তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা পর্ব_১৪

0
1965

তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা
পর্ব_১৪
#মেঘ_বালিকা
.
.
.
ভার্সিটির গেট এর সামনে এসে থমকে দাড়ালো তনু…তার থেকে কিছুটা দুরে দাড়িয়ে আছে তাসিন..তাসিন একা না তার সাথে ফারিয়াও আছে..ওরা কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে…তনু কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে ওদের কাছে গেলো..তনুকে আসতে দেখে তাসিন আর ফারিয়া ওদের কথা ওখানেই ইতি টেনে দিলো..ব্যাপারটা তনুর মতেও ভালো লাগেনি..কিন্তু কিছু বললো না..চুপ করে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে তাসিন ওর হাতটা টেনে ধরে…তনু এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে..এবার তাসিন দ্রুত তনুর কাছে গিয়ে ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে টেনে নিয়ে এসে তাসিনের গাড়িতে বসিয়ে দেয়..তারপর নিজেও গাড়িতে উঠে বসে…
.
এতোক্ষন নিরব দর্শক এর মতো ফারিয়া সব দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিলো..ওদের চলে যাওয়ার পর ওর ঘোর কাটলো তারপর হালকা হেসে নিজেও তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়…
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
তাসিন ড্রাইভ করছে আর তনু তার পাশের সিটে বসে এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে..তাসিন ড্রাইভ করতে করতে অনেক কথাই বলছে কিন্তু তার কিছুই তনুর কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না..কারন তনু এখন অন্য ভাবনায় মেতে আছে…
সে বেশ বুঝতে পারছে তাসিন তার থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছে..সাথে তার এতোদিনের বান্ধবি ফারিয়া ও জড়িতো আছে..কিন্তু ওরা ঠিক কি লুকাচ্ছে ওর কাছ থেকে এটাই তনু বের করতে পারছে না..
.
গাড়িটা বাসার সামনে এসে থামলে তনু কিছু না বলেই গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো..আর তাসিন চুপ করে তনুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো…
.
ভীষন রাগ লাগছে..কিন্তু কার উপর সেটা বুঝতে পারছি না..ফারিয়াও আমার কাছ থেকে কথা গোপন করছে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না..কি এমন কথা বলছিলো তখন ও তাসিনের সাথে যে আমাকে দেখেই মাঝ পথে ওরা কথা থামিয়ে দিলো..কি এমন কথা ছিলো যা আমি শুনতে পারবো না..উফফ আমার আর কিছুই ভালো লাগছে না..এদের জ্বালাতনে মনে হচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই আমার জন্যে পাবনায় সিট বুকিং করতে হবে..
এসবের মধ্যেই ফোনটা আমার বেজে উঠলো..ফোনটা আর বাজার টাইম পায় না এখন এই ফোনের উপরও রাগ লাগছে আমার..একরাশ বিরক্ত নিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ফারিয়া ফোন করেছে…ও ফোন দিয়েছে দেখে ইচ্ছে করেই ফোনটা রিসিভ করলাম না..কিন্তু ফোনটাও আজ আমার অবাদ্ধ হয়ে গেছে..আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বার বার বেজেই চলেছে..তাই আর না ধরে থাকতে পারলাম না..রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে কিছু কথা ভেসে আসলো,,,
-কিরে কই থাকিস তুই কতোবার ফোন দিছি দেখিস না?
-বকবক করা হলে ফোন কেনো দিছিস সেটা বল…
-তুই কি আমার উপর রেগে আছিস তনু!!এভাবে কেনো কথা বলছিস?
-আর কিছু বলবি?
-না মানে…
.
ফোনটা কেটে দিলাম..ওর আর কোনো কথা এই মুহুর্তে শুনতে ইচ্ছে করছে না..বিরক্ত লাগছে খুব..
.
.
ক্লাস করে বের হয়েছি তখনি ফারিয়া আমার সামনে এসে খাম্বার মতো দাড়িয়ে পরলো..কাল থেকে কেনো যেনো ওকে আমার খুব বিরক্ত লাগছে..হয়তো কাল ওকে তাসিনের সাথে দেখে আমি জেলাস ফিল করেছি এর জন্যেই ওকে আমার এতো বিরক্ত লাগছে..আমার এসব ভাবনার মধ্যেই ফারিয়া বলে উঠলো,,,
.
-তোকে আমি কতোক্ষন যাবত খুজছি আর তুই এখানে!
.
-ক্লাস ফাকি দিয়ে ঘুরে বেরালে খুজে পাবি কিভাবে!
.
-আচ্ছা যাই হোক..শোন আজকে আমরা একসাথে বাসায় যাবো..বিয়ের পর থেকে তো আর আমার সাথে যাসই না..(মুখ ফুলিয়ে)
.
-রাস্তা আলাদা একসাথে তাহলে কিভাবে যাবো..
.
-উফফ তনু পুরাটা তো আলাদা নয়..মোড় পর্যন্ত তো একসাথে যেতেই পারি তাই না!!
.
ওর কথায় আর না করতে পারলাম না..ভার্সিটি থেকে বের হয়ে একটা রিকশা ঠিক করে দুজনে উঠে বসলাম..
ফারিয়া পাশে বসে বক বক করেই চলেছে..এই মেয়েটা এতো কথা কিভাবে বলতে পারে সেটা ও-ই ভালো জানে..ওর কথায় আমার মাথা ধরে যাচ্ছে..হঠাৎ আমার চোখ কিছু একটার দিকে আটকে গেলো..তাসিন..মনে হলো আমি তাসিনকে দেখলাম..কিন্তু ওর তো এখন অফিসে থাকার কথা ও রেস্টুরেন্টের সামনে কি করছে..আর সাথে একটা মেয়েকেও দেখতে পাচ্ছি..তাড়াতাড়ি রিকশা থামাতে বললাম..তারপর ভাড়া মিটিয়ে নেমে পরলাম..আমাকে এভাবে নেমে পরতে দেখে ফারিয়া জিজ্ঞেস করলো,,,
-কি হয়েছে এভাবে নেমে গেলি কেনো?
-তাসিন!
-ভাইয়া?কোথায় ভাইয়া?(এদিক-ওদিক তাকিয়ে)
-সামনে..
এবার ফারিয়ার চোখ পরলো…
-আরে ভাইয়া এখানে কি করছে!আর সাথে ওই মেয়েটাই বা কে?
.
তাসিন মেয়েটার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকে গেলো…মেয়েটা উল্টো দিকে ঘুরে ছিলো বিধায় তার মুখটা দেখতে পারিনি..
.
ফারিয়াকে নিয়ে আমিএ রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকে গেলাম..আমিও দেখতে চাই মেয়েটার সাথে ওর কি সম্পর্ক..
কিন্তু ভিতরে ঢুকে আমি যা দেখলাম তার জন্যে আমি প্রস্তুত ছিলাম না..তাসিন মেয়েটাকে হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করছে..শেষ পর্যন্ত এটাও আমার দেখার ছিলো..নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছি না আমি..আমার সাথে সাথে ফারিয়াও মনে হলো অনেক বড় সড় ধাক্কা খেয়েছে..আমার চোখ বেয়ে আপনা আপনি পানি বেরিয়ে এলো..ঘৃনা হচ্ছে আমার তাসিনের উপর এই মানুষটাকে আমি ভালোবেসেছিলাম যে কিনা আমার অবর্তমানে এসব করে বেরাচ্ছে..
.
এবার আমি তাসিনের সামনে এগিয়ে গেলাম..তাসিন আমাকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে গেলো..তারপর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি আমার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাসিনকে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলাম..আমার থাপ্পর খেয়ে তাসিন চুপ হয়ে গেলো সে হয়তো ভাবেনি আমি এমন কিছু করবো..শুধু একভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে..আর আমি অঝর ধারায় চোখের পানি ফেলছি…
.
আমার এমন কাজে রেস্টুরেন্টের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে..কিন্তু আমার তাতে কিছু যায় আসে না..এবার আমি মেয়েটার দিকে ঘুরে তাকালাম..এতোক্ষন ওর দিকে আমার চোখই পরে নি..মেয়েটিকে দেখে আমি আরেক দফা ধাক্কা খেলাম..আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো…অস্পস্ট স্বরে বলে উঠলাম,,,
-অঅবন্তি…….
.
আমার মুখে অবন্তি নাম শুনে ফারিয়া ও তাকালো…
.
অবন্তির চোখে পানি স্পস্ট..কিন্তু এই পানির কারন আমি বুঝতে পারলাম না…বুঝার দরকারও নেই..ওকে দেখে কিছুক্ষনের জন্যে আমি থেমে গেলাম..তারপর আর এক মুহুর্ত সেখানে না দাড়িয়ে দৌড়ে বের হয়ে এলাম..আমি কখনো ভাবতে পারিনি যার জন্যে ১বছর আগে আমাদের সম্পর্কটা ভেঙ্গেছিলো সেই অবন্তি আবার আমাদের মধ্যে চলে এসে আমাদের সম্পর্কটা আবার এভাবে ভেঙ্গে দিবে…
.
সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাসিনের বাসায় আর ফিরে যাবো না..তাই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একবারে নিজের বাসায় চলে এলাম..আজকের পর থেকে আমি আর কোনো রকম সম্পর্ক রাখবো না তাসিনের সাথে…ঘৃনা করি আমি ওকে…
.
.
.
.
চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে