তুমিময় ভালোবাসা পর্ব-১৬+১৭

0
1978

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ১৬
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

শান তাচ্ছিল্য গলায় বলে
“ওভার স্প্রিডে বাইক চালালে এমনই হয়। সত্যি!! একদম ঠিক হয়েছে। এবার যদি এদের একটু শিক্ষা হয়। মা, বাবা আপনারা ঠিকাছেন তো ??” ইশান শান্তনা দিয়ে বলে
” হ্যা আংকেল, আন্টি ঠিকাছে। দুইদিন রেস্ট করলে ব্যাথাও সেড়ে যাবে।” রিয়ানা রহমান ধীর গলায় বলে
” আপনারা কিভাবে জেনেছেন ?? আর এভাবে ছুটে এসেছেন কেনো ??” শাহানাজ বেগম রিয়ানা রহমান এর বেডে বসে নিশ্বাস ফেলে বলে
” সোহা নাকি আপনাদের সাথে কথা বলছিলো। এক্সিডেন্ট এর কথা শুনতে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরাও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে।” রিয়ান বেগম হালকা হেসে সোহার দিকে তাকায়। সোহা মুখ লটকিয়ে রিয়ানা রহমানকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে বলে
” তোমরা খুব পচা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।” ইমতিয়াজ রহমান হেসে বলে
” আচ্ছা আর কাঁদিস না। বেশি কাঁদলে চোখের পানি শুকিয়ে যাবে। তাহলে তখন আর কথায় কথায় কাঁদতে পারবি না।” ইমতিয়াজ রহমান এর কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। টমি নাইসার কোল থেকে লাফ দিয়ে ইমতিয়াজ রহমানের বেডে গিয়ে দাঁড়ায়। জিহ্বা বের করে ইমতিয়াজ রহমানের কোলে বসে পরে। সিমি হেসে বলে
” দেখেছো টমিও তোমাদের এতোদিন পর দেখতে পেয়ে খুশি হয়ে গিয়েছে।” ইমতিয়াজ রহমান হেসে বলে
” করবে না আবার !! রাতের বেলা চুপিচুপি এসে তো এখন আর আমার ঘুমের মাঝে চুল টানতে পারে না তাই মিস করে আমাদের।” নাইসা খিলখিল করে হেসে এগিয়ে এসে আবার টমিকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে বলে
” তুমি জানো ?? টমি এখন আমার বন্ধু। তবে আমার আরেকটা বন্ধু আসবে মামনি আর….” পুরো কথা শেষ করার আগেই সিমি আলতো ভাবে নাইসার মুখ চেপে ধরে গালে চুমু দিয়ে বলে
” নাইসা বাবু তুমি কি তোমার পাপার হসপিটাল টা আমাকে ঘুরে দেখেবে ??” নাইসা মাথা নেড়ে হ্যা বলে। সিমি জোড়পূর্বক হেসে নাইসাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়। নিলা মুখ টিপে হাসতে থাকে সিমির কাজ দেখে। সামির এগিয়ে এসে মাথা চুলকে বলে
” মা-বাবা আপনারা আমাদের বাড়িতে চলুন !! আপনারা একা একা বাড়িতে থেকে কি করবেন ?? বাড়ি তো এখন পুরো ফাকা। এর থেকে ভালো আমাদের বাড়িতেই চলুন।” শাহানাজ বেগম সায় দিয়ে বলে
” হ্যা বেয়ান সামির ঠিক কথা বলছে আমাদের সাথে চলুন। এখন ওইটা তো আপনাদেরও বাড়ি।” রিয়ানা রহমান নাকচ স্বরে বলে
” ক্ষমা করবেন আপা আমরা যেতে পারবো না। আসলে বাড়িতে আমাদের কাজের মেয়েটা রয়েছে সে এখন কিছুটা অসুস্থ। তো ও অসুস্থ শরীরে একা থাকলে কেমম দেখায় বলুন !! আর আমরা আজকেই বাড়িতে ফিরেছি বাড়িতে কিছু কিছু ঝামেলা আছে। বুঝতেই তো পারছেন।” শাহানাজ বেগম মুখ গোমড়া করে বলে
” বুঝতে তো পারছি কিন্তু বাড়িতে আপনারা তিনজনই অসুস্থ কিভাবে কি করবেন ?? তাই বলছিলাম আমাদের সাথে চলুন। তাহলে আপনারা যখন যাবেন না তাহলে সিমি বা সোহা আপনাদের সাথে যাক। ওরা অন্তত আপনাদের খেয়াল তো রাখতে পারবে !!” সোহা উৎসাহিত কন্ঠে হালকা চেঁচিয়ে বলে
” আমি যাই মামনি ??” ইমতিয়াজ রহমান মাথা নেড়ে বলে
” না, না তোমার যাওয়ার দরকার নেই। তুমি তো নিজেরই খেয়াল রাখতে পারো না আমাদের কি করে রাখবে ??” সোহা কাঁদোকাঁদো গলায় বলে
” দেখেছো মামনি ?? ওরা আমাকে আর ভালোবাসে না তাই আমাকে নিয়ে যেতে চায় না।
সবসময় শুধু আপুকে নিয়ে যায়।” শান এগিয়ে এসে নরম গলায় বলে
” তুমি কি রান্না করতে পারো ??” সোহা টলমল চোখে শানের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে না বলে। শান ভ্রু কুচকে বলে
” তাহলে তুমি কোন হিসেবে যেতে চাইছো ?? ছোট ভাবি মনি সেখানে গিয়ে রান্নাও করবে, খুঁটিনাটি কাজও করবে, মা-বাবার মেডিসিনও খাওয়াবে সেই যায়গায় তুমি গিয়ে তো কিছুই করতে পারবে না। উল্টে তুমি খেয়েছো কি না, কি করছো না করছো সব কিছু মা-বাবাকে দেখতে হবে। তাহলে তুমিই বলো তুমি গেলে লাভ কি হবে ??” শানের কথায় যুক্তি আছে বুঝতে পেরে সোহা মন খারাপ করে ফেলে। নিলা শানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে
” সোহা মন খারাপ করো না। আংকেল, আন্টি সুস্থ হলে তুমি একা একা ঘুরতে যাবে তখন কেউ তোমাকে বাধা দেবে না ঠিকাছে ??” সোহা মন খারাপ করেই মাথা নাড়ায়। শাহানাজ বেগম সামিরকে উদ্দেশ্য করে বলে
” সিমির একা তো সব কিছু করতে সমস্যা হবে। সামির তুমিও সিমির সাথে চলে যাও।” সামির মাথা হেলিয়ে সায় দেয়।

শান ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে বারবার সোহার দিকে তাকাচ্ছে। সোহা পাশের সিটে মাথা হেলিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে। সিমি, সামিররা কিছুক্ষণ আগেই বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। তারপর থেকে সোহা মন খারাপ করে বসে আছে। ড্রাইভ করতে করতে একসময় শানের চোখ যায় সামনে রাখা সিডি গুলোর দিকে। শান কপাল চাপরে বলে
” ইশশ ভাইয়ার সিডিগুলো দেওয়া হলো না।কি করবো এখন ??” সোহা শানের কথা শুনতে পেয়ে একবার শানের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়। গম্ভীর গলায় বলে
” এমন ভাবে বলছেন যেনো ভাইয়া বিদেশে গিয়েছে !! ভাইয়া দুইদিন পর আবার বাড়িরে ফিরে আসবে তখন সবই দেখতে পারবে।এখন এটা বাড়িতে রাখতে আমার মনে হয় না তেমন কোনো ক্ষতি হবে।” শান সোহার কথা শুনে আর কথা বাড়ালো না। সোহার এমনি মন খারাপ এখন আবার কিছু বললেই সোহা কেঁদে দেবে ভেবে শান চুপ করে রইলো। বাড়িতে ফিরে সবাই বকাবকি করার পর সোহা খাবার খেয়ে ঘুমাতে চলে যায়। অফিসের কাজ শেষে শান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এখন পইপই রাত ১২ টা বাজে। শানের চোখে একদমই ঘুম নেই কাজ না পেয়ে শান উঠে টেবিলের উপর থেকে সেই সিডি গুলো নিয়ে স্টাডি রুমে গিয়ে বসে। এতোগুলো সিডির মাঝে কোনটা কিসের সিডি লিখা নেই তাই আন্দাজে একটা সিডি বের করে টিভিতে লাগিয়ে সোফায় বসে পরে। টিভি অন হতেই স্ক্রিনে একটা রুমের দৃশ্য ভেসে উঠে। রুমটা দেখে শান ভ্রু কুচকে নেয়, এটা সোহাদের বাড়ির স্টোর রুমটা। এখানে অস্পষ্ট চেহারায় একটা ছেলে আর মেয়েকে ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখতে পাওয়া যায়। দৃশ্যটা দেখে শানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে কিন্তু শানের মাথায় হঠাৎ বিয়ের দিনের কথা মাথায় আসে। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও শান কিছুটা আগ্রহ নিয়ে দেখতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর মেয়েটা ছেলেটার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মেয়েটা দরজা খুলে বের হওয়ার সময় মেয়েটার চেহারায় স্পষ্টতা দেখা যায়। মেয়েটাকে দেখে শান আকাশ থেকে পরলো। এই মেয়েটাকে শান ভার্সিটিতে হৃদয়ের সাথে দেখেছিলো ইতির থেকে নাম জানতে শুনেছিলো মেয়েটার নাম রিমি। শান ঢোক গিলে আবার টিভির দিকে তাকালো। স্টোর রুমে ভেতরের দিক থেকে ছেলেটা সামনের দিকে আসতেই ছেলেটার চেহারাও স্পষ্ট হয়ে যায়। হৃদয় হাতে একটা বোতল নিয়ে বারবার পান করছে সেটা। ঢুলতে ঢুলতে আশেপাশের জিনিসের সাথে বারি খাচ্ছে। শান চমকে তাকিয়ে থাকে টিভির দিকে। এরপর কোন চমক দেখতে পারবে ভেবেই শান ঢোক গিলে।
সময় অনুযায়ী প্রায় পনেরো মিনিট পর।
দরজা ঠেলে সোহা রুমে প্রবেশ করে। সোহা দরজার পাশেই থাকা টেবিলের উপর থেকে কয়েকটা গিফট বক্স হাতে তুলে নেয়। তখন পেছন থেকে হৃদয় ঢুলতে ঢুলতে এগিয়ে এসে সোহার কাধে হাত রাখে।
” আয়ায়ায়া কে !!” সোহা ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে হাত থেকে গিফট বক্স ফেলে দূড়ে সরে আসে। হৃদয়কে দেখে ভীতু গলায় বলে
” কে আপনি ??” হৃদয় মাতাল গলায় বলে
” আমাকে চিনতে পারছো না রিমি ?? আমি হৃদয়। তুমি আমাকে ভালোবাসো.. আমি তোমাকে !!” উল্টোপাল্টা কথা বলতে বলতে হৃদয় এগিয়ে সোহার দিকে এগিয়ে আসে। সোহা আবার চিৎকার দিয়ে আরো পিছাতে পিছাতে বলে
” কে আপনি ?? এমন করছেন কেনো ?? দূড়ে সরুন আমি বাইরে যাবো।” হৃদয় হা হা করে হেসে বলে
” বাইরে যাবে তুমি ?? হা হা হা। আমাকে ভেতরে এনে এখন তুমি বাইরে যেতে চাও?? কিন্তু আমি যেতে দেবো না তো তোমাকে।” সোহা ইতিমধ্যে কেঁদে দেয় হৃদয়ের কাজকর্ম দেখে। সোহা দৌড়ে অনেক দূড়ে সরে আসে। হৃদয় ঢুলতে ঢুলতে বারবার পরে যায় কিন্তু সামনে এগোনো থামায় না। সোহার কাছে গিয়ে সোহার সঙ্গে জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা করে। হৃদয় নেশাগ্রস্থ হওয়ায় বেসামাল হয়ে পরছে। ভয়ে সোহার গলায় শব্দও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সোহা একনাগাড়ে কাদঁতে থাকে। হৃদয় সোহার ওড়না চেপে ধরতেই সোহা ওড়না চেপে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে
” ছাড়ুন কি করছেন এসব আপনি ??” বলে হৃদয়কে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দেয়। হৃদয় রেগে সোহাকে থাপ্পড় দিয়ে বসে। সোহা টান সামলাতে না পেরে একটা পুরোনো জিনিসের কোণায় মাথায় বারি খায়। সোহা মাথায় হাত দিয়ে কেঁদে উঠে। হৃদয় এগিয়ে আসতে আসতে সোহা কপালে হাত দিয়ে কোনো রকমে উঠে দাঁড়ায়। নেশাগ্রস্থ হৃদয়কে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দৌড়ে এলোমেলো পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। হৃদয় মাটিতে পরে যায়। হৃদয় রেগে উল্টোপাল্টা কথা বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় আবার। কিছুক্ষণ পর রুমের ভেতরে আবার রিমিকে দেখা যায়। রিমি হৃদয়ের কাছে আসে হৃদয়ের গলা জড়িয়ে ধরতেই হৃদয় ঝাড়া দিয়ে রিমির হাত সড়িয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে
” একদম আমাকে ছোঁবে না ?? আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে এখন আবার নিজেই আমার কাছে আসছো !!” রিমি অবাক স্বরে বলে
” কি বলছো এসব ?? আমি কখন তোমাকে ধাক্কায় দিয়েছি ?? আমি তো বাইরে গিয়েছিলাম মাত্র এসেছি।” হৃদয় মাথায় হাত দিয়ে ঢুলতে ঢুলতে বলে
” তাহলে মেয়েটা….” আর কিছু বলার আগেই রিমি হৃদয়কে নিয়ে তাদের অশ্লীল উদ্দেশ্যে মেতে উঠে। মিনিট পাঁচেক পর দরজার কিছুটা খোলা অংশ দিয়ে শানকে দেখা যায়।
শান রেগে চিৎকার দিয়ে হাতের সামনে থাকা কাচের গ্লাসটা ছুড়ে মারে টিভির দিকে। টিভির মাঝের অংশ টা ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে নিচে পড়তে থাকে। শান মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে। অসহায় গলায় বলে
” কি করেছি এটা আমি ?? এতোবড় ভুল কি করে করতে পারলাম ?? আমি কি না নিষ্পাপ মেয়েটাকে এতোদিন ধরে ভুল বুঝে এসেছি !! কোন মুখে ক্ষমা চাইবো ?? এই ভয়েই সেইদিন আমাকে থাপ্পড়ে দিয়েছিলো। আয়ায়ায়ায়া !!” চিৎকার দিয়ে শান নিচে বসে চুল টানতে থাকে, চোখ জোড়া পানিতে টলমল করছে। হুট করে উঠে দাঁড়িয়ে সিডিটা বের করে নেয়। সিডিটা ভেঙে চার টুকরো করে জানলা দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয়। চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে শানের। শান গাড়ির চাবি নিয়ে হন্তদন্ত পায়ে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে।

সকালের রোদে রশ্মিজাল এসে সোহার মুখের উপর পড়তেই সোহার ঘুম ভেঙে যায়। সোহা ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে ঘুমে ঢুলতে থাকে। কিছুক্ষণ বসে থেকে হাই তুলে গায়ের আলসেমি ছাড়িয়ে সোহা চোখ খুলে তাকায়। চোখ খুলেই বিছানা ফাকা দেখে সোহা পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নেয়। শানকে না দেখে কিছুটা অবাক হয়। বিছানাও একদম পরিষ্কার হয়ে আছে কোনো মানুষ ঘুমিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। শান গেলো কোথায় !! ভাবতে ভাবতে সোহা ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। ফ্রেশ হয়ে ওয়াসরুম থেকে বেরোতেই আরেকদফা চমকে উঠলো সোহা। শানকে বিষন্ন অবস্থায় দেখে সোহা অবাক হয়ে যায়। শার্টের বেহাল অবস্থা, চুল গুলোও এলোমেলো হয়ে কপালের উপর পরে আছে। চোখ, মুখ দেখে মনে হলো শান সারারাত ঘুমায়নি। সোহা শানের কাছে এগিয়ে এসে অবাক গলায় বলে
” আপনার এই অবস্থা কেনো আপনি কোথায় ছিলেন সারারাত ??” শান কোনো কথা না বলে বসা থেকে দাঁড়িয়ে দুই পা এগিয়ে এসে সোহাকে জড়িয়ে ধরে সোহার গলায় মুখ গুঁজে দেয়। সোহা স্তব্ধ হয়ে যায় শানের এই ব্যাবহারে।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ১৭
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা

সোহা শানের কাছে এগিয়ে এসে অবাক গলায় বলে
” আপনার এই অবস্থা কেনো আপনি কোথায় ছিলেন সারারাত ??” শান কোনো কথা না বলে বসা থেকে দাঁড়িয়ে দুই পা এগিয়ে এসে সোহাকে জড়িয়ে ধরে সোহার গলায় মুখ গুঁজে দেয়। সোহা স্তব্ধ হয়ে যায় শানের এই ব্যাবহারে। সোহা কাঁপাকাঁপা গলায় বিস্মিত হয়ে বলে
” শান ভাইয়া !! কি হয়েছে আপনার ??” শান সোহাকে সেভাবেই জড়িয়ে ধরে জড়ানো গলায় বলে
” আমি এতোদিন ধরে অনেক ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ !!”
সোহা অবাক হয়ে বলে
” কি ভুল করেছেন ?? আমি কিসের জন্য ক্ষমা করবো ??” শান কিছু বলতে নেওয়ার আগেই সোহা অস্বস্তিবোধ করে মিনমিন স্বরে বলে
” তার আগে আপনি যদি আমাকে ছেড়ে দেন !! আমার কেমন কেমন লগাছে।” শান ছিটকে দূড়ে সরে আসে সোহার কথা শুনে। শানের খেয়ালই ছিলো না এতোক্ষণ কোন অবস্থায় ছিলো। শান মাথা নিচু করে নিচু স্বরে বলে
” সরি !! আমার খেয়াল ছিলো না।” সোহা ঢোক গিলে বলে
” it’s ok. আপনি বিছানায় বসুন। আর কি বলতে চান বলুন।” শান শার্টের কলারটা টেনে বিছানায় বসে পরে। সোহা নিঃশব্দে শানের সামনে বসে
বলে
” বলুন আপনি কিসের জন্য ক্ষমা চাইছেন ??”
শান ছলছল চোখে সোহার দিকে বলে
” এতোমাস ধরে তোমাকে ভুলবুঝে চরিত্রহীন, স্বার্থপর সহ আরো কতো ভেবে এসেছি। আবার তোমাকে বলেছিও। অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছি তোমার সাথে। অবহেলাও করেছি সব কিছুর জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। তুমি আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও !! নাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।” সোহা কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে বলে
” আপনি ঠিকাছেন তো ?? নাকি নেশাটেশা করে এসেছেন ?? আপনি আমার কাছে ক্ষমা চাইছেন ?? আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না।”
শান অসহায় একটা লুক দিয়ে মাথা নিচু করে নেয়। সোহা শান্ত চাহনিতে তাকালো শানের দিকে। শানকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে শান্ত গলায় বলে
” তা কিভাবে আপনি বুঝতে পারলেন যে আপনি আমাকে এতোদিন ধরে ভুল বুঝে এসেছেন ?? আর আমি কি করেছিলাম ?? মানে আপনি আমাকে কি করতে দেখে আমাকে নিয়ে নিজের মধ্যে ভুল ভাবনা তৈরি করেছিলেন ??”
