#গল্প-তুমিময়
#Aysha_khan
#পার্ট ১০
‘ সব ছেড়ে দিবো তুই আমার হয়ে যা প্লিজ! ‘
বারান্দার রেলিং উপর দু হাতের কুনুই ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আদনান ভাই। দৃষ্টি সামনে রেখেই কথাটা বললেন। স্বর টা ভাঙা লাগছে! আদনান ভাই কী কেঁদেছেন? হতভম্ব হয়ে তার মুখের দিকে তাকালাম। রোদ্দুরের ঝলমলে আলোয় তার ফর্সা মুখে পরে দ্বিগুণ রূপ বারিয়ে তুলেছে! কিন্তু চোখ দুটোতে দুঃখের ছড়াছড়ি! এই দুঃখ টুকু না থাকলে এই সুপুরুষকে আরও মারাত্মক লাগতো! যদিও এখন দুঃখি প্রেমিক রূপেও তাকে ঘায়েল করাই লাগছে। আচ্ছা আদনান ভাই আমার পছন্দের। ভালোবাসার মানুষ সেও আমাকে ভালোবাসে। খুব কি ক্ষতি হতো নানু এরূপ ভিলেন হয়ে আমার জীবনে না এলে? একটু যদি বুঝতো আমার দুজন দুজনকে অতিরিক্ত চাই। আমারা আমাদের দুঃখ সুখের উল্লাসে মেতে থাকতে চাই আজীবন? একটুকু বুঝ কেন আল্লাহ নানুকে দেননি। হয়তো এভাবেই ভালো তাই। আমি মেনে নিয়েছি আদনান ভাই মেনে নিতে পারছেন না। তবে যতই কষ্ট হোক আমি এভাবে বিয়ে করবোনা!
আমি একটু কথা ঘুরাতে বললাম,
‘ আদনান ভাই এভাবে আর ভালো লাগছেনা! খিদে পেয়েছে! ‘
আদনান ভাই সোজা হয়ে দাঁড়ালেন! ক্ষোভে ফেটে পরে বললেন,
‘ কেন আমার হৃদয় হরন করে চিবিয়ে খেয়ে পেট ভরেনি তোমার? ‘
আমি বিরক্তিকর চাহুনির সাথে বললাম,
‘ প্লিজ আগে ঠিক করুণ আমি আপনার তুই না তুমি? ‘
আদনান ভাই ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বললেন,
‘ তুই আমার তুমি আমার তোমার সব আমার। সব তুমিময়! আমি যা খুশি যখন খুশি ডাকবো এবার চল বিয়ে করি! তারপর ফুটবল টিম তৈরী মিশনেও তো নামতে হবে নাকি? ‘
তার কথা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম। কিসব উল্টো পালটা কথা বলছেন আদনান ভাই ফুটবল টিম? সিরিয়াসলি! আমি দ্রুত রুমে ঢুকে যেতে যেতে বললাম,
‘ আপনি পাগল হয়ে গেছেন! ‘
উনি পাউডলি বলেন,
‘ হ্যাঁ বিউটিফুল তোমার প্রেমে! ‘
এই প্রেম এই প্রেম সব ধ্বংসের গোড়া। এই প্রেমে পড়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা সেই বানী আজ সত্যি বলতে সত্যি মনে হচ্ছে। যে ব্যাক্তি এই বানী লিখেছে তাকে মেডেল ছুঁড়ে দিতে ইচ্ছে করছে। এত সত্যি কথার বানী লিখে যাওয়ার জন্য! উফফ এই প্রেম জীবনটা এভাবে প্যারাময় করে তুলবে জানলে এই সুদর্শন কুপুরুষের প্রেমে কিছুতেই পরতাম না! কুপুরুষ বলার আমে উনি একটা কুফা। যতে থেকে আমার জীবনে এসেছে জীবন কুফা হয়ে উঠছে কপালে শুধু শনি ঘুরে।
রুমে ঢুকে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। তানাহলে এই লোক আবার কী বলে ফেলে! আস্ত নির্লজ্জ। লাগ দুটো টুকটুকে লাল হয়ে গিয়েছে আদনান কখনও আমার সাথে এভাবে কথা বলেনি। সর্বদা রাগ ধমক আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে চিৎকার এসবেই সীমাবদ্ধ। সেই ছেলেটা আমাকে এত ভালোবাসে অবিশ্বাস্য! তবে সে ইচ্ছে করেও তো এমন কিছু করেননি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হয়ে বের হওলাম। আদনান ভাই আমার বেডে শুয়ে ফোনে মত্ত্ব! বাইরে যে কাজিনরা সোরগোল শুরু করেছে স্পষ্ট বুঝতে পারছি রুম সাউন্ডপ্রুভ হওয়ার পরেও এদের গলায় কতজোর! কি জানি ফাজিল গুলো কি করছে বাহিরে? আমি রুমে থাকা বেডের পাশে কাউচে বসে বললাম,
‘ আমার খিদে পেয়েছে! ‘
আদনান ভাই তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে আমার পাশ ঘেষে বসে পরলেন। ব্যাপারটা এত দ্রুত হলো। আমি নড়বার সময় পাইনি! আদনান ভাই উনার ডান হাত ঘুরিয়ে এনে আমার গালে রাখলেন। তার কাজে আমি হতভম্ব। সে বললেন,
‘ খাবার তো পাবেনা রোমান্স করতে পারো আমার সাথে এই বদ্ধ রুমে! ‘
আমার চোখ মার্বেলের ন্যায় বড় বড় বয়ে গেলো তার কথা শুনে! আমি লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম তার পাশ থেকে। দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে চিৎকার করে বললাম,
‘ পিহু আপু প্লিজ বাঁচাও! আদনান ভাই পাগল হয়ে গেছে! ‘
কেউ সারাশব্দ দিলোনা শুনেছে বলেও মনে হলোনা কেউ আমার কথা। আদনান ভাই হুট করে এসে আমাকে ঘুরিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরলেন। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলাম। আদনান ভাইয়ের স্বাভাবিক মুখ মুহূর্তে রাগান্বিত আভায় ফুঁটে উঠেছে। তাতে কপালের রগ দৃশ্য মান! ভয়ে মাথা নিচু করতেই। আদনান ভাই কর্কশ কণ্ঠে বললেন,
‘ লাস্ট টাইম জিজ্ঞেস করছি অয়ত্রী! তুমি কি চাও!’
লোকটা বেশিক্ষণ অন্য ফোর্মে থাকতে পারে না নিজের ফোর্মে চলেই আসে। মানুষ অভ্যাসের দাশ আসলেই কথাটা সত্য। রাগ, জেদ তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ আমি এভাবে বিয়ে করবোনা আদনান ভাই প্লিজ! ‘
আদনান ভাই সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত চেপে ধরে রুমের বাহিরে নিয়ে গেলেন। ড্রইং রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সবাই মিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে যদিও এখন প্রায় ১২ টা বাজে হয়তো। আমি ভেবেছিলাম আদনান ভাই আমাকে রেগে হয়তো বাবার কাছে রেখে আসবেন। কিন্তু না। উনি আমার হাত ধরে রেখে অভি ভাইকে ডাক দিলেন। সে আসতেই তাকে কিছু বললেন ফিসফিস করে। বাকি সবাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে। যেন হুট করেই এলিয়েন চলে এসেছে সবার সামনে! আমি সবার দিকে রাগী দৃষ্টি ছুঁড়ে মারলাম। ঠিক তখনি অভি ভাইয়া চলে গেলেন। আর আমাকে পিহু আপুর সামনে নিয়ে গিয়ে বিরক্ত স্বরে বললেন,
‘ এই ইডিয়েট টাকে রেডি করিয়ে দে! ‘
ভেতরটা কেঁপে উঠলো। রেডি কিসের জন্য রেডি? আমি দ্রুত বললাম,
‘ আপনি বলেছিলেন…..! ‘
পুরো কথা শেষ করতে পারলাম না তার আগেই আদনান ভাই বললেন,
‘ এখন আবার বলছি আজ রাতে আমাদের বিয়ে। দাদু বাদে আমার পরিবারের সবাই থাকবে তোর বাবা সহ। যে ব্যাক্তি আমার বউকে পছন্দ করেনা। সে আমার বিয়েতে থাকবে আমার পছন্দ না। ‘
