তুমিবসন্ধ্যার মেঘ পর্ব-০৬

0
10

#তুমি_সন্ধ্যার_মেঘ
#হুমায়রা
#পর্বঃ০৬

–এসব কি দেখছি রাশা। গহনা তোর কাছে এতো সস্তা? জানিস ওখানে কত টাকার গহনা আছে?

শপিংমলে ঢুকে কিছু ড্রেস দেখছিলো রাশা৷ তক্ষুনি মায়ের কল আসে। প্রথমটায় অবাক হলেও এখন বুঝতে পারছে, কেনো কল এসেছে৷ অনেক লোকের ভিডিও করা দেখেই রাশা বুঝেছিলো, ব্যাপারটা পাবলিক হতে আর সময় লাগবে না। সে মনে মনে এটাই চাইছিলো। আর হলোও তাই। ঘন্টা না পেরোতেই বাড়ি থেকে কল আসলো। রাশা মনে মনে হাসলেও অবাক হওয়ার ভাণ করলো। কণ্ঠে বিষ্ময় ঢেলে পালটা প্রশ্ন করলো,

— অনেক টাকার না?

রাশার গলার স্বরে না জানার ভাণ। ফোনের ওপাশে থাকা রাশার মা ফুঁসে উঠলো,

–তুই এই কাজ কিভাবে করতে পারলি? একটুও বুক কাঁপলো না?

ঘড়ির দোকানের সামনে দারোয়ানের সিটটা ফাঁকা ছিলো। রাশা সেখানেই বসলো। মনে হচ্ছে গল্প এখন অনেকক্ষণ চলবে।

–কেঁপেছিলো মা। যতক্ষণ ওগুলো আমার কাছে ছিল ততক্ষণ ভয়ে বুঁক কাঁপছিলো৷ মনে হচ্ছিলো এখনও আমি ওই বাড়ির নজরবন্দি। তবে এখন অনেক শান্তি লাগছে।

— তুই কি পাগল? এতো কিসের ক্ষোভ তোর? কিসের অভাব ছিলো? তোর কাজে সবাই কি পরিমাণ রেগে গেছে, জানিস?

রাশা মলিন হাসলো। তারপর উদাস কণ্ঠে বললো,

–রেগে আছে না? রাগতে দাও। আর তো সুযোগ পাবে বলে মনে হয় না।

রাশার মা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–ওখানে আমাদের পারিবারিক গহনাও ছিলো।

খুশিয়ে লাফিয়ে উঠলো সে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে বললো,

–অপ্স মা! আনন্দ তো ডাবল করে দিলে। কি জানো তো, ভাবলাম তোমার শ্বশুরবাড়ির সম্পদ কোনদিন তো কোন ভালো কাজে আসে না। আমার মাধ্যমে একটু ভালো কাজে আসুক। এখন মনে হচ্ছে আমি একশো পার্সেন্ট সাকসেসফুল।

রাশার মা মেয়েকে বুঝানোর দ্বায়িত্ব থেকে অবসর নিলো। তাকে বুঝানো তার ক্ষমতার বাইরে৷ জোরে জোরে শ্বাস ফেলে শক্ত গলায় বললো,

–তুই ওগুলো কালকেই ফেরত পাঠাবি। কিভাবে করবি জানি না কিন্তু পাঠাবি।

রাশা কপাল কুঁচকে বিরক্তির সুরে বললো,

–ওই জুয়েলারিগুলো তো আমার ছিলো। আমার প্রপার্টি আমি তোমাদের কেন দেবো? ভালো কথা মনে করিয়েছো৷ তোমার শ্বশুরবাড়ির প্রপার্টিতে তো আমারও অংশ আছে। বাবাকে বলো প্লিজ, আমার অংশ যেনো আমাকে দিয়ে দেয়।

রাশার মা তেঁতে উঠলেন,

–কিসের সম্পত্তি? তোকে সবাই ত্যাগ করেছে৷ তোর বাবা তোকে ত্যাজ্য করেছে৷ ভুলে গেছিস?

রাশা হাসলো৷ এই কুটিল হাসি রাশার মা দেখলে হয়তো রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পরতো।

–মাই ডিয়ার মম, ত্যাজ্য আর ত্যাগ বলে কোন শব্দ আইনের খাতায় নেই৷ তুমি তো জানোই, আমি আমার কথা রাখতে ঠিক কতদুর যেতে পারি।

তিনি কেঁদে ফেলে অসহায় স্বরে বললেন,

–তোর মতো মেয়ে পেটে ধরে এখন আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

রাশার মুখ গরম হয়ে উঠলো৷ তীব্র রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো৷ সাথে মলিন কষ্টের নিঃশ্বাস। দম বন্ধ স্বরে বললো,

–আমার মতো মেয়েকে তো তুমি চাওনি মা৷ শুধু আমাকে কেনো, বড় আপা, মেজো আপা, ছোট আপা, দিয়া, কনিকা এদের কাউকেই তো তোমরা চাওনি। একমাত্র দাদাজানের ভয়ে তোমরা আমাকে পৃথিবীতে আনতে বাধ্য হয়েছো। তোমাদের কাছে তো একমাত্র ছেলেরাই মানুষ। তোমাদের বংশ প্রদীপ, উত্তরসূরী।

রাশার মা চোখের পানি মুছে ভৎসনা করে বললো,

–টাকা পয়সা দিয়ে পড়াশোনা করিয়ে এতো বড় করে আজকে আমাদের উপরই আঙুল তুলছিস? লজ্জা করে না?

–এটা তো আমার অধিকার ছিলো আর তোমাদের দ্বায়িত্ব। করতে তো হতোই। আরেকটা কথা মনে পরেছে। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্লক কে করেছে? খুলে দিতে বলবে। আর আমার ব্যাপারে দখলদারি করতে আসলে কিন্তু আমি চুপ থাকবো না। তোমার শ্বশুরবাড়ির লোকদের বলে দিও, তারা মানুক বা না মানুক, ওদের জিনই আমি ক্যারি করছি। তাই ইট ছুড়লে পাটকেল খেতেই হবে।

রাশার মা চিৎকার করে উঠলো,

–আমাদের সম্মান নষ্ট করে এখন বড় বড় কথা বলছিস?

রাশা তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

–সম্মান! তোমাদের আদৌ সম্মান আছে তো? সাব্বির ভাইয়া যখন সিডনিতে একটা মেয়ের সাথে তিন বছর লিভ ইন এ ছিলো, আর যখন সেটা পাবলিক হয়ে গেছিলো, তখন তোমাদের সম্মান যায়নি? ঘরে বউ বাচ্চা রেখে যখন ছোট চাচা হোটেল রুমে ধরা পরলো তখন তোমাদের সম্মান যায়নি? আর বাবা…

ফোন ডিসকানেক্ট হয়ে গেলো। রাশা উঠে দাঁড়িয়ে ফোন ব্যাগে ঢুকালো। মায়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। খুব ভালো করেও জানতো, এই প্রসঙ্গ তুললে মা ফোন কেঁটে দেবে। মায়ের মুখের উপর ফোন কাঁটা ভালো দেখায় না। তার থেকে ওপাশ থেকে কল কাঁটলেই সব থেকে বেশি ভালো হয়।

****
উষিরের আনলিমিটেড ক্রেডিট কার্ডের বিলও আনলিমিটেডই হলো। ইয়া বড় একটা রিসিট বের হলো। সেগুলো নিয়েই ঘরে ফিরলো রাশা। অন্যদিকে উষির পার্টি অফিসে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংএ ছিলো৷ তিনটে মন্ত্রী আর কয়েকটা এমপির সাথে এই মিটিং৷ সব ঠিকঠাক থাকলে সামনের নির্বাচনে সংসদসভায় উষিরের জন্য একটা সিট বরাদ্দ থাকবে৷ সে হয় মন্ত্রী আসনে, নাহয় উপমন্ত্রী আসনে আর নাহলে এমপি তো হবেই হবে। তার নিচে সে নামতে চায় না। মেয়র, চেয়ারম্যানের মতো ছোটখাটো পদে বসে মাথার উপরে উঁচু মহলের ছুড়ি ঘোরানো দেখার মতো সহ্যশক্তি তার নেই। এইদিকে মিটিংএর মাঝেই তার ফোনে কলের উপর কল, মেসেজের উপর মেসেজ আসতে থাকে। সাথে আছে আনলিমিটেড ক্রেডিট কার্ডের কস্টবিল।
ফোন সাইলেন্ট ছিলো। তাই মিটিং চলাকালীন দেখতে পায়নি উষির। মিটিং শেষে ফোন হাতে নিতেই তার কপাল কুঁচকে গেলো। পরমুহূর্তেই কপাল সোজা হলেও চোখ বিষ্ময়ে বড় বড় হয়ে গেলো। মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো৷ প্রচন্ড রেগে তক্ষুনি বাড়ি ফিরলো।

একা একাই ঘুরে ঘুরে শপিং করে প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছিলো রাশার। ফিরেই খেতে বসলো। মেন্যুতে কাঁটাযুক্ত একটা মাছ ছিলো। রাশা মনোযোগ দিয়ে মাছের কাঁটা ছাড়াচ্ছিলো। উষির রাশাকে খাওয়া অবস্থায় দেখে আরো রেগে গেলো। তার এতো বড় ক্ষতি করে এখন তারই বাড়িতে বসে পায়ের উপর পা তুলে খাচ্ছে!
উষির রেগে রাশার সামনে রাখা ভাতের প্লেট হাতে তুলে ঢিল দিয়ে ফেলে দিলো। চমকে উঠে দাঁড়ালো রাশা। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাড়ির সদস্যরা দ্রুত পায়ে ডাইনিংরুমের বাইরে এসে জড়ো হলো। রাশা ঢোক গিলে উষিরের আগুন লাল চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে তার বুক কাঁপছে। উষির রাশার ভয়কে দ্বিগুণ বাড়িয়ে কবজি শক্ত করে চেপে ধরলো৷ ব্যথায় চোখ বুজে ফেললো রাশা। উষির ভয়ংকর স্বরে বললো,

–তোমার এসব করার সাহস হয় কিভাবে? ভাবো কি নিজেকে? তুমি যা খুশি করবে আর আমি সবটা মেনে নেবো? হাতের পুতুল আমি? এক্ষুনি তুমি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবে৷ তোমাকে আর সহ্য করতে পারছি না।

চিৎকার করে উঠলো উষির। কেঁপে উঠলো রাশা। কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাহিদা গমগমে স্বরে বললো,

–কি হয়েছে?

উষির রাশার হাত প্রায় ছিটকে ছেড়ে দিলো। পেশিতে টান লাগলো ভীষণ। হাতের জয়েন্টের কাছে এক হাত দিয়ে চেপে ধরলো সে। উষির মায়ের দিকে এগিয়ে চেঁচিয়ে তিরিক্ষ স্বরে বললো,

–কি করেনি সেটা বলো? বিয়ের কথা পাবলিক করে দিয়েছে। এখন ফোনের উপর ফোন আসছে। সবাইকে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে। এতো ঝামেলার মধ্যে আরেকটা ঝামেলা বাজালো। এসব এখন সামলাবো কীভাবে?

শাহিদা থমথমে গলায় বললো,

–ও ভুল কি বলেছে? তোদের বিয়ে হয়নি? আর রাশার সাথে এমন ব্যবহার করার সাহস হয় কিভাবে? তোর বাবাকে কোনদিন আমার সাথে এমন করতে দেখেছিস? বাড়ির সবার সামনে ওকে অপমান কেনো করলি? মুখের গ্রাস কেঁড়ে নেওয়ার সাহস কে দিয়েছে তোকে? যদি সম্মান করতে না পারিস তাহলে অসম্মান করার সাহসও তোর নেই।

শাহিদার গলা দিয়ে রাগ বেরোচ্ছে৷ অত্যান্ত রুষ্ট দেখাচ্ছে তাকে। মাহফুজাও রেগে ছিলো৷ রুঢ় কণ্ঠে বললো,

–ভাবি ঠিক বলেছে উষির। তোমার কাকা যতদিন বেঁচে ছিলো ততদিন সবার সামনে আমার সাথে কখনও খারাপ ব্যবহার করতে দেখেছিলে? তোমার দুই বোন কি শিখবে বলোতো? যতই রেগে থাকো, তাই বলে কেউ খেতে বসলে তার মুখের সামনের খাবার এভাবে কেড়ে নেবে?

উষির আহত স্বরে বললো,

–ও আমার সম্মান নষ্ট করেনি, ছোট মা?

শাহিদা গমগমে স্বরে বললো,

–তোর সাথে ওর সম্মান নষ্ট হয়নি?

উষির রাগে জর্জরিত কণ্ঠে বললো,

–আজকে তো ওর কিছুই হয়নি। যা ক্ষতি হওয়ার সব আমার হয়েছে।

শাহিদা গম্ভীরমুখে বললো,

–তুই অবিবাহিত ছিলি জন্য সবাই তোকে সাপোর্ট করতো আর এখন বিবাহিত হয়ে গেছিস তাই কারো সাপোর্ট পাবি না। এই ভয় পাচ্ছিস?

উষির রাগ ভুলে থতমত খেয়ে বললো,

–আমি এসব কখন বললাম?

–তাহলে সমস্যা কোথায় হচ্ছে? কারো কাছে কমিটেড ছিলি? কাউকে বলেছিলি, তাকে না জানিয়ে বিয়ে করবি না? নাকি তোর পার্টি অফিসে কোন রুল আছে যে বিবাহিত কেউ রাজনীতি করতে পারবে না?

উষির হতাশ হলো। রাগ ছুটে পালিয়ে এখন মায়ের আদুরে বাচ্চার মতো ভেঙে পরলো,

–সেসব কিছুই না মা। তুমি বুঝতে পারছো না। এসব অনেক জটিল ব্যাপার। যখন যা খুশি তা করতে পারবো না। আমার সব ব্যাপারেই কৈফিয়ত দিতে হয়।

–কাকে কৈফিয়ত দিতে হয়? কথা বলা আমার সাথে। আমিও জানতে চাই, বিয়েতে তাদের কি এমন ক্ষতি হয়েছে যে শুভেচ্ছা না জানিয়ে কৈফিয়ত চাচ্ছে।

রাশার অজান্তেই তার চোখে পানি চলে আসলো। এই প্রথমবার তার সাথে এমনটা ঘটলো। কেউ তাকে সাপোর্ট করছে, তার হয়ে কথা বলছে! তার থেকেও বড় কথা, নিজের ছেলের বিপক্ষে গিয়ে কেউ বৌমার হয়ে কথা বলছে। তার বাড়িতেই অনেক মানুষ, অনেক বৌমা আর অনেক ছেলে আছে। কিন্তু কোনদিন এমনটা হয়নি। আর বোধহয় হবেও না কখনও।

উষির আর কোন কথা বললো না। যেভাবে ঝড়ের গতিতে এসেছিলো সেভাবেই ঝড়ের গতিতে চলে গেলো। সেই দুপুরে আর কারো খাওয়া হলো না। ময়না ফ্লোর পরিষ্কার করতে করতেই রাশা ঘরে চলে গেলো৷ তার খুব ঘুম পাচ্ছে। শাশুড়ি মায়ের অদ্ভুত ব্যবহার দেখে বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছে।

রাত দশটার পরে ক্ষিদের জ্বালায় নিচে আসলো রাশা। বাড়ির থমথমে পরিবেশে সবাই নিরবেই রাতের খাওয়া শেষ করেছিলো। রাশাকে ডাকলেও ক্ষিদে না থাকায় খেতে আসেনি। এখন খেতে এসেই এক অদ্ভুত দৃশ্যের মুখোমুখি হলো। আফসার সাহেব প্লেটে খাবার নিচ্ছিলেন। রাশার ধারণা মতে সবার খাওয়া হয়ে গেছে৷ তাই কৌতূহল মেটাতে আফসার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলো,

–কার জন্য খাবার নিচ্ছো আংকেল?

আফসার সাহেব আলতো হেসে বললো,

–তোমার শাশুড়ির জন্য। ছেলে না খেয়ে চলে গেছে, রাগ করে তিনিও না খেয়ে আছেন। দেখি রাগ ভাঙাতে পারি নাকি।

রাশা এতো পরিমাণে অবাক হলো, তা বলার বাইরে। বিষ্ময়ে অভিভূত হয়ে বললো,

–তুমি আন্টির জন্য খাবার নিচ্ছো? তুমি মানে..!

বিষ্ময়ে আর কথাই বলতে পারলো না। আফসার সাহেব হেসে ফেললেন।

–কেনো মানা আছে নাকি?

–তা নেই কিন্তু ব্যাপারটা আমার জন্য নতুন। বাট আই লাইক ইট।

মুগ্ধ হেসে বললো রাশা। আফসার সাহেব চওড়া হেসে বললেন,

–ক্ষিদে পেলে তোমার আন্টি খুব রেগে যায়। আর একটু দেরি হলে আমাকে ঘরেই ঢুকতে দেবে না।

রাশা মুগ্ধ হয়ে গেলো। তার বাড়িতে এই ব্যাপারটা আমাবস্যার চাঁদ। এই বাড়িতে আসার পর কত নতুন নতুন জিনিস দেখছে সে। দুইদিনও হয়নি আর আশ্চর্যের উপর আশ্চর্য হচ্ছে। রাশার ক্ষিদে আবার চলে গেলো। শাশুড়ির পরে শ্বশুরের এমন অদ্ভুত চালচলনে ক্ষিদে মরে ভুত হয়ে গেলো৷ কিচেন কেবিনেট থেকে তিন প্যাকেট চিপস, এক প্যাকেট বিস্কুট আর আড়াইশো গ্রামের একটা জুসের বোতল নিয়ে ঘরে ফিরলো। ভাতের ক্ষিদে মরে গেলেও পেট তো ফাঁকা৷ সেটা তো ভরতে হবে। তার উপর ঘরে বিশাল বড় একটা টিভি আছে। সেখানে আবার নেটফ্লিক্স সাবস্ক্রাইব করা। আড়াম করে সোফায় পা তুলে বসে পেট পূজা করতে করতে মুভি দেখতে লাগলো সে। হরর মুভি চলছিল তাই লাইট বন্ধ করার কথা কল্পনাতেও আনলো না।
উষির আসলো রাত একটার পর। পরনে শুভ্ররঙা পাঞ্চাবি ময়লা হয়ে রয়েছে। মাঝারি আকৃতির চুলগুলো এলোমেলো। ফর্সা সুন্দর মুখ মলিন হয়ে আছে। রাশা একপলক সেদিকে তাকিয়ে আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দিলো। উষির বেশ খানিকক্ষণ উশখুশ করে রাশার পাশে এসে বললো,

–আ..আ’ম সরি।

রাশার ভ্রু কুঁচকে গেলো। মাথা তুলে উষিরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

–সরি ফর হোয়াট?

উষির আমতা-আমতা করে বললো,

–ফর মাই বিহেভিয়ার।

বুঝতে পেরেছে এমন ভঙ্গিতে রাশা বললো,

–হুম..তাহলে তো খুব খারাপ করেছো। আমার রাগ করে থাকা উচিৎ। খালাম্মা রাগ করে রাতে খায়নি। আংকেল খাবার নিয়ে আন্টির রাগ ভাঙাতে গিয়েছে। তুমি আমার সাথে বাজে বিহেভ করেছো। তাহলে তোমারও রাগ ভাঙাতে হবে।

উষির তপ্ত শ্বাস ফেললো। লোকমুখে শুনেছে, স্বামীর বাম পাঁজরের হাড় থেকেই নাকি স্ত্রীকে তৈরি করা হয়। তার মতো সাদাসিধা মানুষের বাম পাঁজরের হাড় এতোটা বাঁকা হলো কিভাবে!
উষির বাবার পথ অনুসরণ করে রাশার জন্য খাবার নিয়ে আসলো। রাশা থতমত খেয়ে গেলো। এই ব্যাপারটাও তার জন্য নতুন। শাশুড়ি, শ্বশুর এরপর তাদের ছেলে! আজ বোধহয় তার খাওয়াই হবে না। অলস ভঙ্গিতে সোফার উপর শুয়ে পরলো। কুশনে মুখ গুজে বললো,

–খাবো না আমি। ক্ষিদে নেই।

উষির রাশার হাত টেনে উঠে বসালো। শাসিয়ে বললো,

–একটা ভাতও জেনো না থাকে।

রাশা ঢোক গিললো। কেনো যেনো আর মানা করতে পারলো না। উষির চেঞ্জ করার জন্য ক্লোজেট খুলেই হা হয়ে গেলো। ক্লোজেটের চার ভাগের সারে তিন ভাগই রাশার জামাকাপড় দিয়ে ভর্তি। মাত্র তিনতে তাকের মধ্যে তার জামাকাপড় রাখা রয়েছে। একটাতে তার টি-শার্ট আর ট্রাউজার, আরেকটা তাকে তার শার্ট আর প্যান্ট আর একটা তাকে তার পায়জামা পাঞ্চাবি। বিষ্মিত নয়নে রাশার দিকে তাকালো। তৃপ্তি করে খেতে থাকা রাশার দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারলো না। নিজের বাকি জামাকাপড়গুলোর কথাও আর জিজ্ঞাসা করতে পারলো না।
রাতে শোয়ার সময় রাশা যখন তার সাইড থেকে সরে উষিরের সাইডে এসে পরলো তখন সে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলো,

–আমার বাকি জামা কোথায় রেখেছো?

রাশা অলস ভঙ্গিতে হাই তুলে বললো,

–ময়না, বৃষ্টি আর বন্যার সাথে মিলে তোমার ডেইলি ইউজড ড্রেস বাইরে রেখে বাকিগুলো প্যাক করে রেখে দিয়েছি। আমার অতো বড়বড় লাগেজ ফাঁকাই পরে ছিলো। ওর মধ্যেই সুন্দর করে রাখা আছে

বলেই উষিরের দিকে পিঠ দিয়ে পেছন ঘুরলো। উষির দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার জীবনে পরিবর্তন হলো তো হলো, তাও এভাবে হলো!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে