#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ২০
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
সোহা কিছুক্ষণ একমনে শানের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলে
” হুম হবো।” শান বড় একটা হাসি দেয়। বসে লাল নীল বাতি জ্বলতে থাকে। শান খুশিতে কিছু বলার আগেই সোহা বলে উঠে
” চলুন তাহলে বাইরে গিয়ে গল্প করি ??” শান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে
” এতো রাতে গল্প করলে ঘুমাবে কখন ম্যাডাম !! কালকে তো কলেজ আছে নাকি ?? এখনই ভার্সিটি বন্ধ দেওয়া শুরু করলে সবাই তোমাকে ফাঁকিবাজ বলবে। তাই এখন কোনো গল্প হবে না।” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” আরে না তো কালকে ভার্সিটি বন্ধ। কালকে এলাকায় নাকি নির্বাচনের ভোট হবে তাই ভার্সিটি বন্ধ দিয়েছে।” শান ভেবে বলে
” তাহলে তো গল্প করাই যায়। ঠিকাছে তাহলে চলো ব্যালকনিতে আমি একটু পর আসছি।” সোহা মাথা নেড়ে ব্যালকনিতে চলে যায়। শান কফির বানানোর উদ্দেশ্যে নিচে চলে যায়। রাতের আধারে গোল থালার মতো চাঁদ টা ফুটে রয়েছে। চারপাশ চাঁদের আলোতে কেমন জ্বলজ্বল করছে। সোহা ডিভানে বসে শানের অপেক্ষা করতে থাকে। টমি অনেক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সোহা হাত বাড়িয়ে ব্যালকনিতে থাকা ফুল গাছগুলোতে হাত বুলাতে থাকে। রাত হয়ে যাওয়ায় গাছে ফুল গুলো একদম নুয়ে রয়েছে। আবার আগের মতো কলিতে পরিণত হচ্ছে তাও কয়েকটা ফুলের মিষ্টি সুভাস জায়গাটায় ছড়িয়ে রয়েছে। সোহা কিছুটা ঝুকে ঝুকে ফুলগুলোর ঘ্রাণ নিতে থাকে। পায়ের শব্দ শুনে সোহা সোজা হয়ে সামনে তাকালো। শান দুই হাতে দুইটা কফি মগ নিয়ে ধীরেসুস্থে সোহার পাশে বসে পরে। হাতের কফিটা সোহার হাতে দিয়ে বলে
” it’s made by me. Wanna try it !!” সোহার চেহারায় কিছুটা অবাকতর ছাপ দেখা যায়। সোহা অবাক হয়েই শানের হাত থেকে কফিটা হাতে নেয়। নাকের সামনে আনতেই একটা মিষ্টি স্মেল ভাসতে থাকে। সোহা ঘ্রাণ নিয়ে অবাক গলায় বলে
” আপনি কফি বানাতে পারেন ?? আমি জানতামই না। কতো মিষ্টি স্মেল আসছে।” শান মুচকি হেসে বলে
” try it.” সোহা কথা না বাড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে বসে। কফির টেস্টটাও অন্যরকম লাগলো। শান আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলো সোহাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে
” কি হলো কিছু বলছো না কেনো ?? ভালো হয়নি ??”
” উমমম !! এতো ভালো কফি এখনও খাইনি। আপনার কফির অন্যরকম একটা টেস্ট। বলতে গেলে খুবই কিউট।” শান মুখ কুচকে বলে
” কফি আর কিউট !! কফি কি কিউট হয় নাকি ??” সোহা মাথা নেড়ে বলে
” হ্যা, হ্যা, হয় তো সব কিছুই কিউট হয়। যেগুলো দেখতে খুবই কিউট হয়, টেস্টও কিউট হয় তাদের কিউট বলে। আপনার কফিটাও অনেক কিউট।” শান সোহার কথার যুক্তি শুনে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো।
সারারাত সোহার উল্টো পাল্টা কথা আর গল্পে কেটে গেলো। শেষ রাতের দিকে সোহা দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরে। শানি সোহাকে এভাবে দেখে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেলো। সোহাকে শুয়ে দিয়ে নিজেও পাশে ঘুমিয়ে পরে।
সময় নিজ গতিতে কিভাবে যে চলতে থাকে তা ভাবতেই অবাক লাগে। হারানো সময় গুলো কখনই ফিরে পাওয়া যায় না। এভাবেই প্রায় একমাস কেটে গিয়েছে। সোহা-শানের বিয়ের দেড় মাস চলছে দুই মাস হওয়ার সময়গুলোও আস্তে আস্তে ঘনিয়ে আসছে। সোহা, শানও বন্ধুত্বের মতো একটা সময় ভালোভাবে কাটাচ্ছে। তবে শানের এতো পরিবর্তন দেখে বাড়ির সবাই খুব অবাক যদিও সবাই খুশি শান সোহাকে মেনে নিয়েছে আর সোহাকে নিয়ে সবসময় পজেটিভ চিন্তাভাবনা করে। শানের বাবা মুসফিক চৌধুরিও অনেকদিন হয়েছে বাড়িতে ফিরে এসেছে।
আজকে সকাল থেকে সোহা শাহানাজ বেগমের পেছনে পেছন ঘুরছে। তবে কেনো ঘুরছে সেটা কেউই জানে না। ভার্সিটিতেও আজকে যায়নি সকালে। শাহানাজ বেগম রান্না ঘরে আসতেই দেখে সোহাও পেছন পেছন এসেছে। শাহানাজ বেগম ফ্রিজ থেকে দুধের বোতল বের করে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” কি লাগবে তোর !! এভাবে পেছন পেছন ঘুরছিস কেনো সকাল থেকে ??” সোহা আমতা আমতা করতে থাকে। শাহানাজ বেগম বিরক্তিমুখ করে বলে
” তুই আমতা আমতা করলে আমি বুঝবো কি করে যে তুই কি চাস ?? বল কি চাই।” সিমি রান্না ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে
” ও আর কি বলবে ?? ওর তো শুধু বায়না করা। এখন আবার কি বায়না করে বসে দেখো মা।”
সোহা রেগে বলে
” দেখেছো মামনি কি করে আপু ?? যাও আমি কিছুই বলবো না।” শাহানাজ বেগম গম্ভীর গলায় বলে
” সিমি !! আমার মেয়েকে কেউ কিছু বলবে না। তুই বল কি বলবি !!” সোহা দাঁত কেলিয়ে হেসে শাহানাজ বেগমের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। আদুরে গলায় বলে উঠে
” মামনি !! ও মামনি !! আমি না ঘুরতে যেতে যাই। শান ভাইয়াকে বলো না নিয়ে যেতে !!” শাহানাজ বেগম মৃদু স্বরে বলে
” কোথায় ঘুরতে যাবি তুই ??” সোহা ভেবে ভেবে বলে
” এখন বলবো না আগে সবাইকে রাজি করাও তারপর বলবো।”
” ঠিকাছে আমি সবার সাথে কথা বলছি তুই যা গিয়ে খেতে বস। তোর আর নাইসার দুধ গরম করে আনছি আমি।” সোহা মুখ কুচকে বলে
” আবার খাওয়া ?? এতো খেলে তো আমি দুইদিনে মোটা হয়ে যাবো।” সিমি বিদ্রুপ স্বরে বলে
” জি শুটকি ম্যাম আপনাকে মোটা বানানোর জন্যই এই ব্যবস্থা চলছে। এবার গিয়ে খেতে বসুন।” শাহানাজ বেগম হাসতে হাসতে তার কাজ করতে থাকে। সোহা সিমির দিকে তাকিয়ে বড়সড় একটা ভেংচি কেটে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। সিমি হেসে শাহানাজ বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। শাহানাজ বেগম দুধ নামাতে নামাতে বলে
” সিমি গ্লাস দুইটা এদিকে নিয়ে আয় তো !!” সিমি গ্লাস দুইটা উপর থেকে নামাতে নামাতে বলে
” মা ভাবিমনি কোথায় ?? দুপুরের পর দেখিনি।”
” নিলা একটু বাজারে গিয়েছিলো কিছু দরকারি জিনিস আনতে।” সিমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে শাহানাজ বেগমের পাশে কিছুক্ষণ পর নাকে দুধের গন্ধ নাকে লাগতেই কেমন লাগতে থাকে সিমির। গা গুলিয়ে আসতেই সিমি মুখে হাত দিয়ে ছুটে বেড়িয়ে যায়। শাহানাজ বেগম সিমিকে এভাবে ছুটে চলে যেতে দেখে কিছুটা চমকে লেগেও পরে ভাবে কোনো কাজের জন্য হয়তো এভাবে ছুটে গিয়েছে। শাহানাজ বেগম বেশি না ভেবে সোহা আর নাইসার জন্য খাবার নিয়ে যায়।
রাতে সবাই বাড়ি ফিরতেই সোহা সবাইকে নিয়ে আসর বসাই। তবে হুট করে কেনো আসর বসিয়েছে কেউ জানে না। শাহানাজ বেগম ভেবেছে সোহা ঘুরতে যাওয়ার কথা বলার জন্য সবাইকে একসাথে বসিয়েছে।
সোহা ছটফট করছে কিছু বলার জন্য কিন্তু কিছুই বলছে না একবার মুচকি মুচকি হাসছে আবার মন খারাপ করে বসে রইছে। এদিকে সবাই গালে দিয়ে বসে বসে সোহার কাহিনী দেখে যাচ্ছে। সিমি বিরক্ত হয়ে বলে উঠে
” তুই কিছু বলবি নাকি আমরা চলে যাবো ?? এভাবে চুপ করে বসে আছিস কেনো ??” সিমির কথা শেষ হতেই সোহা দুই গালে হাত দিয়ে সিমির দিকে গম্ভীর ভাবে তাকালো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সোহা মৃদু স্বরে বলে উঠে
” তোমরা কি জানো ?? আমাদের বাড়িতে একটা মেহমান আসবে ??” সবাই একে অপরের দিকে তাকায়। মুসফিক চৌধুরি শাহানাজ বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে
” বাড়িতে গেস্ট আসছে আর তুমি আমাকে এখনও জানালে না ?? কে আসছে বাড়িতে ??”
শাহানাজ বেগ অবাক হয়৩ বলে
” আরে আমি নিজেই তো কিছু না তোমাকে কি করে জানাবো ??”
” সোহা !! কি বলবে বলো না !! এমন করছো কেনো ?? কে আসবে আমাদের বাড়িতে ??” শানের কথা শুনে সোহা এবার সিরিয়াস হয়ে বসে। গলা ঝেড়ে বলা শুরু করে
” আমাদের বাড়িতে একটা ছোট কিউট বেবি আসবে নাইসার মতো মানে আপু প্রেগন্যান্ট।” কথা শেষ করে সোহা সবার দিকে তাকালো রিয়েকশন দেখার জন্য। সিমি সহ সবাই হা করে বসে আছে। সোহা বোকার মতো তাকিয়ে থাকে এভাবে হা করে থাকতে দেখে। এবার সবাই চোখ সড়িয়ে সিমির দিকে তাকায়। সিমির বুক কাঁপছে এমন একটা কথা শুনে। সামির সিমির কাছে এসে অবাক হয়ে বলে
” সোহা যা বলছে তা কি সত্যি ?? সিমি !!” সিমি অসহায় ভাবে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি সত্যি জানি না সোহা কেনো এসব বলছে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি প্রেগন্যান্ট কবে হলাম, সোহা !!” শাহানাজ বেগম সোহার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে
” সোহা !! এটা কি ধরনের কথা ?? এসব নিয়ে কি কেউ মজা করে নাকি ??” সোহা কাঁদোকাঁদো চেহারা করে বলে
” তুমি আমাকে বকছো কেনো ?? আমি কি মিথ্যা কথা বলি নাকি ?? আমি আজকে বিকেলে আপুকে বমি করতে দেখেছি। আবার দুপুরে দেখেছিলাম আমি কিছু খাচ্ছিলো না। টিভিতে তো এসব হলেই বলে প্রেগন্যান্ট হয়েছে।” ইশান, নিলা, শান, মুসফিক চৌধুরি, শাহানাজ বেগম ফিকফিক করে হেসে দেয়। সিমি রেগে বলে
” এইটুকুর জন্য তুই আমাকে প্রেগন্যান্ট বলছিস ?? কিছু না বুঝেই উল্টোপাল্টা কথা বলিস।” সামির সিমিকে ধমক দিয়ে বলে
” তুমি চুপ করো !! তোমার যে শরীর খারাপ সেটা একবারও আমাকে বলেছো ?? সোহা না বললে তো জানতেই পারতাম না।” সিমি হুট করে সামিরের ধমক শুনে লাফিয়ে উঠে। মুখ লটকিয়ে বলে
” আমি তো ভেবেছিলাম বলবো একটু পর।” সামির রেগে আর কিছু বলতে নিলে শাহানাজ বেগম থামিয়ে দিয়ে বলে
” আহ!! বকাবকি করছিস কেনো ?? ইশান তুই একটু সিমির চেকাপ করতো !!” ইশান মাথা নেড়ে সিমি আর সামিরকে নিয়ে তার রুমে চলে যায়।
শান হাই তুলে বলে
” আর কিছু বলবে ?? নাকি চলে যাবো ??” সোহা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলে
” আরে কোথায় যাবেন আপনি ?? আপনার সাথেই তো সবচেয়ে বড় কথা।” শান সোফায় হেলান দিয়ে বসে হাত দিয়ে চুল পেছনে ঠেলতে ঠেলতে বলে
” বলুন ম্যাম কি বলবেন !!” শাহানাজ বেগম বড়সড় একটা হাসি দিয়ে বলে
” সোহা তোর সঙ্গে ঘুরতে যেতে চাইছে। তাই তোর সাথে কথা বলতে চাইছে। তুই কোথায় যেতে যাস ??” শানের সঙ্গে ঘুরতে যেতে চাইছে শুনে শানের মন নেচে উঠে। শান একটু নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে বলে
” কোথায় যাবো ?? সোহা যেখানে বলবে সেখানেই যাবো।” সোহা হালকা বিরবির করে বলে
” মামনি আমি কখন বলেছি আমি একা ঘুরতে যাবো ?? আমি তো সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছিলাম।” শান নিষ্প্রাণ চেহারায় সোহার দিকে তাকায়। শানের উথালপাতাল মনটা এক মিনিটে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য সোহা একদিন অনেক বড় একটা এওয়ার্ড পাবে ভাবতে ভাবতে শান উপরের দিকে তাকালো। শানের তাকানো দেখে সবাই সেদিকে তাকায়। দুইজন থমথমে মুখ নিয়ে আর সিমি মাথা নিচু করে নেমে আসছে। তিনজনের চেহারা দেখে সবাই কিছুটা ভয়ই পেলো। নিলা এগিয়ে গিয়ে বলে
” তোমাদের দেখতে এমন লাগছে কেনো ?? কি হয়েছে ??” ইশান থমথমে মুখে বলে উঠে
” সোহা যা বলেছিলো সবই ঠিক। সিমি প্রেগন্যান্ট।” বলে ইশান আর সামির হেসে দেয়। সোহা চিৎকার করে উঠে ইশানের কথা শুনে। সিমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে। একে একে সবাই সিমি,সামিরকে কংগ্রেস করে। বাড়িতে খুশির ধুম পরে যায়। সামির শানের সাথে মিষ্টি কেনার জন্য চলে যায়। শাহানাজ বেগম সোহার মা, বাবাকে ফোন দিয়ে সব জানায়।
শান, সামির হরেক রকম মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সোহা খুশি থাকলেও কিছুক্ষণ পর ওর খেয়াল আসে যে ও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছিলো। সোহা মন খারাপ করে বলে
” মামনি !! আমাদের কি ঘুরতে যাওয়া হবে না ??” শাহানাজ বেগম মন খারাপ করে বলে
” সিমিকে নিয়ে কিভাবে হবে ?? সিমি অন্তত তিন মাস কোথাও বের হতে পারবে না। এই অবস্থায় তো ঘুরতে যাওয়া রিস্কি।” সোহা মন খারাপ করে ফেলে। নিলা ভেবে বলে
” আমরা তো যেতে পারবো না কিন্তু সোহা তুমি আর শান তো যেতে পারবে তোমরা চলে যাও। আমরা নাহয় পরেরবার ফ্যামিলি ট্যুরে যাবো !!” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” তাহলে তো আমরা ভার্সিটি ট্যুরেই যেতে পারি!! আমি তো ফ্যামিলির সাথে যেতে চেয়েছিলাম।” শাহানাজ বেগম সোহাকে বুঝিয়ে বলে। অনেক বোঝানোর পর সোহা শানের সাথে যেতে রাজি হয় তবে শানরা ভার্সিটি থেকে কয়েকদিন পর যেই ট্যুরে যাওয়া হচ্ছে সেটার সাথে যাবে।
চলবে~ইনশাল্লাহ……..
#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ২১
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” তাহলে তো আমরা ভার্সিটি ট্যুরেই যেতে পারি!! আমি তো ফ্যামিলির সাথে যেতে চেয়েছিলাম।” শাহানাজ বেগম সোহাকে বুঝিয়ে বলে। অনেক বোঝানোর পর সোহা শানের সাথে যেতে রাজি হয় তবে শানরা ভার্সিটি থেকে কয়েকদিন পর যেই ট্যুরে যাওয়া হচ্ছে সেটার সাথে যাবে।
খুশির আমেজ এর সমাপ্তি ঘটিয়ে সবাই ঘুমাতে চলে যায়।
সোহা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বের হলে শান ঢুকে যায়। সোহা টমিকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে খুশি হয়ে বলে
” টমি আমার এরেকটা বাবু আসছে। আমি আর তুই খালামনি হবো কতো মজা তাই না !! আচ্ছা বাবুকে নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবো বলতো ??” সোহা বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে বলে
” আমরা বাংলাদেশের সব জায়গায় ঘুরতে যাবো তাই না ?? আচ্ছা বাবুর নাম কি রাখবো ??” সোহা ভাবতে ভাবতে শান বেড়িয়ে আসে ওয়াসরুম থেকে। সোহা শানকে দেখে উঠে বসে বলে
” শান ভাইয়া !! বাবুর নাম কি রাখবো ?? একটু ঠিক করে দিন না !! আমি পারছি না ঠিক করতে।” শান হাত থেকে টাওয়ালটা রেখে সোহার দিকে তাকিয়ে একটা তীক্ষ্ণ চাবে চাহনি দিলো। সোহা ভ্রু উঁচু করে বলে
” কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো ??”
শান এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলে
” বাবু আসতে এখনও এক বছর সময় রয়েছে। এখনই নাম রাখার কোনো কারন দেখতে পারছি না আমি। আর তোমাকে বলেছি না আমাকে শান ভাইয়া বলবে না !! শুধু শান বলবে।” সোহা ভেংচি দিয়ে বলে
” হুহ পারবো না। এতোবড় ছেলেকে কিনা নাম ধরে ডাকতে হবে। আমি পারবো না এভাবে ডাকতে শান ভাইয়া নামটা কতো কিউট !! নামটাকে চুমু দিতে ইচ্ছে করছে। ইশশ !!” শান বিরবির করে বলে
” নামকে তো চুমু দিতে পারবে না তবে আমাকে দিতে পারো আমি মাইন্ড করবো না।” শানকে ঠোঁট নাড়িয়ে নাড়িয়ে বিরবির করতে দেখে। সোহা ভ্রু কুচকে বলে
” কি বিরবির করছেন ?? জোড়ে বলুন।” শান শুকনো কাশি দিয়ে বলে
” কিছু না। ভার্সিটি থেকে কোথায় যাওয়ার প্ল্যান করছে জানো তুমি??” সোহ্ব জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে বলে
” No, I don’t know anythink but why ??” শান সোহার পাশে বসে বলে
” তাহলে প্রিপারেশন নিয়ে রাখতাম এটাই আরকি।”
সোহা টমিকে তার ঝুড়িতে শুয়ে দিতে দিতে বলে
” শুনেছি রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি তে যাবে বা খাগড়াছড়ি।” শান চোখ বড়বড় করে তাকায়। দম বন্ধ করে বলে
” তুমি জানো আমার সাজেক যাওয়ার কতো ইচ্ছে ?? আমি কয়েক বছর আগে একবার বন্ধুদের সাথে গিয়েছিলাম আর যাওয়া হয়নি। এবার যদি তোমার সাথে যাওয়া হয় তাহলে আমার ইচ্ছে টা পূরণ হয়ে যাবে।”
” তাহলে তো ভালোই। কালকে, পরশু ফাইনাল ডিসিশন জানিয়ে দেবে।” শান সোহার জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে
” ঠিকাছে এখন ঘুমিয়ে পরো কালকে তো ভার্সিটি আছে।” সোহা মাথা নেড়ে বাধ্য মেয়ের মতো তার জায়গায় ঘুমিয়ে পরে। শান লাইট অফ করে সোহার পাশে শুয়ে প্রতিদিন কার মতো সোহার হাতের উপর হাত রেখে ঘুমিয়ে পরে।
ফুরফুরে হাওয়ায় সকালটা বেশ স্নিগ্ধ। এক অজানা ঘ্রাণে ঘরটা মৌ মৌ করছে। আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে সোহা। প্রথমে চোখ জোড়া জানলার দিকে। হালকা রোদের রশ্মিজাল সাদা পর্দা ভেদ করে পুরো ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচরণ করছে। সোহা এবার হাই তুলে পাশে তাকায়। পাশে তাকাতেই সামনে থাকা ঘুমন্ত শান নামের মানবটার মুখটা ভেসে উঠে। না দেখেই সোহা অনুভব করতে পারলো শানের বলিষ্ঠ হাতটা গভীরভাবে সোহার কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে। এটা এখন প্রতিদিন কার একটা রুটিনে পরিণত হয়েছে। রাতে শুধুমাত্র হাত আকড়ে ঘুমালেও সারা রাত সেটা শুধুমাত্র হাতেই আটকে থাকে না। সোহা সকালে চোখ খুলে দেখে শানের হাতটা তার কোমড়ে বিচরণ করে। সোহা কিছুই বলে না এই নিয়ে শানকে কারণ ঘুমের সময় এমন হতেই পারে। শান বেচারাও জানতে পারে না তার এমন বেখেয়ালির কথা। সোহা শান্ত চাহনি দিয়ে শানকে পরখ করে নিতে থাকে। গৌরবর্ণ মানুষটির খারা নাক,, চাপা অধর দেখতে সুন্দর। সুন্দর চুল গুলো অধিকাংশ সময়ই কপালে বিচরণ করে। শানের সিক্স পেক বডি আর এই নজর কারা রূও দেখে যে কেউ ঘায়েল হয়ে যায়। সোহা কিছুক্ষণ শানের দিকে তাকিয়ে থেকে একসময় উঠে বসে।
ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামিয়ে সোহা, শান গাড়ি থেকে নেমে পরে। ইতি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো সোহার জন্য সোহাকে দেখে ইতি এগিয়ে আসে। ইতি সোহা আর শানের দিকে তাকিয়ে থমথমে চেহারায় বলে
” হৃদয় এসেছে আজকে।” শান শান্তভাবে সোহার দিকে তাকায়। সোহা শানের হাত খামছে ধরে গুটিয়ে দাঁড়ায়। শান নিশ্বাস ফেলে বলে
” চলো। হৃদয় এতোদিন পর সুস্থ হয়ে এসেছে। হৃদয়ের সাথে দেখা করে আসি।” সোহা বিস্মিত হয়ে শানের দিকে তাকায়। অবাক স্বরে বলে
” আপনি ওর সাথে দেখা করবেন কেনো ??” শান এক ভ্রু উঁচু করে বলে
” কেনো ?? সেইদিন না তোমার হৃদয়ের জন্য খারাপ লাগছিলো ??” ইতি রাগি গলায় বলে
” ভাইয়া আপনার বউটা একটু বেশি নরম মনের মানুষ।।ওর উপর এতো অত্যাচার করার পরও ওর হৃদয়ের জন্য খারাপ লেছিলো ??”
সোহা মুখ লটকিয়ে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলে
” আরে আমার তো এইটুকুনি খারাপ লেগেছিলো। ছেলেটাকে শুধু শুধু মেরেছিলো তাই। আমি কি বলেছি আমার অনেক খারাপ লেগেছে ?? যা হয়েছে ভালোই তো হয়েছিলো।কিন্তু এখন ওকে দেখতে যাওয়ার কি আছে ??”
শান সোহার হাত টেনে বলে
” তুমি না গেলেও আমি যাচ্ছি। চলো আমার সাথে।” শান সোহার হাত টেনে টেনে সোহাকে নিয়ে যাচ্ছে সোহা মুখ ফুলিয়ে যেতে থাকে। লাইব্রেরীর সামনে আসতেই ভেতর থেকে হৃদয়, রিমি, প্রমা, লিমন আর কিছু চেলাপেলা বেরিয়ে আসে। শান হৃদয়ের পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে নেয়। হৃদয়ের কপালের কোণায়, হাতে আর মুখে এখনও কিছু কিছু ব্যাথার দাগ রয়েছে।হৃদয় শানকে দেখে কিছুটা অবাকই হয়েছে।
” কেমন আছো ?? এতোদিন পর সুস্থ হয়ে এসেছো কিন্তু এখনও মারের দাগ গুলো ঢেকে আসতে পারলে না?? অচেনা মানুষের হাতে মার খেয়ে নামের পাশে ট্যাগ লাগিয়ে নিয়েছো সেটার প্রমাণ দিচ্ছো নাকি সবাইকে ??” শান বিদ্রুপ স্বরেই কথা গুলো বলে উঠে। হৃদয়ের শরীরে আগুন জ্বলতে থাকে শানের কথা শুনে। হৃদয় শানের থেকে চোখ সড়িয়ে পেছনে থাকা সোহার দিকে তাকায়। সোহা ঢোক গিলে শানের পেছনে গিয়ে লুকায়। হৃদয় ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে
” হুহ, তোমার বউ কি আমাকে ভয় পায় নাকি ?? সব সময় দেখি আমার সামনে আসলে আপনার পেছনে লুকিয়ে থাকে। ভালোই হলো অনেক দিন ধরে ঘরে বসে বসে বোর হয়ে গিয়েছি এবার কাজে লেগে পরতে হবে।” শান তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” হ্যা তোমাদের তো একটাই কাজ মানুষদের হ্যারাস করা বেশি করে মেয়েদের। এছাড়া আর কোনো কাজ কি জানো তোমরা ??” রিমি বলে
” আমরা তো জানি না আপনি জানেন তো ?? তাহল প্রমাকে একটু শিখিয়ে দিয়েন। প্রমা বারবার আপনার কথা বলে।” প্রমা এগিয়ে এসে হেসে বলে
” হ্যা অনেক দিন ধরে ডেটে যাওয়া হয় না ভাবছিলাম আপনার সাথে যাওয়াই যায়।” শান গম্ভীর গলায় সোহা আর ইতিকে উদ্দেশ্য করে বলে
” তোমরা ক্লাসে যাও। আমি এদের সাথে একটু কথা বলি।” সোহা যেতে না চাইলেও ইতি জোড় করে নিয়ে যায় সোহাকে। সোহা যেতেই শান রুমাল বের করে হাতে পেচাতে পেচাতে প্রমার সামনে এগিয়ে এসে প্রমার মুখ চেপে ধরে চোয়াল শক্ত করে বলে
” আমার সাথে ডেট করার শখ ?? এসব চিন্তাভাবনা করার কথাও ভাববে না। আমার কাছে সোহাই একমাত্র নারী যার সাথে আমি আমার পুরো জীবন কাটাবো। তোদের মতো অশ্লীল কাজের সাথে যুক্ত হয়ে নিজের পাপের ভার বাড়াতে চাই না।” হৃদয় এগিয়ে এসে চিৎকার করে বলে
” এইই শান চৌধুরি !! একদম বাড়াবাড়ি করবে না। আমরা কি করি না করি সেটা আমাদেরই ভাবতে দাও আমাদের নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।” শান প্রমাকে ছেড়ে দেয়। প্রমা গালে হাত দিয়ে আগুনের ফুলকির মতো শানের দিকে তাকিয়ে থাকে। শান হাত থেকে রুমাল খুলতে খুলতে বলে
” আমি বলেছিলাম না ?? আমি কথায় না কাজে বেশি পটু। সেটা প্রমাণও পেয়েছো। একমাস তো বেডে শুয়ে ছিলে। তাই সাবধান করে দিচ্ছি। এখন সুস্থ থাকতে চাইলে সোহা, ইতি আর সবার কাছ থেকে দূড়ে থাকবে।” কথা শেষ করে শান চলে যেতে থাকে। হৃদয়ের শরীরে আগুন জ্বলতে থাকে শানের কথা শুনে। শান যে তার এই অবস্থা করতে পারে সেটা তার মাথায়ই আসেনি। হৃদয়ের মনে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলতে থাকে।
সোহা ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরে সিমি, নিলা, নাইসার সাথে অনেক্ষণ সময় কাটায়। রাতে শান ফিরতেই সোহা রুমে আসে। শান কোট খুলে রাখাত আগেই সোহা খুশিতে শানের হাত চেপে ধরে বলতে শুরু করে
” শান ভাইয়া !! ভার্সিটি থেকে সাজেক যাচ্ছে। তিনদিন পর ভার্সিটি ট্যুর। আপনার ইচ্ছে পূরণ হয়ে গেলো।” শান মনকারা একটা হাসি দেয়।
চলবে~ইনশাল্লাহ…….