আমি বরাবরের মতোই হতবাক হয়ে রইলাম! বাকি সবাই চেঁচিয়ে উঠলো খুশিতে মুহূর্তে ডাইনিং ড্রইং রুম ডান্সিং রুম মনে হলো আমার। সবার খুশি দেখে আমি আর কি বলবো খুজে পেলাম না। আদনান ভাইয়ের হৃদয়ে জমে থাকা ভালোবাসা গুলো হঠাৎ এক এক করে এভাবে প্রকাশ করছেন। আমি স্তব্ধ হয়ে রইছি। দুনিয়ায় নিষ্ঠুরতায় কষ্ট পেলেও হাজার। আবার তার এই ভালোবাসা গুলো দেখে মন জুড়ে এক শীতল বাতাস ভয়ে যাচ্ছে। যা সব কষ্ট গ্লানি দূর করে দিচ্ছে। এত নির্মম সত্য জেনেও আমি হয়তো আদনান ভাইয়ের ভালোবাসার জন্যেই পুরোপুরি ভেঙে পরছিনা। সত্যি ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে সব পানির মতো স্বচ্ছ হয়ে যায়। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি ফোনে কথা বলতে বলতে চলে যাচ্ছে বাকিরা হইচই করছে। আমি ঘর ভর্তি কাজিনের সামনে গিয়ে আদনান ভাইকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,
‘ আই আ্যম স্যরি আদনান ভাই। আর কখনও আপনাকে কষ্ট দিবোনা প্রমিস! ‘
ঘর ভর্তি কাজিন ইয়াহু বলে চিৎকার দিতেই আমার ঘোর কাটলো! আমি দৌড়ে পালাতে গিয়েও পারলাম না সব গুলো আমাকে জেঁকে ধরেছে। আমি করুণ চোখে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি মুচকি হাসলো! ইশ এত সুন্দর হাসি তার আহা! কাল এই লোক আমার বর হয়ে যাবে ভেবেই লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম দ্রুত। কিন্তু সেকি কাজিন গুলো আরও দ্বিগুন লজ্জা দিতে লাগলো! উফফ জ্বালা….
——-
সন্ধ্যায় বড় মামী ছোট মামী বড় মামা ছোট মামা সবাই এলেন। সাথে আহি আয়াত ভাই হায়াদ ভাই তারাও। এলেন না শুধু বড় মা আর বাবা তাদের কাছে নানু থাকায় তারা আসতে পারেনি নানুকে দেখে রাখতেও তো একজন থাকা লাগবে তাই তারা থেকে গিয়েছেন।
বড় মামী এসেই আমার কপালে চুমু খেলেন। আমার হাতে দুটো মোটা মোটা চুড়ি পরিয়ে দিলেন। আমি তখন সমানে কেঁদে যাচ্ছি মামীকে ধরে! মামী বললেন,
‘ সেদিন নিজে আদনানের বিয়ের কথা বললাম আমি যেন কোনও রিয়েকশন দিস তুই আর আমার ছেলের কষ্ট কিছুটা হলেও কমে। কিন্তু করেছি উল্টো কাজ। প্ল্যান ফ্লপ খেয়ে গেলো। কিন্তু সেটা পরে যানতে পেরেছি। ‘
বড় মার কথায় মামারা সহ আমি নিজেও তার কোলে হেসে উঠলাম! আসলে মামী তখন জানতেন না তার ছেলেকে আমি আমার মনের কথা বলে দিয়েছি। আদনান আদৃতা আপুর বিয়ে ঠিক করেছে নানু শুনেই। মামী চেয়েছিলেন আদনান ভাইকে ভালোবাসলে আমি যেন বলে দেই। তাহলে যে এই দিনটা আসবে মামী যানতেন। কারণ মামীর আদৃতা আপুকে পছন্দ নয় কারণ মামী জানতেন আদনান ভাই আমাকে ভালোবাসেন। আদনান ভাই সত্যি ফ্রেন্ডলি একটা মা পেয়েছেন। যার সাথে উনি সব মন খুকে শেয়ার করতে পারেন। মনে মনে ভাবী আমার মার সাথেও যদি এমন একটা সম্পর্ক থাকতো কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি। আমি মার সংস্পর্শই পাইনি কখনও ভেবেই দীর্ঘশ্বাস আড়াল করলাম কাউকে বুঝতে দিলাম না এই মুহূর্তে মাকে মিস করছি মনে হচ্ছে তাকে পাশে দরকার। কিন্তু মামীর স্নেহপূর্ণ ভালোবাসায় সব ভুলে গেলাম যেন। উনি নিজ হাতে আমাকে তৈরী করলেন….
চলবে!