তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা
পর্ব_১৬_শেষ_পর্ব
#মেঘ_বালিকা
.
.
.
রাস্তায় গিয়ে ভাগ্যক্রমে কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা অটো পেয়ে গেলাম..এতো রাত ভেবেছিলাম যাওয়ার মতো কিছুই পাবো না….
.
অটোতে বসে একটা কথাই শুধু আমার মাথায় খেলছে যা এতোক্ষন আমার মাথায় আসেনি সেটা হলো..আমাকে বাসায় কেনো যেতে বললো..এক্সিডেন্ট হলে তাসিনকে হাসপাতালে না নিয়ে বাসায় কেনো রেখে দিয়েছে..এই মুহুর্তে সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তাই আর কিছু ভাবতে পারলাম না..
.
আধ ঘন্টার পথ এক ঘন্টা লাগলো বাসায় পৌঁছাতে..ভাড়া মিটিয়ে দ্রুত বাসার ভিতরে ঢুকে গেলাম..ভিতরে ঢুকে আমি একটু অবাক হলাম..কারন দরজাটা খোলা রয়েছে আর কাউকেই দেখতে পারছি না..সব কয়টা রুমে গিয়েও কাউকে খুজে পেলাম না..এবার আমার ভয়টা আরো বেড়ে গেলো..হঠাৎ ছাদ থেকে একটা শব্দ আসায় দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম..ছাদের দরজাটা খুলে আমি এবার অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেলাম..কারন পুরো ছাদটা সাজানো বেলুন আর ফুল দিয়ে..চারপাশে ঝারবাতি জ্বলছে..আর দরজার সামনে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সরু একটা রাস্তার মতো তৈরি করা হয়েছে…আমাকে আসতে দেখেই সবাই একসাথে হ্যাপি বার্থডে বলে শুভেচ্ছা জানাতে লাগলো..আজ আমার বার্থডে কই আমার তো কিছুই মনে নেই..আমি সবার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি..এখানে ফারিয়া নিরব ভাইয়া অবন্তি তাসিন সবাই আছে..তাসিনের তো কিছুই হয়নি দিব্বি হেসে চলেছে..তার মানে ওরা সবাই আমাকে বোকা বানিয়েছে..
.
আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এবার তাসিন আমার দিকে এগিয়ে এলো..তারপর আমার হাত ধরে ফুলের সরু রাস্তাটা দিয়ে সবার মাঝে নিয়ে আসলো..আমি যেনো বোবা হয়ে গেছি..কোনো কথাই আমার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না…
.
তারপর কিছুটা রেগে তাসিনের হাতটা ছাড়িয়ে জোরে চিৎকার করে বললাম,,
-এসবের মানে কি?আমার সাথে কি আপনারা মজা করছেন..এভাবে মিথ্যা কথা বলে ডেকে আনার মানে কী??..
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ফারিয়া আমার কাছে এসে বললো,,
-তনু তুই রাগ করিস না আমরা তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যে এসব করেছি..সরি রে এই মিথ্যা কথাটা না বললে তুই এখানে আসতি না..
আমি ফারিয়ার দিকে রেগে তাকাতেই ও চুপ হয়ে গেলো…
এবার অবন্তি আমার কাছে এসে আমার হাত দুটো ধরে বলতে লাগলো,,,
-আমাকে মাফ করে দিস তনু..আসলে ১বছর আগে আমি যেই ভুলটা করেছি তার জন্যে আমি অনুতপ্ত..তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখ আমার ছিলো না..সব-সময়ই এর জন্যে আমার মধ্যে একটা অপরাধ বোধ কাজ করতো..যখন আমি জানতে পারি যে তোর আর তাসিন ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে তখন খুব খুশি হয়েছিলাম..পরে জানতে পারি তোদের সম্পর্কে এখনো আমার জন্যে ভুল বোঝাবুঝি রয়ে গেছে..তাই আমি তাসিন ভাইয়ার কাছে গিয়ে আমার সব কুকর্মের কথা বলি এবং মাফ চাই..ভাইয়াও আমাকে মাফ করে দেয়..আর একটা প্লান করে যাতে তুই নিজে থেকে ভাইয়ার কাছে যাস…কারন কিছুটা ভুল তোর ও ছিলো..সবটা জানার পর তুই না গেছিস ভাইয়ার কাছে ফিরে আর না তাকে সবটা খুলে বলেছিস..তাই ভাইয়া কিছুটা অভিমান থেকেই এসব করেছে..আমাকে টুশি সাজিয়ে ফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্টের ওই কাহিনি সবটা ভাইয়া প্লান করেছিলো তোকে কাছে পাওয়ার জন্যে.. ফারিয়া আর নিরব ভাইয়া ও আমাদের সাথে ছিলো..কিন্তু রেস্টুরেন্টের ঘটনায় তুই আবার ভাইয়াকে ভুল বুঝে চলে গিয়েছিলি যার জন্যে আজকের এই প্লান..প্লিজ তনু তুই আমাকে ক্ষমা করে দে…আর ভাইয়ার উপরও আর রাগ করে থাকিস না..ভাইয়ার কোনো দোষ নেই এখানে..সে তো ভুল কিছু করেনি..
.
কথাটা বলেই অবন্তি কান্না করে দিলো..আমি ওর কথা শুনে সম্পূর্ন হতবাক হয়ে গেছি..এগুলো তাহলে সবই সাজানো ছিলো..আর এর মূলে রয়েছে তাসিন..আমি এবার তাসিনের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম..আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে তাসিন মাথা চুলকাতে চুলকাতে ৩২পাটি দাঁত বের করে হেসে দিলো..কতো বড় শয়তান হলে কেউ এমনটা করতে পারে সেটাই ভাবছি আমি..তাসিনের সাথে তাল মিলিয়ে এবার নিরব ভাইয়াও দাঁত কেলাতে লাগলো..এই দুইটাই এক গোয়ালের গরু একজন যা করে অপর জনও তাই করে..
.
অবন্তিকে আর কিছু বলতে পারলাম না আমি..ও ওর ভুল বুঝতে পেরে যখন ক্ষমা চেয়েছে তখন ওকে ক্ষমা করে দেওয়াটাই উচিত মনে করেছি..কেউ ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত..কিন্তু তাসিনের উপর থেকে আমার রাগ যাচ্ছে না..ইচ্ছে করছে ওর মাথার সব চুল আমি ছিড়ে ফেলি..আমাকে এতোদিন ধরে বোকা বানিয়ে আসছে ও…
.
আমি রেগে আছি দেখে তাসিন এবার আমার দিকে এগিয়ে এলো আর আলতো করে জড়িয়ে ধরলো..আমি ছুটার চেষ্টা করলে ও আরো শক্ত করে আমাকে ওর বুকের সাথে চেপে ধরলো..এবার আর আমি নড়াচড়া করতে পারছি না..তারপর তাসিন বললো,,,,
-তুমি ভাবলে কি করে তোমার তাসিন তোমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভালোবাসবে..তুমি কি জানো না!! #তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা….
শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আমি তোমাকেই ভালোবেসে যাবো..এই দেহে যতো দিন প্রাণ আছে ততো দিন তোমার তাসিন তোমারই থাকবে..আর তুমিও আমারই থাকবে..বুঝলে আমার পাগলি বউ(কপালে ভালোবাসার পরশ একে)
.
এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না কান্না করে দিলাম আমি..আর তাসিনের বুকে ইচ্ছে মতো কিল-ঘুষি দিতে লাগলাম..তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম..এমন ভাবে ধরলাম যেনো ছেড়ে দিলেই তাসিন হারিয়ে যাবে আমার কাছ থেকে…
.
-এহেম এহেম..আপনাদের ভালোবাসার পর্ব শেষ হলে আসুন আমরা কেকটা কাটি..আমি আর এভাবে কেকের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছি না..(মুখ ফুলিয়ে কথাটা বললো নিরব ভাইয়া)
তার কথা শুনে আমরা সবাই হেসে দিলাম..তারপর কেকটা কাটা হলো..কাকতালীয় ভাবে এই বার্থডেটেই একদিন আমাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে গিয়েছিলো আবার এই বার্থডেটেই আমাদের সম্পর্কটা জোড়া লাগলো..বড়ই অদ্ভুত একটা বিষয়…
.
ছাদে আরো কিছুক্ষন আড্ডা চললো..চললো আমাদের খুনসুটি ভালোবাসা..বাবা-মাকে আমার আসার কিছুক্ষন আগেই আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে..তারা সবই জানতো আজকের প্লান এর কথা…এমনকি আমার আব্বু-আম্মুও জানতো..অথচ আমি কিছুই আঁচ করতে পারিনি..রীতিমতো দুই-দুইবার ওরা আমাকে বোকা বানিয়ে ছেড়েছে..
.
রুমে চুপ করে বসে আছি..রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে..ঠিক বিয়ের প্রথম দিনটার মতো..এই রাত তিনটার সময় ফারিয়া আর অবন্তি জোড় করে আমাকে শাড়ি পরিয়ে সং সাজিয়ে এখানে বসিয়ে রেখে গেছে..খুব ক্লান্ত লাগছে এভাবে আর বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না আমার..
.
হঠাৎ দরজা ঠেলে তাসিন রুমে প্রবেশ করলো..রুমে ঢুকে দরজাটা আটকিয়ে দিলো..ওকে দরজা আটকাতে দেখে আমি একটু কেঁপে উঠলাম..গলায় একটা শুকনো ঢোক গিলে সব কিছু ঠিক আছে কিনা চেক করে নিলাম..আমার কান্ড দেখে তাসিন একটু মুচকি হাসলো..কিন্তু কিছু বললো না..তারপর আমার পাশে এসে বসলো..ওকে বসতে দেখে আরো কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে নিলাম..আজকে এতো ভয় কেনো লাগছে আমার..প্রথম দিনও তো এতোটা লাগেনি..তাহলে আজকেই কেনো..
.
তাসিন আমার হাতটা ধরে একটা রিং পরিয়ে দিলো..তারপর বললো,,,
-এইটা বিয়ের প্রথম দিনই দিয়ার কথা ছিলো কিন্তু দিইনি চেয়েছিলাম যখন আমাদের সম্পর্কটা আবার আগের মতো হয়ে যাবে সেদিনই তোমাকে এই রিংটা পরিয়ে দিবো..
তারপর হালকা হেসে আমার হাতে ওর শিতল ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে দিলো…
আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি..কেনো জানি এই চোখ আজ ওর দিক থেকে ফিরতেই চাইছে না..
.
এবার তাসিনকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই ওকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে নিজে কিছুটা দুরে সরে বসলাম..তারপর ওকে কিছু বলতে না দিয়েই আমার হাতের দুটো আঙ্গুল ওর সামনে এগিয়ে ধরলাম..ও কিছুটা অবাক হয়ে বললো,,
-হাতের আঙ্গুল কেনো দেখাচ্ছো?
-যেকোনো একটা ধরো..
-ধরলে কি হবে?
-আহা এতো প্রশ্ন কেনো করো তুমি যা বলছি তাই করো..ধরো..
ও একটা আঙ্গুল ধরার সাথে সাথেই বললাম,,
-পারবে না..
-কি পারবো না?
-আগামী এক মাস তুমি আমাকে টাচ করতে পারবে না..
-অ্যা!!!!!!
-হ্যাঁ..ওকে গুড নাইট..(একটা ফ্লাইং কিস দিয়ে)
তারপর অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পরলাম..ইচ্ছে করেই এমনটা করেছি আমি..অন্য একটা আঙ্গুল ধরলেও আমি একই কথা বলতাম..এই কয়দিন কম কষ্ট দেয়নি ও..এখন বুঝুক ঠেলা..আমাকে বোকা বানানো..ঠিক হয়েছে থাক বসে..এইটা তোর শাস্তি…
.
তাসিন এখনও বোকার মতো বসে আছে..তনুর কথা সব তার মাথার উপর দিয়ে গেলো..বউ এর এতো কাছে থেকেও সে তাকে টাচ করতে পারবে না এ কেমন বিচার..সে বসে বসে এসব ভাবছে আর একটু পর পর তনুকে ডাকছে..তনু ঘুমের ভান ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসছে..বেচারা তাসিন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না..
এভাবেই চলতে লাগলো তাদের খুনসুটি ভালোবাসা..অবশেষে তাদের ভালোবাসা পরিপূর্নতা পেলো…
.
(সমাপ্ত)
.
(সব কিছু হয়তো একটু তাড়াতাড়িই হয়ে গেলো..আসলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই গল্পটা শেষ করে দিতে হলো..গল্পটা শেষ পর্যন্ত পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো আজকে অন্তত কমেন্টে সবাই জানাবেন..তাহলে আমার গল্প লেখাটা সার্থক হবে..জানি লেখায় অনেক ভুল-ভ্রান্তি ছিলো..অনেকে তা তুলে ধরেছেন..তার জন্যে আপনাদের ধন্যবাদ..ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়ার ফলে পরবর্তিতে তা আমি শুধরিয়ে লিখতে পারবো..আর এতোদিন কষ্ট করে আমার গল্পটা পড়ার জন্যে আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ..সবাই ভালো থাকবেন..)
#Stay_Home
#Stay_Safe
বাড়ি "ধারাবাহিক গল্প" তুমিই আমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা পর্ব_১৬_শেষ_পর্ব