড়বড় করে বলে
” আজকের খাবার খেয়েই আমার জিম করা বডির বারোটা বেজে যাবে। আর পাচঁদিনে কি কি খাবো কে জানে !!” শান আর সোহা হেসে উঠে ইমনের কথায় তবে ইতি মুখ বাকিয়ে বসে থাকে। ইমম তাকে সারা রাস্তা জ্বালিয়ে এসেছে এমনকি ঘুম থেকেও উঠিয়ে দিয়েছিলো বকবক করার জন্য। লাঞ্চ শেষে সবাই আবার বাসে উঠে পরে। ইতি এবার সোহাদের বাসে বসে ইমনের হাত থেকে বাঁচার জন্য কিন্তু ইমন ইতির পাশের মেয়েটাকে পটিয়ে ইতির পাশে বসে পরে। ইতি রেগে বোম হয়ে যায়। এরপরের রাস্তা সোহা, শানের ইতি আর ইমনের সাথে গল্প করতে করতে কেটে গেলো।
অবশেষে সবাই রিসোর্টে এসে পৌঁছায়। সবাইকে সবার রিসোর্ট রুম দেখিয়ে দেওয়ার পর সবাই রেস্ট নিতে থাকে।
চলবে।