শান শার্টের হাতা দিয়ে নিজের চোখ জোড়া মুছে নিয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলে
” এই কথাগুলো আমি তোমাকে এখন বলতে চাইছি না। কথাটা শুনে তুমি কষ্ট পাবে আর আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না তাই আমি এখন বলবো না। তবে এতোদিন নিজের মধ্যে যেই ভুল ভাবনা পোষণ করেছি সেটা আজকে ভেঙে গিয়েছে। তাই আমি তোমার সামনে মাথা নত করছি। তুমি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ ?? নাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।” কথা শেষ করে শান উঠে দাঁড়ায়। এলোমেলো চেহারার বেশ পাল্টানোর জন্য ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ায়। সোহা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বলে উঠে
” কেউ ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে হয় আমি জানি সেটা। আর আমি তো বাচ্চা একটা মানুষ। আমি ক্ষমা করতেই পারি। এতো করে যখম ক্ষমা চাইছেন তাহলে ক্ষমা করে দিলাম তবে আর কোনোদিন আমার সাথে এমন করলে আর ক্ষমা করবো না।” বলে সোহা শানের দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। শান সোহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা বড় হাসি দিলো। বুকের ভেতরে থাকা পাথরটার কিছুটা ভার কমে যায় শানের। শান বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে ওয়াসরুমের ভেতরে চলে যায়।

অফিসের পোশাক পরে শান নিচে নেমে আসে। সোহা টেবিলে বসে বসে খাচ্ছে আর শানকে দেখে বারবার সেদিকে তাকাচ্ছে। শান কিছু ভাবতে ভাবতে চেয়ারে এসে বসে পরে। সোহা শানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাচ্ছে নিলা সোহাকে দেখে মিটমিট করে হেসে শানকে উদ্দেশ্য করে বলে
” শান !! কি এতো ভাবছো বলো তো ??তোমার বউ যে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে সেই খেয়াল আছে তোমার ??” নিলার কথা শানের কর্ণপাত হতেই শান ঠোঁট কামড়ে সোহার দিকে তাকায়। সোহা থতমত খেয়ে নিলার দিকে বড়বড় করে তাকিয়ে আবার শানের দিকে তাকায়। শানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সোহা বোকার মতো তাকিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে। সোহা একটা ভেটকি দিয়ে মাথা নিচু করে খেতে থাকে। সোহাকে দেখে শান হালকা হাসি দেয়। খাবার শেষ হতেই শান উঠে দাঁড়ায়। কোট হাতে নিয়ে মুচকি হেসে শান্ত গলায় সোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” চলো তোমাকে ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিচ্ছি।” শানের কথা শুনে সবাই চমকিত ভাবে শানের দিকে তাকালো। শান নিজ ইচ্ছায় সোহাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইশান কালকেও অনেক বকাবকি করেছে শান সোহাকে ড্রপ করে দেওয়ার জন্য। সেই ছেলে আজকে হেসে হেসে নিজ থেকে সোহাকে ড্রপ করে দেওয়ার কথা বলছে ভাবতেই ইশানের বিষম উঠে গেলো। ইশানের নাকে মুখে কাশির শব্দে সবার ধ্যান ভাঙে। শাহানাজ বেগম আর নিলা ইশানের বিষম থামাতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
সোহা স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছে। সবাইকে এতো অবাক হতে দেখে কিছুই বুছলো না। কিছুক্ষণ পরে ইশান শান্ত হয়ে শানের দিকে তাকিয়ে বলে
” তুই কি অসুস্থ নাকি ?? এতোদিন তো সোহার ধারে কাছে ঘেষতে দেখতাম না আর আজকে নিজ ইচ্ছায় সোহাকে নিয়ে যেতে চাইছিস ??” শান গা ছাড়া ভাব নিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে
” আমার বউ আমি নিয়ে যাবো না তো আর কে নিয়ে যাবে ?? সোহা আমার বউ। এতোদিন ওকে নিয়ে যায়নি এখন থেকে নিয়ে যাবো। আমি গাড়ি বের করছি।” শেষের কথাটা সোহার দিকে তাকিয়ে বলে বেড়িয়ে যায়। ইশান, শাহানাজ বেগম, নিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে শানের চলে যাওয়ার দিকে। সোহাকে নিয়ে এতোদিন বিরক্তিবোধ জরতো সে কিনা আজকে এতো সুন্দর করে বউ বলে সম্মোধন করছে সোহাকে ভাবতেই আকাশ থেকে ধুরুম ধারুম করে পরছে সবাই। সোহা খাবার অর্ধেক খেয়েই উঠে দাঁড়ায় চলে যাওয়ার জন্য। নিলা শাসন স্বরে বলে
” সোহা !! খাবারটা শেষ করো তারপর যাবে। একদিনও ভালো করে খাও না তুমি।” সোহা ব্যাগ নিয়ে বলে
” পরে এসে খাবো এখন যাই আমি দেড়ি হয়ে যাবে নাহলে। bye সবাইকে।” বলতে বলতে সোহা দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। শাহানাজ বেগম পানি খেতে খেতে বলে
” শানের মতিগতি আমি কিছুই বুঝতে পারি না। কখন কি করে নিজেও বলতে পারেনা।” শাহানাজ বেগমের কথা শেষ হতেই সালমা স্টাডি রুম থেকে ছুটে এসে হালকা চেঁচিয়ে বলে
” খালাম্মা !! স্টাডি ঘরের টিভি টা একদম ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে আছে।” শাহানাজ বেগম চিৎকার করে বলে উঠে
” কি !! আমার এতো সাধের টিভিটা কে ভাঙলো??” সালমা মাথা নিচু করে বলে
” সেইটা তো জানি না আমি।” শাহানাজ বেগম রাগি গলায় বলে
” কি জানিস না তুই ?? আমাদের বাড়িতে কি ভুত আছে নাকি যে ভেঙে রেখে যাবে আর কেউ জানবে না ??” ইশান খেতে খেতে বলে
” আছেই তো একজন। তোমার ছোট ছেলে ছাড়া আর কেউ বাড়িতে ভাঙচোর করে না। শানই হয়তো কালকে রাতে ভেঙে রেখেছে।” শাহানাজ বেগম রেগে ফুলে উঠে।

ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামতেই সোহা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। শান মাথা বের করে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে হাত নেড়ে বিদায় দেয়া। সোহাও হালকা হেসে বিদায় দিয়ে গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। ইতি মাঠে একা বসে বসে পরছিলো। চারপাশে তাকাতে তাকাতে সোহাকে দেখয়ে পেয়ে উঠে দাঁড়ায়। বই ব্যাগে রেখে জামা ঝেড়ে সোহার কাছে এগিয়ে যায়। সোহা ততোক্ষণে ইতিকে খেয়াল করেনি। ইতি পেছন থেকে সোহার চুলে টান দেয়। সোহা মাথায় হাত দিয়ে উফফ শব্দ করে পেছনে ঘুরে তাকায়। ইতিকে দেখে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলে
” তুমি আমাকে মারলে ??” ইতি ফিকফিক করে হেসে দিয়ে সোহার গাল টেনে বলে
” ওলে, বাবুদের মতো কিউট লাগছে তোমাকে। তুমি ছোট হলে তোমাকে একটা চুমু দিতাম।” সোহা গালে হাত দিয়ে চোখ বড়বড় করে বলে
” ছিঃ !! কি লুচু তুমি। আমার মতো নিষ্পাপ বাচ্চার উপর অত্যাচার করতে যাও তুমি ??” ইতি ভ্রু কুচকে হেসে দেয় সোহাও সাথে তাল মিলায়। ইতি হাত ধরে বলে
” চলো লাইব্রেরিতে যাই।” ইতি মাথা নেড়ে হ্যা বলে।
পেছন থেকে টান অনুভব করতেই সোহা পেছনে ঘুরে তাকায়। হৃদয়কে ওড়না ধরে রাখতে দেখে সোহা বড়সড় একটা ঢোক গিলে ওড়না চেপে ধরে। ইতি সোহার ওড়না জোড়ে টান দিয়ে হৃদয়ের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে
” এটা কোন ধরনের অসভ্যতামো ?? এভাবে ওড়না টেনে ধরছেন কেনো ??” হৃদয় বাকা একটা হাসি দিয়ে বলে
” এটাকে অসভ্যতামো বলে না গো। এটাকে নিউ ফ্রেশার ওয়েলকাম বলে। সেইদিন তো করা হয়নি ভালো করে তাই আজকে ভাবলাম কাজটা সেড়ে নেই।” ইতি রেগে বলে
” আমাদের কোনো ওয়েলকামই প্রয়োজন নেই। শুধু আপনারা আমাদের থেকে দূড়ে থাকলেই হবে।” হৃদয়ের পাশ থেকে রিমি এগিয়ে এসে ইতির মুখ চেপে ধরে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” মুখে এতো ঝাঁঝ কেনো হ্যা ?? আমাদের ব্যাপারে বেশি কথা বললে তোর মুখটা ঠিক থাকবে কিনা সেটা সিউর হয়ে বলতে পারছি না আমি। এমনও হতে পারে নিজের এই মুখ নিয়ে সবার সামনে আসতে পারবি না।” সোহা ধাক্কা দিয়ে রিমিকে সড়িয়ে দিয়ে রাগি গলায় বলে
” একদম গায়ে হাত দেবেন না। সিনিয়ার হয়েছেন সিনিয়ারের মতো থাকুন তাহলেই সম্মান পাবেন নাহলে আপনাদের উপর কেউ থুথু ফালাতেও কেউ দ্বিধাবোধ করবে না।” রিমি, হৃদয় সবাই রেগে যায় সোহার এমন কাজে। হৃদয় দুই কদম এগিয়ে এসে হাত উঁচু করতেই সোহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। কিন্তু কিছু না হওয়ায় সোহা ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে তাকায়। হৃদয়ের হাত ধরে রেখে শান। শানকে দেখে সোহা অবাক হয়ে যায়। শান হৃদয়ের হাত ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে সোহার সামনে এসে দাঁড়ায়। গম্ভীর গলায় বলে
” আমার ওয়াইফ এর গায়ে একটা আচ পরলে!! তোমাদের লাইফ ওয়ারেন্টি থাকবে না। সোহার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করো কোন সাহসে তুমি??” শানের গলা ফাটা চিৎকারে মাঠের সব মানুষ এসে ওদের পাশে জড়ো হয়। হৃদয় সবার দিকে চোখ বুলিয়ে শানের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়। ইতিমধ্যে শানের কপালের রগ ফুলে উঠেছে। হৃদয় রেগে শানের কলার চেপে ধরে বলে
” আমার এলাকায় এসে আমার উপরই চিৎকার করছেন !! শান চৌধুরি একদম ভালো করছেন না।” শান তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” really !! এটা তোমার এলাকা ?? আমি তো জানতামই না। তুমি অন্যের বউয়ের দিকে নজর দেবে বিরক্ত করবে আর আমি চুপ করে থাকবো ?? তোমাকে এই ভার্সিটি থেকে বের করতে আমার দুই মিনিট সময় লাগবে না সেখানে তুমি আমাকে তোমার এলাকা দেখাতে এসেছো ?? এই নিয়ে তৃতীয় বার ওয়ার্নিং দিচ্ছি। এদের থেক্ব দূরে থাকো নাহলে ফল ভালো হবে না” হৃদয় এগিয়ে এসে রেগে বলে
” কি করবেন আপনি আমার ??” শান টেডি স্মাইল দিয়ে দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” আমি আমার কথায় বেশি পটু না কাজে বেশি পটু। so, কি করবো সেটা এবার দেখতেই পাবে।” হৃদয় রাগে কাপঁতে কাঁপতে রিমিকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। একে একে আশেপাশের মানুষও চলে যায়। শান পেছন ফিরে সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে সোহা নাক লাল করে চুপচাপ কাঁদছে। শান এগিয়ে এসে অস্থির হয়ে বলে
” সোহা কি হয়েছে ?? কাঁদছো কেনো তুমি ??বোকা মেয়ে দেখো সবাজ চলে গিয়েছে।” সোহা নাক টেনে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে
” আপনি না আসলে ওরা আজকে আমাকে মেরেই দিতো।” শান হালকা হেসে বলে
” ধুর বোকা মেয়ে !! ওরা কেউ তোমার গায়ে একটা আচও ফেলতে পারবে না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আর নাও তোমার ফোন। গাড়িতে ফেলে এসেছিলে সেটা দিতেই এসেছিলাম। ভাগ্যভালো ছিলো নাহলে এখানে আরো কিছু হয়ে যেতো।” সোহা নাক টেনে ফোন হাতে নিয়ে শানকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইতিকে নিয়ে চলে যায়। শান সোহার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে
” এখন থেকে তোমার গায়ে আমি কোনো আচ লাগতে দেবো না। বিপদে-আপদে তোমার ঢাল হয়ে দাঁড়াবো।

চলবে~ইনশাল্লাহ……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে