তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা পর্ব_১৫

0
1934

তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা
পর্ব_১৫
#মেঘ_বালিকা
.
.
.
রুমে চুপ করে বসে আছি..দুদিন কেটে গেছে..সেদিনের পর আর তাসিনের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি…ও অনেকবার ফোন দিয়েছিলো ধরিনি..বাসার সবাই সেদিন আমাকে ওইভাবে দেখে খুব অবাক হয়েছিলো তারপর হাজারটা প্রশ্নও করেছিলো কিন্তু কারো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম না আমি..নিজেকে একদম ঘরবন্দি করে ফেলেছি বললেই চলে..তাসিনের বাবা-মাও ফোন দিয়েছিলো কিন্তু ধরিনি..তাদের সাথে কথা বলার মতো মুখ আমার ছিলো না..কি বলতাম তাদের!!
এদিকে আমার এই অবস্থা দেখে আমার আব্বু-আম্মুও বেশ চিন্তিত..
.
.
.
সেদিন অবন্তিকে দেখে আবার অতীতের কথা মনে পরে গিয়েছিলো…অবন্তির সাথে একসময় আমার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো..সম্পর্কটা ভালো হয়েছিলো তাসিনের সাথে রিলেশনে যাওয়ার পর থেকে.. তার আগে তেমন একটা কথা-বার্তা হতো না..কিন্তু এই সম্পর্কের পিছে যে অন্য কিছু ছিলো তা আমি বুঝতে পারিনি..ও শুধু আমার কাছে তাসিনের কথা শুনতে চাইতো..আমাদের কি কথা হয়!তাসিন আমাকে এই পর্যন্ত কি কি গিফট দিয়েছে ওর সব কিছু জানা চাই..আমিও সব বলতাম..তাসিনের সাথে আমার সম্পর্কটা ১বছরের হলেও আমরা ছিলাম বন্ধুর মতো..আর আমাদের মধ্যে তেমন একটা গোপনিয়তা ছিলো না..তাসিন দেখতে সুদর্শন হওয়ায় আমার ক্লাসের অনেক মেয়েই ওকে পছন্দ করতো..আমি এসব ব্যাপারে তেমন একটা পাত্তা দিতাম না..আমাদের রিলেশন এর ব্যাপারে ক্লাসের প্রায়ই সবাই জানতো..তাই পছন্দ হলেও লাভ ছিলো না..অবন্তির এসব ব্যাপারে আমার কোনো খটকা না লাগলেও ফারিয়ার লেগেছিলো..ও আমাকে অনেকবার বলেছিলো ওর সাথে তাসিনের ব্যাপারে কথা না বলতে কিন্তু আমি ওর কথা শুনিনি..
.
.
এভাবেই আমার কাছ থেকে অবন্তি তাসিনের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতে চাইতো..একদিন তাসিনের ফেসবুক আইডিও চায় আমিও সাথে সাথে বলে দিই..কিন্তু ভাবিনি এর পরিনাম অন্য কিছু হতে পারে…
.
.
একদিন তাসিনের সাথে মিট করতে যাই..তখন জানতে পারি ওকে আজ কয়েকদিন যাবত এফবিতে একটা মেয়ে খুব ডির্স্টাব করছে..তাসিন আমার কাছে বন্ধুর মতোই সব শেয়ার করতো..
মেয়েটার আইডি দেখালে আমার আইডিটা চিনতে দেরি হয়নি..কারন আইডিটা ছিলো অবন্তির..সেদিন খুব রাগ হয়েছিলো আর ম্যাসেজ গুলো দেখে রাগ বেড়ে আরও দ্বিগুন হয়ে গিয়েছিলো..পরেরদিন কলেজে গিয়ে আমি ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম…খুব রাগ হয়েছিলো ওকে বিশ্বাস করে এতো কিছু বললাম আর ও কিনা তার সুযোগ নিলো…
.
.
.
এভাবেই আরও কয়েকদিন কেটে গেলো..এর মধ্যে আর কোনো রকম কথা বলিনি ওর সাথে..আর ফারিয়া তো ওকে আগে থেকেই দেখতে পারতো না..এই ঘটনার পর থেকে আমাকেও ওর ধারের কাছে যেতো দিতো না..
.
.
আরও একমাস কেটে গেলো..আমার বার্থডের দিন তাসিনের সাথে আমার দেখা করার কথা ছিলো..অনেক খুশি ছিলাম সেদিন..কিন্তু আমার খুশিটা ছিলো ক্ষনস্থায়ী..তাসিনের সাথে দেখা করতে যাওয়ার কিছুক্ষন আগে অবন্তি আমার সামনে কান্না করতে করতে এসে কিছু ছবি দেখালো..যা দেখার পরে আমি থমকে গিয়েছিলাম..কারন ছবিগুলো অবন্তি আর তাসিনের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছিলো..যা দেখার পর এক নিমিসেই তাসিনের উপর থেকে আমার সব বিশ্বাস উঠে গিয়েছিলো..ফারিয়া আমাকে অনেক বুঝিয়েছিলো এগুলো ভুয়া,,এসব ইডিট করে করা হয়েছে..কিন্তু আমি সেদিন কাউকে বিশ্বাস করিনি..তাসিনের সাথে দেখা করে সম্পর্কের ইতি টেনে চলে এসেছিলাম…
.
.
সেদিন অনেক কান্না করেছিলাম..প্রথম ভালোবাসা ছিলো তাসিন আমার..তাই হয়তো বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম..আামদের মধ্যে বন্ধুর মতো সম্পর্ক থাকলেও সেদিন আমি ওকে একদমই বিশ্বাস করতে পারিনি..ছবিগুলো দেখে ভালোবাসার উপর থেকে বিশ্বাসই উঠে গিয়েছিলো…
.
.
.
তার কিছুদিন পর অবশ্য ফারিয়ার কথাই ঠিক প্রমানিত হয়েছিলো পুরাটাই ভুয়া ছিলো..ওই খানে ইডিট করে তাসিনের মুখ বসানো হয়েছে..ওইটা অবন্তি আর অন্য একটা ছেলের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি ছিলো..আমার আর তাসিনের সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্যেই এসব করা হয়েছে..ফারিয়া অবন্তিকে নানা রকম হুমকি ধমকি দিয়ে মুখ থেকে সব সত্যে কথা বের করেছিলো..মাঝে মাঝে ফারিয়ার কান্ড-কারখানা দেখে আমি একদম অবাক হয়ে যাই..ওর জন্যেই আমি সত্যিটা জানতে পেরেছিলাম..
.
.
সেদিন সবকিছুর জন্যে আমি অনুতপ্ত ছিলাম..ফারিয়া বলেছিলো তাসিনের কাছে গিয়ে সব কিছু বলে ক্ষমা চেয়ে ঠিক করে নিতে কিন্তু ওর সামনে দাড়ানোর মতো শক্তি আমার ছিলো না…
.
.
.
হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ঘোর কাটলো আমার..ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১১টা বেজে গেছে..এদিকে ফোনটা বেজে চলেছে..এতো রাতে কে ফোন দিলো ভাবতে ভাবতেই ফোনটা হাতে তুলে নিলাম..নিরব ভাইয়া..এতো রাতে নিরব ভাইয়া কেনো ফোন করেছে..তার নাম্বারটা ফোনে সেভ করা ছিলো..আগে মাঝে মাঝে কথা হলেও তাসিনের সাথে ব্রেকআপ হওয়ার পর আর কোনো কথা হতো না..তাই নাম্বারটা রয়েই গেছে…
ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কাপাকাপা কন্ঠে নিরব ভাইয়া বলে উঠলো,,,
-তনু তুমি এক্ষনি বাসায় চলে এসো…
-কেনো ভাইয়া কি হয়েছে আর আপনি এভাবে কেনো কথা বলছেন সব ঠিক আছে তো?
-তনু তা..তাসিনের…
তার মুখে তাসিনের নাম শুনতেই বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠলো..তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করলাম,,,
-কি হয়েছে তাসিনের??
-তাসিনের এক্সিডেন্ট হয়েছে…তুমি এক্ষনি বাসায় চলে এসো..
তাসিনের এক্সিডেন্টের কথা শুনেই হাত থেকে ফোনটা পরে গেলো আমার..আমার চারপাশ মনে হচ্ছে অন্ধকার হয়ে আসছে..নিজের সমস্ত শক্তি মনে হচ্ছে হারিয়ে ফেলছি আমি…কিন্তু এখন আমাকে দুর্বল হলে চলবে না আমাকে তাসিনের কাছে যেতে হবে..তাই যেই অবস্থায় ছিলাম সেই অবস্থাই বাসার থেকে বেরিয়ে গেলাম..আব্বু-আম্মুর কোনো কথা আমার কানে আসলো না..
.
.
.
চলবে….
.
.
(ছোট করে আর একটা পার্ট দিয়ে দিলাম)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে